label
stringclasses
6 values
text
stringlengths
1.57k
117k
is_valid
bool
1 class
hm
নৈনং ক্লেদয়ন্তি পূর্বমেঘ অচেনা বিশাল শহরের আকাশছোঁয়া সব ইমারত কৃপণের মতো ছায়া গুটিয়ে জড়ো করে যে যার পায়ের কাছে। আকাশে অগ্রহায়ণের সূর্য সাগ্রহে তাকিয়ে আছে পৃথিবীর রৌদ্রকাতর গালের দিকে। লীনা ওড়না দিয়ে নিজের মুখটা মুছে নেয় আবার। এ নগরীর রুক্ষ উষ্ণতার অন্য রূপ সে জানে, তাই কাকার অপরাধী দৃষ্টির মুখোমুখি হওয়ার প্রয়োজন বোধ করে না সে। রাস্তায় লঙ্গরখানার বাইরে ক্ষুধার্ত বালকের সারির মতো ছটফট করছে পরস্পরের গায়ে প্রায় গা ঠেকিয়ে দাঁড়ানো একেকটি যান, তাদের বনেটের ভেতর চাপা স্বরে ধুঁকছে এঞ্জিন, আর গর্ভের যাত্রীরা সবাই ছটফট করছে। লীনা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সে যানজটকে পথচারীর চোখে দেখে। বড়লোকের গাড়ির ভেতরে বসে থাকা ঝকঝকে একজন দু'জন করে নারী পুরুষ। সবার চোখেমুখে ক্রোধ, মাঝে মাঝে একেকজন পাতলা কাগজের মতো রুমাল দিয়ে মুখ মুছতে গিয়ে সেই ক্রোধের প্রলেপ মুছে সরিয়ে দেয়, তার নিচে দগদগে অসহায় ভীতি দেখা যায়। কিন্তু শহরের মানুষেরা আবার চট করে রেগে উঠতে জানে, তারা হাত পা নেড়ে কাঁচের ওপাশে গাড়ির নিজস্ব আবহাওয়ায় বসে কী কী যেন বলতে থাকে ফোনে। কেউ কেউ আবার কানে তার গুঁজে চুপ করে বসে থাকে। যাদের বয়স একটু কম, তারা মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে টিপতে থাকে সমানে। হয়তো তারা খু্ব এসএমএস করে। হয়তো বাড়িতে তাদের মাকে এসএমএস করে বলে, আমি ভালো আছি, একটু পর বাড়ি ফিরবো। লীনা গাড়ির চালকদেরও মন দিয়ে দেখে, তাদের চেহারা তুলনামূলকভাবে নিরুদ্বিগ্ন। কয়েকজনের মুখে বেশ দেঁতো হাসি। কেউ কেউ একটু ক্লান্ত, বিরক্ত, স্টিয়ারিঙের ওপর তাদের আঙুল টপাটপ কোনো এক তালের ছক হারিয়ে অসংলগ্নভাবে নড়ছে। লীনা তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে ভয়ের ছাপ, রাগের আঁচড়ের দাগ খোঁজে, পায় না। কাকা তাকে গলা চড়িয়ে ডাকে, যাবি না? লীনা তার দুই পায়ের পাতার মাঝে মাটিতে নামিয়ে রাখা গ্যালনটা আবার তুলে নেয়। তার কাঁধটা আবার টনটন করে ওঠে। একটি ভবনের ছায়া থেকে সরে ফুটপাথ ধরে এগোতেই আবার অগ্রহায়ণের সূর্য রোদের হাত বাড়িয়ে আলিঙ্গন করে তাকে। এ শহর নিজের নামটি তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে অফুরান ক্লান্তি আর শ্রান্তিতে। এ শহরেই তার বাবা আসতো, সপ্তাহে তিনদিন। জাহেদ তার ভাইঝির হাত ধরে চুপচাপ পা চালায়। লীনার হাত থেকে গ্যালনটা সে নিতে চেয়েছে কয়েকবার, লীনা দিতে চায় না, জোর করে নিজের শরীরের সঙ্গে চেপে ধরে রাখে। সে এখন আর চেষ্টা করছে না। মেয়েটা যা চায়, তা-ই হোক। গতকাল সেই সোনাডাঙা থেকে শুরু হয়েছে লীনার ধকল। মা তাকে দুপুরে পেট ভরে ডিমের ঝোল আর মুসুরের ডাল দিয়ে ভাত খাইয়ে দিয়েছে, যদিও জাহেদ কাকা বার বার বলেছে, অনেক দূর যেতে হবে বাসে, এতো ভাত খাওয়া ঠিক হচ্ছে না, কিন্তু মা শোনেনি। শামীম ভাই জ্বর নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে, বোনকে বিদায় জানানো হয়নি তার। জাহেদ কাকা ফুলতলা টেম্পো স্ট্যান্ডে পৌঁছেই তাকে বলছিলো, দেখিস, পেট গুলাবে। ধরি বসতি পারবি? লীনা জোরে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলেছে। সোনাডাঙা পর্যন্ত ধরে বসতে পারলেও বাসে উঠে বসার পর বেশিক্ষণ তার সাধ্যে কুলায়নি। জাহেদ কাকা তাকে জানালার পাশে বসিয়েছে সে কারণেই। মাঝরাত পার করে যখন দৌলতদিয়ায় এসে থেমে গেছে বাস, তখন লীনার পেটের ভেতরটা একেবারেই শূন্য। আগে কখনও ঢাকামুখী সড়কে বাসে চড়েনি সে। অন্ধকার রাতে মহাসড়ককে এক ভীষণ অজগরের মতো মনে হচ্ছিলো লীনার কাছে, যে কেবলই গিলে খাচ্ছে পথের পাশের জমাট অন্ধকার, জোনাকির হাট, ম্রিয়মান ল্যাম্পপোস্ট, অন্ধকারে মগ্ন নিচু মাঠ, প্রকাণ্ড বাবলা আর শিমুল গাছের সারি, যার চোয়াল এক সময় গিয়ে গ্রাস করছে সোনাডাঙা টার্মিনাল। ক্রমশ সে অজগরের পেটের ভেতর ঢুকে পড়ছে সে, আর একটু পর পর তার নিজের পাকস্থলী উগড়ে দিচ্ছে বাড়ি থেকে খেয়ে আসা ভাত। টিমটিমে বাতি জ্বালিয়ে যে ভাতের ঝুপড়ি হোটেলগুলো দৌলতদিয়া ঘাটের রাস্তায় সারি সারি দাঁড়িয়ে, তার পাশে বাসের দীর্ঘ সারিতে সে প্রথম দেখেছে, যানজট কাকে বলে। ফেরির অপেক্ষায় নিস্পন্দ দাঁড়িয়ে থাকা সেই বাসগুলোর জানালায় তারই মতো মানুষের ক্লান্ত চোখ, একটু পর পর তারই মতো কেউ না কেউ অকাতরে বমি করছে, এরই মাঝে পতঙ্গের মতো শসা, পেয়ারা, মুড়ি, সিঙ্গারা নিয়ে সেই বাসকে ঘিরে ভনভন করছে ফেরিওয়ালারা। জাহেদ তাকে আবার ভাত খেতে সাধলেও লীনা রাজি হয়নি। লঞ্চঘাট ফেরিঘাট থেকে খুব বেশি দূরে নয়, আরও অনেকেই হাতে বা কাঁধে ব্যাগ নিয়ে সেদিকে ক্লান্ত পায়ে হাঁটছিলো। লীনার চোখ ফেরিঘাটের পেছনে সারিবদ্ধ বাসের চালকের আসনে বসা মানুষগুলোকে ত্রস্ত চোখে দেখছিলো শুধু। প্রায় সব ড্রাইভারই নেমে পড়েছে বাস থেকে, কেউ ভাতের হোটেলে ভাত খেতে গেছে, কেউ রাস্তায় পায়চারি করে বিড়ি টানছে, সিটের ওপর হেলান দিয়ে ঝিমাচ্ছে কেউ। লীনার চোখ কেবল একের পর এক বাসের চালককে ছুঁয়ে যাচ্ছিলো। জাহেদ শক্ত মুঠিতে তার হাত চেপে একটু আকর্ষণ করে বলেছিলো, আয় মা, জলদি যাই, এইখানে আর কোনো কাজ নাই আমাদের। লীনার তৃষিত চোখ তবুও চালকের আসনগুলো আস্বাদন করে চলছিলো। কী করে এরা এ সময়ে, এতদূর বাস চালিয়ে এসে? তারা কি খায় কিছু? খেয়ে বাড়িতে ফোন করে? স্ত্রীর সাথে, কন্যার সাথে কথা বলে? বলে, আমি ভালো আছি, দৌলদ্দিয়ায় আসি পৌঁছলাম এই মাত্র, তা তোমরা খাইছো রাত্রে? এখন ঘুমাও, সকালে আবার কথা কব। ফেরিঘাট থেকে লঞ্চঘাট পর্যন্ত আবছায়া পথটুকু ঘোরের মধ্যে কেটে যায় লীনার। তাকে পাশ কাটিয়ে ঢাকামুখী মানুষেরা জোর পায়ে এগিয়ে যায়। জাহেদ লঞ্চঘাটে পৌঁছেও তাকে আবার কিছু খেতে সাধে। লীনা বোঝে, কাকার ক্ষুধা লেগেছে। সে মৃদু স্বরে শুধু বলে, আমি পানি খাই, তুমি ভাত খায়ে নেও। রাতের তৃতীয় প্রহরে লঞ্চের নিচে পদ্মা আস্তে আস্তে গভীর আর চঞ্চল হয়ে ওঠে তস্করের মতো, দৌলতদিয়া একটু একটু করে সারিবদ্ধ অগণিত বাস আর তাদের অচেনা চালকদের নিয়ে দূরে সরে যায়। তারপর পাটুরিয়ায় নেমে আবার বাস ধরতে হয়। এবার আর লীনার বমি পায় না, ডিজেলপোড়া গন্ধ আর ঝাঁকুনি আর নতুন কিছু হরণ করে নিতে পারে না তার শূন্য শরীর থেকে, সে জাহেদের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। স্বপ্নে সে ফিরে যায় নিস্পন্দ নিস্তরঙ্গ ফুলতলায়। ভোরে গাবতলিতে নেমে জাহেদ লীনাকে নিয়ে যায় তেলেভাজার দোকানে। সেখানে আরো আরো ভ্রমণক্লান্ত মানুষ ফোলা ফোলা মুখে পরোটা দিয়ে আলু ভাজি ডিম ভাজি খায়, অস্বচ্ছ সবুজাভ কাচের গ্লাস থেকে ঢকঢক করে পানি খায়, তারপর চায়ের কাপ ঠোঁটে ছুঁইয়ে সমস্ত ক্লান্তি সেখানে দ্রবীভূত করার চেষ্টা করে। লীনা কোনোমতে দুটো পরোটা খায়। জাহেদ চা খেতে খেতে শূন্য চোখে দোকানের বাইরের পৃথিবীটুকু দোকানের দরজার ফ্রেমে গেঁথে দেখে। লীনা ভাবে, বাসের ড্রাইভার লোকটা এখন কী করবে? সে কি ঘুমোবে? নাকি আবার বাস ঘুরিয়ে ফিরে যাবে পাটুরিয়ায়, পরের খ্যাপে? যদি ঘুমোয়, তো কোথায় ঘুমোবে? তার কি ঘুমোবার একটা জায়গা আছে এ শহরে? নাকি সে পথের পাশে কোথাও বাস থামিয়ে ঘুমিয়ে পড়বে ভেতরেই? তেলেভাজার দোকান থেকে বেরোবার পর লীনার কানে শুধু এক একটা সংখ্যা চিৎকার করে বলে যেতে থাকে ঢাকা শহর। ১ নম্বর, ১০ নম্বর, ১৪ নম্বর। তার শরীরের ক্লান্ত পেশীগুলো ক্ষণে ক্ষণে স্মরণ করিয়ে দেয়, একটু বিশ্রাম প্রয়োজন। লীনা হলারের ভেতরে, বাসের ভেতরে বসে এক নম্বর থেকে আরেক নম্বরে এসে নামে, তারপর আবার হলারে ওঠে, বাসে ওঠে। নম্বরের সাথে শহরটা পাল্টায় না, একই রকম অকরুণ দানবত্ব নিয়ে একটু একটু করে পিছিয়ে গিয়ে তাদের জন্য পথ করে দেয় কচুক্ষেতের, ক্যান্টনমেন্টের, কাকলীর। লীনার চারপাশে ঘনিয়ে আসে শুধু গাড়ি আর গাড়ি, তার ভেতরে হরেক পদের মানুষ, কারো চোখে শ্রান্তিজাত রক্তিমাভা, কারো চোখে ঘন রোদচশমা। এক সমুদ্র মানুষের ভিড়ে তার চোখের সামনে আস্তে আস্তে আরো কুৎসিত হতে থাকে মহানগরী, আস্তে আস্তে তার চারপাশের সড়ক ভরে ওঠে প্রকাণ্ড সব গাড়িতে, সেসব গাড়ি নবজাতকের দুঃখ নিয়ে তারস্বরে চেঁচায়, আর সমস্ত পৃথিবী কাঁপতে থাকে জলের নিচে মাছের আলোড়নে ত্রস্ত পদ্মের ডাঁটার মতো। লীনার পৃথিবী এভাবেই কেঁপে উঠেছিলো, যখন এক শনিবার বিকেলে বাবাকে ফোন দিয়ে সে আর বাবার উত্তর শুনতে পায়নি। বরং অচেনা এক লোক তার নাম্বারে কল দিয়ে দায়সারা কণ্ঠে বলেছিলো, আপনাদের বাড়িতে পুরুষ লোক কে আছে, তারে ফোন দেন। শামীম ভাই ভুরু কুঁচকে ফোন ধরে হ্যালো বলার কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যে তার মুখটা পাংশু হয়ে যায়, রুদ্ধ গলায় সে শুধু বলে, কেন, কেন, কারা করলো, কেন করলো? তারপর সে কাঁদতে থাকে তাদের চেনা পৃথিবীকে কম্পিত করে, বুক চাপড়ে শুধু বলে, আব্বারে আগুন দিয়ে মারি ফেলিছে। আগুন দিয়ে জ্যান্ত পুড়ায়ে মারি ফেলেছে আমার বাবারে। ইয়া মাবুদ, কেন? লীনা পরে জানতে পারে, তার বাবার অপরাধ ছিলো, ইলিয়াস নামে কোনো এক হারিয়ে যাওয়া মানুষের খোঁজ না জেনেই রাজধানীর বিশ্বরোডের পাশে বাস থামিয়ে ভেতরে ঘুমিয়ে পড়া। শুক্রবার সারারাত গাড়ি চালিয়ে বাবা ঢাকায় গিয়েছে, একটু ঘুমোবে না সে? সোনাডাঙা থেকে দৌলতদিয়া, তারপর ফেরিঘাটের সেই দীর্ঘ সারিতে অপেক্ষা, তারপর আবার পাটুরিয়া থেকে গাবতলি হয়ে ভোরে ঈগল পরিবহনের স্ট্যান্ড পর্যন্ত বাস চালিয়ে তার বাবা কোথায় ঘুমোবে? ঢাকায় কি তাদের ঘুমোনোর জন্য কোনো ঘর আছে? বাসের ভেতর ঘুমোনো কি অপরাধ এই শহরে? ইলিয়াসের খোঁজ ষোল কোটি মানুষের কেউ দিতে পারেনি, পরে টেলিভিশনে দেখেছে লীনা। কিন্তু ইলিয়াসের লোকজন দায়ী করেছে তার বাবাকেই। কাকলী থেকে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে সুদৃশ্য সব ভবন আর মানুষের মুখ লীনার চোখ এড়িয়ে যায়। বাবার লাশটা ফিরিয়ে আনতে গিয়েও ভুগতে হয়েছে তাদের। তার বাবাকে শুধু ইলিয়াসের লোকেরাই দায়ী করেনি, বাসের মালিকও হয়তো মনে মনে দায়ী করেছে। বাবার সাথে সাথে বাসটাও পুড়ে ছাই হয়েছে, হয়তো সেই শোকেই কাতর ছিলো কাপড়িয়া সাহেব। দুই দুইজন মন্ত্রী তার পোড়া বাবার লাশটার কাছে এসে সাংবাদিকের মাইকের সামনে কথা বলা শুরু করেছে দেখেই হয়তো চক্ষুলজ্জার খাতিরে অ্যামবুলেন্সের ভাড়াটা পকেট থেকে বার করে দিয়েছিলো লোকটা। নাহলে হয়তো জাহেদ কাকাকে তার বাবার লাশ আনার জন্য এর ওর কাছে হাত পাততে হতো। বলতে হতো, আমার ভাইয়ের দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাটা কইরে দেন আপনারা বড় মানুষেরা, আল্লাহর দোহাই লাগে। গুলশান ২ এ নামার সময় লীনার কানে ঝনঝন করে বাজছিলো মন্ত্রীদের মেকি আহাউহু কথাগুলো। নোংরা রাজনীতি, নেতিবাচক আচরণ পরিহার, আরো কিছু গম্ভীর ঝনঝনে শব্দের নিচে ক্যামেরার সামনে লজ্জিতের মতো চাদরের নিচে সবটুকু লুকিয়ে পড়ে ছিলো তার বাবা। দুই বাঘা বাঘা মন্ত্রীর ধবধবে পাঞ্জাবি পায়জামা আর কুচকুচে মুজিব কোটের সামনে সত্যটুকু সাদায় কালোয় পরিস্ফূট হয়ে ছিলো সে দৃশ্যে, নোংরা রাজনীতি আর নেতিবাচক আচরণের খেসারত সবটুকুই লীনার বাবাকে দিতে হয়েছে। মন্ত্রীরা কথা বলতে বলতে মুখস্থ গোলগোল শব্দগুলো হারিয়ে ফেলছিলো বারবার, সাংবাদিকরা ধৈর্যভরে তাদের গোঁফের নিচে মাইক উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো, এক পাশে বিরক্ত জ্বলজ্বলে চোখে দাঁড়িয়ে ছিলো বাসের মালিক, কোথাও দেখা যাচ্ছিলো না কাকাকে, আর মাঝে মাঝে করুণাভরে ক্যামেরার চোখ ফিরছিলো শায়িত বদর বেগের সজ্জিত অঙ্গারের দিকে। নোংরা রাজনীতি আর নেতিবাচক আচরণকে ঐ সাদা কাপড়টুকু দিয়ে যতোটুকু পারা যায়, ঢেকে রাখার চেষ্টা করছিলো এই শহরের মানুষেরা। দুই মন্ত্রীই টেলিভিশনের ওপাশে দেশের মানুষকে শুনিয়ে শুনিয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন, নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। তারপর শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে দশ হাজার টাকা ধরিয়ে দেওয়া হয় কাকার হাতে। ক্যামেরা আর মাইকের আশপাশে জড়ো হয়ে থাকা ধবধবে সাদা আর কুচকুচে কালো জামাকাপড় পরা মানুষেরা নীরবে বুঝিয়ে দেন, মাংস পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া ভাইকে নিয়ে বেড়াল পার হতে হবে জাহেদ কাকাকে। ফুলতলায় বাবাকে ফিরিয়ে এনে কাপড় সরিয়ে নোংরা রাজনীতি আর নেতিবাচক আচরণ এক নজর দেখেছিলো লীনা। জ্ঞান ফেরার পর কাকা তাকে বলে, গোসল দেওয়ানো শেষ মা। তুই থাক, ভাইজানের কবরটা দিয়ে আসি। লীনার শুধু মনে হয়, বাবা আর কখনো দৌলতদিয়ায় থেমে ফোন করবে না তাকে, সকালে ঢাকায় পৌঁছে জিজ্ঞাসা করবে না তারা ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করেছে কি না, বাড়ি ফেরার পথে কাগজে মোড়ানো এক টুকরো তালমিছরি এনে দিয়ে বলবে না, এটা খেলি পরে পড়ালিখায় মাথা খোলে। লীনা এক হাতে গ্যালনটা আঁকড়ে ধরে জাহেদের হাত ধরে পা চালায়। খুব বেশি দূরে নয় তার গন্তব্য। জাহেদ থমকে দাঁড়ানোর পর লীনা ফুটপাথ থেকে মুখ তুলে প্রথমে কাকার দিকে, তারপর কাকার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকায়। তাদের একটু সামনে ক্লান্ত পায়ে হাঁটছেন এক মহিলা। তার হাত ধরে হাঁটছে এক কিশোরী। তার হাতে একটি গ্যালন। পিয়া অবশ্য গ্যালনটা মায়ের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে আপত্তি করে না। তার বাহু অসাড় হয়ে আছে, তাই একটু পর পর গ্যালনটা মায়ের হাতে দিয়ে সে একটু বিশ্রাম করে নেয়। বাস থেকে কাকলীতে নেমে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ ধরে হাঁটতে হয়েছে তাদের। মা বগুড়া থেকেই বলছিলো, গ্যালনটা একেবারে ঢাকায় গিয়েই ভর্তি করতে। পিয়া রাজি হয়নি। শহরটাকে চেনে না সে, তাই যা নেওয়ার, তা একেবারে বাড়ি থেকে ভর্তি করে নেওয়াই তার কাছে ঠিক মনে হয়েছে। নাহয় একটু কষ্ট করতেই হলো, বার বার, রোজ রোজ তো আর এই কাজ করতে হবে না। কিন্তু এখন পুরো কাজী নজরুল এভিনিউ পাড়ি দিয়ে তার মনে হচ্ছে, হয়তো মায়ের কথাই ঠিক ছিলো। কিন্তু, খালি গ্যালন নিয়ে এলে এখানেই বা কোত্থেকে ভর্তি করতে পারতো সে? অগ্রহায়ণের আকাশ মা আর মেয়েকে উদার হয়ে ক্লান্ত করে। ছায়াহীন রাজধানীর পথ ধরে তারা মন্থর পায়ে হাঁটে, গন্তব্য খুব বেশি দূরে নয়। পিয়ার চোখে ভাসে খবরের কাগজে দেখা তার বাবার জুতো পরা পোড়া পা, বাসের জানালা দিয়ে বেরিয়ে আছে। বাবার বাকিটুকু বাসের ভেতরে আগুনের ভীষণ কুণ্ডলীতে অদৃশ্য। মা কিংবা পিয়া, কেউই প্রথমটায় ভাবেনি, নাসিরের পরিণতি এমন হতে পারে। পাগলাটে বাবা সারাদিন গান নিয়ে থাকে, হঠাৎ হঠাৎ এখানে ওখানে চলে যায়, দূর দূরান্তের ফাংশনে গিয়ে গান গায়, এর বাড়িতে ওর বাড়িতে থাকে, দশবার কল করলে একবার ধরে বলে, হুঁ হুঁ, আসবো তো, ভাত খেয়েছিস? আসবো আমি, ভাবিস না। ফাংশন শেষ করেই আসবো। তোর মা কী করে? ভাত খেয়েছে সে? তনয় কই? বাবার ঐ জুতোপরা পা-টুকুই খটকা জাগিয়ে আর খটকা বাঁচিয়ে রেখেছিলো। বার বার কল দেওয়ার পরও যখন সে আর ফোন ধরে না, তখন মা পত্রিকা বুকে চেপে এসে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলো, চল পিয়া, থানায় যাই। বগুড়া থেকে সিলেট বহুদূর। যমুনা আর মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে যেতে হয় চণ্ডীপুলে, যেখানে বাবার বাসটা পুড়িয়ে দিয়েছিলো ইলিয়াসের লোকজন। সবাই গাড়ি থেকে নেমে পালিয়ে যেতে পেরেছিলো, বাবা পারেনি। বাবা বুড়ো মানুষ, সত্তর বছর বয়স, দেখতে দেখতে বাসটাকে গিলে খেয়ে ফেলে আগুন, সাথে খায় বাবাকেও। বাবা হয়তো শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছিলো জানালা দিয়ে লাফিয়ে নামতে, পারেনি। তার একটা পা পৃথিবীর জন্যে জুতোটাকে রেখে গেছে, যাতে কন্যা আর স্ত্রী এসে তাকে শনাক্ত করতে পারে। বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে মানিক পীরের টিলায় কবর হয়ে গিয়েছিলো বাবার। সেকেন্ড অফিসার আমিনুল ভদ্রভাবেই তাদের সঙ্গে কথা বলে, বাবার পরিচয়পত্র দেখতে চায়, তারপর বলে, আসেন আমাদের সঙ্গে। থানায় জব্দ করা বাসের পোড়া কঙ্কালটা দেখিয়ে আমিনুল বলে, দেখেন আপনার বাবার কোনো জিনিস ভিতরে পান কি না। পিয়া সেই বাসের ভেতরে ছাই ঘেঁটে বাবার ঘড়ির বেল্ট আর ভিজিটিং কার্ডের অর্ধেকটা পায়। বাকি অর্ধেকের ছাই সেই বাসের ভেতরে পড়ে ছিলো, হয়তো বাবারও বাকি অর্ধেকের ছাইয়ের সঙ্গে। পিয়া থানার টয়লেটের বেসিনে অনেক ক্ষণ ধরে হাত পরিষ্কার করার চেষ্টা করছিলো, কিন্তু তার মনে হচ্ছিলো, তার সারা শরীর একটু একটু করে ভরে যাচ্ছে বাবার ছাইয়ে। ইলিয়াস কোথায়, বাবা জানতো না। বাবা জানতো শুধু গান। ইলিয়াসের লোকেরা যদি জিজ্ঞাসা করতো, তাহলেও হয়তো বাবার উত্তর দেওয়ার সুযোগ হতো। তারা কিছু জিজ্ঞাসা করেনি। তারা জানতো, নোংরা রাজনীতি আর নেতিবাচক আচরণের জন্যে নাসিরকেই পুড়তে হবে। একের পর এক মোটর সাইকেলে চড়ে জোড়ায় জোড়ায় এসে শিবিরের ছেলেরা বাসে নিষ্ঠার সঙ্গে আগুন ধরিয়ে ফিরে গেছে দক্ষিণ সুরমায়। পিয়া মায়ের হাত থেকে আবার গ্যালনটা নিজের হাতে নেয়। অগ্রহায়ণের আকাশের নিচে জ্বলতে থাকে ছায়াহীন নগর। তার নিচে পিয়া দেখতে পায়, অদূরে এক প্রৌঢ় ভদ্রলোক আস্তে আস্তে এগোচ্ছেন। তার অবসন্ন হাতে ঝুলছে একটা গ্যালন। রমজানকে মনু আসতে দিতে চায়নি। বার বার বলছিলো, যাইয়েন না। আবার যদি আগুন দেয়, এইবার যদি আপনে মরেন? পোলাটারে তো মাইরা ফালাইলো, যাইয়েন না, বাড়িতে থাকেন, বাড়িতে। রমজান তবুও বের হয়েছে। মনুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছে, লিখনরে দেইখো। আমার কিচ্ছু হইব না। কতদিন বাড়িতে বইসা থাকন যাইব? বাইর তো হইতেই হইব। আইতাছি আমি। লিখন বাবাকে ছাড়তে চায় না তবু, সে এসে পা জড়িয়ে ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। ভাইয়া মরে যাওয়ায় সে এখন খাটের পুরোটা অংশ জুড়ে শুতে পারে ঠিকই, কিন্তু রাতের বেলা তার ভয় করে। আগে ভাইয়ার ওপর ঘুমের ঘোরে পা তুলে দিলে ভাইয়া ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতো, বলতো, এই লিখন, সইরা ঘুমাও, ঠিকমত ঘুমাও। গায়ে পা দিও না। এখন ঐ শূন্যতার ধাক্কায় লিখনের ঘুম ভেঙে যায়, সে রাতের বেলা মাঝে মাঝে উঠে মাকে ডাকে। মনু পাগলের মতো ছুটে আসে, বলে, কী হইছে, কী হইছে লিখন? কই আগুন লাগছে? অনেকটা জোর করেই লিখনকে নিজের শরীর থেকে ঠেলে দূরে সরিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছে রমজান। বারবার পেছনে তাকিয়ে দেখে, দরজার চৌকাঠে মাথা ঠেকিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে মনু, তার গালে বিশীর্ণা নদীর মতো অশ্রুর হলরেখা, তার দৃষ্টি অনির্দিষ্ট অতীতের দিকে। লিখন মায়ের কোমরে মাথা ঠেকিয়ে রমজানকে দেখে, বাবা ঘাড় ফেরালে সে হাত নাড়ে। রমজান গ্যালনটা নিয়ে জোরে পা চালায়। কালিয়াকৈর থেকেই গ্যালনটা ভর্তি করে এনেছে সে। গুলশানে কোথায় সে এই গ্যালন ভর্তি করবে? ছেলেটা ঢাকা দেখেনি। বারবার ঘ্যান ঘ্যান করছিলো, চলো না আব্বা, নিয়া চলো। আমি তোমারে মাল তুলতে হেল্প করমুনি। ঢাকা দেইখা আসি, চলো। ঢাকা দেখতে সমস্যা হয়নি কোনো। সেদিন নগরীতে উত্তাপ ছিলো, নিরুদ্বেগ ব্যস্ততাও ছিলো। নির্বিঘ্নেই ঢাকা দেখেছে রমজানের ছেলে, সদরঘাট দেখেছে, মোগলাই পরোটা আর পেপসি খেয়েছে এক দোকানে। ফেরার পথে গাজীপুর চৌরাস্তায় বসে বাপ ব্যাটা এক সঙ্গে নাস্তাও খেয়েছে। ডিম ভাজা দিয়ে পরোটা খেতে খেতে নিউজিল্যান্ড নিয়ে বকবক করছিলো ছেলেটা। কিচ্ছু পারে না এডি, আমাগো মাশরাফি আর সোহাগ গাজী আর রুবেল কি বলিং করছে, হ্যারা সবডি ম্যাচ হাইরা গেছে। বাংলাওয়াশ। ছেলেকে ভ্যানের ভেতর বসিয়ে রাস্তাটা একটু উজিয়ে দেখতে যাওয়াই ভুল হয়েছিলো রমজানের। মিনিট পাঁচেক পর ফিরে এসে সে দেখে, যেখানে তার গাড়িটা থাকার কথা, সেখানে এক ভীষণ আগুনের কুণ্ড। আর তার পাশে রাস্তায় হাত পা ছড়িয়ে ছাই মাখা সঙের মতো কে যেন বসে। কাছে এসে তার বুক ধক করে ওঠে, কারণ ঐ গাড়িটা তারই ভ্যান, আর ঐ সং তারই দগ্ধ পুত্র। ছেলেটা কাঁপছিলো ঝড়ে সুপারি গাছের পাতার মতো, মুখে কোনো কথা নেই, একটা অস্পষ্ট অবিরাম গোঙানি শুধু শোনা যাচ্ছিলো। আশেপাশের লোকজন তাড়াতাড়ি অ্যামবুলেন্সে খবর দিয়ে বলেছিলো, ভাই ঢাকা মেডিকেলে লইয়া যান, দেখেন আল্লাহ রহম করে কি না। নিজেদের মাঝে নিচু স্বরে তারা কী বলছে, সেটাও রমজান শুনতে পেয়েছিলো। তবুও বৃন্ত যেমন ফুলকে ধরে রাখে, সেভাবে আশা ধরে রাখে জীবনকে। বার্ন ইউনিটের ডাক্তারদের দেখে রমজান ভেবেছিলো, ছেলেকে নিয়েই বাড়ি ফিরতে পারবে সে। ছেলেটা তিন দিন ধরে শুধু গোঙাচ্ছিলো, ডাকছিলো আল্লাহকে, প্রত্যুত্তর শোনার ফুরসতও তার ছিলো না। ভোরের দিকে বাবাকে বলেছিলো, আব্বা, বাসায় যামু, বাসায় নিয়া চলো আব্বা, বাসায় যামু, মার কাছে যামু আব্বা। রমজানের মনের ভেতরে সামান্য একটু আশা বিশাল নিরাশাকে গলা টিপে ধরে বলছিলো, ছেলেটা ভালো হয়ে যাবে, ওকে একটা ক্রিকেট ব্যাট কিনে দিও, ভালো হয়ে যাবে ছেলে। কিন্তু ভোর যখন আরো পরিস্ফূট হয়, হাসপাতালের পাশে গাছের শাখায় মদকল পাখির গান শোনা যায়, তখন শেষবারের মতো খিঁচুনি দিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ব্যান্ডেজে মোড়া বাচ্চা ছেলেটা নিথর হয়ে যায়। ইলিয়াসের খোঁজ না জানার অপরাধেই কি জাতীয়তাবাদ আর ইসলামের বরকন্দাজরা পুড়িয়ে মারলো তাকে? নাকি নির্দলীয় সরকারের জন্যে একটাও নিরপেক্ষ লোকের নাম না জানার পাপে? অথবা সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হয়ে যাওয়ার সময় বাড়ি থেকে দূরে সন্ধ্যা পর্যন্ত কালৈয়াকৈরের গহীনে শালবন কেটে বানানো চকে ক্রিকেট খেলার স্পর্ধার শাস্তি দেওয়া হলো ওকে? ওর বেলায় অজুহাতটা কী ছিলো আসলে? রমজান নিজের বাহুতে চোখ মুছে পা চালায়, তার হাতের গ্যালন হঠাৎ ত্বরণে একটু দুলে ওঠে। রমজান দেখতে পায়, কয়েক গজ সামনে শ্লথ গথিতে পথ চলছে এক বোরখা পরা উত্তরযৌবনা, তার হাতে ধরা একটি গ্যালন। তার সামনে এক লুঙ্গি পাঞ্জাবি স্পঞ্জের স্যান্ডেল পরিহিত বৃদ্ধ, তারও হাতে গ্যালন। তার সামনে আরো একজন। এবং আরো একজন। এবং আরো গ্যালন হাতে মানুষের সারি সামনে। উত্তরমেঘ অলকার প্রাসাদের মতো সুদৃশ্য বাড়িটির সামনে উর্দিপরা আর উর্দিছাড়া বলিষ্ঠ মানুষের ভিড়। ভিড়ের ফাঁকে বিদ্যুতের মতো দীপ্তিময়ী সুন্দরী রমণীও আছেন দুয়েকজন। ইন্দ্রধনুর বিচিত্র বর্ণ নিয়ে সে প্রাসাদের দেয়াল সজ্জিত। কৃপাপ্রার্থী নারীদের হাতে সেখানে লীলাকমল, তাদের কেশপাশে কুন্দপুষ্প, লোধ্রপুষ্পের পরাগে তাদের মুখ পাণ্ডুর। সদাপুষ্পময় অলকার বৃক্ষের মতো সে প্রাসাদের চারপাশে মধুলোভী উন্মত্ত ভ্রমরকূলের মতো নেতা আর কর্মীদের সমাগম। দীপ্তিময় পুচ্ছের গৃহময়ূরের মতো সেখানে উপদেষ্টারা বিরাজমান, তাদের কেকাধ্বনিতে চারদিক মুখরিত। সেখানে আনন্দ থেকেই অশ্রু দেখা দেয়, অন্য কোনো কারণে নয়, সেখানে বেদনার একমাত্র কারণ পুষ্পশরাঘাত, তাও প্রিয়জনের সান্নিধ্যে ক্ষণিকের মাঝে তার মোচন হয়। ক্রুদ্ধ কর্মীরা সে প্রাসাদের বাইরে গুঞ্জন করছে, সরকার পানির লাইন কেটে দিয়েছে। সকাল থেকে ম্যাডামের বাড়িতে পানি নাই। উপস্থিত পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনারের কাছে গিয়ে কৈফিয়ত দাবি করছে কেউ কেউ, কেউ কেউ বাড়ির আশপাশের পথে ক্ষণস্থায়ী মিছিল করছে, সিটি করপোরেশন কেন এখনও পানির ট্যাঙ্কার পাঠালো না, এ নিয়ে মোবাইল ফোনে ত্রস্ত উদ্বেগে উঁচু গলায় কথা বলছেন নেতাস্থানীয়রা। দূরান্ত থেকে গ্যালন হাতে শোকশ্রান্ত মানুষের সারি এসে জমতে শুরু করে সে প্রাসাদের সামনে। পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া মানুষদের স্বজনেরা জানেন, এ প্রাসাদে বাস করেন কোনো এক বিরহী যক্ষী, আসনবিরহে যার বাহু থেকে শিথিল হয়ে পড়েছে স্বর্ণবলয়। দুইদিন ধরে তার কর্মীরা গর্জন করছেন, ম্যাডামের বাড়িতে পানি নেই। সে প্রাসাদের বাইরে বলিষ্ঠ যুবাদের প্রহরা, তাদের প্রহরার স্তর শেষে পুলিশের প্রাচীর, সে প্রাচীরের ওপারে বিশেষ সিকিউরিটি ফোর্সের অবসরপ্রাপ্ত সেনাদের চক্রব্যূহ, আর সে চক্রব্যূহের কেন্দ্রে প্রাসাদের ভেতরে বিরহী যক্ষী এক প্রস্তরকঠিন নির্বিকার নিষ্করুণ ভালোবাসাহীন অনীহার অর্গল তুলে পাহারা দিচ্ছেন কোনো এক ভীষণ দুর্নিবার আগুনের শিখাকে, যে আগুন কেবল ছড়িয়ে পড়ে জনপদ থেকে জনপদে, শকট থেকে শকটে, মানুষ থেকে মানুষে। স্বজনের অঙ্গার হাত থেকে মুছতে না পেরে স্বজনেরা সবাই এক এক গ্যালন পানি বয়ে এনেছেন যক্ষীর কাছে। সে প্রাসাদে সরকারবাহিত পানি যদি না-ও আসে, অগ্রহায়ণের আকাশের সূর্যকে ঢেকে কোনো মেঘ যদি না-ও ভাসে, নরমেধ যজ্ঞের ঐ শিখাটুকু কি তাদের নৈবেদ্যে নিভবে না? ভূমি ভেদ করে ভূকন্দলী ফুল বেরিয়ে এসে কি বলবে না, এবার পৃথিবী অবন্ধ্যা হবে?
false
hm
সোমালিয়া অ্যান্ড কোং ফররুখ ভাইকে প্রথমটায় চিনতেই পারিনি। কামরুলকে তাই নির্বিকার চিত্তে যা-তা বলে গালাগালি করেই যাচ্ছিলাম। কামরুল নিরীহ ভালোমানুষ, এক একটা গালি খায় আর প্রতিবাদ করে। শেষমেশ যখন পরিচারিকারমণের অভিযোগ অস্বীকার করে সে ডুকরে উঠলো, তখন দূরে এক জোড়া কোঁচকানো ভুরু দেখে ফররুখ ভাইকে চিনতে পারলাম। কিন্তু, কিমাশ্চর্যম, ফররুখ ভাইয়ের এই হাল কেন? বেশ রোগা হাড় জিড়জিড়ে একটা প্রোলেতারিয়েত চেহারা ছিলো ফররুখ ভাইয়ের, সেটা একেবারেই উধাও। গাল দুটো ফুলেফেঁপে হয়রান অবস্থা। ফররুখ ভাইয়ের প্রবাদপ্রতিম সুতির পাঞ্জাবি, যেটা বিপ্লব-সংগ্রামের সব ঝড়ঝাপটার ধকল সামলাতে সামলাতে চিমসে গন্ধ ছড়াতো, সেটাও দেখা যাচ্ছে না। উল্টোদিকের চায়ের টেবিলে বসে যা বুঝলাম, একটা টিশার্টের ওপর খদ্দরের চাদর গায়ে বসে আছেন তিনি। আগে চায়ের সাথে একটা কি দুটো ডালপুরি খেতেন, সামনে তাকিয়ে দেখি প্লেটের ওপর পরোটা আর শিক কাবাবের পাগমার্ক। উঠে গিয়ে ফররুখ ভাইয়ের টেবিলে বসতে গিয়ে দেখি বেশ দামী একটা ফোন চিত হয়ে পড়ে আছে টেবিলের ওপরে। ওটার মালিকও ফররুখ ভাই বলেই মালুম হচ্ছে। কামরুলটা গাধা, সরল মনেই হয়তো বলে বসে, "বস, বিজনেস শুরু করলেন নাকি?" ফররুখ ভাইয়ের টেবো টেবো গাল দুটো রাগে গোলাপি হয়ে ওঠে। বিজনেসের মতো একটা পুঁজিবাদী অনাচারের আভিযোগ এভাবে চায়ের দোকানে মুখের ওপর খাড়া কেউ করে বসবে, এটা সহ্য করা কঠিন, জানি আমি। তাই কোলেইটারাল ড্যামেজ সামলানোর জন্য বলি, "বস মনে হয় মোটা হয়ে গেছেন।" ফররুখ ভাই কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকেন আমার দিকে, তারপর চায়ের কাপটা তুলে একটা মাপা সংগ্রামী চুমুক দেন। তারপর খদ্দরের নিচ থেকে একটা ছোটো হাতআয়না বার করে নিজের মুখশ্রী দেখেন খানিকক্ষণ। তারপর ছোটো একটা বিপ্লবী দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেটা আবার চালান করেন খদ্দরের নিচে। আমি বুঝি, টিশার্ট নয়, পকেটঅলা কিছু পরে আছেন তিনি। "হ্যাঁ", বহু কষ্টে স্বীকার করে আবার চায়ের কাপে চুমুক দেন তিনি। "একটু।" কামরুলটা ডিপ্লোমেসির কিছুই বোঝে না, সে বলে, "একটু না বস। আপনে তো ফু্‌ইল্যা শ্যাষ।" ফররুখ ভাই আবারও রাগে রাঙা হন। ইনকিলাবি চোখে কামরুলকে সেকেণ্ড বিশেক ভস্ম করে বলেন, "একটু।" কামরুল আবারও সংবিধান লঙ্ঘনের আগে আমি মুখ খুলি, "কী হইছে বস?" ফররুখ ভাই কিছুক্ষণ চায়ের কাপের ওম নেন আনমনে। তারপর সেটাকে নামিয়ে রেখে বলেন, "আর বইলো না। অনশন করতে করতে ... এই অবস্থা।" কামরুলটা স্তব্ধ হয়ে যায়। আমার চোখের সামনে মহাত্মা গান্ধীর টিংটিঙে চেহারাটা ভেসে ওঠে। "অনশন করলে মোটা হয় নাকি মাইনষে?" কামরুল গোঁ-গোঁ করে বলে। ফররুখ ভাই আবারও চোখে ইনকিলাবের আগুন জ্বেলে কামরুলকে পোড়ান। "তুমি কী বুঝবা? অনশন করছো জীবনে?" কামরুল মাথা নাড়ে, কিন্তু মুখ বন্ধ করে না। "না খাইয়া থাকলে মাইনষে মোটা হয় ক্যামনে?" ফররুখ ভাই চায়ের কাপ তুলে একটা বিরক্ত চুমুক দেন ফড়াৎ করে। "অনশনের সাথে না খেয়ে থাকার সম্পর্ক কী?" এইবার আমরা দুজনেই মৌন মেরে যাই। কিছুক্ষণ ভাবি। অনশনের সাথে না খাওয়ার সম্পর্ক নিয়ে। ফররুখ ভাই খদ্দরের নিচ থেকে হাত দু'খানা বার করে বলেন, "অনশনের প্রাচীন অর্থ ছিলো উপবাস। কিছু খাবে না, কিছু পান করবে না, চুপটি করে পড়ে থাকবে এক কোণায়। সারা পৃথিবী যখন খাচ্ছে, তখন তোমার প্রতিবাদ জ্বলে উঠছে এই স্বেচ্ছাক্ষুধায়। কিন্তু সময়ের সাথে এর অর্থ পাল্টে গেছে।" কামরুল বলে, "এখন অনশন মানে কী?" ফররুখ ভাই বলেন, "এখন অনশন মানে হচ্ছে, তুমি কর্তৃত্ববাদী পুঁজিতান্ত্রিক পেটোয়া বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করছো, আয় তুই বেরিয়ে আয় তোর দালালবাদিতার কেল্লা থেকে, বেরিয়ে এসে আমাকে মিনারেল ওয়াটার খাওয়া।" কামরুল এবার আমার দিকে তাকায়। আমি বলি, "না খাইয়া থাকা লাগে না?" ফররুখ ভাই বলেন, "তা থাকে। না খেয়ে থাকলে পুঁজিবাদের চামচারা এসে তোকে পানি খাওয়াবে কেন?" কামরুল বলে, "তাইলে তো অনশনই হইল। উপাসই তো থাকলেন।" ফররুখ ভাই বলেন, "হ্যাঁ, তা-ই তো।" কামরুল এবার রেগে যায়। বলে, "তাইলে এইরাম ফুইল্যা গোলালু হইলেন ক্যাম্নে?" ফররুখ ভাইও চটে যান। বলেন, "আরে অনশন কি দিনের পর দিন মাসের পর মাস করার জিনিস নাকি? সকাল বেলা যাবি, শহীদ মিনারে বসবি, দুপুরের পরই মন্ত্রী এসে তোকে মিনারেল ওয়াটার আর মালয়েশিয়ার বিস্কুট খাওয়াবে।" কামরুল বলে, "মিনারের ওয়াটার আর মালয়েশিয়ার বিস্কুট খাইয়া কেউ এইরাম মোটা হয় নিকি? কইলেই হইলো?" ফররুখ ভাই ক্ষেপে যান খুব। বলেন, "ছাগল কোথাকার, সকালে অনশন শুরুর আগে যে ফাটায় নাস্তা করতে হয়, সেইটা হিসাবে ধরবি তো! দুইটা মাস ধরে খালি গরুর গোস্তো দিয়ে পরোটা গরুর গোস্তো দিয়ে পরোটা গরুর গোস্তো দিয়ে পরোটা খেয়ে খেয়ে অনশন করতে গেছি!" কামরুল গোল গোল চোখে আমার দিকে তাকায়। আমি মিনমিনিয়ে বলি, "গরুর গোস্তো পরোটা দিয়া সকালে নাস্তা কইরা এইরাম মোটা হয় নাকি কেউ?" ফররুখ ভাই চায়ের কাপ তুলে একটা স্তালিনশীতল কঠোর চুমুক দেন, সাইবেরিয়াতে কোনো হ্রদের পানির লেভেল যেন এক ইঞ্চি কমে যায় ওতে। তারপর বলেন, "আর অনশনের পরে যে বিরিয়ানি খাইতে হয়, সেইটার হিসাব কে রাখবে? তোদের বাপ?" কামরুল আবারও স্তব্ধ হয়ে যায়। আমি দুর্বল গলায় বলি, "বিরিয়ানি? বিরিয়ানি ক্যান?" ফররুখ ভাই বলে, "চুক্তিতে বিরিয়ানির কথা আছে তাই বিরিয়ানি!" কামরুল বলে, "কীসের চুক্তি?" ফররুখ ভাই বলে, "সোমালিয়া অ্যান্ড কোঙের সাথে চুক্তি।" আমি বলি, "সোমালিয়া অ্যান্ড কোং কী?" ফররুখ ভাই অধৈর্য হয়ে হাত নাড়েন। বলেন, "অনশন একটা সামগ্রিক প্রতিবাদ। তুই আজকে একা গিয়ে শহীদ মিনারের সামনে না খেয়ে পড়ে থাকলে তোকে কেউ বাল দিয়েও পুঁছবে না। অনশনের একটা আয়োজন লাগে। এটা একটা ইভেন্ট। এইটার লজিস্টিক সাপোর্ট লাগে না? অনশনের আগে মিডিয়াকে ম্যানেজ করতে হয়, খবরের কাগজ রেডিও টিভিকে ফিট করতে হয়, তারা অনশনের খবর আগে রাষ্ট্র করে। অনশনের দিন সকালে শহীদ মিনারে যাবি, খালি হাতে যাবি? পুষ্পস্তবক লাগবে না? ব্যানার লাগবে না? ফেস্টুন লাগবে না? অনশনের সময় আবার মিডিয়ার লোকদের ডেকে এনে কাভারেজ নিতে হবে না? তারপর এই যে মন্ত্রী আসবে তোকে মিনারেল ওয়াটার খাওয়াতে, সেইটার একটা কোঅর্ডিনেশনের ব্যবস্থা করতে হবে না? ফোটোগ্রাফার দিয়ে ভালো ছবি তোলাতে হবে না? ফেসবুকে গ্রুপ খুলে সেটা চালাতে হবে না? মন্ত্রী কি তার বাপের বাড়ি থেকে মিনারেল ওয়াটার আর বিস্কুট নিয়ে আসবে তোর জন্যে, সেটা এগিয়ে দিতে হবে না? তারপর সারাটা দিন না খাওয়া তুই, অনশন শেষ হওয়ার পর বিরিয়ানি খাবি না তো কি চোদায়া মুড়ি খাবি?" কামরুল বলে, "সোমালিয়া অ্যান্ড কোং কী?" ফররুখ ভাই হুঙ্কার দিয়ে বলেন, "আরে এতক্ষণ কী কই? এইসব ম্যানেজ করে তারা, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি! এখন অনশনের ফুল সিজন চলতেছে, সামনে শীতকাল, আরো অনশন হবে। যে যত অনশন করে, সব ম্যানেজ করে সোমালিয়া অ্যান্ড কোং!" একেবারে তাক লেগে যায়। বলি, "এইখানেও পুঁজিবাদ?" ফররুখ ভাই বড় বিরক্ত হন। একটা সিগারেট ধরিয়ে বলেন, "সাদা কালো দিয়ে সব কিছু বিচার করলে চলে না। মাঝের ধূসর জায়গাগুলি নিয়ে ভাবতে হবে।"
false
rn
আমি অতিথি তোমারি দ্বারে "আমার যদি আম্মুর মত ক্যান্সার হয় তখন কিভাবে চিকিৎসা হবে? ক্যান্সার তো ব্যায়বহুল রোগ আর আমাদের সংসার তো গরীবের সংসার!! দয়া করে তখন মানুষের কাছে হাত পেত না...এমন কি আমার বাপ ভাইয়ের কাছেও নাহ!" আমি আমার স্ত্রীর লেখা চিঠি হাতে নিয়ে বসে আছি। কি সুন্দর করে ছোট্র একটা চিঠি লিখেছে। আজ থেকে চার বছর আগের লেখা চিঠি। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন সুন্দর হাতের লেখা। আমার চোখের পানির ফোটা পড়ছে চিঠির উপর। ঝাপসা চোখে আমি তাকিয়ে আছি- চিঠির দিকে। সকাল থেকে অসংখ্য বার চিঠিটি আমি পড়েছি। লিলি কিভাবে জানত তার ক্যান্সার হবে ? বাসর রাতে এই চিঠিটি লিলি আমার হাতে দিয়ে বলেছিল- আমি যেদিন তোমাকে এই চিঠি পড়তে বলব সেদিন পড়বে, তার আগে কখনও না। নো নেভার। আমি লিলির কথা রেখেছি- চিঠি পড়িনি। চার বছর আগের লেখা চিঠির কথা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। গতকাল রাতে লিলিকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার পর লিলি- এই চিঠির কথা আমাকে মনে করিয়ে দিল। সকালে হাসপাতালে এসে চিঠিটি আমি লিলির হাতে দেই। লিলি বলল- নিচে গিয়ে এক কাপ চা খেয়ে- চিঠিটি পড়বে। আজ এক মাস হলো লিলিকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। নানান ডাক্তারি পরীক্ষা করানোর পর ডাক্তার আমাকে জানায় লিলির খুব কঠিন ক্যান্সার হয়েছে। সে বেশী দিন বাঁচবে না। বিদেশ নিয়ে গেলেও না। আমি লিলিকে ডাক্তারের এ কথা বলিনি। বলেছি- ভালো হয়ে যাবে তবে সময় লাগবে। তুমি কোনো চিন্তা করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। লিলি এক আকাশ বিস্ময় নিয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি খুব চেষ্টা করি- আমার বুকের ভেতরের ভাংচুরের ছাপ যেন আমার মুখে না পড়ে। আমার মুখ দেখে লিলি যেন কিছু বুঝতে না পারে। দিন দিন লিলির শরীর ভেঙ্গে পড়ছে। শুকিয়ে যাচ্ছে। মাথার চুল পড়ে যাচ্ছে। মায়াময় একটি মুখ স্থায়ীভাবে মলিন হয়ে গেছে। কঠিন এক অসুখের নাম ক্যান্সার।প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার রোগ সহজে ধরা পরে না, ফলে শেষ পর্যায়ে গিয়ে ভালো কোনও চিকিৎসা দেয়াও সম্ভব হয় না। বাস্তবিক অর্থে এখনও পর্যন্ত ক্যান্সারের চিকিৎসায় পুরোপুরি কার্যকর কোনও ওষুধ আবিষ্কৃত হয় নি।ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকেই ক্যান্সার বলে। কেমোথেরাপি হলো শেষ চিকিৎসা।এই ব্যবস্থায় ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করতে অ্যান্টি-ক্যান্সার (সাইটোটক্সিক) ড্রাগস বা ওষুধ ব্যবহার করা হয়। লিলি তার মেয়ের নাম রেখেছে- লিলিয়ান। লিলিয়ানের বয়স আড়াই বছর। প্রতিদিন বিকেলে লিলিয়ান তার বাবার সাথে মাকে দেখতে যায়। লিলি, লিলিয়ানকে বুকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষন কাঁদে। তখন লিলয়ান তার ছোট দুই হাতে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে। এবং একটু পর-পর মায়ের চোখের পানি আঙ্গুল দিয়ে মুছে দেয়। কপালে চুমু দিয়ে দেয়। ঠিক এই সময় লিলিয়ানের বাবা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন। এবং খুব গোপনে চোখের পানি ফেলেন। লিলিয়ানের দেখাশোনা করে- লিলির ছোট বোন লিপি। লিপি তার বোনকে দেখতে আসে না। বোনের কষ্ট সে সইতে পারে না। লিলির মত লিপিও লিলিয়ানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে। খুব কাঁদে। সবাই সবার কান্না দেখে- সবাই সবাইকে শান্ত্বনা দেয়। কিন্তু লিলিয়ানের বাবাকে কেউ শান্ত্বনা বা ভরসার কথা বলে না। শুধু লিলি বুঝে মানুষটা ভিতরে ভিতরে কষ্টে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার কিছু করার নেই। ক্যান্সার রোগীর হাসপাতালের খরচ অনেক। এই খরচ চালানো- একজন ফোটোগ্রাফারের পক্ষে সম্ভব নয়। আমি ছোট একটা পত্রিকাতে চাকরী করি। খুব সামান্য বেতন। বেতন পেয়ে আমি লিলির হাতে সব টাকা দিয়ে দেই। এত অল্প টাকায় লিলি কিভাবে সংসার চালায় কে জানে ! তবে লিলি কোনোদিন কোনো অভিযোগ করেনি। অন্য মেয়েদের মতন সংসারে টাকা নিয়ে অশান্তি করেনি। দু'জন দু'জনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। আসলে আমরা দু'জন ছিলাম খুব ভালো বন্ধু। কিন্তু এক সময় আমরা দু'জন তীব্রভাবে অনুভব করি-দু'জন দু'জনকে অনেক ভালোবাসি। তারপর একদিন হুট করে বিয়ে করে ফেলি। বিয়ের দেড় বছর পর লিলিয়ান হয়। যাই হোক, আমি লিলির চিঠি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে- পরিচিত-অপিরিচিত সবার কাছে হাত পাতলাম। লিলিকে বাঁচাতেই হবে। আমি সারাদিন পাগলের মতন ঘুরে ঘুরে- লিলির চিকিৎসার জন্য টাকা ধার-দেনা করতে লাগলাম। লিলির চিন্তায়-চিন্তায়, আমার ঘুম নেই, আমার খাওয়া-দাওয়া নেই। চোখের সামনে দিনদিন লিলি বিছানার সাথে মিশে যাচ্ছে।মাথার সব চুল পড়ে যাচ্ছে। লিলির মাথার এক আকাশ চুল আমার খুব পছন্দের। সেই চুল গাছের পাতার মতন ঝরে যাচ্ছে। এখন লিলি কথা বলতে পারে না।বিছানায় উঠে বসতে পারে না। নাকের ভিতরে পাইপ দিয়ে খাবার খাওয়ানো হয়। আমি লিলির চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি। লিলির চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পরে। লিলির সারা শরীর মরে গেছে- শুধু চোখ বেঁচে আছে। ডাক্তার'রা বলেছেন- আল্লহকে ডাকুন। আমাদের কিছুর করার নেই। এখন, আমরা শুধু রোগীর ব্যাথা কমানোর চেষ্টা করছি। একদিন সন্ধ্যায় লিলির বিছানার পাশে বসে লিলির হাত ধরে বললাম- বেবি, তোমার কিচ্ছু হবে না। আমি টাকার ব্যবস্থা করেছি। আগামী রবিবার তোমাকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাচ্ছি। লিলির জীর্ণ হাতে চুমু দিয়ে বললাম- কোনো ভয় নেই। লিলি মলিন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল আর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল। আমি লিলির চোখের পানি মুছে দিলাম-কিন্তু লিলি আমার চোখের পানি মুছে দিতে পারল না। ডাক্তার এসে বললেন- রোগীকে ডিস্টার্ব করবেন। তাকে একা থাকতে দেন। আজ ২২ শে শ্রাবন। আকাশ ভরা মেঘ। গুম গুম শব্দে আকাশ নাঁচছে। যে কোনো সময় ঝুম বৃষ্টি নামবে। লিলিয়ান এবং তার বাবা রাস্তার পাশের দোকান থেকে চা খাচ্ছে। চা শেষ করে লিলিয়ান তার বাবার কোলে চড়ে- তার মাকে দেখতে যাবে। ডাক্তার বলেছেন- আজ লিলি অন্যদিনের চেয়ে অনেক ভালো আছে। তার ব্যাথাবোধ কমে গেছে। এবং লিলিয়ান ইচ্ছা করলে তার মায়ের সাথে অনেকক্ষন গল্প করতে পারবে। লিলিয়ান হাসপাতালে গিয়ে তার মায়ের মাথার কাছে বসল। লিলিয়ান তার ছোট হাত দিয়ে মায়ের গালে হাত রাখল। লিলি তার বাচ্চার দিকে এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে তাকালো। লিলির চোখের ইশারায় লিলিয়ান এবং তার বাবা দুইজন লিলির দুই হাত ধরল। লিলির চোখে এক আকাশ আনন্দ খেলা করল। কিন্তু এই আনন্দ বেশীক্ষন লিলি ধরে রাখতে পারল না। হঠাত তার খুব কষ্ট শুরু হলো। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসলো। মুখ দিয়ে লালা পরতে লাগল। বুকের ভিতর গর-গর শব্দ হতে শুরু করলো। লিলিয়ান এবং লিলিয়ানের বাবা লিলির কষ্ট দেখে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। লিলিয়ান আম্মু আম্মু বলে মাকে জড়িয়ে ধরল। লিলিয়ানের বাবা ডাক্তার ডাকতে লাগলেন। আর কি আশ্চর্য ডাক্তার আশার আগেই লিলি মারা গেল। সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:২৪
false
rg
শাহবাগে প্রজন্ম চত্বরের ঐতিহাসিক আন্দোলনের দুই সপ্তাহ_ একটি সংক্ষিপ্ত খতিয়ান একাত্তরের মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে শুরু হওয়া শাহবাগে প্রজন্ম চত্বরের ঐতিহাসিক আন্দোলনের আজ ১৪-তম দিন। এমন অভূতপূর্ব সর্বস্তরের মানুষের অন্তরের সমর্থণে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বিগত ৪২ বছরে বাংলাদেশে একটিও হয়নি। এটা থেকে বোঝা যায় বাংলাদেশের মানুষ কতোটা শান্তিপ্রিয় জাতি। বাংলাদেশের মানুষ কতোটা সম্প্রীতি মনোভাবের। প্রজন্ম চত্বরের চলমান ঐতিহাসিক আন্দোলনে ইতোমধ্যে যে সব বিষয়কে সাফল্য হিসেবে দেখা যায় সেগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত খতিয়ান হল:১. বাংলাদেশের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়।২. বাংলাদেশের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের (সর্বোচ্চ শাস্তি) ফাঁসি চায়।৩. জাতীয় সংসদে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল সংশোধন আইন ২০১৩ পাস। মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাক্ষরের মাধ্যমে এটি এখন আইনে পরিনত। ৪. বাংলাদেশের সকল শ্রেণী পেশার সকল মানুষ হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে প্রজন্ম চত্বরের এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছেন।৫. মহান জাতীয় সংসদ এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন।৫. সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষীর মানুষ এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন।৬. আন্তর্জাতিক মিডিয়া প্রথমে উল্টো সংবাদ প্রচার করলেও এখন এই আন্দোলনের তেজ ও শক্তি পর্যবেক্ষণ করে তাদের ভুল বুঝতে পেরেছেন এবং এখন গুরুত্ব দিয়ে ঐতিহাসিক শাহবাগ আন্দোলনের খবর প্রচার করছেন।৮. বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলো এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন।৯. সারা দেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন।১০. দেশের সর্ববৃহত ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন।১১. `জয় বাংলা' শ্লোগান এখন বাংলাদেশের সর্বসাধারণের শ্লোগান হিসেবে আবার ফিরে এসেছে।১২. মিথ্যার রাজনীতি করে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে যে আর ভুল বোঝানো যাবে না, সকল রাজনৈতিক দল বা সংঞঠন এই আন্দোলন থেকে ইতোমধ্যে সেই শিক্ষা পেয়েছে।১৩. ইতিহাসকে যে মিথ্যাচার দিয়ে পাল্টানো যায় না, নতুন প্রজন্ম এই আন্দোলনের মাধ্যমে সবাইকে তা বুঝিয়ে দিতে পেরেছে।১৪. জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে কসাই আবদুল কাদের মোল্লা ও রাজাকার কামারুজ্জামানের সদস্যপদ বাতিল হয়েছে।১৫. চীনে বসবাসকারী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন।১৬. সারা বিশ্বের বাংলা ভাষার হাজার হাজার মানুষ এবং সংগঠন এই আন্দোলনের পক্ষে প্রতিদিন সংহতি প্রকাশ করছেন। ১৭. বাংলাদেশ থেকে ধর্মান্ধ মৌলবাদী দলগুলো নিষিদ্ধ হবার দাবি উঠেছে এই আন্দোলন থেকে। ১৮. বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সকল সংগঠন, দল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল সহ সকল অর্থনৈতিক কারবার বর্জণের দাবি উঠেছে এই আন্দোলন থেকে। ১৯. বাংলাদেশ থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের আশ্রয়, প্রশ্রয়, বেড়ে ওঠা ও অনুশীলনের বিরুদ্ধে দাবি উঠেছে এই আন্দোলন থেকে। ২০. বাংলাদেশের মানুষ যে ধর্ম নিরপেক্ষ, যার যার ধর্ম, তার তার, এই নীতিতে বিশ্বাসী, তা এই আন্দোলনে আবারও প্রমাণিত হয়েছে। অর্থ্যাৎ ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ। ২১. বিগত ৪২ বছরের অসুস্থ রাজনীতি, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, কালোবাজারি এবং রাজনৈতিক ধাপ্পাবাজীর রাজনীতি সাধারণ মানুষ প্রজন্ম চত্বরের এই ঐতিহাসিক আন্দোলনের মাধ্যমে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। শাহবাগ দিচ্ছে ডাক, যুদ্ধাপরাধী নিপাত যাক। শাহবাগ দিচ্ছে ডাক, রাজাকার নিপাত যাক। শাহবাগ দিচ্ছে ডাক, ধর্ম ব্যবসা নিপাত যাক। শাহবাগ দিচ্ছে ডাক, নতুন বাংলার সুপ্রভাত। রাজীবের রক্ত, বৃথা যেতে পারে না। জাফরের রক্ত, বৃথা যেতে পারে না। জয় বাংলা।
false
rg
বইমেলার ডায়েরি (১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) !!! ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, সোমবার। অমর একুশে বইমেলার দশম দিন। অথচ বইমেলা একেবারে ফাঁকা। বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধ ও হরতালের মধ্যে বইপ্রেমীরা মেলায় আসতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। প্রকাশকদের মুখের দিকে তাকানো যায় না। কেউ কেউ বলছেন, বাংলা একাডেমিকে যে ভাড়া দিয়েছি, তাই মেলায় উঠবে কিনা এখন বলা কঠিন! কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর সেদিকে কোনো মালুম নেই। এখন চলছে এসএসসি পরীক্ষা। অবরোধ-হরতালের কারণে যা ছুটির দিনে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বিএনপি হরতালের মেয়াদ এক বিবৃতির মাধ্যমে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। যথারীতি চলছে পেট্রোলবোমা হামলা। পেট্রোলবোমায় নিরীহ পথযাত্রী হত্যা করে রাজনৈতিক বিজয় ছিনিয়ে নিতে বিএনপি ও তাদের জোট এখনো সক্রিয়। মাঝখান থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে, কেউ তা বলতে পারে না। দেশে বিরতিহীন ভয়ংকর যে রাজনৈতিক চলচ্চিত্র এখন চলছে, তার মধ্যে রহস্যময় কারণে বন্ধ রয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া। নইলে ইতোমধ্যে যাদের আদালতে ফাঁসির নির্দেশ হয়েছে, সেগুলোর আর কোনো তৎপরতা নাই কেন? আজ প্রতিবেশী ভারতের দিল্লী বিধানসভার ভোটের ফলাফল জানা গেল। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল আম আদমি পার্টি এবার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জিতেছে। দিল্লী বিধানসভার ৭০টি আসনের মধ্যে আম আদমি পার্টি ঝাড়ু মার্কায় জিতেছে ৬৭টি আসন, ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) পেয়েছে বাকি ৩টি আসন। কংগ্রেস এবার দিল্লীতে শূণ্য পেল। গত বছর কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথভাবে দিল্লী বিধানসভায় সরকার গঠন করেছিল আম আদমি পার্টি। অাম আদমি পার্টির প্রধান ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন নক্ষত্র অরবিন্দ কেজরিওয়াল হয়েছিলেন দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় সরকার গঠনের ৪৯ তম দিনে ১৪ ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করেছিলেন কেজরিওয়াল। ঠিক এক বছর পর সেই ১৪ ফেব্রুয়ারি কেজরিওয়াল আবার দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে পরাজয় মেনে নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সিঙ্গাপুর থেকে কেজরিওয়ালকে টেলিফোন করে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, দিল্লী সরকারকে সব ধরনের নিশর্ত সহযোগিতা করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার প্রস্তুত। প্রতিবেশী দেশের এমন গণতন্ত্র দেখে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে- চলমান রাজনৈতিক ক্যাচাল থেকে মুক্ত হয়ে কবে বাংলাদেশ একজন নতুন কেজরিওয়ালের দেখা পাবে??? আমরা কেউ জানি না। আজ বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকেই ইউপিএল-এর সামনে দেখা হল অপুর সঙ্গে। মাসুম অপু। দৈনিক প্রথম আলো থেকে বইমেলা কভার করছেন অপু ও তার গ্যাং। উদ্যানে কয়েকটি স্টলে ঢু মেরে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে লিটল ম্যাগ চত্বরে এসে নন্দনের স্টল খুললাম। আজও কেউ বরাবরের মত আমার চেয়ারখানা নিয়ে গেছে। লিটল ম্যাগের কেউ নিয়েছে এমন সাক্ষ্য দিল আমার দু'পাশের দুজন। আরে বাবা, একাডেমির মঞ্চের সামনে কয়েক শো চেয়ার আছে। সেখান থেকে আমি দুটো চেয়ার এনেছিলাম। অন্যরাও সেখান থেকে এনেছে। এই চেয়ারগুলো বসার জন্য। যদি কারো চেয়ার লাগে, একটু কষ্ট করে সেখান থেকে আনা যায়। কিন্তু রোজ অন্য একজনের আনা চেয়ার না বলে এভাবে নিয়ে যাওয়া কোন ধরনের সভ্যতা? ভাবছি, ওয়েবক্যাম লাগিয়ে রাখব কিনা? যে চেয়ার নেবে, পরে তাকে ভিডিও দেখিয়ে কিছু সভ্যতা শেখানোর সুযোগ হয়তো হবে। অথচ এই চত্বরে যারা আসেন, সবাই কিন্তু শিক্ষিত। অনেকে নিজেরাই লেখালেখি করেন। কিন্তু আমাদের মানসিকতায় এমন দৈন্যতা কেন? নেরে মাথায় তেল দিতে বেশি সুবিধা, তাই না?!আড্ডা দিচ্ছিলাম শিল্পী শতাব্দী ভব ও শিল্পী চারু পিন্টুর সঙ্গে। আমাদের ভব মূলত গান গায়। ভব'র গান 'গোলাপ' নামে একটি অ্যালবাম ইতোমধ্যে বাজারে এসেছে। আরেকটি অ্যালবামের প্রস্তুতি নিচ্ছে ভব। ভব নিজেই গান লেখেন। নিজেই সুর করেন। নিজেই গান। যারা ভব'র গান শোনেননি, তারা একবার শুনে দেখুন, তাহলে বুঝবেন ভব ঠিক কোন ঘরানার। শিল্পী চারু পিন্টু আরজ আলী মাতুব্বরের একটি প্রোট্রেট করেছিল। এবার অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষ্যে সেটি পোস্টার আকারে বের করেছেন শতাব্দী ভব। আরজ আলী মাতুব্বর ভক্তরা পোস্টারটি পাবেন লিটল ম্যাগ চত্বরে আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেশ-এর স্টলে। স্টল নং ৮১। পোস্টারটির দাম ধরা হয়েছে পঞ্চাশ টাকা। ওই সময় আড্ডায় আমাদের সঙ্গে যোগ দিল শিল্পী সব্যসাচী হাজরা ও তার মেয়ে পৌষ। পোস্টার দেখে সব্য পিন্টুকে কিছু কারিগরি প্রশিক্ষণ দিল। পিন্টু জানালো, মূল কাজটি ওর কম্পিটারে ছিল না। তাই অনেক ঝামেলা গেছে। সব্য বলল, তুই মাল্টি অপশান ইউজ করলে এই সমস্যা হতো না। বাসায় গিয়ে দেখিস। ওই সময়ে কবি সাফি সমুদ্র পৌষকে ক্ষেপাচ্ছিল। পৌষ বলল, আমার নাম ম্যাও। ম্যাও সেজে পৌষ আজ সবাইকে ভারি ভয় দেখাল। এরপর পৌষ বায়না ধরল বিস্কুট খাবে। কিন্তু বইমেলায় তো বিস্কুট পাওয়া যায় না। তাহলে পৌষের বায়নার কি হবে? পিন্টু পকেট থেকে সিভিট বের করে বলল, এই নাও চকলেট। পৌষের সেই সিভিট শেষ করতে লাগল- অনলি এ সিঙ্গেল মিনিট। তারপর আবার সেই বিস্কুটের বায়না। সো, সব্য আর আড্ডায় থাকতে পারল না। এই সময় আড্ডায় যোগ দিলেন কবি শহিদুল্লাহ সিরাজী। ছোটবেলায় সিরাজী ভাইকে কেউ বকা দিলে বা মাইর দিলে, বাড়িতে গিয়ে চাচাতো ভাইদের কাছে নালিশ দিতেন, তোরা আমার কি হোস? অমুক অমুক আমাকে বকেছে বা মেরেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। অমনি সিরাজী ভাইয়ের চাচাতো ভাইয়েরা তমুককে তখন আচ্ছামত উত্তম মধ্যম দিয়ে আসতো। সিরাজী ভাইয়ের এবার মেলায় আসবে তিনটি বই। সিরাজী ভাই'র গল্প শেষ হবার আগেই তার এক ভক্ত বই কিনবে, তাই ফোন করে উদ্যানে ডেকে নিলেন। এই সময় লিটল ম্যাগ প্রাঙ্গনে আসলেন বন্ধু গল্পকার ও সাংবাদিক রাজীব নূর ও সামান্য কিছু'র নির্বাহী সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। রাজীবদা আর সাদ্দাম বইমেলায় ঘুরে ঘুরে কিছু সন্ধান করছেন। রাজীবদা জানালেন, বন্ধু কবি আলফ্রেড খোকনের 'মধু বৃক্ষ প্রতারণা বিষ' কবিতার বইটি নতুন করে বাঁধাই হচ্ছে। বাঁধাই হলেই সেগুলো নন্দনের স্টলে আনা যাবে। এছাড়ার পাঠসূত্রে তো পাওয়া যাবেই।অস্থির পোড়া সময়ের প্রতিবাদে 'চিৎকার' ব্যান্ড গ্রুপ আজ প্রকাশ করেছে তাদের প্রথম অ্যালবাম - 'চিৎকার'। চিৎকার ব্যান্ডের মেইন ভোকালিস্ট পদ্ম। সন্ধ্যা ৬ টায় টিএসসি'র স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে চিৎকারের প্রকাশনা উৎসব। সেখানে যোগ দিতে ভব চলে গেল। আমি একটু পরে যাব ভেবেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর যাওয়া হয়নি। চিৎকার ব্যান্ডের জন্য রইল শুভেচ্ছা। পদ্মকে প্রাণভরা অভিনন্দন।একাডেমি প্রাঙ্গনে একা একা ঘুরতে ঘুরতে পেলাম কবি দিলদার হোসেনকে। দিলদার ভাই এবার পুকুরের পারে স্টল দিয়েছেন। প্রকাশনার নাম বাংলাপ্রকাশ। দিলদার ভাই কয়েক মাস আগে প‌্যারিস ঘুরে এসেছেন। সেই অভিজ্ঞতা লিখেছেন এবার। প্রকাশ করেছেন সিডি আকারে কবিতার অ্যালবাম। বাংলাপ্রকাশ থেকে বের হয়ে ৭১ টেলিভশনের স্টলে দেখা হল লেখক আহমাদ মাযহার ভাইয়ের সঙ্গে। মাযহার ভাই'র মানিক জোড় রিটন ভাই (লুৎফর রহমান রিটন) তখন লাইভ প্রোগ্রাম করছিলেন। মাযহার ভাই জানালেন, এবার ছোটদের জন্য তাঁর লেখা ''রঙবেরঙের ছোটদের প্রবন্ধ' বইটি এসেছে চন্দ্রাবতী একাডেমি থেকে। এছাড়া কথাপ্রকাশ থেকে বের হবে বোধ ও বোধিকে স্পর্শ করার স্মৃতি প্রধান প্রবন্ধ সংকলন সম্পাদনা 'পূর্বসূরিগণ: স্মরণ সত্তা মনন'।মেলায় ঘুরতে ঘুরতে দেখা হল শিমুল ভাবী (শিমুল মাসুদ) ও তার বান্ধবীর সঙ্গে। একটু আগে কবি ও সম্পাদক নীলসাধু যে আমার লগে বইসা বইসা সিগারেট খাইছে, এই কথা হেগো আর কইলাম না। কিছু খবর না কওন ভালা। আন্নেরা কিতা কন!!! এই সময় ফুটবলার কায়সার হামিদকে দেখে দুই বান্ধবীর মধ্যে নব্বই দশক উসকে উঠল। শিমুল আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ওনার নাম যেন কি? আমি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে বললাম, হামিদ কায়সার। পরে বললাম, কায়সার হামিদ। দাবারু রানী হামিদের ছেলে, এক সময় বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ক্যাপ্তেন ছিলেন। কায়সার ভাইয়ের আগের চেয়ে স্বাস্থ্য ভালো হয়েছে। শিমুলরা মেলায় আজ পাঙ্খা লাগিয়ে ঘুরছেন। এরপর চা খেতে একাডেমি প্রাঙ্গন থেকে বাইরে এসে দেখা হল লেখক রাজু আলাউদ্দিনের সঙ্গে। আবার লিটল ম্যাগ প্রাঙ্গনে ঢোকার পর আমার গল্পের বই 'পঞ্চভূতেষু'র একটি কপি বিক্রি হল। বেচাবাট্টা আজ এ পর্যন্ত। বইমেলায় আজ হচ্ছিল ভাওয়াইয়া গান। ওই সময় দেখা হল বিজ্ঞান লেখক ডক্টর ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী'র সঙ্গে। ডক্টর ফারসীম বিজ্ঞানের লেখক হলেও ভারী কৌতুক জানেন। ভবিষ্যতে হয়তো রম্য লেখার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর একটু হলেই আমার শিশুতোষ চলচ্চিত্রের প্রডিউসার জুটিয়ে দিচ্ছিলেন। বইমেলার সময় শুটিং করব না বলে ডক্টর ফারসীম বিষয়টি আপাতত ফাইলবন্দি করলেন। এই ফাইল কবে ওপেন হবে খোদা মালুম। মেলায় দর্শক এবং বইপ্রেমীদের ভিড় কম থাকায় আটটায় নন্দন বন্ধ করে আবার উদ্যানে ঢু মারলাম। উদ্যানেও বইপ্রেমীদের আনাগোনা খুব কম। বিক্ষিপ্তভাবে এদিক সেদিক ঘুরে লেখক স্বকৃত নোমান সহ মেলা থেকে বের হয়ে ছবিরহাট আসলাম। নোমান চলে গেল শাহবাগ। আমি রয়ে গেলাম। দেখা হল চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কবি কামরুজ্জামান কামু'র সঙ্গে। তারপর বন্ধু কবি জাফর আহমেদ রাশেদ, ইন্সপেক্টর হুমায়ুন কবির ও টাইগার দোয়েলের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। পরে দেখা হল বন্ধু লেখক ও সাংবাদিক তরুণ সরকারের সঙ্গে। তরুণদা বইমেলার খুটিনাটি শুনে বললেন, ধর্মের নামে লিখলেও টাকা আছে। বিপক্ষে লিখলেও টাকা আছে। উভয় পক্ষের জন্য একদল মানুষ টাকা নিয়া খাঁড়ায়া আছে। কিন্তু তুমি সঠিক নেটওয়ার্ক না পেলে সেই টাকা ধরতে পারবা না। হা হা হা......................................১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ঢাকা
false
fe
পিলখানা হত্যাযজ্ঞের এক বছর ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অগ্রযাত্রা পিলখানা হত্যাযজ্ঞের এক বছর ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অগ্রযাত্রা ফকির ইলিয়াস ===================================== পিলখানার নির্মম হত্যাযজ্ঞের এক বছর পূর্ণ হলো গেলো। বাংলাদেশ যে বীর সৈনিকদেরকে হারিয়েছিল, সেই শোকে জাতি এখনো মুহ্যমান। এই হত্যাযজ্ঞের বিচারের আংশিক কাজ শুরু হয়েছে। সেনা আইনে শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিচার এবং বিশেষ আইনে হত্যাকারী-লুটপাটকারীদের বিচার সম্পন্ন করতে রাষ্ট্র সম্মত হয়েছে। এই হত্যাযজ্ঞের প্রথম বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে, তদন্ত কর্মকর্তা, সিআইডি অফিসার আব্দুল কাহহার আকন্দ বলেছেন, সৈনিকদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভই এই হত্যাযজ্ঞের মদদ দেয়। একজন বিএনপি নেতা এবং একজন আওয়ামী লীগ সমর্থক ওয়ার্ড কমিশনারের সহযোগিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। পিলখানার নিষ্ঠুরতম বর্বরতা কেন সংঘটিত হয়েছিল এর সঠিক কারণ এখনো উদঘাটিত হয়নি। হয়তো একদিন না একদিন হবে। কারণ যে নারী তার স্বামী হারিয়েছেন, সে সন্তান তার পিতা হারিয়েছে, তারা এর উৎস এবং উপাত্ত আজীবনই খুঁজে যাবে। তাদেরকে খুঁজতেই হবে। কারণ কোনো ঐতিহাসিক নির্মমতাই সভ্যতাকে থামিয়ে দিতে পারে না। বাংলাদেশে পিলখানা হত্যাযজ্ঞের ন্যায়বিচার অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এইসব শহীদ সৈনিকদের পরিবার ও সন্তানদেরকে নিশ্চিত জীবন দিতে হবে রাষ্ট্রপক্ষকেই। যারা একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর নিয়ম ভঙ্গ করে এমন বর্বরতা ঘটিয়েছে তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এর ওপর নির্ভর করছে রাষ্ট্রের আগামীর পথচলা। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার মাত্র দেড় মাসের মধ্যেই এই পাষণ্ডতম ঘটনাটি রাষ্ট্রের যে ক্ষতি করেছে, তা থেকে শিক্ষা নেয়া প্রয়োজন সবাইকেই। সাধারণ সৈনিকরা যে ন্যায্য দাবি-দাওয়া করে আসছিল, তারও একটি সঙ্গত সমাধানকল্পে রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ প্রতিটি সৈনিকই রাষ্ট্রের এবং জনগণের অতন্দ্র প্রহরী। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী মহাজোট সরকার কি হিসেব করে তাদের পা ফেলতে পারছে? এই প্রশ্নটি বারবার উত্থাপিত হচ্ছে জনমনে। এই সরকারকে খুব বেশি সমালোচনার মুখোমুখি করেছে তাদের অঙ্গ সংগঠন এবং দলীয় নেতাকর্মীরাই। বিশেষ করে ছাত্রলীগের নাম ধরে একটি পাতি দখলদার গ্র“প যত্রতত্র মাস্তানি করে বেড়াচ্ছে। যা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। এদের বিভিন্ন গ্র“প কর্তৃক টেন্ডার, চাঁদাবাজি, পেশিশক্তি প্রদর্শন সরকারকেই শুধু লজ্জিত করছে না, জনগণকেও শঙ্কিত করে তুলছে। অতি সম্প্রতি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চারজন ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়েছে, মারাত্মক অভিযোগের প্রেক্ষিতে। এসব সুবিধাবাদী চক্রের বিরুদ্ধে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নানা ধরনের সাবধান বাণী উচ্চারণ করার পরও তারা থামছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গরিব পিতার মেধাবী পুত্র আবু বকর সিদ্দিক হত্যাকাণ্ড জাতির বিবেককে অত্যন্ত বেদনাদায়কভাবে লজ্জিত করেছে। তারপরও অপরাধীরা থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সামাজিক, রাজনৈতিক অপরাধীদেরকে মদদ দিলে, এর পরিণাম কি হয় তা বিগত প্রতিটি সরকারই কমবেশি দেখেছে। তাই তা বর্তমান সরকারকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার খুব বেশি প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। বর্তমান মহাজোট সরকারের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চয়ই সব অপরাধীদের পদচারণাকে বৈধ করে দেয়নি। তাহলে মাননীয় মন্ত্রী, এমপিরা তাদের পোষ্যদের লাগাম টেনে ধরছেন না কেন? দুই. বর্তমান নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে সংসদীয় কমিটি। যোগাযোগ সচিব ওমর ফারুক এবং যোগাযোগ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য গোলাম মাওলা রনি টিভিতে সাক্ষাৎকার দিয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। অপরদিকে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান বলেছেন সচিব ওমর ফারুক এবং এমপি গোলাম মাওলা রনির দখলদারিত্ব, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার হওয়াই তার মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা হচ্ছে। কোন পক্ষ দুর্নীতি করছে কিংবা দখলদারিত্বের আশ্রয় নিচ্ছে তার বিচারের দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু রাষ্ট্রের জনগণ এটা স্পষ্ট অনুধাবন করতে পারছেন, কোথাও না কোথাও একটা অপশক্তি ছোবল দিচ্ছে। কারণ একে অপরের বিরুদ্ধে যখন দুর্নীতির অভিযোগ তোলে, তখন উভয়পক্ষকেই দুর্নীতিবাজ বলে প্রতীয়মান হওয়াটাই খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। সরকারের ভেতরে এই যে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়েছে, তা কি প্রমাণ করে না সরকার ক্রমশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে? এর কারণ কি? প্রধানমন্ত্রী বিষয়গুলো কি অনুধাবন করছেন? বর্তমান মহাজোটে এখনো অনেক নেতা আছেন, যারা নীতিবাদ ধারণ করেন। আদর্শে সমুন্নত থাকেন। যেহেতু মন্ত্রিত্ব চিরস্থায়ী কোনো পদ নয়, তাই মেধা ও মননের যোগ্যতায় মন্ত্রিত্বে রদবদল করা যেতেই পারে। এক একজন মন্ত্রীকে বেশি দায়িত্ব এবং চাপের মাঝে না রেখে ১৫ কোটি মানুষের দেশে মন্ত্রিত্বের পরিসর বাড়ানো যেতেই পারে। মনে রাখতে হবে বর্তমান সরকারের হাতে আছে চার বছরেরও কম সময়। এই সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন, রাষ্ট্রের উন্নয়ন, বিরোধী দলের আন্দোলন দমন সবগুলো কাজ এক সঙ্গে করে যেতে হবে সরকারকে। তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধের প্রতি প্রাধান্য না দিয়ে সরকার যদি বিরোধী দল হটানোর কাজে ব্যস্ত থাকে তবে এর পরিণাম নিজেদের জন্যই অশুভ বার্তা বয়ে আনবে। তার ওপর দেশে একটি হীনশক্তি তাদের মতলব হাসিলে তো ব্যস্ত আছেই। আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, মার্চের মধ্যেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হবে। তা হবে বর্তমান সরকারের জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ একাত্তরের পরাজিত রাজাকার শক্তি এই বিচারকার্যকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করবেই। তাদের পাকিস্তানি প্রভুরা ইতিমধ্যে নানা আন্তর্জাতিক ফোরামে এ বিষয়ে লবিং শুরু করেছে। সে বিষয়ে সরকারকে, জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। অত্যন্ত আশার কথা, বর্তমান তরুণ প্রজন্ম এই শহীদের রক্তøাত ভূমিতে কোনো অপবাদ, অপকর্মের দায় নিতে রাজি নয়। ধর্মীয় অনুশাসনের নামে ব্যক্তিগত আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে মানুষের বিবেক যে জাগ্রত হচ্ছে, তার প্রমাণ একটি ছাত্র সংগঠনের সিংহভাগ নেতার গণপদত্যাগ। নেপথ্য কারণ যাই থাকুক না কেন, এই ঘটনা আল-বদর শক্তির ভিতে আঘাত করেছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আগুয়ান প্রজন্ম, সকল অপশক্তিকে রুখে দেবেই এই বাংলাদেশে। ------------------------------------------------------------------ দৈনিক ভোরের কাগজ । ঢাকা । ৬ মার্চ ২০১০ শনিবার প্রকাশিত ছবি - উত্তম কুমার রায় সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১০ সকাল ১০:২১
false
mk
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই বাংলাদেশের উদার প্রকৃতি সহজাতভাবেই এ দেশের মানুষকে উদার মনোভাবাপন্ন হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। ধর্মীয়, সামাজিক বা রাজনৈতিক চেতনায় এ দেশে চরমপন্থা কখনো জনমনে ঠাঁই করে নিতে পারেনি। বাংলাদেশের মানুষ সেই দূর অতীতে ছিল সহজিয়া ধর্মীয় চেতনার অনুসারী। পরবর্তীতে এ দেশের মানুষের হূদয়রাজ্যে ঠাঁই পেয়েছে ভগবান বুদ্ধের অহিংসা ও জীবপ্রেমের শিক্ষা। এদেশে ইসলাম প্রচার হয়েছে সুফিবাদী সাধক পীর আউলিয়াদের মাধ্যমে। মানুষের প্রতি ভালোবাসাকে যারা ধর্মপ্রচারের উপজীব্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে জনগোষ্ঠীর সব অংশের শ্রদ্ধাও অর্জন করেছিলেন তারা। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিবাদ বিস্তারে বাইরের নানা অপশক্তি অপচেষ্টা চালালেও হিংসা ও হানাহানির এই প্রত্যাখ্যাত মতবাদকে এদেশের মানুষ কখনো ভালো চোখে দেখেনি। বিশ্বরাজনীতির আধিপত্যবাদী শক্তিগুলো মুখে গণতন্ত্র এবং জঙ্গিবাদসহ সব ধরনের উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কথা বললেও মূলত তাদের পৃষ্ঠপোষকতা ও অর্থায়নে দুনিয়ার দেশে দেশে জঙ্গিবাদের বিকাশ ঘটেছে। ওসমানি খেলাফতে আঘাত হানার জন্য ব্রিটিশ মদদে আরব ভূখণ্ডে ওহাবিবাদের চর্চা শুরু হয়। আফগানিস্তানে সোভিয়েত বাহিনীকে হটাতে কারা আল-কায়েদা ও তালেবান জন্ম দিয়েছিল সে বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। একই অপশক্তি বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে যে এ দেশে আইএসের অস্তিত্ব খুঁজছে সে সত্যটিও আজ স্পষ্ট। জঙ্গিবাদ শুধু ধর্মীয় চেতনারই পরিপন্থী নয়, তা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনারও পরিপন্থী। সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থান এবং ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার এ চেতনাকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল এ দেশের মানুষ। অন্য ধর্মের মানুষকে কতল, তাদের উপাসনাগারে হামলা চালানোকে যারা ধর্ম মনে করে তারা যেমন শান্তির ধর্ম ইসলামের কেউ নয়, তেমনি এ দেশ ও মাটিরও কেউ নয়। যারা নিজেদের মগজকে বিদেশি প্রভুদের কাছে বন্ধক রেখে এ দেশের মাটি ও মানুষের সর্বনাশ করতে চাচ্ছে তাদের রুখতে একাত্তরের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ লড়াইয়ের কৌশল নির্ধারণ করতে হবে বাংলাদেশের বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে। আধিপত্যবাদী কোনো শক্তিকে সুবিধা দেওয়া নয়, নিজেদের সুরক্ষাই হবে জঙ্গিবাদবিরোধী লড়াইয়ের লক্ষ্য। সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:৩০
false
rn
রবীন্দ্রনাথের ধর্মচিন্তা রবীন্দ্রমানসের স্বরূপ বুঝতে হলে আমাদের প্রথমে রামমোহন রায়কে ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। কারণ, রামমোহন রায়ের সুযোগ্য উত্তরসাধক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বাংলায় রেনেসাঁর সূচনা করেন রামমোহন এবং সমাপ্তি টানেন রবীন্দ্রনাথ। রামমোহন যেমন সত্য সন্ধানী ছিলেন তেমনি ছিলেন মানব-কল্যাণে সোচ্চার। ধর্মীয় সত্যকে তিনি সন্ধান করেছেন কোরআনে, পুরাণে, বাইবেলে এবং মহাপুরুষদের জীবন ও বাণীর মধ্যে। যুক্তিবাদী রামমোহন হিন্দু ধর্মের বহুদেবতার ওপর শ্রদ্ধা হারিয়েছিলেন। কিন্তু হিন্দু ধর্মের উচ্চতর দার্শনিক সিদ্ধান্তের ওপর তাঁর আস্থা ছিল অটুট। রবীন্দ্রনাথের বাবা যেমন ছিলেন ঈশ্বরপ্রেমিক তেমনি ছিলেন হাফিজের অনুরাগী ও ভক্ত।জোড়াসাঁকোতে থাকতে রবীন্দ্রনাথের ধর্মীয় চিন্তা-ভাবনা যে রকম ছিল শান্তিনিকেতনে যাওয়ার পর তা কিন্তু ধীরে ধীরে বদলে গিয়েছিল। বিশেষ করে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী ছাত্রদের কাছে বক্তব্য তুলে ধরতে গিয়ে তার ধর্মীয় ভাবনায় পরিবর্তন এসেছিল।গৌতম বুদ্ধ, যীশু খ্রিস্ট, গুরু নানক প্রমুখ ধর্মগুরুর সম্মানে তিনি কবিতা , গান রচনা ও পরিবেশন করেছেন। তাঁদের জীবন ও দর্শন সম্পর্কে আলোচনাও করেছেন। হযরত মোহাম্মদ এর জন্মদিনে শান্তি নিকেতনের মন্দিরের অনুষ্ঠানে ‘কোন আলোকে প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে তুমি ধরায় আসো’ গানটি গাওয়া হতো।রামমোহন ভাবুক ছিলেন, সংস্কারক ছিলেন। শিল্পী ছিলেন না। কিন্তু তার উত্তরসাধক রবীন্দ্রনাথ ছিলেন কবি ও শিল্পী। তাই নানা উৎস থেকে উপাদান সংগ্রহ করে শিল্পরূপ দেয়ার সময় তাঁর ওপর শিল্পীর ব্যক্তিজীবন ও রুচির প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক।রবীন্দ্রনাথ অনেকগুলো ছদ্মনামে লিখতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছদ্মনাম: ১) অকপট চন্দ্র ভাস্কর, ২) আন্নাকালী পাকড়াশী, ৩)দিকশূন্য ভট্টাচার্য, ৪)নবীন কিশোর শর্মন, ৫)ষষ্ঠীচরন দেবশর্মা, ৬)বানীবিনোদ বিদ্যাবিনোদ, ৭)শ্রীমতী কনিষ্ঠা, ৮)শ্রীমতী মধ্যমা, ৯)ভানুসিংহ ঠাকুর । রবীন্দ্রনাথ পদ্মা নদীকে অনেক ভালোবাসতেন। একবার যৌবনে ছিপ নৌকা নিয়ে নদীতে নেমেছিলেন। এই পদ্মা নদী রবীন্দ্রনাথের কাছে সব সময় রহস্যময় এবং অদ্ভুত লাগত।জমিদারি দেখাশোনা করতে না এলে- এই বিশাল পদ্মা দেখা হতো না।জমিদার রবীন্দ্রনাথের কাছে প্রজারা সব সময় তাদের সুখ দুঃখ, আশা স্বপ্ন এবং আবদার নিয়ে আসত। প্রজাদের কষ্টের কথা শুনে রবীন্দ্রনাথের বুক দুমড়ে মুচড়ে উঠত। বারবার চোখ ভিজে উঠত। প্রজারা জমিদার রবীন্দ্রনাথকে খুব আপন ভাবতেন। ভালোবাসতেন, শ্রদ্ধা করতেন। তিনি জমিদারি দেখাশোনা করতে এসে সব সময় খেয়াল রাখতেন- প্রজাদের উপর যেন কখনও জুলুম না হয়।রবীন্দ্রনাথ যখন গল্প লিখতে শুরু করেন তখন বিশ্বসাহিত্যের ছোটগল্পের দিকপাল লেখকরা হচ্ছেন সমরসেট মম, অ্যাডগার অ্যালান পো, মোঁপাশা, ও হেনরি প্রমুখ। লক্ষ করি এইসব বিশ্বখ্যাত লেখকদের ছোটগল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ‘সারপ্রাইজ’। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ গল্প লিখতে গিয়ে সে পথে হাঁটেননি। যদিও তাঁর গল্পে সারপ্রাইজ আছে তবে ‘সারপ্রাইজ ইলিমেন্ট’ তার গল্পের প্রধান শক্তি নয়। অপ্রত্যাশিত চমক দিয়ে সাধারণত তাঁর গল্প শেষ হয় না বরং গল্প শেষে পাঠকের জন্য একটা বিশেষ থিমের উসকানি থাকে।মৃণালিনী দেবীর কাছে এক পত্রে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘মানুষের আত্মার চেয়ে সুন্দর আর কিছুই নেই,যখনই তাকে খুব কাছে নিয়ে এসে দেখা যায়, যখনই তার সাথে প্রত্যক্ষ মুখোমুখি পরিচয় হয় তখনই যথার্থ ভালোবাসার প্রথম সূত্রপাত হয়। তখন কোন মোহ থাকে না। কেউ কাউকে দেবতা বলে মনে করবার দরকার হয় না। মিলনে ও বিরহে মত্ততার ঝড় বয়ে যায় না কিন্তু দূরে নিকটে সম্পদে বিপদে অভাবে এবং ঐশ্বর্যে একটি নিঃসংশয় নির্ভরের সহজ আনন্দের নির্মল আলোক পরিব্যাপ্ত হয়ে থাকে।’রবীন্দ্রনাথ সর্বাধিক চিঠি লিখেছেন নির্মলকুমারী মহলানবিশকে। ১৯২৫ থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত চিঠি লিখেছিলেন প্রায় ৫শ’। এই চিঠিগুলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য সৃষ্টির এক অসামান্য নিদর্শন। ব্যক্তি এখানে তুচ্ছ বা গৌণ – সৃষ্টিকর্মই উজ্জ্বল এখানে। নির্মলকুমারীকে লেখা চিঠি থেকে ৬৪ টি চিঠি নিয়ে সংকলিত হয়েছে। ‘পথে ও পথের প্রান্তে’ বই। বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৩৮ সালে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “তাঁর চিঠি হল ভিড়ের আড়ালে অন্তরঙ্গ মানুষের সঙ্গে আলাপ প্রতিলাপ তা সর্বসাধারণের সাহিত্য দরবারে উপস্থাপিত করবার নয়”। রবীন্দ্রনাথ শেষ চিঠি লিখেছিলেন পুত্রবধূ প্রতিমা দেবীকে। মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে ১৯৪১ সালের ৩০ জুলাই ৭টি বাক্যের ওই চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘তোমাকে নিজের হাতে কিছু লিখতে পারিনে বলে কিছুতে লিখতে রুচি হয় না।’
false
mk
জনশক্তি রপ্তানি বাড়ছে বৈশ্বিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের শ্রমিকদের অন্যতম প্রধান গন্তব্য সৌদি আরব। একসময় বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির বাজারে শীর্ষে ছিল দেশটি। ২০০৮ সালে সেখানে রপ্তানি হয়েছিল এক লাখ ৩২ হাজার কর্মী। ২০০৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আসার পর সৌদি বাজারে শ্রমশক্তি রপ্তানিতে ধস নামে। কমতে থাকে জনশক্তি রপ্তানি। এই ধারা অব্যাহত ছিল ২০১২ সাল পর্যন্ত। ২০১৬ সালে নারীকর্মী নিয়োগের ঘোষণার পর নতুন করে বাড়তে থাকে কর্মী যাওয়ার হার। চলতি বছর সৗদি আরবে জনশক্তি রপ্তানি বেড়ে গেছে। একসময় বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানিতে শীর্ষে থাকা দেশটি আবার শীর্ষে চলে এসেছে। এ বছর জনশক্তি রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রাও পূর্ণ হতে চলেছে।অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজার সীমিত বলে বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনাময় জনশক্তির বড় অংশ বেকার থাকে। এই শ্রমশক্তি কাজে লাগানো যেতে পারে বিদেশের শ্রমবাজারে। অদক্ষ শ্রমশক্তি দক্ষ ও অর্ধদক্ষ হিসেবে তৈরি করে বিদেশের বাজারে পাঠানো গেলে প্রবাসী আয় বাড়বে। চলতি বছরের জুন মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফরের সময় সে দেশে চিকিৎসক, নার্স, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশায় দক্ষদের নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়। সেই আলোচনার ফল এরই মধ্যে পেয়েছে বাংলাদেশ। সৌদি আরব আবার জনশক্তি রপ্তানির শীর্ষে চলে আসায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও নতুন গতির সঞ্চার হবে। এখন নতুন নতুন দেশে বাংলাদেশের শ্রমশক্তি রপ্তানির বিষয়টিও সামনে এনে নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে।একসময় বাংলাদেশের শ্রমিকদের প্রধান গন্তব্য ছিল তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। একদিকে তেলের দরপতন, অন্যদিকে ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়াসহ কিছু দেশে চরম অস্থিরতার কারণে এই বাজার সংকুচিত হয়ে গেছে। এ ছাড়া অদক্ষ শ্রমবাজারে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতাও সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই এখন দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। বিকাশমান বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জনশক্তি গড়ে তুলতে পারলে প্রক্রিয়াটি আরো সহজ হবে। কোন দেশে কোন ধরনের জনশক্তি রপ্তানি করা যায়, সে অনুযায়ী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে বিশেষ কোনো দেশের ওপর চাপ পড়বে না। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। শ্রমবাজার খুঁজে বের করার পাশাপাশি সেখানে বাংলাদেশের শ্রমশক্তির আত্তীকরণের কাজটি দূতাবাসগুলোকেই করতে হবে। এ জন্য কূটনৈতিক তত্পরতা আরো বাড়াতে হবে।দেশে শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে পারলে তা বোঝা না হয়ে আশীর্বাদ হিসেবেই গণ্য হবে। সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০২
false
ij
গল্প_ ক্রেইন যাত্রাবাড়ি মোড়ে একটি ২০০ ফুট উঁচু ক্রেইন।ক্রেইনের মাথায় একটি পুরাতন নরকঙ্কাল ...বাতাসে দোল খায় ...ওই ভয়ানক দৃশ্যটি অনেক দূর থেকে দেখা যায় ...২কয়েক বছর আগে যাত্রাবাড়ি এলাকায় বখাটেদের দৌরাত্ম অসম্ভব রকমের বেড়ে গিয়েছিল। নিয়মিত সভা-সমিতি, মিছিলি-মিটিং -মানববন্ধন করেও ঈভ টিজিং বন্ধ করা যায়নি। বরং দিন দিন বখাটেদের দৌরাত্ম বেড়েই চলেছিল ; ... কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটল। সে সময় বাংলা ব্লগেও ঈভ টিজিং নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়। যেমন: ‘প্রথম আলো’ ব্লগে ব্লগার আব্দুল হান্নান এর লেখা একটি ব্লগ:কেন "ঈভ টিজিং" ? "বখাটেপনা" নয় কেন ?ইদানিং স্কুল/ কলেজগামী মেয়েদের উপর এলাকার (কোন নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ নেই। সমগ্র দেশ জুড়ে একই চিত্র। ) বখাটে কুলাঙ্গারদের দৌড়াত্ব মারাত্বকভাবে বেড়ে গেছে। পত্র-পত্রিকা খুললেই একটা না একটা এধরনের খবর চোখে পড়বেই। মানুষের মাঝে এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে ওঠা শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। বিভিন্ন জায়গায় সভা-সেমিনার, মিছিল, প্রতিবাদ ইত্যাদি হচ্ছে বিক্ষিপ্ত ভাবে। আমার এলাকা কুড়িগ্রামেও বেশ বড় আকারের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। এসব ভাল লক্ষণ। কিন্তু আমার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে আন্য বিষয়। তা হল এই জঘন্য কার্য্যটির বেশ সুন্দর এবং শৈল্পিক ( আলংকরিক ও বলতে পারেন) নামকরণ। মিডিয়াতে এই জঘন্য কার্য্যটিকে কী সুন্দর ভাবে নামকরণ করা হয়েছে "ঈভ টিজিং" !! কী সুন্দর সুগার কোটেড নাম !!! জনসাধারনের মাঝে এই জঘন্য কাজটিকে (মেয়েদেরকে উত্ত্যাক্ত করা, লাঞ্চিত করা, পরিধেয় বস্ত্র ধরে টানা-হেঁছড়া করা ইত্যাদি) যদি এমন শ্রুতিমধুর নামে প্রচার করা হয় , তাহলে সাধারনের মনে এর বিরুদ্ধে কি ঘৃণা জন্মাবে আর কি বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হবে, তা আমার বুঝে আসে না। বখাটে কুলাঙ্গারদের এই জঘন্য কাজকে শ্রুতিমধুর ইংরেজীতে কেন প্রকাশ করতে হবে ? কেন "বখাটেপনা" না বলে "ঈভ টিজিং" বলব? কেন ? বাংলায় কি এমন কোন শব্দ নেই, যা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ঐ কুলাঙ্গারদের মুখে ছোড়ার জন্য একদলা থুথু উঠে আসে ?মুরুব্বী নামক ব্লগার এর প্রতিক্রিয়ায় লিখলেন:প্রিয় লিখক,সমস্যাটি আজ শুধু মামুলী "সমস্যা" নামের আভিধানিক শব্দটির মাঝে সীমাবদ্ধ নেই।ব্যাধিতে রুপান্তরিত হয়ে গেছে।আমাদের যেমন প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা;পাশাপশি পারিবারিক ভাবে আমাদের ঘরেরই সন্তানদেরইশিখিয়ে দিতে হবে এর ভদ্র সমাধান।বাড়িয়ে দিতে হবে ইগনোর করার সহনশীলতা।ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা আপনাকে। ব্লগার সজল শর্মা লিখলেন:এলাকা ঠিক থাকলে এ সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করত না। আমাদের এলাকায় এসব করলে সে যেই হোক না কেন বিচারে দাঁড়াতে হয়। তাও ইউনিয়ন ভিত্তিক বিচার। অথবা গ্রাম্য সালিশ। একবার একজন প্রেমে ব্যর্থ হয়ে স্কুল থেকে যাবার পথে মেয়েকে ছড় মেরেছিল। বিচারে জুতার বাড়ি। মাদ্রাসার এক মেয়েকে রাস্তায় থামিয়ে জোর করে ছবি তুলেছিল একজন। মাদ্রাসার ছাত্ররা মিলে লাঠি নিয়ে বাড়িতে হামলা চালায়। পরে বিচারে নিষ্পত্তি। এরকম বিচার চলে আসলে কোন রেহাই নেই। তা সে চেয়ারম্যানের ছেলেই হোক না কেন। পার পাবে না। ...কিন্তু অনেক এলাকার খবর শুনে আশ্চর্য হতে হয়। শহরের দিকের খবর তো আরও খারাপ। আমি সিলেট শহরের এক আবাসিক এলাকায় কয়েক মাস থেকেছি। সেখানে দেখেছি এলাকার সবাই খুব সচেতন। কেউ বখাটেপনা করে পার পাবে না। এভাবে সব এলাকায় নিজেদের মধ্যে সচেতনতা ও বিচার ব্যবস্থা থাকলে কেউ কিছু করার সাহস পেত না।যা হোক। ঢাকায় বিশেষ করে যাত্রাবাড়িতে ঈভ টিজিংয়ের বিরুদ্ধে সাধারন মানববন্ধন (বিরোধীদলের ইন্ধনে) ক্রমশ সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়; অবস্থা বেগতিক দেখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সরকারের এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসে। এবং বৈঠকে একটি চরম সিদ্ধান্ত গ্রহন করার কথা ভাবা হয়। বখাটেদের সোপার্দ করা হবে দ্রুত বিচার আইনে-তবে অন্তত একটি রায় কার্যকর করা হবে প্রকাশ্যে ...রাশিয়ার ইউক্রেন থেকে একটি পুরাতন ক্রেইন ক্রয় করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয় । এবং বৈঠকের ছয় মাসের মাথায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সেটিকে খালাস করে এনে বসানো হয় যাত্রাবাড়ির মোড়ে। সে সময় কৌতূহলী লোকেরা নাকি জড়ো হয়েছিল সদ্য স্থাপিত ক্রেইনটির আশেপাশে। তারা বলাবলি করছিল: সরকার বিদুৎ দিতে পারে না, পানি দিতে পারে না, গ্যাসের দাম আবার বাড়াইছে ...এখন আবার কী তামাশা শুরু করছে। যা হোক। ডিবি পুলিশ ওত পেতে থেকে যাত্রাবাড়ি এলাকার একটি পেট্রোল পাম্প থেকে একজন বখাটেকে গ্রেফতার করে। বখাটের নাম সোহাগ। সে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে ক্লাস এইটের ছাত্রী রুমাকে ‘টিজ’ করত। অপমানিত রুমা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিল ... উচ্চ আদালত অপরাধ তদন্ত করে ও সাক্ষী-সবুদ যাচাইবাছাই করে মৃত্যুদন্ডের নির্দেশ দেয়। ক্রেইনের মাথায় সোহাগকে ঝুলিয়ে প্রকাশ্যে ফাঁসী দেওয়া হয়।ঢাকা শহরের লক্ষাধিক দর্শক ফাঁসী কার্যকরের দৃশ্যটি অবলোকন করেছিল। একদল গনতন্ত্রপন্থী প্রকাশ্যে ফাঁসীর বিরোধীতা করে রাস্তা আটকিয়ে শ্লোগান দিয়েছিল, পিকেটিং করেছিল। পুলিশকে সেদিন পিকেটারদের ওপর নির্মম আচরন করেছিল। বিদেশি দূতাবাসগুলো পুলিশি নির্যাতনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। এই ব্যতিক্রমী ঘটনাটি দেশজুড়ে জন্ম দিয়েছিল প্রবল বির্তকের । বেসরকারি টিভির টক শোতে বিজ্ঞ বক্তারা বলছিলেন: বাংলাদেশ কে সচেতন ভাবেই ‘ইরানীকরণের’ দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ঈভ টিজিং পৃথিবীর সব দেশেই রয়েছে। তাই বলে এমন নির্মম পন্থা বেছে নেওয়া কি ঠিক হল! ইত্যাদি ... ইত্যাদি ...দেশজুড়ে প্রবল বির্তকের ফলে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তবে বাস্তবে দেখা গেল সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তটি কার্যকরী হয়েছিল; যাত্রাবাড়ী এলাকায় বখাটেদের অপতৎপরতা একেবারে শূন্যের কোঠায় নেমে আসে।৩ক্লাস টেনের ছাত্রী রুখসানা। সকালবেলা ও স্কুলে যায়। স্কুলে যাওয়ার পথে একবার মনের অজান্তে ক্রেনের মাথায় বাতাসে দোল খাওয়া সেই পুরাতন নরকঙ্কালের দিকে চোখ যায় ।পনেরো বছরের মেয়েটি শিউরে ওঠে।তবে শিউরে উঠলেও নিরাপদ বোধ করে ও ...... বখাটে সোহাগের কারণে মৃত রুমাকে চিনত রুখসানা। গোলাপবাগেই পাশাপাশি বাড়িতে থাকত রুমা আপারা। (সোহাগরা থাকত ডেমরা থানার দক্ষিণে ওয়াপদা কলোনি ...) স্কুলে যেতে যেতে সেসব কথাও মনে পড়ে রুখসানার । রুখসানা ও রুমা আক্তার একই স্কুলে পড়ত । তারা দুজনই গোলাপবাগের ‘ফুলকি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের’ সদস্য ছিল। স্কুল কি পাড়ার কোনও অনুষ্ঠানে একসঙ্গে ‘শাপলা-শালুক ঝিলের জলে’ গাইত, নাচত। রুমা আপা কম কথা বলত, তবে চঞ্চল ছিল। ধরপুরের বর্ষীয়ান ওস্তাদ জালাল স্যারের কাছে নজরুল গীতি শিখত রুমা আপা। চমৎকার গানের গলা ছিল রুমা আপার। বিশেষ করে -‘রিমঝিম রিম রিমঝিম/ ঘন দেওয়া বরষে ...’ এই গানটি চমৎকার গাইত রুমা আপা। গানের সঙ্গে রুখসানা নাচতে চেষ্টা করত। জালাল স্যার গানের ক্লাস নিতেন ধলপুরে। যায়গাটা সায়দাবাদের কাছে। নিচতলায় রড/সিমেন্টের দোকান। দোতলায় একটা বড় ঘরে ক্লাস নিতেন জালাল স্যার। পাশের ঘরে একটা লোকনাট্য দলেরও মহড়া হত। রুখসানা তখন ক্লাস সেভেনে পড়ে । ওই লোকনাট্য দলের সোহরাব ভাইকে মনে মনে পছন্দ করত রুমা আপা। তবে রুমা আপা কখনও স্বীকার করেনি। লোকনাট্য দলের সোহরাব ভাইয়ের সঙ্গে জালাল স্যারের বন্ধুর মতো সম্পর্ক। জালাল স্যারের ছাত্রছাত্রীদের আইসক্রিম খাওয়াত সোহরাব ভাই । কেবল রুমা আপা আইসক্রীম খেত না ... তুমি আইসক্রিম খাও না কেন রুমা আপা?তাহলে গলার বারোটা বাজবে যে।শাহানা আপা যে খায়?শাহানা তো আর শিল্পী হতে চায় না। ওর বিয়ে হলেই হারমোনিয়াম বেচে দিবে। সেদিন কথাটার মানে ঠিক ধরতে পারেনি রুখসানা। রুমার মৃত্যুর সংবাদে জালাল স্যার অবোধ শিশুর মতন কেঁদেছিলেন ...বহুদিন গানের ক্লাস বন্ধ রেখেছিলেন। জালাল স্যারের বাড়ি রংপুর, বিয়ে-থা করেননি; ছোট ছোট শিশু-কিশোরদের নজরুলের গান শেখানোই জীবনের ব্রত ছিল ...রুমার মৃত্যুর পর জালাল স্যার কে আর ধলপুরে দেখা যায়নি। মঙ্গল আর বৃহস্পতিবার জালাল স্যার ক্লাস করাতেন। রুমা আপার সঙ্গে রুখসানা সন্ধ্যার আগে আগে রিকশা করে ধরপুর থেকে গোলাপবাগের বাসায় ফিরত। একবার খুব বৃষ্টি নামল। জুন মাস। রুমা আপা বলল, চল ভিজি।কও কি! ভিজবা? রুখসানা অবাক।হ্যাঁ। খালুজান বকলে? বকলে বলব রিকশা পাই নাই। বলে রুমা আপার কি হি হি করে হাসি। সেই বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় ধলপুর থেকে রুমা আপার সঙ্গে হেঁটে হেঁটে গোলাপবাগের বাসায় ফিরেছিল রুখসানা। মাঝখানে একটা পেট্রোল পাম্পের পাশে রেস্টুরেন্ট । আলুর চপ ভাজছিল। চল, চপ খাই। বলে রুখসানা কে হাত ধরে টেনে রেস্টুরেন্ট ভিতরে নিয়ে গিয়েছিল রুমা আপা। দুজনেরই সালোয়ার কামিজ ভিজে গেছে। মেয়ে বলে রেস্টুরেন্টের লোকেরা কিছু বলে নাই। রেস্টুরেন্টের মালিক এক দাড়িঅলা হাজী ছাব ... তিনি অবশ্য বকা দিছিলেন ...ওই রেস্টুরেন্টেই সোহাগ প্রথম ভিজে কাপড়ে দেখে রুমা আপাকে।রুখসানা জানে ...লোকনাট্য দলের সোহরাব ভাইও সেই সন্ধ্যায় ওই রেস্টুরেন্ট ভিতরে বসে ছিলেন ...সিগারেট টানছিলেন। রুখসানা ভারি অবাক হয়ে গিয়েছিল...সোহরাব ভাইয়ের সঙ্গে অবশ্য কথা হয়নি। ঘটনাটি সম্ভবত কাকতালীয়। তবে রেস্টুরেন্ট বেরিয়ে রুখসানা রুমা আপাকে চার্জ করে: সোহরাব ভাই জানল কেমনে আমরা এখন এইখানে আসব?আমি কি জানি। বলে রুমা আপা মুখ টিপে হাসে। আমি খালুজানকে বলে দিব।বল।সত্যি বলে দিব।মার খাবি ছেড়ি। বলে রুমা আপা হাসতে হাসতে সেই বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছিল গোলাপবাগের বাতি জ্বলে ওঠা রাস্তায় ... আজও স্কুলে যাওয়ার পথে একবার মনের অজান্তে ক্রেনের মাথায় বাতাসে দোল খাওয়া সেই পুরাতন নরকঙ্কালের দিকে চোখ যায় রুখসানার ।পনেরো বছরের মেয়েটি ক্রোধ টের পায় ওর গভীর ভিতরে।রুমার মৃত্যুর পর সোহরাব ভাইকে আর ধলপুরে দেখা যায়নি ...
false
rn
বাঁচতে হলে জানতে হবে-১২ ১৮০০সাল(১৮০০ থেকে ১৮৫০সাল পর্যন্ত,বাকি গুলো পরে হবে।)১৮০০সালবাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ শুরু হয়।ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।উইলিয়াম কেরি শ্রীরামপুর মিশন প্রতিষ্ঠা করেন।মার্কিন যুক্তরাষ্ট 'লাইব্রেরী অব কংগ্রেস স্থাপন করা হয়।বাইবেল বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়।ইউরোপের দেশ গুলোতে গাছ দিয়ে অন্দর মহল সাজানো হতো।১৮০১সালবাংলার জেলা সুমহের একটি ধারনাগত আদম শুমারি করা হয়।খৃষ্টান পাদীদের উদ্যোগে শ্রীরামপুর মিশনে প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলা বানানের রুপ নিদিষ্ট করা হয়।ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাংলা বিভাগ চালু করা হয়।১৮০২সালরিচার্ড ট্রেভিথিক রেললাইনের ওপর দিয়ে চালাবার মতো বাষ্পিয় শকট তৈরী করেন।নিউ ইয়র্কে বইমেলা শুরু হয়।১৮০৩সালপঞ্চানন'ই ভারত বর্ষে প্রথম নাগরী ভাষায় হরফ নির্মান করেন।রনবঙ্কমল্ল হরিকাল দেবের একটি 'তাম্রলিপ্তি' আবিস্কৃত হয়।১৮০৪সালনেপোলিয়ন ফ্রান্সের সমাট্র ঘোষিত হয়।বিজ্ঞানী লুই জাক তেনার হাইড্রোজেন পারক্সাইড প্রথম আবিস্কার করেন।১৮০৫সাল'ক্যাপটেন পোগসন' ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে কলকাতা এসেছিলেন।১৮০৬সালজন ষ্টুর্য়াট মিল (দার্শনিক ও অর্থনীতিবিদ) ইংল্যান্ডে জন্ম গ্রহন করেন।১৮০৭সালআমেরিকায় রর্বাট ফুলটন প্রথম ব্যাসায়িকভাবে সফল বাষ্পচালি জাহাজ প্রবর্তন করেন।১৮০৯সালচার্লস ডারউইন জন্ম গ্রহন করেন ইংল্যান্ডে।১৮১০সালচিলি স্বাধীনতা লাভ করে।ইংরেজরা মরিশাস দখল করে।১৮১১সালফরাসি দেশে বের্নার কুর্তোয়া সর্বপ্রথম আয়োডিন আবিষ্কার করেন।জন ডালটন গ্যাসের তরলীকরন আবিষ্কার করেন।ভিয়েনায় সর্বপ্রথম রাবার কারখানা স্থাপিত হয়।১৮১২সালরর্বাট বুনসেন জন্মগ্রহন করেন।(রসায়ন বিজ্ঞানী)নেপোলিয়ন বোনপার্ট মৃত্যুবরন করেন।(৫,মে)১৮১৩সালটিপু শাহ পাগল পন্থী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।বিট্রিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলাদেশের শাসনভার এবং ব্যবসা- বানিজ্য নিয়ন্তন করে।১৮১৪সালজর্জ ষ্টিভেনসন তৈরী করেন ছোট্র ইঞ্জিন গাড়ি।১৮১৫সালবিখ্যাত 'ওয়াটার লুর' যুব্ধ অনুষ্ঠিত হয়।রয়টার(সংবাদ সংস্থা) লন্ডনে প্রতিষ্ঠিত হয়।দাজিলিং এ প্রকৃত পক্ষে কোনো স্থায়ী বসতি ছিল না।১৮১৬সালফরাসি চিকিৎসক রনে তেওফিল্ লেনেক্ একটি ফাঁপা কাঠের নলের সাহায্যে প্রথম ষ্টেথোস্কোপ নির্মান করেন।১৮১৭সালঢাকার বিখ্যাত এবং উপমহা দেশের অন্যতম সমৃব্ধ গন পাঠাগার রামমোহন লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠিত হয়।আফ্ ভেডসোন লিথিয়ান আবিস্কার করেন।(লিথিয়াম সবচেয়ে হালকা ধাতু)কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় হিন্দু কলেজ।১৮১৮সালপৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম সমুদ্রগামী জাহাজ তৈরী করা হয়।এপ্রিল মাসে প্রথম বাংলা সাময়িক পএ 'দিকদর্শন' প্রকাশিত হয়।হাজী শরীয়ত উল্লাহ সংস্কার আন্দোলন শুরু করেন।১৮১৯সাল'গুস্তাভ কুরব্যে' ফ্রান্সের খ্যাতিমান চিএ শিল্পী জন্মগ্রহন করেন।১৮২০সালঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যা সাগর জন্মগ্রহন করেন।কাগজের মন্ড তৈরির জন্য শ্রীরামপুরেই সর্বপ্রথম বাষ্পচালিত ইঞ্জিন ব্যবহৃ্ত হয়েছিল।প্রথম কফি বীজ থেকে ল্যাবটরিতে বিশুব্ধ কফিন নিষ্কাশন সম্ভব হয়।ব্রিটেনে ক্ষমতাসীন সরকার দাস প্রথা নিরুসাহিত করে।১৮২১সালগ্রীক স্বাধীন হয়।নেপোলিয়ন মারা যায়।মেক্সিকো স্বাধীনতা লাভ করে।মিস মেরি এন কুক কলকাতায় আগমন করেন।১৮২২সাললুই পাস্তুর জন্মগ্রহন করেন।কলকাতায় মোটর বাস চালু হয় এবং লিথোগ্রাফি মুদ্রন চালু হয়।১৮২৩সালটিকার আবিষ্কর্তা জেনার মারা যান।১৮২৪সালমাইকেল মধু সুদন দও জন্মগ্রহন করেন।(যশোর)ইওন্স ইয়াকব বার্জেলিয়াস নামে সুইডিশ বিজ্ঞানী প্রথম সিলিকন কে মৌল হিসেবে শনাক্ত করেন।১৮২৫সালবিট্রেনে প্রথম রেলপথ বসানো হয়।আমেরিকায় হোমিও প্যাথি চিকিৎসা শুরু হয়।১৮২৬সালপ্যাট্রিক বেল ঘুর্নায়মান ব্লেডের সাহায্যে গম কেটে স্তুপ করে রাখতে সক্ষম হন।১৮২৭সালদার্শনিক ও গনিতবিদ বাট্রান্ড রাসেল ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহন করেন।তিতুমীর চব্বিশ পরগনা ও নদীয়া জেলায় মুসলমানদের মধ্যে ইসলামি অনুশাসন প্রচার শুরু করেন।১৮২৮সালফরাসি ঔপন্যাসিক জুল ভার্ন ফ্রান্সে জন্মগ্রহন করেন।'ব্রাক্ষ্ম সমাজ' রাজা রামমোহন রায় প্রতিষ্ঠা করেন।১৮২৯সালগ্রীস স্বাধীনতা লাভ করে।পিটার কুপার প্রথম যাএীবাহী রেলগাড়ি তৈরি করেন।সতীদাহ প্রথা বাতিল করা হয়।লন্ডনে জর্জ ব্রেইটওয়েট প্রথম ষ্ট্রিমের দমকল ঊদ্ভাবন করেন।১৮৩০সালবাংলা বাজারে হাবশী ও কাফ্রী নামে পরিচিত আফ্রিকান ক্রীত দাস-দাসী আমদানী করা হত।বৈদেশিক কোম্পানী র‌্যালি ব্রাদার্স সর্বপ্রথম নারায়নগঞ্জে পাটের ব্যাবসা শুরু করে।১৮৩১সালকৃষ্ণ মোহন এনকোয়েরার পএিকা প্রকাশ শুরু করেন।'সংবাদ প্রভাকর' প্রথম সাপ্তাহিক হিসেবে প্রকাশিত হয়।তিতুমীরের মৃত্যু হয়।নারিকেল বাড়িয়ায় বাঁশের কেল্লা ধ্বংস হয়।১৮৩২সালনিধু গুপ্তের অনেক গান 'গীতরত্ন' নামে গানের একটি সংকলন প্রকাশিত হয়।১৮৩৩সালআলফ্রেড নোবেল জন্মগ্রহন করেন।(ডিনামাইট আবিস্কার করেন)ছবি কে চলমান দেখাবার জন্য ব্রিটিশ গনিতজ্ঞ হর্নার জোইট্রোপ বা জীবন চক্র নামে এক যন্ত আবিস্কার করেন।১৮৩৪সালরর্বাট ব্রুস আসামের উঁচু অঞ্চলে চা গাছের সন্ধান পান যা ভারতের চা শিল্পের ভিওি স্থাপন করে।১৮৩৫সালকলকাতা মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।আদালতে ফার্সী ভাষার পরিবর্তে ইংরেজী ভাষার প্রচলন শুরু হয়।উপমহাদেশে প্রথম মুদ্রা আইন চালু হয়।কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠিত হয়।১৯৩৬সালবাংলার অনেক নদীকে জলদস্যু উপদ্রুত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে।সাধক,ধর্ম প্রচারক রামকৃষ্ণ জন্মগ্রহন করেন।(তার সবচেয়ে বিখ্যাত শিষ্য স্বামী বিবেকান্দ)১৮৩৭সালরানী ভিক্টোরিয়া মাএ ১৮ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের সিংহাসন আহোরন করেন।১৮৩৮সালইংরেজ ঔপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্সের লেখা উপন্যাস 'অলিভার টুইষ্ট' প্রকাশিত হয়।মরিজ হারমান ভন ইলেক্ট্রিক মটর তৈরী করেন।আধুনিক দার্জিলিং এর যাএা শুরু হয়।১৮৩৯সালস্কটল্যান্ডের ম্যাক মিলান সর্বপ্রথম চড়ার মতো উপযোগী সাইক্যাল তৈরী করেন।১৮৪০সালজর্জ গ্রে উওর অষ্টেলিয়ায় আবিস্কার করেন ছবি আঁকা বেশ কয়েকটি গুহা।চট্রগ্রামে চা বাগান তৈরী কাজ শুরু হয়।১৮৪১সালঢাকা কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।১৮৪২সালইংরেজ আমলে নীল ও চিনি ব্যাসায়ীদের স্বাথে খুলনা মহকুমা গঠিত হয়।দক্ষিনাঞ্চলের উপকূলে জোয়ারের টানে সর্বপ্রথম 'তিমি' আটকে পড়ে অল্প পানিতে।ফ্রান্সে এ ডোরিয়ান হার্মোনিয়াম প্রথম তৈরী করেন।১৮৪৩সালডাক টিকিটের ব্যবহার শুরু হয়।ভারত বর্ষীয় ব্রাক্ষ্মসমাজ গঠিত হয়।১৮৪৪সালপূর্ব বঙ্গের নৌপথে সর্বপ্রথম যান্তিক নৌযান চলাচলের সূচনা ঘটে।(৬,ফ্রেরুয়ারী)১৮৪৫সালরাজ বংশের অবসান ঘটে।১৮৪৬সালমঞ্চে প্রথম বৈদ্যুতিক আলো ব্যাহার করা হয়।ইউরেনাসের গতি পথ পর্যবেক্ষন করতে গিয়ে বিজ্ঞানীদের চোখে নেপচুন প্রথম ধরা পড়ে।১৮৪৭সালটমাস আলভা এডিসনের জন্ম।১৮৪৮সালসাঁ সুচি থিয়েটারে একজন বাঙ্গালী অভিনেতা ওথেলো নাটকে নাম ভুমিকায় অভিনয় করেন।একজন আর্মেনীয়া ব্যাবসায়ী ও জমিদার এন.পি পোগোজ দেশের প্রথম বেসরকারী স্কুল 'পোগোজ স্কুল' হিসেবে চালু করে।কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাএরা প্রথম ফুটবলের জন্য আইন-কানুন প্রনয়ন করে।১৮৪৯সালবেথুন স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।১৮৫০সালপৃ্থিবীর সবর্এ ডাকটিকিট ব্যবস্থা প্রসার লাভ করে।হুসাইন আলী ওরফে বাহাউল্লাহ নিজেকে আল্লাহ কৃ্র্তক প্রেরিত ব্যাক্তি বলে দাবি করেন।(তার জন্ম ইরানে)সোয়ারী ঘাট(ঢাকার একটি পাইকারী মাছের বাজার)বুড়ি গঙ্গা নদীর তীরে প্রতিষ্ঠিত হয়।ইলেকট্রনিক্সস যুগ শুরু হয়।
false
ij
None যেনোবিয়া: খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীর সিরিয়ার রানী। সুন্দরী বিদূষী ও সুশিক্ষিত যেনোবিয়া গ্রিক ও প্রাচীন মিশরীয় ভাষাসহ অনেক কটি ভাষা জানতেন । সিরিয়ার প্রথম পূর্নাঙ্গ ইতিহাস তিনিই লিখেছিলেন; ছিলেন সমরকুশলী; রণক্ষেত্রে সাধারণ সৈন্যদের পাশাপাশি যুদ্ধ করেছেন। অসম সাহসীকতায় রুখে দিয়েছিলেন আগ্রাসী রোমের সমরাভিযান ... রোমান সম্রাট আউরেলিয়ান (২১২/২৭৫) এর ছিল মহৎ এক হৃদয়। রোমের এক পরম শক্রকে হত্যা না করে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন । তিবর নদীর তীরে সেই শক্রর জন্য মনোরম ভিলা বরাদ্দ করে দিয়েছিলেন। সাধারণ সৈন্য থেকে উঠে এসে রোমের সম্রাট হয়েছিলেন আউরেলিয়ান। সৈন্যদের মাঝে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। রোমান সম্রাট ক্লাউদিয়াস ২য় এর মৃত্যুর পর রোমান সৈন্যরা আউরেলিয়ান কে সম্রাট নির্বাচিত করেন। রোমান সম্রাট আউরেলিয়ানযোগ্য শাসক ছিলেন আউরেলিয়ান। বর্বর জার্মান গোত্র আলামানিরা রোমান সাম্রাজ্যে উত্তর সীমান্তে বারবার হানা দিচ্ছিল। আউরেলিয়ান তাদের দমন করে দানিয়ুব নদীর উত্তর সীমান্ত রোমান সাম্রাজ্যে অর্ন্তভূক্ত করেন। যা হোক। বলছিলাম আউরেলিয়ান রোমের এক পরম শক্রকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন হত্যা না করে।বড় বিচিত্র সে কাহিনী। আমরা এখন সে কাহিনীতে প্রবেশ করছি। পালমিরা নগরিটি ছিল সিরিয়ায়। ধূ ধূ মরুভূমির মাঝখানে মরুদ্যান। সেই মরুদ্যানজুড়ে পামগাছের অরণ্য। সেখানেই গড়ে উঠেছিল প্রাচীন এক বসতি। জায়গাটি পামগাছঅধ্যুষিত বলেই জায়গাটির নাম পালমিরা। জায়গাটির প্রকৃত নাম অবশ্য তাদমর। পালমিরারোম থেকে পারস্যে যাওয়ার পথে ছিল বিধায় খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকেই ব্যবসাবানিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল পালমিরা। দামাশকাস, মিশর ও ফিনিসিয়ার সঙ্গে ব্যবসাবানিজ্য করে পালমিরায় এক ধনী মধ্যবিত্তশ্রেণি গড়ে উঠেছিল।তৎকালীন বিশ্ব ও পালমিরাসুপ্রাচীন কাল থেকেই পালমিরায় ছিল মিশ্র সংস্কৃতির শান্তিপূর্ন সহবস্থান। নানা জাতির বাস ছিল পালমিরায়। গ্রিক রোমান বেদূঈন মেসোপটেমিয় ইরানি।১১৪ খ্রিস্টাব্দে পালমিরা রোমান শাসনের অর্ন্তভূক্ত হলেও পারমিরার কমবেশি স্বাধীনতা ছিল। তার কারণ আছে। পালমিরার সৈন্যরা ছিল দক্ষ তীরন্দাজ । রোমানদের সঙ্গে ইরানি পার্থিয়দের যুদ্ধ চলছিল। রোমান সম্রাট হাদরিয়ান পার্থিয়দের বিরুদ্ধে পালমিরার দক্ষ তীরন্দাজ নিয়োগ করেছিলেন ।পালমিরাচারটে শক্তিশালী গোত্র ছিল পালমিরায় । তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল আমলাকি গোত্র । আমলাকি গোত্রের শেখ ছিলেন আমর ইবনে জারিব । বহু আগে থেকেই শেখ পরিবারের রোমের নাগরিকত্ব ছিল। দূভার্গ্যজনকভাবে আমর ইবনে জারিব প্রতিপক্ষ গোত্রের আক্রমনে নিহত হলে তার মেয়ে যেনোবিয়া আমলাকি গোত্রের প্রধান নির্বাচিত হন। সিরিয়ায় পালমিরার অবস্থানরোমের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠার কারণেই সম্ভবত সেকালে পালমিরায় আরব নামের সঙ্গে রোমান নাম গ্রহন করারও রীতি ছিল। যেমন যেনোবিয়ার রোমান নাম ছিল জুলিয়া আওরেলিয়া যেনোবিয়া কিন্তু আরবি বা সেমেটিক নাম হল আল যাববা। এর মানে, ‘যার চুল দীর্ঘ ও সুন্দর।’ যেনোবিয়া অবশ্য স্বাক্ষর করতেন ‘বাথ যাববাই’ নামে যার অর্থ আল যাববা-এর মেয়ে। যেনোবিয়ার মায়ের নামও ছিল আল যাববা। যেনোবিয়া নামটি গ্রিক । তৃতীয় শতকের প্রারম্ভে পালমিরা রোমান উপনিবেশে পরিনত হয়। এবং সেই উপনিবেশ শাসন করার জন্য রোমান সিনেটে পালমিরাবাসী থেকেই সিনেট নির্বাচিত করার আইন পাস করা হয়। ২৫৮ খ্রিস্টাব্দে পালমিরার সিনেটর নিযুক্ত হন সেপটিমিয়াস ওডাইনাত। সেপটিমিয়াস ওডাইনাত ছিলেন আমলাকি গোত্রের একজন সদস্য। ২৫৮ খ্রিস্টাব্দেই যেনোবিয়াকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করেন ওডাইনাত । বিয়ের পর যেনোবিয়া নিজের নাম রাখেন সেপতিমিয়া যেনোবিয়া। হাইরান নামে সেপটিমিয়াস ওডাইনাত প্রথম পক্ষের এক ছেলে ছিল । পরে যেনোবিয়ারও একটি ছেলে হয়। ছেলের নাম রাখা হয় ভাবাললাথুস। ২২৭ খ্রিস্টাব্দে পার্থিয় সাম্রাজ্যের পতনের পর পারস্যে শক্তিশালী সাসানিদ রাজবংশের উত্থান হয়। তারপর থেকেই ঐ অঞ্চলের রাজনৈতিক ভারসাম্যটি বদলে যেতে থাকে। সেপটিমিয়াস ওডাইনাত পারস্যের দিকে না ঝুঁকে বরং রোমের পক্ষেই ছিলেন। ২৬০ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট ভালেরিয়ান পারস্য আক্রমন করেন। পারস্য সম্রাট প্রথম সাপুর তাকে বন্দি করে হত্যা করেন। সেপটিমিয়াস ওডাইনাত প্রতিশোধ গ্রহনের জন্য পারস্যের উদ্দেশে রওনা হন। সেসময় স্বামীর পাশে যেনোবিয়াও ছিলেন । এভাবেই যেনোবিয়ার রাজনৈতিক-সামরিক উত্থান শুরু হয়। প্রথমে আমলাকি গোত্রের প্রধান হিসেবে । দ্বিতীয়বার পারস্য অভিযানের সময়। যেনোবিয়া সে যুগের নারীদের তুলনায় একেবারেই যেন অন্যরকম। সুন্দরী অভিজাত। কার্থেজের রানী ডিডোর সঙ্গে নিজের সম্পর্ক দাবী করেছিলেন। নিজের সম্পর্ক দাবী করেছিলেন মিশরের ক্লিওপেট্রার সঙ্গেও । তবে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে প্রাচীন মিশরে ভাষা সর্ম্পকে ধারনা ছিল যেনোবিয়ার । যেনোবিয়ার মা আল যাববা সম্ভবত মিশরিয় ছিলেন। ২৬৭ খিস্ট্রাব্দ । যেনোবিয়ার স্বামী সেপটিমিয়াস ওডাইনাত ও তার ছেলে হাইরান আততায়ীর হাতে নিহত হলেন। যেনোবিয়ার ছেলে ভাবাললাথুস তখন সবে নাবালক। ছেলেকে সিংহাসনে বসিয়ে তার পক্ষে যেনোবিয়া পালমিরা শাসন করতে থাকেন । রাজকার্য পরিচালনা করা যেনোবিয়ার নতুন কিছু না। উপরোন্ত, যেনোবিয়া ছিলেন স্বাধীনচেতা, উচ্চাকাঙ্খি ও বুদ্ধিমতি। বাইরে বাইরে রোমের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে রাজ্যবিস্তারে উদ্যোগ নিলেন তিনি। নিজেও কয়েকটি সামরিক অভিযানে অংশ নিয়ে হয়ে উঠলেন পালমিরার যোদ্ধাদের কাছে অফুরন্ত প্রেরণার উৎস। যেনোবিয়ার দৈহিক সৌন্দর্য, যৌন আবেদন ও খোলামেলা পোশাক পালমিরা যোদ্ধাদের সারাক্ষণ উত্তেজিত করে রাখত। যেনোবিয়া ঘোড়ার চড়তেন সাবলীল ভঙ্গিমায় ;সেনাপতিদের সঙ্গে একত্রে বসে সুরা পান করতেন। তবে নাকি সহজে মাতাল হতেন না। এসব কারণেই পালমিরার যোদ্ধাদের কাছে যেনোবিয়ার হয়ে উঠলেন সাক্ষাৎদেবী। একালের শিল্পীর আঁকা যেনোবিয়ার ছবি২৭০ খ্রিস্টাব্দ। মিশর ছিল গুরুত্বপূর্ন রোমান প্রভিন্স। প্রবল আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে যেনোবিয়া সসৈন্য মিশরের দিকে অগ্রসর হতে থাকলেন। ৫০,০০০ মিশরীয় সৈন্য প্রতিরোধ কল্পে রুখে দাঁড়াল। লাভ হয়নি। যেনোবিয়ার অনুগত পালমিরার সৈন্যরা মিশরীয় সৈন্যদের পরাজিত করে মিশর দখল করে নেয়। মিশর ও সিরিয়ারোমান সম্রাট তখন ২য় ক্লাউদিয়াস । মিশর হাত ছাড়া হয়ে গেলে তিনি ভয়ানক ক্রদ্ধ হয়ে উঠলেন। যেনোবিয়াকে উচিত শিক্ষা দিতে রোমান অ্যাডমিরাল প্রবাস কে পাঠালেন । লাভ হয়নি। যেনোবিয়ার পরিচালনায় যুদ্ধে পালমিরার যোদ্ধারা রোমান সৈন্যদের পরাজিত করেন। দূর থেকে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া অভ্যন্তরীণ সঙ্কটের কারণে রোমানদের করার ছিল না কিছুই।রোমানদের পরাজিত করে যেনোবিয়া আরও উচ্চভিলাষী হয়ে ওঠে। ২৭১ খ্রিস্টাব্দের অগাস্ট মাস। পালমিরার সৈন্যরা যেনোবিয়া কে ‘সবচে আকর্ষনীয় ও পূন্যবতী রানী’ উপাধিতে ভূষিত করে। বিশাল সৈন্যবাহিনীর সমর্থন লাভ করে ছেলে ভাবাললাথুস কে যেনোবিয়া অগাস্টাস (রোমান সম্রাটের উপাধি) উপাধিতে ভূষিত করেন।মিশর দখল করে ও রোমানদের পরাজিত করে শুরু হল বিলাসবহুল জীবনযাপন। আহার ও উপাসনায় শুরু করলেন পারসিক সম্রাটের রীতিনীতি অনুসরণ । পরলেন রাজকীয় কার্থেজিয় পোষাক। কখনও মিশরের রানীর মতন বেগনি রঙের স্বর্ণখচিত রাজকীয় পোশাক। একে একে গুরুত্বপূর্ন বানিজ্যপথগুলি নিয়ন্ত্রন করতে লাগলেন। তবে তার নীতি ছিল উদার। বিশেষ করে আলেকজান্দ্রিয়ার ইহুদিদের প্রতি সহনশীল ছিলেন । অন্যদিকে আন্টিওক এর খ্রিস্টান বিশপ-এর সঙ্গেও গড়ে তুললেন সুসম্পর্ক । যেনোবিয়ার শিলালিপিমিশরের আলেকজান্দ্রিয়া ও এশিয়া মাইনরের আন্টিওক নগর নিজের নিয়ন্ত্রণে প্রতিষ্ঠা করলেন যেনোবিয়া । আন্টিওক নগরটির ধ্বংস স্তূপ বর্তমান তুরস্কের এনটাকিয়া শহরের কাছে। সে কালে নগরের বাইরে প্রবাহিত হত ওরেনটেস নদীটি।পালমিরা সাম্রাজ্যসমগ্র অঞ্চল নিজের অধীন এলে যেনোবিয়া নিজেকে অগাস্টা (সম্রাজ্ঞী) এবং রেজিনা (রানী) ঘোষনা করে আলেকজান্দ্রিয়ার মুদ্রা থেকে রোমান সম্রাটের ছবি অপসারন করে নিজের ছবি খোদাই করার নিদের্শ দেন ।দূর থেকে এসবই লক্ষ করছিল রোম ।এবং রোম যেনোবিয়া কে সম্পূর্নরুপে ধ্বংসের আয়োজন সম্পন্ন করে । রোমের সম্রাট তখন আউরেলিয়ান । যাঁর একটি মহৎ ও সুন্দর হৃদয় ছিল। ২৭২ খ্রিস্টাব্দ। সম্রাট আউরেলিয়ান পালমিরার বিরুদ্ধে তাঁর সামরিক অভিযান শুরু করেন। প্রথমেই তিনি খুব সহজেই মিশর পুনুরুদ্ধার করেন। যেনোবিয়া তখন সসৈন্য আন্টিওক নগরীতে। এশিয়া মাইনরের দিকে অগ্রসর হলেন সম্রাট আউরেলিয়ান । সম্রাট আউরেলিয়ান আন্টিওক অভিমূখে সসৈন্য অগ্রসর হচ্ছেন শুনে যেনোবিয়া ঘোড়া পিঠে চেপে ওরেনটেস নদীর পাড়ে পালমিরার সৈন্যদের অবস্থান নিতে নির্দেশ দিলেন। লাভ হয়নি। কেননা, সম্রাট আউরেলিয়ান ছিলেন দক্ষ ও অভিজ্ঞ। লক্ষ করুন। তাঁর নির্দেশে রোমান সৈন্যরা পালিয়ে যাওয়ার ভান করে। পালমিরার নির্বোধ সৈন্যরা রোমানদের গূঢ় পরিকল্পনা বুঝতে না -পেরে রোমান সৈন্যদের ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ে ও মূল বাহিনী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। রোমান সৈন্যরা তাদের কচুকাটা করে। সিরিয়ার পশ্চিমে ছিল এমেসা নগর। বিপদ বুঝে যেনোবিয়া এমেসায় চলে আসেন। এখানেই দুপক্ষের ৭০,০০০ করে সৈন্য মুখোমুখি হয়। অত সৈন্য প্রাচীন বিশ্বের তুলনায় বিশাল সংখ্যা। এটিই রোমান ও পালমিরার সৈন্যদের মধ্যে সর্বশেষ যুদ্ধ। রোমান সৈন্যরা বুঝিয়ে দিল তারা কতটা পেশাদার। পালমিরা সৈন্যরা পরাজিত হয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এমেসা থেকে পালমিরা ১০০ মাইল পুবে। সেই মরুময় পথে যেনোবিয়া পালমিরার দিকে পিছু হটতে থাকেন। সম্রাট আউরেলিয়ান পলাতকা বিদ্রোহীনির পিছু নেন। যেনোবিয়া পালমিরা নগরে ঢুকে জনারণ্যে মিশে যান। সম্রাট আউরেলিয়ান পালমিরা অবরোধ করেন। সিজমেশিন দিয়ে বড় বড় র‌্যাম (পাথর) ছুঁড়ে পালমিরার প্রাচীর ধসিয়ে দিতে থাকে। এক সময় পালমিরার প্রতিরক্ষা প্রাচীরটি হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়ে। রোমান সৈন্যরা নগরে প্রবেশ করে ধ্বংসযজ্ঞে মেতে ওঠে। না। যেনোবিয়াকে ধরা যায়নি। তিনি রাতের অন্ধকারে নগর থেকে পালিয়ে যান। ফোরাত (ইউফ্রেতিস) নদীর পাড়ে অবশ্য তিনি পরে ধরা পড়েন। সুন্দরী বন্দিনীকে সম্রাট আউরেলিয়ানএর সামনে আনা হল। সম্রাট আউরেলিয়ান এই প্রথম পালমিরার রানীকে দেখলেন এবং মুগ্ধ হলেন । সম্রাট আউরেলিয়ান-এর ছিল মহৎ এক হৃদয়। 'আমি নারী'-এই বলে যেনোবিয়া নিজের মুক্তি দাবী করলেন। সম্রাট আউরেলিয়ান অভিজ্ঞ পুরুষ। তিনি বন্দিনীকে রোমে পাঠানোর নির্দেশ দিলেন । রোমে যাওয়ার পথে যেনোবিয়ার ছেলে ভাবাললাথুস মারা যায়। সেকালে রোমে সম্রাটের বিজয় প্যারেড অনুষ্ঠিত হত। বন্দিরা রোমের পথ প্রদক্ষিণ করে সম্রাটের সামনে উপস্থিত হত। যেনোবিয়াও রোমের পথ প্রদক্ষিণ করলেন; শরীরে সোনার শৃঙ্খল। পালমিরার রানীর শরীরে সোনার শৃঙ্খল। দৃশ্যটি যুগে যুগে শিল্পীদের উজ্জ্বীবিত করেছে।যেনোবিয়া রোমের রাস্তায় হাঁটছেন। আর মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। সেকালে বিদ্রোহীদের ক্ষুধার্ত সিংহের সামনে ছেড়ে দেওয়া হত। যেনোবিয়া শিউড়ে উঠলেন। তারপর বিশাল এরিনায় প্রবেশ করে সম্রাটের সামনে দাঁড়ালেন। পালমিরার রানীকে ঘিরে সৌন্দর্য ও অহঙ্কার ঝলমল করছিল। সম্রাট আউরেলিয়ান মুগ্ধ হলেন। পরিতৃপ্ত পুরুষ তিনি। রোমান বাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছেন। রোম নগরী ঘিরে ১২ মাইল দীর্ঘ প্রতিরক্ষা দেওয়াল তুলেছেন। রোমান সিনেট তাঁকে সাম্রাজ্যের পুনুরুদ্ধারকারী উপাধি দিয়েছে। হ্যাঁ পরিতৃপ্ত পুরুষ সম্রাট আউরেলিয়ান। কাজেই তিনি পালমিরার রানীকে মুক্ত করে দেন। এত সুন্দর রুপ ক্ষুধার্ত সিংহীর আহার হবে! তারপর?তারপর পারস্য অভিযানকালে সম্রাট আউরেলিয়ান রোমান সৈন্য দ্বারা নিহত হন। অথচ, সাধারণ সৈন্য থেকে উঠে এসে রোমের সম্রাট হয়েছিলেন আউরেলিয়ান। সৈন্যদের মাঝে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। চিরকাল কারও ভাগ্য একরকম থাকে না। যাই হোক। কেউ কেউ বলে সম্রাট আউরেলিয়ান এর মৃত্যুর পর যেনোবিয়া আত্মহত্যা করেছিলেন। তবে অধিকাংশের মত এই যে সম্রাট আউরেলিয়ান অবসর ভাতাসহ তিবর নদীর তীরে এক মনোরম এক ভিলা বরাদ্দ করেছিলেন যেনোবিয়াকে। বাকী জীবন সেখানেই কেটেছিল যেনোবিয়ার দর্শনচর্চা আর লেখালেখি করে। রোমান এক গর্ভনরকে নাকি বিয়েও করেছিলেন যেনোবিয়া । মেয়েও নাকি হয়েছিল। মেয়েদের রোমান অভিজাত পরিবারে বিয়েও হয়েছিল। পঞ্চম শতকে ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে সেন্ট যেনোবিয়াস নামে এক বিশপের কথা জানা যায়।বিশপ যেনোবিয়াস সম্ভবত যেনোবিয়ার বংশধর ছিলেন। ইতিহাস এভাবেই বিস্ময়কর ...
false
mk
বাংলাদেশের একটি অর্জন বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনাময় একটি দেশ, এই দেশ বিপুল সম্পদ ও ঐতিহ্যের অধিকারী এ কথা অসংখ্যবার উচ্চারিত হয়ে আসছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহল থেকে। এই সম্ভাবনা প্রতিষ্ঠা পাবে বা বাস্তবায়ন ঘটবে তার শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রচেষ্টা, নারীর অধিকার সংরক্ষণ, মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ এবং দেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলাসহ সংসদীয় গণতন্ত্রের বিকাশ ও প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করার মধ্যদিয়ে। দেশ থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে। কেবল দেশব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালিত হলেই ওই অপার সম্ভাবনার পরিস্ফুটন ঘটবে না। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের সঙ্গে অপরাপর বিষয়ের সংস্কার ও উত্তরণ ঘটাতে হবে। তাহলেই অপার সম্ভাবনার বাস্তবায়ন ঘটানো সহজ হবে। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে।আশার কথা, দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে তৃতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পরের অবস্থানে রয়েছে শ্রীলংকা, ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। বাংলাদেশের আগের দুটি অবস্থান ভুটান ও নেপালের। এছাড়া বিশ্বের ১৬২টি দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম। চলতি সপ্তাহে একটি অলাভজনক বৈশ্বিক সংস্থা ইন্সটিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস ‘গ্লোবাল পিস ইনডেক্স’ (জিপিআই) নামে বিশ্বের শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর একটি সূচক প্রকাশ করেছে। এই সূচকে ইতিবাচক অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। সূচক প্রকাশে সহিংসতার মাত্রা, অভ্যন্তরীণ ও বহির্মুখী সহিংসতা ও সামরিক শাসনের মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করেছে সংস্থাটি।বাংলাদেশের এই ইতিবাচক অর্জনের প্রধান কারণ হচ্ছে চার দশকে বাংলাদেশ দাঁড়াতে পেরেছে তার আপন গৌরব, ঔজ্জ্বল্য ও কর্মসুষমা নিয়ে। আন্তর্জাতিক বিশ্বও বাংলাদেশের উন্নয়নকে দেখছে ইতিবাচক দৃষ্টিতে। এমনতি জাতিসংঘের মহাসচিবও বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করেছেন। বাংলাদেশের মানুষ ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ একটা বিস্ময়কর, পৃথিবীখ্যাত ঘটনা। মাত্র নয় মাসে লড়াকু বাঙালি জাতি পাক-হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মরণপণ যুদ্ধ করে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে ইজ্জত দিয়ে, আবার কেউ চিরতরে পঙ্গু হয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। এত ত্যাগ ও রক্ত দিয়ে পাওয়া স্বাধীন দেশ তো ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবেই।স্বপ্ন ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না কথাটা হয়তো বা ঠিক তবে, স্বপ্ন ছাড়া এখন বাংলাদেশের মানুষও বাঁচতে পারে না। স্বপ্নবিলাসী বাঙালি কঠিন জীবন সংগ্রামের কারণে, দ্রব্যমূল্যের চাপে ও তাপে আত্মনির্ভরশীলতার দিকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। রাজনৈতিক সংঘাত হানাহানি সহিংসতা দেশকে অনেকটা পিছিয়ে নিয়ে গেছে। এ জন্য মূলত দেশের রাজনৈতিক দলগুলোই দায়ী। যদি এ ধরনের নেতিবাচক পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা যায় তা হলে একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে মর্যাদাপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।এসব রাজনৈতিক নেতিবাচক দিককে পায়ে ঠেলে, মাড়িয়ে-ডিঙিয়ে বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড়াতে হবেই। তা না হলে বাঙালির সব আন্দোলন, সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, আত্মবিসর্জন বৃথা হয়ে যাবে। বৃথা হয়ে যাবে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও। এসব ব্যাপারে জনসাধারণের পাশাপাশি রাষ্ট্র ও সরকার সচেতন ও উদ্যোগী না হলে বাংলাদেশের ভাগ্য ফেরানো কঠিন। ভাগ্য ফেরানো কঠিন জনগণেরও। মনে রাখতে হবে এখনো পুরোপুরিভাবে আত্মতুষ্টির সুযোগ আসেনি। এই সুযোগ তৈরি করতে হবে সরকারকেই। সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:৫২
false
ij
সাধু প্যাট্রিক খ্রিস্টধর্মের যে ক’জন সাধুসন্তকে খ্রিস্টানরা অত্যন্ত শ্রদ্ধা করে সাধু প্যাট্রিক তাদের মধ্যে অন্যতম। মনে করা হয় যে খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকের শেষের দিকে সাধু প্যাট্রিক-এর জন্ম ব্রিটেনে। একটা সূত্রেমতে সাধু প্যাট্রিক-এর জন্ম স্কটল্যান্ড। যা হোক। ধনী খ্রিস্টান পরিবারেই জন্ম হয়েছিল প্যাট্রিকের। ছেলেবেলা সম্বন্ধে তেমন জানা যায় না। তবে প্যাট্রিকের পরিবারে খ্রিস্টধর্মের চর্চা ছিল। বালক প্যাট্রিকও সম্ভবত মন দিয়েই বাইবেলের কাহিনী শুনত, যিশুর আরাধনা করত। বলেছি, প্যাট্রিকরা ছিল ধনাঢ্য পরিবার। ধনসম্পদ থাকলে যা হয়-আইরিশ দস্যুরা প্যাট্রিকদের জমিদারী আক্রমন করে বসল। প্যাট্রিক-এর তখন ১৬ বছর বয়েস। আইরিশ দস্যুরা কী মনে করে প্যাট্রিককে প্রাণে না মেরে বন্দি করে আয়ারল্যান্ড নিয়ে যায়। ৬ বছরের মতো আয়ারল্যান্ডে বন্দি জীবন কেটেছিল প্যাট্রিক-এর। কিন্তু আয়ারল্যান্ডের ঠিক কোথায় বন্দি ছিলেন প্যাট্রিক? এ নিয়ে বিতর্ক আছে। কারও কারও মতে অ্যানট্রিম প্রদেশের স্লেমিশ পাহাড়ে বন্দি ছিলেন প্যাট্রিক। কারও কারও মতে মায়ো প্রদেশের কিললালা। শব্দগুলি আমাদের কাছে অপরিচিত ঠেকলেও অ্যানট্রিম প্রদেশ, স্লেমিশ পাহাড়, মায়ো প্রদেশ, কিললালা-এ সবই আয়ারল্যান্ডের জায়গার নাম। বন্দি জীবনে মেষ পালক ছিলেন প্যাট্রিক। আর কে না জানে এ জগতে মেষপালকের হৃদয়ই সবচে পবিত্র হৃদয়। এ জগতের আলোকপ্রাপ্ত মানুষের অনেকেই ছিলেন মেষপালক; ছিলেন রাখাল। একা নিঃসঙ্গ জীবন ছিল প্যাট্রিকের। মানুষ থেকে দূরে নির্জন এক প্রান্তরের এক মেষপালক। তখন কত কিছু যে ভেবেছিলেন প্যাট্রিক। জীবনমৃত্যুর মানে। আলেছায়ার মানে। দৃশ্যের আড়লের দৃশ্যের মানে। সময় বহিয় যায়। তারও ক্ষীন শব্দ শোনা যেত যেন। হায়, কী এই জীবনের মানে? যদি জানা যেত। কেন এই মানবজন্ম? কেন এত দুঃখ? প্যাট্রিক-এর মনে ছিল দারুন কষ্ট । মা বাবা ভাই বোনের কি হল। এই ভাবনা তাকে তিলে তিলে দগ্ধ করছিল। হায়! কী সুন্দর জীবন ছিল। স্বচ্ছল। স্বচ্ছল ও সুখি। এক রাতের ঝড়ে সব ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। ঈশ্বরের উপর তবু আস্থা হারায় নি প্যাট্রিক। ছেলেবেলায় খ্রিস্টধর্মের শিক্ষা পেয়েছিল। দুঃখার্ত নিঃসঙ্গ জীবনে ঈশ্বর ও খ্রিস্টের আরাধনা করে কাটত। একরাতের কথা। তখন মাঝরাত। প্যাট্রিক ঘুমিয়ে। স্বপ্নে কে এসে যেন বলল, এদের আমায় পথে নিয়ে এস। কে! মাঝরাতে মেঝেতে ঘুম ভেঙ্গে যায় প্যাট্রিক-এর। অন্ধকারে খরের গন্ধ । আর শীত। কাঠের ঘরের মেঝে দেওয়াল ভিজে আছে শিশিরে। দূরের স্লেমিশ পাহাড়ে আতংকিত নেকড়ের ডাক। প্যাট্রিক উঠে বসে। কে এসেছিল আমার স্বপ্নে? তার প্রাণ ব্যাকুল হয়ে ওঠে। তার গা ছমছম করে। সে নারীর মতো হু হু করে কাঁদে। আমাকে আলো ছড়াতে হবে। যে আলোয় একদা উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল বেথেলহেম- নারারথ। বন্দি জীবনে তো আলো ছড়ানো যায় না। তা হলে? পালানোর পথ খোঁজে প্যাট্রিক। সে পথ ঈশ্বর দেখালেন। অন্তরের ভিতর ফিসফিস করে বললেন, এখান থেকে পালানোর এখনই সময়। মায়ো প্রদেশ থেকে উপকূলের দিকে ২০০ মাইল হাঁটল ২২ বছর বয়েসী প্যাট্রিক । উপকূলে বালিয়ারি, পাথর, সমুদ্র ও জাহাজ। জাহাজে উঠে কোনওমতে ব্রিটেনে ফিরা গেল। তারপর ব্রিটেনে থাকার সময়ই নাকি এক দেবদূত এসে বলল, তুমি আয়ারল্যান্ডে ফিরে যাও; সেখানে খ্রিস্টের বাণী প্রচার কর। প্যাট্রিক কী যেন ভাবল। পৃথিবীতে আমার তো কেউ নেই। আমি আমৃত্যু খ্রিস্টবানীতে মগ্ন হই না কেন? এই সিদ্ধান্ত নিয়ে খ্রিস্টধর্ম সম্পর্কে পড়াশোনা করতে আরম্ভ করলে। প্রায় ১৫ বছর ধরে চলল খ্রিস্টগবেষনা। তারপর যাজক-এর পদ লাভ করলেন প্যাট্রিক । যাজক-এর পদ লাভ করে আয়ারল্যান্ড যাত্রা করলেন। এর আগেও একবার গিয়েছিলেন। তখন ছিলেন বন্দি। এখন যাজক। জীবন কি অদ্ভুত! সাধু প্যাট্রিক যখন আয়ারল্যান্ড পৌঁছলেন-তখনই নাকি আয়ারল্যান্ডে ক'ঘর খ্রিস্টান বাস করত। অবশ্য দ্বীপবাসীরা তখনও সবাই খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হয়নি। দু’দলের কাছেই খ্রিস্টের বানী পৌঁছে দিতে লাগলেন সাধু প্যাট্রিক। যেহেতু আগে থেকেই আয়ারল্যান্ডে কিছু খ্রিস্টান ছিল- কাজেই তিনিই যে প্রথম আয়ারল্যান্ডে এককভাবে খিস্টধর্ম প্রচার করেছেন- এই দৃঢ়মূল বিশ্বাস সম্বন্ধে প্রশ্ন উঠতেই পারে। যা হোক। সাধু প্যাট্রিক এর আগে তরুন বয়েসে বন্দি জীবনে প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় মেষপালকের জীবন কাটিয়েছেন। এবার তিনি আইরিশ রীতিনীতিতে অভ্যস্ত হতে লাগলেন। আইরিশরা ছিল প্রকৃতিঘনিষ্ট মূর্তিপূজক ড্রুইড ধর্মের অনুসারী। তাদের ছিল অজস্র মৌখিক গাথা-উপকথা। সে সব আত্মস্থ করতে লাগলেন সাধু প্যাট্রিক। কাজেই সাধু প্যাট্রিক জনপ্রিয় হয়ে উঠতে লাগলেন সাধারণ আইরিশদের মাঝে। যুগ যুগ ধরে গড়ে ওঠা আইরিশ প্রথা অস্বীকার করে সাধু প্যাট্রিক সাধারণ আইরিশদের মনের ওপর বিজাতীয় মধ্যপ্রাচ্যের প্রথা চাপিয়ে দেন নি। বরং ঈস্টার পালনের সময় বনে আগুন জ্বালালেন, যেহেতু বনে আগুন জ্বালিয়ে আইরিশরা তাদের ঈশ্বরের উপাসনা করত। সূর্য ছিল আইরিশ প্রিয় প্রতীক। ক্রশে সূর্য বসলেন সাধু প্যাট্রিক! একে বলে, "কেলটিক ক্রশ।" কাজেই আইরিশরা খ্রিস্টকে কিছুতেই দূরবর্তী অপর মনে করল না; মনে করল নিজেদের একজন-কাছের মানুষ। আর সেই কাছের মানুষের সে সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন একজন প্রিয় সাধু। কাজেই, আমৃত্যু আইরিশ জনগনের মাঝে তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন সাধু প্যাট্রিক । সাধু প্যাট্রিক-এর মৃত্যু ১৭ মার্চ ৪৬০ খ্রিস্টাব্দ। তাঁর লেখা লাতিন ভাষায় দুখানি চিঠি পাওয়া গিয়েছে। এত ক্ষণ যা বলা হল, তা ঐ চিঠির উপর ভিত্তি করেই। শেষ করার আগে আরেকটি কথা। বলা হয় যে, সাধু প্যাট্রিক আয়ারল্যান্ড থেকে সাপ তাড়িয়ে ছিলেন। আয়ারল্যান্ডে যে কারণে সাপ নেই। কী এর ব্যাখ্যা? আমরা বাস করি বিজ্ঞানের যুগে। ব্যাখ্যা বিজ্ঞনের আলোতেই হবে। (এক) তুষার যুগের পর থেকেই সাপ আয়ারল্যন্ডে ছিল না। যে কারণে নিউজিল্যান্ডে নেই সাপ। (দুই) আইরিশ ড্রুইডদের প্রতীক ছিল সরীসৃপ বা সাপ। কাজেই আয়ারল্যান্ড থেকে সাধু প্যাট্রিক-এর সাপ তাড়ানোর মানে হল আয়ারল্যান্ড থেকে প্রকৃতিঘনিষ্ট মূর্তিপূজক ড্রুইড ধর্মের উচ্ছেদ করে খ্রিস্টধর্মের প্রচলন। যা হোক। আয়ারল্যান্ড থেকে সাপ তাড়ানোর কৃতিত্ব সাধু প্যাট্রিককে না দিতে পারলেও তিনি যে শুদ্ধাত্মা ছিলেন তা নিয়ে সন্দেহ তো নেই। আর এটাই সবচে বড় কথা। তিনি প্রাচ্যের মরুময় অঞ্চলের একটি দয়াশীল মতবাদ ইউরোপের একটি শীতার্ত দ্বীপে প্রোথিত করেছিলেন। এটাই বড় কথা। সাধু প্যাট্রিক আজও দ্বীপ আয়ারল্যান্ডের রক্ষাকারী সাধু বা patron saint। এটাই বড় কথা। সাধু প্যাট্রিক-এর সাপ সংক্রান্ত উপকথাটির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা -- Click This Link সূত্র: সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:৪২
false
mk
মেট্রোরেল আর স্বপ্ন নয় সঠিক সময়েই বাস্তবায়ন হোক রাজধানীতে মেট্রোরেল স্থাপনের বিষয়টি বহুল আলোচিত। রাজধানীতে ক্রমেই জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ সড়কের ওপর চাপ পড়ে অসহনীয় যানজটে নাকাল নগরবাসীর পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরেই মেট্রোরেল স্থাপনের দাবি তোলা হচ্ছিল। সরকারও দেশের সার্বিক অবকাঠামো পুনর্বিন্যাস করে রাজধানীকে বসবাসের উপযোগী করতে একটি আধুনিক পরিবেশ সৃষ্টির পদক্ষেপ নেয়। যানজট নিরসনের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গূরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে মেট্রোরেল_ এ বিবেচনায় ২০১৪ সালে রাজধানীতে মেট্রোরেল স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। যা রাজধানীবাসীর মনে ব্যাপক আশার সঞ্চার করে। সম্প্রতি স্বপ্নের মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণকাজেরও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সব ঠিক থাকলে ২০১৯ সালের গোড়াতেই রাজধানীবাসী এই প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। সঠিক সময়ে এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এক ভিন্ন আঙ্গিক যুক্ত করবে নিঃসন্দেহে। সংশয় নেই, এর ফলে নাগরিক জীবনেও গুণগত পরিবর্তন আসবে।গতকালের যায়যায়দিনের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দূরত্ব মাত্র ৩৮ মিনিটে পেরিয়ে যাবেন যাত্রীরা। প্রকল্পের আওতায় উত্তরা তৃতীয়পর্যায় থেকে শাপলা চত্বর পর্যন্ত ৬ নাম্বার রুটের এই নির্মাণকাজে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা দিচ্ছে ১৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ২০ কিলোমিটার এই পথে থাকবে ১৬টি স্টেশন। উত্তরা থেকে পল্লবী, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, প্রেসক্লাব হয়ে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত এই রুট। যার পুরোটাই হবে উড়ালপথে। আর প্রতিঘণ্টায় উভয়দিক থেকে ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারবে। ঘণ্টায় মেট্রোরেলের গতি হবে গড়ে ৩২ কিলোমিটার। বলার অপেক্ষা রাখে না, স্বাধীনতার পর দেশে অনেক সরকার দায়িত্বে এসেছে। রাজধানীর যানজট নিরসনে এসব সরকার নতুন নতুন অনেক পরিকল্পনাও হাতে নেয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো রাজধানীর যানজট সমস্যা নিরসনে কোনো পরিকল্পনা সহায়ক হয়নি, বরং বেড়েছে কয়েকগুণ। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে মেট্রোরেলকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই সময়ে সরকার নানা জটিলতায় কাজটি শুরু করতে পারেনি। এবার সরকার বিশ্বের সর্বাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন দ্রুতগতির যোগাযোগ ব্যবস্থা এই মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেয়। এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণেরও একটি দৃষ্টান্ত। জানা যায়, দুই দফা রুট পরিবর্তনের কারণে প্রকল্প শুরু করতে দেরি হয়েছে। প্রথমবার গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী উড়াল সড়কের কারণে এবং দ্বিতীয়বার বিমানবাহিনীর আপত্তির মুখে রুট পরিবর্তন করা হয়। আমরা বলতে চাই, শেষ পর্যন্ত যেহেতু সব ধরনের জটিলতা কাটিয়ে দেশের এই সর্ব বৃহৎ প্রকল্পটির কাজ শুরু করা গেছে, সেহেতু আমাদের প্রত্যাশা থাকবে নির্দিষ্ট সময়েই তা বাস্তবায়িত হোক। মেয়াদকালীন সময়ে বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে সাম্প্রতিক অতীতে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে, ফলে এর পুনরাবৃত্তি না ঘটুক সেদিকে সরকারকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। কেননা, গুরুত্বের দিক থেকে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন একটি বিরাট চ্যালেঞ্জও। এ কথা জোর দিয়েই বলা যেতে পারে, মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তা দেশের অর্থনীতিতেও একটা বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি পরিবর্তন আসবে দেশের নাগরিক ও আর্থ-সামাজিক চরিত্রেও। সরকারকে মনে রাখতে হবে যে, এ প্রকল্পে আরো পাঁচটি রুট রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে বিআরটি প্রকল্প। এতে ১০০টি আর্টিকুলেটেড বাস সংযোজন করা হবে বলেও জানা যায়। বিআরটির এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৪০ কোটি টাকা। সরকারের পাশাপাশি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা ও গ্লোবাল অ্যানভায়রনমেন্টাল ফ্যাসিলিটি ফান্ড এতে অর্থায়ন করছে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, রাজধানীর যানজট নিরসন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকার গৃহীত এ পদক্ষেপের সাফল্য নির্ভর করছে সঠিক সময়ে এর বাস্তবায়নের ওপর। এ প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন সরকারের প্রতি জনআস্থা বহুলাংশে বাড়িয়ে দেবে বলেও আশা করা যায়। বর্তমানের কর্মমুখর সময় ও ব্যস্ত নাগরিক জীবনে মেট্রোরেল হোক সবার জন্যই কার্যকর এক বাহন_ এ প্রত্যাশা আমাদের। সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১০:৫২
false
mk
জাতির পিতার উপর এত আক্রোশ কেন_ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনি বলতেন_ ফাঁসির মঞ্চে গিয়েও বলব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলাদেশ আমার দেশ। বাঙালি ও বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা তিনি। পাকিস্তানের শুরু থেকেই তিনি বাঙালিদের স্বার্থের বলিষ্ঠ প্রবক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। শুধু তাই নয়, পাকিস্তান সৃষ্টির আগে থেকেই বাংলা ও বাঙালির স্বার্থরক্ষায় তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা ও অবদান রেখে আসছেন। জন্ম তার শুভক্ষণে শুভদিনে কিন্তু পরাধীনতার মধ্যে। দুই পর্বের পরাধীনতা ও শোষণ তাকে ভোগ করতে হয়েছে। প্রথমত ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শোষণ দ্বিতীয়ত পাকিস্তানি শোষণ-নির্যাতন, জেল-জুলুম-হুলিয়া আরো কত কী। কোনো কিছুই দমাতে পারেনি তাকে। এমনকি মৃত্যুও ।এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। জেল-জুলুম, নির্যাতন, হুলিয়া বহন করেছেন তিনি। পূর্ববাংলার শোষিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত জনগণকে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন তিনিই এবং প্রতিষ্ঠাও করেছেন তিনি। তিনি না হলে তো এ দেশ স্বাধীনই হতো না। যুগে যুগে কিছু মহাপুরুষ পৃথিবীতে আসেন কোনো কোনো জাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে। বঙ্গবন্ধুও তেমনি একজন। মহাপুরুষদের মধ্যে মানবিকতা ও সরলতা এ দুটি গুণ অতিমাত্রায় থাকে। যার কারণে দেশ এবং দেশের মানুষের প্রতি থাকে তাদের সীমাহীন আস্থা ও ভালোবাসা। বঙ্গবন্ধুরও তেমনটা ছিল। এই আস্থা ও ভালোবাসাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সাধারণ মানুষকে কাছে টানা ও সম্মোহন করার ক্ষমতা ছিল তার অসীম। এমন অসীম ক্ষমতার অধিকারী মানুষ বাংলাদেশে আর একজনও জন্মগ্রহণ করেননি। অথচ বঙ্গবন্ধুর খ্যাতি ও অবদান মস্নান করে দেয়ার জন্য, তার মর্যাদাহানির জন্য বাংলাদেশবিরোধী একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে। একটি মহল দীর্ঘদিন থেকেই বলে আসছে, তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি, প্রধানমন্ত্রিত্ব চেয়েছেন। তারা আরো বলে আসছে, তিনি পশ্চিম পাকিস্তানিদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য বাঙালিকে প্রস্তুত করতে পারেননি বলেই ২৫ মার্চ কালরাতে এত মানুষ মারা গেছে। তারা আরো বলেন, তিনি বাকশাল গঠনের মাধ্যমে একদলীয় শাসন কায়েম করে সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করেছিলেন। ভারতের এক তথাকথিত প্রবক্তা বলেছিলেন, শেখ মুজিব বেশি কথা বলতেন। আর এখন এ কে খন্দকার তার ১৯৭১ : ভেতরে বাইরে গ্রন্থে লিখেছেন_ একাত্তরের ৭ মার্চের ভাষণের শেষে বঙ্গবন্ধু জয় পাকিস্তান বলেছেন। বিরোধী পক্ষ এটাকে লুফে নিয়েছে। তারা বলছে, এ কে খন্দকার তার গ্রন্থে সত্য কথা লিখেছেন। এ নিয়ে জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে মিডিয়ায় আলোড়ন ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ কে খন্দকার সাহেব স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর এ কথা লিখলেন কেন? তিনি কার স্বার্থ রক্ষা করতে চান? তিনি তো শেখ হাসিনা সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন। তখন তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি কেন। আসলে রাজনীতিতে শত্রুমিত্র চিহ্নিত করা কঠিন।১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের কথা কে না জানে। ওই দিনে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে) এক কালজয়ী ভাষণ প্রদান করেন পূর্ব বাংলার লাখ লাখ শোষিত-বঞ্চিত মানুষের উদ্দেশে। এ ভাষণ সেদিন উদ্দীপিত করেছিল দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে। বাঙালির সবচেয়ে গৌরবদীপ্ত ও উজ্জ্বল ঘটনা হচ্ছে এই ভাষণ। মূলত একজন রাজনৈতিক কবির অসাধারণ কবিতার নাম হচ্ছে ৭ মার্চের এই ভাষণ। সেদিন বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন এক ভাষন প্রদান করেন বঙ্গবন্ধু। মাত্র ১৭-১৮ মিনিটের অনবদ্য এ ভাষণটি কোনো লিখিত ভাষণ নয়। একটিবারের জন্য ছন্দপতন ঘটেনি ভাষণে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল কঠিন সঙ্কটে ভারসাম্যপূর্ণ অথচ আবেগময় অসাধারণ বক্তৃতা। ভাষণের প্রতিটি লাইন উদ্ধৃতিযোগ্য। বাঙালির জীবনে ৭ মার্চ উজ্জ্বলতম মাইলফলক। এ ভাষণ ছিল বহুমাত্রিক তাৎপর্যম-িত, সে বিষয়টি আজ পরিষ্কার। এটা ছিল এক মহাকাব্যিক ভাষণ। এমন উদাত্ত কণ্ঠে সম্মোহনী জাগানো ভাষণ আর কারো পক্ষে দেয়া সম্ভব ছিল না। যদিও অনেকে এ মহাকাব্যিক ভাষণের তুলনা করে থাকেন আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গের ভাষণের সঙ্গে। বাঙালির স্বাধিকার স্বায়ত্তশাসন ও মানবমুক্তির স্বপ্ন সবই ছিল জাতির পিতার ঐতিহাসিক ভাষণটিতে। সেদিনের রেসকোর্স ময়দান ও বর্তমানের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সেই ভাষণটিকে কেন্দ্র করে বিপুল মানুষের সমাবেশ মানবসভ্যতার ইতিহাসের বিরল ঘটনা। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদানের পর শুধু ঢাকা শহর নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক চেহারা বদলে যেতে শুরু করে। অল্প সময়ের মধ্যে পাল্টে যেতে থাকে সামগ্রিক প্রেক্ষাপট। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে বলেন_ ভায়েরা আমার, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যার যা আছে তাই নিয়ে মোকাবিলা করতে হবে। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন ৭ মার্চের পর পশ্চিম পাকিস্তানিরা তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আটকাবস্থায় প্রহসনের বিচার করতে পারে তাই তিনি বলেছিলেন_ আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি তোমরা সব রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেবে। তিনি সাধারণ মানুষের প্রতি আস্থা রেখে বলেছেন_ প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলুন এবং আপনাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকুন। বঙ্গবন্ধু আরো বলেন_ হাতে যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকুন। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশা আল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।লাখ লাখ মানুষ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ শোনার পর মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিল। একজন মানুষ দিনে দিনে নিজেকে চালকের আসনে এনে একটি আন্দোলনকে জনগণের প্রাণের দাবিতে পরিণত করতে পারেন, এমন উদাহরণও বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাঙালি জাতির দীর্ঘদিনের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল একটি কণ্ঠ। অন্যায়, অগণতান্ত্রিক আচরণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে, জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে জাতিকে পরিপূর্ণভাবে জাগিয়ে তুলেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেখানে জয় পাকিস্তান বলা না বলাতে কী আসে যায়। বঙ্গবন্ধুর এসব কৃতিত্ব, অবদান, ত্যাগ ও সংগ্রামকে যারা মস্নান করে দিতে চায়, তারা তো নানা কথা বলবেই। কুৎসা রটনা করবে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে।আমরা বাঙালি জাতি এতটাই অকৃতজ্ঞ যে, যিনি আমাদের স্বাধীনতা ও জাতিরাষ্ট্রের স্বীকৃতি এনে দিলেন ও প্রতিষ্ঠা করলেন আর আমরা তাকেই সপরিবারে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে খুন করলাম। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতির রক্তে রঞ্জিত লাশ সিঁড়ির ওপর পড়ে রইল। আর খুনিরা উল্লাসে মেতে উঠল। রাষ্ট্রীয় উচ্চ পর্যায়ের কিছু লোকের অন্যায়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার কারণেই খুনিদের এ উল্লাস ছিল বহু বছর। অবাক ব্যাপার যে, পাকিস্তানিরা যেখানে তাকে হত্যা করতে সাহস পায়নি, বন্দি করে নিয়ে যাওয়ার পরও_ সেখানে স্বাধীন দেশের মাটিতে তাকে নিষ্ঠুরভাবে খুন হতে হলো। জাতি হিসেবে এর চেয়ে লজ্জা আর ঘৃণার আর কী থাকতে পারে? জাতির পিতাকে খুন করার কারণেই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি স্বাধীনতার ৪৩ বছরেও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। অস্থিরতা আর অরাজকতা চলছে চারদিকে।এ কথা সত্য যে, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই এসেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ কোনো কাকতালীয় বিষয় নয় বরং পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৪ বছরের রাজনৈতিক আন্দোলনের ফসল এই স্বাধীনতা। কোনো জাতি যখন স্বাধীনতা চায় তখন সে প্রত্যাশিত স্বাধীনতাকে ঠেকিয়ে রাখার শক্তি আর কারো থাকে না। ৭১-এ স্বাধীনতা অর্জনের বিষয়ে সমগ্র জাতি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছিল। কারণ বাঙালি চেয়েছিল স্বাধিকার তথা স্বায়ত্তশাসন। দেখেছিল স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন।বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করতে হয়েছে দেশের আবালবৃদ্ধবনিতা সবাইকে। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও প্রজ্ঞার ফল আমাদের এই স্বাধীনতা। ৩০ লাখ প্রাণের বিসর্জন এবং আড়াই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পৃথিবীর বুকে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। আমরা পেয়েছি লাল সবুজের রক্তস্নাত পতাকা, যার নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।বাংলাদেশ সৃষ্টির পূর্বাপর দুটি ঘটনা কোনোভাবেই সাধারণ চোখে দেখার সুযোগ নেই। একটি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং অন্যটি পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা। জীবনের মায়া ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে আপামর বাঙালির স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং মরণপণ লড়াই করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনা। এ সমষ্টিগত অসাধ্য কাজটি দ্বিতীয়বার করা বাঙালি জাতির পক্ষে আর সম্ভব নয়। সেই দেশপ্রেম আর আবেগের সংমিশ্রণ ঘটানোও আর সম্ভব নয়। আজ একুশ শতকে এসে আরো একটি মুক্তিযুদ্ধ করাও আর আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই মুক্তিযুদ্ধকে সাধারণ চোখে দেখা ও বিবেচনা করা অন্যায়। ঠিক তেমনি পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টকেও সাধারণ চোখে দেখা অন্যায়। বাঙালি কতখানি নিষ্ঠুর ও ক্ষমতা-অন্ধ হলে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে তা ভাবতেও গা শিউরে ওঠে।বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি আমরণ সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি স্বপ্ন দেখতেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের। অথচ স্বাধীনতার ৪৩ বছরেও তার স্বপ্নের বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে পারিনি। এর মূল কারণ রাজনৈতিক বিদ্বেষ, দলীয় সংকীর্ণতা ও হানাহানি। যে বাঙালির জন্য তার স্বপ্ন ও সংগ্রাম ছিল, ওই বাঙালিরই একটি অংশ তাকে বাঁচতে দিল না। বঙ্গবন্ধুর অপরাধ কি এত বেশি ছিল যে তাকে সপরিবারে হত্যা করতে হবে? এর চেয়ে দুঃখ আর পরিতাপের বিষয় আর কী হতে পারে? তাতে কি দেশের কোনো লাভ হয়েছে? দেশ প্রগতিশীল ধারা থেকে প্রতিক্রিয়াশীল ধারায় ফিরেছে। রাজাকার ও স্বাধীনতাবিরোধীদের উত্থান ঘটেছে। আধুনিক ও গণতান্ত্রিক বিশ্বের কাছে আমরা ছোট হয়ে গেছি।এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেতাম না। কারণ বাঙালির স্বাধিকার ও স্বায়ত্তশাসন প্রশ্নে নেতৃত্ব দেয়ার মতো যোগ্য লোক পূর্ববাংলায় দ্বিতীয়জন ছিলেন না। আমাদের আজও পশ্চিম পাকিস্তানিদের গোলামি করতে হতো। আজ যে বাঙালিরা স্বাধীন দেশে রাষ্ট্রীয় উচ্চপদে আসীন আছেন, স্বাধীনভাবে কাজ করছেন, মুক্ত বাতাসে ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন_ এর কোনো সুযোগ ছিল না। এ কঠিন সত্যকে ভুলে গিয়ে একশ্রেণির মানুষ বঙ্গবন্ধুকে ছোট করতে গিয়ে নিজেই ছোট হয়ে যাচ্ছে। কতটা অকৃতজ্ঞ আর হীনমন্য হলে মানুষ জাতির জনক সম্পর্কে এমন সব কথা বলতে পারে?মনে রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধু কারো প্রতিপক্ষ নন। জীবদ্দশায় যেমন ছিলেন না, মৃত্যুর পরেও নন। স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনকের প্রতিপক্ষ কেউ হতে পারে না, যৌক্তিক ও সঙ্গতও নয়। যদি কেউ অসম অসুস্থ ও হাস্যকর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন তবে তাকে পাগল ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে? লেখক: সালাম সালেহ উদ্দীন, যায়যায়দিন
false
rg
জনাব মাহফুজ আনাম একজন প্রশিক্ষিত বর্নচোরা দালাল!!! সময় আর নদী স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। টাইম অ্যান্ড টাইড ওয়েট ফর নান। ছোটবেলায় এই কথাটি বহুবার শিক্ষকদের কাছে শুনেছি। একবার জীবেস স্যার এটা ভয়েস চেইঞ্জ করতে দিয়েছিলেন। কিছুতেই আমরা বুঝতে পারছি না কি করবো। পরে একটা ধামাচাপা দেবার জন্য খাতায় লিখেছিলাম- টাইম অ্যান্ড টাইড হ্যাজ নট বিন ওয়েটেড ফর নোবডি। কনফিউশান দূর করতে উইথ ইন ব্রাকেটে লিখেছিলাম ইভেন ইট'স পাস্ট, প্রেজেন্ট অর ইন ফিউচার। দেখে জীবেস স্যার মিটমিট করে হেসেছিলেন। পরে স্যার এটার এক্সাক্ট ভয়েস চেইঞ্জ করেছিলেন। সেটা এখন মনে করতে পারছি না। কারো জানা থাকলে আওয়াজ দিয়েন। এবার ধীরে ধীরে প্রসঙ্গে চলে যাই। আবুল মনসুর আহমেদ (১৮৯৮-১৯৭৯) আমার খুব প্রিয় একজন লেখক। তাঁর লেখা রম্য উপন্যাস 'আয়না', 'ফুড কনফারেন্স', 'গালিভারের সফরনামা' ও 'আসমানী পর্দা' আমি খুব ইনজয় করেছি। তাঁর স্মৃতিকথা 'আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর' ও 'শেরে বাংলা হইতে বঙ্গবন্ধু' আমাদের ইতিহাসের অনেক না বলা কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি তিনি রাজনীতি করতেন। ছাত্র অবস্থায় তিনি নেতাজী সুভাস চন্দ্র বোসের নের্তৃত্ব কংগ্রেস মুভমেন্টে যোগ দেন। পাকিস্তান আন্দোলনে তিনি একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে তিনি বেঙ্গল মুসলিম লীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহারের তিনি একজন অন্যকম রূপকার। ওই নির্বাচনে তিনি ময়মনসিংহের ত্রিশাল আসন থেকে যুক্তফ্রন্টের সাংসদ নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে তিনি শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের ইউনাইটেড ফ্রন্ট মন্ত্রীসভায় প্রাদেশিক শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তারপর ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগ নের্তৃত্বাধীন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী'র মন্ত্রীসভায় প্রথমে তিনি কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী;র দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি উপপ্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। আইউব খান ক্ষমতা দখল করে তাঁকে কারাগারে বন্দী করে রাখেন। ১৯৬২ সালের দিকে তিনি জেল থেকে মুক্তি লাভ করেন। সম্ভবত তখন থেকেই তিনি রাজনীতিতে আর ততোটা সক্রিয় ছিলেন না।জনাব আবুল মনসুর আহমেদ ১৯৬০ সালে সাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। আর ১৯৭৯ সালে তিনি অর্জন করেন স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার। মূলত ১৯৬২ সালে জেল থেকে ছাড়া পাবার পর তিনি রাজনীতি যতোটা না সক্রিয় ছিলেন, তার চেয়ে বেশি পছন্দ করতেন পাকিস্তানকে। যে কারণে পরবর্তী সময়ে ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থান আর ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর কি কি ভূমিকা ছিল, সেই ইতিহাস তেমন একটা পাওয়া যায় না। অনেকে দাবী করেন, উনি কারাগার থেকে বের হবার পরে রাজনীতি ছেড়ে লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। বাংলাদেশের ইতিহাসের এই যে বড় বড় ঘটনাগুলো'র সময় ওঁনার মত একজন রাজনীতিবিদের অমন আশ্চার্যজনক নিরবতা কেমন একটু রহস্যজনক!নাকি উনি খাস দিলে চাইতেন পাকিস্তান অখণ্ড থাকুক। নাকি উনি রাজনৈতিক নের্তৃত্বের মারপ‌্যাচে ঘায়েল হয়ে বিপক্ষ দলের ইনফরমার হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন? নাকি উনি পরে স্রেফ রাজনীতি থেকে নিজেকে মুক্ত করে কেবল সাহিত্য চর্চা করেছেন? কারণ, ওঁনার যে তিনটি আত্মজীবনী লিখেছেন সেগুলো ১৯৬৯, ১৯৭২ আর ১৯৭৮ সালে প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর যখন মোশতাক গংরা ক্ষমতায় চলে আসে, তখন থেকে ওনাকে আবার একটু একটু প্রকাশ্যে দেখা গেল! যার বিনিময়ে জেনারেল জিয়া ১৯৭৯ সালে ওঁনাকে স্বাধীনতা পদক দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন!!এই যে বর্নচোরা একজন রাজনীতিবিদ জনাব আবুল মনসুর আহমেদ, তিনি কি সত্যিকারের বাংলাদেশ কখনো চেয়েছিলেন? পাকিস্তানের প্রতি যাঁর এতো প্রেম এতো আবেগ, সেই মানুষটি'র পুত্রধন আজকের দ্য ডেইলি স্টারের এডিটর জনাব মাহফুজ আনাম। কাজে কর্মে বড়োই বর্নচোরা। মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে ফেনা ছুটিয়ে ফেলেন। আর তলে তলে পাকিস্তানের সঙ্গে সখ্যতা পাতান। বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে কিভাবে খুব সুক্ষভাবে খাটো করা যায়, সেই প্রচেষ্টায় এই বর্নচোরা লোকটি অবিরাম লেগে আছেন। সেই সুক্ষ মুখোশটি খালি চোখে ধরার উপায় নাই। মাইক্রোস্কোপ দিয়ে ডাবল ফ্রেমের চশমা লাগিয়েই কেবল সেই আসল মুখোশটির দেখা পাওয়া সম্ভব। এই মাহফুজ আনাম একটি ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক। সময় সুযোগ পেলেই আওয়ামী লীগের ভুল ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিএনপি ওনার চোখে ধোয়া তুলশি পাতা। এই মাহফুজ আনাম বাংলা একাডেমিতে তথাকথিত হে ফেস্টিভালের আয়োজক ও প্রধান আর্কিটেক্ট। এই মাহফুজ আনাম তার মেয়েকে একটি বুকার পুরস্কার জেতানোর জন্য লন্ডনের ব্যাংক ব্যালেন্স প্রায় নিঃশেষ করেছেন। এই মাহফুজ আনামের স্ত্রী একটি বড় আন্তর্জাতিক এনজিও'র নির্বাহী প্রধান। যেটি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, জাতিসংঘ, আইএমএফ সহ অন্যান্য দাতা সংস্থার কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে তথ্য পাচার করেন। বিনিময়ে বিশাল অংকের টাকা পান। এই মাহফুজ আনাম একটি চক্র তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন, যেখানে সবাই তোষামোদী করে ফাই ফরমায়েস খাটেন।তো মাহফুজ আনামকে আপনারা সবাই খুব ভালো করেই চেনেন। উনি খুব ভালো লেখেন। উনি যখন কোনো কলাম লেখেন, বুঝতে হবে সেখানে একটি শেয়ালের মুখোশ আড়ালে ছিল। সেই মুখোশটি যারা চেনে না, তাদের সহজে ওনার লেখার দায় বা উদ্দেশ্য বোঝানো যাবে না। আজ দ্য ডেইলি স্টারে উনি দশম সাধারণ নির্বাচন নিয়ে একটি অম্ল মধুর লেখা প্রসব করেছেন। সেই লেখার মর্মবাণী হল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে চরম ভুল। সেই চরম ভুলের মাশুল দেবার জন্য শেখ হাসিনাকে উনি নানান ওয়াজ নছিয়ত করেছেন। সেই ওয়াজে ওনার কাছে ভোটার মানেই পৃথিবীর ফেরেশতা। আর আওয়ামী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সাংসদ মানেই দুনিয়ার সবচেয়ে খারাপ প্রাণী। জনাব মাহফুজ আনাম বর্নচোরা এটা জানতাম, কিন্তু উনি যে ইদানিং এক চোখে অন্ধ হয়ে আছেন, তা জানতাম না। ওয়ান ইলেভেনের একজন সুদক্ষ কারিগর হিসেবে মাহফুজ আনামের অনেক সুনাম। ওনার কাছে ভোটার মানেই হল সবচেয়ে রাজনৈতিক সচেতন জনগোষ্ঠী, যারা নির্বাচনে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে যাচাই বাছাই করে যোগ্য প্রার্থীকেই নির্বাচিত করেন। জনাব মাহফুজ আনাম, ভোটারদের মহৎ ভাবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। কিন্তু ভোটারদের সচেতন বলাটা মনে হয় একটু বাড়িয়ে বললেন। বাংলাদেশের সাড়ে নয়টি সাধারণ নির্বাচন, দুইটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আর দুইটি হ্যা না ভোটের নির্বাচন এবং অসংখ্য স্থানীয় পরিষদের নির্বাচনের সুদীর্ঘ ইতিহাস, চর্চা, প্রয়োগ আর নির্বাচনী ফলাফল বিশ্লেষন করলে এটা প্রায় সবাই বিশ্বাস করবেন, এখনো আমাদের ভোটকেন্দ্র দখল করা হয়, এখনো জাল ভোট পড়ে, এখনো কেন্দ্র থেকে পুলিং এজেন্ট জোর করে বের করে দেওয়া হয়, এখনো ভোট বাক্স ছিনতাই হয়, এখনো ভোটারদের বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়, এখনো ভোটারদের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে ভোট টানার নজির রয়েছে, এখনো ফলাফল পাল্টে ফেলার অবস্থা কোথাও কোথাও আছে, এখনো নির্বাচন কমিশনের দখল নেওয়া মানে সেই দলের ক্ষমতায় যাওয়া নিশ্চিত এই চর্চা আছে, এখনো দেশের প্রশাসন কোনো দলের পক্ষে কাজ করে, ইত্যাদি হাজারো রকমের কারবার ছাড়াও টাকা দিয়ে ভোট কেনার, বস্তি ভোটার, মোবাইল ভোটার কত হরেক রকমের ভোটারের ইতিহাস বাংলাদেশে। এটাই বাংলাদেশের বাস্তবতা। অথচ জনাব মাহফুজ আনাম এমন ভঙ্গিতে কথা কইলেন যে, সব বইয়ের ভাষা, বাংলাদেশে ভোটারাই কোনো একটি দলকে ক্ষমতায় বসায়! তাহলে জনাব মাহফুজ আনাম অন্যসব মেকানিজম গুলো কি বাংলাদেশ থেকে চিরদিনের মত হারিয়ে গেছে বা উধাও হয়ে গেছে? আপনার দৃষ্টিতে বিএনপি'র একটিও খারাপ কাজ পড়লো না? বেগম জিয়ার একটি সিদ্ধান্তও আপনার চোখে বেঠিক নয়? চলমান সহিংস আন্দোলনও আপনার চোখে পুরাই ঠিক আছে? জামায়াত শিবিরের দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা আপনার নজরে পড়েনি? আপনি কি দেশে আছেন? নাকি লন্ডনের ওয়েস্ট মিনিস্টার লনে হাওয়া খেয়ে এসব লিখছেন? একটি সমস্যারও কোনো উল্লেখ নাই আপনার লেখায়। আর আপনি দাবী করছেন, বিনা ভোটে নির্বাচিত এই সাংসদরা কিভাবে শপথ নেবেন আর সেই সংসদ কিভাবে দেশ পরিচালনা করবে, তাই নিয়ে আপনি ভারী চিন্তিত! শেখ হাসিনাকে আপনি কিছু বিনা পয়সায় বুদ্ধিও দিয়েছেন। এগুলোকে যদি বুদ্ধি বলা যায়, তাহলে ডিকশোনারি থেকে 'কু' শব্দটি আগে ডিলিট করতে হবে। জনাব মাহফুজ আনাম, আপনি এখনো বাংলাদেশকে যথাযথভাবে সম্মান করেন না। বরং বাংলাদেশের ভাবমুর্তি বিক্রি করার নানান ফন্দি ফিকির করেন। আপনি আওয়ামী লীগকে হাজারো গালি দেন কোনো সমস্যা নাই, কেউ বুল করলে গালি খাবে। কিন্তু বিএনপি আপনার কাছে ধোয়া তুলশি পাতা। আবার গণতন্ত্রের দোহাই ছাড়তে গিয়ে তত্ত্বাবধায়ক বিষয়টি খুব সুন্দর করে তুলে ধরতে ভোলেননি। ১৯৭৯ সালে জেনারেল জিয়া যে আপনার বাবাকে স্বাদীনতা পদক দিয়েছিলেন, তারই কৃতজ্ঞতা বুঝি এভাবে লিখে দেখানোর নিয়ম!!!জনাব মাহফুজ আনাম, আপনি একটি বর্নচোরা মুখোশপড়া দালাল। মুখোশটি খুলে জনগণের কাতারে দাঁড়ান, দেখেন কেউ চিনতে পারে কিনা!!!!
false
rn
নারী দিবস আজ ১০৪তম নারী দিবস। অর্ধেক আকাশের অধিকারের দাবিতে আরও একবার শপথ গ্রহণের দিন।বিশ্বের এক এক প্রান্তে নারীদিবস উদযাপনের প্রধান লক্ষ্য এক এক প্রকার হয়।১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল।বাংলাদেশেও ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার লাভের পূর্ব থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে।দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ।দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ কোটা নারীর জন্য সংরক্ষিত।আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্ক শহরে সুতা কারখানার নারী শ্রমিকদের প্রতিবাদ, পুলিশের নির্যাতন। এই দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস।বিশ্বের অনেক দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারী ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়।বাংলাদেশ বিমানের ইয়াসমিন রহমান এশিয়ার প্রথম মহিলা DC-10 বিমানের ক্যাপ্টেইন হবার গৌরব অর্জন করেন ১৯৯১ তে।যুক্ত্রাস্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসার সবচাইতে জটিল মহাকাশযান হল স্পেস শাট্‌ল (Space Shuttle). এটা চালান পৃথিবীর সবচাইতে দুরূহ কাজ বলে কথিত আছে। এখানেও মেয়েদের জয়যাত্রা থেমে নেই ।১৭ বছর আগে ১৯৯৪ সালে মাধ্যমিক স্তরে ছাত্রীদের ভর্তির হার ছিল ৩৩ শতাংশ। এখন ছাত্রদের পেছনে ফেলে ছাত্রীদের ভর্তির হার বেড়ে হয়েছে ৫৪ শতাংশ। শুধু মাধ্যমিকেই নয়; প্রাথমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে।১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হলো।১৯১০ সালের এই দিনে ডেনমাকের্র কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।১৯৯৮ তে পাপিয়া নামক এক সাহসী মেয়ে জীবিকার তাগিদে ঢাকার রাস্তায় রিকশা চালাতে শুরু করে আরেক ইতিহাস সৃস্টি করেছিল। সে নারী পুরুষ বিচার না করে সবাইকে বহন করত।মাতৃত্বকালীন ছুটি ৪ মাস থেকে ৬ মাসে উন্নিত করা হয়েছে ।বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী নারীকর্মীর সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে। ১৯৯১ সালে যেখানে বছরে দুই হাজার নারীকর্মী বিদেশে যেতেন, এখন সেখানে প্রতিবছর ২৫ থেকে ৩০ হাজার নারীকর্মী বিদেশে যাচ্ছেন। এ মুহূর্তে প্রায় দুই লাখ নারীকর্মী বিদেশে আছেন।নারীর গড় আয়ু বেড়ে ৬৮ দশমিক ৭ বছর হয়েছে। বর্তমান সরকারের সময় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১ বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।শিশু কন্যা জন্মানোর সেরা স্থান গ্রিস। এ বিষয়ে নিকৃষ্টতম দক্ষিণ সুদান।আমেরিকা পৃথিবীতে সর্বাধিক মহিলা অ্যাথলিট তৈরি করে। আরবের দেশগুলি এবিষয়ে সব থেকে নীচে অবস্থান করছে। সেখানে মেয়েদের এখনও খেলাধুলোয় অংশগ্রহণের অধিকার নেই।নারী সমাজ যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আজ সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানান কর্মসূচীর মাধ্যমে দিবসটি পালন করবে। দিবসটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে একাধিক নারী সংগঠন মানববন্ধন ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও মিছিল করবে।বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্যপরিষদ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিক সমাবেশ ও লাল পতাকা র্যালি বের করবে। যে জাতি মায়ের মুখের ভাষার জন্য, দেশের স্বাধিকারের জন্য লড়েছি আজ আমরা কেন নিজদের মাঝে ইভ টিজিং , নির্যাতন, শোষণ, অপমান, লাঞ্ছনা ধরনের শব্দ গুলো নিয়ে মাতা মাতি করব? আমাদের অভিধান থেকে আমরা এই শব্দ গুলো চিরতরে মুছে দিতে চাই।
false
ij
লিলিথ বেন হ্যানসেনের আঁকা লিলিথের ছবি কে লিলিথ? লিলিথ ছিলেন আদমের প্রথম স্ত্রী। চমকে গেলেন তো? হ্যাঁ। ইহুদি উপকথা অনুযায়ী- ঈভকে সৃষ্টির আগে ঈশ্বর লিলিথকে সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু লিলিথের কাছে আদম শান্তি পায়নি। দুজনের খালি ঝগড়া হত। তারপর লিলিথ আদমকে ছেড়ে চলে যায়। তারপর লিলিথের কি হয়েছিল? তার নামে নানা দুর্নাম রটল। লোকে তাকে ডাকিনীযোগীনী বলল। যাই হোক। ইহুদি উপকথার দিকে ফিরে তাকাই - God then formed Lilith, the first woman, just as He had formed Adam, except that He used filth and sediment instead of pure dust. From Adam's union with this demoness, and with another like her named Naamah, Tubal Cain's sister, sprang Asmodeus and innumerable demons that still plague mankind. Many generations later, Lilith and Naamah came to Solomon's judgement seat, disguised as harlots of Jerusalem'. Adam and Lilith never found peace together; for when he wished to lie with her, she took offence at the recumbent posture he demanded. 'Why must I lie beneath you?' she asked. 'I also was made from dust, and am therefore your equal.' Because Adam tried to compel her obedience by force, Lilith, in a rage, uttered the magic name of God, rose into the air and left him. Adam complained to God: 'I have been deserted by my helpmeet' God at once sent the angels Senoy, Sansenoy and Semangelof to fetch Lilith back. They found her beside the Red Sea, a region abounding in lascivious demons, to whom she bore lilim at the rate of more than one hundred a day. 'Return to Adam without delay,' the angels said, `or we will drown you!' Lilith asked: `How can I return to Adam and live like an honest housewife, after my stay beside the Red Sea?? 'It will be death to refuse!' they answered. `How can I die,' Lilith asked again, `when God has ordered me to take charge of all newborn children: boys up to the eighth day of life, that of circumcision; girls up to the twentieth day. None the less, if ever I see your three names or likenesses displayed in an amulet above a newborn child, I promise to spare it.' To this they agreed; but God punished Lilith by making one hundred of her demon children perish daily; and if she could not destroy a human infant, because of the angelic amulet, she would spitefully turn against her own. বিদ্রোহী লিলিথ পরবর্তীকালে নারীবাদীদের প্রতীক হয়ে উঠেছে । স্মরণ করুন-Adam and Lilith never found peace together; for when he wished to lie with her, she took offence at the recumbent posture he demanded. 'Why must I lie beneath you?' she asked. 'I also was made from dust, and am therefore your equal.' Because Adam tried to compel her obedience by force, Lilith, in a rage, uttered the magic name of God, rose into the air and left him. "লিলিথ" নামে ইহুদি নারীদের রয়েছে নারীবাদী পত্রিকা। পত্রিকাটি দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন। http://www.lilith.org/ লিলিথ সম্বন্ধে আরও জানতে চাইলে- http://ccat.sas.upenn.edu/~humm/Topics/Lilith/ http://en.wikipedia.org/wiki/Lilith সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:০৯
false
fe
অশুভ শক্তিরা প্রশ্রয় পেলে অশুভ শক্তিরা প্রশ্রয় পেলেফকির ইলিয়াস ============================================অনেকটা পরিকল্পিত সফরে বেরিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সিনেটর বারাক ওবামা। তিনি জর্ডান, ইসরায়েল, ইরান, আফগানিস্তান সফর করছেন। এরপর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাবেন। তার লক্ষ্য, একটি সংবাদ পৌঁছে দেওয়া। আর তা হচ্ছে,সকল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে মানবতার বিজয় সুনিশ্চিত করা।তিনি ইতিমধ্যে সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের সকল নেতাকে। তিনি ক্ষমতায় যেতে পারলে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে, বিশ্বে এক নতুন দিনের শুভ সূচনা করবেন।বারাক ওবামা তা পারবেন কিনা, তা বেশ প্রশ্নসাপেক্ষ। কিন্তু এ কথা নিশ্চিত যে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রিপাবলিকান সরকারের নানা ধরনের স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন বিশ্ববাসী। বিভিন্ন দেশের মানুষ আজ নানা ধরনের সংকটের শিকার। চাল উৎপাদনের স্বর্গরাজ্য যুক্তরাষ্ট্রে আজ চালের আকাল। এমনকি জননিরাপত্তাও এখানে বিঘ্নিত প্রতিদিন। বারাক ওবামা বলেছেন, ২০১০ সালের মধ্যে ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে মার্কিনি সৈন্য সরিয়ে আনা হবে। এ বিষয়ে তিনি মতবিনিময় করেছেন দুটি দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের সঙ্গে। সব মিলিয়ে একটি আশার বাণী লক্ষ করছেন বিশ্ববাসী। করদাতা মার্কিনিরা চাইছেন হতাশার কাল শেষ হোক। অবসান হোক সকল দুঃস্বপ্নের। নতুন সূর্য উঠুক।একটি কথা আমরা জানি সমাজে অশুভ শক্তিরা যদি রাষ্ট্রপক্ষের প্রশ্রয় পায়, তাহলে সে রাষ্ট্রে কখনোই শান্তিআশা করা যায় না। এ বিষয়টি আমাকে ভাবায় বারবার। একটি রাষ্ট্রে অশুভ শক্তিকে মদদ জোগানোর বিভিন্ন পথ থাকে। সরকারকে অশুভ শক্তি পুষতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। পরোক্ষভাবে কালো শক্তির পৃষ্ঠপোষকতা করা যায়। দেওয়া যায় অপশক্তিকে প্রশ্রয়।একটি সংবাদ আমাকে খুব ভাবনায় ফেলেছে। বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার তাদের কিছু নীতি থেকে সরে এসেছে। সম্প্রতি সরকারি পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিদেশ থেকে উদ্ধার করা অবৈধ অর্থ সরকার-এর প্রকৃত মালিকদেরকে ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত কেন?ওয়ান-ইলেভেনের পর বর্তমান সরকার বারবার বলেছিল, তারা অবৈধভাবে বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে রাষ্ট্রের উন্নয়নে, জনগণের উন্নয়নে ব্যয় করবে। এবং তা ছিল রাষ্ট্রের জনগণেরও দাবি। হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত পাল্টাতে গেলো কেন সরকার? কী ঘটছে নেপথ্যে? এ কেমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত?বাংলাদেশে কারা অশুভ শক্তি, তা ওয়ান-ইলেভেনের পর মোটামুটি জানতে এবং বুঝতে পেরেছে মানুষ। টিভিতে দেখলাম দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান হাসান মশহুদ চৌধুরী বলেছেন, দুর্নীতি দমন করতে হলে সবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এই কথা কি নতুন শুনছে বাংলাদেশবাসী? না, তা নতুন নয়। তারপরও তাহলে এই দেশে রাজনৈতিক সৃজনশীলতা গড়ে ওঠে না কেন? কেন ঘাতক রাজাকারদের বির"দ্ধে বাকি সবগুলো রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি, কিংবা পারছে না? এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ব্যক্তি স্বার্থ, দলীয় হীন স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও রহস্যময়তা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারাই, বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রধান অন্তরায়। ওয়ান-ইলেভেনও এতে কোনো নতুন মাত্রা যোগ করতে পারেনি। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে একটি অমীমাংশিত সমাধান দিয়েই বর্তমান ক্ষমতাসীনদেরকে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে। আগামী সংসদে যারা জয়ী হয়ে আসবেন তারা কি তবে ওয়ান-ইলেভেনের ছায়া-প্রতিভু হিসেবে টিকে থাকতে পারবেন? দীর্ঘ জরুরি আইনের মাধ্যমে কি প্রকৃত গণতন্ত্র কোনো দেশে প্রতিষ্ঠা হয়েছে?বসনিয়ান সার্বদের নেতা রাদোভান কারাদজিচকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গণহত্যার ধিকৃত অভিযোগ। যুদ্ধাপরাধের দায়ে তিনি এখন বিশ্ব মানবতার কাঠগড়ায়। বেলগ্রেডে গত ২১ জুলাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এক দশক তিনি লম্বা দাড়ি রেখে লুকিয়ে ছিলেন। তাকে বিজ্ঞ বিচারকের আদেশে ওয়ার ক্রাইমস ট্রাইব্যুনালের অধীনে নেদারল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন বিশ্ববাসী দেখবে তার বিচার। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে এটা মানবতার বিজয়। এবং এই বিজয় সুনিশ্চিত না হলে প্রজন্মের পথচলা অসম্ভব প্রায় হয়ে পড়ে। খুবই দুঃখের বিষয় বাংলাদেশের অশুভ শক্তিরা অতীতেও খুব বেশি প্রশ্রয় পেয়েছে। অবৈধ অর্থ ফেরত দেওয়ার মাধ্যমে ওয়ান-ইলেভেনের চেতনাধারীরাও একই পথ ধরলেন। তারপর তারা আর কিভাবে পূর্বনীতি থেকে সরে আসবেন, তাই দেখার বিষয়।---------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ । ২৭জুলাই ২০০৮ রোববার প্রকাশিত
false
ij
বাঙালিরা কি শ্রীলঙ্কানদের পূর্বপুরুষ_ শ্রীলঙ্কার প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি। ভারত মহাসাগরের বুকে একটি দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। সাগরবেষ্টিত দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার প্রাকৃতিক দৃশ্য অতি মনোরম । শ্রীলঙ্কার নাম অনেকবারই পরিবর্তিত হয়েছে। এককালে এখানেই ছিল রূপকথার রাবণের লঙ্কাপুরী- আর সে কারণেই শ্রীলঙ্কার নাম ছিল লঙ্কাদ্বীপ। শ্রীলঙ্কার আরেক নাম সিংহল দ্বীপ। বিস্ময়কর হলেও সতি- প্রাচীন বাংলার এক রাজপুত্রের উপাধি থেকে নাম হয়েছিল সিংহল। কেননা, বাংলার সেই যুবরাজের পিতামহ ছিলেন প্রাচীন বাংলার রাঢ় দেশের সিংহ উপাধিধারী ক্ষত্রিয় বীর। এই কারণেই প্রশ্ন ওঠে বাঙালিরা কি শ্রীলঙ্কানদের পূর্বপুরুষ? শ্রীলঙ্কার মানচিত্র। শ্রীলঙ্কা বিশ্বের অন্যতম একটি বৌদ্ধরাষ্ট্র। ক্রিকেট ও গৃহযুদ্ধের জন্য সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে আলোচিত। ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কাকে মাঝে-মাঝে অপ্রতিরোধ্য মনে হলেও শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রীয় দর্শনে শান্তিবাদী বৌদ্ধধর্মের প্রভাব পড়েনি ... ভূমিকায় বলছিলাম, প্রাচীন বাংলার এক রাজপুত্রের উপাধি থেকে নাম হয়েছিল সিংহল। প্রখ্যাত বাঙালি ঐতিহাসিক নলিনীকান্ত ভট্টশালী কি লিখেছেন পড়–ন : ‘বাঙ্গালার ইতিহাসে সর্বপ্রথম উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিজয়ের লঙ্কাজয়। ভারতের প্রাচীন সাহিত্যে এই ঘটনার কিছুমাত্র উল্লেখ নাই। ইহার উল্লেখ পাই একমাত্র সিংহলের ইতিহাসে, পালিভাষায় রচিত সিংহলের দুইখানা প্রাচীন ইতিহাস আছে। একখানার নাম, ‘দীপবংশ’ অপরখানার নাম ‘মহাবংশ’। প্রথমখানি রচিত হইয়াছিল খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে, দ্বিতীয়খানি রচিত হইয়াছিল খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর শেষ ভাগে।’ ( ‘বাঙ্গালার ইতিহাসের গল্প।’ দেশ। সুবর্ণজয়ন্তী প্রবন্ধ সংকলন (১৯৩৩-১৯৮৩) পৃষ্ঠা,১৯-২৪) এখন প্রশ্ন এই-কে এই বিজয়? এবং কবে তিনি লঙ্কাজয় করলেন? বিজয় প্রাচীন বাংলারই এক রাজপুত্র। শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ ভিক্ষুদের লিখিত তথ্য অনুযায়ী- বঙ্গের রাজা কলিঙ্গের (বর্তমান উড়িষ্যার) এক রাজকন্যাকে বিয়ে করেছিলেন। তাদের এক কন্যা হয়েছিল ... সেই কন্যার সঙ্গে রাঢ় দেশের সিংহ উপাধিধারী ‘আটবিক’ এক ক্ষত্রিয় বীরের বিয়ে হয়েছিল। এই বিবাহজ পাত্র সিংহবাহু রাঢ়ে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে ‘সিংহপুর’ (সে কালের প্রাচীন বাংলার সমৃদ্ধ নগরী) থেকে রাঢ় শাসন করতে থাকে। সিংহবাহুর পুত্র বিজয় ... বিজয়ে লঙ্কাজয়। বাঙালিরা না-জানলেও বিজয়ের লঙ্কাজয়ের কাহিনীটি শ্রীলঙ্কায় অত্যন্ত সুপরিচিত ও জনপ্রিয়। শ্রীলঙ্কার জনগনের বিশ্বাস - যে বছর গৌতম বুদ্ধ মহাপরিনির্বান লাভ করলেন অর্থাৎ মৃত্যুবরণ করলেন সে বছরই বাংলার রাজপুত্র বিজয় সৈন্যসামন্ত নিয়ে সিংহল দ্বীপে অবতরণ করেছিলেন। তার মানে সময়টা ৪৮৩ খ্রিস্টপূর্ব। অবশ্য এই নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। কারও কারও মতে বুদ্ধের মহাপরিনির্বানের বছর খ্রিস্টপূর্ব ৫৪৩ এবং সে কারণে বাংলার রাজপুত্র বিজয় সিংহল দ্বীপে অবতরণ করেছিলেন ৪৮৩ খ্রিস্টপূর্বে নয় বরং ৫৪৩ খ্রিস্টপূর্বে । খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকে প্রাচীন ভারতের মৌর্য সম্রাট অশোকের সময়েই শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধধর্ম প্রচার আরম্ভ হয় । জীবদ্দশায় অবশ্য বুদ্ধ বেশ কয়েকবার শ্রীলঙ্কায় এসেছিলেন। যা হোক। অশোকের সময়ে সিংহল দ্বীপের রাজা ছিলেন দেবনামপ্রিয় তিসা। মূলত তাঁর উদ্যেগেই খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতক থেকেই সিংহল দ্বীপে বৌদ্ধধর্মের প্রসার ঘটতে থাকে, বিহার ও সঙ্ঘরাম ( বৌদ্ধ মঠ) গড়ে উঠতে থাকে। অনুরাধপুরের অভয়গিরি মঠ। অনুরাধপুর শ্রীলঙ্কার প্রাচীন রাজধানী। প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলার মতোই বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বিহারে বিদ্যচর্চা করত। সেই সঙ্গে ইতিহাস চর্চাও করত। তারাই শ্রীলঙ্কার রাজাদের পূর্বাপর ইতিবৃত্ত রচনা করার কথা ভেভে পালি ভাষায় সিংহল দ্বীপের রাজাদের ইতিহাস মহাবংশ বা ‘গ্রেট ক্রনিকল’ লিখেছিল। মহাবংশে সিংহল দ্বীপে বিজয়ে আগমন থেকে শুরু করে রাজা মহাসেন (৩৩৪-৩৬১) এর রাজ্য শাসন আলোচিত হয়েছে। ঐতিহাসিক নলিনীকান্ত ভট্টশালীর কথা মনে থাকার কথা: ‘বাঙ্গালার ইতিহাসে সর্বপ্রথম উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিজয়ের লঙ্কাজয়। ভারতের প্রাচীন সাহিত্যে এই ঘটনার কিছুমাত্র উল্লেখ নাই।’ এর মানে বিজয়ের লঙ্কাজয় সম্পর্কে অন্যতম উৎস প্রাচীন সিংহল দ্বীপের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। শ্রীলঙ্কার মানচিত্রে অনুরাধপুরের অবস্থান। অনুরাধপুরকে অনেকে লেখেন বা উচ্চারণ করেন: অনুরাধাপুর। আসলে অনুরাধপুর হবে। দেখুন ; সুভাষ ভট্টাচার্য সম্পাদিত ‘বাংলা : লেখক ও সম্পাদকের অভিধান।’ (পৃষ্ঠা,২৭) অনুরাধপুরের একটি প্রাচীন স্থাপত্য। প্রাচীন এই নগরটি আরাভি আরু নদীর পাড়ে অবস্থিত ছিল । আজও আরু নদী নদীটি উত্তর থেকে অনুরাধপুর ছুঁয়ে দক্ষিণমুখি বয়ে চলেছে । অনুরাধপুরের প্রাচীন দিঘী। অনুরাধপুর বিজয় সিংহের সম্ভাব্য রাজধানী। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকে শতকে শ্রীলঙ্কার রাজধানী ছিল। বিজয়ের অবতরণের বছর ৪৮৩ খ্রিস্টপূর্ব। তখনও অনুরাধপুর সিংহল দ্বীপের রাজধানী ছিল কি না সে বিষয়ে অবশ্যি কোনও তথ্য পাইনি। মহাবংশে বিজয়ের সংশ্লিষ্টতা সর্ম্পকে জনৈক ইউরোপীয় ঐতিহাসিক লিখেছেন, ‌'According to the Mahavamsa, Vijaya's grandparents hailed from the Kingdoms of Kalinga and Vanga, the present-day Indian states of Orissa and West Bengal as well as parts of Bangladesh respectively. At the beginning of the chronicle (see History of Sri Lanka) the King of Vanga is married to the daughter of the King of Kalinga. Their daughter, Suppadevi, was not only 'very fair and very amorous', but was also prophesied to consummate a 'union with the King of beasts' - in the Mahavamsa, a lion. When this duly happened, she gave birth to two children - Sinhabahu and Sinhasivali. 'Sinhabahu' means 'lion-armed' and the young prince himself is described as having 'hands and feet...formed like a lion's'. The family lived together in the lion's cave, blocked in by a large rock the lion had placed to prevent their exit. Eventually, however, Suppadevi and her two children flee the cave. Later Sinhabahu kills his father with an arrow. Then, marrying his sister, he establishes a kingdom based on a city called Sinhapura. Sinhasivali bears him a series of twins; their eldest child is named Vijaya, and his younger twin brother Sumitta ... এ প্রসঙ্গেই ঐতিহাসিক নলিনীকান্ত ভট্টশালী লিখেছেন, ‘মহাবংশের বিবরণ রূপকথারসে পরিপূর্ণ। কিন্তু মূল কথা কয়টি প্রাচীনতর দীপবংশ ও পরবর্তী মহাবংশে একই-এবং তাহা মুখ্যত ঐতিহাসিক বলিয়া গ্রহন করিতে কোন বাধা দেখি না। বঙ্গের রাজা কলিঙ্গের রাজকন্যাকে বিবাহ করিয়াছিলেন। তাহাদের কন্যার সহিত রাঢ় দেশের সিংহ উপাধিধারী ‘আটবিক’ কোন ক্ষত্রিয় বীরের বিবাহ হয়। এই বিবাহজ পাত্র সিংহবাহু রাঢ়ে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করিয়া সিংহপুর হইতে রাঢ় শাসন করিতে থাকে। তাঁহারই পুত্র বিজয় প্রজানির্যাতন-অপরাধে নির্বাসিত হইয়া জাহাজে চড়িয়া সমুদ্রে ভাসিয়া পড়ে এবং ঝড়ে র বেগে প্রথম সুর্পারফে এবং পরে ভরুকচ্ছে যাইয়া উপস্থিত হয়। এই বন্দর দুইটি ভারতের পশ্চিম উপকূলে আজও আছে, এবং এখনও সোপারা ও ভারুচ বা ব্রোচ বলিয়া বিখ্যাত। তথা হইতে বিজয় সানুচর লঙ্কায় যাইয়া উপস্থিত হয় এবং লঙ্কার অধীশ্বর হইয়া বসে। ( ‘বাঙ্গালার ইতিহাসের গল্প।’ পৃষ্ঠা, ২৪) প্রাচীন বাংলার মানচিত্রে রাঢ়ের অবস্থান। প্রাচীন বাংলার অতি সমৃদ্ধ জনপদ ছিল রাঢ়। বর্তমানে ভারতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বড় অংশ। রাঢ় উত্তর ও দক্ষিণ - এই দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। অজয় নদকে উত্তর ও দক্ষিণ রাঢ়ের মধ্যবর্তী বিভাজন-রেখা বলা যেতে পারে। পশ্চিম বাংলার মানচিত্র। এখানেই ছিল উত্তর ও দক্ষিণ রাঢ় । বিজয় সিংহের পিতা মনে থাকার কথা সিংহবাহু রাঢ়ে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে ‘সিংহপুর’ থেকে রাঢ় শাসন করতেন। এখন কাজেই এই প্রশ্ন তো উঠতেই পারে বাঙালিরা কি শ্রীলঙ্কানদের পূর্বপুরুষ? তবে আজকাল এই তথ্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠেছে খোদ শ্রীলঙ্কাতেই । তারা বলছে অন্য কথা। তবে শ্রীলঙ্কার ইংরেজি নামের (Ceylon) ভিতরে আজও রাজপুত্র বিজয়ের পরিবারের কথা রয়ে গেছে। জনৈক ঐতিহাসিক লিখেছেন:'The English name Ceylon and a host of other related names all most likely trace their roots back to the Sanskrit Sinha ("lion"). With the Sanskrit Sinha as its root, Sinhala can be interpreted to mean "the blood of a lion". As lions are not native to Sri Lanka, Sinhala is most often taken to mean a lion-like man - a hero - presumably Vijaya's grandfather. The Pāli form of the Sanskrit Sinhala is Sihalam (pronounced Silam)' সেই অনিবার্য প্রশ্ন করেই শেষ করছি। বাঙালিরা কি শ্রীলঙ্কানদের পূর্বপুরুষ? তথ্য নির্দেশ: ১. নলিনীকান্ত ভট্টশালী। ‘বাঙ্গালার ইতিহাসের গল্প।’ দেশ। সুবর্ণজয়ন্তী প্রবন্ধ সংকলন (১৯৩৩-১৯৮৩) পৃষ্ঠা,১৯-২৪) ২. বাংলাপিডিয়া। এবং ৩. উইকিপিডিয়া সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১০ দুপুর ১২:৪৫
false
mk
ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণ-মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াত ছিল ‘বীভৎস’, এখনও আছে___ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীনতাকামী জনগণের উপর বর্বরতা চালানোয় জামায়াতে ইসলামীকে ‘ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াত নামের সংগঠনটি পাক-সেনাদের সহায়ক বাহিনী হিসেবে ভূমিকা পালন করে। দলটির সদস্যরাই রাজাকার বাহিনী, আল-বদর, আল-শামস, আল-মুজাহিদ বাহিনী ও শান্তি কমিটির মতো সশস্ত্র আধাসামরিক বাহিনী গঠন করে স্বাধীনতাকামী জনগণের ওপর নৃশংসভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। বিশেষ করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা ছিল বীভৎস।ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ গত সোমবার জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায়ে এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, গোলাম আযমের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী সক্রিয়ভাবে ‘ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশন’ হিসেবে বাংলাদেশে ভূমিকা পালন করে। রায়ে সরকারি চাকরিতে থাকা সকল স্বাধীনতাবিরোধীদের সরিয়ে দিতে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে বলে মত দেন ট্রাইব্যুনাল।জামায়াতের রাজনীতি ‘প্রতারণার’ উল্লেখ করে রায়ে বলা হয়- এটা পরিহাসের বিষয় যে পাকিস্তান-ভারত বিভাজনের সময় তারা পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির বিরোধিতা করেছে, আর বাংলাদেশের জনগণ যখন স্বাধীনতা চাচ্ছে তখন তারা ‘মুসলিমদের স্বার্থে পাকিস্তানের অখ-তা রক্ষায় ছিল সক্রিয়’। এখন তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার নামে দেশের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। জামায়াত কখনো জনগণের চিন্তা-চেতনাকে আমলে নেয়নি। তারা জনগণের পালস বুঝে না। এর কারণ হতে পারে তাদের মধ্যে দূরদর্শিতার অভাব। কাল্পনিক চিন্তায় মোহাবিষ্ট থাকার কারণে তাদের মধ্যে দূরদর্শিতা নেই।রায়ে বলা হয়- সব দালিলিক সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, গোলাম আযমের নেতৃত্বে জামায়াতের প্রায় সব সদস্য ও দলটির অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্রের জন্মের বিরোধিতা করেছে। স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও দেখা যাচ্ছে যে, স্বাধীনতাবিরোধীরা এখনও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব দিচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জামায়াতের তরুণদের মধ্যে স্বাধীনতাবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক মানসিকতা সৃষ্টি হচ্ছে যা একটি জাতির জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। এই সক্রিয় স্বাধীনতা বিরোধিতাকারীরা মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে তাদের অবস্থান এখনো পরিবর্তন করেনি। এ ব্যাপারে তারা কোনো অনুশোচনা বা ত্রিশ লাখ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে বলে জাতির কাছে কোনো প্রমাণ নেই।ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলেন, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার, সামাজিক দল, রাজনৈতিক দল ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে স্বাধীনতাবিরোধী কোনো ব্যক্তিকে বসানো উচিত নয়। আমরা মত দিচ্ছি যে, সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে। এ ব্যবস্থা নিতে হবে সেই গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য, যে কারণে লাখ লাখ মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন।
false
mk
ব্যবস্থা নেওয়ার এখনই সময় ২১ ফেব্রুয়ারির পড়ন্ত বিকেলে নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকার শাহবাগ চত্বর, যা এখন বাংলাদেশ ও দেশের বাইরে 'প্রজন্ম চত্বর' নামে পরিচিত, সেখানে ১৯৭১ সালের ঘাতকদের ফাঁসির দাবিতে ১৭ দিন তাঁদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শেষে আন্দোলনের আগামী দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করলেন। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে তো বটেই, বিশ্বের ইতিহাসেও অনেকটা নজিরবিহীন। একদল তরুণ আন্দোলনটি শুরু করেছিলেন গণযোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে, তা যে এত দিন ধরে এত শান্তিপূর্ণভাবে চলতে পারল, এটা সবাইকে অবাক করেছে। আরো একটি কারণে এই আন্দোলন ব্যতিক্রমী, সেটি হচ্ছে, এই আন্দোলন কোনো সরকারবিরোধী আন্দোলন ছিল না বা এখানে কোনো একক নেতৃত্বও ছিল না। এটি ছিল আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারীদের প্রতি দায়বদ্ধতার আন্দোলন। লাখো তরুণ এই প্রজন্ম চত্বরে ১৭ দিন ধরে সমবেত হয়েছিলেন ওই ঘাতকদের ফাঁসি দাবি করতে, যারা ১৯৭১ সালে নিজের মাতৃভূমির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে নির্বিচারে তাঁদের বাবা-ভাইকে হত্যা করেছিল, তাঁদের মা-বোনকে ধর্ষণ করেছিল, কোটি মানুষকে ঘরছাড়া করেছিল। এই বিচারের জন্য তাঁরা দীর্ঘ ৪২ বছর অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করেছেন। তাঁদের এ আন্দোলন তাঁরা দেশ ও দেশের বাইরে ছড়িয়ে দিতে পেরে দলমত নির্বিশেষে দেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তির সমর্থন আদায় করতে পেরেছেন। তাঁদের এ আন্দোলনের ফলে সরকার বাধ্য হয়েছে সংসদে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধন এনে আইনটিকে আরো সময়োপযোগী করতে; যাতে আদালত ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের তাদের অপরাধের উপযুক্ত দণ্ডে দণ্ডিত করতে পারে। এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয়ের জন্য নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধাদের অভিনন্দন।একুশে ফেব্রুয়ারি প্রজন্ম চত্বর থেকে যে কয়টি দাবি উত্থাপিত হয়েছে, তার মধ্যে আছে আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার আইনি প্রক্রিয়া শুরু। জামায়াত-শিবির ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত। নিষিদ্ধকরণের কাজটি বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু সরকার সাংবিধানিকভাবে করেছিলেন এবং তাতে দেশের সব মানুষ অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর জেনারেল জিয়া দেশের প্রথম সামরিক শাসক হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে বহু দলীয় রাজনীতি পুনঃপ্রবর্তনের নামে জামায়াতকে সেই স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন, যে দেশটির জন্মের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে তারা যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। জামায়াতের আগে নতুন করে আত্মপ্রকাশ করে তাদের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির, যেটি ১৯৭১ সালে পরিচিত ছিল ইসলামী ছাত্রসংঘ নামে এবং সভাপতি ছিলেন বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের সম্মুখীন মতিউর রহমান নিজামী। এই ছাত্রসংঘের সদস্যরাই ছিল ১৯৭১ সালে জামায়াতের আলবদর নামের ঘাতক বাহিনীর সদস্য, যাদের প্রধান দায়িত্ব ছিল বুদ্ধিজীবী হত্যা। প্রথমে আবির্ভাব ছাত্রশিবিরের, তারপর ইসলামী ডেমোক্রেটিক লীগ, তারপর জামায়াতে ইসলামী। বাংলাদেশের রাজনীতিতে শুধু জামায়াত-শিবিরের আবির্ভাবই হয়নি, তাদের নবজন্মের পর থেকেই তারা ও অন্য যুদ্ধাপরাধীরা পরবর্তী ৩৫ বছর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। এটি অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, জেনারেল জিয়া একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও নতুন দল করে সেখানে আবদুল আলিম আর মাওলানা মান্নানের মতো চিহ্নিত ঘাতকদের স্থান দিয়েছেন, মন্ত্রী বানিয়েছেন। এই কাজটি এরশাদও করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়া নিজামী আর মুজাহিদের মতো ঘাতককে তাঁর মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দিয়েছেন। অথচ তারা ১৯৭১ সালে তাঁর স্বামীকে পেলে কোনো অবস্থায়ই জীবিত রাখত না। এই যুদ্ধাপরাধীদের সমাজে পুনর্বাসন মানুষ অনেকটা নীরবে সহ্য করে নিয়েছিল। কিন্তু যখন জামায়াতের আমির গোলাম আযম, যিনি জেনারেল জিয়ার বদান্যতায় পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন, তখন মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছিল। এই সেই গোলাম আযম, যিনি বাংলাদেশে ফেরার আগ পর্যন্ত পাকিস্তানকে আবার এক করার মিশন নিয়ে বিদেশে সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছিলেন।১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে বাংলাদেশকে রাজাকারমুক্ত করতে এ দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। দুরারোগ্য ক্যান্সার নিয়ে দেশকে রাজাকারমুক্ত করতে জনমত সৃষ্টি করার লক্ষ্যে শহীদ জননী সারা দেশ চষে বেড়ালেন। কিন্তু কাজটি শেষ হওয়ার আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর শেষ চিঠিতে পরবর্তী প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়ে যান, যেন তারা তাঁর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে।নতুন প্রজন্ম শহীদ জননীর অসমাপ্ত কাজটি বর্তমানে সমাপ্তিকরণে হাত দিয়েছে। অবশ্য এই নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধাদের একটা সুবিধা হয়েছে বর্তমানে যে দলটির নেতৃত্বে মহাজোট সরকার দেশ পরিচালনা করছে, সেই দলের নির্বাচনী ইশতেহারেই ছিল তারা সরকার গঠন করলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করবে। সে কারণেই ২০০৮ সালের নির্বাচনে মানুষ তাদের উজাড় করে ভোট দিয়েছে। সুতরাং তাদের নিজেদের নির্বাচনী অঙ্গীকার হতে এখন সরে আসার কোনো উপায় নেই। আর এটাও তো সত্য, এই মানবতাবিরোধী আর যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার আওয়ামী লীগ না করলে আর কোনো দল করবে না। যতই বিএনপি গলা ফাটিয়ে চিৎকার করুক তারা ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধের বিচার করবে; সে কথা সাধারণ মানুষ দূরে থাকুক, নিজ দলেরই অনেকে বিশ্বাস করে না বলে মনে হয়। আর বর্তমানে তাদের অবস্থান তো আরো পরিষ্কার। খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে মির্জা ফখরুল ইসলাম- সবাই শাহবাগের আন্দোলনের পেছনে সরকারের নাটক, ভেলকিবাজি, ষড়যন্ত্র ইত্যাদি আবিষ্কার করতে ব্যস্ত। অথচ তাঁরা বুঝতে চাইলেন না, এ অবস্থানের ফলে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের একটি বিশাল অংশের সহানুভূতি হারালেন তাঁরা। জামায়াতের সঙ্গে থেকে তাদের যা লাভ, তার চেয়ে জামায়াত বিষয়ে বর্তমান ক্ষতিটা কয়েক শ গুণ বেশি; যা ভবিষ্যতে বোঝা যাবে বলে ধারণা করি।জামায়াতে ইসলামী কখনো ইসলামের মূল চেতনা ধারণ করেনি। তারা ইসলামকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে, সরল ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে। এ কথা আমার নয়, দেশের অনেক আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদের। শান্তির ধর্ম ইসলাম কখনো ধর্মের নামে রক্তপাত, হত্যা অনুমোদন করে না। অথচ জামায়াত-শিবিরের মূল আদর্শই হচ্ছে হত্যা, নৃশংসতা আর রক্তপাত। এই কাজ তারা বেশ পারদর্শিতার সঙ্গে করে তাদের প্রজনন সংগঠন ছাত্রশিবির দ্বারা। তারা কত নৃশংস হতে পারে, তার দু-একটি উদাহরণ দিই। ১৯৭৯ সালে চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রলীগ নেতা তবারককে কলেজ চত্বরে হত্যা করে তার মুখে মূত্রত্যাগ করেছিল। হারুন আর শাহদাত চট্টগ্রাম কলেজের হোস্টেলে একই কক্ষে ঘুমাচ্ছিল। রাত গভীর হতেই হারুন বিছানার তলা থেকে চাপাতি বের করে শাহদাতকে জবাই করে দিল। এটি ১৯৮৪ সালের ২৪ এপ্রিলের ঘটনা। তারা দুজনই ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার্থী ছিল। শাহদাতের অপরাধ সে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী ছিল। হারুনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল বয়সের কারণে। ১৯৮৬ সালের ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি আবদুল হামিদের ডান হাত ইটের ওপর রেখে কিরিচ দিয়ে দ্বিখণ্ডিত করে সেই কাটা কবজি নিয়ে শিবিরের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে মিছিল হয়েছিল। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ড. ইনামুল হকের তরতাজা ছেলে মুহাম্মদ মুসাকে তো পিটিয়েই মেরে ফেলে; কারণ সে শিবির না করে ছাত্রদল করত। আমার অনুজ, যে কি না বর্তমানে একটি সরকারি কলেজের অধ্যাপক, তার গলায় এখনো ছুরির দাগ আছে। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ তো একাধিকবার হয়েছে। অন্য ছাত্রসংগঠনগুলো মারামারি-কাটাকাটি করে, তবে তা একান্তই ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থে। আদর্শের কোনো বালাই তাতে থাকে না। আর শিবির যা করে, তা তাদের সন্ত্রাসনির্ভর আদর্শের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েই করে। সন্ত্রাসের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েই পরবর্তীকালে এই শিবিররাই জামায়াত হয়। সুতরাং প্রজনন ক্ষেত্র নির্মূল না করলে জামায়াত উচ্ছেদ কঠিন হবে।বাংলাদেশে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, কোনো একটি গণমুখী আন্দোলন শুরু হলে তাকে বানচাল করার জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র হয়। এখনো এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। বিএনপি তো এই আন্দোলনে শুরু থেকেই ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেয়েছে এবং সেভাবে তারা অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে আন্দোলনকারীদের একজন ব্লগার রাজীবকে হত্যা করার পর জামায়াত-শিবিরকর্মীরা তার নামে পবিত্র ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে কিছু কটূক্তি ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে একজন মানুষ যত বড় নাস্তিকই হোক না কেন, কখনো প্রকাশ্যে সে ধর্মের বিরুদ্ধে কখা বলবে না। রাজীবের পরিবার পরিষ্কার ভাষায় বলেছে, রাজীব কখনো নাস্তিক ছিল না। তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে যাদের সামান্যতম জ্ঞান আছে, তারা ঠিকই জানে, এ ধরনের ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে যে কেউ যে কারো নামে মন্তব্য প্রচার করতে পারে। এমন একটি ভুয়া মন্তব্য নিয়ে গত বছর কক্সবাজারের রামুতে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এমন অনেক মন্তব্য বা ছবি ফটোশপের মাধ্যমে তৈরি করে জামায়াত ও বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নামে নিয়মিত ফেসবুকে আপলোড করা হয়। নিশ্চয়ই তাঁরা সেগুলো দেখেন। জামায়াত এখানেই থেমে থাকেনি। তারা এই তথাকথিত ধর্মকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য সৃষ্টি করার বিরুদ্ধে তাদের ভাষায় তৌহিদী জনতাকে ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানিয়ে তিনটি দলীয় পত্রিকায় উস্কানিমূলক বিজ্ঞাপন প্রচার করেছে। শুক্রবার তারা ১২টি সমমনা ইসলামী দলের ব্যানারে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফেসবুকে দেওয়া তথাকথিত ইসলামবিরোধী ভুয়া পোস্টকে কেন্দ্র করে সহিংস তাণ্ডব চালিয়েছে। তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীরা। এদিন তারা দেশের বিভিন্ন শহরে শহীদ মিনার ভেঙেছে, জাতীয় পতাকা পুড়িয়েছে, গণজাগরণ মঞ্চ ভেঙেছে, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে হামলা করেছে, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের জায়নামাজ ও বইপুস্তকে আগুন দিয়েছে এবং সব শেষে আবার রবিবার হরতাল পালনের ঘোষণা দিয়েছে; যদিও সেই হরতালে সাধারণ মানুষ সমর্থন দেয়নি। ব্যতিক্রম তাদের মিত্র বিএনপি। তারা জামায়াত আর অন্যান্য ধর্মাশ্রয়ী দলের ডাকা হরতালে সমর্থন দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব প্রমাণ করেছে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেছেন, ইসলাম ব্যবসায়ী দলগুলোর আন্দোলন ন্যায়সংগত। দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রবিবারের হরতালকে সমর্থন দিতে গিয়ে বলেছেন, তাঁর দল ওলামা-মাশায়েখ ও মুসল্লিদের হরতাল সমর্থন করে। ওলামা-মাশায়েখ আর মুসল্লিরা আল্লাহর পবিত্র ঘর মসজিদকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনা করার জন্য ব্যবহার করেন না, জায়নামাজে অগি্নসংযোগও করেন না। জাতীয় পতাকা আর শহীদ মিনার অবমাননা দেশদ্রোহিতামূলক অপরাধ। বিএনপি এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিশ্চুপ। জামায়াত আর তার দোসরার আগামীতে এই ইস্যুকে ব্যবহার করে দেশে একটি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাও সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে বলে জানা গেছে। সরকারের উচিত হবে এ ধরনের অপচেষ্টা শক্ত হাতে দমন করা। সরকারের এ ব্যাপারে দ্বিধান্বিত থাকার কোনো কারণ নেই। এ ব্যাপারে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী তাদের সঙ্গে আছে। দেশে ডাকাত পড়েছে, ব্যবস্থা নেওয়ার এখনই সময়।আবদুল মান্নান লেখক : শিক্ষাবিদ ও বিশ্লেষক[email protected]
false
ij
লাওৎ -সে ও Tao Te Ching Knowing others is wisdom; Knowing the self is enlightenment. Mastering others requires force; Mastering the self requires strength; He who knows he has enough is rich. Perseverance is a sign of will power. He who stays where he is endures. To die but not to perish is to be eternally present Laozi Tao Te Ching শেষ বাক্যটি খেয়াল করুন- To die but not to perish is to be eternally present. আহ! এই অসাধারণ বাক্যটি তাওগুরু লাওৎ -সে-র মুখের কথা। লাওৎ -সে এর ব্যাপারে পরে আসছি। কিন্তু, তাও কি? তাও যে কী-কেউ বলতে পারে না। তাওবাদী গ্রন্থ তাও তে চিং এর প্রারম্ভেই বলা হয়েছে- The Way that can be told of is not an unvarying way; The names that can be named are not unvarying names. It was from the Nameless that Heaven and Earth sprang; The named is but the mother that rears the ten thousand creatures, each after its kind. (chap. 1, tr. Waley) তারপরও তাও এর ধারনা গড়ে উঠেছিল প্রাচীন চিনে।এবং ধারনাটি গড়ে তুলেছিলেন লাওৎ -সে নামে প্রাচীন চিনের একজন প্রজ্ঞাবান মানুষ।লাওৎ -সে: অর্থ প্রবীন শিক্ষক। সম্ভবত সম্মানজনক উপাধী। কাজেই, লাওৎ -সে-ই ছিলেন তাওবাদের গুরু। তাও তে চিং অর্থ কি? তাও মানে পথ নীতি বা মতবাদ; তে মানে পূন্য;চিং মানে নিয়ম। কাজেই, তাও তে চিং-এর বাংলা করা অর্থ করা যায় "পূন্য পথের নিয়ম।" বইটি লিখেছেন লাওৎ -সে। তবে বিতর্ক আছে। লাওৎ -সে-র জন্ম কারও কারও মতে যিশুর জন্মের ৬শ বছর আগে। কারও কারও মতে লাওৎ -সে একজন না অনেক। আবার কারও কারও মতে লাওৎ -সে হচ্ছে পুরোটাই মিথ। আবার কারও কারও মতে ৬শ নয় তিনি বেঁচে ছিলেন যিশুর জন্মের ৪শ বছর আগে। যিশুর জন্মের ৪শ বছর আগের সময়টাকে চিনে বলা হয় "শত চিন্তাধারার যুগ"। আর রাজনৈতিক দিক দিয়ে ‍"যুদ্ধরত রাস্ট্রের যুগ"। সেই সময়ই বেঁচে ছিলেন লাওৎ -সে। সিমা কিয়ান ছিলেন একজন বিখ্যাত চৈনিক ঐতিহাসিক । তিনি মনে করতেন যে, লাওৎ -সে ছিলেন কনফুসিয়াস- এর সমকালীন। এবং তাদের মধ্যে নাকি দেখাও হয়েছিল। মনে করা হয় যে ছিলেন চৌ আমলের রাজকীয় গ্রন্থগারের কর্মকর্তা ছিলেন লাওৎ -সে। প্রথাগত শিক্ষা না থাকলেও অনেকেই ভিড় করেছিল ওই জ্ঞানীর পাশে। এমনটাতো হতেই পারে। নৈতিক অধপতনে বিরক্ত হয়ে শেষ বয়েসে রাজ্য ছেড়ে চলে যান ষাঁড়ের পিঠে চড়ে। এমনটাতো হতেই পারে। তখনই নাকি তাঁর এক শিষ্য বলেছিল,'যাওয়ার আগে কিছু বলে যান গুরু।" লাওৎ -সে যা বলেছিল তাই পরবর্তীকালে পরিচিত হয়েছিল তাও তে চিং নামে। এমনটা হতে পারে। কেননা, তাও তে চিং ছোট বই। ৮১ টি সংক্ষিপ্ত অধ্যায় ও ৫০০০ শব্দ। এককালে ইউরোপের জ্ঞানীগুণিরা সব হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল অতটুকুন বইয়ের ওপর। To die but not to perish is to be eternally present. He who knows he has enough is rich. বইটা পড়ে প্রাচীন চিনের উপর শ্রদ্ধা ভয়ানক বেড়ে গিয়েছিল। তা কি আছে এতে? তাও তে চিং -এ আছে অনেক রহস্যময় উক্তি। যেমন- The Valley Spirit never dies It is named the Mysterious Female. And the doorway of the Mysterious Female Is the base from which Heaven and Earth sprang. It is there within us all the while; Draw upon it as you will, it never runs dry. (chap. 6, tr. Waley) আবার- Tao the only motion is returning; The only useful quality, weakness. For though all creatures under heaven are the products of Being, Being itself is the product of Not-being. " (chap. 40, tr. Waley) আরও যেসব বিষয় রয়েছে- * Force begets force. * One whose needs are simple can fulfill them easily. * Material wealth does not enrich the spirit. * Self-absorption and self-importance are vain and self-destructive. (22, 24) * Victory in war is not glorious and not to be celebrated, but stems from devastation, and is to be mourned. * The harder one tries, the more resistance one creates for oneself. * The more one acts in harmony with the universe (the Mother of the ten thousand things), the more one will achieve, with less effort. * The truly wise make little of their own wisdom for the more they know, the more they realize how little they know. * When we lose the fundamentals, we supplant them with increasingly inferior values which we pretend are the true values. (18) * Glorification of wealth, power and beauty beget crime, envy and shame. * The qualities of flexibility and suppleness, especially as exemplified by water, are superior to rigidity and strength. (8, 40, 55, 78) * Everything is in its own time and place. * Duality of nature that complements each other instead of competing with each other — the two faces of the same coin — one cannot exist without the other. * The differences of opposite polarities — e.g., the differences between male and female, light and dark, strong and weak, etc. — help us to understand and appreciate the universe. * Humility is the highest virtue. * Knowing oneself is a virtue. (33) * Envy is our calamity; overindulgence is our plight. * The more you go in search of an answer, the less you will understand. * Know when it's time to stop. If you don't know then stop when you are done. (9) বলে রাখি বইটির বাংলা অনুবাদ পাওয়া যায়। খুঁজে বার করার দায়িত্ব আপনার। আপতত ইন্টারনেটের কল্যাণে সবচে সহজ ইংরেজি অনুবাদের লিঙ্ক: http://www.iging.com/laotse/LaotseE.htm সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:৩৪
false
ij
প্রাচীন ইলাম সভ্যতা জীবনের অপর নাম জল বলেই সম্ভবত প্রাচীন সভ্যতাগুলি নদ-নদীর পাড়েই গড়ে উঠতে দেখি। মানবসভ্যতায় নদ-নদীর অবদান অপরিসীম। নীল-সিন্ধু-গঙ্গার অববাহিকার সভ্যতাসমূহ এ সত্যকে ধারন করে আছে। নদী কেবল জলের উৎসই নয়-যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রাথমিক অবকাঠামোটিও নির্মাণ করে দেয় । স্থলপথের পূর্বে জলপথই ছিল প্রাচীন মানবগোষ্ঠীর যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। প্রাচীন ইরানের ইলাম সভ্যতা পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতাগুলির অন্যতম । ইলাম সভ্যতাটির অবস্থান ছিল পারস্য সাগরের উত্তরে আর তাইগ্রিস নদীর পুবে যেটি এখন ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমের খুজিস্তান প্রদেশ। প্রাচীন ইলাম রাজ্যের রাজধানী সুসা। এখানেই বাস করত ইলামাইট বা ইলামিয় জাতি। গ্রিকরা ইলাম সভ্যতাকে বলত সুসিয়ানা বা ইলিমাইস; ইলাম সভ্যতার লোকজন অবশ্য নিজেদের বলত হালতামটু, পারসিকরা ওদের বলত হুওয়াজা। সুমেরিয় ভাষায় আর হিব্রুতে ইলাম। ইলাম সভ্যতার লিখিত ভাষা ছিল না। লিখবার কায়দাকানুন ইলামিয়রা ধার করেছিল সুমেরিয়দের কাছ থেকেই। উল্লেখ্য ইলাম ভাষার পাঠোদ্ধার আজও সম্ভব হয়নি!প্রাচীন ইরানের ইলাম সভ্যতা গড়ে উঠেছিল কারুন নদীর অববাহিকায়। নদীটির উৎপত্তি খুজিস্থানের জারদ কুহ পাহাড়ে। ৪৫০ মাইল দীর্ঘ কারুন নদীটি ইরানের একমাত্র নৌ-চলাচলযোগ্য নদী। হিব্রু বাইবেলে এই নদীর নাম গিহন । (দ্র: জেনেসিস) গার্ডেন অভ ইডেন-এ যে চারটে নদীর কথা হিব্রু বাইবেলে বর্ণিত হয়েছে তার মধ্যে গিহন (কারুন) ছিল একটি। উপরোন্ত, হিব্র“ বাইবেল ইলাম শব্দটিও রয়েছে। নুহ নবীর এক ছেলের নাম ছিল শেম। শেম-এর এক ছেলের নাম ছিল ইলাম। নুহ নবী, শেম ও ইলাম কথা সেমেটিক ভাষায় বললেও ইলামিয়রা কথা বলত অ-সেমেটিক ভাষায় । এই বৈপরীত্যের মানে কি? এ ব্যাপারে অবশ্য ইহুদি পন্ডিতগন মোটেও বিব্রত নন। তাদের খাড়া যুক্তি হল: ইলামিয়রা কথা বলত অ-সেমেটিক ভাষায়-এতে অবাক হওয়ার কি আছে । ব্যাবিলনের টাওয়ার অভ বাবেল থেকেই তো ভাষা বৈচিত্রের উদ্ভব হয়েছিল!ব্যাবিলনের পুবেই ছিল ইলাম রাজ্যটি। ইলাম রাজ্যের রাজধানী ছিল সুসা; বর্তমানে ইরানের দক্ষিপশ্চিমের খুজিস্থানের শুশ শহর। পারস্য উপসাগরের ১৫০ মাইল উত্তরে অবস্থিত সুসা নগরটি গড়ে উঠছিল আজ থেকে ৭০০০ বছর আগে । হিব্রু বাইবেলে সুসাকে বলা হয়েছে শুশান। হিব্রু বাইবেলের বুক অভ ইশতার-এর ঘটনা এখানেই ঘটেছিল। এত বছর পর নগরীটি এখন মাত্র ৩ মাইল পরীধি বিশিষ্ট ধ্বংসপ্রাপ্ত অঞ্চলমাত্র ।ইলাম সভ্যতার বুনিয়াদ ছিল কৃষি। সেচের পানি যোগাত কারুন নদী। ইলাম সভ্যতার অন্যান্য নগরগুলি হল আওয়ান, সিমাশ, মাডাকটু এবং ডার-উনটাশ। খ্রিস্টপূর্ব ৫ থেকে ৭ হাজার বছর পূর্বেই মধ্যপ্রাচ্যের জনমানুষ বুদ্ধি খাটিয়ে কৃষিকাজ ও সেচপ্রনালী আবিস্কার করে ফেলেছিল। সভ্যতায় প্রথম গমের আবাদ করা হয়েছিল ঐ কারুন নদীর জলসিক্ত উর্বরা অঞ্চলেই । সভ্যতার প্রথম রুটি প্রস্তুতকারকও প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্যের সেইসব পরিশ্রমী ও সৃজনশীল জনগন। জাগ্রস পাহাড়অনুমান করি ইলামবাসীর প্রধান আহার্য ছিল গমের রুটি, জাগ্রস পাহাড়ের মধু ও ভেড়ার মাংশ ইলাম অঞ্চলটি ছিল পর্বতময় এবং বিখ্যাত জাগ্রস পাহাড়টি ছিল সুসা নগরের নিকটেই। জাগ্রস পাহাড়টি সরবরাহ করত কাঠ মার্বেল আলাবাসটার লাপিস লাজুলি বিবিধ আকরিক ধাতু ও মূল্যবান পাথর। লাপিস লাজুলি খোচিত ঘুঘু পাখিকারুন নদীর অববাহিকায় পরিশ্রমী মানুষ কৃষির উদবৃত্ত থেকে গড়ে তোলে নগর, গড়ে তোলে ইলাম সভ্যতা। ইলাম শাসনতন্ত্রে উত্তরাধিকারের ধরনটি ছির মাতৃতান্ত্রিক; আর সেটাই ছিল স্বাভাবিক। কেননা, পিতৃতান্তিক সমাজে উত্তোরনের আগে মানবসমাজটির ধরন ছিল মাতৃতান্ত্রিক। ইলামিয় রাষ্ট্রে বোনের ছেলে হত নতুন শাসক! প্রধান শাসক বাস করতেন সুসা নগরী। সুসা ছিল অনেকটা ইলাম রাজ্যের ফেরাডেল রাজধানীর মতন। মনে থাকবার কথা: ইলাম সভ্যতার অন্যান্য নগরগুলি হল আওয়ান, সিমাশ, মাডাকটু এবং ডার-উনটাশ।ইলামিয় আর্টপ্রধান শাসকের সমবয়েসী ভাইও রাজ্য শাসন করত। সে ছিল অনেকটা ভাইসরয় বা উপরাজ। আরও একজন শাসন ভাগ করত- সে হল রাজপুত্র । প্রধান শাসক ছেলে অথবা ভাইয়ের ছেলে। প্রধান শাসক এর নিয়ন্ত্রণ ছিল রাজ্যের জায়গিরদারদের ওপর। উত্তরাধিকার এবং ক্ষমতার বন্টনের ওপর ইলাম সভ্যতা টিকে ছিল ।সুসা নগরে প্রাপ্ত নারীমূর্তি। দেবী কিরিরিশা?আদি কৃষিসভ্যতার ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য সাধারনত হত বহু ঈশ্বরবাদী । ইলামও তার ব্যাতিক্রম ছিল না। কিরিরিশা নামে দেবীর কথা জানা যায়। সম্ভবত উর্বরতার দেবী ছিলেন কিরিরিশা। সুসা ও অন্যান্য নগরীতে কিরিরিশা দেবীর উপাসনালয় গড়ে উঠেছিল। কালের গ্রাসে সেসব আজ বিলীন হয়ে গেছে। ইলামিয় পানপাত্র। পরবর্তীকালে পারস্যের শিল্পরীতিকে প্রভাবিত করেছিল। পারসিক পানপাত্রকে বলে রাইটনস। কত কত রাজ্য যে ইলাম আক্রমন করেছিল! যেমন হয়: প্রাচীন ইলাম সভ্যতার সামরিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসও ছিল আক্রমন ও প্রতি-আক্রমনের ইতিহাস। টাইগ্রিস বা দজলা নদীর তীরে ছিল প্রাচীন সুমের। সেই সুমের- এ ছিল উর নগর, জায়গাটা বর্তমান দক্ষিণ ইরাকের নাসিরিয়ার ২০ কিমি পশ্চিমে। উর নগর উদ্ভব ও বিকাশ কাল ছিল ৪০০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ৪০০ খ্রিস্টপূর্ব। উর সম্বন্ধে এত কথা বলছি, কারণ, ২২০০ খ্রিস্টপূর্বে ইলাম অধিকার করে নেয় উর । এর ২০০ বছর পর ইলামিয়রা সংঘবদ্ধ হয়ে উর-এর নিয়ন্ত্রণ ছিন্ন করে ও উর নগর ধ্বংস করে। ১৬০০ খ্রিস্টপূর্বে ব্যাবিলন অবরোধ করে কাসাতি নামে এক জাতি। তারা ইলাম আক্রমন করে দখল করে নেয়। প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্য। সংঘাত ও সভ্যতার লীলাভূমি ... ১১৬০ খ্রিস্টপূর্বে ইলামরাজ শুটরুক -নাহ্হুনতে ইলাম থেকে কাসাতি জাতি তাড়িয়ে দিয়ে ইলাম এর হৃতগৌরব পুনুরুদ্ধার করেন । অবশ্য এরপরও শেষ রক্ষা হয়নি। কেননা, ১১২০ খ্রিস্টাব্দে ব্যাবিলনের রাজা ১ম নেবুচাদনেজার ইলাম আক্রমন করে তছনছ করে। ৭৫০ খ্রিস্টপূর্বে নতুন ইলাম সাম্রাজ্য পূর্নবার প্রতিষ্ঠিত হলেও পূর্বের গৌরব আর ফিরে আসেনি। খ্রিস্টপূর্ব ৬৯২ থেকে ৬৩৯ খ্রিস্টপূর্ব পর্যন্ত আসিরিয় সম্রাট আশহুরবানিপাল সুসা আক্রমন করে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেন। সুসার দালানকোঠাগুলি সব গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ও ধনসম্পদ লুঠ করা হয়। ইলামের উর্বর জমিতে লবন ছিটিয়ে নাকি জমির উর্বরতা নষ্ট করার নির্দেশ দিয়েছিলেন আসিরিয় সম্রাট আশহুরবানিপাল! ইতিহাস এহেন বর্বরতার সাক্ষীও বৈ কী!যাক। এর পরপরই ইলামিয় সভ্যতা বিলীন হয়ে যায়, সভ্যতাটি আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি । এরপর পারস্যের আকামেনিদ রাজবংশের সম্রাট সাইরাস দ্য গ্রেট ইলাম রাজ্যকে পারস্য সাম্রাজ্যের অঙ্গীভূত করে নেন। ইলামিয় পানপাত্র।সুসা সুপ্রাচীন ইলাম
false
mk
হামলার টাকা আসে বিদেশ থেকে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে অপারেশনের আগে জঙ্গিদের কাছে টাকা আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। মধ্যপ্রাচ্যের একজন ব্যবসায়ী এই টাকা পাঠিয়েছেন বলে নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা। তবে ওই ব্যবসায়ীর পরিচয় এবং কত টাকা এসেছে তদন্তের স্বার্থে এখনই তা প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। হলি আর্টিজান বেকারিতে অপারেশনের ঘটনায় তদন্তের সঙ্গে যুক্ত একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে মধ্যপ্রাচ্য থেকে টাকা আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘যে চ্যানেলে টাকা এসেছে ওই চ্যানেলটিও আমরা ধরে ফেলেছি। সেই টাকা থেকেই অভিযানে অংশ নেওয়া জঙ্গিরা থাকা-খাওয়ার খরচ বহন করে এবং অস্ত্র কেনে। এমনকি অপারেশনের আগে যারা অস্ত্র এনে দিয়েছে তাদেরও সন্ধান পাওয়া গেছে। এতে একটি রাজনৈতিক দলের সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলেও জানান ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া ইত্তেফাককে বলেন, ‘গুলশানের হলি আর্টিজানে অপারেশনের পরিকল্পনাকারীরা শনাক্ত হয়েছে। পরিকল্পনাকারীদের ধরতে আমাদের অভিযান চলছে। তবে কাউকেই নির্দিষ্ট ঠিকানায় পাওয়া যাচ্ছে না। সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডগুলোর একটার সঙ্গে আরেকটার মিল রয়েছে। এই কাজগুলো করেছে এই গ্রুপ। এদের মাস্টারমাইন্ডও একই। ফলে চক্রটি ধরতে পারলে শেকড়ে পৌঁছা যাবে। বন্ধ করা যাবে জঙ্গিদের সব ধরনের তত্পরতা। তবে গোয়েন্দা ও পুলিশের তত্পরতার কারণে ওরাও সতর্ক হয়ে গেছে। কিন্তু কোনোভাবেই পুলিশ গোয়েন্দাদের হাতে থেকে তাদের রেহাই মিলবে না।’ হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনায় যে মামলা হয়েছে টির তদন্ত করছে কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটি)। সিটির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, রিমান্ডে যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা এই সংশ্লিষ্ট অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাদের কাছ থেকেও কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। যাতে এই হামলার আগে-পরে অর্থের যে হিসাব পাওয়া গেছে তা খুবই ভয়ঙ্কর। মধ্যপ্রাচ্য থেকে এই হামলার আগে টাকা এলেও ইউরোপের কয়েকটি দেশ থেকে আগেও টাকা এসেছে জঙ্গিদের কাছে। আবার বাংলাদেশি নামকরা ব্যবসায়ীও জঙ্গিদের টাকা দেন। সব তথ্য প্রমাণ নিয়েই এসব ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হবে বলে জানান তিনি।এদিকে তদন্তকারীরা বলছেন, গুলশানের হামলার সঙ্গে একটি রাজনৈতিক দলের সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। ওই রাজনৈতিক দলটি তাদের কয়েকজন নেতাকে বাঁচাতে অর্থ ঢালছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গিদের সঙ্গে তাদের কয়েকজন নেতার যোগসূত্র পাওয়া গেছে। মাস্টারমাইন্ডদের সঙ্গে রয়েছে তাদের সম্পৃক্ততা। ফলে পুরো চক্রটিকে ধরার জন্য দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন গোয়েন্দারা।এদিকে দুবাই থেকে হুজির পলাতক আমীর মুফতি শফিকুর রহমান কয়েক দফায় তার লোকজনের কাছে টাকা পাঠিয়েছেন। টাকা পাঠানো সংক্রান্ত কাগজপত্র গত শনিবার পুরান ঢাকার কোতোয়ালি থানা এলাকার একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সেখান থেকে ডিবি পুলিশ হুজির পলাতক ও কারাবন্দীদের একটি তালিকা উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় ওই বাড়ি থেকে পুলিশ হুজিবি’র ঢাকার সভাপতি (উত্তর) মুফতি মাওলানা নাজিমউদ্দিনসহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। অন্য দু’জন হলেন প্রকৌশলী সাইদুজ্জামান (২৪) ও আনাস (২১)।ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শহীদুল্লাহ ওইদিন জানিয়েছিলেন, শনিবার ভোরে পুরান ঢাকার কোতোয়ালি থানা এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। বাড়িটি হরকাতুল জিহাদের ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহূত হতো। ধারণা করা হচ্ছে, দুবাইয়ে মুফতি শফিকুর রহমান আত্মগোপন করে আছেন। মুফতি শফিকুর রহমান রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। বিভিন্ন সময়ে হরকাতুল জিহাদের গ্রেফতার হওয়া সদস্যদের বর্তমান কি অবস্থা এবং তাদের পরিবারকে কি ধরনের সাহায্য করা হয়েছে- সে সম্পর্কে কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া একটি তালিকায় হরকাতুল জিহাদ তাদের সদস্যদেরকে কিভাবে আর্থিক সহায়তা করে থাকে সে সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য রয়েছে। যা এখনো যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে। সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:৫৭
false
ij
লরেনা ম্যাকেননিট_ বিশ্বসংগীতের এক মায়াবী উপাসিকা ফ্রিজিয় আকাশের নিচে সমুদ্রের ঢেউয়ের ওপর নাচছে জ্যোস্না ঝলমলে ছায়াপথে অজস্র নক্ষত্র দেখছে অতীত থেকে একটি কন্ঠস্বর গান হয়ে আসে এইসব প্রাচীন পাথরেরা বলবে আমাদের প্রেমই যোগাবে আমাদের প্রাণ আমাকে ঘিরে আছে বাতাস আমি এখন সমুদ্রপাড়ে দাঁড়িয়ে শুনছি সেই কন্ঠস্বর যে স্বর আগে শুনিনি আমাদের যুদ্ধে তারা আমাদের পাবে আমাদের আর কোনও পথ নেই তুলে ধরেছি আমাদের পতাকা সত্যই মুক্তি দেবে আমাদের আমার মন যুগ থেকে যুগে ডাকছে ক্রোধের দুঃখের মানুষের সুখদুঃখ আর সব অপচয় আমরা ভাবি কোথায় ঈশ্বর এই যন্ত্রনার মুখে আমি আকাশের তারাদের দেখি তোমাকে আবার পাব বলে বিশাল সমুদ্র পেরিয়ে এসেছি শুনেছি কত ডাক বন্দুক তরোয়াল ও ঘৃনা একই রকম রয়ে গেছে কেউ গৌরবে তোমার নাম নেয় কেউ অর্জন করার জন্য তথাপি অর্জিত হয় না স্বাধীনতা কোনও জীবনই বৃথা যায় না এই পৃথিবী আমাদের না আকাশ নক্ষত্র ঝরিয়ে কাঁদে সকল জীবিত প্রাণি ভয়ে বিস্ময়ে কাতর আমাদের পতাকা তুলে ধরব যতদিন সম্ভব ততদিন একে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাব আমাদের শক্তি যোগাবে আমাদের প্রেম লরেনা ম্যাকেননিট। তাঁর কম্পোজিশনে প্রতিফলিত হয় প্রাচীন ও মধ্যযুগের পৃথিবী। দান্তের কবিতা, রুমির গজল আর পর্যটক মার্কো পোলোর অনুসন্ধান ... ১৯৫৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ কানাডার মানিটোবার মর্ডানে লরেনা ম্যাকেননিট-এর জন্ম । মানিটোবার মানচিত্র এখন বাস করেন স্ট্রাফোর্ড অন্টারিও। মানচিত্রে অন্টারিও মায়াবী এক সুরকার পিয়ানো ও হার্প বাজানো ছাড়াও লরেনা ম্যাকেননিট-এর কন্ঠস্বর বেশ উচুঁতে সাবলীল। যারা ইনসট্রুমেনটাল মিউজিক পছন্দ করেন -অথচ লরেনা ম্যাকেননিট শোনা হয়নি -তাদের জন্য নতুন জগৎ খুলে যেতে পারে- The moonlight it was dancing On the waves, out on the sea The stars of heaven hovered In a shimmering galaxy A voice from down the ages So haunting in its song These ancient stones will tell us Our love must make us strong The breeze it wrapped around me As I stood there on the shore And listened to this voice Like I never heard before Our battles they may find us No choice may ours to be But hold the banner proudly The truth will set us free My mind was called across the years Of rages and of strife Of all the human misery And all the waste of life We wondered where our God was In the face of so much pain I looked up to the stars above To find you once again We travelled the wide oceans Heard many call your name With sword and gun and hatred It all seemed much the same Some used your name for glory Some used it for their gain Yet when liberty lay wanting No lives were lost in vain Is it not our place to wonder As the sky does weep with tears And all the living creatures Look on with mortal fear It is ours to hold the banner It is ours to hold it long It is ours to carry forward Our love must make us strong And as the warm wind carried Its song into the night I closed my eyes and tarried Until the morning light As the last star it shimmered And the new sun's day gave birth It was in this magic moment Came this prayer for mother earth The moonlight it was dancing On the waves, out on the sea The stars of heaven hovered In a shimmering galaxy A voice from down the ages So haunting in its song These ancient stones will tell us Our love must make us strong লরেনা ম্যাকেননিট-এর ভিডিও লিঙ্ক Click This Link সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১:৩০
false
rg
ক্যামেরা দিয়ে কবিতা লেখেন নাসির আলী মামুন । আজ ছিল এই ক্যামেরা কবি'র ৬০ তম জন্ম দিন। রেজা ঘটক আজ ছিল ক্যামেরার কবি নাসির আলী মামুনের ৬০ তম জন্ম দিন। মামুন ভাইকে সম্মান জানিয়ে শ্রাবণ প্রকাশনী একটি ব্যতিক্রমী প্রয়াস নিয়েছিল। প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা মুনেম ওয়াসিফ নিজেও একজন ফটোগ্রাফার। পাঠশালা থেকে ফটোগ্রাফিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেছেন। গত বছর জুলাই মাসে নাসির আলী মামুনের দুইটি সাক্ষাৎকার গ্রহন করেন মুনেম ওয়াসিফ। 'কামরা' নামের একটি শিল্প-সংস্কৃতির কাগজ প্রতি বছর একটি সংখ্যা বের হয়। 'কামরা'র দ্বিতীয় সংখ্যায় জানুয়ারি ২০১৩ সালে নাসির আলী মামুনের সেই দুইটি সাক্ষাৎকার প্রথম প্রকাশিত হয়। মামুন ভাইয়ের মাধ্যমে সেই খবর জেনে শ্রাবণ প্রকাশনীর কর্নধার রবীন আহসান এটিকে বই আকারে প্রকাশ করলেন মামুন ভাইয়ের ৬০ তম জন্ম দিনে। বইটির নাম দেওয়া হয়েছে 'নাসির আলী মামুন তার আলো তার ছায়া'। সাক্ষাৎকার গ্রহন করেছেন তরুণ ফটোগ্রাফার মুনেম ওয়াসিফ। বইটির প্রকাশনা উৎসব করলো নতুন আলোচিত ওয়েব পোর্টাল http://www.boinews24.com। বইটির প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি বেলাল চৌধুরী এবং স্পেন প্রবাসী চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম। এছাড়া নাসির আলী মামুনের কর্মময় সৃষ্টিশীল জীবনের উপর আলোচনা করেন কবি মুহাম্মদ নুরুল হুদা, কবি হবিবুল্লাহ সিরাজী ,কবি রবিউল হুসাইন, অধ্যাপক আলতাফ হোসেন, বইটির লেখক মুনেম ওয়াসিফ এবং শ্রাবণ প্রকাশনীর প্রকাশক ও বইনিউজ২৪.কম সম্পাদক রবীন আহসান। এছাড়া নাসির আলী মামুন তাঁর ক্যামেরা নিয়ে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কথা শোনান। কিভাবে ১৯৭২ সালে দেশ স্বাধীনের পর পত্রিকা চুরি করে ছবি তোলার কাজ করতেন। কিভাবে বিখ্যাত মানুষদের পেছনে বছরের পর বছর ক্যামেরা হাতে ঘুরেছেন। কিভাবে পোর্টেট ফটোগ্রাফি শুরু করলেন ইত্যাদি। মামুন ভাই আমাদের জানালেন, শীঘ্রই তিনি তাঁর ছেলেকে নিয়ে 'ফটোজিয়াম' নামে একটি আলোকচিত্রের জাদুঘর গড়ে তোলার কাজে হাত দেবেন। ১ জুলাই বিকেল ৫টায় আজিজ সুপার মার্কেটের (৪র্থ তলায়) বাহার রহমানের গ্যালারি নিত্য উপহারে এই প্রকাশনা অনুষ্ঠান ও মামুন ভাইয়ের ৬০ তম জন্ম দিন পালনের অনুষ্ঠানটি ছিল সত্যিই অনেক দিন পর কোনো ভালো লাগা একটি সহজ সরল অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিমণ্ডলের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। কবি আলফ্রেড খোকন, কবি আহমেদ স্বপন মাহমুদ, কবি সাখাওয়াৎ টিপু, কবি জহির খান, শিশু সাহিত্যিক আনজিম লিটন, আর্টিস্ট চারু পিন্টু, নাট্যকর্মী ইকতারুল ইসলাম, কবি শিমুল সালাহ্‌উদ্দিন, অনেক আলোকচিত্রশিল্পী, নাট্যকর্মী, অভিনয় শিল্পী সহ আরো অনেকেই। বইটির প্রকাশনা উৎসব শেষে মামুন ভাইয়ের ৬০ তম জন্ম দিন উপলক্ষ্যে একটি কেক কাটা হয়। জয়তু মামুন ভাই। জুয়তু ক্যামেরার কবি নাসির আলী মামুন। সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:২৯
false
fe
ক্ষমতার সমীকরণ ও দলীয় লুটেরা শ্রেণী ক্ষমতার সমীকরণ ও দলীয় লুটেরা শ্রেণীফকির ইলিয়াস==============================এক সময়ের স্বৈরশাসক হু মু এরশাদ মাঝে মাঝে বেশ চমকপ্রদ কথা বলেন। তিনি বলেছেন আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একশ আসন পেতে পারে। এর জবাবে আওয়ামী লীগেরই এক নেতা (যদিও দল তাকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে) মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, তাহলে কী বাকি দুশ আসন এরশাদ পাবেন? অবশ্য মান্নাও বলেছেন, দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে হলুদ কার্ড দেখাবে। বাংলাদেশে এখন ক্ষমতার সমীকরণ চলছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে কে কতো আসন পাবেনÑ তার হিসাব কষছেন অনেকেই। বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায়। কারণ তাদের করণীয় ফর্দের তালিকা অনেক লম্বা। তারেক-কোকোকে ফিরিয়ে আনা, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বের করে আনাÑ এর মাঝে অন্যতম। অন্যদিকে এরশাদ চাইছেন নিজে রাজনীতির ‘মধ্যনিয়ামক’ শক্তি হতে। তিনি চাইছেন, মহাজোট করে যা পারেননি, তার প্রতিকার করতে। কারণ আওয়ামী লীগ দুইশর বেশি আসন পাবার পর আর যে কারো ধার ধারবে না তা এরশাদ জেনেছিলেন আগেই। তারপরও শেষ পর্যন্ত তিনি মহাজোটের সঙ্গে থাকবেন এটাও প্রত্যাশিত। বাংলাদেশের রাজনীতির অন্যতম নিয়ামক শক্তি হলো কালো টাকা। সম্প্রতি নিউইয়র্কে এসেছিলেন ক্ষমতাসীন দলের এক নীতিনির্ধারক। এক ঘরোয়া আড্ডায় বললেনÑ ‘আরে ভাই ইলেকশন তো করতে হবে। টাকা ছাড়া কী ইলেকশন হয়। আমেরিকায়ও তো ফান্ড রেইজিংয়ের নামে চাঁদাবাজি হয়!’আমি দ্বিমত পোষণ করলাম। না, হয় না। ফান্ড তুললে এর হিসাব দিতে হয়। না দিলে, চাঁপাবাজি করলে জেল জরিমানা হয় রাজনীতিকদের, এই আমেরিকায়। একটা জিনিস বুঝলাম তার কথায়, টাকা তোলার জন্য সব কটি দলই ব্যস্ত। তা যেভাবেই হোক। মনে পড়লো শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির কথা। আমরা দেখেছিলাম, কিছু কিছু সংবাদ মাধ্যমে এসব লুটপাটকারী হিসেবে কিছু নাম ছাপা হয়েছিল। এর মধ্যে এসইসির কিছু শীর্ষ কর্মকর্তার নামও ছিল। তা নিয়েও চলেছে নানারকম বাগ্বিত-া। সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের যাদের নাম ছিল, তারা সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গভীর তদারকি ফাঁকি দিয়ে কিভাবে এমন যোগসাজশ তৈরি করলো তা ভেবে দেখার বিষয় ছিল। কিছুই দেখা হয়নি। অন্যদিকে ব্যবসায়ী হিসেবে যাদের নাম ছাপা হয়েছিল, তারা প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ে সম্পৃক্ত। আর এই সুবাদে তারা আগেই হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক ছিল এবং আছে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এরা আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির রাজনীতির ম“পুষ্ট হলেও লুটপাটের মাঠে তারা একে অন্যের সতীর্থ। দলীয় আদর্শ তখন তাদের কাছে মোটেই মুখ্য নয়। বাংলাদেশে ‘মিলেমিশে’ লুটপাট করার প্রথা নতুন নয়। এর আগেও হয়েছে। বিশেষ করে এবার শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে এসব দলীয় লেবাসধারীদের একই সমান্তরালে অবস্থান তাদের মুখোশ নগ্নভাবে খুলে দিয়েছে।কতো অরক্ষিত একটি দেশে বসবাস করছে বাংলাদেশের মানুষ! এটা খুবই নিশ্চিত করে বলা যায়, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে যদি শুধু বিএনপিপন্থী শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ততা থাকতো তবে, মহাজোট সরকার গলা হাঁকিয়ে তাদের নাম বলে বেড়াতো। যেহেতু এই কেলেঙ্কারিতে আওয়ামী লীগপন্থী শীর্ষ ব্যবসায়ীরাও জড়িত ছিল কিংবা আছে, সে কারণেই ‘ভাসুরের নাম মুখে নিতে’ লজ্জা পাচ্ছিলেন সংশ্লিষ্টরা। আমাদের মনে আছে, স্বাধীনতা-পরবর্তীকাল থেকেই এই ‘প্রভাবশালী’ মহলটি নানা সময়ের সরকারি আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়ে জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। এরা কখনো সামরিক জান্তাদের মিত্র সেজে, কখনো গণতান্ত্রিক সরকারের প্রিয়ভাজন সেজে রাষ্ট্রের সুনাম এবং সম্পদ দুটোই হাতিয়ে নিয়েছে। মনে রাখা দরকার ’৯৬ সালে জিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পরও শেয়ারবাজারে এমনি একটি পরিকল্পিত ধস নেমেছিল। এসব ঘটনা আসলেই রাষ্ট্রের জন্য ভয়াবহ শঙ্কার খবর। তারপরও আমরা দেখছি, এসব লুটেরা শ্রেণীর প্রতিনিধিদের রাষ্ট্রক্ষমতায় বসানোর জন্য একটি শ্রেণী মরিয়া হয়ে কাজ করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চার বছরে তার সরকারের সাফল্যের যে বিবরণ গেলো ১১ জানুয়ারি তার ভাষণে দিয়েছেন, তা আরো পরিপক্ব হতে পারতো যদি বাংলাদেশে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রশ্রয় না পেতো। জাতি দেখতে চায়, হলমার্ক কিংবা ডেসটিনি কেলেঙ্কারির নেপথ্যে কারা?বাংলাদেশে পেশিশক্তি ও কালোটাকার এই যে মহড়া দেখানোর প্রতিযোগিতা, তা ধ্বংস করে দিচ্ছে দেশের মননশীল মানুষের মেরুদ-। প্রজন্ম সাহস পাচ্ছে না দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে। বরং তাদেরই কেউ কেউ টেন্ডার, চাঁদাবাজি, ভাগ-বাটোয়ারায় অংশ খেতে কক্ষচ্যুত হয়ে দলীয় সন্ত্রাসী বনে যাচ্ছে। অথচ আমরা জানি, এই বাঙালি জাতির তরুণ প্রজন্মই বাহান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল। তাহলে আজ এই প্রজন্মের এতো সামাজিক অবক্ষয় কেন? এর কিছু কারণ আছে। তার অন্যতম হলো রাষ্ট্র মেধাবী প্রজন্মকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে বারবার কার্পণ্য দেখিয়েছে। ফলে পচনশীল সমাজ ব্যবস্থার ছত্রছায়ায় অর্ধশিক্ষিত, অশিক্ষিত নেতৃত্বের দাপট গণমানুষের স্বপ্নের বাংলাদেশের দখল নেয়ার অপচেষ্টা করেছে। দেশে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে মানুষ যে চেষ্টা করছে না, তা কিন্তু নয়। তারপরও নিষ্পেষণের করাঘাতে মানুষ বারবার পরাজিত হয়েছে লুটেরা শ্রেণীর কাছে। একটি রাষ্ট্রে গণতন্ত্র সুসংহত করার জন্য দেশপ্রেম কতোটা অপরিহার্য, তা বিশ্বের যে কোনো সভ্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দিকে তাকালেই আমরা দেখতে পারি। ভারতের রাজনীতিকরা মুখে একে অপরের যতোই সমালোচনা করুন না কেন, লোকসভায় তারা দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ইত্যাদির বিরুদ্ধে কিভাবে ঐক্যবদ্ধ তা আমরা বরাবরই দেখছি। অথচ বাংলাদেশে লুটপাটের বিরুদ্ধে কথা বললেই তাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। নিজেদের গা বাঁচানোর জন্য হরতাল ডেকে জনমানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দেয়া হয়।বাংলাদেশের মানুষ চারদলীয় জোটের শাসন দেখেছে ২০০১-২০০৫ সালে। একযোগে বোমা হামলা কিংবা ২১ আগস্টের শক্তিশালী গ্রেনেড হামলার স্মৃতি এ দেশের মানুষের মানে আছে। পরিতাপের কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক কিংবা সমাজতান্ত্রিক মানসিকতার রাজনীতিকরা এখন অনেকটাই জনসমর্থনহীন। এদের জনবল নেই। অথচ এরা কিন্তু দেশকে লুটেরা শ্রেণীর হাত থেকে বাঁচাবার জন্য ডাক দিয়েই যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের ডাক কেউ শুনছে না। গেলো কিছুদিন আগে সিপিবি ও বাসদ একটি যৌথ ঘোষণা দিয়েছিল। ১৫ দফা ঐ দাবিগুলো ছিল এরকমÑ১. মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত সংবিধানের সকল বিকৃতি ও অসম্পূর্ণতা দূর করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণআকাক্সক্ষার আলোকে সংবিধানকে আরো গণতান্ত্রিক ও গণমুখী করা। ২. ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তি দ্রুত নিশ্চিত করা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-গণআকাক্সক্ষার পুনর্জাগরণ ঘটানো। ৩. রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধ এবং রাষ্ট্রের সকল অগণতান্ত্রিক কালো আইন বাতিল করা। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশি হস্তক্ষেপ বন্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ আইন প্রণয়ন। ৪. সকল প্রকার অবৈধ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও কালো টাকার পুঁজি রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নিয়ে আসা। ৫. ঘুষ-দুর্নীতি, দলীয়করণ, দুঃশাসন-অনিয়ম এবং লুটপাট ও দখলদারিত্ব রোধ করা ও আইনের আওতায় আনা। আদর্শবাদী রাজনীতির পুনর্জাগরণ ঘটানো। ৬. খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। খাদ্য পণ্যের সিন্ডিকেট ভাঙা ও মধ্যস্বত্বভোগীদের আধিপত্য বিলোপ করা। সর্বস্তরে রেশনিং ব্যবস্থা চালু। টিসিবিকে সক্রিয় করে ন্যায্যমূল্যের বিক্রয়কেন্দ্র খোলা। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধ ও সমবায় চালু করা। ৭. ৮০০০ টাকা ন্যূনতম জাতীয় মজুরি নির্ধারণ করা এবং মহার্ঘ্য ভাতা চালু করা। ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করে শ্রমজীবী মানুষের অনুকূলে শ্রমনীতি ও শ্রম আইন প্রণয়ন করা। ৮. আমূল ভূমি সংস্কার করা। গ্রাম-শহর সর্বত্র জমির সিলিং করা। সার-বীজসহ কৃষি উৎপাদন সহায়তা ও কৃষি পণ্যের লাভজনক মূল্য নিশ্চিত করতে কৃষি ভর্তুকি, হাট-বাজারে সরকারি ক্রয়কেন্দ্র খোলা। ক্ষেতমজুরদের রেজিস্ট্রেশন করাসহ কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান। এনজিও ও অন্যান্য খাত থেকে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতার স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যবস্থা ও আইন প্রণয়ন করা। ৯. গ্যাস-বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ বৃদ্ধি নিশ্চিত করা, বাড়িভাড়া ও গাড়িভাড়া যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে আনা ও পরিবেশ দূষণসহ যাতায়াত সংকট দূর করা। রেল- নৌপথ সম্প্রসারণসহ গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু করা। ১০. রাষ্ট্রীয় খরচে সকলের জন্য বৈষম্যহীন শিক্ষা এবং সকল নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। ১১. মালিকানা জনগণেরÑ এই নীতির ভিত্তিতে জাতীয় সকল সম্পদ অনুসন্ধান, সংরক্ষণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করা। ১২. বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ চক্রান্ত ও আধিপত্যবাদী নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখা। জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা। ১৩. রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারের সর্বক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সম-অধিকার নিশ্চিতকরণ ১৪. আদিবাসী ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান ও তাদের ন্যায্য অধিকার এবং ভাষা-সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানো। ১৫. প্রকৃতি ও পরিবেশের বিপর্যয় রোধ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করা।এসব দাবির সঙ্গে কারো কারো কোনো অংশে দ্বিমত থাকতেই পারে। কিন্তু দাবিগুলো বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির মূলধারার চেতনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ তা মানতেই হবে। প্রতিটি রাজৈতিক দলের ভেতরেই ঘাপটি মেরে বসে আছে কিছু লুটেরা শ্রেণী। তারা মনে করে নিজেদের সরকার ক্ষমতায় থাকতেই আখের গুছিয়ে নিতে হবে। এজন্য এরা দেশ-জাতি-মানুষের স্বার্থকে মোটেই পাত্তা দেয় না। আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার। ছাত্রলীগ কিংবা ছাত্রদলের কারা ভয়ঙ্কর চাঁদাবাজ- তা দলের সিনিয়রদের অজানা নয়। আর রগকাটা আল-বদর চক্রের দোসররা যখন কিছুই মানছে না- ওদের শায়েস্তা করতে হবে রাজনৈতিকভাবেই। সংসদীয় আসনের আগাম ভাগ-বাটোয়ারা করা ভালো। তবে মনে রাখতে হবে, এ দেশের মানুষ পাঁচ বছর পর পর যে মৌলিক ভোটাধিকার পান, তা কাজে লাগাতে মোটেই অবিবেচক হন না।----------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ / ঢাকা / শনিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০১৩
false
mk
নিরাপত্তা ইস্যু বাংলা ভাষায় একটা প্রচলিত কথা আছে, ‘যায় দিন ভালো’, অর্থাৎ ভবিষ্যৎ নিয়ে মানুষের মনে সব সময় এক ধরনের অজানা শঙ্কা কাজ করে। তাই আগামী দিনের কথা শুনতে মানুষ ভালোবাসে। একসময় ইংরেজ জাতি প্রায় সারা বিশ্ব শাসন ও নিয়ন্ত্রণ করত। এত দিনে তাদের অনেক রেখাচিহ্ন মুছে গেলেও দিন, মাস, বছর গণনায় পৃথিবীব্যাপী ইংরেজি বর্ষপঞ্জিকার কর্তৃত্ব এখনো বহাল তবিয়তে বজায় আছে। তাই বছর ঘুরে ২০১৬ পেরিয়ে ২০১৭ সালে পদার্পণের প্রারম্ভে নতুন বছরকে মহা ধুমধামে স্বাগত জানানোর সঙ্গে বিশ্বব্যাপী বিরাজমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটের কারণে মানুষের ভাবনায় আসছে সবে শুরু হওয়া বছরটি কেমন যাবে।আধুনিক যুগের চরম উৎকর্ষে বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির বিপ্লবের জোয়ার মানুষের জন্য প্রতিটি আগামী দিনই বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করলেও নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য নতুন-পুরনো চ্যালেঞ্জ ব্যক্তিমানুষ, রাষ্ট্র ও বিশ্ব সম্প্রদায়কে প্রতিনিয়তই শঙ্কায় ফেলছে। বর্তমান সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় মুখ্য বিবেচনায় আসছে একটা নিরাপদ ও স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় থাকলে মানুষের অফুরন্ত শক্তির সম্মিলিত প্রয়াস দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নেবে, সঙ্গে ঘটবে ব্যক্তিমানুষের উন্নতি। তাই প্রতিটি রাষ্ট্র পরিচালকই নিজ দেশের জন্য শান্তিময় ও নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করতে চান। কিন্তু বিশ্বায়নের যুগে একলা চলার দিন শেষ। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের যুদ্ধবিগ্রহ, সংঘাত, সংঘর্ষের প্রভাব ও প্রতিফলন ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। তাই ২০১৬ সালের বিশ্ব নিরাপত্তা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ২০১৭ কেমন যেতে পারে তার আগাম বিশ্লেষণ সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, উগ্র ইসলামিস্ট জঙ্গিবাদ কর্তৃক সৃষ্ট নিরাপত্তা সংকটের জের ধরে অন্যান্য স্বার্থসংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের পাল্টা অ্যাকশন-রিঅ্যাকশনে বিগত কয়েক বছরের মতো ২০১৬ সালেও মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়া ও ইরাকে। সিরিয়ার দুই কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে এযাবৎ তিন লাখের অধিক, কোনো কোনো সূত্র মতে পাঁচ লাখ মানুষের জীবন গেছে, যার ভেতর প্রায় এক লাখ বেসামরিক মানুষ। এর মধ্যে ১৫ হাজার শিশু ও ১২ হাজার নারী রয়েছেন। ৫০ লাখ মানুষ দেশ ত্যাগ করে শরণার্থী হতে বাধ্য হয়েছে। দেশের ভেতরে বাস্তুচ্যুত হয়েছে আরো ৬৫ লাখ মানুষ। ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরেছে আরো কয়েক হাজার। ইরাকে প্রতিনিয়তই বোমার বিস্ফোরণে শত শত নিরীহ মানুষের জীবন যাচ্ছে। মুসলমান তরুণদের জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ার অন্যতম একটি ফ্যাক্টর হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অবাধ সমর্থনে ৬৮ বছর ধরে ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েল কর্তৃক অবৈধ দখলদারি, শাসন, নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনা। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অন্যান্য বছরের মতো ২০১৬ সালেও ইসরায়েল পশ্চিম তীরে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপন অব্যাহত রাখে। নতুন বছরেও ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য কোনো ভালো খবর নেই। ২০১৭ সালেও পশ্চিম তীরে নতুন ইহুদি বসতি স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের রাশ টেনে ধরে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন। গত আট বছর প্রেসিডেন্ট ওবামার প্রশাসন নতুন বসতি স্থাপন ঠেকিয়ে রাখতে না পারলেও অন্যান্য ইস্যুতে কিছুটা হলেও একটা চেক অ্যান্ড ব্যালান্স রক্ষা করার চেষ্টা করেছে। তবে নতুন বছরের ২০ জানুয়ারি থেকে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইসরায়েলের সব অবৈধ ও অপকর্মের যে কট্টর সমর্থক হবেন তা এরই মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলের নতুন বসতি স্থাপনের বিরুদ্ধে প্রস্তাব গ্রহণে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেটো প্রয়োগের আহ্বান জানান। কিন্তু ওবামা প্রশাসন ভেটো না দিয়ে ভোট দানে বিরত থাকায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাস হয়ে যায়। আর এতেই বেজায় চটেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলেছেন, ভবিষ্যতে তিনি দেখে নেবেন এবং প্রয়োজন হলে জাতিসংঘের বর্তমান কাঠামো ভেঙে দেবেন। ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প নাম ঘোষণা করেছেন ডেভিড ফ্রাইডম্যানের, যিনি ইসরায়েলের একজন কট্টর সমর্থক। সুতরাং ২০১৭ ও তার পরবর্তী সময়ে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের পথ আরো জটিল হবে। হতে পারে ফিলিস্তিনের কট্টরপন্থী হামাস গ্রুপ পাল্টা ব্যবস্থা নিলে ২০০৮ ও ২০১২ সালের মতো আবার ইসরায়েল সর্বাত্মক সেনা অভিযান চালাবে। তাতে আগের মতো ফিলিস্তিনের নারী-শিশুসহ বেসামরিক লোকজন বেঘোরে প্রাণ হারাবে। এটাকেই পুঁজি করে আইএস-আল-কায়েদাসহ এশিয়া আফ্রিকার জঙ্গি সংগঠনগুলো বিশ্বব্যাপী মুসলমান তরুণদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করার অতিরিক্ত সুযোগ পাবে। ফলে জঙ্গিবাদের আরো বিস্তার ঘটবে। ইউরোপ ও আমেরিকার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য জঙ্গি আক্রমণের ঝুঁকি আরো বৃদ্ধি পাবে।নতুন বছরে সিরিয়া-ইরাক পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, তা এখনো সঠিকভাবে বলা না গেলেও খুব একটা সুখবর দেওয়া যাচ্ছে না। সিরিয়া-ইরাকে আইএসকে কেন্দ্র করে এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের ক্ষমতায় থাকা না থাকা নিয়ে দুই রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এই দুই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের আগত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবস্থান স্পষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন আসাদকে হটানোর নীতিতে জোর দিলে সিরিয়ায় যুদ্ধের তীব্রতা বাড়বে। বর্তমানে সিরিয়া ও ইরাকে যথাক্রমে রাশিয়া ও সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর যৌথ অভিযান ও ইরাকের সম্মিলিত বাহিনী যেভাবে আইএসকে পিছু হটাতে পারছে তা ব্যাহত হবে এবং আইএস আবার পুনর্গঠিত হওয়ার সুযোগ পাবে। আর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন যদি রাশিয়ার কৌশল মেনে আসাদকে ক্ষমতায় রেখে আইএসকে পরাজিত করতে চায়, তাহলে ২০১৭ সালের শেষ নাগাদ সিরিয়া ও ইরাক থেকে আইএস উত্খাত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সিরিয়ার মতো আইএসের নতুন ভূখণ্ডের জন্য নজর পড়বে লিবিয়ার দিকে।২০১৭ সালের মধ্যভাগে বা শেষ দিকে আইএসের শক্তি খণ্ডিত এবং আরো দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। তখন আইএসের বড় একটি অংশ আফগানিস্তানে চলে আসার সম্ভাবনা আছে। তাতে নতুন বছরে আফগানিস্তানের ভঙ্গুর নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরো নাজুক হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে। আফগানিস্তানের গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতির তেমন একটা উন্নতির সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ গৃহযুদ্ধের অন্যতম উপদল তালেবান বাহিনীকে প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্রশস্ত্রসহ সব রকমের সমর্থন ও সহযোগিতা দিচ্ছে পাকিস্তান। উদ্দেশ্য, কট্টর ইসলামিস্ট ধর্মীয় গোষ্ঠীকে শক্তিশালী অবস্থানে রাখতে পারলে আফগানিস্তানে ভারতের প্রভাব ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। আঞ্চলিক ও বিশ্বের বৃহৎ শক্তিবর্গের ভূরাজনীতির খেলায় দাবার ঘুঁটিতে পরিণত হয়েছে আফগানিস্তান, যার থেকে অদূর ভবিষ্যতে বের হওয়া হবে বড় দুরূহ ও কঠিন চ্যালেঞ্জিং কাজ। উপমহাদেশের দিকে দৃষ্টি ফেরালে দেখা যায় ভারতের অভ্যন্তরে পাকিস্তানি জঙ্গিদের নাশকতামূলক আগ্রাসী কর্মকাণ্ড এবং কাশ্মীর পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সীমান্ত ২০১৬ সালের বছরজুড়েই ছিল সংঘাতময়। সীমান্ত এলাকায় সামরিক-বেসামরিক মানুষ হতাহতের ঘটনা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। আফগানিস্তান ইস্যুতে পাকিস্তানের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত এবং কাশ্মীরের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকে ভারত স্থিতিশীল করতে না পারলে আগামী বছরগুলোয়ও ভারত-পাকিস্তান উভয়কেই নিরাপত্তা ইস্যুতে অস্বস্তিতে দিন কাটাতে হবে। তবে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা আগামী দুই-আড়াই বছরের মধ্যে অন্তত কম হলেও পাকিস্তানের মতো চরম উগ্রবাদী রাষ্ট্রের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র থাকায় ধর্মীয় উন্মাদনাবশত তার অপরিণামদর্শী ব্যবহারের আশঙ্কা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাড়া করে ফিরবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও উন্নয়নের চলতি ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে আগামী দিনেও আগের মতোই বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকবে চীন-ভারত উভয়ের সঙ্গে একই সময়ে গঠনমূলক ও কার্যকর অংশীদারির সম্পর্ক বজায় রাখা। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক চীনকে ঘিরে ফেলার নীতিতে এ অঞ্চলের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে। কারো পাতা ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। নৌবাহিনীতে চীনের তৈরি দুটি সাবমেরিনের সংযোজন সমুদ্র সম্পদের নিরাপত্তায় বাড়তি ভূমিকা রাখবে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বড় হুমকি জঙ্গিবাদ দমনে ২০১৬ সালের শেষ ছয় মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু ঘটতে পারবে না। তবে জঙ্গি শেষ হয়ে গেছে—এমন ধারণা আগামী দিনের জন্য আত্মঘাতী হবে। গত ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর আশকোনায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময় নারী জঙ্গিদের আত্মঘাতী হওয়ার মধ্য দিয়ে আভাস পাওয়া যায় ২০১৭ সালের তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। তবে জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক রাজনৈতিক পক্ষকে দেশের মানুষ ক্রমাগত প্রত্যাখ্যান করায় জঙ্গিরা আগামী দিনে বাংলাদেশে সুবিধা করতে পারবে না বলে আমরা নতুন বছরের শুরুতে প্রত্যাশা করতে পারি। সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৫০
false
ij
Art is a revolt against fate আমি অত্যন্ত দুঃখিত ইংরেজি শিরোনামটির জন্য । তারপরে বলি- শিল্প হচ্ছে ভাগ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ- অত্যন্ত গভীর তাৎপর্যপূর্ন এই কথাটি বলেছিলেন ফরাসি লেখক Andre Malraux ( ১৯০১ -১৯৭৬) এবং আন্দ্রে মারলোর সঙ্গে আমাদের-অর্থাৎ বাঙালিদের নিবিড় একটা সম্পর্ক আছে। ১৯৭১ সালে হানাদার পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন মারলো । যে কারণে মারলোর জীবনীকার লিখেছেন-Malraux's last political engagement was in support of Bangladesh in its 1971 secession from Pakistan. মারলোর সঙ্গে আমাদের নিবিড় সম্পর্কের কথা বলছিলাম এই জন্যই। এবং এই একই কারণেই স্বাধীনতাবিরোধীদের ঘৃনার করারই কথা মারলোকে। সে জন্যই কদিন ধরে ভাবছি- অনেক দূর থেকে একজন ফরাসি লেখক পাকিস্তানের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম বংলাদেশের অভ্যূদয়ের প্রয়োজনীতা উপলব্দি করতে পারলেন অথচ এদ্দেশিও ঘৃন্য দালালেরা খুব কাছে থেকেও পূর্ব পকিস্তানের বিচ্ছিন্ন হওয়ার একান্ত ইচ্ছেটি অনুভব করতে পারল না? যাক। শিল্পের তাৎপর্য বুঝতে পেরেছিলেন বলেই মারলো উপলব্দি করতে পেরেছিলেন বাংলাদেশের হৃদয়ের আকাঙ্খা। অন্যদিকে স্বাধীনতাবিরোধীরা শিল্পবিরোধী বলেই খুব কাছে থেকেও বাংলাদেশের হৃদয়ের ধ্বনিটি বুঝতে পারেনি। এখনও পারছে না। আন্দ্রে মারলো: আমাদেরই একজন। কিন্তু,শিল্প হচ্ছে ভাগ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ-এই কথার কি মানে? এই প্রশ্নে আমরা ১৯৭১ সালের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের কথা মনে করতে পারি। রনাঙ্গনে লড়ছে লড়াকু ভাইয়েরা-ভাগ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে। সে বিদ্রোহে প্রেরণা যোগাচেছ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা -কিংবা তারও আগে-বায়ান্নোয়; ভাষার দাবিতে গুলি আর বুলেটবৃষ্টির প্রতিবাদে রচিত হল গান-শহীদ মিনার ... বাঙালি বরাবরই শিল্পের মাধ্যমে ভাগ্যের বিরুদ্ধে লড়েছিল। আর, সে লড়াইয়ে অংশ নিতে চেয়েছিলেন ফরাসি লেখক আন্দ্রে মারলো। যিনি বলেছিলেন- Art is a revolt against fate! ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে ঢাকায় বাঙালি শিল্পীদের প্রতিবাদ মিছিল। সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ১:২০
false
fe
ওয়াশিংটন টাইমসের নিবন্ধ এবং গণতন্ত্র রক্ষার নামে জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা ওয়াশিংটন টাইমসের নিবন্ধ এবং গণতন্ত্র রক্ষার নামে জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাফকির ইলিয়াস============================================বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার লেখা একটি নিবন্ধ সম্প্রতি ওয়াশিংটন টাইমসে ছাপা হয়েছে। বলে নেয়া দরকার, বাংলাদেশের কোনো প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কিংবা বিরোধীদলীয় নেতার এমন কোনো লেখা এই প্রথমবারের মতো বিদেশের কোনো কাগজে ছাপা হলো। যা কী না সম্পূর্ণরূপে নিজ দেশের রাজনীতি সংশ্লিষ্ট এবং সরকারকে কুপোকাৎ করার মতলবে লিখিত। খালেদা জিয়ার এই লেখাটি নিয়ে দেশে-বিদেশে বেশ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ওয়াশিংটন টাইমসের ওয়েবসাইটে লেখাটির পেছনে শত শত মন্তব্য যুক্ত করেছেন পাঠক সমাজ। কেউ লেখার পক্ষে লিখেছেন। কেউ বিপক্ষে লিখেছেন। তা তারা লিখতেই পারেন। কারণ ওয়াশিংটন টাইমস এমন কোনো কাগজ নয়, যা বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে বা কোনো প্রভাব ফেলতে পারে। কথা হচ্ছে, বেগম জিয়া বিদেশের কাগজে কেন এমন নিবন্ধ লিখেছেন এবং এর সত্য-মিথ্যা কতোটুকু। খালেদা জিয়া যে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানেন না- তা তার লেখার শুরুতেই তিনি প্রমাণ করেছেন। খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ১৯৭১ সাল থেকেই একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, যখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রই অন্যতম একটি প্রথম সারির দেশ যে কি না আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের স্বীকৃতি দিয়েছে।’ কথাটি কি ঠিক বলেছেন খালেদা জিয়া? তিনি সত্য বলেছেন? না বলেননি। কারণ, ১৯৭১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের চরম বিরোধিতা করেছিল। যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পশ্চিমা হানাদারদেরকে প্রত্যক্ষ সাহায্য করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি দেয়া তো দূরের কথা, বাংলাদেশের মানুষ যাতে দুর্ভিক্ষে মারা যায়, তারও নগ্ন চক্রান্তে লিপ্ত ছিল। হ্যাঁ, মার্কিন মুল্লুকের বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, সাধারণ মানুষ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্যকে সমর্থন দিয়েছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন দেয়নি। তা হলে আজ বেগম জিয়া মার্কিনি প্রাক্তন নীতিনির্ধারকদের স্তুতিকীর্তন করে কাদের খুশি করতে চাইছেন? কেন তিনি ইতিহাস বিকৃতি করতে চাইছেন? এর নেপথ্য উদ্দেশ্য কী? পরোক্ষভাবে খালেদা জিয়া তার নিবন্ধে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও কংগ্রেস গত চল্লিশ বছরে বাংলাদেশের জন্য অনেক কিছু করেছে। হ্যাঁ, করেছে তো বটেই। বাংলাদেশকে ‘ইসলামিক মডারেট কান্ট্রি’ হিসেবে যেমন তকমা দিয়েছে, ঠিক তেমনি এই খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জামাত-বিএনপি চারদলীয় জোট সরকারের সময়েই হরকাতুল জিহাদ, হিজবুত তাহরীরসহ বেশকিছু জঙ্গিবাদী-মৌলবাদী গোষ্ঠীকে বিশ্বমানবতার জন্য হুমকি বলে বিবেচনায় এনেছে। এমন কিছু সংগঠনকে যুক্তরাষ্ট্র নিষিদ্ধও করেছে। এই বেগম জিয়ার প্রধানমন্ত্রিত্বের কালেই (২০০১-২০০৫) থু থু দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ভাসিয়ে দেয়ার হুঙ্কার দিয়েছে মৌলবাদী পাষ-রা। সেসব ভিডিও ফুটেজও ওয়াশিংটনে বসে দেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা। প্রশ্ন হচ্ছে- সে সময় তো বেগম জিয়াই প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এ সময়ে তার নিজের কী ভূমিকা ছিল? বিএনপি চেয়ারপারসন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে করুণা কামনা করার প্রধান কারণ হচ্ছে, তিনি বুঝতে পারছেন দেশের রাজনীতিতে তার পায়ের নিচে মাটি নেই। আর এর কারণ হচ্ছে, তার দলের, মৌলবাদ তোষণ নীতি। একাত্তরের পরাজিত ঘাতক-রাজাকারদেরকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিচ্ছেন তিনি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার প্রত্যয় রয়েছে তার। আর নিজের লেখায় তিনি যুদ্ধাপরাধীদেরকে ‘ভিন্নমতাবলম্বী’ রাজনীতিক বলে আখ্যায়িত করতেও কসুর করেননি বেগম জিয়া। খালেদা জিয়া জানেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র স্পর্শকাতর। তাই তিনি ইউনূসের বিষয়টি এনে যুক্তরাষ্ট্রের মন জয় করতে চেয়েছেন। বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের নাম উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ হাসিনাই নোবেল পুরস্কারের যোগ্য বলে মন্তব্য করেছিলেন। এটা যুক্তরাষ্ট্র ভালো করে জানে, অ্যাটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। তিনি তার প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে প্রস্তাব করতেই পারেন। রাষ্ট্রের যে কোনো নাগরিক তাদের প্রধানমন্ত্রীর জন্য নোবেল পুরস্কার প্রস্তাবনা বা দাবি করতেই পারে। এটা নোবেল কমিটির কাছে মুখ্য কোনো বিষয় নয়। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষেপিয়ে তোলার জন্য খালেদা জিয়া, ড. ইউনূসও নোবেল বিষয়টির অবতারণা করেছেন। নিবন্ধে খালেদা জিয়া শ্রমিক অধিকার কর্মী আমিনুল ইসলামের মৃত্যু বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন। আমরা জানি, তৎকালীন সেক্রেটারি অব স্টেটস হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশ সফরে গিয়েও এ বিষয়ে কথা বলেছেন। তাহলে কী বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের অজানা? না অজানা নয়। অতএব নতুন করে বলার হেতু হচ্ছে, তার নিজ ক্ষমতাসীন সময়ের দুর্নীতি, খুন, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসগুলোকে ঢেকে দেয়া। খালেদা জিয়ার নিবন্ধে অত্যন্ত ক্ষোভের বিষয়টি হচ্ছে- একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচার। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে ‘দেশীয় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ বলে উল্লেখ করেছেন। আর একাত্তরের নরঘাতকদেরকে বলেছেন- ‘শেষ হাসিনার সঙ্গে ভিন্ন মতাবলম্বী নেতা’। এভাবেই তিনি আলবদর-রাজাকারদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন সাফাই গেয়ে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠার নেপথ্য খায়েশ ব্যক্ত করেছেন। সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় হচ্ছে, বেগম জিয়া, শেখ হাসিনার সরকারকে একটি পরিবারের শাসনামল বলে আখ্যায়িত করতে চেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেছেন, এই ‘পারিবারিক দুঃশাসন’ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে। কেমন অবাক করা কথা! বাংলাদেশে ‘আই উইল মেক দ্য পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর দ্য পলিটিশিয়ানস’ এই দম্ভ নিয়ে মাঠে নামে সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান। যিনি জীবদ্দশায় কখনই নিজেকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ দাবি করেননি। তারই পত্নী বেগম খালেদা জিয়া পরবর্তী সময়ে জে. জিয়ার পথ ধরে দেশে আলবদর-রাজাকারদেরকে মন্ত্রিত্বের পতাকা প্রদান করেন। চারদলীয় জোটের শাসনামলে দেশে ২১ আগস্টের ভয়ানক গ্রেনেড হামলা করা হয়। গোটা দেশজুড়ে একযোগে বোমা হামলা করা হয়। বিএনপি-জামাত জোট বলতে থাকে দেশে কোনো জঙ্গিবাদী নেই। ‘বাংলা ভাই’, ‘শায়খ রহমান’ মিডিয়ার সৃষ্ট দানব! ইত্যাদি ইত্যাদি। সে সময়ে দেশ পরিচালিত হতে থাকে ‘হাওয়া ভবন’ নামের একটি অদৃশ্য শক্তি কর্তৃক। বেগম জিয়া এবং তার পুত্র তারেক রহমানই দেশে পারিবারিক ক্ষমতার মসনদ তৈরির স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়েন। ফলে তাদেরই রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদকে তত্ত্বাবধায়কের প্রধান করা হয়। অত্যন্ত নির্লজ্জভাবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সংবিধানের দোহাই দিয়ে দেশে পারিবারিক স্বৈরশাসন তৈরি করেন। শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টারের মতো বরেণ্য নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তৎকালীন সরকার এসব ঘটনার সুবিচারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বাংলাদেশে এখনো পারিবারিক মসনদ কায়েমে বিভোর বেগম খালেদা জিয়া। তা বিদেশের পর্যবেক্ষকরাও বলছেন। তারেক ও কোকোকে ফিরিয়ে নেয়াই মূল লক্ষ্য তা কে না জানে। এ জন্য তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে চাইছেন যে কোনো প্রকারে। রাষ্ট্রক্ষমতার জন্য জঙ্গিবাদীদের সঙ্গে আঁতাত করছেন। মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশে চলমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি যুক্তরাষ্ট্র কায়েম করে দেবে না। দিতে পারবেও না। বাংলাদেশে ২০০১-২০০৫ সালে যে নারকীয় কা-কারখানা হয়েছে, তা নিয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা ও বিদেশের কাগজে কয়েক ডজন প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখতে পারতেন। কিন্তু তিনি লিখেননি। কেন লিখেননি? কারণ, শেখ হাসিনার দেশপ্রেম এতোটাই প্রখর যে তিনি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশের মিডিয়ায় লেখার দরকার মনে করেননি। শেখ হাসিনা অবাধ বিশ্বাস ও আস্থা রেখেছেন রাষ্ট্রের মানুষের প্রতি। যা খালেদা জিয়া করতে পারেননি কিংবা পারছেন না। আর পারছেন না বলেই, ওয়াশিংটন টাইমস নামক একটি অখ্যাত দৈনিকের আশ্রয় নিয়েছেন। বলে রাখি, প্রচার সংখ্যার দিক দিয়ে ওয়াশিংটন টাইমসের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের একশত দৈনিকের তালিকায়ও নেই। ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ নামক দৈনিকটি ষষ্ঠ অবস্থানে থাকলেও ‘ওয়াশিংটন টাইমস’ একেবারেই অখ্যাত, অপঠিত একটি কাগজ। খালেদা জিয়া মার্কিন কংগ্রেস ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে অনুরোধ করেছেন যাতে ড. ইউনূসের প্রতি সম্মান অব্যাহত রাখা হয়। ইউনূস তার কর্মের জন্য আলোকিত-আলোচিত দুটোই হবেন। এ জন্য খালেদা জিয়ার দূতিয়ালি করার মতলব, শেখ হাসিনার ওপর পশ্চিমাদের মন খারাপের চেষ্টা করা। কিন্তু খালেদা জিয়া কতোটা সার্থক হতে পারবেন? বেগম জিয়া তার নিবন্ধে বাংলাদেশের প্রতি যারা বাণিজ্যবান্ধব তাদেরকে ক্ষেপানোর চেষ্টা রয়েছে। চেষ্টা রয়েছে, বর্তমান সরকারের কোনো কোনো নেতার বিদেশী ভিসা বন্ধের অনুরোধও। যা খালেদা জিয়ার হীনমন্যতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। কারণ আমরা জানি, কোনো রাষ্ট্রের নাগরিককে ভিসা দেয়া না দেয়ার সিদ্ধান্ত দূতাবাস, রাষ্ট্রদূতই নেন কিংবা নিতে পারেন। সেখানে থার্ড পার্টির সুপারিশ কিংবা নিষেধ মুখ্য কোনো বিষয় নয়। খালেদা জিয়া তার নিবন্ধে বলেছেন, ‘সরকারের যেসব লোক গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার খর্ব করছেন তাদের ওপর ভ্রমণ ও অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি অবশ্যই পশ্চিমা শক্তিগুলোকে বিবেচনা করতে হবে। তাদের উচিত এসব প্রকাশ্যে বলা এবং করা, যাতে আমাদের নাগরিকরা দেখতে ও শুনতে পায়।’ এ কেমন অরণ্যে রোদন! বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কি জানেন না, ইন্টারন্যাশনাল ভিসা অ্যাক্ট অনুযায়ী কোনো দূতাবাস কাউকে ভিসা না দেয়ার এখতিয়ার রাখে। কিন্তু ঐ নাগরিককে জনসমক্ষে হেনস্তা করার মতো কোনো কথা, বাণী, ডকুমেন্টস প্রকাশ করার কোনো ক্ষমতা রাখে না। বেগম জিয়ার বুদ্ধির দৌড় দেখলে শিউরে উঠতে হয়! বেগম জিয়া তার নিবন্ধের শেষে এসে ‘বিবেকের আদালত’-এর দোহাই দিয়েছেন। তাকে সবিনয়ে প্রশ্ন করি, তার এক সময়ের ঘনিষ্ঠ সহচর, বিএনপি নেতা আবুল হারিস চৌধুরী এখন কোথায়? কেন পালিয়ে আছেন এই দাপটশালী নেতা হারিস চৌধুরী? একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার কোন নেপথ্য রাজশক্তির হাত ছিল? খালেদা জিয়ার বিবেকবোধ কি জবাব দেবে এসব প্রশ্নের? বিএনপি নেত্রীর জানা দরকার, এখনো আন্তর্জাতিক বহু সংস্থার তালিকায় ইসলামী ছাত্রশিবির একটি জঙ্গি সংগঠন। সাউথ এশিয়া টেরোরিজম পোর্টালে তিনি নিজেই এই তথ্য দেখে নিতে পারেন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির একটি গবেষণা সংস্থা ছাত্রশিবিরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। প্রখ্যাত গবেষক জয়দ্বীপ সাইকিয়া প্রণীত ‘টেরর স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স : ইসলামিস্ট মিলিট্যান্সি ইন নর্থ ইস্ট এশিয়া’ (২০০৪) গ্রন্থে বাংলাদেশের জামাত-শিবির, হরকাতুল জিহাদ, জেএমবিসহ আরো কিছু সংগঠনের নাম আছে। বেগম জিয়া কী এদের বাঁচাবার জন্য ওকালতিতে নেমেছেন? এবার কিছু প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা বলি। ১৯৮৮-৮৯ সালে স্বৈরশাসক যখন বাংলার মানুষের বুকের ওপর চেপে বসেছিল কিংবা চারদলীয় জামাত-বিএনপি জোট যখন বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের প্রচন্ড মদত দিচ্ছিল তখন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিভিন্ন মুখপাত্রের সঙ্গে ফোনে আমার কথা হয়। বাংলাদেশের দুরবস্থা তাদের সামনে তুলে ধরলে, তাদের কথা সব সময়ই একটা ছিল- ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে সে দেশের মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে।’ আমি খুব ভালো করেই জানি যুক্তরাষ্ট্র তাদের সেই নীতি এখনো অটুট রেখেছে। খালেদা জিয়া তাই যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিমা দেশসমূহের কাছে যে করুণা ভিক্ষা করেছেন, তাতে দরকারি কাজ কিছুই উদ্ধার সম্ভব নয়। তবে হ্যাঁ, খালেদা জিয়াই দেশের প্রথম শীর্ষ রাজনীতিক যে জন এমন হীনস্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে বিদেশের কাছে নালিশপ্রার্থী হয়েছেন। দেশের বোদ্ধা জনগণ এর কী মূল্যায়ন করেন, সেটাই দেখার বিষয় এখন। ----------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা // শনিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
false
mk
সংবিধান প্রণেতার জামাই যদি হয় সংবিধানের শত্রু ডেভিড বার্গম্যান, বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের জামাই। তবে তার বড় পরিচয় হল, উনি জামাতের রক্ষক। দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত একটি কলাম হুবহু তুলে ধরেছে তার বিস্তারিত বিবরণ- কলামটি জানুয়ারি মাসে ছাপানো হয়-শিরোনাম ছিল-"ডেভিড বার্গম্যান ও জামায়াতের সহিংসতা একই সুতোয় গাঁথা"আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে ২ ডিসেম্বর, ২০১৪ আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে। ওই দিন আদালতের কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে কারাদ-ের নির্দেশ প্রদান করা হয়। এ সময় তাঁকে আদালতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। একই সঙ্গে বার্গম্যানকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদ-ের আদেশ দেয়া হয়।বিগত ৪ ডিসেম্বর, ২০১৪ লন্ডনভিত্তিক একটি সংগঠন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর দ-াদেশে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ‘পেন ইন্টারন্যাশনাল’ নামের এ সংগঠনটি মানবাধিকার ও লেখকদের সংগঠন হিসেবে পরিচিত। এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) ও ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস- এ ৩টি সংগঠনও এ রায় সম্পর্কে যৌথভাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। দি ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো পত্রিকায় ৭ ডিসেম্বর, ২০১৪ এ সম্পর্কিত খবর প্রকাশ করে। ডেইলি স্টারের শিরোনাম David Bergman Rights Watchdogs deplore conviction. (বাংলায় ডধঃপযফড়ম-এর আভিধানিক অর্থ- বাড়ি ও সম্পত্তি প্রহরায় নিযুক্ত কুকুর)। ডেভিড বার্গম্যানের দণ্ডাদেশে অধিকার রক্ষায় নিয়োজিত সংগঠনগুলোর বিলাপ। শিরোনামটি যথার্থভাবে উপাদেয়। প্রথম আলো শিরোনাম করেছে- তিন মানবাধিকার সংগঠনের বিবৃতি বার্গম্যানের দণ্ডাদেশ সমালোচনার পথ সঙ্কুচিত করেছে।সমসাময়িককালের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহতম মানবিক বিপর্যয় ঘটে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে। পাকিস্তান দখলদার বাহিনী ও তাদের দোসররা পৈশাচিক উল্লাসে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞে মেতে ওঠে। সভ্যতার ক্রমবিকাশ, দেশে দেশে আইনের শাসন এবং মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার তাগিদ বিচার বহির্ভূত অপরাধ প্রশ্রয় দেয় না। বিচারবিহীন অপরাধ একটি উন্নত কল্যাণমুখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অন্তরায়। মানুষের অধিকার, জবাবদিহিতা ও শান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে জার্মানির ন্যুরেমবার্গে যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার হচ্ছে। টোকিও ট্রায়াল সম্পর্কেও জেনেছি। সাবেক যুগোশ্লাভিয়ায়, সিয়েরা লিওনে, কঙ্গোতে ও সুদানে মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে। বিচারের বাইরে রাখা হয়নি। কম্বোডিয়া ও রুয়ান্ডায় বিচার হচ্ছে। হাইব্রিড ট্রাইব্যুনাল ও এডহক ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে। বাংলাদেশে গঠিত হয়েছে ডেমোস্টিক ট্রাইব্যুনাল। সততা নিষ্ঠায়, মেধা মেননে, নিরপেক্ষতা ও বিচারিক প্রজ্ঞায় সর্বোপরি দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিপারপতির সমন্বয়ে প্রতিটি ট্রাইব্যুনাল সমুজ্জ্বল। অক্লান্ত অম্লান হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।ডেভিড বার্গম্যান ব্রিটিশ নাগরিক। বাংলাদেশের এক বিখ্যাত আইনবিদের কন্যা-জামাতা। পেশায় সাংবাদিক। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গৌরবোজ্জ¦ল অহঙ্কার । ত্রিশ লাখ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। প্রায় চার লাখ নারীকে সম্ভ্রম হারাতে হয়েছে। লাখ লাখ ঘরবাড়ি আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে। বিশ লাখ মানুষকে দেশের ভিতরের বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে। নৃশংসতার ভয়াবহতা এতই তীব্র ছিল যে, এক কোটি মানুষ ভারতের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। স্বজন হারানোর বেদনা। হৃদয়ে রক্তজবার মতো লাল দগদগে ক্ষত। হন্তারকদের বিচারের প্রতীক্ষায় দীর্ঘ প্রহর। চার দশক পেরিয়ে যায়।International Crimes (Tribunals) Act, ১৯৭৩ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান। রক্তখেকো পিশাচদের বিচারের জন্যই তিনি এ আইনটি প্রবর্তন করেছিলেন। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ এ আইনের অধীনে ঢাকায় পুরনো হাইকোর্ট ভবনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে ২২ মার্চ, ২০১২ আরেকটি ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুরু হয় জামায়াত-বিএনপিসহ কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহলের মিথ্যাচার। দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র। বিচার প্রক্রিয়া বানচাল করার জন্য শত শত কোটি টাকার বাজেট। লবিস্ট নিয়োগ। আন্তর্জাতিক মহলের নষ্টচক্র এতে জড়িয়ে পড়ে। যেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কিছুই হয়নি। কিন্তু সত্য যে বড় কঠিন। আর বাঙালী সেই কঠিনেরে করেছে জয় ১৯৭১ সালে।মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যাতত্ত্বের উন্মাদ উদ্ভাবনা আমাদের অপরিমেয় যন্ত্রণাকে পরিহাস করেছে। আমাদের রক্তস্নাত আলোকিত অহঙ্কারকে আহত করেছে। আমাদের স্বাধীন অস্তিত্বকে বিড়ম্বিত করেছে।ডেভিড বার্গম্যানের ধৃষ্টতা ও জামায়াতী সহিংসতা একই সূত্রে গাঁথা। সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিচারের প্রক্রিয়ায় আনা হচ্ছে। ১৯৭৫ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হচ্ছে কম্বোডিয়ায়। সেদিক থেকে ১৯৭১ সাল খুব বেশি দূরের নয়। ১৯৭৩ সালের জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, আন্তর্জাতিক মিডিয়া, বিভিন্ন গোয়েন্দা প্রতিবেদন এড়িয়ে যাওয়ার কোন অবকাশ নেই। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণা এখনও অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। ত্রিশ লাখ মানুষের আত্মত্যাগ, লাখ লাখ নারীর সম্ভ্রম হারানোর চাপা কান্না, স্বদেশ থেকে বিতাড়িত এক কোটি মানুষের অনিশ্চিত মানবেতর জীবনের গগনবিদারী আর্তনাদ, নিজ বাসস্থান ছেড়ে দেশের ভেতরে শুধু জীবনটাকে নিয়ে লাখ লাখ মানুষের দিগি¦দিক ছুটে বেড়ানো ডেভিড বার্গম্যানকে বেদনাহত করতে পারেনি। তিনি একজন সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিক হিসেবে একটি সুন্দর স্বচ্ছ গ্রহণযোগ্য বিচার প্রক্রিয়ার প্রত্যাশী হতে পারেননি। কোন নীল এজেন্ডা বাস্তবায়নে একজন ডেভিড বার্গম্যানের হাতে দুরভিসন্ধির কলম থাকতে পারে না। বরদাশত করা যায় না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভাগ্যহত শহীদদের সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। ইতিহাসের অমোঘ সত্যকে বিভ্রান্তির উত্তপ্ত কড়াইয়ে নিক্ষেপ করে বিচার প্রক্রিয়ার মানদ-কে নিচে নামানোর জঘন্য অপপ্রয়াস ছাড়া আর কিছু নয়। ডেভিড বার্গম্যান তাঁর ব্যক্তিগত ব্লগে ১১ নবেম্বর, ২০১১ প্রকাশিত ‘ Sayedee indictment : 1971 deaths’ এবং ২৬ জানুয়ারি, ২০১৩ ও ২৮ জানুয়ারি, ২০১৩ প্রকাশিত যথাক্রমে ‘Ayad Judgment analysis 1: Ôin-absentiaÕ trials and defense inadequacy Ges ÔAyad Judgement analysis 2 : Tribunal assumptions’ শীর্ষক নিবন্ধ বাঙালী জাতির ঘাম, রণ্ড উৎকণ্ঠায় বহু প্রতীক্ষায় অর্জিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মর্যাদা ও নিরপেক্ষতাকে নিম্নগামী করার হীন উদ্দেশ্যপ্রসূত। এ অধিকার ডেভিড বার্গম্যানকে কেউ দেয়নি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এসব বিষয়ে মৌনব্রত পালনের কোন সুযোগ নেই। International Crimes (Tribunals) অপঃ, ১৯৭৩-এর ১১ (৪) ধারা এসব দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালকে সোচ্চার রেখেছে। রায়ের সমালোচনা আর ট্রাইব্যুনারের স্বাধীন মর্যাদাবান কর্তৃত্বকে খাটো করা এক বিষয় নয়। রায়ের সমালোচনা করতে গিয়ে কেউ বাঙালী হিসেবে আমার ললাটে আঁকা মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবতিলক বিবর্ণ করতে পারে না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এবং এর বিচারপতিবৃন্দ সত্য থেকে উদ্ভাসিত আলোর অভিযাত্রী-নির্ভীক।আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার কাছে প্রশ্ন, মানবাধিকার কার? গণহত্যাকারী, অত্যাচারী, উৎপীড়নকারী, নির্যাতনকারী, লুণ্ঠনকারী, অগ্নিসংযোগকারী, ধর্ষক- এদের মানবাধিকার, না নিপীড়িতের, অত্যাচারীতের, সর্বস্ব হারানোদের? মারণাস্ত্রধারী ঘাতকদের, না মুক্তিকামী কোটি কোটি নিরস্ত্র মানুষের? কোন্টা প্রাধান্য পাবে? ন্যায়বিচার, না অবিচার, বিচার, না বিচারহীনতা কোন্টা? এদেশ তো বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ-শোষিতের পক্ষে। ঘাতকদের পক্ষে তোমরা কিছু নামধারী আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থায় যেতে পার। আমরা যাব না।এখানে দুটি পক্ষ- একটি মানবতাবিরোধী অপরাধ যারা করেছে এবং অপরটি যারা এর নির্মম শিকার হয়েছে। শেষোক্তদের কোন মানবাধিকার থাকবে না? থাকবে না বিচার পাওয়ার কোন অধিকার? নইলে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় ইতিহাস মীমাংসিত ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের নিহতের সংখ্যা নিয়ে এমন তামাশা কেন? আমাদের যন্ত্রণাক্লিষ্ট রক্তস্নাত গৌরবোজ্জ্বল অতীত কারও ঔদ্ধত্যের কাছে ম্নান হবেÑ বিচার পাওয়ার অধিকার বিনষ্ট করার ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনী কর্তৃত্বকে নিন্দিত করার কোন উদ্যোগ বা প্রয়াস কোনভাবেই প্রশ্রয় পেতে পারে না।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে জার্মান সরকারী আধিকারিকদের অপরাধমূলক ভূমিকা নিরূপণের জন্য ভার্সাই চুক্তি করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘ এবং কতিপয় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবীর অভিপ্রায় ছিল একটি স্থায়ী ওহবৎহধঃরড়হধষ ঈৎরসরহধষ ঈড়ঁৎঃ প্রতিষ্ঠা করা। এ লক্ষ্যে ১৯৪৮ সাল থেকে ওহঃবৎহধঃরড়হধষ খধি ঈড়সসরংংরড়হ এবং জাতিসংঘ সমগ্র মানবজাতির শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করতে শুরু করে। অবশেষে ১৯৯৬ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধসমূহের সংকলন- গ্রন্থভুক্তি সম্পন্ন হয়। ১৯৯৮ সালে এটি ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঈৎরসরহধষ ঈড়ঁৎঃ (ওঈঈ)-এর বিধিবদ্ধ আইনে পরিণত হয়, যা জড়সব নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত ও প্রশংসিত। সভ্যতার এই অগ্রযাত্রাকে নির্বিঘœ করাই মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ব্রত হওয়া উচিত। লাখো কোটি নিপীড়িত মানুষের আর্তনাদ, হাহাকার ও ন্যায়বিচার পাওয়ার আকাক্সক্ষাকে অবহেলা করে লাখ লাখ মুক্তিকামী নিরীহ মানুষের রক্তে পুষ্ট মুষ্ঠিমেয় শ্বাপদদের জন্য কলম ধরা লজ্জার, পরাজয়ের ও অমার্জনীয় অপরাধের শামিল। যে সমালোচনা অপরাধের বিচারহীনতার পক্ষে, যে সমালোচনা একটি স্বচ্ছ উন্মুক্ত আইনী বিচার প্রক্রিয়াকে বিভ্রান্তির বেড়াজালে নিক্ষেপ করতে চায়, যে সমালোচনা অপরাধীদের বাঁচাতে সচেষ্ট, যে সমালোচনা ন্যায়বিচারের পথকে প্রসারিত করে না, যে সমালোচনা সহিংসতা, হত্যা, নির্যাতন, বর্বরতা ও পাশবিকতার সহযোগী তাকে তো সঙ্কুচিত করতেই হবে। তার জন্য বিলাপ করা আর যাই হোক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মানায় না।লেখক : প্রসিকিউটর, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
false
hm
ঈস্টার দ্বীপ ০৫ ঈস্টারে বনবিলোপ নিয়ে পাঁচ ধরনের সূত্র পাওয়া যায়। বেশির ভাগ পামফলের বীজের রেডিওকার্বন পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এগুলি ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের আগের, অর্থাৎ ধরে নেয়া যেতে পারে, ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের পর পাম গাছ হয় বিরল অথবা বিলুপ্ত হয়ে পড়ে। পোইকে উপদ্বীপ, ঈস্টারের যে অংশে মাটি সবচেয়ে অনুর্বর, সেখানে পামগাছ লোপ পায় ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে। সেখানে বন পুড়িয়ে ভূমি সাফ করার কারণে যেসব অঙ্গার পাওয়া গেছে, সেগুলো ১৪৪০ খ্রিষ্টাব্দের আগের সময়ের। তবে এর পরেও সেখানে মানুষের কৃষি কার্যক্রমের নমুনা দেখে বোঝা যায় যে বন পরিষ্কার করে সেখানে চাষাবাদ করা হয়েছে কিছু সময়। অরলিয়াকের অঙ্গারের রেডিওকার্বনপরীক্ষা থেকে দেখা যায়, বিভিন্ন চুলা আর ময়লার গাদায় ১৬৪০ সালের পর থেকে কাঠের পরিবর্তে ঘাস আর লতাপাতা পোড়ানো হয়েছে, এমনকি অভিজাতদের বাড়িতেও, যারা কি না কাঠের ব্যবহারের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতো বলে অনুমান করা যায়। ফ্লেনলির পরাগ পরীক্ষা থেকে দেখা যায়, ৯০০ থেকে ১৩০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে পাম, ডেইজি, তোরোমিরো আর বিভিন্ন গুল্মের পরাগের বদলে আস্তে আস্তে ঘাস আর লতাগাছের পরাগ জায়গা দখল করা শুরু করেছে। ক্রিস স্টিভেনসনের উঁচুভূমির চাষাবাদ নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, এই ক্ষেতে চাষাবাদ চালু ছিলো ১৪০০-১৬০০ খ্রিষ্টাব্দ সময়ের মধ্যে। ধারণা করা হয়, যখন মূর্তিনির্মাণের পর্যায় সবচেয়ে তীব্র ছিলো, তখনই এই ক্ষেতের প্রয়োজন পড়ে। অর্থাৎ, কাঠ আর দড়ি, তথা এদের উৎস যেসব গাছ, সেগুলি কর্তনের যখন জমজমাট অবস্থা, তখনই এ ক্ষেত চালু ছিলো। কাজেই উপসংহারে পৌঁছানো যায় যে ঈস্টারে মানুষের বসতি শুরু হবার কিছুদিনের মধ্যেই বননিধন শুরু হয়, ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ তা তুঙ্গে পৌঁছায়, আর ১৪০০ থেকে ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে কোন এক সময়ে তা পরিশেষিত হয়। ঈস্টারের বনবিলোপের উদাহরণ সম্ভবত পৃথিবীতে বনবিলোপের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রান্তিক, পুরো বন গায়েব, প্রতিটি প্রজাতির গাছ বিলুপ্ত। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছিলো ঈস্টারের মানুষদের ওপর, কাঁচামালের উৎস শেষ, বুনো খাবারের সংস্থান নেই, ফসলের ফলনও কম। কাঁচামাল শেষ হবার ফলে কাঠের অভাবে থমকে পড়ে মূর্তির পরিবহন ব্যবস্থা, আর সাগরগামী ক্যানো নির্মাণ। ১৮৩৮ সালে এক ফরাসী জাহাজের ক্যাপ্টেন ঈস্টারে নৌকা ভিড়িয়ে পাঁচটি ক্যানোতে চড়ে রসদ যোগাতে আসা কয়েকজন ঈস্টারবাসীর আচরণের বর্ণনায় বলেছিলেন, কিভাবে কাঠ দেখে তারা প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে পড়ে, বারবার "মিরু" শব্দটি উচ্চারণ করে তারা কাঠ চাইতে থাকে। পরে ক্যাপ্টেন জানতে পারেন, যে কাঠ দিয়ে ক্যানো তৈরি হয় তাকে গোটা পলিনেশিয়াতেই মিরু বলা হয়। ঈস্টারের সর্বোচ্চ পর্বতের নাম "তেরেভাকা", যার অর্থ দাঁড়ায়, "ক্যানো জোটানোর জায়গা"। এককালে এই পর্বতের ঢালেই ছিলো সেইসব বৃক্ষের অরণ্য, যা দিয়ে দ্বীপবাসী এককালে ক্যানো তৈরি করতো। আজও সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পাথরের তুরপুণ, বাটালি, ছুরি, আর অন্যান্য কাঠের কাজের যন্ত্রপাতি। কাঠের অভাবে নিশ্চয়ই জ্বালানিতে টান পড়েছিলো, বিশেষ করে ঈস্টারের শীতে বৃষ্টির রাতে, যখন তাপমাত্রা নেমে আসে ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। প্রমাণ রয়েছে যে এর পরিবর্তে ঈস্টারবাসীরা বিভিন্ন ঘাস-খড় আর আখের ছোবড়া পোড়াতো। নিঃসন্দেহে এই ডালপালার জন্যে মারাত্মক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো। ঘরবাড়ির ছাদ ছাওয়ার জন্যে, টুকিটাকি জিনিসপত্র তৈরির জন্যেও নিশ্চয়ই কাঠের অভাব হয়েছিলো। কাঠের অভাবে এককালে মৃতদেহ দাহ করার ঐতিহ্যও মুখ থুবড়ে পড়ে, লোকজন তখন মৃতদেহ মমি করা অথবা সমাধিস্থ করা শুরু করে। সাগরগামী ক্যানোর অভাবে সামুদ্রিক খাবারের ভরসা ফুরিয়ে যায়। বুনো খাবারের সংস্থানও নেই, কারণ বন বলেই আর কিছু নেই। খাবারের গাদা থেকে ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের পর উধাও হয়ে যায় ডলফিনের হাড়গোড়। সেখানে খুঁজে পাওয়া মাছের কাঁটাও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে আসে, যা পাওয়া যায় তা মূলত অগভীর সাগরের মাছ। ডাঙার পাখি পুরোপুরি বিলুপ্ত, সামুদ্রিক পাখিও মূল দ্বীপ ছেড়ে দূরে গিয়ে বাসা বাঁধে। সেইসাথে কমে ফসলের ফলন। বনবিলোপের ফলে শুরু হয় ভূমিক্ষয়, যার প্রমাণ মিলেছে ফ্লেনলির খুঁজে পাওয়া কাদার স্তরে। পোইকে উপদ্বীপে উৎখননে জানা গেছে, সেখানে পাম গাছের ফাঁকে ফাঁকে চাষাবাদ চলতো, পামের ছায়া মাটিকে রক্ষা করতো রোদ, হাওয়া আর তীব্র বৃষ্টিজনিত ক্ষয় থেকে। পাম গাছ ফুরিয়ে যাবার পর ক্ষয় হয়ে এসব মাটি ঢাল পেরিয়ে গিয়ে ঢেকে দিয়েছে নিচের অনেক ঘরবাড়ি আর আহু কিছুদিন আগেই চট্টগ্রামে এই দৃশ্য দেখেছি আমরা। পোইকে উপদ্বীপ এ কারণেই ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে পরিত্যক্ত হয়। পরে আবার সেখানে তৃণভূমি গড়ে ওঠার পর ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে সেখানে চাষাবাদ শুরু হয়, কিন্তু আবারো পরিত্যক্ত হয় আরেকদফা ভূমিক্ষয়ের পর। মাটি শুষ্কতর হয় গোটা দ্বীপেই, আর মাটির পুষ্টিও ক্ষয় হতে থাকে দ্রুত। চাষীরা আগে কম্পোস্ট তৈরি করতো বনের পাতালতাফলমূল দিয়ে, এসবের অভাবে সারের যোগান দিতেও তারা ব্যর্থ হয়। এসবের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবে ঈস্টারের জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে এক সময় ঈস্টারে দেখা দেয় নরমাংসভোজনমন্তব্য ১। ঈস্টারের বিভিন্ন খাবারের গাদায় পাওয়া গেছে মানুষের ফাটানো হাড়, যেগুলি থেকে মজ্জা বার করে নিয়ে খাওয়া হয়েছে। এমনকি ঈস্টারবাসীদের ভাষাতেও এ সংক্রান্ত প্রমাণ রয়েছে, যাদের অন্যতম জঘন্য গালিটি হচ্ছে, "তোর মায়ের মাংস আমার দাঁতের ফাঁকে আটকে আছে।" দুর্ভিক্ষের প্রমাণ মেলে ঈস্টার জুড়ে ছোট পাথরের এক ধরনের মূর্তির বিস্তার দেখে, যেগুলিকে বলা হয় মোয়াই কাভাকাভা, পাঁজরের হাড় বার করা, বসে যাওয়া গালঅলা মানুষের মূর্তি সেগুলি। ১৭৭৪ সালে এসে ক্যাপ্টেন কুকও ঈস্টারবাসীকে "ক্ষুদে, হ্যাংলা, ভীতু, হতভাগা" বলে বর্ণনা করেছেন। তীরবর্তী নিচু এলাকা, যেখানে বেশিরভাগ মানুষ বসবাস করতো, সেখানে আবাসস্থলের পরিমাণ কমে আসে ১৪০০-১৬০০ খ্রিষ্টাব্দের পরিমাণের ৩০% এ। ঈস্টারের সর্দার আর পুরোহিতরা তাদের অভিজাত অবস্থা (রীতিমতো নবাবি) ধরে রাখার জন্যে দেবতাদের সাথে বিশেষ যোগাযোগপ্রসূত পবিত্র ক্ষমতার (মানা) বড়াই করতো, জনতাকে প্রতিশ্রুতি দিতো ভালো ফসল ফলনের। নিজেদের এই দাবি টিকিয়ে রাখার জন্যে তারা বিশাল সব মূর্তিনির্মাণ, আর সে সংক্রান্ত কর্মসংস্থান আর ভোজ দিয়ে লোকজনকে তুষ্ট রাখতো। যখন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে তাদের এই দাবি টুনকো বলে প্রমাণিত হলো, তখন এক পর্যায়ে ঈস্টারের যোদ্ধাগোষ্ঠী (মাতাতোয়া) ১৬৮০ সালের দিকে এদের হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে। ঈস্টারের সমাজব্যবস্থা ধ্বসে পড়ে এক রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে। আজও সারা দ্বীপে ছড়িয়ে আছে অবসিডিয়ানের তৈরি বল্লমের ফলাগুলি। এককালে যে জায়গা সংরক্ষিত ছিলো কেষ্টুবিষ্টুদের রাজকুটির হারে পায়েঙ্গার জন্যে, সেখানে পত্তন হলো সাধারণ মানুষের বাড়িঘরের। অনেকে আশ্রয় নিলো পাহাড়ের গুহায়, যার মুখ পাথর দিয়ে সংকীর্ণভাবে তৈরি নিরাপত্তার খাতিরে। এসব গুহায় খুঁজে পাওয়া জিনিসপত্র দেখে বোঝা যায়, সাময়িক আশ্রয় নয়, দীর্ঘসময় বসবাসের জন্যেই এসব গুহা বেছে নেয়া হয়েছে। সর্দার আর পুরোহিতদের পতনের সাথে সাথে ঈস্টারের ধর্মটিরও পতন হয়। শেষ আহু আর মোয়াইয়ের নির্মাণ হয়েছিরো ১৬২০ সালে (লোকায়ত ইতিহাস), শেষ কয়েকটি মূর্তির মধ্যে একটি ছিলো পারো। উঁচুভূমির ক্ষেতগুলি ১৬০০ থেকে ১৬৮০ সালের মধ্যে একে একে পরিত্যক্ত হয়। সময়ের সাথে আকারে বাড়তে থাকা মোয়াইগুলি শুধু সর্দারদের মধ্যে প্রতিযোগিতার বৃদ্ধিকেই নির্দেশ করে না, ক্রমবর্ধমান প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে দেবতাদের প্রতি আরো আকূল আবেদনকেও বোঝায়। ১৬৮০ খ্রিষ্টাব্দের পর মোয়াই নির্মাণ বন্ধ হয়ে যায়, তখন দ্বীপের বিভিন্ন গোত্র শুরু করে এক ভিন্ন প্রতিযোগিতা, তারা একে একে মোয়াইকে টেনে নামিয়ে ভাংতে থাকেমন্তব্য ২। মোয়াইগুলিকে টেনে নামানোর সময় এক টুকরো পাথরের ওপর সেটাকে ফেলা হতো, যাতে মূর্তিটা ভেঙে কয়েক টুকরো হয়। ঠিক কতদিন ধরে কী হারে চলেছে এই মূর্তিনিধন, বলা মুশকিল। রগেভেন নেমেছিলেন শুধু একটি মূর্তির সামনে। ক্যাপ্টেন কুক ১৭৭৪ সালে চারদিন ছিলেন ঈস্টারে, তখন তিনি ভাঙা আর আস্ত, দু'ধরনের মূর্তিই দেখেছেন। দাঁড়িয়ে থাকা মূর্তির শেষ ইয়োরোপিয়ান সাক্ষ্য ১৮৩৮ সালে। ১৮৬৮ সালে ঈস্টারের একটি মূর্তিও আর দাঁড়ানো ছিলো না। দ্বীপের লোকায়ত ইতিহাস থেকে জানা যায়, পারো ছিলো শেষ মূর্তি যাকে টেনে নামানো হয় ১৮৪০ সালের দিকে। এক মহিলা তার স্বামীর সম্মানে পারোকে তৈরি করিয়েছিলেন, তার পরিবারের প্রতিপক্ষরা পারোকে টেনে নামিয়ে ধড় বরাবর দু'টুকরো করে ভাঙে। আহুগুলি থেকেও টেনে আলাদা করা হয় পাথরের স্ল্যাব, তা দিয়ে আহুর পাশেই তৈরি করা হয় ক্ষেতের বেড়া, অথবা কোন সমাধির পরিধি। ফলে যেসব আহু আবার মেরামত করা হয়নি, সেগুলিকে দেখে কিছু পাথরের স্তুপ ছাড়া আর কিছু মনে হয় না। জ্যারেড ডায়মন্ড বর্ণনা দিয়েছেন তাঁর অভিজ্ঞতার, As Jo Anne Van Tilburg, Claudio Cristino, Sonia Haoa, Barry Rolett, and I drove around Easter, saw ahu after ahu as a rubble pile with its broken statues, reflected on the enormous effort that had been devoted for centuries to constructing the ahu and to carving and transporting and erecting the moai, and then remembered that it was the islanders themselves who had destroyed their own ancestors' work, we were filled with an overwhelming sense of tragedy. যেভাবে মিশনারিরা ধর্মান্তর করার পর নষ্ট করেছেন পুরনো ধর্মের নিদর্শনকে, সেভাবেই হয়তো ক্ষমতা হাত বদলের পর ঈস্টারবাসী একে একে ধ্বংস করেছে তাদের পুরনো ধর্মের চিহ্নগুলিকে, যে ধর্ম পালন করতে গিয়ে তাদের পূর্বপুরুষ ঈস্টারের পরিবেশকে ঠেলে দিয়েছে বিপর্যয়ের মুখে। তবে ১৬৮০ খ্রিষ্টাব্দের পর যে ঈস্টারবাসীরা একেবারেই মরে পঁচে গেছে, তা নয়, তারা যতটা পেরেছে, সামলে নেয়ার চেষ্টা করেছে। ঈস্টারে মুরগিপালনের যে আকাশচুম্বি বিস্তার, তা ঘটে এসময়েই। সামরিক মাতাতোয়া গোষ্ঠী প্রবর্তন করে এক নতুন ধর্মের, সৃজনকর্তা দেবতা মাকেমাকে-কে ঘিরে গড়ে ওঠে এই নতুন ধর্ম, যার কেন্দ্র ছিলো রানো কাউ আগ্নেয়গিরিমুখের প্রান্তে ওরোঙ্গো গ্রামে। মূর্তিনির্মাণের বদলে এই নতুন ধর্মের শিল্পিত প্রকাশ ঘটে খোদিতলিপিতে (পেট্রোগ্লিফ)। বিভিন্ন পাথরে, টেনে নামানো মোয়াইয়ের গায়ে তারা খোদাই করেছে নারীর জননাঙ্গ, পক্ষীমানব আর পাখির ছবি। প্রতিবছর ওরোঙ্গো-রীতির অনুসারীরা এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করতো, ওরোঙ্গো থেকে এক মাইল দূরে ছোট দ্বীপ থেকে গভীর হাঙ্গর-অধ্যুষিত সাগর সাঁতরে পেরিয়ে সামুদ্রিক পাখির ডিম অক্ষত অবস্থায় নিয়ে ফিরতে পারতো যে, সে হতো সে বছরের পক্ষীমানব। ১৮৬৭ সালে এই প্রতিযোগিতার শেষ আয়োজনের সাক্ষী ক্যাথলিক মিশনারিরা। ১৭৭৪ সালে ক্যাপ্টেন কুকের আগমনের পর থেকেই রয়েসয়ে ঈস্টারে পা রাখতে শুরু করে ইয়োরোপীয়রা। হাওয়াই, ফিজিসহ প্রশান্ত মহাসাগরের অন্যান্য দ্বীপে যা ঘটেছিলো, ঈস্টারেও তা-ই ঘটে, ইয়োরোপের অসুখবিসুখ ছড়াতে শুরু করে দ্বীপে। ১৮৩৬ এ দেখা দেয় গুটিবসন্তের মড়ক। ১৮০৫ সাল থেকে শুরু হয় Blackbirding বা অপহৃত শ্রমিক সংগ্রহ, ১৮৬২-৬৩তে এই অপকর্ম তার চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছায়, যখন পেরুর দুই ডজন জাহাজে করে ১,৫০০ ঈস্টারবাসীকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয় (মোট জনসংখ্যার অর্ধেক) পেরুর বিভিন্ন গুয়ানো খনি আর অন্যান্য খনিতে দাস হিসেবে নিলামে বিক্রি করার জন্যে। বেশিরভাগ বন্দীই মৃত্যুবরণ করে, পরে আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে বারোজনকে ঈস্টারে ফিরিয়ে দেয় পেরু, যারা আরেকদফা গুটি বসন্ত বয়ে আনে ঈস্টারে। ১৮৬৪তে ক্যাথলিক মিশনারিরা ঈস্টারে আড্ডা গাড়ে। ১৮৭২ সালে ঈস্টার দ্বীপ, স্থানীয় ভাষায় রাপা নুই, এককালের ভূস্বর্গ, মানুষ আর পাখির সুখী আবাসস্থল, পরিণত হয় একশো এগারো জন রুগ্ন ঈস্টারবাসীর বাস করার নিঃস্ব, রিক্ত, ন্যাড়া একটি ভূখন্ডে। পরবর্তী পর্বে যোগ করবো ঈস্টারকে নিয়ে কিছু বিতর্ক, সমান্তরাল তত্ত্ব, সাম্প্রতিক গবেষণা ও প্রস্তাব, আমার নিজের তুচ্ছাতিতুচ্ছ পর্যবেক্ষণ, আর আমার তৈরি একটি গাণিতিক মডেলের আলোকে সামান্য কপচানো। মন্তব্য ১ এ নিয়ে জ্যারেড ডায়মন্ডের সাথে অন্য বিজ্ঞানীদের রীতিমতো মতসংঘর্ষ রয়েছে। ডায়মন্ড যখন নরমাংসভোজনের কথা বলেন, অনেকের সে বর্ণনা শুনে মনে হতে পাড়ে, এ ব্যাপারে তাঁর ফেটিশ রয়েছে, তবে ভিন্ন প্রসঙ্গে তিনি একবার ব্যাখ্যা করেছেন, নরমাংসভোজনের ব্যাপারে আমাদের সংস্কারের প্রেক্ষিতে কিভাবে আমরা ব্যাপারটিকে কোন একটি জনগোষ্ঠীর প্রতি অভিযোগের মতো করে দেখি। ডায়মন্ড প্রায় ৩৪ বছর পাপুয়া নিউগিনির বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন অভিযানে অংশগ্রহণ করেছেন, যেখানে মৃত ব্যক্তির আত্মীয়রা যত্ন করে মৃতদেহটিকে খেয়ে ফেলে। ডায়মন্ড এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন, পাপুয়া নিউগিনির বেশির ভাগ অঞ্চলেই লোকজন অধিক শর্করা এবং কম প্রোটিন গ্রহণ করে। ঐ অঞ্চলে উচ্চপ্রোটিনের উৎসও কম। ফলে নরমাংস তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি প্রোটিনের উৎস কেবল। পৃথিবীর অন্যান্য জায়গাতেও যেখানে নরমাংসভোজন একটি প্রচলিত চর্চা, সেখানে উচ্চপ্রোটিনের অভাব রয়েছে। - মন্তব্য ২ "দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান", মনে পড়ে? আমরাও দেখেছি, লেনিন, চসেস্কু, সাদ্দাম হোসেন। আরো দেখবো।
false
hm
মুড়িমঙ্গল দৌড়ের ওপর থাকি, কিন্তু পোস্টাতে ইচ্ছে করে। আজ কাজ করতে করতে খুব মুড়ি খেতে ইচ্ছে করছিলো, মনে পড়ে গেলো সুদূর অতীতে মুড়ি নিয়ে কিছু লিখেছিলাম। সচলের পাঠকদের জন্যে তাই আবারও নতুন মোড়কে পুরান মাল। গুস্তাখি মাফ করবেন। চ্যানেল আইতে মুড়ি নিয়ে একটা প্রোগ্রাম দেখছিলাম। সেটা দেখেই এনথু পেলাম। ভাবলাম, ক্ষতি কী, লিখি। মুড়ি আমার প্রিয় খাদ্য। ঝাল চানাচুর, আচারের তেল, ছোলা-আলু, পেঁয়াজকুচি, মটরশুঁটি, মাঝে মাঝে ভুনা গরুর মাংসের কুচি আর ইত্যাদি মিশিয়ে মাখিয়ে খেতে খেতে বই পড়ি। মুড়ির সঙ্গীসাথী সময়ের সাথে পাল্টায়, কিন্তু জীবনে চলার পথে মুড়ি আমার সাথী। হে মুড়ি, তোমাকে ভালোবাসি। তবে মুড়ি ভাজতে দেখিনি কখনো। দরকারও পড়েনি। ভাজা হয়েই মুড়ি বাজারে আসে, সেখান থেকে কিনে আনা হয়। আমাকে মেখেও দেয়া হয়। মুড়ির সাথে আমার সম্পর্ক ভোজনে। দিনকাল খারাপ গেলে নিজেকে মেখে খেতে হয় (যেমন গভীর রাতে), তখন মুড়ির গায়ে আমার আগ্রহী হাত পড়ে। মুড়ি মাইন্ড করে না। ভালোবেসেই তো গায়ে হাত দেই। সঙ্গম করে মুড়ি খাও, এমন একটা ঝাড়ি আছে। আমাকে কেউ ঐ ঝাড়ি দিলে হেসে ফেলবো। বলবো, আচ্ছা। বলা লাগবে? ও তো এমনিতেই খাবো। তো, এমনই প্রেমঘন সম্পর্ক মুড়ির সাথে আমার, ঠিক যেন খাদ্যখাদক নয়, যেন এক অব্যক্ত প্রেমও ঐ মশলার সাথে মাখা হয়ে যায়। মুড়ি, তোমার নেই জুড়ি। আজকে টিভিতে দেখি বাজারে কিছু খানকিরপোলা-টাইপ মুড়ি উৎপাদক ইউরিয়া মিশিয়ে মুড়ি ভেজে মার্কেটে ছাড়ছে। সাথে হাইড্রোজ। উদ্দেশ্য ঠিক সাধু বলা চলে না। ইউরিয়া আর হাইড্রোজ মিশিয়ে ভাজলে নাকি মুড়ি একটু ফুলকো হয়, একটু সাদাটে হয়, তবে ঝাঁঝরা হয়ে যায় একেবারে। আমি এই ইউরিয়ামিশ্রণের গল্প যে আগে শুনিনি তা নয়। গা করিনি। মেশাক। নাহয় একটু পেট খারাপ করবে। তাতে কী। কত কিছু হজম করে ফেলি। বাঙালি পেট। গানপাউডার দিয়ে ভাজলেও কাবু করতে পারবে না। কিন্তু ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জনৈক শিক্ষক আমাকে ভড়কে দিলেন। তিনি বললেন, ইউরিয়া তো ক্ষার। পেটে ঢুকে সে আগে পেপটিক এসিডে জরোজরো পরিবেশটার বারোটা বাজায়, তারপর আবার খাবারের সাথে মিশে রক্তে ঢোকে, ওখান থেকে মগজে, হৃদয়ে ...। নানা জায়গায়। আমি সাথে সাথেই বুঝে ফেলি, কেন আমার এই হৃদয়ঘটিত জ্বালা। কেন এই মাগজিক অধঃপতন। সেই মুড়িমাখা বিষ আমার শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। লোহার বাসরে ফুটো গলে সাপ ঢুকে পড়েছে একেবারে। বলতে না বলতেই আবার শ্রদ্ধেয় শাইখ সিরাজ সরজমিন সারমাখা মুড়ির সারমর্ম তুলে ধরেন। সসার মুড়ি আর অসার মুড়ির গুণগত তফাৎ ততক্ষণে বুঝে গেছি, রূপগত তফাৎও তিনি দেখিয়ে দেন। ইউরিয়াওয়ালি মুড়ি (স্ত্রীলিঙ্গেই বলি), আগেই বলেছি, ফ্যাকাসে, ফ্লাফি, কিন্তু ফাঁপা। আর ইউরিয়ার মেকাপবঞ্চিতা দেশি মুড়ি একটু বাদামী, কিন্তু তন্বী আর সলিড। আমি তৎক্ষণাৎ অন্দরমহলে এত্তেলা পাঠাই, মুড়ির নমুনা দেখতে। হাতে নিয়ে দেখি, উঁহু, এগুলো সেই ফোঁপরা মাল। ইউরিয়া, হাইড্রোজে গিজগিজ অবস্থা। এরপর দেখি শাইখ সিরাজ আলাপ করছেন জনৈক সুশীল মুড়ি উৎপাদকের সাথে। উনার উৎপাদিত মুড়িও সুশীলা। ইউরিয়া বা হাইড্রোজ তিনি মেশান না। কেন মুড়িতে ইউরিয়া মেশানো হয়, জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ৫০ কেজি চাল থেকে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে ৪৪ কেজি মুড়ি হয়। এই ৬ কেজি "লস" পুষিয়ে নিতেই অনেকে ঐ কাজ করে, মুড়িতে ইউরিয়া মেশায়। রাগে আমার শরীর জ্বলতে থাকে, ৬ কেজি মুড়ি একটি একটি করে ঐ ইউরিয়াবাজদের অপ্রশস্ত কোন দ্বার দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দেবার একটা অন্যায় বাসনা জ্বলে ওঠে মনের বারুদে। কেমন যেন নিঃস্ব, রিক্ত বোধ করি, ঠকে যাই একেবারে। এ যেন সোফিয়া লরেনের ছদ্মবেশে কন্ডোলিদজা রাইসের সাথে উদ্দাম শারীরিক প্রেমের অপঅভিজ্ঞতা। আমার বেচারা পাকস্থলীর ওপর মায়া হয়। মগজে আর হৃদয়ে হাত বুলাই। রক্ত তো শরীরের আরো আরো অঙ্গপ্রত্যঙ্গে গিয়ে বিশেষ বিশেষ সার্ভিস দেয়, ভয় হয় ওইসব ডিপার্টমেন্টেও কোন দীর্ঘমেয়াদী বদআছর পড়ে কি না। সব টুলস জরুরি ভিত্তিতে ঘন ঘন প্রিভেনটিভ মেইনটেন্যান্স করে দেখতে হবে, এমন ভাবতে ভাবতে দেখি শাইখ সিরাজও পরীক্ষা করছেন মুড়ি নিয়ে। একেবারে বাজার থেকে মুড়ি সংগ্রহ করে তিনি পাঠিয়েছেন বিএসটিআইতে। কিন্তু সেখানে মুড়িতে ইউরিয়া বা হাইড্রোজ পরীক্ষার কোন স্বীকৃত পদ্ধতি নেই, সংশ্লিষ্ট কর্তা সিরাজ সাহেবকে প্রতিশ্রুতি দেন যে শীঘ্রই তিনি অমন একটা টেস্টিং মেথড খাড়া করে টেস্ট শুরু করবেন। ওদিকে সুশীলা মুড়ির দাম চড়া, কেজি ৬০ টাকা। দুশ্চরিত্রা মুড়ির কেজি ২৮ টাকা। তার ওপর আবার ফ্যাকাসে, ফুলকো, লোকের কাছে কদরও বেশি। বাঙালি দেখলাম মোটা, ফর্সা জিনিস ভালোবাসে। বাদামী, তন্বী ... এমন ভূমধ্যসাগরীয় চেহারা মার খেয়ে যায় এই বদ্বীপে। যতোসব বদলোকের আখড়া। তবে কি মুক্তি নেই এই অপমুড়ির হাত থেকে? তখনই দেখি চ্যানেল আইতে এক প্রিয় মুখ, ভ্যাজালকারীর যম, বাসি খাবারবিক্রেতার দুশমন, বাংলার রবিনহুড ম্যাজিস্ট্রেট রোকনোদ্দৌলা। এবার ভরসা পাই। রোকনোদ্দৌলা কঠিন চীজ, একবার উঠেপড়ে লাগলে তিনিই রাজপুত্র রোকনকুমার হয়ে বাংলার দুর্গতা মুড়িকে আবার ছিনিয়ে আনবেন দৈত্যদানোর হাত থেকে। জয় মুড়ি, জয় রোকনকুমার।
false
rg
চলে গেলেন একে-৪৭ রাইফেল উদ্ভাবক মিখাইল টিমফিয়েভিচ কালাশনিকভ!!! 'জার্মানদের জন্যই আমার একে-৪৭ ডিজাইন করতে হয়েছিল। তা না হলে আমি কৃষি কাজে প্রয়োজনীয় এমন যন্ত্র বানাতাম।' উক্তিটি করেছিলেন মিখাইল টিমফিয়েভিচ কালাশনিকভ। যিনি আজ ৯৪ বছরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও রাশিয়ার একে-৪৭ অস্ত্রের বিশ্ব বিখ্যাত নির্মাতা ও ডিজাইনার হলেন এই মিখাইল টিমফিয়েভিচ কালাশনিকভ। ১৯৩৮ সালে তিনি সোভিয়েত সেনাবাহিনিতে একজন ট্যাঙ্ক ড্রাইভার হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৪১ সালের অক্টোবরের Battle of Bryansk যুদ্ধে তিনি আহত হন । তখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তিনি সহযোদ্ধাদের কাছে জানতে পারেন যে, জার্মানদের অস্ত্রগুলো বেশিমাত্রায় উন্নত হওয়ার কারণে রাশিয়ান সৈন্যরা বেশি হতাহত হচ্ছে। এছাড়া তিনি পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন যে, জার্মানদের ব্যবহার করা Stg. 44 রাইফেলটি অন্যসব প্রচলিত রাইফেলের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকরী।তখনকার Mausar ও Mosin Nagant বোল্ট অ্যাকশান রাইফেল দিয়ে দুরের লক্ষ্যভেদ করা গেলও সেগুলি ছিল অনেকটা ধীরগতির। এটা নিয়ে গবেষণা করেই তিনি একটি গতিসম্পন্ন সাবমেশিনগানের তখন নকশা করেন। যদিও তার করা সেই সাবমেশিনগানের নকশা সোভিয়েত বাহিনীতে গৃহীত হয়নি, কিন্তু অস্ত্র নিয়ে তার ওই দক্ষতা সোভিয়েত সেনাবাহিনীতে বেশ আলোড়ন তোলে। তাই ১৯৪২ সালে তাকে Central Scientific-developmental Firing Range for Rifle Firearms of the Chief Artillery Directorate of the Red Army (RKKA) তে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৪৪ সালে তিনি ৭.৬২x৩৯ মিমি বুলেট দ্বারা পরিচালিত একটি রাইফেলের নকশা করেন। আর সেটি তিনি ১৯৪৬ সালে অনুষ্ঠিত রাইফেল প্রতিযোগিতায় জমা দেন। তার সেই Mikhtim নকশা রাইফেল প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়। ১৯৪৭ সালে তিনি Mikhtim নকশার উপর ভিত্তি করেই নতুন এক রাইফেলের নকশা করেন। যা পরে বহুল জনপ্রিয় একে-৪৭ নামে পরিচিতি পায়। পরে তিনি বলেছিলেন যে, রাশিয়ান সাহিত্য ও বাইবেল থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই এই অতি সাধারন ও সহজ রাইফেলের নকশা তিনি করতে পেরেছিলেন।রাশিয়ায় তাকেই প্রথম ব্যক্তি হিসেবে রাশিয়ার বীর আর একসাথে দু'বার সমাজতান্ত্রিক শ্রম বীর উপাধি দেওয়া হয়। লাদেনের হাতে একে -৪৭ দেখার পর তিনি বলেছিলেন, 'যখন বিন লাদেনের হাতে একে-৪৭ দেখি তখন আমি চিন্তিত হয়ে পড়ি। কিন্তু আমার কি দোষ? সন্ত্রাসীরা তো আর বোকা নয়, তারাও সবচেয়ে ভাল অস্ত্র ব্যবহার করে। একে-৪৭ নিয়ে তিনি অনেক সময় আক্ষেপও করেছেন। তিনি বলতেন, 'আমি আমার উদ্ভাবন নিয়ে গর্ববোধ করলেও মাঝে মাঝে এটা আমাকে খুব কষ্ট দেয়, যখন দেখি সন্ত্রাসীরাও এটি ব্যবহার করছে। মানুষের কাজে বেশি লাগে এমন কোনো যন্ত্র, যেমন ঘাস কাটার মেশিন উদ্ভাবন করলে হয়তো সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হতাম।' এছাড়া তিনি দাবী করেছিলেন যে, 'আমার উদ্ভাবন এখন অনেক দেশে স্বাধীনতা আনতে কাজে লাগে।'১৯১৯ সালের ১০ নভেম্বর মিখাইল টিমফিয়েভিচ কালাশনিকভ রাশিয়ার কুরিনস্কি জেলার কুরিয়ায় জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম টিমফি আলেক্সান্দ্রোভিচ কালাশনিকভ আর মায়ের নাম আলেকজান্দ্রা ফ্রোলভনা কালাশনিকোভা, ডাক নাম কাভেরিনা। টিমফি ও কাভেরিনার ১৯ সন্তান। যার মধ্যে ৯ জন শিশু অবস্থায় মারা যায়। বাকি ৮ জন বড় রক্ষা পায়। মিখাইল টিমফিয়েভিচ কালাশনিকভ হল মা-বাবার ১৭তম সন্তান। মিখাইল টিমফিয়েভিচ কালাশনিকভ যাকে বিয়ে করেন তার নাম একাতেরিনা ভিকটোরভনা মোইসেভা। তিনিও ছিলেন একজন প্রকৌশলী। আর স্বামীর টেকনিক্যাল ড্রয়িংগুলো তিনিই এঁকে দিতেন। তাদের চার সন্তান। নেলী, এলেনা ও নাতালিয়া হল তিন মেয়ে। আর একমাত্র ছেলে হল ভিক্টর। মিখাইল টিমফিয়েভিচ কালাশনিকভের মা-বাবা ছিলেন ভীষণ গরিব। টানাপোড়নের সংসার চালাতে না পেরে ১৯৩০ সালে তাদের পরিবার সার্বিয়া চলে যায়। সেখানে গিয়ে তার বাবা কৃষি খামার গড়ে তোলেন। মিখাইল টিমফিয়েভিচ কালাশনিকভ ভর্তি হয় স্কুলে। অন্যান্য ভাইবোনদের মত মিখাইল টিমফিয়েভিচ কালাশনিকভও ছিল দারুণ রোগা সোকা। মাত্র ৬ বছর বয়সে সে প্রায় মরতে বসেছিল। তখন থেকেই তার ঝিমধরা স্বভাব। রোগা শরীর নিয়ে খেলাধুলা করতে না পেরে ধীরে ধীরে সে হাতের কাছে যেসব যন্ত্রপাতি পেতো, তা নিয়েই গবেষণায় মত্ত হত। এভাবে ধীরে ধীরে সে যন্ত্রপাতি'র উপর আগ্রহী হয়ে ওঠে।এছাড়া মিখাইল টিমফিয়েভিচ কালাশনিকভ ছোটবেলা থেকেই কবিতা লিখতেন। তার মোট ছয়টি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে অবসর জীবনেও তিনি প্রচুর কবিতা লিখেছেন। সার্বিয়ায় যাবার পর কৃষিখামারের মধ্যে বড় হবার সময় মিখাইল টিমফিয়েভিচ কালাশনিকভ তার বাবার রাইফেল নিয়ে মাঝে মাঝে বন্ধুদের সঙ্গে শিকার করতে যেতেন। তার সেই শিকার করার নেশা ৯০ বছর বয়স পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ওই সময় তার বাবা মারা গেলে মা আবার বিয়ে করেন। এরপর তার স্টেপ বাবা'র অনুমতি নিয়েই মিখাইল টিমফিয়েভিচ কালাশনিকভ ক্লাস সেভেন গ্রেডের ছাত্র থাকাকালীন সার্বিয়া থেকে আবার রাশিয়ার কুরিয়াতে নিজগ্রামে ফেরত আসেন। ওই সময় একটি ট্রাকটর স্টেশানে তিনি মেকানিক হিসেবে চাকরি নেন। সেউ সুবাদে মিখাইল টিমফিয়েভিচ কালাশনিকভ মেকানিক কাজের পাশাপাশি অস্ত্র বানানোর নেশায় ডুবে যান। ১৯৩৮ সালে তাকে বাধ্যতামূলক রাশিয়ান রেড আর্মিতে প্রশিক্ষণ গ্রহন করতে হয়। মিখাইল টিমফিয়েভিচ কালাশনিকভ লম্বায় একটু বেটে হওয়ায় আর মেকানিক্সে একটু পারদর্শী হওয়ায় তাকে ট্যাংক মেকানিকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে তিনি ট্যাংক কমান্ডারও হয়েছিলেন। মিখাইল টিমফিয়েভিচ কালাশনিকভ প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বর্তমান রাশিয়ার অসংখ্য সামরিক ও বেসামরিক পুরস্কারে ভূষিত হন। যার মধ্যে তিনবার তিনি অর্ডার অব লেনিন, অর্ডার অব অক্টোবর বিপ্লব, অর্ডার অব রেড স্টার, লেনিন প্রাইজ, স্ট্যালিন প্রাইজ, সহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন। আজ ২৩ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে কালশনিকভ অ্যাসল্ট রাইফেলের (একে-৪৭) উদ্ভাবক মিখাইল কালাশনিকভ ৯৪ বছর বয়সে মারা গেছেন বলে রুশ টেলিভিশনে জানানো হয়। গত নভেম্বরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। মিস্টার কালাশনিকভ যে অটোমেটিক রাইফেল ডিজাইন করেছিলেন তা বিশ্বের সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত একটি আগ্নেয়াস্ত্র। স্নায়ু যুদ্ধের সময় বিশ্বের দেশে দেশে একে-৪৭ বিপ্লবের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। অ্যাঙ্গোলা থেকে ভিয়েতনাম, আলজিরিয়া থেকে ফিলিস্তিন বহু দেশের বিপ্লবীদের প্রিয় অস্ত্র ছিল একে-৪৭। কালাশনিকভ রাইফেলের ডিজাইন খুব সরল হওয়ায় এটি তৈরি করতে খরচও পড়ে খুব কম আর এটি রক্ষণাবেক্ষণ করাও খুব সহজ। রাইফেলটি আবিস্কারের জন্য মিস্টার কালাশনিকভ তৎকালীয় সোভিয়েত ইউনিয়নে রাষ্ট্রীয় সন্মান পান। যদিও এ থেকে তিনি আর্থিকভাবে খুব বেশি লাভবান হননি।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধক্ষেত্রে আহত হওয়ার পর মিখাইল কালাশনিকভ ১৯৪৭ সালে এই অটোমেটিক রাইফেলটির ডিজাইন করেন। তিনি এটির নাম দেন আভটোমেট কালাশনিকোভা। পরে এটি অবশ্য সংক্ষেপে একে-৪৭ নামেই বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পায়।
false
hm
নেভারেস্ট: পর্ব ১ মুসা ইব্রাহীমের এভারেস্ট জয়ের সংবাদটি আমি শোনার পর বিশ্বাস করেছিলাম। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। যদিও জানতাম না, তিনি আদৌ এ বছর এভারেস্ট বরাবর রওনা হয়েছেন কি না। জানতাম না তার গাইড কে ছিলো, জানতাম না তিনি কোন অভিযাত্রীদলের সাথে গিয়েছেন, এভারেস্টের কোন দিক থেকেই বা তিনি চড়লেন, এই বিপুল ব্যয় কে নির্বাহ করলো, কীভাবে সংবাদটি পেয়ে এভারেস্ট থেকে বহু নিচে বসে কেউ একজন ব্লগে ব্লগে ছড়িয়ে দিলেন। কোনো কিছু না জেনেই আমি তথ্যটি চেয়ারে বসে গ্রহণ করে নিয়েছিলাম। পরবর্তীতে যখন এ নিয়ে সন্দেহের প্রথম ঢেউটি অডিয়েন্সের ওপর আছড়ে পড়লো, তখন জমে থাকা অনেকগুলো প্রশ্ন পাওনাদারের মতো এসে কড়া নাড়লো আমার চৈতন্যের দরজায়। আমার বিশ্লেষণ তাই নিজেকে দিয়েই শুরু। কেন আমি বিশ্বাস করলাম তথ্যটা? অন্যভাবে বলতে গেলে, কেন আমরা কোনো কিছু বিশ্বাস করি? "বিশ্বাস" নিয়ে একটু চিন্তা করে, এর তিনটি মৌল উপাদানকে ছক কেটে আলাদা করলাম, যেগুলোর ওপর ভিত্তি করে "বিশ্বাস" গড়ে ওঠে। নিচের ডায়াগ্রামে দেখুন। এই তিনটি যদি একটা ভারসাম্যে এসে পৌঁছায়, বিশ্বাস গড়ে উঠবে এবং টিকে থাকবে। কোনো কারণে যদি বক্তা আর বক্তব্যের মাঝে ভারসাম্যে একটু বিঘ্ন ঘটে, কিংবা বক্তা আর অডিয়েন্সের মাঝে সংযোগে সমস্যা দেখা দেয়, অথবা অডিয়েন্স আর বক্তব্যের মাঝের যোগসূত্রে ফাটল ধরে, বিশ্বাস টলে যেতে পারে, এমনকি ধ্বসেও যেতে পারে। প্রতিদিনের ঘটনাগুলোর কথা খবরের কাগজে, বা ব্লগে পড়ি, টিভিতে দেখি, এবং নিজেরা একটি সিদ্ধান্তে আসি। এখানে "বিশ্বাস" এর প্রসঙ্গ আসে। আমরা একজন বক্তাকে পাই, তার একটি বক্তব্যকে পাই, আর নিজেরা অডিয়েন্সের চেয়ারে বসে সেই বক্তব্যকে বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করি। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন করি? আমি নিজেকে প্রশ্ন করে যে উত্তর পেলাম, সেটি হচ্ছে, মুসার বক্তব্যটি [অর্থাৎ তিনি এভারেস্ট শীর্ষ জয় করেছেন] একটি আদর্শ অডিয়েন্স খুঁজে পেয়েছে। স্থানকালপাত্রের একটি চমৎকার মেলবন্ধনের কারণেই এই বক্তব্য বহু লোকে বিশ্বাস করেছেন, কোনো প্রশ্ন না করে, কোনো প্রমাণ দেখতে না চেয়ে। কেন এমন চাওয়া, এ নিয়ে দ্বিতীয় পর্বে কথা হবে। এ পর্বে আমি বক্তা আর বক্তব্যের মধ্যে যোগসূত্রটি নিয়ে কথা বলবো। মুসা ইব্রাহীমের জায়গায় আজ যদি আমি এসে বলতাম, আমি এভারেস্ট জয় করে এসেছি, আপনারা আমাকে পাত্তা দিতেন না। কারণ, মুসা ইব্রাহীম এই এভারেস্ট জয়ের পথে হাঁটছেন বেশ কিছুদিন ধরে, আমি হাঁটছি না। খবরের কাগজের কল্যাণে মুসা ইব্রাহীম নামটি পরিচিত, এবং সুদীর্ঘ সময় ধরে তিনি এভারেস্ট শব্দটি উচ্চারণ করে করে মিডিয়াতে "মুসা ইব্রাহীম" আর "এভারেস্ট"কে এক পঙক্তিতে বসিয়ে ক্রমশ তাঁর বক্তব্যের গ্রহণযোগ্যতা নির্মাণ করেছেন। ঈস্টার দ্বীপে বেশ কিছু দানবাকৃতির মূর্তি রয়েছে, যা মানুষের বিস্ময় জাগিয়ে আসছে অনেক বছর ধরে, কিন্তু যা মানুষের মনোযোগ এড়িয়ে গেছে, তা হচ্ছে, ঐ মূর্তিগুলো [মোয়াই] বিপুল পরিমাণ নুড়ি দিয়ে তৈরি প্ল্যাটফর্মের [আহু] ওপর বসানো। ওরকম এক একটি আহু নির্মাণও বিপুল শ্রমসাধ্য কাজ, যদিও তা মানুষের বিস্ময় অর্জন করতে সমর্থ হয়নি। মুসার এভারেস্ট জয়কে যদি মোয়াই হিসেবে ধরে নিই আমরা, তাহলে এই জয়ের সংবাদটির গ্রহণযোগ্যতা নির্মাণের জন্যে পাঁচ ছয় বছর ধরে তাঁর অধ্যবসায়কে আহুনির্মাণের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। মুসা ইব্রাহীমের এই অতীত মিডিয়াভুক্তি নিয়ে একটু খোঁজ করতে গিয়ে যা জানলাম, সেটিও আমার মনে সন্দেহের সরু ফাটলটাকে প্রশস্ত করা শুরু করলো। অতীতে মুসা যতগুলো পর্বতশীর্ষ জয় করার দাবি জানিয়েছেন, তার কোনটির সাথেই উপযুক্ত কোনো প্রমাণের উল্লেখ মিডিয়াতে আসেনি। একটিরও নয়। এ ব্যাপারে কথা শুরুর আগে চলুন মীর শামছুল আলম বাবুর বয়ানে আমরা বাংলাদেশে পর্বতারোহণের প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ সম্পর্কে কিছু শুনি [১]। বাবুর ভাষ্যের সাথে আরো কিছু সূত্র যোগ করে আমরা একটি কালপঞ্জি পাই, অনেকটা এমনঃ ১৯৬৯ সালে জামালপুরের ধ্রুব জ্যোতি ঘোষ, ১৯৭৯ সালে প্রবাসী ইন্তেসার হায়দার ও ১৯৯৬ সালে চট্টগ্রামের সুমন সম্পদ বণিক বিচ্ছিন্নভাবে এভারেস্ট অভিযাত্রায় শরিক হয়েছিলেন। মুনতাসীর মামুন ও রিফাত হাসানের এভারেস্ট বেইসক্যাম্প ট্রেক [১৭ হাজার ৬০০ ফুট উঁচুতে] নিয়ে জনকণ্ঠে ২৫ জুলাই, ২০০৩ সালে একটি ফিচার ছাপা হয়, এবং এ খবর দেখে ইনাম আল হক এভারেস্ট অভিযাত্রী দল গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৩ এ ইনাম-আল-হকের বাসায় বাংলাদেশ এভারেস্ট টিম গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় এবং ২০ সেপ্টেম্বর, ২০০৩ এ জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে মুসা ইব্রাহীম, রিফাত হাসান, মুনতাসির মামুন ইমরান, সজল খালেদ, সিরাজুল হক সাগর, এনাম তালুকদার, মশহুরুল আমিন মিলন ও সাদিয়া সুলতানা সম্পাকে নিয়ে 'বাংলাদেশ এভারেস্ট টিম-১'-এর ঘোষণা দেন ইনাম-আল-হক। এই অভিযাত্রী দলের পক্ষ থেকে ৯ অক্টোবর, ২০০৩ এ পর্বতারোহণে প্রশিক্ষণ নিতে ভারতের উত্তর কাশির নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিংয়ে যান ইমরান। মাউন্টেন ডিউয়ের আর্থিক সহায়তা ২০০৪ সালের ২ মার্চ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত মুসা ইব্রাহীম, সিরাজুল হক সাগর, সাদিয়া সুলতানা সম্পা ও মীর শামছুল আলম বাবু দার্জিলিঙের হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে 'বেসিক মাউন্টেনিয়ারিং' কোর্সটি সফলভাবে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। ২০০৪ এর মে মাসে এভারেস্ট বেইস ক্যাম্প ট্রেকিঙে ইনাম আল হকের নেতৃত্বে অংশ নেন মুসা ইব্রাহীম, এম এ মুহিত, কাজী শামসুজ্জামান, গোলাম কুদ্দুস চৌধুরী ও সাদিয়া সুলতানা সম্পা। ২০০৫ সালে নেপালের মেরা শীর্ষ [২১,৮৩০ ফুট উঁচু] জয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন মুসা ইব্রাহীম ও সজল খালেদ [২]। ২০০৬ সালের ২২ মে দুপুর ৩:৩০ এ সিকিমের ফ্রে শীর্ষ [১৯,১২৫ ফুট উঁচু] জয় করার দাবি করেন মুসা ইব্রাহীম ও সজল খালেদ [২]। ২০০৭ সালের মে মাসে বিএমটিসির সদস্য মুসা ইব্রাহীম, সজল খালেদ, এম এ মুহিত ও নূর মোহাম্মদ চুলু ওয়েস্ট (২১,০৫৯ ফুট) পর্বত অভিযান করে ব্যর্থ হয়, কিন্তু সফলতার দাবি নিয়ে সৃষ্ট ঝামেলায় [৩] অনেক সদস্য ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে নিজ নিজ দল গঠন করেন। মুনতাসির মামুন ইমরান গড়েন 'কেওক্রাডং বাংলাদেশ', মীর শামছুল আলম বাবু গড়েন 'টিম এক্সট্রিম' আর মুসা ইব্রাহীম গড়েন 'নর্থ আলপাইন ক্লাব, বাংলাদেশ'। নর্থ আলপাইন ক্লাবের কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে, এরপর লাউয়াছড়ার বনজঙ্গলে সারভাইভাল প্রশিক্ষণ, সাইকেল ড়্যালি, সীতাকুণ্ড পাহাড়ে রক ক্লাইম্বিং ও ট্রেকিংয়ের ধারাবাহিকতায় ২০০৮ এর ডিসেম্বর ১ এ নেপালের লাংসিসা রি (২১,০৮১ ফুট) শীর্ষ জয় করার দাবি করে [৪]। অভিযাত্রীরা ছিলেন মুসা ইব্রাহীম, মীর শামছুল আলম বাবু, তৌহিদ হোসেন, আফরিন খান ও রিমন খান। নর্থ আলপাইন ক্লাবের মুসা ইব্রাহীম, তৌহিদ হোসেন ও নেপালী নাগরিক সারিন প্রকাশ প্রধান ২০০৯-এর মে মাসে অন্নপূর্ণা-৪ (২৪,৬৮২ ফুট) শীর্ষ জয় করার দাবি করেন [৫]। একটি মিল খুব লক্ষণীয়, পর্বতারোহণ অভিযানে যাওয়ার আগে এবং অভিযানের পর দেশে ফিরে এসে ক্লাবের পক্ষ থেকে প্রত্যেকবারই প্রেস কনফারেন্স করা হয়। সেখানে পর্বত শীর্ষজয়ের "দাবি" করা হয়। পত্রিকাতে যেসব ছবি এই দাবির সপক্ষে ছাপা হয়, সেগুলো প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই একরকম, ওভারএক্সপোজড ব্যাকড্রপের সামনে পর্বতারোহী দাঁড়িয়ে বা বসে, তাঁর হাতে দেশের পতাকা, পরনে পর্বতারোহণের উপযোগী পোশাক, চোখে স্নো গগলস, মুখে হাসি। পর্বতশীর্ষে পর্বতারোহী দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁর পেছনে সেই পর্বতমালার কোনো অংশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, এমন কোনো ছবি এসব সংবাদে আসেনি। ঐ ছবিগুলো শীর্ষে তোলা, নাকি পাহাড়ের ঢালে যে কোনো এক জায়গায়, দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই। আবহাওয়া, শারীরিক ক্লান্তি, ব্যাটারিক্ষয়, ইত্যাদি নানা কারণ দেখানো সম্ভব, কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, মূল কারণটি অন্য জায়গায়। পর্বতারোহীরা জানেন, বাংলাদেশে পর্বতারোহণ সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখে এমন লোকজন কম, অতএব তাঁরা যা বলে চালিয়ে দেবেন, সেটিই চলবে। বক্তা আর অডিয়েন্সের যোগসূত্রটি নিয়ে পরের কোনো এক পর্বে আলোচনা করবো, তাই আপাতত এ প্রসঙ্গে এখানেই থামি। মেরা পীক ছাড়া আর কখনও ব্যর্থতা স্বীকার করেননি মুসা ইব্রাহীম। যখন যে অভিযানে গিয়েছেন, সেই শীর্ষটিই জয়ের পর বগলে করে নিয়ে এসেছেন। উপর্যুপরি। যদিও অডিয়েন্সের কাছে কোনো প্রমাণ আসেনি, এসেছে শুধু পত্রিকার সংবাদ, সেটিও প্রেস কনফারেন্সের। উপলব্ধি করলাম, আমরা অডিয়েন্স হিসেবে প্রমাণ চেয়েও অভ্যস্ত নই। আমরা পত্রিকায় একের পর এক পড়ে গিয়েছি। কর্নেল জন হান্টের নেতৃত্বে যে অভিযানে হিলারি ও তেনজিং এভারেস্ট জয় করেছিলেন, সেটির পৃষ্ঠপোষক ছিলো রয়্যাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি, কর্নেল হান্ট কয়েক ফর্মার বিশাল এক রিপোর্ট তাদের কাছে জমা দিয়েছিলেন [৬]। বিভিন্ন স্পনসর আমাদের দেশে পর্বতারোহণের এসব অভিযানের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন, তাদের কাছে আমাদের পর্বতারোহীরা কোনো লিখিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন কি না, আমার জানা নেই [আদৌ এ চর্চা আছে কি না কে জানে], দিলেও সেটি আমার আওতার বাইরেই রয়ে গিয়েছে। তাই পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধ ছাড়া এসব কথিত শীর্ষজয় অভিযানে কখন কী ঘটেছিলো, তা আমাদের জানার উপায় নেই। মেরা শীর্ষ অভিযানের কোনো বর্ণনা নেটে নেই, ফ্রে পীকে যা আছে তা অপ্রতুল। মুসা ইব্রাহীম নিজে সজল খালেদ ও এম এ মুহিতের চুলু ওয়েস্ট জয়ের দাবিটি খণ্ডন করায় আমরা এ সম্পর্কে বিশদ জানতে পেরেছি, নইলে সেটিও হয়তো প্রেস কনফারেন্সে বিবৃতি আর কয়েকটি অস্পষ্ট ছবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো। লাংসিসা রি নিয়েও কিছু বলা হয়নি পত্রিকায়। তবে অন্নপূর্ণা-৪ শীর্ষজয় নিয়ে মুসা খানিকটা বিশদে লিখেছেন। তাঁর নিজের কলম থেকে পাওয়া তথ্যের অসঙ্গতি ধরিয়ে দিয়েই আজ এ পর্ব শেষ করবো। পর্বতারোহণ সম্পর্কে আমার ধারণা খুব বিশদ নয়। এ কারণে আমি অন্য পর্বতারোহীদের শরণাপন্ন হয়েছি। ডেইলি স্টারে ১৮ জুন, ২০০৯ তারিখে প্রকাশিত মুসার নিবন্ধটিতেই যেমন বাংলাদেশের পর্বতারোহীদের মধ্যে পুরনোদের একজন, মুনতাসির মামুন, মন্তব্য করে মুসার নিবন্ধের কিছু তথ্যগত অসঙ্গতি ধরিয়ে দিয়েছেন, যা একজন সামিটিয়ারের লেখায় আসার কথা নয়। আর নিজে যা জানি না, তা জানার জন্যে গুগলের শরণাপন্ন হয়ে বোকা বনে গিয়েছি এই অসঙ্গতিগুলোর কথা উপলব্ধি করে। আসুন দেখি এক এক করে। মুসার ভাষ্যের [৫] সাথে আরো কিছু সূত্র যোগ করে আমরা যা পাই, অভিযাত্রী দলে ছিলেন মুসা ইব্রাহীম, তৌহিদ হোসেন ও সারিন প্রকাশ প্রধান [ইনি নেপালী হলেও নর্থ আলপাইন ক্লাবের সদস্য]। তাঁদের শেরপা সর্দার ছিলেন সোম বাহাদুর তামাং, কৈলাস তামাং [এরা দু'জন এভারেস্ট অভিযানেও মুসার সাথে ছিলেন] ও গণেশ মাগার। হাই অলটিচ্যুড কুক ছিলেন তাসি তামাং আর কুলি সর্দার ছিলেন দাওয়া তামাং। উল্লেখ্য, মুসা এখানে কৈলাস তামাংকে দুইবার এভারেস্ট বিজয়ী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। কৈলাস তামাং নামে একজন নেপালের এভারেস্ট শীর্ষজয়ীদের সংগঠনে তালিকাভুক্ত আছেন বটে, তবে একবার, মে ১৫, ২০০৭ এ তিনি নর্থকোল-নর্থইস্টার্ন রিজ দিয়ে এভারেস্টে উঠেছিলেন। সূত্রটি আমি পরবর্তী পর্বে প্রকাশ করবো। ২০০৯ এর মে ২৯ এই অভিযাত্রী দলের সাপোর্ট টিমের ২২জন ভারবাহী ও তিন শেরপা অন্নপূর্ণা-৪ এর উদ্দেশ্যে কাঠমাণ্ডু থেকে যাত্রা শুরু করে। অন্নপূর্ণা ম্যাসিফের বেশ কয়েকটি শীর্ষ রয়েছে, অন্নপূর্ণা-৪ এর উচ্চতা ৭.৫২৫ মিটার বা ২৪, ৬৮৮ ফিট। অন্নপূর্ণা-৪ বেইসক্যাম্পটি ১৫,০৯১ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত, তাঁরা জুনের ৩ তারিখেই সেখানে গিয়ে পৌঁছেন। সাধারণত এই এক্সপিডিশনের বাণিজ্যিক অফারগুলোয় কাঠমাণ্ডু থেকে বেইস ক্যাম্প পর্যন্ত পৌঁছাতে ১০ দিন সময় রাখা হয়, যার মাঝে কাঠমাণ্ডু থেকে বেশিশহর বলে একটি জায়গায় গাড়ি দিয়ে যাওয়া হয়। মুসার বক্তব্য অনুযায়ী ৬ দিনের মাথায়ই কুলি ও শেরপা গাইড বেইস ক্যাম্পে পৌঁছে যান। বেশ, মেনে নিলাম। আলপাইন ক্লাবের তিন সদস্য বেইস ক্যাম্পে পৌঁছান জুনের ৮ তারিখে, কোনো শেরপা গাইড ছাড়াই। তাঁরা এই ট্রেইলে যাত্রা শুরু করেন জুনের ৪ তারিখে [৭], সিয়াংজে, জগত [১৩২৯ মিটার], তাল [১৭০২ মিটার], ধারাপানি [১৯৬৯ মিটার] ও দানেকিউ [২২০৮ মিটার] হয়ে তাঁরা চামে [২৬৯০ মিটার]-তে এসে পৌঁছান। তাঁরা বৃষ্টি এবং হিম বাতাসের ভেতর ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার ভেতর দিয়ে এই ট্রেইলে হাঁটেন। যেহেতু রিপোর্টটি জুনের ৯ তারিখে প্রকাশিত, কাজেই ধরে নেয়া যায়, মুসা চামে থেকে কমপক্ষে ৮ তারিখে ফোনে বা ইমেইলে পত্রিকার সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। সিয়াংজে-জগত-তাল-ধারাপানি-দানেকিউ-চামে ট্রেইলটিতে জুন ৪ এ শুরু করলে জুন ৮ এর আগে হেঁটে পৌঁছানো সম্ভবও নয় [বাণিজ্যিক অফারে এই পথটুকু আট দিনে পার করা হয়]। কেন সম্ভব নয়, তা ম্যাপে দেখুন। ম্যাপ ১. ম্যাপ ২. ম্যাপে বামে নিচে সিয়াংজে, তাঁবুগুলো যথাক্রমে জগত-তাল-ধারাপানি-দানেকিউ-চামে, পর্বতারোহীর প্রতীকটি অন্নপূর্ণা-৪ এর চূড়া নির্দেশ করছে। স্থানগুলোর মধ্যে একমাত্র সিয়াংজে গুগল ম্যাপে খুঁজলে পাওয়া যায়, বাকি জায়গাগুলো অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ ধরে খুঁজে বের করতে হয়। সবক'টির জিপিএস ডেটা গুগল করে খুঁজে বের করে ম্যাপে যোগ করা হয়েছে [৮]। বামে নিচে স্কেল দেয়া আছে। মুসা ইব্রাহীম লিখেছেন, নর্থ আলপাইন ক্লাবের তিন পর্বতারোহী জুনের ৮ তারিখে বেইস ক্যাম্পে পৌঁছান। মুনতাসির মামুন ডেইলি স্টারের সংশ্লিষ্ট খবরটিতে অনলাইনে মন্তব্য করেছিলেন, কীভাবে এটি সম্ভব? চামে থেকে অন্নপূর্ণা-৪ বেইস ক্যাম্পে পৌঁছুতে হলে সাধারণত আরো তিনটি দিন লাগে। প্রশ্নটি আমারও। আমি খোঁজ করে দেখেছি, প্রায় প্রতিটি বাণিজ্যিক অফারে চামে থেকে পিসাং, পিসাং থেকে হংদে, হংদে থেকে অন্নপূর্ণা-৪ এর বেইসক্যাম্প যেতে হয়। সময় লাগে তিনদিন। নর্থ আলপাইন ক্লাবের পর্বতারোহীরা সিয়াংজে থেকে জুনের ৪ তারিখে শুরু করে অ্যা-কে-বা-রে অন্নপূর্ণা বেইস ক্যাম্প চলে গেলেন ৮ তারিখেই? কাজটা সম্ভব যদি হেলিকপ্টারে চড়ে তারা গিয়ে থাকেন, কিন্তু সেটি যে তারা করেননি, বরং সিয়াংজে-জগত-তাল-ধারাপানি-দানেকিউ-চামে হয়েই গিয়েছেন, সেটি তো মুসা নিজেই লিখেছেন। বেইস ক্যাম্পের উচ্চতা সাগরসমতল থেকে ১৫,০৯১ ফিট = ৪,৫৯৯ মিটার। ২,৬৯০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত চামে থেকে ঝাড়া দুই হাজার মিটার উঠে গেলেন তাঁরা এক বেলার মধ্যে? অ্যাক্লিমাটাইজেশনের দরকার পড়লো না? ভূতাত্ত্বিক সচল দ্রোহীকে অনুরোধ করেছিলাম অন্নপূর্ণা উপত্যকার একটি দ্বিমাত্রিক ও একটি ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি করে দিতে, নিজের বহু ব্যস্ততার মাঝে সময় করে তিনি মানচিত্র দু'টি রেণ্ডার করে দিয়েছেন। ম্যাপ ৩. ম্যাপ ৪. মুসার বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য কি? এরই মধ্যে শেরপারা জুনের ৬ তারিখে ১৭,৭১৬ ফিট উচ্চতায় ক্যাম্প ১ এবং জুনের ৮ তারিখে ২১,৮১৭ ফিট উচ্চতায় ক্যাম্প ২ স্থাপন করে ফেলেন। অন্নপূর্ণা-৪ এ আবহাওয়া মোটামুটি ভালো থাকলে দিনে এক হাজার ফুট উচ্চতা পাড়ি দেন পর্বতারোহীরা [৯]। আর পোর্টার-শেরপারা দুইদিনের ভেতরে চার হাজার একশো এক ফিট উঠে গেলেন? আচ্ছা, মেনে নিলাম। জুনের ৯ তারিখ অভিযাত্রীরা বিশ্রাম নেন। অর্থাৎ, জুনের ১০ তারিখ তাঁরা আবার শুরু করেন। জুনের ১১ তারিখ অভিযাত্রীরা ক্যাম্প ১ এ পৌঁছান। আমার ছোট্ট প্রশ্ন, জুনের ১০ তারিখ রাতটা তাঁরা কোথায় কাটিয়েছিলেন? নাকি জুনের ১১ তারিখেই তাঁরা বেইসক্যাম্প থেকে ২,৬২৫ ফুট খাড়াই পাড়ি দিয়ে ক্যাম্প ১ এ পৌঁছান? অভিযাত্রীরা তার পরদিনই ক্যাম্প ২-এ পৌঁছান অর্থাৎ, যে শেরপারা এই ৪,১০১ ফিট খাড়াই পাড়ি দিয়েছিলেন দুইদিনে, আমাদের অভিযাত্রীদলের মুসা ইব্রাহীম, সারিন প্রকাশ প্রধান আর তৌহিদ হোসেন তা অতিক্রম করেন এক দিনেই। অ্যাক্লিমাটাইজেশনের ধারও ধারেন না তাঁরা। কীসের ভয় সাহসী মন লাল ফৌজের, লাফিয়ে হই পার। জুনের ১৪ তারিখ রাত ২:৩০ মিনিটে শুরু হয় তাঁদের অন্নপূর্ণা-৬ সামিট পুশ। পথে ৬ ফুট প্রশস্ত একটি গিরিফাটল পড়ে, শেরপারা একটি নতুন রুট খুঁজে বের করেন, অভিযাত্রীরা ঘন্টা দুই সেই ৬০ ডিগ্রি কোণে খাড়া পাহাড়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন। বেলা ১১:৫৪ তে তাঁরা অন্নপূর্ণা-৪ শীর্ষে পা রাখেন ও বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান। এখানে স্পষ্ট নয়, ২১,৮১৭ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত ক্যাম্প-২ থেকেই তাঁরা সামিট পুশ শুরু করেন কি না। আর কোনো ক্যাম্পের বর্ণনা যেহেতু মুসারা দেননি, তাই আমরা ধরে নিতে পারি তাঁরা ১৩ জুন বিশ্রাম নিয়েছেন, ১৪ জুন ৭ ঘন্টা ২৪ মিনিটের মাথায় ২,৮৭১ ফিট উচ্চতা অতিক্রম করেছেন, মুসার ভাষায়, braving snowfall with strong wind । মনে প্রশ্ন জাগতে বাধ্য, অন্নপূর্ণা-৪ শীর্ষজয় এতো সহজ কি না। যে ভিডিওটির লিঙ্ক দিয়েছি [৯], সেখান থেকে স্পষ্ট যে ভিডিওর অভিজ্ঞ মার্কিন পর্বতারোহীরা দিনে সাত-আটশো ফুটের বেশি পার হননি, থেমে থেমে শক্তি সঞ্চয় করে, বিশ্রাম নিয়ে এগিয়েছেন। বাণিজ্যিক অফারগুলোতে অন্নপূর্ণা-৪ চড়ে নেমে আসার জন্যে সময় রাখা হয় আঠারো দিন। আরো খোঁজ করে জানতে পেরেছি এক সুইস-অস্ট্রিয়ান অভিযাত্রী দলের কথা, যারা বেইস ক্যাম্প থেকে যাত্রা শুরুর পনেরো দিন পর অন্নপূর্ণা-৪ এর ৪০০ মিটার নিচ থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হন [১০]। এখানে অনেক ছবি আছে, আপনারা তাদের অভিযানকালীন আবহাওয়া সম্পর্কেও ধারণা পাবেন। জুন মাসে হিমালয়ে প্রগাঢ় মনসুন ঝাপটা মারে। বৃষ্টি আর তুষারপাত এ সময় প্রবল। মুসাদের অভিযান হয়েছে এই তুষারপাত ঠেলে। মুসা যে গতির কথা দাবি করছেন, তুষারপাতের সময় কি পর্বতারোহণে সে গতি অর্জন করা আদৌ সম্ভব? অন্নপূর্ণা-৪ শীর্ষে একটি অভিযানের ভিডিওচিত্র দেখুন। এখানে অভিযাত্রীদের আরোহণের গতিটি দেখুন। ২১,০৮১ ফিট উচ্চতায় অক্সিজেনের পরিমাণ সাগরসমতলে অক্সিজেনের পরিমাণের ৪৫% [উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাতাসের চাপ হ্রাস পায়, ফলে বাতাসের ঘনত্ব কমে যায়, সেই সাথে কমে যায় অক্সিজেনের ঘনত্বও ]। অক্সিজেনের পরিমাণ কিছুটা আপেক্ষিক, এটি নির্ণয় করার জন্যে যে উচ্চতায় মানুষ অভ্যস্ত, সেটি প্রয়োজন হয়। অক্সিজেনের পরিমাণ হিসাব করার জন্যে একটি ক্যালকুলেটর [১১] এবং আবহাওয়ার তথ্য [১২] দিলাম, আপনারা নিজেরাও হিসাব করে দেখতে পারেন। মুসারা জানিয়েছেন, তাঁরা অতিরিক্ত অক্সিজেন ব্যবহার করেননি[৫]। ভিডিওতে দেখবেন, অভিযাত্রীরা কুড়ি হাজার ফিট পর্যন্ত অক্সিজেন ছাড়া উঠেই হাঁপিয়ে গিয়েছেন। এর আগে লাংসিসা রি অভিযানে, মাত্র ৭ মাস আগে, ২১,০৮১ ফিট উঁচু লাংসিসা রি শীর্ষে পৌঁছতে মুসা ও তাঁর দলের লেগেছিলো ২৪ দিন[৪]। লাংসিসা রি আরোহণ খুব দুঃসাধ্যও নয়। আর মাত্র ৭ মাস পর তাঁরা এমন দুর্দান্ত গতিবেগ অর্জন করলেন যে ট্রেইলে পা রাখার ১১ দিনের মাথায় ২৪,৬৮৮ ফিট উচ্চতার অন্নপূর্ণা-৪ এ পৌঁছে গেলেন? বেইসক্যাম্প থেকে যাত্রা শুরুর পঞ্চম দিনের মাথায়? অক্সিজেন ছাড়াই? আবার অন্নপূর্ণা-৪ শীর্ষ থেকে নেমে তিনদিনের মাথায় চামে পৌঁছে জুনের সতেরো তারিখের মধ্যে রিপোর্ট পাঠালেন ডেইলি স্টারে, যে কারণে এটি আঠারো তারিখে ছাপা হওয়া সম্ভব হলো [৫]? যুক্তি আসতে পারেনোট ১., এ কি একেবারেই অসম্ভব? এটি PROBABLE না হোক, POSSIBLE তো হতে পারে? মুসা ইব্রাহীম কিন্তু নিজেই বর্ণনা করেছেন [১৪], কোন অলটিচ্যুড তার ওপর কেমন প্রভাব ফেলে। মুসা বলেছেন [১৪], “The climb was along the Rongbuk glaciers,” remembers Ibrahim. At 6,450 meters, Ibrahim's headache got worse. Out of the six nights that the team was there at the advanced base camp, the first few nights were the most excruciating. “I could not sleep,” he says. “My headache was getting worse, I did not have the urge to eat and my body was getting weaker. I was getting anxious since I would not be able to climb with so little strength. I had to stay strong and focused.” A shift of focus or the slightest slip could easily result in death, while climbing the Everest, says Ibrahim. স্মর্তব্য, ৬,৪৫০ মিটার = ২১,১৬১ ফিট। আমরা আরো জানতে পারি [১৪], While he was moving towards the North Col, his Sherpas were busy setting up camp 1 at North Col, situated at 7,100 metres. ... Ibrahim was not very happy with his performance so far. “I felt that I was getting slower and everyone else was moving faster than I was. I was also losing a lot of energy, which was not safe for climbing further.” The Sherpas shared his feelings and asked him to move back to the base camp. “I was disappointed, but the Sherpas were right,” says Ibrahim. “I made my way towards the base camp for some more rest, nutrition and of course, oxygen.” আবারও স্মর্তব্য, ৭,১০০ মিটার = ২৩,২৯৪ ফিট। এভারেস্টে ওঠার সময় যিনি ২১,১৬১ ফুট গিয়ে শারীরিক সমস্যার মুখোমুখি হন, ২৩,২৯৪ ফিটে না পৌঁছেই যিনি উপলব্ধি করেন, তিনি প্রচুর শক্তিক্ষয় করছেন এবং আর এগোনো নিরাপদ হচ্ছে না, এবং বিশ্রাম, পুষ্টি আর অক্সিজেনের জন্যে যিনি ফিরে আসছেন বেইস ক্যাম্পে, তিনিই অন্নপূর্ণায় গিয়ে উচ্চতার সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর পরোয়া না করে দিনে তিন হাজার ফিট করে উচ্চতা পাড়ি দিলেন এক একবারে? . . . দুঃখিত, বিশ্বাসযোগ্য নয়। এবার আসি ছবির প্রশ্নে। পত্রিকায় কী ধরনের ছবি পর্বতশীর্ষে তোলা হয়েছে উল্লেখ করে ছাপা হয়, তার দু'টি উদাহরণ দিচ্ছি। ছবি ১ [৫]. এই ছবিতে যে জিনিসটি অস্বাভাবিক বলে মনে হয়েছে, সেটি একটি লাল তীরচিহ্ন দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছি। এ কথা পরিষ্কার যে ছবিটি তোলা হয়েছে একটি পাহাড়ের ঢালে, বরফের ওপরে। এই ঢালটি ২৪,৬৮৮ ফিটের ধারেকাছে না হয়ে ষোল হাজার বা সতেরো হাজার ফিটের ওপরেও হতে পারে। পর্বতশীর্ষজয়ের প্রমাণ হিসেবে ব্যাকগ্রাউণ্ডে অন্যান্য ভৌগোলিক ফিচারগুলোকে রাখা জরুরি। ছবি ২ [১৩]. একই কথা খাটে এই ছবিটির ক্ষেত্রেও। বরফের ওপর ঘোলা ব্যাকড্রপের সামনে দাঁড়িয়ে মুসা ইব্রাহীম [বামে] আর তৌহিদ হোসেন। আমরা ঠিক কী দেখে বুঝবো যে এটি একটি পর্বতশীর্ষের ওপর তোলা ছবি? অন্নপূর্ণায় আঠারো হাজার ফিটের পর থেকে সমস্তটাই বরফ, তার কোথায় দাঁড়িয়ে এ ছবি তোলা, তা কী করে বোঝা যাবে? এই ছবিটি কি প্রমাণ হিসেবেই দর্শকের কাছে উপস্থাপন করা হচ্ছে না? এই "প্রমাণ" কি যথেষ্ট? যথেষ্ট নয়। যারা প্রবল সন্দেহবাতিকগ্রস্ত, তাঁরা হয়তো আমার দেয়া লিঙ্কের ক্লার্ক-বাটসনদের ভিডিওর মতো ভিডিও আশা করবেন নর্থ আলপাইন ক্লাব বাংলাদেশের অন্নপূর্ণা-৪ অভিযাত্রী দল, ২০০৯ এর কাছ থেকে। আনিসুল হক ও মুসা ইব্রাহীম এক কথোপকথনে জানিয়েছেন, অন্নপূর্ণা অভিযানের সময় নাকি স্টিল ক্যামেরা আর ভিডিও ক্যামেরা, দু'টোরই ব্যাটারি ফুরিয়ে যায়। য়্যাকদম জায়গামতো আর সময়মতো। সখেদে তখন স্মরণ করতে হয় ২২জন পোর্টারের কথা। ওনারা কি আরো কয়েকটা লিথিয়াম ব্যাটারির ভারবহনে অরাজি হতেন? নোট ১. মন্তব্যে উঠে আসা যুক্তি-প্রতিযুক্তি থেকে পরবর্তীতে সংযোজিত। তথ্যসূত্রঃ [১] বাংলাদেশের এভারেস্ট যাত্রা : যেভাবে শুরু, মীর শামছুল আলম বাবু, কালের কণ্ঠ, ৩০ মে, ২০১০ [২] First Bangladeshi mountaineers on Frey peak, They do us proud: City Correspondent, ডেইলি স্টার, জুন ২৮, ২০০৬। [৩] নর্থ আলপাইন ক্লাবের পত্রিকা অভিযাত্রীতে মুসা ইব্রাহীম চুল্লু ওয়েস্ট নিয়ে "বিএমটিসি চুলু ওয়েস্ট জয় করেনি" শীর্ষক একটি নিবন্ধ লেখেন, যা মুনতাসীর মামুন তার ব্লগে তুলে রাখেন। [৪] Langsisa Ri conquerors now eye Annapurna IV peak: Staff Correspondent, ডেইলি স্টার, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০০৯ [৫] Bangladeshis conquer Mt Annapurna IV: Musa Ibrahim, from Chame, Nepal, ডেইলি স্টার, জুন ১৮, ২০০৯ [৬] কর্নেল হান্টের রিপোর্ট [কেউ অনুবাদ করতে চাইলে স্বাগতম] [৭] Trekking through Annapurna Himalayan range, Bangladeshi mountaineers on way to Annapurna IV peak: Musa Ibrahim, from Chame (2670m), Nepal, ডেইলি স্টার, জুন ৯, ২০০৯ [৮] জিপিএস ডেটা, নেপাল [৯] অন্নপূর্ণা-৪ শীর্ষে অভিযাত্রী একটি দলের ভিডিওলগ। এঁরা শেষ পর্যন্ত খারাপ আবহাওয়া দেখে ফিরে আসেন। মুসার মত এঁরাও পথে একটি গিরিফাটল দেখেছিলেন, সেখান থেকেই পরদিন ফিরে আসেন তাঁরা। [১০] পাঁচ সুইস ও এক অস্ট্রিয়ানের অন্নপূর্ণা অভিযানের কাহিনী [১১] বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ [সাগরসমতলের তুলনায়] নির্ণায়ক [১২] বিভিন্ন উচ্চতার বিপরীতে বাতাসের চাপের তথ্য [১৩] অন্নপূর্ণার স্মৃতি - তৌহিদ হোসেন, প্রথম আলো, মে ২৮, ২০১০ [১৪] The Everest Chronicles: Elita Karim, ডেইলি স্টার, জুন ১৮, ২০১০ . . . নেভারেস্ট: পর্ব ০ . . . পরবর্তী পর্বে থাকছে, মুসার এভারেস্ট জয়ের পক্ষে সাক্ষীদের বক্তব্য বিশ্লেষণ, প্রথম ভাগ।
false
rn
ইংরেজি সাহিত্যে যে ১০০ টি বই আপনাকে পড়তেই হবে (পাঁচ) ৪১। 'প্লেগ' ও 'আউটসাইডার' লেখক- আলব্যের ক্যামু। মানুষের জীবনকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল আলবেয়ার কাম‍্যুর।জীবনের সূক্ষ্ম অনুভতিগুলোকে কলমের নিপুন আঁচড়ে দারুনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। "দি প্লেগ" গ্রন্থটি তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা বললেও অত‍্যুক্তি হবেনা।প্রাচীনকালে প্লেগ ছিল এক আতঙ্কের নাম।বহু সমৃদ্ধ জনপদ এই মহামারীর আক্রমনে উজাড় হয়ে যেত।তেমনি একটি শহরকে নিয়েই উপন‍্যাসের কাহিনী গড়ে উঠেছে। মূলত ইঁদুরের মাধ‍্যমে এই রোগ বিস্তার করে।আক্রান্ত ব‍্যক্তি খুব দ্রুত মৃত‍্যুমুখে পতিত হয়।প্লেগের বিস্তার রোধের জন‍্য শহরটির বাইরে যাওয়া বা বাইরে থেকে ভিতরে প্রবেশ করা পুরোপুরি বন্ধকরে দেওয়া হয়। এই চরম পরিস্থিতিতে পতিত একদল মানুষের বেঁচে থাকার তীব্র সংগ্রাম কাহিনীই হল দি প্লেগ।তারা স্বপ্ন দেখে যে একদিন আবার সব আগের মত ঠিক হয়ে যাবে।তারা মিলিত হতে পারবে শহরের বাইরে অবস্থানকারী তাদের পরিজনদের সাথে। সংকটের মুহূর্তে জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করে কিছু মানুষ কিভাবে আর্তমানবতার সেবায় ঝাপিয় পড়ে তা লেখক অত‍্যন্ত দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন। বহু শ্রম আর ত‍্যাগের পর শহরটিকে প্লেগমুক্ত হিসেবে ঘোষনা করা হয়;তুলে নেওয়া হয় শহরে প্রবেশ ও শহর ত‍্যাগের ওপর বিদ‍্যমান নিষেধাজ্ঞা।মানুষ আবার তাদের প্রিয়জনের সাথে মিলিত হওয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু ততদিনে অনেক মানুষ প্লেগের করাল গ্রাসে পতিত হয়ে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছে। কোনো রোগ মহামারীর আকার ধারন করলে মানুষ যে কতটা অসহায় হয়ে পড়ে তার এক প্রাঞ্জল বিবরণ হল দি প্লেগ।মৃত‍্যু আর মানবতার এরূপ মিলবন্ধন বিশ্বসাহিত‍্যে খুব কমই আছে। “মা মারা গেছেন আজ। হয়তো গতকাল, আমি ঠিক জানি না।” এভাবেই শুরু হয় ‘দি আউটসাইডার’ উপন্যাসটি। প্রধান চরিত্রের দেওয়া প্রথম উক্তিটি বিভিন্নভাবে অগণিতবার ব্যবহৃত হয়ে বিখ্যাত হয়ে আছে সাহিত্য সমাজে। মরসোঁ আলজেরিয়ার এক অতি সাধারণ যুবক, যে ছিলো সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিকভাবে একা ও অচেনা। মায়ের মৃত্যুর পর যথাযথ আবেগ দেখাতে পারে নি বলে সে শুরু থেকেই আবেগহীন মানুষ হিসেবে আবির্ভূত হয়। ঘটনার পরিক্রমায় হত্যা করে ‘আরবি’ হিসেবে পরিচিত এক ব্যক্তিকে। কোন বিশেষ কারণ ছাড়াই। এজন্য গ্রেফতার হয় মরসোঁ এবং মুখোমুখি হয় প্রথাগত বিচারের। এ হত্যার বিভিন্ন যৌক্তিক কারণ খুঁজে বের করে মরসোঁ’র সমাজ। তার সংগ্রাম ছিলো সেই যৌক্তিক কারণ আর আইনি ব্যবস্থার বিপক্ষে।৪২। 'ইস্পাত' লেখক- নিকোলাই অস্ত্রভস্কি। বইতো নয় যেন জ্বলন্ত আগুণ। বই পড়তে যেয়ে আমার ভেতরটা মড়-মড় করে উঠলো। শরীরটা ঘেমে গেল, আমি কিসের যেন আওয়াজ শুনতে পেলাম! বইয়ের লেখক নিকলাই অস্ত্রভস্কি তার জীবনীকেই এঁকেছেন এ বইয়ে। স্পন্ডিলাইটিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মাত্র ৩২ বছর বয়সে। জীবনের শেষ আটটি বছরের প্রথম চার বছর ছিলেন অন্ধ হয়ে। লাইন সোজা রাখার জন্য তার স্ত্রী তাকে কাগজ সেটে দিতেন কাঠের খাজ কাটা বোর্ডে। আর শেষের চার বছর তার দিন কাটে একেবারে বিছানায়। অন্ধ আর পঙ্গুত্বে জড়াজড়ি করে। ইস্পাত বইটির মূল নাম ‘হাও দ্যা স্টিল ওয়াজ টেম্পার্ড’। বইটি অনুদিত হয়েছে শতাধিক ভাষায় আর পেয়েছে রাশিয়ার সর্বোচ্চ খেতাব লেনিন অর্ডার। ৪৩। 'আনা কারেনিনা' লেখক- টলস্টয়। “পৃথিবীর প্রতিটি সুখী পরিবার একই রকমভাবে সুখী, প্রতিটি অসুখী পরিবার নিজের নিজের ধরণে অসুখী।” এই মনস্তাত্বিক বাক্যটি দিয়ে শুরু হয়েছে আনা কারেনিনা নামক পৃথিবীর অন্যতম মনস্তাত্বিক উপন্যাস। উপন্যাসের সার সংক্ষেপ হোলো “আনা কারেনিনা একজন সম্ভ্রান্ত বংশের মহিলা। ভাই এবং ভাবীর মধ্যে যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়েছে, সেটার সমাধান করার জন্য সে মধ্যস্হতার ভূমিকা পালন করে। কিন্ত দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তার সংসারেই অশান্তির সৃষ্টি হয়, তিনি জড়িয়ে পড়েন পরকীয়ার মতো ঘৃণ্য সামাজিক ব্যধিতে। স্বামীর সাথে তার ব্যবধান শুরু হয়, পরিণতিতে বিবাহ বিচ্ছেদ। আনা কারেনিনা প্রেমিক ভ্রনস্কিকে বিবাহ করেন, কিন্ত ধীরে ধীরে তার সাথে তার দুরত্ব সৃষ্টি হয়, এবং একসময় প্রবল সন্দেহ। শেষে “আনা কারেনিনা” আত্নহত্যা করতে বাধ্য হন। এখানে উপন্যাসের মূল বক্তব্য হচ্ছে “আদর্শহীন চরিত্র কিভাবে সমাজ এবং ব্যক্তিজীবনে পতন নিয়ে আসে তাই ফুটিয়ে তোলা”। সম্পূর্ণ উপন্যাসে একটি অশ্লীল বাক্য উল্লেখ না করেও কিভাবে সমাজের অশ্লীলতা ফুটিয়ে তোলা যায় তা টলস্টয় দেখিয়ে দিয়েছেন – যেটার থেকে আমাদের দেশের সাহিত্যিকদের অনেক কিছু শেখবার আছে বিশেষ করে যারা “খেলারাম খেলে যা” জাতীয় অপন্যাস লিখে কাটতি বাড়িয়ে থাকেন।৪৪। 'অস্তিত্ববাদ ও মানবতা' লেখক- জাঁ পল সাত্রে। জ্যঁ পল সার্ত্রের জীবন ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ। একদিকে প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতির তেমন তোয়াক্কা করেননি। অপরদিকে যখন যা সঠিক বলে মনে করেছেন তাই-ই অকপটে ব্যক্ত করেছেন। তিনি বিয়ে করেননি, বিখ্যাত ফরাসী নারীবাদী লেখিকা সিমন দ্য বুভেয়ার সাথে বসবাস করেছেন আজীবন। সার্ত্রে ও বান্ধবী বুভেয়া’র মিলে ‘লেস ভেজপস মোদারনেস’ নামক মাসিক পত্রিকা বের করতেন। এ পত্রিকাটি সে সময় দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করে। ৪৫। 'লেডি চ্যাটার্লীজ লাভার' লেখক- ডি এইচ লরেন্স। যৌন বিষয়কে অবলম্বন করে এমন বলিষ্ঠ সাহিত্য তাঁর সমকালে আর কেউ রচনা করেন নি। খোলাখুলি যৌন ঘটনাবলীর বর্ণনা দেওয়াতে তাঁর অধিকাংশ বইকে নিষিদ্ধ করা হয়। ‘লেডি চ্যাটার্লী’জ লাভার’ বইটি একটা দুর্দান্ত উপন্যাস। ৪৬। 'দা সেকেন্ড সেক্স' লেখক- সিমোন দা ব্যাভোয়ার। অনেকে মনে করেন, বিশেষ করে আমেরিকায় বইটি সমকালীন নারীবাদী আন্দোলনের সূচনা করেছে। লেখিকা তার বই সম্পর্কে বলেন, ‘দ্য সেকেন্ড সেক্স’ লেখার সময় আমি সচেতন ছিলাম। সেই প্রথমবারের মতো আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আমি আসলে একটি মিথ্যা জীবন যাপন করছি। অথবা অন্যভাবে বলা যায়, আমি পুরুষ প্রভাবিত সমাজকে না চিনে এর কাছ থেকে উপকার নিচ্ছিলাম। আমার জীবনের প্রথম দিকে যা হয়েছিল, আমি পুরুষদের নীতিবোধগুলো স্বীকার করে নিয়েছিলাম। আর তার সবগুলো মেনে নিয়ে এর মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করছিলাম। আমি অবশ্যই কিছুটা সফল ছিলাম। আমার বিশ্বাস ছিল, পুরুষ ও নারী সমান হতে পারে, যদি নারী তেমন সমানাধিকার চাইতে পারে। অন্যভাবে বললে বলতে হয়, আমি একজন বুদ্ধিজীবী ছিলাম। সমাজের এক বিশেষ শ্রেণী বুর্জোয়া শ্রেণী থেকে আমার আসার সৌভাগ্য হয়েছে। এটা আমাকে সবচেয়ে ভালো স্কুলে পাঠিয়েছে এবং অবসরে চিন্তা করার সুযোগ দিয়েছে। একই কারণে খুব বেশি জটিলতা ছাড়াই আমি পুরুষ-জগতে ঢুকতে সক্ষম হয়েছি।৪৭। 'মিডনাইটস চিলড্রেন' লেখক- সালমান রুশদী। সালমান রুশদী ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক। তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস 'মিডনাইটস চিলড্রেন' ১৯৮১ সালে সাহিত্যে বুকার পুরস্কার লাভ করে। তাঁর বেশির ভাগ উপন্যাসের পটভূমি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশকে। বইটি আসলে প্রকাশের পর থেকেই বিশ্বপাঠক সমাজে অসামান্য নাড়া দিতে সক্ষম হয়। মিডনাইটস চিলড্রেনে দেখা যায় ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ১০০১ জন শিশু জন্মগ্রহণ করে। তাদের মধ্য থেকে এক হিন্দু মায়ের সন্তান ও এক মুসলমান মায়ের সন্তানকে আনা হয়েছে উপন্যাসের চরিত্রে। আর এই দুই সন্তানই মূলত উপন্যাসকে সমৃদ্ধতর অবস্থানে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। সালমান রুশদী এই দুই শিশুকে ত্রিশ বছর বয়স পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছেন। আর এই দুই মানবসন্তানই দেখতে পেয়েছে ইন্দিরা গান্ধীর লৌহশাসন। ব্যক্তি মাধ্যমে জাতি ও মানবতার প্রতীক তৈরি করেছেন সালমান রুশদী। যে কারণে পাঠক সহজেই উপন্যাস পড়তে পড়তে ভারত নামক একটি দেশের জন্মকথা জানতে পারে এবং জানতে পারে মানবতাবাদের অবক্ষয়গুলো সম্পর্কেও। ৪৮। 'দ্য ফেয়ারওয়েল পার্টি' লেখক- মিলান কুন্দেরা। মিলান কুন্দেরা চেকোসেস্নাভাকিয়ায় জন্ম। দ্য জোকস লেখকের প্রথম প্রকাশিত উপন্যাসের নাম। রাজনৈতিক উপন্যাস হিসেবে এ উপন্যাসটি পাঠক মহলে বিপুল সাড়া জাগায়। তিনি ছিলেন একজন খাঁটি ইউরোপীয় লেখক। কমিউনিস্টবিরোধী ছিলেন। ৪৯। 'ট্রেজার আইল্যান্ড' লেখক- রবার্ট লুই। অনেক ঝক্কি-ঝামেলা, যুদ্ধ, প্রতিপক্ষের প্রতিরোধ, দুর্ভোগ এবং নানা রোমাঞ্চকর ঘটনার মধ্য দিয়ে রত্নদ্বীপের সন্ধান পাওয়া গেল। দ্বীপের গুহায় অভিযাত্রীরা দেখল সেখানে ঝর্ণা ও পুকুর আছে। একটু দূরে অগ্নিকুন্ডে আগুন জ্বলছে। এক কোনে স্বর্ণমুদ্রা ও স্বর্ণের চৌকোটুকরার স্তূপ। আগুনের আভায় সেসব জ্বলজ্বল করছে। অভিযাত্রীদের মধ্যে ডাক্তার, ফিন্টার, হোটেল মালিকের ছেলে জিম, সিলভাররা সেসব নিয়ে পুনরায় জাহাজে ফিরে এল এবং পৌঁছে গেলেন স্বদেশে। রবার্ট লুই স্টিভেনসনের আরও বিখ্যাত দুটি বই, ড: জেকিল এন্ড মি: হাইড, কিডন্যাপড। ৫০। 'দ্য গড অফ স্মল থিংস' লেখক- অরুন্ধতী রায়। ১৯৯৭ সালে লেখা “দি গড অব স্মল থিংস” অরুন্ধতী রায়ের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র উপন্যাস। অরুন্ধতী রায় বাস্তবজীবনে খুব অনুভূতিশীল মানুষ, মানুষের দুঃখে কেঁদে ওঠেন, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ভারতের এ মাথা থেকে ও মাথা চষে বেড়ান। বুক ফুলিয়ে অবলীলায় যা সত্য তাই বলে দেন। তাঁর আত্নজীবনীমূলক এই উপন্যাসেও তার ব্যতিক্রম খুঁজে পাওয়া যায় নি। মানুষের হাসি, আনন্দ, দুঃখ, কষ্ট, ভালোবাসা, বিরহ, ঘৃণা প্রভৃতি সব মানবিক ব্যাপারগুলোকে খুব সূক্ষভাবে দেখার একটা অদ্ভুত গুন আছে তাঁর মাঝে। এই উপন্যাসে মানব জীবনের ছোট ছোট মূহুর্তগুলোকে ছোট ছোট করে হৃদয়গ্রাহীভাবে তিনি তুলে ধরতে পেরেছেন সুনিপুণ মুন্সিয়ানায়।
false
rg
যানজটমুক্ত ঢাকা আন্দোলদে যোগ দিন।। রেজা ঘটক ।। ঢাকার যানজট নিরসনে ভিআইপি চলাচল কতোটা যৌক্তিক? মন্ত্রীদের জরিমানার কথা বলা হল। কে করবে জরিমানা তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি। চলুন সবাই মিলে ঢাকার রাস্তায় ভিভিআইপিদের যানজটের মধ্যে আটকে রাখি। তারপর খবর পাঠাই উপর মহলকে। তারা এসে জরিমানা করুক। যদি জরিমানার ব্যাপারটা স্রেফ লোক দেখানো হয়, তাহলে ওই ভিআইপিদের গাড়ি ভাঙ্গার রাইটস জনগণকে দিতে হবে। কতোটা যানজট সৃষ্টি করার জন্য কতো জরিমানা করা যায় আসুন তা নিয়ে আমরা একটা অংক ধার্য করি। পাঁচ মিনিটের জন্য কতো, দশ মিনিটের জন্য কতো বা এক ঘণ্টার জন্য কতো জরিমানা ধার্য করা যায় আপনারা ঠিক করুন। আর এই জরিমানার টাকা কোথায় কিভাবে ব্যয় করা হবে তা ঠিক করা দরকার। আদায় হওয়া জরিমানার টাকা দিয়ে ঢাকায় উড়াল রাস্তা বানানো যায় কিনা সে বিষয়ে আমরা একটা প্রাগ-জরীপ চালাতে পারি। তবে সাবধান, এই প্রক্রিয়ায় যেন কোনভাবেই সরকারি বা বিরোধীদলের কোন লোক ঢুকতে না পারে তা যাছাই বাছাই করে নিতে হবে। অন্তত ৩০টা রসন্ত্রণালয়কে ঢাকার বাইরে ট্রান্সফার করতে হবে। মৎস্য মন্ত্রণালয়কে কুয়াকাটায়, পাট মন্ত্রণালয়কে ময়মনসিংহে, বস্র মন্ত্রণালয়কে বরিশাল, নৌ-মন্ত্রণালয়কে চট্টগ্রাম, ভূমি মন্ত্রণালয়কে কুস্টিয়ায়, খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে ফেনীতে ট্রান্সফার করা যায় কিনা আপনারা বলুন। বাকী মন্ত্রনালয়কে দেশের কোথায় কোথায় ট্রান্সফার করা যায় প্রত্যেকটির অধিদপ্তর, পরিদপ্তরসহ তা আপনারা বসে ঠিক করুন। রাস্তায় ইট সুরকি, বালু রাখলে কতো জরিমানা করা যায় ? কতো সময়ের জন্য কতো হবে জরিমানার পরিমাণ তা আপনারা বলুন। দিনের বেলায় পার্কিং এলাকা ছাড়া রাস্তার যেখানে গাড়ি পাওয়া যাবে তার জন্য জরিমানা কতো হওয়া দরকার, ঠিক করুন। এইসব গাড়িকে পরবর্তী ৩ মাসের জন্য রাস্তায় চলাচল নিষেধাজ্ঞা দেওয়া যায় কিনা আপনারা ঠিক করুন। মোদ্দাকথা, ঢাকার যানজট নিরসনে আপনার বক্তব্য এখানে বলুন। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে এই সকল সুপারিশমালা পাঠাবো। উনি যদি সত্যিকারভাবে ঢাকাকে বাঁচাতে চান তাহলে এই সব সুপারিশ উনি শুনবেন। নইলে আমরা ঢাকা ছাড়ো আন্দোলনে যাবো। যারা আমার এই প্রস্তাবে রাজী আছেন তারা ভাবুন এবং আপনার মূল্যবান মতামত পাঠান। আমরা ঢাকাকে আগামী এক দশক পর পরিত্যক্ত নগরী রূপে দেখতে চাই না। আমরা যানজট মুক্ত ঢাকা চাই। শুধু স্কুল কলেজ, অফিসের সময় সূচী পরিবর্তনে ঢাকার যানজট মুক্ত করার কৌশল একটা ধোকাবাজী ছাড়া আর কিছু নয়। ঢাকাকে বাঁচাতে এখনই আমাদের উদ্যোগ নিত হবে। চলুন যানজটমুক্ত ঢাকা আন্দোলনে আমরা সবাই শরিক হই।।
false
mk
বঙ্গবন্ধু ও একাত্তর তাঁর বয়স যখন ৫১ বছর পূর্ণ হয়েছিল, তখন ১৯৭১ সালের ৭ ও ২৬ মার্চ জাতীয় জীবনে সর্বাধিক আকাক্সিক্ষত ‘মুক্তি ও স্বাধীনতা’ সংগ্রামের নিমিত্তে ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে’ তোলা এবং ‘যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা’ করার জন্য বঙ্গবন্ধু আহ্বান জানিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নিজের জীবনের এবং বাংলাদেশের জাতীয় জীবনের গতি-প্রকৃতি পরিবর্তনকারী ঐতিহাসিক মুহ‚র্ত আবির্ভূত হয়েছিল ১৯৭১-এ। এ মুহ‚র্তের জন্য বঙ্গবন্ধু সারা জীবন জেল-জুলুম, নির্যাতন ভোগ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে এই মুহ‚র্তের জন্য তিনি তাঁর সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। এই মুহ‚র্তের জন্য বাঙালি জাতি হাজার বছর যাবৎ অপেক্ষা করেছিল। ১৯৭১ বছরটি প্রকৃতপক্ষে বাঙালি জাতির ‘ডিফাইনিং মোমেন্ট’ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে।জন্মের পর থেকেই তিনি তাঁর দেশ, সমাজ ও মানুষের সুখ, দুঃখ, আশা, আকাক্সক্ষা, ব্যথা-বেদনা, চাওয়া-পাওয়া, বিশ্বাস-আস্থা এসব কিছু একান্ত আপনজনের মতো করে উপলব্ধি করেছেন এবং জনগণের প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করেছেন। এজন্য তাঁকে কারাভোগ করতে হয়েছে এবং তিনি বেশ কয়েকবার মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন। জনগণের প্রয়োজনে সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে পারার কারণে তিনি তাঁর জনগণের কাছ থেকে গভীর আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। এভাবে দেখা যাচ্ছে, তাঁর জন্মের পঞ্চাশ বছর পর তাঁর জন্মভূমি বাংলাদেশের ইতিহাসের গতি-প্রকৃতির পুরোটাই তাঁর নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় নির্ধারিত হয়েছে। ১৯৭১-এর মার্চ মাসের ঘটনাবলি তার জ্বলন্ত উদাহরণ।ধর্মীয় উপনিবেশ পাকিস্তান সৃষ্টির মূল দলিল হচ্ছে লাহোর প্রস্তাব। ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ পাঞ্জাবের লাহোরে সে সময়ের নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অধিবেশনে উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র আবাসভূমির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছিল। পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর এই দিনটিকে সমগ্র পাকিস্তানব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে, পাকিস্তান দিবস হিসেবে পালিত হতো। কিন্তু ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মভূমি তৎকালীন (পূর্ব) বাংলায় সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখা গিয়েছিল। সে সময়ের (পশ্চিম) পাকিস্তানে ২৩ মার্চ ‘পাকিস্তান দিবস’ হিসেবে পালিত হলেও, (পূর্ব) বাংলায় পালিত হয়নি। প্রসঙ্গক্রমে স্টানলি উলপার্টের বই ‘জুলফি অব পাকিস্তান’-এ উল্লিখিত একটি পর্যবেক্ষণ উদ্ধৃত করা যেতে পারে। উলপার্ট বলছেন, মুসলিম লীগের লাহোর প্রস্তাব অনুমোদিত হওয়ার একত্রিশতম বছর পূর্তি উৎসব হিসেবে ১৯৭১-এর মার্চের ২৩ তারিখটি পশ্চিম পাকিস্তানে উদযাপিত হয়েছিল, যেটি প্রতি বছর পাকিস্তান দিবস হিসেবে স্মরণ করা হতো। কিন্তু সেই সকালে ঢাকার বেশিরভাগ সংবাদপত্রে ‘বাংলাদেশের মুক্তি’ শিরোনাম দিয়ে বিশেষ সংখ্যা বের করা হয়েছিল। এতে শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বার্তা সন্নিবেশিত হয়েছিল, ‘আমাদের দাবি ন্যায়সঙ্গত এবং সে কারণে জয় আমাদেরই’, এটি শেষ হয়েছিল ‘জয় বাংলা’ বলে।‘পাকিস্তান দিবসে’ ১৯৭১-এর ২৩ মার্চ বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে তৎকালীন (পূর্ব) বাংলায় প্রতিরোধ দিবস পালিত হয়েছিল। সন্ধ্যায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে অবস্থিত তাঁর বাসভবনে বিশাল জনসমাবেশে, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নিচে দাঁড়িয়ে, বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, ‘তাদের ন্যায্য ও বৈধ দাবি-দাওয়া অর্জনের জন্য আমাদের জনগণ রক্ত দিতে শিখেছে এবং তদের বাধা দেয়ার জন্য যেকোনো হস্তক্ষেপ, নির্যাতন এবং শক্তিপ্রয়োগ, সোজা কথায়, হবে একটি ব্যর্থ চেষ্টা।’১৯৭০-এর নির্বাচনের সময় প্রকাশিত ‘দ্য গ্রেট ট্র্যাজেডি’ শিরোনামে একটি প্রচারপত্রে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেছিলেন, ‘Sheikh Mujibur Rahaman unlished hatred against West Pakistan’.১৯৭০-এর ৪ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য জেনারেল ইয়াহিয়া খান ঢাকায় এসেছিলেন। এ সময় পাকিস্তানের গোয়েন্দারা ইয়াহিয়া খানকে, সহকর্মীদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কথাবার্তার গোপনে ধারণকৃত একটি টেপ রেকর্ড বাজিয়ে শুনিয়েছিলেন, সেখানে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের বলছেন, উলপার্ট উল্লেখ করেছেন, My aim is to establish Bangladesh; I will tear the L.F.O.into pieces as soon as the elections are over. Who could challenge me once the elections are over ? (p.152) অর্থাৎ ‘আমার লক্ষ্য হচ্ছে, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা; নির্বাচনের পরে আমি লিগ্যাল ফ্রেম ওয়ার্ক অর্ডার (এল এফ ও) টুকরো টুকরো করে ফেলব। একবার নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে কে আমাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে?’মূলত ১৯৭১-এর ৭ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুই রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। ১৬ মার্চ ঢাকায় ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক শুরু হয়। ২৫ মার্চ আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া ঢাকা ত্যাগ করেন। ২৫ মার্চ রাতে নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে। আক্রমণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা রাইফেল সদর দফতর ও রাজারবাগ পুলিশ হেডকোয়ার্টার।বঙ্গবন্ধু ২৫ মার্চ রাত ১২টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন : ইংরেজিতে প্রচারিত সে ঘোষণার বাংলায় তর্জমা করলে দাঁড়ায়- ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের জনগণ, তোমরা যে যেখানেই আছ এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শেষ পর্যন্ত দখলদার সৈন্য বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য আমি তোমাদের আহ্বান জানাচ্ছি। পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়িত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।’এই ঘোষণা বাংলাদেশের সর্বত্র ওয়্যারলেস, টেলিফোন ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে প্রেরিত হয়। এর সঙ্গে সঙ্গে তিনি বাংলায় নিম্নলিখিত একটি বার্তা পাঠান :‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতভাবে পিলখানা ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে, আমি বিশ্বের জাতিসমূহের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করেছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ, ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান। কোনো আপস নেই। জয় আমাদের হবেই। পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রুকে বিতাড়িত করুন। সব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং অন্যান্য দেশপ্রেমিক প্রিয় লোকদের কাছে এ সংবাদ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।’বঙ্গবন্ধুর এই বার্তা তাৎক্ষণিকভাবে বিশেষ ব্যবস্থায় সারা দেশে পাঠানো হয়। সর্বস্তরের জনগণের পাশাপাশি চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও যশোর সেনানিবাসে বাঙালি জওয়ান ও অফিসাররা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান এক ভাষণে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন এবং বঙ্গবন্ধুকে দেশদ্রোহী বলে আখ্যায়িত করেন। এর বিপরীতে ওই তারিখেই অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন।১৯৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি অপারেশন সার্চ লাইটের কার্যক্রম শুরু করেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা ইপিআর, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, জগন্নাথ হল প্রভৃতি স্থানে নির্বিচারে নিরস্ত্র মানুষের ওপর হামলা শুরু হয়েছিল। বাঙালিদের মুক্তি সংগ্রাম শুরু হওয়ার চূড়ান্ত মুহ‚র্তে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে বলা সত্ত্বেও তাঁর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাসভবন ছেড়ে যাননি। এরপর পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবন থেকে পাকিস্তানি সেনা সদস্যরা ভোর রাত ১.১০টায় বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে গিয়েছিল। পরদিন ২৬ মার্চ তাঁকে বিমানে করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কারাগারে বন্দি করে রাখার জন্য। ১৯৭১ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা লায়ালপুর কারাগারে গোপনে বঙ্গবন্ধুর বিচার করা হয়। এতে তাঁকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল। একাত্তরের ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে বিপ্লবী সরকার গঠন করা হয়। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে (মুজিবনগর) বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।১৯৭১ সালের ২৩ আগস্ট, সোমবার বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের একটি হেড লাইন ছিল ‘পাকিস্তান : মুজিব’স সিক্রেট ট্রায়াল’। এখানে বলা হয়েছে, ‘যদিও বিচারের ব্যাপারে সবকিছুই ছিল গোপন রহস্যাবৃত, গত সপ্তাহে জানা গিয়েছে যে রাওয়ালপিন্ডি থেকে ১৫০ মাইল দক্ষিণে, টেক্সটাইল নগরী লায়ালপুরে একটি নতুন, একতলা লাল ইটের তৈরি দালানে বিচার কাজ হয়েছে। ইসলামাবাদের উৎসগুলো দাবি করছে যে মুজিবকে উদ্ধার করে নিয়ে আসতে বাঙালি বিদ্রোহীদের চেষ্টাকে প্রতিরোধ করার জন্য কঠোর গোপনীয়তা প্রয়োজন। আরো কারণ হচ্ছে ইয়াহিয়া মুজিবকে একটি পাবলিক প্লাটফরম দিতে অনিচ্ছুক ছিলেন। শেখ মুজিব যখন ১৯৬৮ সালে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন, যেটিও ছিল পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে বিদ্রোহের কারণে, তখনো বিচার প্রক্রিয়া ব্যাপক-বিস্তৃত সরকার বিরোধী প্রতিবাদের কারণে বাতিল করা হয়েছিল। পরে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান একজন পরিদর্শককে বঙ্গবন্ধুর সাজা সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘My generals want a trial and execution.’ব্রিটেনের সংবাদপত্র দ্য সানডে টেলিগ্রাফ-এ ১৯৭২ সালের ৯ জানুয়ারি ‘শেখ মুজিব ফ্লাইস এন্ড সিছ হিথ, প্লিয়া ফর হেল্প’ শিরোনামে একটি সংবাদ পরিবেশিত হয়। এই সংবাদটির উপশিরোনাম ছিল, ‘জেলর হিড শেখ’। এই রিপোর্টে বলা হয়, ‘একজন বাংলাদেশি অফিসিয়াল গতরাতে লন্ডনে বলেছেন যে একজন জেলরের সাহায্যে শেখ মুজিবুর রহমান সাজা এড়িয়েছিলেন। তিনি (সেই জেলর) জানতেন যে ইয়াহিয়া খান তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে যাবে এবং তিনি তখন শেখকে তাঁর ব্যক্তিগত কোয়ার্টারে দুই দিন লুকিয়ে রেখেছিলেন।’ বাংলাদেশ ডেলিগেশনের একজন মুখপাত্র ক্লারিজেস হোটেলে (লন্ডনে বঙ্গবন্ধু যে হোটেলে ছিলেন) বলেন, ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের একেবারে শেষ দিকে শেখকে যে কারাগারে রাখা হয়েছিল সেখানের সিমেন্টের মেঝেতে একটি কবর খনন করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধুকে বলা হয়েছিল যে, সাজা কার্যকর করার জন্য প্রস্তুত করা ইয়াহিয়ার স্কোয়াড মিথ্যা দলিল-দস্তাবেজ নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল, যাতে দেখানো হয়েছে যে শেখকে অক্টোবরের শেষ দিকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে।’দেশ যখন ঐতিহাসিক বিজয়ের আনন্দে ভাসছিল তখনো বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। সমগ্র জাতি বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে শঙ্কিত ছিল এবং অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল কখন বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করবেন। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি রাওয়ালপিন্ডি থেকে রয়টার পরিবেশিত একটি বার্তায় বলা হয়েছিল যে, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ার লাইনসের একটি বিশেষ বিমান বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি অপ্রকাশিত গন্তব্যের তিকে রওয়ানা দিয়েছে। তবে পরবর্তী কয়েক ঘণ্টাব্যাপী কোনো ফলোআপ নিউজ ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ অশেষ ভীতি ও আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিল। সবশেষে জানা গেল যে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান থেকে লন্ডন পৌঁছেছেন। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত সংবাদ পরিবেশনে নীরবতা ভেঙে রেডিও পাকিস্তান সেদেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর রওয়ানা দেয়ার কথা প্রচার করল। এতে বলা হয়েছিল প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে বিদায় জানিয়েছেন। লন্ডন হয়ে বাংলাদেশ যাওয়ার পথে ১৯৭২ সালের ৯ জানুয়ারি সাইপ্রাসের নিকোশিয়ায় একটি বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে দেখা গিয়েছিল। যখন খবর পাওয়া গেল যে বঙ্গবন্ধু নিরাপদে লন্ডন পৌঁছেছেন তখন সমগ্র দেশ বিজয়োল্লাসে মেতে উঠেছিল। লন্ডন পৌঁছেই তিনি ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। ঢাকায় তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন। এ সময় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী লক্ষেèৗ থেকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। লন্ডন থেকে যখন ঢাকা আসার পথে বঙ্গবন্ধু দিল্লি বিমানবন্দরে যাত্রা বিরতি করেন। এ সময় মুক্তিযুদ্ধে সর্বাত্মক সহয়োগিতা ও সমর্থন করার জন্য তিনি ভারতের জনগণ ও সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তবে এ সময়েও তিনি তাঁর দেশের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের অনুভূতি সম্পর্কে সতর্ক ছিলেন। তখনো বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী ফিরিয়ে নেয়াটাই যে প্রধানতম প্রয়োজন একথা বলতে বঙ্গবন্ধু ক্ষণিকের জন্যও ভুলে যাননি। সুতরাং সাক্ষাতের প্রথম সুযোগেই বঙ্গবন্ধু শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য কবে ফিরিয়ে নেয়া হবে?’ সঙ্গে সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধী উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আপনি যখনই বলবেন, তখনই তা করা হবে।’ এরপর বঙ্গবন্ধু ঢাকা ফিরে আসেন।প্রফেসর ড. অরুণ কুমার গোস্বামী : চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ও পরিচালক, সাউথ এশিয়ান সার্কেল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:৪৫
false
ij
আইনু জাতির ইতিহাস_ মূলধারার শোষণ সত্ত্বেও টিকে থাকার এক হিরণময় অধ্যায় আইনু; এরা জাপানের আদি অধিবাসী। দীর্ঘকাল এরা জাপানের উত্তরাঞ্চলে প্রকৃতিসংলগ্ন জীবন যাপন করছিল। জাপানিরা প্রথমে এদের ভূখন্ড দখল করে নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিলিবন্টন করে নেয় আর আইনুদের দেয় অনুর্বর ভূমি । পরে রুশরা এদের ওপর চাপায় মনুষ্যসৃষ্ট এক পদ্ধতি-যার নাম অর্থডোক্স খ্রিষ্টান ধর্ম। কাজেই আইনুদের ইতিহাস যেন সংখ্যালঘু আদিবাসীদের উপর তথাকথিত মূলধারার জনগোষ্ঠীর নির্মম অত্যাচারের জীবন্ত দলিল ... আইনু দম্পতিআইনুরা এশিয়ার উত্তর প্রশান্ত মহাসারগীয় আদি অধিবাসী হলেও মূলত এরা জাপানের হোক্কাইডোতে বাস করে। এককালে এরা দক্ষিণ কামচাটকা উপদ্বীপের বাস করত। রাশিয়ার সদূর পূর্বাঞ্চল শাখালিন দ্বীপেও বাস করত। কুরিল দ্বীপ, জাপানের তোহোকু, হোনসু এসব স্থানেও আইনুরা বাস করে। জাপানে আইনু অধ্যুষিত অঞ্চলএকটা সময় ছিল যখন আইনুদের ইউরোপীয়-উদ্ভূত মনে করা হত। এর কারণ এদের ঘন ঢেউ খেলানো চুল, পুরুষের রোমশ পেশল শরীর, ঘন দাড়ি। সা¤প্রতিক জিন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে আইনুরা ‘জুমন’ জাতির প্রত্যক্ষ উত্তরসূরি। জুমনরা ছিল উত্তর এশিয়ার প্রাচীন অধিবাসী। এ ছাড়া আইনুদের মৌখিক ইতিহাস এই সাক্ষ্য দেয় যে-আলাস্কার উপকূলে যে টলিনজিৎ জাতি বাস করে-তাদের সঙ্গে আইনুদের সম্পর্ক রয়েছে। তবে আইনু ভাষা অন্য ভাষার সঙ্গে সম্পর্কহীন। যে ভাষায় আজ আর কথা বলা হয় না। তবে ভাষাটিকে সংরক্ষণ করার চেষ্টা চলছে।হোক্কাইডোঐতিহ্যভাবেই আইনুরা খাদ্যদ্রব্য শিকার ও সংগ্রহ করত । মাছই প্রধান খাদ্য বিশেষ করে স্যামন ও হেরিং; শিকার করত হরিণ ও ভাল্লুক। এ ছাড়া তাদের টিকে থাকার কারণ ছিল বুনো উদ্ভিদ ও স্বল্প-মাত্রার কৃষিকাজ। উৎপন্ন করত বজরা বা মিলেট, গম ও সীম। আটুশ কাপড়ের পোশাক তৈরি করত। এলম গাছ। এর ভিতরকার ছালের তন্ত দিয়েই আটুশ আঁশ তৈরি হয়। কাপড় বোনে আইনু-মেয়েরা। আইনু-মেয়ে। আইনু-মেয়েরা সৌন্দর্য ও । ঋতুমতী হওয়া চিহ্ন হিসেবে ঠোঁটের চারপাশে গভীর সীমানাচিহ্নিত উল্কি আঁকে। ঠোঁট হাত ও বাহুতে উল্কি আঁকা মেয়েবেলায় আরম্ভ হয় ও ১৫/১৬ বছরের শেষ হয়, তখন সে বিবাহযোগ্যা হয়ে ওঠে। আইনু সমাজে ১৬ বছরেই ছেলেদের প্রাপ্ত বয়স্ক মনে করা হয়। ছেলেমেয়ে প্রত্যেকেই কানের দুল পরে। মেয়েরা বিয়ের আগে স্বাধীনই থাকে পরে স্বামীর ইচ্ছে অনিচ্ছের অধীন হয়ে পড়ে। তবে নারীরা যুদ্ধে অংশ গ্রহন করতে পারত এবং গ্রামীণ সালিশে মত রাখতে পারত। এছাড়া মেয়েরা মাঠে কাজ করে, কাঠ কুড়োয়, রাঁধে, কাপড় বুনে, ছেলেমেয়েদের যত্ন নেয় ও পড়াশোনা শেখায়। আইনুরা বাচ্চাদের কঠোর শাসনে রাখে, শিশুরা কাঁদলে কেউ তাকায় না। মেয়েরা শিশুদের রাখে পিঠের ঝুলিতে । আইনু গ্রামআইনু গ্রামের সবচে গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তি হল শামান বা ওঝা। অসুখ সারানোই শামানদের প্রধান কাজ। শামানরা নাকি আত্মার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। অন্যান্য পশুর আত্মাও নাকি শামানদের সাহায্য করে অসুস্থদের সুস্থ করে দেয়। শামানদের কাছে সাহায্য চাইলে শামানরা সূর্যাস্তের জন্য অপেক্ষা করে, তারপর রোগীর কাছে যায় ড্রাম পিটায়, যাদুর কাঠি নাড়ায়, নাচে, অন্যান্য পশুর আত্মাদের ডাকে। আইনু পুরুষসর্বপ্রাণবাদী বা অ্যানিমিষ্ট। সকল বস্তুর মধ্যে প্রাণ বা আত্মা রয়েছে। বিশ্বাস করে কেউ মারা গেলে কেবল ভৌত অংশেরই ধ্বংস হয় আত্মা মুক্তি পায় এটি ভালো কি মন্দ হতে পারে-মানুষের ক্ষতি করতে পারে। এর হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য কাঠের ওপর অশুভ আত্মার কর্কস প্রতিচ্ছবি আঁকে। একে বলে inaos ; আজকাল এটি কাঠি কেটে তৈরি করা হয়। মাটিতে ঘরে সমুদ্রের ধারে কি রাস্তার মোড়ে কি পবিত্র বৃক্ষের পাশে পোঁতা হয়। inaosআইনু ধর্মের দেবতারা প্রাকৃতিক ঘটনা ও শক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। আইনুরা মনে করে ভাল্লুক হচ্ছে পাহাড়ের দেবতা। খুনে তিমি মহাসমুদ্রের দেবতা। প্যাঁচারা আইনু গ্রামের রক্ষাকর্তা । তবে ভালুকই নাকি ওদের মাছ ধরতে শিকার করতে কাপড় বুনতে শিখিয়েছে। দেবতার সন্তুষ্টির জন্য নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপযাপন করে। এর অন্যতম হল ইয়োমানতে পরব। একটি ভাল্লুককে ধর্মীয় আচারঅনুষ্ঠানের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। এর আত্মাকে দেবতার দেশে পাঠানো হয়। পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে চলে নাচগান ভোজপর্ব। প্যাঁচা শিয়াল ও অন্যান্য প্রাণীদের নিয়েও আত্মার দেবতার দেশে ফেরৎ পার্বন করা হয় । তবে কাল্ট অভ দ্য বিয়ার বা ইয়োমানতে পরবই আইনুদের মূল ধর্মীয় উৎসব। আইনুরা বাচ্চা ভাল্লুক ধরে, মেয়েরা পালে। সেটির বয়েস ২/৩ বছর হলে বলি দেয়। পুরুষেরা রক্ত পান করে, মাথা কেটে নেয়, চামড়া ছুঁড়ে ফেলে দেয়; পরে পারিবারিক অনুষ্ঠানে চামড়াটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে । চামড়াটিকে খাদ্য ও পানীয় অফার করা হয় -যেন ওটা জীবিত। আইনুদের ঘর।আইনুদের ঘর হয় আয়তক্ষেত্রাকার । দেওয়াল হয় নলখাগড়া ও শুকনো দূর্বা ঘাসের। আইনুদের অঞ্চলে ৬/৭ মাস এক নাগাড়ে তুষার ঝরে। আবার বর্ষায় থাকে বৃষ্টিপাতের আধিক্য। মেঝেয় গর্ত করে আগুন জ্বালে। আগুনের ওপর থাকে জালি বা গ্রিল; তার ওপর মাছমাংস রেখে পোড়ানো হয়। দরজার পাশে থাকের পানির বালতি। লোকজন শোয় কাঠের পাটাতনে দূর্বা ঘাসের মাদুরের ওপর। আইনুরা কাপড়চোপড় পরেই নাকি শোয়। ঘরের জানলা দুটি-তার একটি পবিত্র হওয়ায় খোলা হয় না। ঘরটি চিমনীহীন, ধোঁওয়া ছাদের ছোট ফুটো দিয়ে বের হয় বলে ধোঁওয়ায় ঘর সারাক্ষণ ভরে থাকে। সুতরাং আইনুদের ঘরে সময় কাটানো সুখকর নয় বলেই মনে হয়। আইনু শিল্পআইনুদের অর্থনীতির কেন্দ্র মৎস শিকার। সমুদ্রে ও মিঠে পানিতে মাছ ধরে তারা । সৈকতে সংগ্রহ করে কাঁকড়া, চিংড়ি,শামুক, ঝিনুক ও কচ্ছপ। শীতকালে জমাট নদী গর্ত করে মাছ ধরে। বর্ষাকালে জাল, লোহার রড, হুক ও হারপূন দিয়ে শিকার করত। বিষ মাখানো হারপূন খুলে ফেলা যায় । (মাছ মারতে বিষের কী দরকার বুঝলাম না!) আইনু জেলে আইনুরা আজ থেকে ২০০০ বছর আগেই উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে নৌপথে বানিজ্যে আরম্ভ করেছিল। দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার জন্য তারা ৫০ফুট দীর্ঘ পাল তোলা ক্যানৌ ব্যবহার করত। তাদের বিচরন ক্ষেত্র ছিল কোরিয়া, চিন, জাপান, কামচাটকা এবং রাশিয়ার সুদূর পূর্বাঞ্চল অবধি । জাপানি আগ্রাসন১৫০০ খ্রিষ্টাব্দে আইনু অধ্যুষিত ভূখন্ডে জাপানি আগ্রাসন আরম্ভ হয়। এরপর থেকে আইনুদের জীবনধারা বদলে যেতে থাকে। এরা বিদেশি পণ্যে অভ্যস্ত হতে থাকে। যেমন, কাঁচের পুঁতি, রেশম, লোহা, এবং ভাত। দামী সুতি পোষাক চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ঐতিহ্যবাহী আতুশ কাপড়ের উৎপাদন কমে যেতে থাকে-যদিও তারা জাপানিদের সঙ্গে বানিজ্য করার জন্য আতুশ কাপড় তৈরি করত। বিদেশি পণ্যের জন্য আইনু গ্রামে দেখা দেয় অর্ন্তদ্বন্দ -মাছ ও পশমের জন্য আরম্ভ হয় প্রতিদ্বন্দিতা । যদিও আইনুরা একত্রে জাপানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ১৪৫৬, ১৬৬৯ এবং ১৭৮৯ সালে জাপানিদের সঙ্গে তিনটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সব কটা যুদ্ধেই আইনুরা হেরে যায়। অষ্টাদশ শতকের প্রারম্ভে রুশরা আইনু-অধ্যুষিত কুরিল দ্বীপ ঔপনিবেশিক শাসন চাপিয়ে খ্রিষ্টান অর্থডোক্স ধর্ম চাপিয়ে দেয়! উনিশ শতকের মাঝামাঝি আইনুসংস্কৃতি নাটকীয়ভাবে বদলে যেতে থাকে। মেইজি আমলে জাপানে আমূল সংস্কার সাধন হয়েছিল। সে সময় সরকারী আদেশে দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত অনেক আইনু প্রথা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। ১৮৭১ সালে জাপানি সরকার আইনু মেয়েদের উল্কি ও ছেলেদের কানের দুল পরা নিষিদ্ধ করে। ১৮৮০ সালে জাতীয়তাবাদী জাপানিরা দলে দলে হোক্কাইডো দ্বীপে যেতে থাকে বসবাসের উদ্দেশ্যে; সরকার আইনুদের জমি বাজেয়াপ্ত করে জাতীয়তাবাদী জাপানিদের মধ্যে বিলিবন্টন করে দেয়। অনুর্বর জমিই কেবল জুটে আদিবাসী আইনুদের কপালে। ওদের জোর করে কৃষিকাজের দিকে ঠেলে দেয়, এমন কী মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। আইনুরাও নিরুপায় হয়ে মূলধারার সঙ্গে মিশে যেতে নানাভাবে চেষ্টা চালায়। বিদ্যালয়ে আইনু ভাষা নিষিদ্ধ করে জাপানি ভাষা চালু করা হয়। বৌদ্ধ ধর্ম খ্রিষ্টান ধর্ম এবং জাপানি সরকার আইনুদের সর্বপ্রাণবাদী ধর্মটি উচ্ছেদ করতে উঠেপড়ে লাগে। হাজার বছর ধরে আইনুরা এশিয়ার আগ্রাসনের শিকার হয়েছে, তাদের উত্তরে ঠেলে দিয়েছে। এই আগ্রাসী দলই বর্তমানকালের জাপানি। বর্তমানে প্রায় ২৫,০০০ আইনু হোক্কাইডোতে বাস করে। আরও হাজার খানের জাপানের অন্যত্র বাস করে। তবে আইনুরা একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। আজও আইনুরা তাদের ভাষাসংস্কৃতি রক্ষায় সচেতন, আজও আইনু শিল্প বিকাশমান। আধুনিকতার প্রভাবে আইনু শিল্পীরা চিত্রকলায় বিমূর্ত ধ্যানধারণা এনেছে । ১৯৮৫ সালে আইনুরা ২৮ বছরে প্রথম ইয়োমানতে (কাল্ট অভ দ্য বিয়ার ) পরব উদযাপন করে।তথ্য: ইন্টারনেটে প্রাপ্ত বিভিন্ন ওয়েভসাইট ও মাইক্রোসফট এনকার্টার শিসাটো ও. দুব্রিউইল এর লেখা একটি নিবন্ধ ।ছবি: ইন্টারন্টে।
false
mk
কথা সত্য-হেফাজতের এ জোশ কাদের জন্য!!! খবরদার! গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে কোনো মিথ্যাচার আমরা জনগণ সহ্য করব না। রাজনৈতিক দল কে কোথায় কার সঙ্গে আপস করল, তাতে গণজাগরণ মঞ্চের কী এসে যায়? তাদের তো দাবি একটিই, তা হলো_ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি_ ফাঁসি চাইছে তারা। একই সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি_ ধর্ম নিয়ে রাজনীতি অথবা পণ্য হিসেবে ব্যবসা করাকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছে। এ ছাড়া অন্য কোনো কথা তারা বলছে না। তারা যা বলছে তা উপস্থিত স্বতঃস্ফূর্ত জনসমাগমেই বলছে এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া তাদের বক্তব্য সরাসরি প্রচার করছে তাৎক্ষণিক। সুতরাং মানুষের কাছে মিথ্যাচার প্রচার করে কোনো লাভ হবে না, হচ্ছেও না। জনগণকে কেউ সমাবেশে যাওয়ার জন্য ডাক দেয়নি, ভাড়া করেনি কিংবা ধর্মান্ধদের মতো কান বন্ধ করে আসেনি। লোকমুখে জানতে ও শুনতে পেয়েই তারা শাহবাগ চত্বরে সমবেত হয়েছিল। চোখ-কান খোলা রেখেই এসেছিল। আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই, মেয়ে-মরদ, মজুর-কিষাণ সবাই এসেছিল। নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করার উদ্দেশ্যেই অনলাইনে দেশ ও জনগণের স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত করার জন্যই রাজপথে নেমে এসেছিল।৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যখন একাত্তরের পিশাচ_ সে দেশব্যাপী কসাই নামে পরিচিত। সেই কাদের মোল্লাকে বিচারের চূড়ান্ত রায়ে যখন ফাঁসির পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদ-ে দ-িত করা হলো, ঠিক তড়িৎগতিতে সচেতন মানুষ এবং মুক্তিযুদ্ধের নবপ্রজন্ম এসে জমায়েত হয়েছিল শাহবাগ স্কয়ারে। কালক্রমে প্রতিদিন প্রতি প্রহরে ঘৃণার যে বিস্ফোরণ ঘটছিল এই গণসমাবেশে তা দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেছে দেশবাসী। যারা রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত নন, অথচ দেশপ্রেমের উদ্বুদ্ধ এই তরুণ দল কী প্রবল প্রাণশক্তি নিয়ে রাতকে দিন করে লড়াই- আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে সহযোদ্ধা হিসেবে এইদিন থেকেই অংশগ্রহণ করছে সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীবাহিনী। তারাও ওই অনলাইন যোদ্ধাদের দেশপ্রেমকে শ্রদ্ধা জানিয়ে নেমে পড়েছে ময়দানে। একদিন দু'দিন সহমর্মিতা জানানো নয়, লড়াকু সাথী হিসেবে তারাও এই দেশপ্রেমের যুদ্ধে শামিল হয়েছে। ক্রমে এই চত্বর পরিণত হলো প্রজন্ম চত্বরে, কখনো বা স্বাধীনতা চত্বরে। এমনিভাবে মানুষের ঢল নামল। প্রথম যে মহাসমাবেশ ডাকা হয়েছিল শাহবাগ চত্বরে। সেদিনের কথা মনে আছে কি? সেদিনের মহাসমাবেশ যারা দেখেননি, তারা ভাবতেও পারবেন না কী ঘটেছিল সেদিন ঢাকায়। একবার চোখ বন্ধ করে শাহবাগ মোড়ের কথা ভাবুন, এবার চোখ মেলুন পুবে-পশ্চিমে, উত্তরে-দক্ষিণে, কোথা পর্যন্ত এর সীমানা ছিল। পূর্বে মৎস্য ভবন, পশ্চিমে সাইন্স ল্যাবরেটরি, উত্তরে রূপসী বাংলা ছাড়িয়ে প্রায় সোনারগাঁ এবং দক্ষিণে চারুকলা, টিএসসি পেরিয়ে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত। আশপাশের বাড়ি এবং বাড়ির ছাদ পর্যন্ত মানুষে সয়লাব। কমপক্ষে পাঁচ লাখ তো হবেই। বেশি বই কম নয়। অথচ গত রোববার কোনো এক টিভি চ্যানেলে দুজন তরুণ সংসদ সদস্য ও তুখোড় তার্কিককে দেখলাম বহু কথাই বলছেন জামায়াত, হেফাজত, এমনকি গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে। বলুন। বলবেন না কেন? যখন মুখ আছে তাদের তারা তো কথা বলতেই পারেন। তবে একজন বললেন, 'আমার জীবনে এমন জনসমুদ্র দেখিনি'। জানি না তার বয়স কত; তিনি আবারো বললেন, 'পৃথিবীর কোথাও এতবড় মহাসমাবেশ হয়েছে কিনা সন্দেহ আছে।' তরুণ বন্ধুকে বলি, আপনি তো বিএনপি করেন, বাধ্যতামূলকভাবেই এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন। তা-ই করেছেন। কারণ আপনি তো প্রজন্ম চত্বরের মহাসমাবেশ দেখেন না। আপনার নেত্রী তো, শাহবাগে আন্দোলনকারীদের 'নষ্ট' ও 'নাস্তিক' বলে আখ্যা দিয়েছেন, সেখানে আপনি যতই তার্কিক বা সংসদ সদস্য হোন না কেন, যে বস্নকের, সেখান থেকে তাদের প্রশংসা করা নিষেধ। তবে আপনারা দুজনই সেদিনের টকশোতে ইসলাম, কোরআন এবং নবীজি সম্পর্কে যে সব বয়ান দিচ্ছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল, বুঝি আপনারা দুজনই সব জানেন, আর কারো জ্ঞান নেই। জামায়াত এবং হেফাজত সম্পর্কে যা বলছিলেন সেই সঙ্গে সরকারকেও, তাতে এটাই মনে হচ্ছিল আপনারাও কি...? একজন প্রশ্নকারী মহিলা চিকিৎসক তো দেশটাকে 'তালেবান' বানাতে চান কিনা জানতে চাইলেন। আপনি অবশ্য 'তালেবান' হোক, এটা চান না সে কথাও বলছিলেন বারবার।এবার একটা প্রশ্ন, আপনাদের মতো বুদ্ধিমান তরুণ সংসদ সদস্যদের কাছে, আপনারা কি হেফাজতের এই মহাসমাবেশকে টঙ্গির তাবলীগ জামায়াতের বার্ষিক অনুষ্ঠান কিংবা পবিত্র হজ উপলক্ষে সমবেত মুসলিম জনগণের চেয়েও বেশি ভাবলেন? বিশ্বের এ দুটি জমায়েত আপনি বোধহয় দেখেননি। ছবিতে দেখে হয়তো বুঝতে পারেননি। থাকগে এসব মাপামাপির কথা। একটা কথা বলুন তো মতিঝিলের শাপলা চত্বরে কারা এসেছিলেন? তারা সবাই কি আমাদের মতো গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধী? এসব মানুষ হেঁটে কিংবা সুলেমানী গালিচায় চেপে আসুন না কেন, কাদের নেতৃত্বে তাদের জমায়েত করা হয়েছিল? কীভাবে জমায়েত হয়েছিল, তাকি আপনাদের মতো মানুষের অজানা? হেফাজতের জমায়েতে তাহলে, যাদের নাকি আপনারা (হেফাজতপন্থীরা) জামায়াতকে শত্রু ভাবেন, তারা কেন ছিল আপনাদের সমাবেশে? কেন বিএনপি সর্বাত্মক সমর্থন জোগান দিল; একেবারে মঞ্চে উঠে? স্বৈরাচারী জেনারেল এরশাদ ও বিপ্লবী কাজী জাফরের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির সমর্থন ব্যক্ত করা বা সহমর্মিতা জ্ঞাপন করাই নয়, এই জনসমুদ্র যেন শুকিয়ে না যায়, সেজন্যও পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও নাকি করেছিলেন।বিএনপি, জামায়াত, জাপার সহযোগ যদি বাদ দিই এবং জোর করে নিয়ে আসা কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের যদি বাদ দেন, তাহলে হেফাজতে ইসলামের শক্তিটা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়?পাশাপাশি ভেবে দেখুন ৮ ফেব্রুয়ারির শাহবাগ চত্বরের মহাসমাবেশ কী করে সংগঠিত হয়েছিল তাদের কে সহযোগিতা করেছিল? সেখানে সেদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এবং শহীদজননী জাহানারা ইমাম সূচিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তি দাবি করা মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি। সেখানে কোনো ভাড়া করা লোক কিংবা জোর করে তালিকাভুক্ত ছাত্ররা ছিল না ছিল স্বেচ্ছায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দুই মানুষের আগমন। তাই মা-শিশু, নানি-দাদি, বয়স্ক, অসুস্থ মানুষেরও উপস্থিতি গণজাগরণ মঞ্চের মহাসমাবেশকে আরো মহতী জনতায় পরিণত করেছিল। ক্ষোভের কী বিশাল বহিঃপ্রকাশ, তাই তো সেদিন সবার সামনে ফুটে উঠেছিল। তাই বুঝি অপপ্রচারে মত্ত জামায়াত-হেফাজত বিএনপিপন্থীরা উঠেপড়ে লেগেছে এর বিরুদ্ধে। কিন্তু তারা জানে না, বাধা দিলে বাধবে লড়াই। আর জনগণেরও থাকে প্রত্যয়দৃপ্ত শপথ_ এ লড়াই জিততে হবে। ... সে যতই তাহরির স্কয়ার দেখে উৎফুল্ল হোন না কেন কিংবা তুর্কি প্রেসিডেন্টের উদ্যোগে স্পন্দিত হোন, মনে রাখবেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ও পাকিস্তানের চরম নারকীয়, বিরোধিতা সত্ত্বেও বাংলার জনগণ তিতুমীর-সূর্যসেনের, উত্তরসূরিরা, কাজেম মাস্টার ও প্রীতিলতার অনুসারী বুকের রক্ত ঢেলেই কিন্তু এ দেশের সব ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতাকে প্রতিরোধে এবং বাংলার মানুষের ঐতিহ্য সংস্কৃতির বিরোধিতাকারীদের সবসময়ই পরাজিত করেছে এবারো করবে। ইতিহাস সেই সাক্ষ্যই দেয়।পঞ্চাশের দশকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে পূর্ব পাকিস্তান ফুঁসে উঠেছিল, তখনো একটি সঙ্কীর্ণ রাজনীতির কুচক্রী মহল একে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের চক্রান্ত বলে অপপ্রচার করেছে, ফায়দা তুলতে চেয়েছে ফল হয়নি। জিতেছিল পূর্ববাংলার সে সময়ের সাড়ে চার কোটি মানুষ। আবার ১৯৫৪-তে মুসলিম লীগের বিরোধিতায় হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট গঠন করলে তাকে ইসলামবিরোধী বলেই আখ্যায়িত করা হয়েছিল এবং যুক্তফ্রন্টকে ভোট দিলে বিবি তালাক হয়ে যাবে বলে ফতোয়া জারি করেছিল মোল্লা-মৌলভীরা। কিন্তু যুক্তফ্রন্টের নিরঙ্কুশ বিজয়কে ঠেকাতে পারেনি মুসলিম লীগ। বরং মুসলিম লীগই নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। ১৯৫৮ সালে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে জেনারেল আইয়ুব খান দেশে ধর্মের নামে শাসন পরিচালনার চেষ্টা করে এবং ১৯৬১ সালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবর্ষ উদযাপনেও বাধার সৃষ্টি করে কিন্তু শতবর্ষের অনুষ্ঠান সামরিক জান্তার রক্তচক্ষু সত্ত্বেও বিশাল আকারে অনুষ্ঠিত হয়েছিল জনগণের বিপুল সমর্থনে।মওলানা ভাসানীর ১৪ দফা, শেখ মুজিবের ৬ দফা এমনি ছাত্রদের ১১ দফাকেও তারা অনইসলামিক কার্যকলাপ আখ্যায়িত করে ভারতীয় চক্রান্ত ও বিচ্ছিন্নতা ষড়যন্ত্র বলে প্রতি ব্যবস্থা গ্রহণ করেও বাংলার মানুষের প্রবল মুক্তিসংগ্রামকে প্রতিহত করতে পারেনি। ৬ দফা জনগণের মুক্তিসনদ হয়ে নির্বাচনে শেখ মুজিবকে প্রবল পরাক্রমে বিজয়ী করলেও সামরিক জান্তা প্রধান আইয়ুবকে টপকে সিংহাসনে বসা জেনারেল ইয়াহিয়া কপটতার আশ্রয় নিয়েও মানুষের মুক্তির আকাঙ্খাকে দমিত করতে পারেনি। '৭০ সালের নির্বাচনে কিন্তু জনগণই পক্ষে রায় দিয়েছিল নানা অপপ্রচার সত্ত্বেও। বাংলার বিজয়ী নির্বাচিত নেতৃত্বকে ক্ষমতায় বসতে না দিয়ে পাঞ্জাবি কূটরাজনীতি ও সামরিক জান্তা একত্রে চক্রান্ত করল বটে কিন্তু জনগণের বিস্ফোরণ ঠেকাতে পারেনি সেদিনও। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যা এবং মুক্তিসংগ্রামী বাংলার জনগণকে নানাভাবে পর্যুদস্ত করতে এবং অস্ত্র বলে পরাভূত করতে কত যে চেষ্টা করেছিল এমনকি মার্কিনিদের মদদেও, তাও কিন্তু সফলকাম হয়নি। পূর্ব পাকিস্তানকে ভারত দখল করে নেয়ার চক্রান্ত করেছে এবং হিন্দুদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের 'জিহাদ' ঘোষণা করেও কিন্তু সেদিন পাকিস্তানিরা সাধারণ মানুষকে পায়নি। পেয়েছিল জামায়াত-শিবির, আলবদর, আলশামস, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম পার্টি, জমিয়ত, রাজাকার ইত্যাদি শক্তি সংগঠিত করে বাংলার মানুষের বিরুদ্ধে চেষ্টা করেছিল তাদের উত্থানকে প্রতিহত করতে, ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে এত প্রবল দুর্ধর্ষ সেনাবাহিনী সত্ত্বেও নিরীহ নিরস্ত্র জনগণের হাতে সেই পাকিস্তানিদেরই নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে পরাজয়বরণ করতে হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর।বিজয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে দেশের বরেণ্যজন_ শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবীদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে নতুন বাংলাদেশকে বিকলাঙ্গ রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছিল। মার্কিন প্রশাসন নিরন্তর বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয় এবং মুক্তিযুদ্ধকে বিরোধিতা করেছিল, যুদ্ধে সব মদদ দিয়েছিল, তাতেও মুক্তিসেনা ও মিত্রবাহিনীর চূড়ান্ত বিজয় ঠেকাতে পারেনি।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খন্দকার মোশতাককে পুতুল হিসেবে লোভনীয় স্বার্থসিদ্ধির টোপ ফেলেছিল, সেই মোশতাক মুক্তিযুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভায় থেকেও সে চক্রান্তে সফল হতে পারেনি। কেবলমাত্র মার্কিনিদের বিরোধিতা করায় বঙ্গবন্ধুর স্নেহ থেকে তাজউদ্দীন আহমদ বঞ্চিত হয়েছিলেন কিন্তু মোশতাক থেকে গিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্য, সেই মোশতাকের ষড়যন্ত্রেই হত্যা হলেন বঙ্গবন্ধু সপরিবারে। তারপর দেশকে আবারো সেই সেনাবাহিনীর অত্যুৎসাহীরাই বারবার দখল করে এবং ক্ষমতা অভিলাষী জেনারেল জিয়াই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ও পরাজিত পাকিস্তানিদের দোসর, ঘাতক-জল্লাদ জামায়াত-শিবিরকে নতুন করে মাথা তুলে দাঁড়াবার সুযোগ করে দিলেন। তারপর যুদ্ধাপরাধী কুলাঙ্গার-বিশ্বাসঘাতকদের প্রশ্রয় দিয়ে মাথায় তোলা হলো। তার মৃত্যু হলো মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে। এই শূন্যতায় জিয়ার স্ত্রী দলে এলেন। প্রধান এবং সরকারপ্রধান হলেন। কিন্তু মাঝখানে মতলবি ও ক্ষমতালোভী জেনারেল এরশাদ কিছুদিন স্বৈরশাসনের চাকা ঘুরিয়ে গেলেন এই বাংলার ওপর। এই লোভ-লালসার নানা চক্রান্তে পরাজিত দালাল-দোসররা মৌলবাদী ধর্ম ব্যবসায়ী এবং যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত বঙ্গবন্ধুর শাসনে, তারাই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। আজ তারা এতই শক্তিধর রাজনীতিতে ও অর্থনীতিতে এমনকি অস্ত্রেশস্ত্রে যে কাউকে তোয়াক্কাই করতে চায় না। করেও না। সেই যুদ্ধাপরাধী, পাকিস্তানি হত্যাযজ্ঞের জল্লাদ জামায়াত-শিবির কূটরাজনীতির কলাকৌশলের বদৌলতে দেশে নারকীয় সন্ত্রাস '৭১-এর মতো হত্যা, গুম, খুন, চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু কি তাই, নিজেদের পরাজয়ের গ্লানি লোকচোখে মুছে ফেলার উদ্দেশ্যে তাদের নিয়ন্ত্রণে নতুন দল ও গ্রুপগোষ্ঠী সৃষ্টি করে দেশময় জঙ্গিবাদের প্রসার ঘটিয়েছে। সে তো আছেই কিন্তু মহাজোট সরকার দেরিতে হলে নির্বাচনের মাত্র এক-দেড়বছর বাকি থাকতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছে। সত্যিই বিচার শুরু হয়েছে কিন্তু শেষ হবে বলে শঙ্কা-সন্দেহ ছিল বহুজনের এবং প্রকাশও করেছেন তারা। এমন সীমিত লোকবল একটি দুটি ট্রাইব্যুনাল তদন্তের লম্বা সময়, সাক্ষ্য গ্রহণের নানান ফ্যাকরার জালে বাধা থাকলেও এবং ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিরোধী বিএনপির নানা প্রশ্ন উত্থাপন, জামায়াতিদের ট্রাইব্যুনাল বাতিল ও বন্দিদের মুক্তির দাবি আমাদের বিষ্মিত করেনি। সরকারি মনোভাবের টানাপড়েনই আজ এই বিচারকে এমনই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। তাছাড়া যে পালিয়ে গেছে তার ফাঁসি অথচ তার চেয়ে দশগুণ বেশি অপরাধী যে 'কসাই' নামেই পরিচিত একাত্তরে তার নির্মম হত্যাকা-ের জন্য, তাকে যাবজ্জীবন দেয়া কিংবা তারপর সাঈদীকে ফাঁসির নির্দেশ দিয়ে আপিলের সুযোগ দেয়া_ এসব কী যুদ্ধাপরাধী বিচারের আন্তর্জাতিক রীতিসম্মত?যা হোক, এই যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য জামায়াতের লেজুড় বিএনপি প্রধান বিরোধী দল হয়েও আজ নানান কৌশলে জামায়াতকে সমর্থন দেয়ার চেষ্টা করছে। সেই পুরনো মার খাওয়া ধর্মান্ধতাকে ব্যবহার করে জামায়াত-বিএনপি ইদানীং হেফাজতে ইসলাম বনে নতুন একটি 'অরাজনৈতিক' বলে স্বঘোষিত অথচ রাজনৈতিক মিথ্যাচারী বক্তব্য, ১৩ দফা দাবি, শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ শেষে গণজাগরণ মঞ্চে হামলার ব্যর্থ চেষ্টা তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকেই প্রকাশ করে। ইদানীং জামায়াত-বিএনপি যে মিথ্যাচার করে শাহবাগে আন্দোলনকারীদের ইসলাম এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে কটাক্ষ করে বক্তব্য দিয়েছে বলে দেশের সরল ও ধর্মপ্রাণ মানুষের বিভ্রান্ত করার মতলব করেছে তাতে বাতাস দেয়ার জন্য হেফাজতের উদ্ভব হয়েছে। অথচ হেফাজতের বক্তব্যে ক'দিন আগেও জামায়াতের বিরুদ্ধে ছিল। মওলানা আহমদ শফির বইতেও একই কথার উল্লেখ রয়েছে। সবাই জানে হেফাজতে ইসলাম হাটহাজারীর একটি কওমি মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। কওমি মাদ্রাসা আছে কিন্তু তাদের তালেবে এলেমদের ভর্তির প্রথম দিন থেকেই যে ধর্মান্ধতার সবক দেয়া হয়, তা তো এ দেশের সচেতন নাগরিকরা জানেন। শফি সাহেব জামায়াতকেই শুনেছি 'মুরতাদ' আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু কী এমন হলো যে তার দল হেফাজতে ইসলাম অনলাইন বোদ্ধাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে প্রচারিত মিথ্যাকে মানুষকে অন্তত তাঁর যারা অনুসারী তাদের মগজে ঢোকানোর জন্য জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেই কেন হাত মেলালেন? তবে কি সেই কানকথাটাই সত্যি? বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে এই 'জামায়াত-হেফাজত দোস্তি' প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।হেফাজতে ইসলাম যে ১৩ দফা দাবি বলে ওই সমাবেশে পাঠ করেছে 'জোশ ও ফাবোসে' তাতে মনে হয়েছে, এ তাদের জিহাদ। গত মঙ্গলবার এক হেফাজতিকে বলতে শুনলাম, বস্নাসফেমি আইন করবে না সরকার, আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বাধ্য করব এবং এ আইন করে ছাড়ব। ... এ যে মামাবাড়ির আবদার! হঠাৎ গজিয়ে ওঠা এই অপশক্তির আস্ফালন দেখে বোঝা যাচ্ছে কোথাকার মদদে নাচছে তারা। তুবড়ির মুখে আগুন দিলে ফরফর করে ওঠে ঠিকই কিন্তু পরে একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে যায়। জনগণও বলছেন, তাদের অবস্থাও তাই হবে। জামায়াতের সঙ্গে গাঁটছড়া আদৌ টিকবে না বেশিদিন। তারা দেশটাকে যে 'আইয়ামে জাহেলিয়ার'র যুগে নিয়ে যেতে চায় ওই তাদের দুশমন জামায়াতের সঙ্গে, তা কি আদৌ সম্ভব? অতীতের ইতিহাস কী সাক্ষ্য দেয়।এ দেশের মানুষ মিথ্যাচারকে প্রতিহত করতে জানে। যখন প্রয়োজন হয় তখন প্রচলিত রাজনীতির পথে এবং প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ধারায় দেশবাসী তথা সাধারণ মানুষই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসেন_ এ ধরনের পশ্চাদগামী তমসাচ্ছন্ন অতীতকে পরিহার করে। আলোর পথযাত্রী সাধারণ মানুষ দেশের কল্যাণে যে কোনো অসম্ভবকে সম্ভব করতে জানেন। তারই জলজ্যান্ত প্রমাণ বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন এবং একাত্তরের জানবাজির মহান মুক্তিযুদ্ধ। যার চেতনার প্রহরী এদেশের জনগণ। এবার সেই চেতনার নতুন প্রহরী গণজাগরণ মঞ্চ ও আন্দোলনকারী তরুণরা। বিপুল সম্ভাবনার এদেশের তরুণসমাজ রক্ত দিতে জানে। তারা যে ভয় পায় না তা অতীতের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। মনে রাখতে হবে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য এদেশে তরুণের অভাব নেই।কামাল লোহানী: সাংবাদিক ও কলাম লেখক। বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক
false
fe
রাষ্ট্রক্ষমতা চাই, কিন্তু কিভাবে_ রাষ্ট্রক্ষমতা চাই, কিন্তু কিভাবে?ফকির ইলিয়াস======================================সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের একটি কথা দিয়ে শুরু করতে চাই। তিনি বলেছেন, ‘আমরা সবাই অমানুষ হয়ে গেছি। আমাদের হৃদয় পাথর হয়ে গেছে। যেমন করে হোক ক্ষমতা চাই। মানুষ আমাদের কাছে কিছু না।’তিনি বলেছেন, ‘আমরা মানুষকে ভালোবাসতে ভুলে গেছি। সংবিধানে বলা হয়েছে সমস্ত ক্ষমতার মালিক এই মানুষই অর্থাৎ জনগণ। কিন্তু আমরা সব ভুলে গেছি। আমরা রাজনীতিবিদরা নিজেকে মনে করি দেশের মালিক। সব সম্পদ আমাদের। দেশের মানুষ আমাদের প্রজা।’এরশাদ একটা সংলাপের কথা বলছেন। তিনি এ বিষয়ে চিঠিও দিয়েছেন প্রধান দলগুলোকে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি এতে সাড়া দেয়নি বলেও তিনি জানিয়েছেন সাংবাদিকদের। দেশ আসলে কোনদিকে যাচ্ছে, তা বলা খুবই কঠিন এই মুহ‚র্তে। বিএনপি খুব ভালো করেই জানে তারা তাদের শেষ শক্তি প্রয়োগ করছে। না হয় তারা এভাবে লাগাতার অবরোধ, এবং প্রায় লাগাতার হরতাল দিতে পারত না কিংবা দিত না। অনেকে বলেন, বিএনপি এক বছর অপেক্ষা করেছে। তারা নির্বাচনে অংশ নেয়নি কেন? তারা বলছে, আওয়ামী লীগের অধীনে তারা নির্বাচনে যাবে না। এটাই যদি শেষ কথা হয়, তাহলে কিভাবে ফয়সালা হতে পারে এই চরম সংকটের?ক্রমশ মুখথুবড়ে পড়ছে বিভিন্ন সেক্টর। খবর বেরিয়েছে, চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় পোশাক কারখানা পরিদর্শন এবং সংস্কার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। নিরাপত্তাজনিত সমস্যায় পরিদর্শকরা কারখানায় যেতে পারছেন না বলে জানিয়েছে ইউরোপের ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড অন ফায়ার এন্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ বা অ্যাকর্ড। এর প্রভাব কতদূর গড়াতে পারে, তা ভাবা দরকার।চলমান সংকট জিইয়ে রেখে সংলাপ সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম শামসুল হুদার প্রেরিত পত্রে সংলাপ শুরুর সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়েছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘সংলাপের প্রস্তাব অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য। যে সব ব্যক্তি সংলাপের জন্য চিঠি দিয়েছেন সন্ত্রাস ও জঙ্গি তৎপরতাকে আড়াল করার জন্যই তারা এটা করেছেন। বিএনপি-জামায়াত জোটের সঙ্গে সরকার ও আওয়ামী লীগকে একই কাতারে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন তারা।’ তিনি বলেন, ‘যারা পেট্রলবোমা মেরে মায়ের কোল খালি করেছে তাদের সঙ্গে সংলাপের প্রশ্নই আসে না। সে ক্ষেত্রে শামসুল হুদা কেন, কারো প্রস্তাবেই কোনো সংলাপ হবে না। সংলাপের কথা যারা বলছে তারা পরোক্ষভাবে জঙ্গি তৎপরতার পক্ষ নিচ্ছে।’ আমরা দেখেছি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা স¤প্রতি ভারত সফর করে এসেছেন। ভারত সফরকালে গেল ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র পরিচালক ফিল র‌্যাইনার এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরো জানিয়েছেন, এই আলোচনা অব্যাহত আছে।বাংলাদেশ ভারতের প্রতিবেশী দেশ। আর ভারত আমেরিকার চলতি সময়ের প্রধান মিত্র। আমেরিকার ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম ঘাঁটিও এখন ভারত। বিশেষ করে প্রযুক্তির একটা বড় মার্কেট করে নিয়েছে আমেরিকা ভারতে। যেহেতু আইটি ফিল্ডের শ্রম ভারতে সস্তা, তাই ভারত তাদের অন্যতম টার্গেট। অতএব সেই হিসেব থেকে যুক্তরাষ্ট্র কোনোমতেই চাইবে না- ভারতের প্রতিবেশী বাংলাদেশে একটা মৌলবাদী, জঙ্গিবাদী শক্তির উত্থান ঘটুক। বাংলাদেশের জঙ্গিবাদের শঙ্কা নিয়ে ভারত দীর্ঘদিন থেকেই উদ্বিগ্ন। সেই হিসেবে, যারা বাংলাদেশে এই জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের মদদ দিচ্ছে, তাদের ব্যাপারেও ভারত বেশ সজাগ। কথা হচ্ছে, এই যে চিহ্নিত মহল- এরা বাংলাদেশকে বারবার পিছু টানছে কেন?কেন তারা বাংলাদেশের উন্নয়ন, রাজনৈতিক প্রজ্ঞার স্বীকৃতি দিয়ে প্রকৃত রাজনীতিকের মতো আচরণ করছে না? সদ্য প্রকাশিত সংবাদে আমরা দেখেছি, উপক‚লরক্ষী বাহিনীর জন্য বাংলাদেশ থেকে জাহাজ কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে মালদ্বীপ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে জাহাজ কেনার আগ্রহের কথা জানান মালদ্বীপের চিফ অফ ডিফেন্স ফোর্স মেজর জেনারেল আহমেদ সিয়াম। আরেকটি আশাপ্রদ খবর হচ্ছে সৌদি আরবে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগের বাজারটি উন্মুক্ত হওয়া। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল তেলসমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরব, যা এ বছর তুলে নেয়া হয়।নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার গৃহকর্মী নিতে চুক্তি করেছে সৌদি আরব। প্রবাসী কল্যাণ সচিব মো. ইফতেখার হায়দার ও সৌদি আরবের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপমন্ত্রী আহমেদ আল ফাহাদ এই সমঝোতা স্মারকে সই করেছেন ইতোমধ্যেই। এই যে ক‚টনৈতিক সফলতা, এর দাবিদার তো বর্তমান সরকারই।তারপরও বাংলাদেশকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে চরম বর্বরতার দিকে। মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। ঘৃণ্য আদিমতা ঘিরে রাখছে আজকের বাংলাদেশের প্রতিটি সকাল। ভোরে জেগেই এ দেশের মানুষ শুনছে- দেশের কোথাও না কোথাও সহিংসতার কথা। চরম রক্তপাতের কথা। পুড়িয়ে খুন করা হচ্ছে। খুনিরা দায় অস্বীকার করে বিবৃতি দিচ্ছে। কি নগ্ন রাজনীতি বাংলাদেশের চারপাশে।বিশ্বে বেশ কিছু বিষয় আছে যা খুবই সংবেদনশীল সবসময়ই ছিল। এখনো আছে। এর প্রধান বিষয়টি হচ্ছে ধর্ম। ধর্মের কথা শুনলেই আমাদের অনেকেরই বুক কেঁপে ওঠে। আমরা ক্রমশ ঋজু হয়ে যাই একটি নীতিমালার কাছে। নিবন্ধনের কাছে। খোঁজ করলে দেখা যাবে, প্রতিটি ধর্মের মৌলিক চেতনা কিন্তু এক। সব অসত্য, সব দীনতা, সব অন্যায়ের বিরুদ্ধেই কথা বলেছে প্রতিটি ধর্মগ্রন্থ। কিন্তু ধর্মীয় চেতনাকে সৃজনশীলতার আলোকে কাজে না লাগিয়ে তাকে মৌলবাদী চেতনায় কাজে লাগালে এর ফল কি দাঁড়াতে পারে? এর উদাহরণ আমরা এখন প্রায়ই দেখছি।বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেশ কিছু মুখোশধারী মানুষ আছে, যারা পোশাক-পরিচ্ছদে আধুনিক দাবি করলেও মূলত ধারণ করে হীন আদিমতা। এরা নিজেরা ধর্ম পালন করে না। কিন্তু অন্যকে ধর্মীয় উসকানি দিতে আরামবোধ করে। এভাবেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে দখল নিয়েছে শঠতা। ভেবে অবাক হই, বাংলাদেশের এক ধরনের স্বঘোষিত শিক্ষিত শ্রেণি এই গোঁড়ামি, জাহেলিয়াতের পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষক। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের প্রয়োজনে তারা অনৈতিক-অন্যায় কাজগুলোর পক্ষেও তালিয়া বাজাচ্ছেন। আর তাদের সামনেই ধ্বংস হচ্ছে একটি প্রজন্ম। অথচ তাদের সন্তানরা পড়ছে ইউরোপ-আমেরিকায়। নিদেনপক্ষে ভারতের কোনো ইংলিশ স্কুলে। হিপোক্র্যাসি আর কাকে বলে!আর একটি শ্রেণি আছে, যারা মনের অজান্তেই লালন করে বর্বরতা। তারা ধর্মের নামে নৃশংসতার বিরুদ্ধে কথা বলা কে পাপের শামিল মনে করে। গণতান্ত্রিক দেশের মানুষদের এই বিষয়টি গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে। কোনো ধরনের ভণ্ডামিই সমাজ নির্মাণে কল্যাণকর ভূমিকা রাখতে পারে না। অতীতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। কামানের বিরুদ্ধে ঢিল ছোড়া যাবে। কিন্তু তাতে লাভ হবে কি? শোষণটা সাম্রাজ্যবাদের হোক, আর মৌলবাদের হোক- এর স্বরূপ, গতিপ্রকৃতি এক এবং অভিন্ন। কোনো আধিপত্যবাদই মানুষের অগ্রসরমানতার প্রয়োজনে দরকারি নয়। সুশিক্ষা মানুষের মনের প্রখর জানালা খুলে দেয়। আর সে জন্যই প্রকৃত শিক্ষিত হয়ে গড়ে ওঠার কোনো বিকল্প নেই। আমার বেশ হাসি পায়, যখন দেখি কোনো কোনো অর্বাচীন জেনে বুঝেই বর্বরতাকে সাপোর্ট দেয়। বাংলাদেশের আজকের অবরোধ-হরতালের এলিট-সাপোর্টাররা সেই দলেরই অন্তর্ভুক্ত। না হয় তারা একটিবার ১৫ লাখ পরীক্ষার্থীর পক্ষে একটি কথাও বলছে না কেন? বিএনপি-জামায়াত জোট রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে চায়। এর উপায় কি? সহিংসতা? যে তারেক রহমান ইংল্যান্ড থেকে কলকাঠি নাড়ছেন, তার অতীত কি ভুলে গেছে বাংলাদেশের মানুষ? তিনি তো দলটিকে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিচালিত করতে পারতেন। করেননি কেন? করেননি এ জন্য, বাংলাদেশে মৌলবাদী রাজনীতির পা না চাটলে ভোট করা যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। এর অর্থ এই নয়, এ দেশে জঙ্গিবাদী রাজনীতি কায়েম করা যাবে।স¤প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক জন এম ওউয়েন, তার ‘কনফ্রন্টিং ইসলাম : সিক্স লেসেনস ফ্রম দ্য ওয়েস্ট’স পাস্ট’ বইতে পশ্চিমা বিশ্ব কিভাবে রাজনৈতিক ইসলামকে মোকাবেলা করবে, এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের আয়োজনে বইটি নিয়ে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে লেখক জন ওউয়েন তুলে ধরেন বইতে উল্লেখ করা বিভিন্ন বিষয়।তিনি বলেছেন, ‘আমি শুরু করতে চাই এই বলে যে ইসলামি জঙ্গিবাদ হচ্ছে বিস্তৃত একটি বিষয় যেমনটি আমরা অতীতের পশ্চিমা ইতিহাসেও দেখেছি- যাকে আমি বলি বহুজাতিক আদর্শগত সংঘাত-সমাজকে নেতৃত্বদানের প্রতিযোগিতা’। তিনি আরো বলেন, ‘১৯২৮ সালে মিসরে হাসান আল বানা প্রতিষ্ঠা করেন মুসলিম ব্রাদারহুড। তারা কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী সমাজ চলবে বলে ঘোষণা করে। ইরানেও একই রকমভাবে চরম ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর অভ্যুদয় ঘটে। শুরু হয় ইসলামপন্থী ও ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠীর দ্ব›দ্ব। গত কয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যে এ দ্ব›দ্ব চরম আকার রূপ নেয় যাতে ধর্মনিরপেক্ষদের চেয়ে ইসলামপন্থী উগ্র জঙ্গিবাদীরা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এক সময় তাদের নিজেদের মধ্যেকার বিভিন্ন দলের মধ্যে শুরু হয় অন্তর্কলহ যা চলছে এখনো’।তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান অবস্থা পশ্চিম ইউরোপের অতীতের অস্থিতিশীল অবস্থার পুনরাবৃত্তি নয় কিন্তু মিল রয়েছে। ইউরোপে যেমন সংগ্রাম, বিদ্রোহ বিদেশি হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটেছিল যার ঠিক পুনরাবৃত্তি নয় কিন্তু অনুরূপ চিত্র দেখা যাচ্ছে গত কয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যে’।তিনি বলেন, বৈধতার সংকট, আদর্শের সংগ্রাম, বিদেশি হস্তক্ষেপ, নেতৃত্বের দ্ব›দ্ব, বহুজাতিক আদর্শগত দ্ব›দ্ব বিদ্রোহ, এর সবই চলছে মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশে; যার শুরু চরমপন্থী ধর্মীয় গোষ্ঠী আর ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সংঘাতের মধ্য দিয়ে।অধ্যাপক জন এম ওউয়েন বলেন, ‘এভাবেই একবিংশ শতাব্দীতে ইসলামি মৌলবাদ আর ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠীর সংঘাত শুরু হয় যার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি দুর্বল হয় এবং ইসলামপন্থী জঙ্গিবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে’।দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে বাংলাদেশে ইসলামি জঙ্গিবাদের উত্থানের কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তিনি আশা করেন জঙ্গিবাদ বিরোধী শক্তির কাছে তারা টিকতে পারবে না।তিনি যুক্ত করেন, ‘আমি আশা রাখি বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিরোধী শক্তি ইসলামি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেবে। আমার একই আশাবাদ পুরো দক্ষিণ এশিয়ার বেলাতেও’। বাংলাদেশের মানুষ আশাবাদী। তারা জানেন, এই আঁধার থাকবে না। আলো উঠবেই। থামবেই সব কালোশক্তির থাবা।---------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ প্রকাশিত
false
rg
প্রথম আলো'র তামাশা ও ভণ্ডামি_ রুখে দাঁড়াও বিবেকবান।। রেজা ঘটক গত ২৬ এপ্রিল ২০১৩, শুক্রবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হল মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০১২-এর নাচাগানার জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান। সাভারের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন রানা প্লাজা ধসে পড়েছিল ২৪ এপ্রিল। উদ্ধার কাজ এখনো চলছে। ওই দুর্ঘটনার পর বৃহস্পতিবার সারা দেশে জাতীয় শোক দিবস পালিত হল। শুত্রবার সারা দেশে সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থণা হল। আর একই দিন শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রথম আলো করলো নাচাগানার অনুষ্ঠান। প্রথম আলো'র কর্তা ব্যক্তিদের কারো মাথায় কী জাতীয় এই শোকের সময় অমন একটি আনন্দ অনুষ্ঠান করার বিষয়ে কোনো বিরূপ অনুভূতি কাজ করেনি? তাদের একজন ব্যক্তিও কি ওই অনুষ্ঠানটি পিছিয়ে দেবার জন্যে আয়োজকদের বলেনি? আমি বিশ্বাস করতে চাই, অনেকে হয়তো বলেছিল। কিন্তু আয়োজকরা তাতে গা করেনি। ২০১২ সালের অনুষ্ঠান আরো এক মাস পিছিয়ে দিলেও কোনো সমস্যা হবার কথা নয়। কিন্তু বদলে যাও বদলে দাও শ্লোগানের প্রথম আলো বিতর্কিত সেই অনুষ্ঠানটি শুক্রবার সন্ধ্যায় করলো। অনুষ্ঠানে যারা গিয়েছিল এবং যারা বর্জন করেছিল সবার মনের কথা বুঝতে পেরে মতিউর রহমান গং-রা ওই অনুষ্ঠানকে এখন বলতে চাইছে ‘কনসার্ট ফর সাভার ভিকটিমস’। তামাশা আর চরম ভণ্ডামি একেই বলে। মিস্টার মতিউর রহমান, আপনি একদিন আগেই এই ঘোষণাটি দিতে পারতেন যে, ১৯৭১ সালে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর আদলে এ বছর মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০১২-এর অনুষ্ঠানটি হবে ‘কনসার্ট ফর সাভার ভিকটিমস’। আর যদি তাও হয়, সেই অনুষ্ঠান আরো পরে করাটা হতো বিবেকবান। কারণ, এখনো রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জীবিত মানুষের বাঁচাও বাঁচাও ক্ষীণ ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এখনো উদ্ধার কাজে যাঁরা আছেন, তাঁরা সবাই বলছেন, জীবিত প্রত্যেক মানুষকে উদ্ধার করাটাই সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে। যতোক্ষণ প্রাণের গুঞ্জন শোনা যাবে ততোক্ষণ অন্তঃত ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে উদ্ধার কাজ চলবে। তারপর সিমেন্ট সুরকি সরিয়ে ম্যাসিভ উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হবে। প্রথম আলো অন্তঃত একটি ঘোষণা দিতে পারতো অনুষ্ঠান শুরুর আগে- যে আজ আমরা কোনো নাচাগানা করব না। পুরস্কার বিতরণ হবে। কিন্তু অন্যান্য সকল বিষয়ের বদলে আমরা সাভার-দুর্গতদের জন্য মেরিল-প্রথম আলো তহবিল গঠন নিয়ে শুধু আলোচনা করব। কিন্তু প্রথম আলো তা করেনি। মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগে আগত সবাই সাভারে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করে শোক প্রকাশ করেন। তারপর চতুর মতিউর রহমান আগত শিল্পী ও দর্শকদের চেহারা ও মনের কথা বুঝতে পেরে ওই অনুষ্ঠানকে নামকা-ওয়াস্তে ‘সাভার-দুর্গতদের জন্য সংস্কৃতি’ অনুষ্ঠান ঘোষণা দিয়ে ৫৪ লাখ টাকার একটি তহবিল সংগ্রহ করলেন। কিন্তু জাতীয় এই বিপর্যের সময় অনুষ্ঠানে থেমে থাকেনি নাচাগানা! অথচ ১১ বছর পর দেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৮ম বাংলাদেশ গেমস। সাভার দুর্ঘটনার কারণে ৮ম বাংলাদেশ গেমসের জাঁকজমকপূর্ণ সমাপনী অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করতে চাই, যারা মেরিল প্রথম আলো অনুষ্ঠানে গিয়ে সাভার দুর্গতদের জন্যে সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছেন, তারা সবাই প্রথম আলো'র যে কোনো উপায়ে সাভার দুর্গতদের জন্য সাহায্যের আবেদন করলে আরো বেশি সাড়া দিতেন। ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর বরগুনায় দুর্গত মানুষদের পাশে প্রথম আলো বন্ধুসভা যেভাবে কাজ করেছিল, তা আমার এখনো মনে আছে। লেখক আনিসুল হক (আনিস ভাইকে)-কে তখন দুর্গত এলাকায় আবিষ্কার করে আমার যে অনুভূতি হয়েছিল, শুক্রবারের মেরিল প্রথম আলো'র অনুষ্ঠানে সেই আনিস ভাইকে নতুন কৌশলে মোটেও মানান সই লাগেনি। এমন কি আনিস ভাই'র ২৭ এপ্রিল ২০১৩ দৈনিক প্রথম আলো'তে 'সাভার-দুর্গতদের পাশে শিল্পীরা তহবিলে ৫৪ লাখ টাকা': ''আসুন, পাশে দাঁড়াই'' শিরোনামে লেখাটিও একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে যে লেখা, ব্যক্তিগত ভাবে আমার তাই মনে হয়েছে। অনুষ্ঠান না করে ওই লেখাটি পত্রিকায় আসলে আমার আরো ভালো লাগত। সাভার দুর্গতদের পাশে সবাই দাঁড়াবেন এটা এখনো আমি বিশ্বাস করতে চাই। সাভার দুর্ঘটনা নিয়ে এখন অনেকে হয়তো রাজনীতি করবে, তাও আমাদের এখন দেখতে হবে। কিন্তু কয়েক দিন গেলেই বাংলাদেশে এই দুর্গত মানুষদের কথা সবাই ভুলে যাবে, তাও সত্যি। প্রথম আলো 'মেরিল প্রথম আলো পুরষ্কার ২০১২' অনুষ্ঠান আয়োজন করে একটি খারাপ উদাহরণ সৃষ্টি করলো। 'রোম পুড়ছে নীরু বাঁশি বাজাচ্ছে' এই বাগধারাটি এখন প্রথম আলো'র জন্যেও প্রযোজ্য। দেশের জাতীয় বিপর্যের মধ্যেও প্রথম আলো নাচাগানা করতে পারে। মিস্টার মতিউর রহমান, আপনি আরেকটু বিবেকবান হবার চেষ্টা করুন। নইলে বদলে যাও বদলে দাও শ্লোগানটি ঠিক আপনাদের সকল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে মানায় না। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, প্রথম আলো 'মেরিল প্রথম আলো'র নাচাগানার আনন্দানুভূতি' ভুলে সাভার দুর্গত মানুষের জন্যে আরো বেশি সক্রীয় থাকবেন। হৃদয় দিয়ে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। যেমনটি তারা এর আগে দেশের অনেক জাতীয় বিপর্যয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল, তেমনি ভাবে বিবেকের তাড়নায় মানুষের পাশে দাঁড়াবেন, এটাই প্রত্যাশা করি। মেরিল প্রথম আলো অনুষ্ঠানের শেষে নাকি চঞ্চল চৌধুরী গেয়েছিল ভূপেন হাজারিকার ‘মানুষ মানুষের জন্য’ গানটি। এই গানটি মানুষের হৃদয়ে যদি বেজে থাকে তাহলে হয়তো আমরা আরো অনেক স্বপ্ন দেখতে সাহস পাব। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উৎসাহ পাব। কিন্তু জাতীয় বিপর্যের সময় ঘটা করে আনন্দ অনুষ্ঠান করে এই গান গাওয়ার মধ্যে কোনো মহত্ব নাই। সাভার দুর্গত মানুষদের সাহায্যের জন্য গঠিত মেরিল প্রথম আলো সাহায্য তহবিলে অনেকেই সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছেন, তাদের জাগ্রত বিবেককে আমি সাধুবাদ জানাই। টাকার অংক না বলে সাহায্যে অংশগ্রহনের ঘোষণা দিয়ে শিল্পী জয়া ও জাহিদ হাসান আরেকটি উদাহরণ সৃষ্টি করলেন। তাদের প্রতি আমি সত্যি কৃতজ্ঞ। কারণ, আনিস ভাইয়ের লেখায় দেখলাম, টাকার অংক আর শিল্পীর মর্যাদার একটি ক্রম অনুসরণ করা হয়েছে। অন্তঃত দুইজন শিল্পী এই ক্রমের উর্ধ্বে উঠতে পেরেছেন বলে আমার ধারণা। সবশেষে মিস্টার মতিউর রহমান সাহেবের কাছে ছোট্ট একটি প্রশ্ন- মেরিল প্রথম আলো পুরষ্কার ২০১২-এর অনুষ্ঠান করতে ২০১৩-এর প্রায় চার মাস পেরিয়ে গেল কেন? ২০১২-এর অনুষ্ঠান কী ২০১২-এর মধ্যে শেষ করা যেতো না? প্রথম আলো'র যে দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মীবাহিনী আছে, তাদের নিয়ে যদি উক্ত অনুষ্ঠান করতে প্রথম আলো'র চার মাসের মতো বেশি সময় লাগে, তখন বাংলাদেশে অন্যান্য যে সকল অনুষ্ঠান বা বিষয়গুলো দেরিতে বাস্তবায়ন হয়, সেগুলো কি পরোক্ষভাবে হলেও দেরিতে করার প্রশ্রয় পায় না? কিংম্বা এই রীতি চালিয়ে যাবার জন্যে উৎসাহিত হয় না? 'সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়' কথাটি কেন যেনো বার বার মনে পড়ছে প্রথম আলো'র এই তামাশা ও ভণ্ডামি দেখে। সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:৩৬
false
fe
দেউলিয়াপনার জাতীয়তাবাদী চেহারা দেউলিয়াপনার জাতীয়তাবাদী চেহারাফকির ইলিয়াস============================================এমন মিথ্যে কাণ্ডগুলো করার কি কোনো দরকার ছিল? বিদেশের সার্টিফিকেট নিয়ে কি রাজনীতি করা যায়? এমন অনেক প্রশ্ন। শেষ পর্যন্ত বিএনপি তাদের দেউলিয়াপনার জাতীয়তাবাদী চেহারা দেখিয়েছে। তারা কাজে প্রমাণ করেছে, যেভাবে মিথ্যা বেসাতির ওপর দলটি গড়ে উঠেছিল, এখনো তারা সেই পর্যায়েই আছে। বরং আরো নাজুক হয়েছে তাদের দলভিত্তি। খুবই অবাক করা বিষয়, বিএনপি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এমন কেউ কেউকে দলের সম্মানজনক পদ দিয়েছে, যারা বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আসামি। এদের একজন জাহিদ এফ সর্দার। নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ঠিকানা ও বার্তা সংস্থা এনা’র অনুসন্ধানে যে তথ্য বেরিয়ে এসেছে তা ভয়াবহ।ব্যাংকের সঙ্গে পৃথক ২৭টি প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তারের পর দোষ স্বীকার করেছেন এই জাহিদ এফ সর্দার। প্রতারণার এসব ঘটনা ঘটেছে ফ্লোরিডা এবং আরিজোনায়। এই সর্দার দোষ স্বীকারের সবগুলো মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন ফ্লোরিডার মিডল ডিস্ট্রিক্টে অবস্থিত ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে। ২০০৯ সালের ১০ নভেম্বর এ আপিল মামলার রায়ে ৩ সদস্যের সার্কিট জজ (কারনেস, মারকাস এবং প্রিয়র) স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তাকে প্রতারণার জন্য যে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে তা যথার্থ ছিল। পুরো নাম সর্দার জাহিদ ফারুক। আরিজোনায় ব্যাংকের সঙ্গে প্রতারণার সময় তিনি কখনো সর্দার জাহিদ ফারুক, কখনো সর্দার ফারুক, কখনো এস ফারুক, কখনো এফ ফারুক আবার কখনো সর্দার ফারুক এবং ফারুক সর্দার নাম ধারণ করেছেন বলে কোর্টের নথিতে দেখা গেছে। এই সর্দার জাহিদ ফারুক বাস করতেন আরিজোনার ফিনিক্স সিটিতে। ফ্লোরিডায় তার আবাস হচ্ছে ওরল্যান্ডোতে। কখনো কখনো মায়ামি এবং জ্যাকসনভিলের ঠিকানাও ব্যবহার করেছেন। মামলার নথিতে তার জন্ম তারিখও দুটি। একটি হচ্ছে ১৯৭৬ সালের ১২ মার্চ। অপরটিতে ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ। মামলার নথি অনুযায়ী, প্রতারণার ঘটনায় সর্বপ্রথম তিনি গ্রেপ্তার হন ১৯৯৮ সালের ৪ জুন। ফ্লোরিডার আল্টামন্টে স্প্রিং পুলিশ ডিপার্টমেন্ট তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসেও তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তার কয়েদি নম্বর ছিল এ০০৮৬৮২১। এই লোকটি রীতিমতো মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে আরো বড় একটি অপরাধ করেছেন। যার জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে মার্কিনি প্রশাসন।ভাবতে অবাক লাগে ২০১৩ সালের নভেম্বরে বিএনপির বিশেষ দূত ও উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল এই জাহিদ এফ সর্দারকে। দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল দলের পক্ষে বিদেশি ক‚টনীতিক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ ও লবিং করার। তারই অংশ হিসেবে দলের হয়ে কংগ্রেসম্যানদের নামে ভুয়া বিবৃতি ঢাকায় পাঠিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন এই জাহিদ এফ সর্দার। ভুয়া বিবৃতি তৈরি ও স্বাক্ষর জালিয়াতির তথ্য-প্রমাণে লেটারহেডে জাহিদ বিবৃতিটি তৈরি করে ঢাকায় পাঠিয়েছেন সেটির সঙ্গে পরে ওই বিবৃতির কথা অস্বীকার করে যুক্তরাষ্ট্রের কমিটি ফর ফরেন অ্যাফেয়ার্স যে লেটারহেডে বক্তব্য পাঠিয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন বলে উঠে এসেছে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডটকম-এর অনুসন্ধানে। ওয়ান হান্ড্রেড থার্টিনথ কংগ্রেস নামে যে লেটারহেডটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি নিঃসন্দেহে পুরনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ। এই কংগ্রেসের মেয়াদ শুরু হয় ২০১৩ সালের ৩ জানুয়ারি যা শেষ হয় ২০১৫ সালের ৩ জানুয়ারি। এ কথা স্পষ্ট করেই বলা যায় যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানরা কোনোভাবেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে লেটারহেডে এই বিবৃতি পাঠাবেন না। গত ৬ জানুয়ারি ২০১৫ ছিল নবনির্বাচিত ১১৪তম কংগ্রেসের অভিষেক। অভিষেকের পর কংগ্রেস সদস্যরা ১১৩তম কংগ্রেসের লেটারহেডে স্বাক্ষর করবেন না তাও নিশ্চিত করে বলা যায়।জাহিদ এফ সর্দার সাদি যে প্যাডে তার নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে বিবৃতি লিখেছেন পাঁচ কংগ্রেসম্যান ও এক কংগ্রেস ওম্যানের স্বাক্ষর কিন্তু সেই প্যাডে ছিল না। স্বাক্ষর সংবলিত অংশটি গ্রেফ সাদা কাগজের। আর তার ওপরে শুধু এটুকুই লেখা ‘জানুয়ারি ০৭, ২০১৫ পেজ টু’। কংগ্রেসের সদস্য এলিয়ট এল এঞ্জেল, এডওয়ার্ড আর রয়েস, স্টিভ চ্যাবট, জোসেফ ক্রাউলি, জর্জ হোল্ডিং ও গ্রেস মেং’র নাম ও স্বাক্ষর রয়েছে তাতে। প্রশ্ন হচ্ছে এই স্বাক্ষর তারা কিভাবে দিলেন। আর একটি সাদা পাতায় কেনই স্বাক্ষর দিলেন। আর এদের সবাইকে একসঙ্গে কোথায় পাওয়া গেল। এদের মধ্যে ক্রাউলি, মেং ও এলিয়ট নিউইয়র্কের, রয়েস ক্যালিফোর্নিয়ার, চ্যাবট ওহাইওর, হোল্ডিং নর্থ ক্যারোলিনার। আর জাহিদ এফ সর্দারের বাস ফ্লোরিডায়। ক‚টনৈতিক অভিজ্ঞজনরা মনে করছেন, গ্রেফ জালিয়াতি করেই অনলাইনে পাওয়া ইলেক্ট্রনিক স্বাক্ষর নিয়ে, ফটোশপে কাজ করে এই বিবৃতি তৈরি করা হয়েছে।কে এই জাহিদ এফ সর্দার সাদি? ফেসবুকে তার একটি নিজস্ব পেজ রয়েছে তাতে উল্লেখ রয়েছে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির বিশেষ উপদেষ্টা ও বিদেশ দূত। এ ছাড়া তিনি ফ্লোরিডার ওরল্যান্ডোতে কোয়ালিটি গ্রুপ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট ও সিইও। এটা নিশ্চিত বিএনপির গঠনতন্ত্র মতে, দলের কোনো উপদেষ্টার পদ নেই। তবে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদ রয়েছে। কিন্তু জাহিদ এফ সর্দার সাদি নিয়োগ পেয়েছেন দলের উপদেষ্টা হিসেবে। সে নিয়োগ দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর তার স্বাক্ষরিত নিয়োগপত্রটির কপি অনুয়ায়ী এতে ফখরুল স্পষ্ট করে লিখেছিলেন, দলের চেয়ারপারসনের নির্দেশেই জাহিদ এফ সর্দারকে বিএনপির উপদেষ্টা ও বিদেশ দূত হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলো। তিনি এও লিখেছিলেন, জাহিদ এফ সর্দারের কাজ হবে বিদেশি ক‚টনীতিক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ ও লবিং করা। এ কাজে জাহিদ সর্দারের সাফল্যও কামনা করেছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।আরেকটি ঘটনা বিএনপিকে ফেলেছে নাজুক পরিস্থিতিতে। বিজেপির প্রধান অমিত শাহ ফোন করেছিলেন, এই মিথ্যা কথা বলে লাইমলাইটে আসতে চেয়েছে দলটি। প্রথম কথাটি হলো, একটি দলপ্রধান আরেকটি রাজনৈতিক দলপ্রধানের খোঁজখবর নিতেই পারেন। আমরা যখন প্রথম খবরটি শুনি, তখন খুশিই হয়েছিলাম। পরে জানা গেল সবই ভুয়া। এর কারণ কি?আমরা সবসময় দেখি, বিএনপি-জামায়াতিরা ভারত বিদ্বেষী কথা বলে। ‘ভারত নিয়ে নিল’ এমন একটা হুজুগ ও জুজুর ভয় তারা সবসময়ই দেখায় বাংলাদেশের মানুষকে। এখন অমিত শাহ হঠাৎ তাদের এত পেয়ারা হয়ে উঠলেন কেন? যা কিনা মিথ্যা বলে ভারতের একটি রাজনৈতিক দলপ্রধানের নাম বিক্রি করতে হবে! একটু পেছনে ফিরে দেখা যাক। খালেদা জিয়া রাষ্ট্রীয়ভাবে ভারত সফরে গিয়েছিলেন ২০০৬ সালে। বেগম খালেদা জিয়া কী এনেছিলেন সে সময়ে?২০০৬ সালের ২০-২২ মার্চ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ সময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, খালেদা জিয়া ভারত সফর করেন। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত সে সফর নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছিল দুদেশেই। তখন দুদেশের মধ্যে দুটি গতানুগতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এগুলো হচ্ছে মাদক পাচার বা চোরাচালান রোধে সহযোগিতা চুক্তি এবং বাণিজ্য উন্নয়ন চুক্তি। বাংলাদেশের জনগণ আশা করেছিল, গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা ও তিস্তা চুক্তিসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ, বাণিজ্য ঘাটতি ও তিন বিঘা করিডোরসহ অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সুরাহা না হলেও আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। অথচ সে সময় এ ইস্যুগুলো বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উত্থাপনই করা হয়নি। খোদ সরকারের কাছে বিষয়গুলো উপেক্ষিত থাকায় ওই সফরের যৌথ বিবৃতিতেও দুদেশের মধ্যকার এক নম্বর সমস্যা অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন নিয়ে একটি শব্দও স্থান পায়নি। এমনকি ওই সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী পানিমন্ত্রী বা কোনো পানি বিশেষজ্ঞও ছিলেন না। আরো বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, খালেদা জিয়ার ভারত সফরের সময় সীমান্ত সমস্যা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছিল কিনা যৌথ বিবৃতিতে তারও উল্লেখ ছিল না। অথচ প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু সীমান্ত সমস্যা। ওই সফরের আগে তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব হেমায়েত উদ্দিন কিন্তু বেশ ঘটা করেই সংবাদ সম্মেলনে এসব ব্যাপারে আলোচনা হবে বলেই জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতেও হেমায়েত উদ্দিন ওই সফরকে ফলপ্রসূ বা সম্পর্কের টার্নিং পয়েন্ট বলে গেছেন। তবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নে ওই সফর এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে এ কথা বলতে পারেননি। উপরন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কোনো সংবাদ সম্মেলনে সফরের প্রাপ্তির কথা জানাননি। স্বভাবতই ওই সফরের সময় শীর্ষ বৈঠকের পরদিন সংবাদপত্রগুলোর শিরোনাম ছিল ‘নিরাপত্তা বাণিজ্যসহ সব বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার’, ‘শুভেচ্ছাতেই সীমাবদ্ধ সফর’, ‘বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য চুক্তি সই : খালেদা-মনমোহন বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে মতৈক্য’, ‘বাংলাদেশের প্রাপ্তি শূন্য’ ইত্যাদি।২০১০ সালে ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময়ে যে চুক্তিগুলো হয় তার খতিয়ান একটু দেখা দরকার। শেখ হাসিনার ওই সফরে সন্ত্রাস দমনে তিন চুক্তি এবং বিদ্যুৎ আমদানি ও সাংস্কৃতিক বিনিময় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল। আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছিল দ্বিপক্ষীয় সব ইস্যু। ভারতের পক্ষ থেকে আশ্বাস মিলেছিল অর্থনৈতিক ও সমস্যা সমাধানে সহযোগিতার।প্রধান চুক্তি তিনটি ছিল- ১. অপরাধ দমনে পারস্পরিক আইনগত সহযোগিতা চুক্তি ২. সাজাপ্রাপ্ত আসামি হস্তান্তর চুক্তি এবং ৩. আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস দমন ও মাদক পাচার প্রতিরোধ চুক্তি। এ ছাড়া বিদ্যুৎ আমদানি ও সাংস্কৃতিক বিনিময় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এ সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে ভবিষ্যতে ভারত থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। এ ছাড়াও ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে নদী খনন, রেল ও সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে ১০০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তার ঘোষণা দেয়া হয়। কোনো একক দেশকে ভারতের এই বিপুল আর্থিক সাহায্য দেয়ার ঘটনা এটাই ছিল প্রথম।তারপরও বিএনপি-জামায়াত বলেছিল, শেখ হাসিনা দেশ বিক্রি করে এসেছেন। ভারতের বাজারে বাংলাদেশের আরো ৪৭টি পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার করার অনুমতি দিয়েছিল এবং নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য স¤প্রসারণে ট্রানজিট দেবে বলেছিল ভারত। ওই সফরের সময় টিপাইমুখ প্রকল্প ও তিস্তা নদীসহ বিভিন্ন অমীমাংসিত ইস্যু সমাধানে ফলপ্রসূ আলোচনা ও আশ্বাসও মিলেছে।ওই বৈঠকে টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হলে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর কিছু করবে না ভারত। ড. মনমোহন সিং আরো আশ্বাস দেন, বাংলাদেশ থেকে অধিকসংখ্যক পণ্য ভারতে প্রবেশাধিকার দেয়া হবে। শীর্ষ বৈঠকে ঐকমত্য হয়েছিল, সীমান্ত ব্যবস্থাপনার বিষয়ে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপকে সক্রিয় করা হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর শেষে গত ১২ জানুয়ারি ২০১০ প্রদত্ত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ঘোষণায় উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে সহযোগিতার অঙ্গীকার করা হয়। আমরা ভুলে যাইনি, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন গতি লাভ করে। ক্ষমতায় এসেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দেব গৌড়ার সঙ্গে আলোচনায় বসেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে চুক্তি সম্পাদিত হয়।অন্যদিকে বাংলাদেশের মৌলবাদী-ডানপন্থী দলগুলো হরহামেশাই ‘ইনডিয়া’র বিরুদ্ধে বিষোদগার করে গেছে। এখনো করছে। এমন কি ভারতীয় নেতাদের নাম বিক্রি করেও প্রকাশ করছে নিজেদের দেউলিয়াপনা। বিএনপি-জামায়াত যে ক্ষমতায় যাওয়া ও যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবার জন্য মরিয়া তার আরেকটি প্রমাণ হলো বিশ্ব ইজতেমার সময়ও দেশে অবরোধ বহাল রাখা। আন্দোলন আওয়ামী লীগও করেছে। কিন্তু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে হীন স্বার্থের রাজনীতি আওয়ামী লীগ করেনি। বিশ্ব ইজতেমাকে ‘পিকনিক’ বলেছে মৌলবাদী দালালরা আগেই। এগুলো মূলত বিএনপির রাজনীতিতে পেরেক ঠুকেছে।------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ১৭ জানুয়ারি ২০১৫ প্রকাশিত
false
ij
বিপর্যস্ত গাজা উপত্যকা_ রক্তাক্ত ইনতিফাদা_ মুমূর্ষ এই শিশুটিকে দেখুন। শিশুটির মাথায় রক্ত। এইই ফিলিস্তিনী শিশুদের নিয়তি! তারা প্রায়শ ইজরেলি বুলেটের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত হয়। তাদের রাস্তায়, গলিতে বারুদের গন্ধ। গুলির শব্দ শুনে ঘুম ভাঙ্গে তাদের। কখনও মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় হানাদার ইজরেলি বোমারু বিমানের শব্দে। এই অসহায় শিশুরা জানে না-তাদের হত্যা করার জন্য অস্ত্র সরবরাহ করে লাভবান হয় মার্কিন অস্ত্রব্যবসায়ীরা। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকাটির আয়তন চতুস্কোন। চতুস্কোন উপত্যকাটির মাঝখানে গাজা শহরটি অবস্থিত। গাজা শহরের তিন মাইল পশ্চিমে ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল। গাজা উপত্যকার দক্ষিণে রাফা- মিশরের সীমান্ত; উত্তর-পুবে ইজরেল। দুটি মহাদেশের সংযোগ স্থলে অবস্থিত বলে প্রাচীন কাল থেকেই গাজা উপত্যকাটি ছিল যুদ্ধবিগ্রহের এক রক্তাক্ত ক্ষেত্র। গাজা শব্দটি হিব্রুতে 'আজজা'। ওল্ড টেস্টামেন্ট অনুযায়ী আজজার আদি অধিবাসীরা ছিল আভিটেস জাতির। জাতিটি যদিও পরে লুপ্ত হয়ে যায়। ইহুদিদের দাবী অনুযায়ী ঈশ্বর (ইয়াওয়ে) যে ভূখন্ডটি ইস্রাইলের সন্তানদিগকে দান করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন- ‘আজজা’ তারই অন্তভূর্ক্ত। আজজার দক্ষিণেই ছিল প্রাচীন কেনান প্রদেশ-যে প্রদেশ অভিমূখে যাত্রা করতে ঈশ্বর কর্তৃক আদিষ্ট হয়েছিলেন মেসোপটেমিয়া উর নিবাসী হযরত ইব্রাহিম (আ.)। প্রতিশ্রুত ভূমি বলেই কালক্রমে হিব্রুভাষী জুদাহ গোত্র আজজা দখল করে নিয়েছিল। আজজায় ফিলিস্তিনি জাতি প্রবেশ করে ১২০০ খ্রিস্টপূর্বের দিকে । কারও কারও মতে ফিলিস্তিনি জাতির আদি বাসস্থান ছিল ভূমধ্যসাগরীয় ক্রিট দ্বীপে। একটি ইহুদিসূত্র লিখেছে-Just to set the factual and historical record straight, the Philistines were a Mediterranean seafaring nation that is completely extinct today. They are not one and the same people as the Arab nation and people calling themselves "Palestinians" today. These Arabs are the descendants of Ishmael. The name "Palestine" and "Palestinians" evolved from the name Philistia, which was given to the area by the Roman conquerors as an insult to the Jewish people (named for the tribe of Judah and area of Judea). The name has been hijacked by the Arabs to lay a false claim to a land that does not belong to them Biblically, historically, legally, morally or rightfully. Click This Link যা হোক। ফিলিস্তিনিরা আজজায় প্রবেশ করার পর আজজার নাম পরিবর্তিত হয়ে হয়: গাজা। গ্রিক সম্রাট আলেকজান্দা যখন গাজা উপত্যকায় সসৈন্য এলেন তখন গাজাবাসী তাঁর বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল । পরে অবশ্য মিশরের টলেমিদের অধীন চলে যায় উপত্যকাটি। তারপর ইহুদি হাসমোনেয়ানরা উপত্যকটি গ্রিকদের কবল থেকে উদ্ধার করে। সময়টা ১৪৫ খ্রিস্টপূর্ব। এর আরও কিছুকাল পর গাজা চলে যায় রোমানদের দখলে । বাইজানটিয়াম শাসনামলে গাজা হয়ে ওঠে ইহুদিদের প্রধান তীর্থকেন্দ্র। এখনও তিরিশটির বেশি ইহুদি উপাসনালয় (সিনাগ্যগ) রয়েছে গাজায়। ৬৩৫ সালে আরবরা গাজা আক্রমন করে। সেই আগ্রাসন ঠেকাতেও তুমুল যুদ্ধ হয়েছিল। অবশ্য, আরবদের কাছে গাজা শহরের পতন হতে সময় লাগেনি। তারপর থেকেই থেকেই গাজায় আরব মুসলমানদের বাস। দশম-একাদশ শতকে ক্রসেডের সময় গাজা উপত্যকা হয়ে ওঠে রক্তাক্ত। তেরো শতক থেকেই অটোমান তুর্কিরা গাজা শাসন করেছিল। সে সময় যথেস্ট উন্নতি হয়েছিল গাজার;বিশেষ করে ইহুদিদের। ইহুদিদের সে উন্নত অবস্থা ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকেও অব্যাহত ছিল। ১৭৯৯ সালে ফরাসী সম্রাট নেপোলিয়ন সসৈন্য কিছুকাল গাজায় অবস্থান করেছিলেন। উনিশ শতকে গাজা শহরের অবক্ষয় স্পস্ট হয়ে ওঠে। শহরটিতে তখন অবশ্য ইহুদি ব্যবসায়ীরা ছিল; তারা বেদুঈনদের কাছ থেকে বার্লি কিনে রপ্তানি করত ইউরোপে -বিয়ার কারখানার জন্য। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় গাজা ছিল তুর্কিদের শক্তিশালী ঘাঁটি। তারপর ব্রিটিশরা দখল করে নেয় গাজা। ১৯২৯ সালে আরব ও ইহুদিদের মধ্যে ভয়াবহ দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। যার পরিনতিতে ইহুদিরা গাজা ত্যাগ করে চলে যায়। আরব-ইজরেল সংঘাত সেই শুরু। যার জের এখনও চলছে। ২ ১৯৪৬ সালে গাজার জনসংখ্যা ছিল ১৯,৫০০। ৭২০ জন খ্রিস্টান বাদে সবাই ফিলিস্তিনি আরব মুসলিম। মনে থাকার কথা-৬৩৫ সালে আরবরা গাজা আক্রমন করে। সেই আগ্রাসন ঠেকাতেও তুমুল যুদ্ধ হয়েছিল। অবশ্য, আরবদের কাছে গাজা শহরের পতন হতে সময় লাগেনি। তারপর থেকেই থেকেই গাজায় আরব মুসলমানদের বাস। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ সৈন্যরা ফিলিস্তিন ছেড়ে চলে যায়। প্রতিষ্ঠিত হয় ইজরেল রাষ্ট্রটি। ফিলিস্তিনরা বাধ্য হয় নবাগত ইহুদিদের জন্য জাফা এবং বেরশেবা ছেড়ে দিতে। নির্বাসিত ফিলিস্তিনি আরবরা গাজা উপত্যকার শরনার্থী শিবিরে এসে বসবাস করতে থাকে। যে কারণে গাজার জনসংখ্যা বেড়ে যায়। এর পর গাজায় জারি হয় মিশরীয় সামরিক শাসন। যদিও মিশর গাজার মুসলিম অধিবাসীদের নাগরিকত্ব দেয়নি! ১৯৬৭ । মিশরের সঙ্গে ৬ দিনের যুদ্ধের সময় ইজরেলি সৈন্যরা গাজা দখল করে নেয়। ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল অবধি গাজা দখলে রাখে ইজরেলিরা। ফিলিস্তিনি আরবদের ওপর দমন পীড়ন চালায়। ১৯৯৪ সালে ইজরেলিরা গাজা ছেড়ে চলে যায়। তারপর ১৯৯৪ থেকে গাজা ছিল ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে। ৩ ইনতিফাদা অর্থ: ‘পাথরের যুদ্ধ’। ইনতিফাদা বলতে অবশ্য ফিলিস্তিনীদের ব্যাপক গনঅভ্যূত্থানকে বোঝায়। প্রথম ইনতিফাদাটি সংঘটিত হয় ১৯৮৭ -১৯৯৩ সালে: যখন ফিলিস্তিনের জাবালিয়া শরনার্থী শিবিরে ইজরেলি সৈন্যরা গনহত্যা চালায়। ফিলিস্তিনি গনঅভ্যূত্থান গাজাসহ ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক ও পূর্ব জেরুজালেমে ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময়ই-অর্থাৎ ১৯৮৭ সালে গাজায় ‘হামাস’ গঠিত হয়। হামাস আসলে মিশরীয় মুসলিম ব্রাদারহুডেরই একটি শাখা। হামাসের প্রতিষ্ঠাতা তিনজন:শেখ আহমেদ ইয়াসিন, আবদুল আজিজ আল রানতিসি ও মোহাম্মদ তাহা। হামাসের পুরো নাম-‘হারাকাত আল মুকাওয়ামাত আল ইসলামিয়া।’ বাংলায় ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন। এটি একটি রাজনৈতিক দল হলেও পশ্চিমের চোখে ফিলিস্তিনি সুন্নী প্যারামিলিটারি সংগঠন । সামাজিক সেবামূলক কাজেও হামাস জড়িত। এরা গাজায় হাসাপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করে ফিলিস্তিনি জনগনের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ২০০৭ এ হামাস গাজার নিয়ন্ত্রন গ্রহন করে।Hamas' charter calls for the destruction of the State of Israel and its replacement with a Palestinian Islamic state in the area that is now Israel, the West Bank, and the Gaza Strip. Hamas describes its conflict with Israel as political and not religious or antisemitic.However, its founding charter, writings, and many of its public statements reflect the influence of antisemitic conspiracy theories. স্বাভাবিক কারণেই দখলদার ইজরেলের প্রতি বৈরী বলে হামাস ইজরেলি ভূখন্ড অর্ন্তঘাতমূলক তৎপরতা অব্যাহত রাখে ও প্রায়ই ইজরেলি ভূখন্ড লক্ষ করে রকেট নিঃক্ষেপ করে; যার জের ধরে ইজরেল গাজা উপত্যকায় বোমা বর্ষন অব্যাহত রাখে। ইজরেলি ভূখন্ড লক্ষ করে হামাস গেরিলাদের রকেট নিঃক্ষেপের প্রতিক্রিয়াসরুপ গত সপ্তাহজুড়ে গাজা উপত্যকায় জঙ্গি বিমান থেকে বোমা বর্ষন করেছে ইজরেল। গত ৩ জানুয়ারি রাত্রে ইজরেলি সৈন্যরা ট্যাঙ্ক বহর নিয়ে ঢুকে পড়েছে গাজা উপত্যকায়। কী এর সমাধান? এই অনন্ত ইনতিফাদার? দুপক্ষের এই ব্যাপক বিদ্বেষের? আরও জানতে হলে- http://www.slate.com/id/2182754/ Click This Link সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:১৬
false
hm
প্রবাসে দৈবের বশে ০৬০ বলাই আর বলাইনী চলে গেলেন কাসেল ছেড়ে। কাসেল শহরে আমাদের অল্প কয়েকজনের একটা নিরিবিলি সমাবেশ ছিলো, এক এক করে চলে গেলেন অনেকেই। মুনশি চলে গেলেন গত গ্রীষ্মে আরো দক্ষিণে, রেহমান চলে গেলেন হেমন্তে, আরো পূর্বে। বলাই তাই বোধ করি উত্তরে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। পশ্চিম দিকটার দিকে তাকিয়ে মাঝে মাঝে মনে হয়, আমার গন্তব্য হয়তো সেদিকেই। একটা গোছানো সংসার একেবারে ঝেড়েঝুড়ে সরিয়ে নতুন জায়গায় স্থিত হওয়ার ব্যাপক হাঙ্গামা, সেটা আবারও টের পেলাম বহুদিন পর। বলাই আক্ষরিক অর্থেই সবকিছু ফেলে দিয়ে গেছেন। আমরা গণিমতের মালের মতো নিজেদের যা দরকার টেনেটুনে নিয়ে এসেছি, বাকি সবকিছু বয়ে এনে ফেলে দিতে হয়েছে। এই ফেলে দেয়ার জন্যে আবার দস্তুরমতো পয়সা দিয়ে দরখাস্ত করতে হয়। নগর পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা জায়গা নির্দিষ্ট করে রাখেন, সেখানে গিয়ে মালসামানা গুণে গুণে ফেলে মালপিছু ইউরো গুণে দিতে হয়, মহা ভ্যাজাল। আর টুকিটাকি বহু জিনিস আবর্জনার বাক্সে ফেলা হয়েছে। বলাই চলে গেছেন বলেই আমার অবশেষে একটা বৌবালিশ জুটেছে। একেবারে গ্যাদাকাল থেকেই আমি একাধিক বালিশকে শয্যাসঙ্গিনী হিসেবে পেয়ে অভ্যস্ত, আর জার্মানদের পালকের বালিশকে আমি বালিশ হিসাবে স্বীকৃতি দেই না। জার্মানিতে এসে বলাইয়ের কল্যাণেই একখানা দেশী কনফিগারেশনের বালিশ পেয়েছিলাম, সংসার তছনছ হয়ে যাবার পর বলাইনীকে বললাম, এইবার একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে, আর কত রাত একা থাকবো? বলাইনী দেখলাম দাঁত কিড়মিড় করে প্রচুর কোলবালিশ, পাশবালিশ, কানবালিশ, ঠ্যাংবালিশ আর গোটা তিনেক কম্বল সব সম্প্রদান কারকে তুলে দিলেন আমার হাতে। ধরা গলায় বললেন, ওদের দেখে শুনে রাইখেন হিম্ভাই, অযত্ন কৈরেন্না, আর মাঝেমধ্যে ধুইয়েন! আমিও ছলোছলো প্রতিজ্ঞা করে জানালাম, এরা আমার সম্পত্তি নয়, এরা আমার সম্পদ। আমি জিনিসপত্রের অপচয় দেখে অভ্যস্ত নই। আমাদের বাসায় সবসময়ই দেখেছি জিনিসপত্র রিসাইকেলড হতে। তাই বলাইয়ের অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে যা কিছু বহনযোগ্য, সবই আমরা কাসেলের বাকিরা আলগাইতে-পারলে-লয়া-যামু নীতির ভিত্তিতে ভাগাভাগি করে নিয়ে গেছি। যেমন আমি এখন মনে হয় শ'খানেক হ্যাঙ্গারের মালিক। বলাইনীর সন্দেহ আমি অচিরেই বিয়েশাদী করবো কিংবা কোনো বান্ধবী জুটিয়ে যুগলজীবনযাপন শুরু করন ঘটন হওয়াবো, নাহলে এতো হ্যাঙ্গার দিয়ে করবোটা কী? বলাই একগাদা জামাকাপড়ও ফেলে দিতে চান, সেগুলি তিনি বয়ে নিয়ে যেতে পারবেন না। আমাকে ফিতা দিয়ে মেপেটেপে বললেন, ভুঁড়িটা ফেলে দিতে পারলে তার সব শার্টই আমাকে ঘ্যাম ফিট করবে। আমি নিজেও একগাদা শার্ট বয়ে এনেছি দেশ থেকে, কিন্তু সেগুলি পরা হয় না, উপরন্তু বলাইয়ের পাট করা শার্টের স্তুপ এখন আমার শ্রাঙ্কে। এমনকি আমার পানি গরম করার হিটারটা একটু হেজেমোনি শুরু করায় বলাইয়ের হিটারটাও আরো কিছু রান্নার সরঞ্জামাদিসহ বায়তুল মাল থেকে নিয়ে এসেছি। বলাইয়ের বাড়িতে "চায়না টাউন" দেখতে দেখতে তাই বলছিলাম, আজ থেকে বছর কুড়ি পর যখন একটা গিয়ানজাম ঘটিয়ে সারা দুনিয়ায় বিখ্যাত হয়ে যাবো, তখন পত্রিকার সাংবাদিকরা বলাই পরিবারের সাক্ষাৎকার নেবে। বলাই বলতে পারবেন, আরে এই হিমু যখন জার্মানিতে প্রথম এলো, সেই কালরাতে সে কই ছিলো? এই বলাইয়ের বাড়িতে। তার তখন একটা বালিশও ছিলো না, কে দিয়েছিলো তাকে বালিশ? এই বলাইনী। অ্যাদ্দূর বলার পর বলাইনী ঠিক করলেন, অন্তত বলাইয়ের একটা টিশার্ট আমাকে নিতেই হবে, যাতে ইন্টারভিউতে কোনো ফাঁক না থাকে। কী পরতো আপনাদের হিমু? এই বলাইয়ের টিশার্ট! আর আজ সে এতো বিখ্যাত ইয়ে, সে কি এমনি এমনি? তারপরও, শেষ বিচারে এ এক সংসারের লয়ই। চোখের সামনেই বলাইয়ের বসার ঘর থেকে এক এক করে সবকিছু তুলে ফেলে দিয়ে এলাম আমরা। বলাইয়ের শোবার ঘরের সব আসবাব টুকরো টুকরো করে সরিয়ে নয়তো ফেলে দেয়া হলো। একদিন গিয়ে দেখি শূন্যঘরে অল্প কয়েকটা বাক্স কেবল, ঘরে নতুন রং। এই ঘরে গত আড়াই বছরে আমরা অনেকগুলি আনন্দঘন আড্ডার সন্ধ্যা কাটিয়েছি, কাসেলে আমাদের অতিথিদের সৎকার করেছি। মুনশির সেই পুরনো গির্জার চিলেকোঠার গা ছমছমে বাসা আর কাঠের সিঁড়ির ক্যাঁচক্যাঁচ যেমন এখন স্মৃতি কেবল, যেমন স্মৃতি রেহমানের ভোনহাইমের জানালায় ভেসে ওঠা পাহাড়ের উপত্যকা। অথচ মাত্র কয়েক মাস আগেও ক্রিকেট খেলতাম আমরা, হইহুল্লোড় করে মোনোপোলি খেলতাম। একদিন ভোরে বলাই আর বলাইনীকে ট্রেনে তুলে দিয়ে এসে অনুভব করলাম, মোনোপোলি শেষ পর্যন্ত থাকে একাকিত্বের। সঞ্চয়ের প্রতিটা মুহূর্তই আসলে অপ্রতিরোধ্য ক্ষয়ের প্রস্তুতি। এই প্রত্যেকটা ছেড়ে যাওয়ার মুহূর্তেই মনে মনে নিজেকে প্রবোধ দিই, এ-ই হয়তো স্বাভাবিক নিয়ম, যে নিয়মে আপেল নিচের দিকে পড়ে আর তেল জলে ভাসে। তারপরও মনে হয়, সঞ্চয়টুকু থিতু হোক, কোথাও দাঁড়িয়ে তাকে নিশ্চিন্তে দেখি। প্রেম ফুরিয়ে গেলে প্রেমিকা হারিয়ে যায়, সহোদর-সহোদরা চলে যায় অন্য দেশে অন্য জীবনে, পরিজনেরা সরে যায় নিজেদের কক্ষপথে পাল্টে, আর এ তো প্রবাসে ক্ষণিক দৈবের বশে জড়ো হওয়া আমরা কয়েকজন বন্ধু, মহাকর্ষ কি আমাদের টেনে আলাদা করবে না? ফেরার পথে তুষারের আভায় অন্ধকার কাসেলকে দেখি। ভাবি, প্রবাসে আসলে প্রাপ্তিটা কী? উত্তর পাই ভেতর থেকে, প্রবাসে মানুষ সবচেয়ে ভালোভাবে পায় নিজেকে। আমি যে এমন আমি, কখনো তো দেখতে পাইনি আগে। নিজের ঘর ছেড়ে বহু দূরে অন্যের শূন্য হয়ে যাওয়া ঘরের জন্যে দুঃখ পাবো, এমনই কি মানুষ তবে আমি? বাড়ি ফেরার পথে টের পাই, মাইনাস দশ ডিগ্রী তাপমাত্রায় আসলে পানি জমে বরফ হবেই। সে যতই লোনা হোক।
false
mk
গোলাম আযম ও বাংলাদেশের রাজনীতি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী গোলাম আযম শেষ পর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনালের রায়ে একজন মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছিলেন। বয়স বিবেচনায় নিয়ে তাকে ৯০ বছর অর্থাত্ মৃত্যু পর্যন্ত কারাগারে থাকার শাস্তির জীবন নির্ধারণ করে আদালত। সেই রায় মাথায় নিয়েই গত বৃহস্পতিবার ২৩ অক্টোবর রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হয়েছে। ফাঁসির রশি তার গলায় না পরলেও যুদ্ধাপরাধের রায় নিয়েই তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। এর কোনো গত্যন্তর তার জন্য ছিল না। তিনি তার রাজনৈতিক বিশ্বাস এবং কর্মে যা করেছেন এর বাইরে তো কারো কিছু বলা, করা বা আখ্যায়িত করার নেই।তিনি যদি স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং একটি আধুনিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করতেন, তাহলে তার জীবন ও রাজনীতি সেভাবে মূল্যায়িত হতো, তাকে এমন একটি রায় কাঁধে নিয়ে মরতে হতো না, তাতে তার জন্য কারো ঘৃণা নয়, বরং কষ্ট প্রকাশ করার দৃশ্য দেখা যেত। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। তার দলের নেতাকর্মী, সমর্থক এবং অনুসারীরা তাকে তাদের আদর্শ হিসেবে হয়তো দীর্ঘদিন ধরে রাখার চেষ্টা করবেন। কিন্তু তারাও কি পেরেছেন তাদের নেতাকে সেভাবে শ্রদ্ধা জানাতে? আদালতের রায় তারা না মানতে পারেন— এটিই তাদের অন্ধবিশ্বাসের জায়গা, তবে জামায়াতের রাজনীতি, নীতি-নৈতিকতা, আদর্শবোধের অবস্থান থেকে দেশ, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী এমনটি আইনের রায়েও প্রতিষ্ঠিত। সেই প্রতিষ্ঠিত রায়কে যারা মানতে চায় না, তাদের আদর্শিক পশ্চাত্পদতা, কূপমণ্ডূকতা, রাষ্ট্র, সমাজবিরোধী অবস্থান, অনৈতিহাসিকতা তারা আবার স্পষ্ট করেছেন। গোলাম আযম যাদের নেতা তারাও কিন্তু অপরাধী আদর্শের ধারক হিসেবে পরিচিত হয়ে আছে।তবে যে বিষয়টি স্বীকার করতে হবে, ১৯৮১ সালে গোলাম আযমকে যেভাবে জুতা নিক্ষেপ খেয়ে বায়তুল মোকাররম ত্যাগ করতে হয়েছিল, ২০১৪ সালের ২৫ অক্টোবর শেষ কফিনেও জুতা নিক্ষেপ নিয়েই তাকে বিদায় নিতে হয়েছে। যদিও তার সন্তান, দল এবং অনুসারীরা মৃত গোলাম আযমকে নিয়ে সূক্ষ্ম রাজনীতি করতে চেয়েছিল, যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মতিউর রহমান নিজামীকে দিয়ে তার জানাজা পড়াতে চেয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তার ছেলেই জানাজায় ইমামতি করেছেন। মৃত্যুর আগে গোলাম আযম যেমন কোনোদিন বলেননি তিনি ১৯৭১ সালে ভুল করেছেন, ঠিক মৃত্যুর পর তার সন্তান বা দলের অনুসারীরাও তার কোনো ভুলভ্রান্তির জন্য ক্ষমা চাননি বলে জানা গেল। আসলে বায়তুল মোকাররমে জানাজাকে কেন্দ্র করে জামায়াত একটি আবেগ আবহ তৈরি করতে চেয়েছিল, যা দিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করা সম্ভব হতে পারে। কিন্তু গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া বিভিন্ন সংগঠন, তরুণ প্রজন্মের একটি অংশ এবং ইসলামী কিছু সংগঠন তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তোলায় সেই সুযোগ জামায়াত পায়নি।তবে গোলাম আযমের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আমাদের মিডিয়ার কোনো কোনোটি অতিপ্রচারের দিকে উত্সাহী যে, তা বেশ পীড়াদায়ক মনে হলো। জার্মান নািসবাদের কোনো নেতার মৃত্যু হলে মৃত্যুর সংবাদ এবং প্রাসঙ্গিক কিছু খবর দেয়া ছাড়া জার্মান গণমাধ্যমে দিত বলে মনে হয় না। আমাদের গণমাধ্যমে কখনও কখনও এ বিষয়গুলো বিবেচনায় থাকে না। গোলাম আযমের মৃত্যুর সংবাদ ব্রেকিং দিয়ে প্রচার করা, তার উকিল, সন্তানসহ কারো কারো সাক্ষাত্কার নিয়ে প্রচার করা হচ্ছিল তাতে মনে হয়েছিল যে, গোলাম আযম একজন অতীব জাতীয় নেতা।গোলাম আযমকে চলে যেতে হলো। তার চলে যাওয়ার পর জামায়াত এবং দেশের রাজনীতি নিয়ে কোনো পরিবর্তনের মতো কিছু ঘটবে কি না— তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। গোলাম আযম জামায়াতের আদর্শিক গুরু। সে কারণে জামায়াত চলেছে তাকে ঘিরে। তিনি দলের আমির পদ থেকে সরে গেলেও তাকে বাদ দিয়ে দল চলেনি। যারা তার স্থলাভিষিক্ত হলেন, দলের পদে ছিলেন— তারা সকলেই তার অন্ধ অনুসারী। এখানে গোলাম আযম ছিলেন দলের প্রধান প্রবক্তা, অন্যরা তাকে অনুসরণ করেছেন— যেমনিভাবে তারা ১৯৭১ সালে তার কমান্ড মতোই ভূমিকা রেখেছিল। গোলাম আযম যেভাবে পূর্ব-পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী পরিচালনার দায়িত্ব পাকিস্তান কেন্দ্রীয় জামায়াতের কাছ থেকে পেয়েছিলেন, যেভাবে তিনি যুদ্ধকালে জামায়াত-ছাত্রসংঘসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীসহ অবস্থান নিয়েছিলেন, তারা সেভাবেই দাসানুদাসের মতো ভূমিকা পালন করেছেন। সে কারণেই ১৯৭১ সালে পাকিস্তানকে সমর্থন করতে গিয়ে গোলাম আযমের আদেশ-নির্দেশ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাদের মধ্যে কোনো দ্বিধা ছিল না। জামায়াত দ্বিধাবিভক্তও হয়নি, অপরাধের বিরুদ্ধে তাদের কোনো পৃথক অবস্থানও ছিল না। সবকিছু বিনাপ্রশ্নে মেনে নেয়ার মানসিকতা ও বিশ্বাসের বিষয়টি বেশ বিস্ময়কর বলতে হবে। এর পিছনে উগ্র সাম্প্রদায়িক, ফ্যাসিবাদী বিশ্বাস ছাড়াও আর্থিকসহ নানা ধরনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় জড়িত থাকা খুবই স্বাভাবিক। আসলে কোনো দলের আদর্শ যদি এমন দাসানুদাস চরিত্রের হয়— বিবেক, বিচার-বিশ্লেষণ ও উন্নত চিন্তা না থাকে— তা হলে এমন হওয়ার বিষয়টি এখানেই প্রমাণিত হয়।১৯৭১ সালে গোলাম আযম বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পরাজিত হয়েছিলেন। পালিয়ে পাকিস্তান, ইংল্যান্ড এবং মধ্যপ্রাচ্য হয়ে তিনি দেশে আসতে পারলেন। এখানেই তার অনুসারীরা তার সাফল্য এবং বিজয় হিসেবে দেখলেন। এটি ছিল দেশি নানা শক্তি এবং আন্তর্জাতিক শক্তির একটি নীলনক্সার ফসল। গোলাম আযমের সামগ্রিক এই রাজনীতির পিছনে একটি আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছিল। নতুবা গোলাম আযমের পক্ষে ১৯৭১ সালে দেশ ছাড়া হওয়ার পর আর দেশে ফিরে আসা বা রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু তিনি পেলেন। পাওয়ার পিছনে দেশি এবং আন্তর্জাতিক নানা গোষ্ঠীর সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা কতটা জোরাল ছিল তা পরবর্তীকালে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড এবং অভিজ্ঞতা থেকে প্রমাণিত। গোলাম আযম শুধু বাংলাদেশে ফিরে আসেনি, তিনি তার দলকে সাংগঠনিকভাবেই শুধু নয়, আর্থিক, সামাজিক, শিক্ষা-সাংস্কৃতিকভাবে প্রতিষ্ঠার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। বলা চলে আশির দশক থেকেই গোলাম আযম এবং জামায়াত নতুনভাবে বাংলাদেশকে টার্গেটে নিয়ে এগিয়ে চলা শুরু করেন। দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলসহ সংস্থা ও ব্যক্তি মানুষ জামায়াতের নতুনভাবে চলার কৌশল খুব বেশি ধরতে পারেনি। লক্ষ্য করা গেছে, গত তিন দশকে জামায়াত বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা-সাংস্কৃতিকসহ সকল অঙ্গনে মৌলবাদী ধারার একটি স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছে। দেশের ব্যবসাবাণিজ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় জামায়াত যেভাবে অগ্রসর হয়েছে, তাতে জামায়াত বাংলাদেশের আদর্শিক ভিত্তিতে আঘাত করার যথেষ্ট ক্ষমতা রাখে। আমাদের তরুণদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এরই মধ্যে জামায়াতের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। বাংলাদেশে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরাট একটি অংশে তাদের মতাদর্শের অনুসারী গোষ্ঠী তৈরিতে তারা কাজ করে যাচ্ছে। ফলে ১৯৮০ উত্তরকাল থেকে যে তরুণরা ছাত্রশিবির ও জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, তারা সকলেই গোলাম আযমের অন্ধ অনুসারী হিসেবেই বেড়ে উঠেছে। তারা ১৯৭১ সালকে গোলাম আযমের লেখালেখি এবং চিন্তাধারাতেই দেখে। ফলে ১৯৭১ সালের ছাত্রসংঘ এবং বর্তমান ছাত্রশিবিরের ভাবাদর্শ ভিত্তিতে খুব একটা তফাত্ নেই। তারা একই আদর্শের অনুসারী। সে কারণে এদেরকে নব্য রাজাকার বললে আদর্শ বিশ্বাসী অবস্থান থেকে ভুল কিছু বলা হয় না। জামায়াত শিক্ষা, অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যে শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, হতে যাচ্ছে— তা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য কোনো নিরাপদ ভবিষ্যত্ নিশ্চিত করে না। আমরা লক্ষ্য করেছি ২০১৩ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে ছাত্রশিবিরের এই তরুণ প্রজন্ম দেশব্যাপী কিভাবে তাণ্ডব চালিয়েছিল, বিচারকে ভণ্ডুল করাসহ সবকিছুকে তছনছ করে দেয়ার জন্য জীবনবাজি রেখে মাঠে নেমেছিল। দেশকে গৃহযুদ্ধে নিক্ষেপ করার হুমকিও দিয়ে চলেছিল। সেটি বাস্তবায়ন করার কাজ এখনও তাদের থেমে যায়নি। কেননা, তারা গোলাম আযমের অনুসারী— ইসলামের বা আধুনিক কোনো জীবনদর্শনের নয়। এমন অন্ধ অনুসারীরা খুব সহজে শেষ হয়ে যাবে, থেমে যাবে— তা ভাবার কোনো কারণ নেই। তাদের মস্তিষ্কে যে বিশ্বাসের বীজ গোলাম আযম এবং তার অনুসারীরা বপন করেছেন— তা আরও অনেক দিন জীবিত থাকার মতো ভিত্তি গোলাম আযম দিয়ে গেছেন।বাংলাদেশে বেসরকারি সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই নেপথ্যে জামায়াতের অর্থে প্রতিষ্ঠিত কিংবা তাদের অনুসারীদের দ্বারা পরিচালিত। ফলে তাদের টিকে থাকার ভিত্তি অত সহজে দুর্বল হওয়ার লক্ষণ দেখি না, অধিকন্তু বিএনপির মতো একটি বড় দল, বিএনপিকে সমর্থন করে, আওয়ামী লীগকে বিরোধিতা করে, নানা কারণে সরকারকে অপছন্দ করে— এমন নানা শক্তি মিলিতভাবে কিন্তু মোটেও কম নয়। তারা সকলেই বিএনপির কারণে জামায়াতকে আশ্রয় দিচ্ছে, জামায়াতের বেড়ে ওঠার সূক্ষ্ম এই ধারার গুরুত্ব উপলব্ধি করছে না, করার প্রয়োজনীয়তা বোঝে বলেও মনে হয় না। ফলে জামায়াতের উত্থান, বিকাশ এবং ভবিষ্যত্ নিয়ে যে ধরনের সতর্কতা এ দেশের সমাজ, রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, গণমাধ্যম, সাধারণ মানুষের মধ্যে থাকা বাঞ্ছনীয় ছিল— তাতে বিরাট ঘাটতি রয়েছে। আওয়ামী লীগ এককভাবে জামায়াতের রাজনীতি মোকাবিলা করার ক্ষমতা দলীয়ভাবে কতটা রাখে তা বিবেচ্য বিষয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে এখন সরকারে থাকার কারণে যেটুকু করছে— তা কতদিন অব্যাহত থাকবে বলা মুশকিল। কিন্তু বিএনপিসহ সমাজের অর্ধেক অংশের নীরবতা, সমর্থন, অবস্থান না নেয়ার বিষয়গুলো খুবই স্পষ্ট। এর ফলে শঙ্কার বিষয়টি বেশ জোরালই বলতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক শক্তির দুর্বলতা এ মুহূর্তেও যথেষ্ট তীব্র। সেই অনৈক্যের ফাঁকফোকর দিয়ে জামায়াত এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেই। এখন গণতান্ত্রিক শক্তি বলে দাবিদাররা গোলাম আযম-উত্তর বাস্তবতায় কিভাবে রাজনীতি, রাষ্ট্র, অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, গণমাধ্যমসহ সবকিছুকে ঢেলে সাজাবে, জামায়াতকে সুযোগ দেবে কি দেবে না— তার ওপর নিকট বা দূরবর্তী বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত্, গোলাম আযমের রেখে যাওয়া দল, আদর্শ ও অনুসারীদের রাজনীতি নির্ভর করবে। বিষয়টি কি সেভাবে তারা উপলব্ধি করার জায়গায় আদৌ আছেন, সেটি মিলিয়ন মিলিয়ন প্রশ্ন। - See more at: Click This Link
false
rn
দেশের প্রথম নারী আলোকচিত্রী সাইদা খানম ফটোগ্রাফি একটি শিল্প। যে কোন শিল্পকে আবেদনশীল করে তুলতে হলে, সেই শিল্পের সঙ্গে একাত্ম হতে হবে। তার জন্য করতে হবে সুস্থ ও মহত্ চিন্তা। এই চিন্তার গুণে গুণবান ও মহীয়ান হয়ে শিল্প যেন দর্শকের মনে প্রেম সৃষ্টি করতে পারে।১৫ বছর বয়সে হাতে তুলে নিলেন ক্যামেরা। সাইদা খানম। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম নারী আলোকচিত্রী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য ও লাইব্রেরি সায়েন্সে মাস্টার্স করেন। ১৯৫৬ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশ নেন সাইদা খানম। সাইদা খানম ছবি তোলা শুরু করেন ১৯৪৯ সাল থেকে। সাইদা খানম তাই করেছেন। যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন সেখানেই প্রদর্শনী দেখেছেন। দেশ-বিদেশ সব জায়গার আলোকচিত্র প্রদর্শনী দেখেছেন, দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। বেগম’ পত্রিকার মাধ্যমে সাইদা খানম আলোকচিত্র সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তাঁর ছবি ছাপা হয় ‘অবজারভার’, ‘মর্নিং নিউজ’, ‘ইত্তেফাক’, ‘সংবাদ’সহ বিভিন্ন পত্রিকায়। আলোকচিত্রী হিসেবে দেশেও দেশের বাইরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নেন তিনি। এ দেশে এমন একটা সময় ছিল যখন বাংলার মুসলিম নারীরা সামাজিক বাধার কারণে ছবি তুলতে পারতেন না। সেই সময়ে সাইদা সব বাধা অতিক্রম করে নিজের ক্যামেরায় ছবি তুলতে শুরু করেন।সত্যজিত রায়ের তিনটি ছবিতে আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করেন তিনি। সাইদা খানমের বয়স এখন ৭৭। এ বয়সে এসেও ক্যামেরা ছাড়া তাঁর এক মুহূর্তও চলে না। যেখানেই যান, সঙ্গে নিয়ে যান ক্যামেরা। তিনি বিয়ে করেন নি। ঢাকার বনানীতে তিনি থাকেন। অবসর সময়ে তিনি রবীন্দ্র সংগীত শুনেন, পড়া শোনা করেন। লেখালেখি করেন। তার লেখা কিছু বই হলো- ‘ধূলোমাটি’, ‘স্মৃতির পথ বেয়ে’, ‘আমার চোখে সত্যজিৎ রায়’, ‘আলোকচিত্রী সাইদা খানম-এর উপন্যাসত্রয়ী’।নানা প্রযুক্তির ক্যামেরা এলেও এখনো সাইদা খানম ফিল্মের ক্যামেরাতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ডিজিটাল ক্যামেরা তাঁর কাছে মনে হয় ‘ফাঁকি দেওয়া’। তার ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দি হয়েছেন রানি এলিজাবেথ, মাদার তোরেসা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, নিল আর্মস্ট্রংয়ের মতো ব্যক্তিত্বরা। সাঈদা খানম ১৯৩৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। পৈত্রিক বাড়ি ফরিদপুরে। তাঁর বাবা মৌলবি আব্দুস সামাদ খান শিক্ষা বিভাগে কাজ করতেন। বাবা আব্দুস সামাদ খান ছবি তোলার ক্ষেত্রে মাত্র দু'টি বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। বিবাহ আসরে ও স্টেডিয়ামে গিয়ে ছবি তোলা সমর্থন করেননি। ফটো সাংবাদিক হিসাবে দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সাইদা খানমের তোলা প্রায় ৩ হাজার ছবি প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সদস্যা সাইদা খানম বাংলা একাডেমিরও আজীবন সদস্য। সাইদা খানম যখন আলোকচিত্রীর পেশা গ্রহণ করেন তখন এদেশে ফটোগ্রাফির স্টুডিও ছিল মাত্র দুটি। একটির নাম ছিল 'জায়েদী স্টুডিও'। এই স্টুডিওর মালিক জায়েদী সাহেব তাঁকে ফটো কম্পোজিশন সম্পর্কে ধ্যান-ধারণা দিয়েছেন এবং ছবি তোলা বিষয়ে প্রচুর বই পড়তে দিয়েছেন।সাইদা খানম-এর শৈশব কেটেছে ইছামতির তীরে পাবনার মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে। পাবনার বাড়িতে জানালার পাশে শুয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে ভাবতেন যে, সব দৃশ্য কী চিরকালের জন্য ধরে রাখা যায় না? এ রকম ভাবনা তাঁকে ক্যামেরায় ছবি তোলার বিষয়ে আগ্রহী করে তোলে। বাংলাদেশ আলোকচিত্রী নারীর সংখ্যা খুবই কম। আলোকচিত্র ক্ষেত্রে মেয়েদের কম উপস্থিতির তিনটি কারণ উল্লেখ করে সাইদা খানম বলেন- প্রথমত, ছবি তোলার পারদর্শিতার জন্য দরকার প্রচুর অর্থ। ব্যয়বহুল বলে এই ক্ষেত্রে কম মেয়ে এগিয়ে আসেন। দ্বিতীয়ত, ছবি তোলার কাজে সময়-অসময় নেই, দরকার অসীম ধৈর্য। এর জন্য দরকার পারিবারিক সহযোগিতা। মেয়েদের সৃজনশীল কাজে এখনো পারিবারিক সহযোগিতা খুব বেশি দেখা যায় না। তাই মেয়েরা কম উত্সাহিত এই কাজে এবং তৃতীয়ত, এই কাজ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের সমাজ ও পরিবার মেয়েদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে খুব সহায়ক নয়। প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করার প্রচন্ড মানসিক জোর প্রয়োজন হয়। এসব কারণে কমসংখ্যক মেয়ে আলোকচিত্র পেশায় এগিয়ে আসেন। মুক্তিযুদ্ধের পর হাসপাতালে নার্স সংকট দেখা দিলে তিনি হলিফ্যামিলি হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবী নার্সিং-এর কাজ করেছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় তিনি সেবামূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। নিজেও তিনি পাকিস্তান শাসনামলে ছাত্র গণআন্দোলনে পরোক্ষভাবে কাজ করেছেন।
false
rn
নয়ন তোমারে পায়না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে___ (পর্ব - চার) হুমায়ূন আহমেদের নিন্দুকেরা বলেন, হুমায়ূন আহমেদ হিমু চরিত্রটি সুবোধ ঘোষের 'শুন বরনারী' উপন্যাস থেকে নেয়া হয়েছে। খুবই হাস্যকর কথা। এ উপন্যাস সম্পর্কে হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন- অতি সাধারণ উপন্যাসও মুগ্ধ হয়ে বারবার পড়েছি। উদাহরণ, সুবোধ ঘোষের শুন বরনারী। আবার কাউকে বলতে শুনেছি- হিমু চরিত্রটা শীর্ষেন্দুর কাগজের বৌ উপন্যাস থেকে নেওয়া। বোকা গুলো জানে না হুমায়ূন আহমেদ নিজেই বলে গেছেন হিমু বা মিসির আলী চরিত্রটি কিভাবে তিনি আবিস্কার করেছেন। সবচেয়ে বড় সত্য কথা হলো, একদল সমালোচক সব জাগায় থাকবেই। সব বিখ্যাত মানুষই সমালোচকদের খপ্পড়ে পড়েছে- রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে আইনস্টাইন পর্যন্ত। হুমায়ূন আহমেদ একজন সহজ সরল ভাল মানুষ। সারা জীবন সহজ সরলভাবে জীবন-যাপন করেছেন। তিনি নিজে বারবার মানুষকে বিশ্বাস করে ঠকেছেন কিন্তু জীবনে কাউকে ঠকাননি। হুমায়ূন আহমেদ কোনো কিছু লুকাতে জানেন না, আড়াল করতে জানেন না। তিনি তাস খেলেন মাটিতে বসে। সম্পূর্ণ নিজের মতো একটি জীবন তিনি যাপন করেন। যা ভালো লাগে, বিশ্বাস করেন, তা-ই করেন। তাঁর পিতার স্মরণে ৭০ লাখ টাকা ব্যয় করে নিজ গ্রামে একটা স্কুল করেছেন। সেই স্কুলের ডিজাইন ও পরিবেশ স্কটল্যান্ডের মতো। কলকাতা থেকে ডেকে এনে নুহাশ পদক দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের সমরেশ মজুমদারকে।হুমায়ূন আহমেদ একমাত্র বাঙালি লেখক, যিনি সাত বছর ধরে কোলকাতার 'দেশ' পত্রিকার শারদীয় সংখ্যায় উপন্যাস লিখেছেন। এই সৌভাগ্য বাংলাদেশের আর কোনো বাঙালি লেখকের হয়নি। ভাবতে বিস্ময় লাগে, পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি মাপের রোগা-পটকা একজন মানুষ কোন মন্ত্রবলে এমন আকাশছোঁয়া হয়ে ওঠেন, কী করে হয়ে ওঠেন কিংবদন্তি! নিজের গ্রামে বাবার নামে একটা পাঠাগার করলেন হুমায়ূন আহমেদ। নির্মলেন্দু গুণ, হুমায়ুন আজাদ সহ অনেকে নিয়ে গেলেন সেই পাঠাগার উদ্বোধন করতে। অনিন্দ্যর স্বত্বাধিকারী নাজমুল হক একদিন একটা মিষ্টির প্যাকেট আর একটা নতুন সাদা ডাইহাটসু গাড়ি নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের বাড়িতে এসে বললেন, গাড়িটা আপনার জন্য। রয়ালটি থেকে অ্যাডজাস্ট হবে। ভাবা যায়? যাই হোক, হুমায়ূন আহমেদের 'জনম জনম' উপন্যাসটি সর্বপ্রথম দৈনিক বাংলা'র সাহিত্য পাতায় 'মৌনব্রত' নামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হয়েছিল। আমার ধারনা 'জনম জনম' অসাধারন একটা উপন্যাস। 'চোখ' গল্পটি পড়ে 'সংবাদ'- পত্রিকায় দুর্দান্ত একটি লেখা লিখলেন সৈয়দ শামসুল হক। 'চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক' উপন্যাসটি পড়ে আহমদ ছফা বলেছিলেন, অসাধারণ লেখা! বাংলা ভাষায় হুমায়ূন আহমেদের প্রিয় লেখক রবীন্দ্রনাথ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রবীন্দ্রনাথের কবিতা মুখস্থ বলে যেতে পারেন তিনি। বিভূতিভূষণ, তারাশঙ্কর, মানিক, সতীনাথ ভাদুড়ীর উপন্যাস-গল্প তাঁর প্রিয়। হুমায়ূন আহমেদ কখনও একা চলাফেরা করতেন না। তাই কাছের মানুষেরা সব সময় তাকে ঘিরে থাকতেন। বন্ধু-বান্ধবদের সব সময় হুমায়ূন আহমেদ ভূতের গল্প বলে আড্ডা জমিয়ে রাখতেন। গভীর রাতে বন্ধুদের দেখাতেন যাদু। হুমায়ূন আহমেদ সবচেয়ে বেশি লিখেছেন কালের কন্ঠ পত্রিকায়। দেড়-দুই মাসে অনেক লিখেছেন। এত কম সময়ে অন্য কোনো পত্রিকায় এত লেখা আর লিখেন নি। জোর করে ইমদাদুল হক মিলন হুমায়ূন আহমেদকে দিয়ে লিখিয়েছেন। বাংলাদেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র বিষপানে আত্মহত্যা করে। দুঃসহ দুঃখের শেষ সময়ে তাঁর আশ্রয় ছিল হুমায়ূন আহমেদের বই। মৃত্যুর পর ছাত্রটির বুকের উপর পাওয়া যায় হিমুর একটি বই। আজ থেকে ২০ বছর আগে পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় লেখক রমাপদ চৌধুরী বলেছেন, হুমায়ূন আহমেদের বেশ কিছু গল্প, উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের নয়- বিশ্ব সাহিত্যের সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে। এখানে অবাক করা ব্যাপার হলো, লেখক রমাপদ চৌধুরীর এই চিঠি হুমায়ূন আহমেদ আজ পর্যন্ত কোথাও প্রকাশ করেন নি।আরেকটি ঘটনা বলে আজকের পর্বটি এখানেই শেষ করবো। ইউনিসেফ বাংলাদেশে কিছু প্রচারমূলক প্রামান্য চিত্র বানানোর জন্য এক প্রশিক্ষনের আয়োজন করে। উদ্দেশ্য প্রামান্যচিত্র যারা বানাবেন তাদেরকে আগে গড়েপিঠে নেয়া। প্রশিক্ষন দিতে আসেন আমেরিকার এক অভিজ্ঞ লোক। প্রথমেই তিনি শিক্ষার্থীদের হাতে নিজের লেখা মোটা একটি বই ধরিয়ে দেন। তারপর বক্তৃতা শুরু করেন। প্রশিক্ষণার্থীদের একজন হুমায়ুন আহমেদ মন দিতে পারছিলেন না মার্কিন প্রশিক্ষকের লেকচারে। তাই প্রশিক্ষকের লেখা বইতে চোখ বুলাচ্ছিলেন। হঠাৎ বইয়ের একটা পাতায় তাঁর চোখ আটকে যায়। বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক হুমায়ূন আহমেদের উপর খুব বিরক্ত হোন তাঁর বক্তৃতায় মনোযোগ না দেয়ার জন্য। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কি পড়ছো তুমি আমার কথা না শুনে?হুমায়ূন আহমেদ উত্তর দিলেন, আপনার লেখা বইতে আমার নাম। তাই মনোযোগ দিয়ে দেখছিলাম। মার্কিন প্রশিক্ষক বইটি হাতে নিয়ে দেখেন আদর্শ টেলিভিশন নাটক হিসেবে তিনি বাংলাদেশের যে কয়টি টিভি নাটকের উল্লেখ করেছেন তাঁর লেখক আমাদের হুমায়ূন আহমেদ। প্রশিক্ষক এক আকাশে বিস্ময়ে প্রচন্ড অবাক হয়ে যান। তিনি বিনীতভাবে বললেন, মিস্টার হুমায়ূন, তোমাকে আর এ প্রশিক্ষনে অংশ নিতে হবে না।াআপনারা যদি চান- হুমায়ূন আহমেদের অজানা বিষয় নিয়ে আমিও আর লিখতে রাজী আছি। হুমায়ূন আহমেদ, আপনি যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন।
false
hm
নিরিবিলি বই পড়া অমিত আহমেদের সাথে আলাপ হচ্ছিলো গোয়েন্দা গল্প নিয়ে। দেখা গেলো, আমার দুই গোয়েন্দা চরিত্র, যথাক্রমে গোয়েন্দা ঝাকানাকা আর গোয়েন্দা গুল মোহাম্মদের মধ্যে প্যাঁচ লেগে যাওয়া খুব একটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। প্যাঁচ ছাড়ানোর জন্যে তাই পুরনো একটা লেখা তুলে দিচ্ছি। বহু আগে অন্যত্র প্রকাশিত। ১. রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাস হাতে পেলে গুল মোহাম্মদের আর হুঁশ থাকে না। তিনি নাওয়াখাওয়া এবং হাওয়া খাওয়া ভুলে সেই বই নিয়ে মেতে থাকেন। আর একবার বই হাতে নিলে সেটার শেষ না দেখে, একটা হেস্তনেস্ত না করে ছাড়েন না তিনি। এক আসরেই একটা বই মাত করে দেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত গোয়েন্দা। কিন্তু গুল মোহাম্মদ দরিদ্র মানুষ, দরাদরি করে কিনে বই পড়ার সামর্থ্য তাঁর নেই। আর যেসব মারদাঙ্গা কিসিমের বই তিনি পড়েন, সেগুলো লাইব্রেরিতে পাওয়া যায় না। লাইব্রেরিগুলো যেন পণ করেছে, যাবতীয় নিরামিষ গদ্যপদ্যপ্রবন্ধ পড়িয়ে পড়িয়ে ন্যুব্জপৃষ্ঠক্যুব্জদেহ ভেতো বাঙালিকে ভেতোতর করে তুলবে। পানসে কিছু প্রেমের উপন্যাস আর সেগুলোর কিছু নিরামিষ সমালোচনাগ্রন্থ দিয়ে শেলফ সব জায়গায় বোঝাই, সেগুলো পড়তে গেলেই ভারি ঘুম পায়। তাই তিনি লাইব্রেরিবিমুখ হয়ে, ওদিকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে, আর অনেক মাথা খাটিয়ে বিনা পয়সায় বই পড়ার একটা ফন্দি বের করেছেন। পাড়ার যাবতীয় ছেলেছোকরার সাথে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আলাপ আলোচনা করে তিনি একটা পঞ্চবার্ষিকী বই লেনদেন প্রকল্প দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন। এখন যেটা হয়, পিন্টুর কাছ থেকে তিনি বই এনে পড়েন, তারপর সেটা পড়তে দেন মিন্টুকে। এর বদলে মিন্টুর কাছ থেকে যে বইটা পান, সেটা আবার পড়া শেষ হলে পিন্টুকে পড়তে দেন। এমনি করে আরো অনেকের সাথে বিনিময় করে তিনি দুকূল বাঁচিয়ে চলছেন, আবার পয়সাও খরচা হচ্ছে না। তবে একটা ব্যাপারে গুল মোহাম্মদ ভারি ভয়ে আছেন, গোয়েন্দা গল্প পড়ে পড়ে যদি এই ছোকরাগুলো তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ব্যবসাটা মাটি করে, তাহলে? গুল মোহাম্মদ অত বেছে পড়েন না, একটা গোয়েন্দা মাকর্া বই হলেই তাঁর একদিন চলে যায়। তবে তাঁর সবচেয়ে পছন্দ হচ্ছে আলোছায়া প্রকাশনীর বাঁধা লেখক নিঝুম পুরীর 'গোয়েন্দা ঝাকানাকা' সিরিজ। সেখানে গোয়েন্দা ঝাকানাকা এক বিশাল বড়লোক মানুষ, হাতে কোন কাজ নেই বলে সময় কাটানোর জন্যে সে এমনি এমনি বিনিমাগনা লোকের রহস্য সমাধান করে দেয়। গোয়েন্দা ঝাকানাকা ভারি দরদী লোক, গরীব দুঃস্থদের কাছ থেকে সে কোন পয়সা নেয় না, কিন্তু ধনী লোকদের জন্যে তার ফি ভারি চড়া। হয়তো কোন রিকশাওয়ালার স্যান্ডেল চুরির রহস্য সে নিখরচায় করে দিলো, উল্টে নিজের গাঁট থেকে আরো পঞ্চাশটা টাকা সে বেচারার হাতে ধরিয়েও দিলো, কিন্তু শহরের বিখ্যাত ধনী আবদুল গোলাম হক, যিনি ফি হপ্তায় একটা না একটা রক্তজলকরা রহস্য নিয়ে গোয়েন্দা ঝাকানাকার শরণাপন্ন হন, তাঁর জন্যে পঞ্চাশ হাজার এক টাকা রেগুলার রেট। পঞ্চাশ হাজার টাকা গোয়েন্দা ঝাকানাকার তরফ থেকে গোপনে নানা রকম দাতব্য প্রতিষ্ঠানে চলে যায়, আর এক টাকা সে একটা মাটির টুনিব্যাঙ্কে জমিয়ে রাখে --- এটাই তার নেশা। তার একগাদা গাড়ি আছে, ছয় সাত রকমের অস্ত্রশস্ত্র আছে, তার আলিশান বাড়িতে ছদ্মবেশ নেয়ার জন্যে বিশাল একটা মেকআপ রূম আছে, মাসে মাসে মাইনে দিয়ে রাখা মেকআপম্যান আছে --- এক কথায় গোয়েন্দা ঝাকানাকা সবসময় সবরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। সে প্রয়োজনে কখনো গোলাপ গাছের ছদ্মবেশে গিয়ে কোন ঘাগু খুনীকে ধরে ফেলতে পারে, আবার কখনো ল্যাম্পপোস্টের ছদ্মবেশে বসে থেকে দুর্ধর্ষ ডাকাত বদরু খাঁ, যে কিনা শুধু রাত বারোটায় খুন করে, তার কোন বদখদ অপরাধের পরিকল্পনা বানচাল করে দিতে পারে। ঝাকানাকার অসাধ্য, এমন কিছু নেই বললেই চলে। যার যেটা নেই, তার সেটার প্রতিই টান থাকবে। সে জন্যেই গোয়েন্দা ঝাকানাকার নানা অভিযানের গল্প পড়ার জন্যে আমাদের গোয়েন্দা গুল মোহাম্মদ অত টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে বই যোগাড় করে পড়েন। পড়েন আর ভাবেন, ইশ, আমারও যদি ভাড়াটে চিলেকোঠার বদলে ওরকম একটা বাড়ি থাকতো, গুলতির বদলে অমন বন্দুক পিস্তল থাকতো, ওরকম মেকআপরুম মেকআপম্যান দু'টোই থাকতো --- তিনি ভাবেন আর ভাবেন, আর ফোঁসফোঁস করে দুঃখের শ্বাস ফেলেন। পঞ্চাশ হাজার এক টাকার প্রসঙ্গ এলে তিনি আরো কাতর হয়ে যান। মাটির টুনিব্যাঙ্ক একটা তাঁরও আছে, তবে সেটার অবস্থা খুব একটা সুবিধার না। যাই হোক, আজ সকালে তিনি তাঁর লেনদেন প্রকল্পের অন্যতম সদস্য, তাঁর বাড়িওয়ালার ছেলে হাবলুর কাছ থেকে ঝাকানাকা সিরিজের শাঁসালো একটা বই বাগিয়েছেন, সেটা নিয়েই তিনি তাঁর চিলেকোঠার সামনে খোলা ছাদে মাদুর বিছিয়ে যোগাসনে শুয়ে শুয়ে পড়ছিলেন। বইটার নামটাও রীতিমতো রোমহর্ষক, 'খানবাহাদুর হত্যা রহস্য।' প্রচ্ছদে দেখা যাচ্ছে ইয়া মোটাসোটা মোচওয়ালা এক ভদ্রলোক, তিনিই সম্ভবত খানবাহাদুর, কারণ তিনি উপুড় হয়ে শুয়ে আছেন আর তাঁর পিঠে খাসি কাটার একটা খাসা ভোজালি খুব নৃশংস ভঙ্গিতে বিঁধে আছে। গুল মোহাম্মদ নিজের মুখে একমুঠো ছোলা গুঁজে দিয়ে সবেমাত্র প্রথম পাতায় চোখ রেখেছেন, এমন সময় তিনি সিঁড়িতে পায়ের আওয়াজ পেলেন। স্যান্ডেলের বিচ্ছিরি খসখসানির শব্দ শুনেই তিনি বুঝলেন, এটা তাঁর বাড়িওয়ালা শাহেদ সাহেবের আগমনের আলামত। শাহেদ সাহেব প্রতি তিনদিন পর পর ভাড়ার তাগাদ দিতে আসেন। গত চার পাঁচমাস ধরে গুল মোহাম্মদ বাড়ি ভাড়া দিতে পারছেন না, কোন কেসটেস নেই তাঁর হাতে, কিন্তু সে কথা তো শাহেদ সাহেব বুঝতে রাজি নন। আজকেও তিনি ছাদে গুল মোহাম্মদ দেখার সাথে সাথে ঘ্যানর ঘ্যানর করা শুরু করলেন। 'না না না গুল মোহাম্মদ সাহেব, এ আপনার ভারি অন্যায়। আপনি কি আমাকে না খাইয়ে মারতে চান?' নাকি গলাটাকে বাজখাঁই করে তোলার একটা উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার বৃথা চেষ্টা নিয়ে বলেন তিনি। গুল মোহাম্মদ বইটা বন্ধ করে উঠে বসে বলেন, 'কেন? আমার কি আপনাকে খাইয়ে দেবার কথা?' যুৎসই কথাটা বলেই গোয়েন্দা ঝাকানাকার মতো একটু মুচকি হাসি হেসে গোঁফে তা দেন তিনি, যদিও তাঁর গোঁফ নেই। এ কথা শুনে, আর হাসিটা দেখে, আর নেই মোচে তা দেয়ার ভঙ্গি দেখে শাহেদ সাহেব আরো চটে যান। 'পাঁচমাসের বাড়ি ভাড়া বাকি পড়ে আছে ভাই সাহেব। পাঁচ দুগুনে দশ হাজার টাকা। অমন দশাসই অঙ্কের টাকা আপনি বাকি বকেয়া ফেলে রেখেছেন।' বকেয়া নিয়ে বকে যান তিনি। 'দশ হাজার টাকা নগদানগদি হাতে পেলে কত কিছু করা যায়, জানেন? আমারও তো ঘর সংসার আছে, ছেলেপুলের পড়াশোনার খরচ আছে, কলাটামূলোটাকচুটা খাবার খরচ আছে ---।' তিনি এক গাদা খাতে টাকা পয়সার প্রয়োজনীয়তার কথা বলে যান, আর গুল মোহাম্মদ মাথা চুলকাতে থাকেন। শাহেদ সাহেবের মুখে কলা, মূলো এবং কচু খাবার কথা শুনে তাঁর কেমন কেমন যেন লাগে। এই খাদ্যদ্রব্যগুলো কি নিতান্ত দরিদ্র লোকেরই ভোগ্যবস্তু নয়? শাহেদ সাহেব কি মুরগি-গরু-খাসির গোস্ত ফেলে এগুলো খাবার জন্যে অতটাই লালায়িত? দশ হাজার টাকার কলা, মূলো এবং কচু তো পাড়াপড়শি সবাই মিলেও খেয়ে শেষ করতে পারবে না। তাছাড়া, এত কলার খোসা, মূলোর ডগা এবং সর্বোপরি কচুর ভগ্নাবশেষ তাঁর গোয়েন্দাদৃষ্টি এড়িয়ে যাবে কোথায়? ওদিকে একটানা বকে বকে এক পর্যায়ে হাঁপিয়ে গিয়ে শাহেদ সাহেব একটু দম নেবার জন্যে থামেন, তখন গুল মোহাম্মদ গম্ভীর মুখে বলেন, 'আপনার জীবনে কোন রহস্য নেই?' এটাই তাঁর মোক্ষম অস্ত্র, বার্টার নীতিতে, মালের বদলে মাল লেনদেনেই তিনি বিশ্বাসী। অমনি শাহেদ সাহেব ভারি চটে যান। 'আপনি পেয়েছেন কি? রহস্যের সমাধান করে আপনি দশ হাজার টাকা শোধ করবেন? না ভাই, আমার জীবনে অ্যাতো বড় রহস্য কোনদিন ছিলও না, আজো নেই। তবে আপনি এই হারে ভাড়া বাকি ফেলা শুরু করলে দু'দিন পর একটা রহস্য গজাবে। সেটা হলো গিয়ে, আমি কিভাবে দুবেলা দুমুঠো খেয়ে পরে বাঁচবো? আপনি যদি ঐ রহস্য জন্মানোর আগেই সমাধান করতে চান, আমার বাড়ি ভাড়া শোধ করে দিন, ল্যাঠা চুকে যাবে।' গুল মোহাম্মদ আবার থমকে যান। এহহে। ব্যাপারটার মধ্যে কেমন একটা প্যাঁচ বোধ করতে থাকেন তিনি। রহস্য সমাধান করলে তিনি টাকা পাবেন, কিন্তু সে টাকা আবার সমাধানের পেছনেই বেরিয়ে যাবে। তা হলে ঐ রহস্য সমাধান করার কি দরকার, থাক না সেটা অমনি পড়ে? গোটা ব্যাপারটার মধ্যে একটা আমলাতান্ত্রিক ঝামেলা দেখতে পান তিনি। শাহেদ সাহেব সরকারী চাকরি করতেন বলেই বোধহয় সোজা জিনিসক পেঁচিয়ে এতো জটিল করতে পারেন। তাছাড়া, তাঁর ধারণা, শাহেদ সাহেব ভারি অপয়া মানুষ, কারণ এই লোকটার বাড়িতে ভাড়াটে হিসেবে আসা ইস্তক গুল মোহাম্মদ সমস্যার মধ্যে আছেন, কোন কেসটেস জুটছে না তার। গুল মোহাম্মদ শেষ অস্ত্র প্রয়োগ করেন, ভারি হতাশার একটা শ্বাস ফেলে বলেন, 'আচ্ছা ঠিক আছে। আগামী সোমবার, মাসের শুরুতে আপনাকে বাড়ি ভাড়া কড়ায় গন্ডায় চুকিয়ে দেবো। দরকার হলে আমার কাপড়জামা বাসনকোসন, এমনকি বদনা অবধি মহাজনের কাছে বন্ধক দেবো, তবুও আপনার পাই পয়সা বাকি ফেলবো না। আপনি এবার খুশি?' শাহেদ সাহেবের গোমড়া কালো মুখে খুশির আলো ফোটে। 'আচ্ছা আচ্ছা, অত কিছু করতে হবে না, তবে নিতান্ত যদি বন্ধক দিতেই হয়, আমার চেনা মহাজন আছে, আপনাকে আলাপ করিয়ে দেবো নাহয়।' আনন্দিত গলায় বলেন তিনি। 'তা কী করছেন এই রোদে শুয়ে শুয়ে?' বলতে বলতে তাঁর নজর পড়ে গুল মোহাম্মদের হাতে ধরা বইটার দিকে। 'অ্যাঁ? আপনিও পড়ছেন বইটা? খানবাহাদুর হত্যা রহস্য?' চেঁচিয়ে ওঠেন তিনি। গুল মোহাম্মদ খানিকটা লজ্জা পেয়ে আমতা আমতা করে সাফাই গাইতে যান, কিন্তু তার আগেই শাহেদ সাহেব বকতে থাকেন, 'ওফ, বেড়ে একখানা বই লিখেছে নিঝুম পুরী। সেদিন আমার হাবলুর কাছ থেকে নিয়ে পড়লাম। পড়ে আমার রাতে এমন কষে ঘুম হয়েছে, কী বলবো? পড়ে দেখুন, আপনারও হবে। প্রথম খুনটার কথা কী বলবো ভাইসাহেব, দারুণভাবে করেছে লোকটা। তবে মাঝে মাঝে গা ছমছম করে ওঠে, বুঝলেন, বিশেষ করে যখন খানবাহাদুরের খুনী দ্বিতীয় খুনটা করে ---।' 'নাআআআআআআআআ!' গুল মোহাম্মদ আঁতকে ওঠেন। 'প্লিজ, প্লিজ! বলবেন না। গল্পের মাঝখানটা বলে দিলে গল্প পড়ার মজা পনেরো আনা নষ্ট হয়ে যায়, তা আপনি জানেন না?' শাহেদ সাহেব এই কথা শুনে মোটেও বিচলিত হন না। 'আরে সাহেব, কিসের মজা নষ্ট? আপনি শুনে রাখেন আমার কাছ থেকে। এতে করে আপনার বাকি অর্ধেক পড়ার জন্যে একটা প্রিপারেশন হবে ---।' তিনি আবার মুখ খোলার আগেই গুল মোহাম্মদ চোখের পলকে উঠে দাঁড়ান। শাহেদ সাহেব একটু ঘাবড়ে গিয়ে পিছিয়ে যান, বেলি্লক গোয়েন্দাটা না আবার তার ওপর হামলা চালায় ভেবে, এই ফাঁকে গুল মোহাম্মদ তাঁর মাদুর ভাঁজ করে চট করে ঘরে রেখে আসেন, তারপর হাফপ্যান্টের ওপরেই প্যান্ট পরে, তাঁর দুর্ধর্ষ সবুজ টুপি মাথায় চাপিয়ে, মুখে আরও একমুঠো ছোলা গুঁজে, খানবাহাদুরের বইটাকে তাঁর ঝোলায় পুরে এক ছুটে ছাদের কার্নিশ টপকে পানির পাইপ বেয়ে একতালায় নেমে পড়েন। প্রায়ই তিনি প্র্যাকটিসের জন্যে পাইপ বেয়ে ওঠেন আর নামেন, এই বিদ্যেটা কখন কোন তদন্তের জন্যে কাজে লাগে কে জানে? শাহেদ সাহেব প্রথমটায় ভেবেছিলেন গুল মোহাম্মদ বুঝি আত্দহত্যা করতে যাচ্ছেন, কিঞ্চিৎ সন্তুষ্ট হয়ে পড়েছিলেন অবশেষে চিলেকোঠাটা খালি হলো ভেবে, আবার পুলিশকে সামলানোর জন্যে টাকাপয়সা খরচ হবে ভেবে খানিকটা মুষড়েও পড়েছিলেন, তিনি যখন দেখলেন গুল মোহাম্মদ বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে ছুটতে ছুটতে মোড়ের দিকে চলছেন, মনে মনে ভারি চটলেন। ২. গুল মোহাম্মদ ছুটতে ছুটতে ভাবছিলেন, কোথায় নিরিবিলি শুয়ে শুয়ে বইটা রসিয়ে রসিয়ে পড়ে শেষ করা যায়। নিজের ঘরে যখন টিকতে পারলেন না, অন্য কারো বাসায় গিয়ে পড়ার ভরসা তাঁর নেই। দেখা যাবে যাঁর কাছে যাবেন, সে-ই বইটার অর্ধেক কাহিনী বলে দিচ্ছে। ভারি মুশকিল। মোড়ের পাতিমুদি দোকানদার আক্কাস আলির দোকানের সামনে একটা বেঞ্চ আছে। কথাটা মনে পড়তেই গুল মোহাম্মদ সেদিকে হনহন করে এগোলেন। বেঞ্চটা ছায়ায় পেতে, ঝোলাটা মাথার নিচে গুঁজে তিনি আরাম করে শুয়ে পড়তে পারবেন। যাক, হাতের কাছেই একটা নিরিবিলি জায়গা পাওয়া গেলো। চৈত্র মাসের দুপুর বেলা, চারিদিকে আগুন হাওয়া বয়ে যাচ্ছে, রাস্তা শুনশান, শুধু মাঝে মাঝে পাড়ার দস্যি ছেলেরা সেখানে হৈহৈ করে ছুটে যাচ্ছে। আক্কাস আলির দোকানের পাশে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ, সেখানে একটা কাক ছায়ায় বসে ঝিমুচ্ছে। গুল মোহাম্মদ এগিয়ে গিয়ে ধপ করে বসেন বেঞ্চের ওপরে, তারপর গামছা দিয়ে মুখ মোছেন। কাকের অভ্যেস জানেন তিনি, তাই একবার পরখ করে নেন, কোনভাবে তাঁর মাথার ওপর কাকের বসার মতো জায়গা আছে কি না। তাঁকে মাথা নাড়তে দেখে কাকটা কর্কশ গলায় একটা ডাক দিয়ে উড়ে চলে যায়। হঠাৎ গুল মোহাম্মদের মাথায় কাব্য ছলাৎ করে ঘা মারে, নিমেষে একটা চার লাইনের পদ্য বানিয়ে ফেলেন তিনি, যেমনটা তিনি আগে কখনো হাজার চেষ্টা করেও মেলাতে পারেননি। ভারি অবাক হয়ে যান তিনি, ব্যাপারটা একটা নূতন রহস্য বলে ঠ্যাকে তার কাছে। নিজের মনে লাইন চারটা খানিক গুনগুন করে দোকানে বসা আক্কাস আলিকে ডেকে বলেন তিনি, 'কি আক্কাস ভাই, একটা পদ্য শুনতে চাও?' আক্কাস আলি খানিকক্ষণ চোখ কুঁচকে তাকিয়ে থাকে গুল মোহাম্মদের দিকে, তারপর গুরুগম্ভীর অমুদিসুলভ গলায় হেঁকে বলে, 'বলেন, শুনি।' গুল মোহাম্মদ গলা খাঁকরে চোখ বুঁজে একটা হাত তুলে শুরু করেন: চৈত্র মাসের দুপুর বেলা, আগুন হাওয়া বয় দস্যি ছেলে ঘুরে বেড়ায় সকল পাড়াময় কাকেরা সব ছায়ায় বসে এদিকসেদিক চায় শুকনো গলায় ডাকছে, কা কা, হঠাৎ উড়ে যায়। আক্কাস আলি আরো খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে, 'তো?' গুল মোহাম্মদ ঘাবড়ে গিয়ে বলেন, 'না, মানে, এটা এইমাত্র বানালাম মনে মনে, তাই ভাবলাম তোমাকে শোনাই ---।' আক্কাস আলি আরো গম্ভীর হয়ে বলে, 'এইটা আপনে এখন বানাইলেন?' গুল মোহাম্মদ মাথা ঝাঁকান। আক্কাস আলি হঠাৎ চটে ওঠে। 'বিটলামির আর জায়গা পান না? এইটা তো আমার পোলার ইস্কুলের বইতে লেখা আছে!' গুল মোহাম্মদের সহসা মনে পড়ে যায়, সত্যিই তো, এমন একটা ছড়া ইস্কুল আমলেই পড়েছিলেন তিনি। সেজন্যেই বোধহয় অত চটজলদি মাথায় খেলে গেলো, নইলে এমন ছন্দ তো তিনি কখনোই মেলাতে পারেন না! মাথায় চিড়বিড় করতে থাকা রহস্যের সমাধান করতে পেরে খুশি হয়ে ওঠেন তিনি, বলেন, 'হ্যাঁ, তাই তো!' আক্কাস আলি ক্ষেপে ওঠে, 'আরে ভাই, আরেক লোকের কবিতা নিজের নামে চালাইতাছেন ক্যা?' গুল মোহাম্মদ থতমত খেয়ে বলেন, 'না না, এটা আমার না, আমি অন্য আরেকটা বানিয়েছি।' আক্কাস আলি চোখ সরু করে বলে, 'তাই নাকি? বলেন দেখি?' গুল মোহাম্মদ একটু বিব্রত হয়ে বলেন, 'এটা ইংরেজিতে।' আক্কাস আলি চুপ করে যায়। নিজের তীক্ষ্ম বুদ্ধির দৌড় দেখে গুল মোহাম্মদ মনে মনে নিজের পিঠ চাপড়ে দেন। তারপর বেঞ্চের ওপর লম্বা হয়ে শুয়ে, ঝোলাটা মাথার নিচে গুঁজে দিয়ে, আয়েশ করে বইটা খুলে বসেন। খানবাহাদুর খুন হয়ে গেছেন, ওদিকে বাসাভর্তি লোকজন, তাদেরই কেউ একজন খুন করেছে ব্যাটাকে। সবার সন্দেহ গিয়ে পড়েছে খানবাহাদুরের আদরেআহ্লাদেবখেযাওয়া ভাগ্নে ঈমান পাশার ওপর। কেবল ঈমানই এমন বেঈমানের মতো পাশবিক একটা খুন করার লায়েক, অন্য কেউ নয়। খুনের মোটিভও নিশ্চয়ই আছে, একটু ভালো করে খুঁজলেই পাওয়া যাবে। পুলিশও তাকে খুব করে চেপে ধরেছে, রিমান্ডে নিয়ে গিয়ে প্যাঁদানোর হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু ঈমান পাশা রোজ সকালে বারবেল ভাঁজে, ছোলা খায়, পুলিশের মারকে সে থোড়াই কেয়ার করে, সব হুমকির মুখে সে কেবল হো হো করে হাসে, আর গম্ভীর হয়ে একটা কথাই বারে বারে বলে, 'আমি কিছু জানি না, অ্যান্ড আই ডোন্ট কেয়ার!' কাজেই গোয়েন্দা ঝাকানাকাকে খবর দেয়া হলো। হঠাৎ আক্কাস আলি বলে ওঠে, 'কী, এই বইখানও কি আপনের লেখা?' গুল মোহাম্মদ ধড়ফড় করে উঠে বসেন। 'অ্যাঁ? আরে না, এটা নিঝুম পুরীর লেখা গোয়েন্দা ঝাকানাকা সিরিজের "খান বাহাদুর হত্যা রহস্য!"' আক্কাস আলি এগিয়ে আসে। 'কন কী? আপনিও পড়তাছেন এইটা? আরে, জব্বর কাহিনী, বুঝলেন? আমি তো কাইল সারারাইত ধইরা জাইগা পইড়া শ্যাষ করছি এইটা!' গুল মোহাম্মদ খানিকটা শঙ্কিত হয়ে বলেন, 'ওহ, তাই!' আক্কাস আলি আরো এগিয়ে আসে। 'কদ্দূর পড়ছেন, দেখি? মাত্র বারো লম্বর পৃষ্ঠা? এহহে! অহনও খেইল শুরু হয় নাই। ঈমান পাশা এই খুন করে নাইক্কা। কিন্তু ঝাকানাকা তারে ধইরা এমন ধোলাই দিছে, যে সে কবুল করছে, সে-ই গলা টিপ্যা মামুরে খুন করছে। কিন্তুক ঝামেলা হইলো, খান সাবেরে তো গলা টিপ্যা মাঠার করা হয় নাই, করা হইছে একটা চাক্কু দিয়া! তখন গোয়েন্দা ভাইজান ---।' গুল মোহাম্মদ এক সেকেন্ডও দেরি করেন না, বইটা চোখের পলকে ঝোলায় ভরে, দুকানে আঙুল দিয়ে নক্ষত্রবেগে ছুট লাগান। ৩. তেলেভাজার দোকানী কলিমুদ্দির কাছে বিপুল অঙ্কের টাকা বাকি ফেলেছেন গুল মোহাম্মদ। কিন্তু রোজই তার দোকানে গিয়ে তেলেভাজা খান তিনি, নইলে তাঁর সন্ধ্যেটাই আলুনি ঠ্যাকে। গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে খানিকক্ষণ বিশ্লেষণ করে তিনি সিদ্ধান্তে এলেন, আক্কাস আলির হাতে বিপুল সময় থাকায় সে তার স্কুলপড়ুয়া ছেলের পাঠ্যবই থেকে শুরু করে নিঝুম পুরীর রহস্যরোমাঞ্চোপন্যাস সবই পড়তে পারছে। কিন্তু কলিমুদ্দি মহা ব্যস্ত মানুষ, হাজারটা কাজ তার, সে কখনো এই জাতীয় বই পড়ে সময় নষ্ট করবে না। কাজেই ওর দোকানের নিরালায় বসে বইটাকে শেষ করাটাই সঙ্গত ঠেকে তাঁর কাছে। তিনি হনহনিয়ে যথাযথ দিকে রওনা দেন। দোকানে ঢুকতে না ঢুকতেই কলিমুদ্দি হাঁ হাঁ করে ওঠে, 'গোয়েন্দা ভাই, আপনের বিল ---।' গুল মোহাম্মদ হাত নাড়েন। 'দিয়ে দেবো, অত জলদি কিসের? আর আজকে মাসের কত তারিখ খেয়াল আছে? মাস শেষে পয়সা চাও কেন? মাসের শুরুতে চাও না কেন?' কলিমুদ্দি গম্ভীর গলায় বলে, 'আইজকা ছয় তারিখ।' গুল মোহাম্মদ ভারিক্কি চালে বলেন, 'দুপাতা ইংরেজি পড়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করছো মনে হচ্ছে? সব কিছু খালি ইংরেজিতে মাপো? বাংলা মাসের শুরুতে তোমার বিল শোধ করে দেবো না হয়।' কলিমুদ্দি মাথা চুলকায়, বাংলা মাসের হিসাব রাখা তার জন্যে ভারি শক্ত কাজ, জানেন গুল মোহাম্মদ। নিজের পিঠ আরেক দফা চাপড়ে দিয়ে তিনি ধপ করে একটা বেঞ্চে বসে পড়েন, তারপর সন্তর্পণে ঝোলা থেকে বইটা বের করে পড়া শুরু করেন। হারামজাদা আক্কাস আরেকটু হলেই দিতো বইটার মজা মাটি করে। পড়তে থাকেন তিনি বারো নাম্বার পৃষ্ঠা থেকে। আসলেই, গোয়েন্দা ঝাকানাকা অকুস্থলে এসে দুয়েকটা সূত্র যাচাই করে কেন যেন হঠাৎ ক্ষেপে গেলেন, পকেট থেকে একটা পাটের দড়ি বের করে ঈমান পাশার হাত পা কষে বাঁধলেন, তারপর তার মুখে নিজের পা থেকে খুলে নেয়া একটা ময়লা মোজা গুঁজে দিয়ে কোত্থেকে একটা কাঠের রুলার যোগাড় করে এনে সেটা দিয়েই আচ্ছা করে শুয়োরপেটা পেটালেন তাকে। মারের চোটে ঈমান পাশার সব স্মার্টনেস হাওয়া হয়ে গেলো, সে কিছুক্ষণ মাটিতে কইমাছের মতো লাফঝাঁপ দিয়ে অবশেষে মরার মতো পড়ে রইলো। তারপর তার মুখ থেকে মোজা খুলে নেয়ার সাথে সাথে সে স্বীকার করলো, সে নিজের হাতে তার মামা ওরফে খানবাহাদুর চমনকুমারকে গলা টিপে খুন করেছে। কিন্তু চমনকুমারের গলায় কোন দাগদুগ নেই, বরং পিঠের ওপর একটা পেল্লায় সাইজের ভোজালি আমূল বিদ্ধ! এটুকু পর্যন্ত পড়েই গুল মোহাম্মদের ভেতরটা কেমন যেন খালি খালি লাগে। ঘটনা কোন দিকে মোড় নিচ্ছে তাহলে? অনেক বিশ্লেষণ করে তিনি সিদ্ধান্তে আসেন, তাঁর ক্ষিদে পেয়েছে। সেই কখন কিছু ছোলা খেয়েছেন, এখন ঝাঁ ঝাঁ দুপুর, কিছু খেতে হবে। কিন্তু কলিমুদ্দির তেলেভাজার দোকানে পুরিসিঙ্গারা ছাড়া কিছু পাওয়া যায় না। সাতপাঁচ ভেবে তিনি হাঁক ছেড়ে জুম্মনকে ডাকেন, দুটো সিঙ্গারার অর্ডার দেন। অবিলম্বে জুম্মন ছোকরা একটা স্টিলের প্লেটে দুটো গরমাগরম সিঙ্গারা আর জঘন্য চেহারার কমলা রঙের নামকাওয়াস্তে তথাকথিত সস নিয়ে হাজির হয়। প্লেটটা নামিয়ে রেখে তাকে চলে যাওয়ার ইশারা করেন গুল মোহাম্মদ, কিন্তু জুম্মন দুপাটিতে বত্রিশখানা দাঁত বায়ুমন্ডলে বার করে রাখে। 'কী হলো?' ভুরু কুঁচকে বলেন গুল মোহাম্মদ। 'হে হে, এই বই পড়তাছেন?' জুম্মন হাসে। 'তাতে তোর কী? যা ভাগ!' 'জোস বই, স্যার! আমিও পইড়া ফালাইছি!' জুম্মন আরো হাসে। গুল মোহাম্মদ আঁতকে ওঠেন। 'বলিস কী?' প্রমাদ গোনার প্রস্তুতি নেন তিনি। 'হ স্যার। এই সময় তো কোন কাম থাকে না, দোকানে বইসা বইসা বই পড়ি।' জুম্মন খুশির চোটে গড়িয়ে পড়ে, কেন কে জানে। 'ভালো করিস। এখন ফোট!' গুল মোহাম্মদ সিঙ্গারায় কামড় দেন। জুম্মন কিন্তু আপনাআপনি ফোটে না, গুল মোহাম্মদের জন্যে সে তার পাঠকহৃদয় কুসুম বিকশিত করে তোলে একেবারে। 'আপনাগো স্যার, ইশটাইলই আলাদা।' 'আমাদের কোন ইশটাইল?' গুল মোহাম্মদ ক্ষেপে ওঠেন, জুম্মন তাঁর নিখরচায় রোজ রোজ সিঙ্গারাসেবনের দিকে কটাক্ষ করছে ভেবে। 'মানে স্যার, গোয়েন্দাগো কামকারবার স্যার।' জুম্মন শুদ্ধিপত্রে প্রকাশ করে। 'কেন, কী করেছি আমি?' গুল মোহাম্মদ নিজের গোয়েন্দাসুলভ ইশটাইল সম্পর্কে সচকিত হয়ে ওঠেন। 'আপনে আর কী করবেন, কিছুই করেন নাই। মাগার, এই ঝাকানাকা ভাইসাব, কঠিন পাবলিক স্যার! ঈমান পাশা নামের এক মস্তানরে বাইন্ধা এমন কচুয়া মাইর লাগাইছে, ঐ হালায় কানতে কানতে স্বীকার গেছে স্যার, সে নাকি নিজেই গলা চাইপ্যা তার মামুরে ফিনিশ কইরা ফালাইছে! কিন্তুক, মামু হালায় তো ছেনির কোপ খায়া মরছে। তারপর, বুঝলেন স্যার, আপনারে আর কী কমু, আপনে নিজেও তো গোয়েন্দা, ঝাকানাকা ভাইসাবে গিয়া হেই খানবাহাদুরের ভাইস্তারে শুরু করলো মাইর। ঐ হালায় আবার এক মন্ত্রীর শালা, কিন্তুক ঝাকানাকা এইসব মন্ত্রীপেসিডেন্টগো পোঁছে না স্যার, তারে মাইরা ভর্তা বানায়া তারে দিয়া কবুল করাইছে, যে হেই ব্যাডাই খুনী। হেই ব্যাডা নিমকহারাম ভাইস্তা তখন কয় কি, হ্যায় নাকি নাইনশুটার দিয়া গুলি কইরা মারছে তার চাচারে ---।' গুল মোহাম্মদ একটা সিঙ্গারা প্রায় শেষ করে এনেছিলেন, পরবর্তীটাকে বগলদাবা করে ঝেড়ে দৌড় মারেন তিনি, তবে তার আগে বইটাকে ঝোলায় পুরে নিতে ভোলেন না। ৪. পার্কে শুয়েই বইটা পড়া শেষ করতে হবে, ভাবলেন গুল মোহাম্মদ। পার্কটা এখান থেকে মোটামুটি দূরে, কাজেই জোর হাঁটা শুরু করলেন তিনি। এ কী ঘোর বিপর্যয় তাঁর সামনে, জুম্মন পর্যন্ত তাঁর আগে এই বই পড়ে শেষ করে ফেলেছে। পথে পিন্টুর সাথে দেখা হলো তাঁর, ঝট করে টুপিটা খুলে মুখ আড়াল করলেন তিনি, পিন্টু নিঃসন্দেহে বইটা পড়ে ফেলেছে, এবং তাঁর সাথে দেখা হলেই এটার আরো খানিকটা তাঁকে শুনিয়ে দেবে সে। কোন দরকার নেই। পিন্টুকে পাশ কাটিয়ে গটগটিয়ে বেরিয়ে যান তিনি। খানিক বাদে মিন্টুকেও একই কায়দায়, ক্যামোফ্লেজের মাধ্যমে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে সামনে এগিয়ে যান তিনি। তবে পিন্টু আর মিন্টুর মধ্যে দেখা হওয়ার পর তাদের কথোপকথনটা তিনি শুনতে পান না। মিন্টু জানায়, গুলু ভাইয়ের মাথা পুরোপুরি আউট হয়ে গেছে। আজ সকালে নাকি আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলো, ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ার জন্যে খুব লাফাচ্ছিলো, হাবলুর বাবা না থাকলে এতক্ষণে আঞ্জুমানে মফিদুলে খবর দিতে হতো। আর আক্কাস আলির দোকানে গিয়েও খুব উৎপাত করেছে, ইস্কুলের বই থেকে কি কি যেন মুখস্থ বলা শুরু করেছিলো। পিন্টু জানায়, তারও সেরকমই ধারণা। একটু আগে সে দেখেছে, কলিমুদ্দির দোকানে ঢুকে জুম্মনের একটা ইন্টারভিউ নিয়েছে গুলু ভাই। তারপর কি একটা জিনিস কেড়ে নিয়ে দোকান থেকে দৌড়াতে দৌড়াতে বেরিয়ে এসেছে। তাকে দেখে টুপির আড়ালে আত্মগোপন করতে গিয়েছিলো ব্যাটা, কিন্তু টুপিটা যে তার শরীরের মাপে না বানিয়ে মাথার মাপে বানানো হয়েছে, এই কথাটাই লোকটার মনে ছিলো না। ওদিকে আধঘন্টা হনহনিয়ে হেঁটে পার্কে পৌঁছে একটা পরিচ্ছন্ন বেঞ্চ খুঁজে নিয়ে ঝোলাটা মাথায় গুঁজে বইটা খুলে বসেন গুল মোহাম্মদ, আর আপন মনে গজরাতে থাকেন। এই জুম্মনটাও এই সব বই পড়া শুরু করে দিয়েছে? বখে যাবার আর বাকি রইলো কী তবে? পড়তে পড়তে গুল মোহাম্মদ আবিষ্কার করেন, কথা সত্য, গোয়েন্দাদের ইশটাইলই আলাদা। ঝাকানাকা ঈমান পাশাকে পেঁদিয়ে তার মুখ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করেও সন্তুষ্ট হন না, কী আরেকটা সূত্র যাচাই করে তিনি এবার খানবাহাদুর চমনকুমারের ভ্রাতুষ্পুত্র খাজা খরমুজ মোহান্তের ঘাড়ের ওপর লাফিয়ে পড়েন। তাঁর নির্দেশে পুলিশ খাজা খরমুজ মোহান্ত, যে কি না দেশের তৎকালীন ছাগলসম্পদ মন্ত্রীর নিতান্ত আপনজন, চরম কুটুম্ব, পিছমোড়া করে বাঁধে, তারপর তাঁকে ফ্যানের হুকের সাথে উল্টো করে ঝুলিয়ে দেয়। তারপর ঝাকানাকা একটা রুমাল পাকিয়ে ঠাস ঠাস করে মারতে থাকেন মোহান্তের মুখে। প্রথম প্রথম মোহান্ত খুব চোটপাট করছিলো, থানার ওসিকে নাকি সে খাগড়াছড়ি বদলি করে দেবে, ঝাকানাকাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ধরে নিয়ে গিয়ে এই প্যাঁদানির শোধ নেবে, কিন্তু আধ ঘন্টা ধোলাই দেবার পর সে সুর পাল্টায় এবং স্বীকার করে, কথা সত্য, সে নিজে একটা নাইনশুটার দিয়ে নয়টা গুলি গুনে গুনে করেছে চাচার পেটে। ব্যাপারটা খানিকটা অবিশ্বাস্য, কারণ মোহান্ত নয় পর্যন্ত গুনতে জানে, এই কথাটা কেমন যেন জল মেশানো। কিন্তু, যা আগেই জেনেছেন গুল মোহাম্মদ, নিহত খানবাহাদুর কোন গুলি খেয়ে মরেননি, বরং কে বা কাহারা ইয়াবড় একটা ভোজালি দিয়ে কুপিয়ে তাঁর ভবলীলা সাঙ্গ করে দিয়েছে। এ পর্যায়ে কে যেন গুল মোহাম্মদের কানের কাছে বলে ওঠে, 'এই বাদেএএএএএম!' মনোযোগ নষ্ট হওয়ায় চটে যান গুল মোহাম্মদ। ঘাড় ফিরিয়ে বাদামওয়ালা ছোকরাটাকে কষে ধমক দেন তিনি, 'এই দিনে দুপুরে গোল করছিস যে বড়? যা ভাগ!' ছোকরা তবুও বাদাম সাধে তাঁকে। 'লন স্যার, বাদাম খাইতে খাইতে পড়েন।' গুল মোহাম্মদ আড়চোখে বাদামগুলোকে খানিকটা দেখে নিয়ে বলেন, 'উঁহু, বাদাম খাওয়ার পয়সা নেই সাথে। তবে তুই যদি আমাকে দুটাকার বাদাম এমনি এমনি দিস, তাহলে তোকে এই বইটা থেকে একটা গল্প শোনাতে পারি।' বাদামওয়ালা ছোকরা হো হো করে হাসে। 'কী যে কন স্যার!' গুল মোহাম্মদ তাকে পাল্টা প্রলোভন দেখান। 'আরে ব্যাটা, গল্প শুনতে সমস্যা কী তোর? সারাদিন ঘুরে ঘুরে বাদাম বেচিস, একটা গা ছমছমে গল্প শুনলে তোর রাতে ভালো ঘুম হবে!' এবার ছোকরা চোখ টিপে বলে, 'এই বইটা স্যার আমি অলরেডি পইড়া ফালাইছি!' গুল মোহাম্মদের প্রায় বেঞ্চ থেকে পড়ে যাবার দশা। 'বলিস কী? তুই বই পেলি কোথায়?' কোনমতে টাল সামলে বলেন তিনি। 'বাদামের ঠোঙ্গা বানামু দেইখা এক জায়গা থেইক্কা দুই ট্যাকা দিয়া কিনছিলাম বইটা, তো মনে করলাম, ঠোঙ্গা বানানের আগে একটু পইড়া দেহি কী লিখছে। --- জব্বর একখান বই স্যার, দুই লম্বর খুন যখন হয়, ঝাকানাকা ভাইজানের তো মাথার ঘায়ে কুত্তা পাগল অবস্থা! যারে সে প্রথমে ভাবছিলো খুনী, হেই ঈমান পাশারে কে জানি আইসা গলা টিপ্যা মাইরা রাইখা গেছে। বুইঝ্যা দ্যাহেন স্যার, এমুন জোয়ান লোকরে গলা টিপ্যা মারতে পারে, কে সেই তালেবর ---?' সেই তালেবরের পরিচয় বলে দেয়ার আগেই গুল মোহাম্মদ বিকট একটা চিৎকার দেন, তারপর ঝোলার মধ্যে বইটা পুরে কষে একটা দৌড় দেন পার্কের কোণাকুণি রাস্তা ধরে। ৫. ঝুম বৃষ্টি নামে। গুল মোহাম্মদ বুঝতে পারেন, এই বৃষ্টিতে তিনি বাইরে ঘোরাঘুরি করতে পারবেন না। শুধু তাই না, তিনি পার্কে একটু শান্তিমতো শুয়ে বইটা পড়তে পারবেন না, বাদামবাজ ছোকরাটা তাঁকে তাড়া করে সেই ঈমানঘাতী তালেবরের পরিচয় শুনিয়ে ছাড়বে। কলিমুদ্দির দোকানে বৃষ্টির সাথে তেলেভাজা বেশ জমতো, কিন্তু জুম্মন রাসকেলটা তাঁকে ছাড়বে না, গল্পের আরো খানিকটা শুনিয়ে দেবে তাঁকে, মন্ত্রীর শালাদের লাঞ্ছিত হবার গল্প শোনানোর এমন সুযোগ কি জুম্মন ভবিষ্যতে আর কখনো পাবে? আক্কাস আলির দোকানের বাইরে সেই বেঞ্চটায় বসার আর জো নেই, বৃষ্টিতে একেবারে কাকভেজা হয়ে যাবে সেটা, আর যদিও বা না যায়, আক্কাস আলি তাঁর সর্বনাশ করে ছাড়বে, গল্পের মুখরোচক সব অংশ মাটি করে ছাড়বে। এর মানে হচ্ছে, আবার তাঁকে সেই হতচ্ছাড়া হাবলুর বাবা শাহেদ সাহেবের বাড়ির চিলেকোঠাতেই ফিরে যেতে হবে। কিন্তু বাড়ি ফেরা মাত্রই শাহেদ সাহেব উজিয়ে এসে খুনীর নামটা বলে দেবেন, গল্পের মজাটাই নষ্ট করে দেবেন, শালা! এর কী সমাধান? চটজলদি গুল মোহাম্মদের উপমহাদেশখ্যাত মস্তিষ্কে একটা বুদ্ধি খেলে যায়, তিনি হুঙ্কার ছেড়ে একটা রিকশা ডাকেন। এক বাচ্চা ছোকরা, সারা গায়ে পলিথিন জড়ানো, ভারিক্কি চালে প্যাডেল মেরে হাজির হয় তাঁর সামনে। তিনি রিকশায় চড়ে বসেন, হুডটা তুলে দেন, একটা ক্যানভাস টেনে নেন শরীরের ওপর, তারপর ঝোলা থেকে বইটা বের করে তাঁর বাসস্থানের ঠিকুজি চিনিয়ে দেন পিচ্চি রিকশাওয়ালাটাকে। তারপর পড়তে থাকেন। এই রিকশায় বসে বসেই বইটা পড়ে শেষ করবেন তিনি। পড়তে পড়তে শিউরে ওঠেন গুল মোহাম্মদ। আশ্চর্য! ঈমান পাশাকে কে বা কাহারা গলা টিপে খুন করে রেখে গেছে। নিজের বাড়ির বৈঠকখানায় ইজিচেয়ারে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছিলো ঈমান পাশা, আর ঝালমুড়ি খাচ্ছিলো, তাকে মৃত অবস্থায় আবিষ্কার করে তার বাবুর্চি, জিভ বেরিয়ে আছে, চোখ খোলা। তাড়াহুড়ো করে পুলিশে ফোন করে সে। পুলিশ আবার ফোন করে ঝাকানাকাকে। ঝাকানাকা অকুস্থলে গিয়ে কয়েকটা সূত্র খুঁটিয়ে দেখে বাবুর্চিটার কান মলে দিয়ে গালে কষে একটা থাপ্পড় মারেন। তিনি বলেন, এমন নিম্নমানের ঝালমুড়ি কাউকে খেতে দেয়া হলে সে নিঃসন্দেহে দম আটকে মরবে, ঈমান পাশা তো আর এক্কাগাড়ির সাথে জুতে দেয়া ঘোড়া নয়, যে যা সামনে পাবে তা-ই গিলে খাবে, তারও তো একটা রুচিবোধ আছে। বাবুর্চিকে আরেকটা থাপ্পড় মারতে যাবেন ঝাকানাকা, এমন সময় পুলিশের ডাক্তার ঘোষণা করে, ঈমান পাশাকে মুড়ি খাইয়ে নয়, বরং গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে, তার গলায় স্পষ্ট দাগ দেখা যাচ্ছে, যা কোন ঝালমুড়ির পক্ষে গলার ভেতরে অবস্থান করে সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। ঝাকানাকা খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েন, আরো দুয়েকটা সূত্র আরো ভালো করে খুঁটিয়ে দেখে তিনি ছুটে যান খাজা খরমুজ মোহান্তের বাড়িতে। সেখানে সুইমিং পুলে এক লাস্যময়ী তরুণীর সাথে একটা লাল প্লাস্টিকের হাফপ্যান্ট পরে সাঁতার কাটছিলো মোহান্ত, ঝাকানাকা তাকে চুলের মুঠি ধরে সুইমিং পুল থেকে বেড়ালছানার মতো টেনে তুলে আনেন, তারপর সেই লাস্যময়ীর সামনেই পেঁদিয়ে মোহান্তকে একশা করে ছাড়েন। মোহান্ত প্রথমটায় খুব তড়পাচ্ছিলো, বলছিলো ঝাকানাকার পেছনে নাকি মাফিয়া লেলিয়ে দেবে, বম্বের গুন্ডাসর্দার দাউদ আব্রাহাম নাকি তার ছোটবেলার বন্ধু, ইত্যাদি, কিন্তু কুলাতে না পেরে অবশেষে ভেজা বেড়ালের মতো মোহান্ত স্বীকার করে, সে-ই ছুরি দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে খুন করেছে ঈমান পাশাকে। কিন্তু, কী আপদ, ঈমান পাশাকে তো গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে, মোটেই তাকে ছুরি দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপানো হয় নি! তখনকার মতো মোহান্তকে সেই লাস্যময়ীর কোলে ছুঁড়ে ফেলে রেখে ফিরে যান ঝাকানাকা। পরের কয়েকটা দিন নিজের ঘরে বসে দিনরাত পায়চারি করে, মাথার চুল ছিঁড়তে ছিঁড়তে অবশেষে ঝাকানাকা যখন প্রায় খুনীকে ধরে ফেলেছেন, তখন ফোন আসে, খাজা খরমুজ মোহান্তকে কে বা কাহারা সুইমিং পুলের পানিতে ডুবিয়ে মেরেছে, তার ইয়া মোটা হাতির মতো লাশ ভাসছে পানিতে, পরনে সেই লাল প্লাস্টিকের হাফপ্যান্ট। অমনি ঝাকানাকা অকুস্থলে ছুটে যান, তারপর সেই লাস্যময়ী তরুণী, যে কিনা তৎকালীন তামাকসম্পদ মন্ত্রীর খালাত বোন --- মোহান্ত নিজেও মন্ত্রীর আত্মীয়, তাই সে মন্ত্রীর আত্মীয় ছাড়া কারো সাথে বড় একটা মেশে না --- তাকে চুলের মুঠি ধরে পুলের সামনে নিয়ে আসেন, তারপর একেবারে দজ্জাল স্বামী যেভাবে নিরীহ বউকে পিটিয়ে নারীনির্যাতন করে, সেভাবে মেয়েটাকে আগাপাশতলা ধোলাই লাগান। সত্যি, আশ্চর্য এই গোয়েন্দাপ্রবরের ইশটাইল। মারের চোটে অস্থির হয়ে মেয়েটা স্বীকার করে, সে-ই এককেজি ইঁদুর মারা বিষ মদের সাথে গুলিয়ে খাইয়ে ঐ হাতির মতো মোটা মোহান্তকে খুন করেছে। কিন্তু, আবারও সেই ফ্যাকড়া, কী যন্ত্রণা, মোহান্তর শরীরে বিষক্রিয়ার কোন চিহ্ন নেই, বরং তাকে যে পানিতে ডুবিয়ে মারা হয়েছে, সেটা স্পষ্ট বোঝা যায়, অটোপ্সিতে তার ফুসফুস ভর্তি ক্লোরিন মেশানো পানি পাওয়া গেছে। এতটুকু এসে কাহিনী খুব জটিল মোড় নেয়, আর রিকশাটাও এক জটিল মোড় নিয়ে গুল মোহাম্মদকে হাজির করে তাঁর বাড়ির সামনে। ততক্ষণে বৃষ্টি কমে এসেছে। গুল মোহাম্মদ সিদ্ধান্ত নেন, তিনি পাইপ বেয়ে ছাদে উঠে যাবেন, যাতে ঐ শাহেদ সাহেব নামের বাজে লোকটার সাথে তাঁর মুখোমুখি হতে না হয়। পকেট থেকে একটা পাঁচ টাকার কয়েন বের করে রিকশাওয়ালা ছোকরার দিকে বাড়িয়ে ধরেন তিনি। কিন্তু ছোকরাটা চরম খ্যাঁচখ্যাঁচ করতে থাকে। এই বৃষ্টির মধ্যে সে ছোটমানুষ বাতাস ঠেলে ঠেলে এতদূর প্যাডেল চালিয়ে এসেছে, কমসে কম দশটাকা ভাড়া দেয়া উচিত তাকে। গুল মোহাম্মদ তেড়ে ওঠেন। 'বটে, পয়সা সস্তা পেয়েছিস? আর তুই তো দেখছি আগাগোড়া পলিথিনে মোড়া, বৃষ্টির মধ্যে এসেছিস তো কী হয়েছে? আর বাতাস কি ঠেলার মতো জিনিস নাকি রে ব্যাটা মর্কট? বাতাস কি ঘানিগাছের হ্যান্ডেল, যে ঠেলে বেড়াবি?' ছোকরাটা তবুও ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকে। দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের আলোকে নানা যুক্তি তুলে ধরে সে। ট্যাক্সমন্ত্রী যে কী চামারের মতো নির্লজ্জভাবে দরিদ্রের লুঙ্গির গিঁটে গোঁজা যৎসামান্য পয়সা চালডালের দামবাড়িয়ে দিয়ে লুটে নিচ্ছেন, তার এক চিত্রসফল বর্ণণা দেয় সে। এবং এই মন্ত্রীর অত্যাচারের হাত থেকে টিকে থাকার জন্যে তাকে কমসে কম আট টাকা ভাড়া দিতে হবে, সাফ জানিয়ে দেয় সে, নয়তো অচিরেই তার লুঙ্গিটিও নাকি মন্ত্রী খুলে নিয়ে যেতে পারেন, কিছুই বলা যায় না। গুল মোহাম্মদ নিজেও এই আলোচ্য মন্ত্রীটির ওপর খাপ্পা, তাঁর মনে কিঞ্চিৎ সহানুভূতি জেগে ওঠে, অতিরিক্ত একটি এক টাকার কয়েন তিনি ছোকরার দিকে বাড়িয়ে ধরেন। রিকশাওয়ালা কয়েনটা হাতে নিয়ে সেই আলোচ্য মন্ত্রীআক্রান্ত বিপর্যস্ত লুঙ্গিটির গিঁটেই গোঁজে, তারপর বলে, 'আর দুই ট্যাকা?' এই বাড়াবাড়িতে গুল মোহাম্মদ ক্ষেপে ওঠেন, 'ঐ গেলি, নাকি মন্ত্রী ডাকবো?' ছোকরা এবার ঠান্ডা চোখে তাঁকে আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করে। তাঁর মাথায় চাপানো দুর্ধর্ষ সবুজ টুপি, তাঁর কাঁধের ঝোলা, তাঁর হাতে ধরা 'খানবাহাদুর হত্যা রহস্য', তাঁর পায়ের মলিন স্যান্ডেল, সবই সময় নিয়ে দেখে সে। তারপর ঠান্ডা গলায় বলে, 'যাইতাছিগা। কিন্তুক একখান কথা হুইন্যা রাখেন!' গুল মোহাম্মদ তেড়ে যান তার দিকে। 'কী, কী শোনাবি তুই আমাকে?' ছোকরাটা তাঁর হাতে ধরা বইটার দিকে ইশারা করে, তারপর বলে, 'এই বইটা কি আপনের পড়া শ্যাষ?' গুল মোহাম্মদ খানিকটা শান্ত হয়ে বলেন, 'না, মাত্র তিরিশ পৃষ্ঠা শেষ হয়েছে, আরো পঞ্চাশ পৃষ্ঠা বাকি। কেন?' এবার ছোকরা সন্তুষ্ট গলায় বলে, 'আর পইড়েন না।' গুল মোহাম্মদ তেড়িয়া হয়ে বলেন, 'কেন হে বদ বালক? পড়বো না কেন?' এবার রিকশাটা ঘুরিয়ে নিতে নিতে রিকশাওয়ালা বলে, 'মাঠারগুলি সব খান সাহেবের দ্বিতীয় পক্ষের বউ করছে!' (সেপ্টেম্বর ১৯, ২০০৩)
false
rn
বাংলা সাহিত্যে হুমায়ূন আহমেদ পারমাণবিক বোম। একটা সময় ছিল হিমু সেজে দিন-রাত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাম।হুমায়ূন স্যার আর দুইটা বছর বেঁচে থাকলেই সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পেতেন। স্যার আপনার জন্য আমার কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে। আপনার সমতুল্য আর কেউ নেই। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে- হুমায়ূন স্যার হুমায়ূন স্যার....' আজ আপনার জন্মদিন, যেখানেই থাকেন ভালো থাকবেন। শুভ জন্মদিন!! আপনার একজন ভক্ত, যার চোখে আপনি মহাপুরুষ।"হূমায়ুন আহমেদ" যেখানেই থাকুন, ভাল থাকুন। শুভ জন্মদিন। হূমায়ুন আহমেদের জন্মদিন। প্রতিটা টিভি চ্যানেল, প্রতিটা সংবাদ পত্র খুব যত্নসহকারে এই জিনিসটা মনে করিয়ে দিতে থাকবে। এতে ভাল লাগবে কিন্তু তারচেয়ে বেশি হবে বুকের ভিতর একধরনের হাহাকার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় লেখক হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হয়।হুমায়ূন আহমেদে মুগ্ধ হয়ে ছিলাম সারা জীবন। এখনও হুমায়ূনের ভক্ত আমি। শব্দের এই যাদুকরের কাছে অনেক অনেক ঋণ। এই যাদুকর যা লেখেন, তাতেই মুগ্ধ হয়ে যাই। এতো মায়া নিয়ে কেউ কখনো লিখছে বলে আমার জানা নেই। অসামান্য জাদুকর। এমন সম্মোহনী শক্তি নিয়ে আর কেউ আসেননি। হুমায়ূন আহমেদের পক্ষেই সম্ভব হাসির একটা বইয়ের মধ্যে এমন কয়েকটা তথ্য দিয়ে দেয়া যেইটা জ্ঞানের মোটা মোটা বইয়ের মধ্যে লুকায়া থাকে। এই ক্ষমতাটা দুর্লভ। একবার ভাবুন, হুমায়ুন আহমেদ বলে কোনো লেখকের জন্ম হয়নি। তাহলে কেমন হত? বাংলা সাহিত্যে আর আমাদের চেতনায় তিনি সবসময় বেঁচে থাকবেন.... ।‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের সেই বাকের ভাই মাস্তান হলেও তার মনে ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সম্পদ, মনুষ্যত্ব। সে কঠোর ছিল তবে তা অন্যায়ের প্রতি।জীবনের চলার পথে অসংখ্য অন্যায়ের প্রতি মাথা নত করে চলে মানুষ। বাকের ভাই তার ক্ষমতা দিয়ে যতটা না অন্যায় করতেন, অসহাস মানুষের সহায় হতেন তার চেয়ে বেশি। সেই বাকের ভাইয়ের স্রষ্টা ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। মন ছুঁয়ে যাওয়া তার আরেকটি নাটক ‘অয়োময়’। গ্রামের জমিদারের সেই কর্মচারী কানকাটা রমজান। নাটকের মধ্য দিয়ে হুমায়ূন আহমেদ যেমন জমিদার ও তার কর্মচারীদের অন্যায় কর্মকাণ্ড তুলে ধরেছিলেন তেমনি তিনি অন্যায়ের বিপরীতে সত্যের জয়কেও তুলে ধরেছেন। কানকাটা রমজানের কথা ভাবলেই মনে ভেসে ওঠে ফেরদৌসী মজুমদারের কপালে সেই পয়সা গরম করে ছ্যাঁকা দেয়ার ঘটনা। নাটকের প্রতিটা চরিত্র মানুষের মনে ছাপ ফেলার কারণ এই ছোট ছোট ঘটনা হুমায়ূন আহমেদ এমনভাবে তুলে ধরতেন যে বাস্তব জীবন থেকে তা কখনো ভিন্ন মনে হতো না। তার ‘বহুব্রীহি’ নাটকটিও দর্শকের মন কেড়েছিল।লীলাবতী তাকিয়ে আছে। আতাহার লক্ষ্য করছে, মেয়েটির চোখে পানি জমতে শুরু করেছে। চোখ পানিতে ভরে উঠতে শুরু করছে। কি আশ্চর্য সুন্দর দৃশ্য! সে অনেকবার ভেবেছে, এই পৃথিবীর অপূর্ব কিছু দৃশ্যের সে একটা তালিকা করবে। যেমন-১। গরমের দুপুরে মেঝেতে শুধুমাত্র একটা বালিশ পেতে তরুণী শুয়ে ঘুমুচ্ছে। তার মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে। ফ্যানের হাওয়ায় মাথার কিছু চুল উড়ছে। ২। বাচ্চা একটা ছেলের হাত থেকে গ্যাস বেলুন ছুটে গেছে। বেলুনটা আকাশে উঠে যাচ্ছে। ছেলেটা হতভম্ব হয়ে বেলুনটার দিকে তাকিয়ে আছে। কান্না তার বুকের কাছে জমা হয়ে উঠেছে, এখনো গলার কাছে আসে নি। ৩। প্রেমিকপ্রেমিকা রিকশা করে যাচ্ছে। রিকশার হুড খোলা। ছেলেটা ক্রমাগত বকবক করছে, হাতপা নাড়ছে, মেয়েটা বসে আছে মাথা নিচু করে। তার ঠোঁটের কোণায় চাপা হাসি। ৪। বাচ্চা মেয়ে মায়ের হাই হিল পরে হাঁটার চেষ্টা করছে। এঁকেবেঁকে যাচ্ছে। ৫। একটা তরুণীর চোখ ধীরে ধীরে পানিতে ভরে উঠছে। শেষ পর্যন্ত সে অবশ্য কাঁদবে না। চোখের জল চোখেই শুকিয়ে ফেলবে। ৬। স্ত্রী রাতে স্বামীর জন্য এক কাপ চা নিয়ে এসেছেন। স্বামী বিস্মিত হয়ে বললেন, চা চাইনি তো! তারপর অতি আনন্দের সঙ্গে চায়ের কাপের জন্য হাত বাড়ালেন... ( গ্রন্থঃ কবি ) যে ছেলের এক ঠ্যাং নেই সেই ছেলের মা নিজের ছেলে সম্পর্কে ভাবে - “লাঠিতে ভর দিয়ে আমার ছেলের মত সুন্দর করে কেউ হাঁটতে পারে না ”(হূমায়ূন আহমেদ) তার ডাক নাম হিমু। ভালো নাম হিমালয়। বাবা আগ্রহ করে হিমালয় নাম রেখেছিলেন যেন বড় হয়ে সে হিমালয়ের মত হয় - বিশাল ও বিস্তৃত, কিন্তু ধরা-ছোঁয়ার বাইরে নয়। হাত দিয়ে স্পর্শ করা যায়। ইচ্ছে করলে তিনি ছেলের নাম সমুদ্র রাখতে পারতেন। সমুদ্র বিশাল এবং বিস্তৃত। সমুদ্রকে হাত দিয়ে স্পর্শ করা যায়। তার চেয়েও বড় কথা, সমুদ্রে আকাশের ছায়া পড়ে। কিন্তু তিনি সমুদ্র নাম না রেখে রাখলেন হিমালয়। কঠিন মৌ পর্বতমালা, যার গায়ে আকাশের ছায়া পড়ে না ঠিকই কিন্তু সে নিজেই আকাশ স্পর্শ করতে চায়। --- দরজার ওপাশে - হুমায়ূন আহমেদ
false
ij
‘আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর’_ পল্লীকবি জসীমউদ্দীন-এর একটি কবিতা পল্লীকবি জসীমউদ্দীন। একটা সময় ছিল যখন- পশ্চিম বাংলায় কাঁথাকে শুধু কাঁথাই বলা হত। ১৯২৯ সালে কবি জসীমউদ্দীন লিখলেন ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ (The Field of the Embroidered Quilt )। তারপর থেকে পশ্চিম বাংলায় কাঁথাকে বলা হয় নকশী কাঁথা। এই হল বাংলার অবিস্মরণীয় এক দিক। এভাবেই যুগে যুগে বাংলার কবিকূল বাংলার লোকজজীবনে দান করেন ভাব, ভাষা ও নৈকট্য। পল্লীকবি জসীমউদ্দীন-এর জন্ম ফরিদপুরের তাম্বুলখানা গ্রামে। ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি। কবির কাব্যশক্তি কৈশরকাল থেকেই লক্ষিত হয়েছে। কলেজ জীবনে ‘কবর’ কবিতাটি রচনা করে বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৩১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে এম এ পাস করেন। পল্লীসাহিত্যের সংগ্রাহক হিসেবে কর্মজীবন শুরু। ১৯৩৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে লেকচারার পদে যোগ দান করেন। পরে অবশ্য সরকারী চাকরি করেন। কবির মৃত্যু ১৯৭৬ সালে । ২ সম্প্রতি, জসীমউদ্দীন-এর একটি কবিতা পাঠ করে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। কবিতাটি ছেলেবেলায় পড়েছিলাম-তখন কবিতাটির ভিতরের মানে ততটা বুঝতে পারিনি-আজ বুঝতে পেরে হতবাক হয়ে গেলাম। কবিতার নাম:‘প্রতিদান’। কবিতার ভাব এমন মহৎ - এমন মানবিক -যে তার অনিবার্য অভিঘাতে অভিভূত হয়ে যেতেই হয়। অসাধারন ছন্দে কবিতাটি রচনা করেছেন কবি। যে মোরে করিল পথের বিবাগী;- পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি; যেন ভিতর থেকে ওহির মতন নাজিল হয়েছে। কবিতাটি পাঠ করা যাক। আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর, আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর। যে মোরে করিল পথের বিবাগী;- পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি; দীঘল রজনী তার তরে জাগি ঘুম যে হয়েছে মোর; আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর, আমার এ কূল ভাঙিয়াছে যেবা আমি তার কূল বাঁধি, যে গেছে বুকে আঘাত হানিয়া তার লাগি আমি কাঁদি; সে মোরে দিয়েছে বিষে ভরা বাণ, আমি দেই তারে বুক ভরা গান; কাঁটা পেয়ে তারে ফুল করি দান সারাটি জনম ভর,- আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর। মোর বুকে যেবা কবর বেঁধেছে আমি তার বুক ভরি রঙিন ফুলের সোহাগ-জড়ানো ফুল-মালঞ্চ ধরি যে মুখে সে কহে নিঠুরিয়া বাণী, আমি লয়ে সখি, তারি মুখখানি, কত ঠাঁই হতে কত কি যে আনি, সাজাই নিরন্তর আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর। এমন মহৎ ভাবনা কী করে একজন মানুষ ভাবতে পারেন? যে মুখে সে কহে নিঠুরিয়া বাণী, আমি লয়ে সখি, তারি মুখখানি, কত ঠাঁই হতে কত কি যে আনি, সাজাই নিরন্তর ভাবতে উদবুদ্ধ হই-প্রতিদানের সমতূল্য কোনও কবিতা কি বিশ্বসাহিত্যে রয়েছে। যদি বলেন-কবিতায় নীতিবাক্য ছড়ানো অনুচিত-প্রতিদান তা হলে কি? এ কি কবিতা না স্বর্গীয় শ্লোক? যে শ্লোকের বাস্তবায়নের জন্য রচিত হয়েছে জগৎ। কবি জসীমউদ্দীনের শুভবোধের উৎস কি? আবহমান বাংলা? দক্ষিণ বাংলায় তাঁর ছেলেবেলা কেটেছে ...আমরা বলি বাংলা মানবিক। তার বারো মাসে তেরো পার্বণ-যে পার্বণে অনাহূত কেউই নয়-এমন কী পথের কুকুরও! কিন্তু, কবির এমনতরো গভীর শুভবোধের উৎস কি? আমি ভাবি আর ভাবি। আর, এলোমেলো হয়ে যাই। প্রাচীন বাংলার কত ছবি যে ভাসে মনে। মনে ভাসে পদ্মার মাঝিদের গান। লালনের গান। আমি ভাবি আর ভাবি। আর, এলোমেলো হয়ে যাই। আমার এ কূল ভাঙিয়াছে যেবা আমি তার কূল বাঁধি, যে গেছে বুকে আঘাত হানিয়া তার লাগি আমি কাঁদি; সে মোরে দিয়েছে বিষে ভরা বাণ, আমি দেই তারে বুক ভরা গান; কী আশ্চর্য! ভাবতে উদবুদ্ধ হই-প্রতিদানের সমতূল্য কোনও কবিতা কি বিশ্বসাহিত্যে রয়েছে। কবির এমনতরো গভীর শুভবোধের উৎস কি? তখন বলছিলাম: যুগে যুগে বাংলার কবি লোকজীবনে দান করেন ভাব, ভাষা ও নৈকট্য। যা ভিন দেশিয়রা ঠিক বুঝবেন না। যেমন, আমরা বলি: নকশী কাঁথা মাঠ। অন্যরা বলে:The Field of the Embroidered Quilt . কী এর মানে? ফ্রান্সে বসে কেউ এই লাইনটি পড়লে তার তো কোনও প্রকার ঝিমঝিম আবেগ বোধ করার কথা নয়। অবশ্য, পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরের কোনও বাঙালি 'নকশী কাঁথা মাঠ' -এই কথায় কেঁপে ওঠার কথা। তখন বলছিলাম: একটা সময় ছিল যখন- পশ্চিম বাংলায় কাঁথাকে শুধু কাঁথাই বলা হত। ১৯২৯ সালে কবি জসীমউদ্দীন লিখলেন ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ । তারপর থেকে পশ্চিম বাংলায় কাঁথাকে বলা হয় নকশী কাঁথা। এই হল বাংলার অবিস্মরণীয় এক দিক। যা ভিন্ দেশিয়রা ঠিক বুঝবেন না। পল্লীকবি জসীমউদ্দীন যে প্রতিদানের মতন কবিতা লিখছেন তা কত জনে জানে? সে মোরে দিয়েছে বিষে ভরা বাণ, আমি দেই তারে বুক ভরা গান; ভাবা যায়! এ কবিতা না স্বর্গীয় শ্লোক? যে শ্লোকের বাস্তবায়নের জন্য রচিত হয়েছে জগৎ। ভেবে ভেবে কূলকিনারা পাওয়া যায় না। কবির ছবি: বাংলাপিডিয়ার সৌজন্যে। সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:১৪
false
mk
আজ ৫ জানুয়ারি, তো_ বিএনপি ও তাদের মিত্রদের বর্জিত দশম সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্তি ৫ জানুয়ারি। দিনটি সরকারি দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পালন করবে সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষা দিবস হিসেবে আর বিএনপি ও তার মিত্ররা ঘোষণা দিয়েছে, তাদের জন্য এই দিনটি হবে গণতন্ত্র হত্যা দিবস। গত নির্বাচনের আগে তারা ঘোষণা দিয়েছিল, তারা নির্বাচন বর্জন করার মধ্যেই তাদের কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ রাখবে না, তাকে প্রতিরোধ ও প্রতিহতও করবে। তাদের এই কর্মসূচি সফল করার জন্য বিএনপি ও তাদের ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী বলে পরিচিত জামায়াত-শিবির নির্বাচনের আগের ছয় মাস দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল এবং সেই যুদ্ধে দেশের কোটি কোটি টাকার সম্পদের হানি তো হয়েইছিল, একই সঙ্গে গুরুতর আহত ও প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় ৫০০ সাধারণ মানুষ, সেনা, পুলিশ ও বিজিবি সদস্য। অবোধ পশু পর্যন্ত বাদ যায়নি। তখন বাংলাদেশকে ইসরায়েলের গাজা উপত্যকা অথবা আফ্রিকার কোনো গৃহযুদ্ধে লিপ্ত দেশ, যেমন- নাইজেরিয়া, সুদান অথবা মালির সঙ্গেই শুধু তুলনা করা যেত। ক্ষমতার জন্য যে একটি দল এবং তার মিত্ররা কত হিংস্র ও নিষ্ঠুর হতে পারে, তা মনে করলে এখনো গা শিউরে ওঠে। বছর শেষে সেই আলামত আবারও দেখা যাচ্ছে। গত ২৯ ডিসেম্বর বিএনপি হরতালের নামে আবার দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। তাদের পিকেটারদের ইটের আঘাতে একজন স্কুলশিক্ষিকা নিহত হয়েছেন। আগুনে ঝলসে গেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ দুজন। তাদের একজনের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। আগের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, আগুনে ঝলসে মানুষ হত্যা সম্ভবত বিএনপি ও জামায়াতের কাছে বেশ সমাদৃত। তাদের দাবি, বর্তমানে যে সরকার ক্ষমতায় আছে তারা অবৈধ, তাই তাদের ক্ষমতা ছাড়তে হবে এবং নতুন করে নির্বাচন দিয়ে তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম না করলে মানুষের শরীর ঝলসানোর কর্মসূচি আবার নতুন করে শুরু হবে।কেমন করে হলো আমাদের শান্তিপ্রিয় দেশের এমন ভয়াবহ হাল? কারাই বা এর সঙ্গে জড়িত? উত্তরণের কি কোনো উপায় ছিল? এমন পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য কী করতে পারতেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগ? এসব প্রশ্ন ও তার উত্তর অনেক দিন ধরেই চলে আসছে। এক বছরে প্রশ্নও বদল হয়নি অথবা উত্তরের। যে যার অবস্থানে এখনো অনড়। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তিন জোট একমত হয়েছিল, এরশাদের পতনের পর তিনটি সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে। প্রথমটি বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের অধীনেই হয়েছিল। তারপর সবাই ভুলে গিয়েছিল তাদের অঙ্গীকারের কথা। এমন একটা ব্যবস্থার যে প্রয়োজন আছে তা মনে করিয়ে দিল খালেদা জিয়ার ১৯৯১-৯৫ সালের সরকার যখন মাগুরা ও ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচন নামক একটি প্রহসন অনুষ্ঠিত হলো। আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা বলল, আগামী নির্বাচনকে প্রহসনমুক্ত করতে হলে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করতে হবে। খালেদা জিয়া বললেন কাভি নেহি। ফের আন্দোলন। তবে সেই আন্দোলনে হরতাল-অবরোধ হয়েছে; কিন্তু দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা অথবা বেপরোয়া নরহত্যা হয়নি। খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি নির্বাচন করলেন। সেই নির্বাচন তাঁর সরকারের অধীনেই হয়েছিল। অংশগ্রহণ করেছিল বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের দল ফ্রিডম পার্টি। সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর অন্যতম খুনি, বর্তমানে পলাতক ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কর্নেল (অব.) রশীদ। সেই সংসদেই ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পাস হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। এরপর তিনটি নির্বাচন এ ব্যবস্থার অধীনেই অনুষ্ঠিত হয় এবং একটিতে বিএনপি-জামায়াত জোট আর দুটিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট বিজয় লাভ করে। ২০০৬ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াত জোট এ ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। একমাত্র উদ্দেশ্য, যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় থাকা। এর আগে ২০০৫ সালে আবদুল মান্নান খান নামের একজন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি এ ব্যবস্থা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করেন। হাইকোর্ট বেঞ্চ সেই মামলার কোনো শুনানি না করে পাঠিয়ে দেন সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে। দীর্ঘ শুনানির পর দেশের সর্বোচ্চ আদালত রায় দেন, একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা এক মুহূর্তের জন্যও অনির্বাচিত কোনো ব্যক্তির কাছে গেলে তা হবে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং সেই যুক্তিতে ব্যবস্থাটিকে ভাবীসাপেক্ষভাবে বাতিল করে দেন। এখানে এটিই ছিল একমাত্র তর্কিত বিষয়। অন্য কিছু নয়। আদালতের বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ ছিল, যার মধ্যে বলা হয়েছে সংসদ যদি চায়, তাহলে আরো দুই মেয়াদের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বলবৎ রাখতে পারে, তবে তা গঠিত হওয়া উচিত শুধু নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের দ্বারা। পর্যবেক্ষণ রায়ের অংশ নয় এবং তা মানতেও বাধ্য নয়। তার পরও এ বিষয়ে সরকারি দলের সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয় এবং সেই কমিটি বিরোধী দলসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিদের মতামত গ্রহণ করে। আমন্ত্রণ পাওয়া সত্ত্বেও বিএনপি-জামায়াত জোট তাদের মতামত জানাতে অস্বীকার করে। বলে, আগের অবস্থায় ফিরে গেলেই শুধু আলোচনা হতে পারে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করা কারো পক্ষে উচিত নয়। বড় কথা হচ্ছে, ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করা হয়েছিল সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে। মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করে পুরো সংবিধান বাতিল করা ছাড়া আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। তা যদি করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কেউ একজন মামলা করে দিলে তখন সব কিছুই ঝুলে যাবে। বিএনপিতে অনেক বাঘা বাঘা ব্যারিস্টার আছেন। তাঁদের এই সামান্য কথাটা না বোঝার তো কোনো কারণ নেই। এর আগে উচ্চ আদালত আরেকটি রায়ে সরকারকে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যেতে নির্দেশ দেন। সুতরাং বিএনপি যদি দেশের সংবিধান মানে, তাহলে আগামী দিনে যখনই নির্বাচন হবে তখনই বিদ্যমান ব্যবস্থায় তাদের নির্বাচন করতে হবে।আলোচিত নির্বাচন, সরকার ও প্রতিপক্ষঅনেক বিদগ্ধ পণ্ডিত ব্যক্তি টিভির টক শো এবং তাঁদের লেখালেখিতে বেশ খোলামেলা আলোচনা করে বলেন, গত এক বছরে বাংলাদেশ সার্বিক অবস্থায় রসাতলে গেছে। গণতন্ত্রের নামে এখানে নির্বাচিত একনায়কতন্ত্র চলছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টা চলছে। বিরোধী দলকে (বিএনপি-জামায়াত) নিশ্চিহ্ন করার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা চলছে। যাঁরা এসব কথা বলেন, তাঁদের আবার বলা হয় সুধী। কেউ কেউ নিজেদের নাগরিক সমাজও বলে থাকেন। ২০০৮-২০১৩ সাল মেয়াদে বিএনপি সংসদে বিরোধী দলে ছিল। কয় দিন তারা সংসদ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছে? মাঝেমধ্যে যখন সংসদে তাদের আসন বাঁচানোর জন্য গিয়েছে, তখন তারা সংসদে কলতলার অবস্থা সৃষ্টি করেছে। তখন কিন্তু এই সুধীরা তেমন কোনো উচ্চবাচ্য করেননি। দিনের পর দিন আন্দোলনের নামে দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে জামায়াত-বিএনপি। সুধীরা চুপ থেকেছেন। এই যে বছর শেষে হরতালের নামে স্কুলশিক্ষিকা শামসুন নাহারকে সন্ত্রাসীরা হত্যা করল অথবা দুজনকে পেট্রলবোমা ছুড়ে গুরুতর জখম করল, তখন কোনো সুধী তো পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে তার নিন্দা করলেন না। বছরের প্রথম দিন স্কুলে বাচ্চারা সরকার থেকে নতুন বই পাবে। সেদিন জামায়াত সারা দেশে হরতাল দিল। কারণ তাদের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ঘাতক আজহারুল ইসলামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একাত্তরের অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। তারা তাদের মক্কেলের মামলায় আইনি লড়াই লড়ল। হেরে গিয়ে হরতাল। এর বিরুদ্ধে গোলটেবিলের সুধীরা কই? আসলে সব সুধী জামায়াতের অর্থের কাছে নিজেদের সতীত্ব বিক্রি করে দিয়েছেন অনেক আগেই। একজন সুধী পত্রিকায় দেওয়া তাঁর বক্তব্যে বললেন, এখনো বিএনপি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। তাহলে বিএনপি গত নির্বাচনে অংশ নিল না কেন? শেখ হাসিনা তো সব রকমের ছাড় দেওয়ার কথা বলেছিলেন। ভেতরের খবর হচ্ছে, খালেদা জিয়ার চারদিকে থাকা তাঁর কিছু স্তাবক আমলা আর এসব সুধীই তাঁকে গত নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত রেখেছিলেন। বলেছিলেন, 'ম্যাডাম চিন্তা করবেন না। আমাদের বিদেশি মুরব্বিরা সব ঠিক করে দেবেন।' মুরব্বিরা চেষ্টা করেছিলেন। হেরে গেছেন একজন শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কাছে। বিএনপির দেশের মানুষের ওপর যত না আস্থা, তার চেয়ে তারা বেশি নির্ভর করে বিদেশি প্রভুদের ওপর, সুধীরা তো আছেনই। বর্তমান সরকারের সমালোচকরা সুযোগ পেলেই বলেন, সংসদে যে বিরোধী দল আছে তা গৃহপালিত। কারণ তারা সংসদে বিএনপির মতো আচরণ করে না। বিরোধী দলের অর্থ শুধু কথায় কথায় সরকারের সব কাজের বিরোধিতা হতে পারে না। জনস্বার্থের পক্ষে বিরোধী দল অবশ্যই সংসদীয় রীতিনীতি মেনে বিরোধিতা করবে। তার জন্য সংসদের আসন ভাঙার প্রয়োজন হয় না। জাতীয় পার্টি যে বিরোধী দল তা প্রমাণ করতে কি কয়েকটি আসন আর টিভি ক্যামেরা ভাঙতে হবে?গত এক বছরে দেশ কি আগের বছরগুলোর চেয়ে ভালো চলেছে? আগের বছরগুলোর চেয়ে ভালো না চললেও খারাপ তো চলেনি। সুশাসনের বড় কোনো উন্নতি হয়নি ঠিক, তবে তেমন একটা অবনতিও হয়নি। দুর্নীতি বহাল তবিয়তে আছে, তবে কিছুটা তো কমেছে। মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের প্রয়োজনে দুদক এখন তলব করে, যা আগে কখনো হয়নি। দেশের আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিতভাবে আরো ভালো হতে পারত। এক ছাত্রলীগ আর যুবলীগ নামধারী দুর্বৃত্তরা শেখ হাসিনা সরকারের অনেক অর্জন ম্লান করে দিয়েছে। দলের কিছু মন্ত্রী আর সংসদ সদস্যের অতিকথনের কারণে সরকারের ভাবমূর্তির তো কিছুটা হলেও ক্ষতি হয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক ক্ষেত্রেই উন্নত হয়েছে। বিজয়ী হয়েছে অনেক আন্তর্জাতিক ফোরামের নির্বাচনে। নির্বাচনের আগে পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে দাদাগিরি শুরু করেছিল, তার অনেকটা ইতি ঘটেছে। বিশ্বব্যাংক, রাশিয়া, জাপান, চীন, ইইউ প্রভৃতি দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এগুলো সরকার ও শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সাফল্য। বিশ্বব্যাংকের নাটক উপেক্ষা করে নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। নিজের ওপর আস্থা থাকলে তা সম্ভব। বৈদেশিক বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু নেতিবাচক পদক্ষেপের পরও বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১ শতাংশ আর রেমিট্যান্স বেড়েছে ৫ শতাংশ। দেশের গড় জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপরে থেকেছে। মুদ্রাস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে। তবে ২০১৪ সালে বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত ছিল, যখন হেনরি কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়ির এই দেশটি বিদেশে চাল রপ্তানি শুরু করে। প্রথম চালানটি গেছে শ্রীলঙ্কায়। ভারতও বাংলাদেশ থেকে চাল ক্রয়ের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ অনেকটা জঙ্গিমুক্ত হয়ে বিশ্বের নজর কেড়েছে।যদিও ২০১৪ সালে শেখ হাসিনা সরকারের অর্জন একেবারে নজরকাড়া নয়, তবে কমও নয়। তাঁকে অনেক বৈরী পরিবেশ পাড়ি দিয়ে যেতে হবে অনেক দূর। মাঝেমধ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে একজন নিঃসঙ্গ সেনাপতির মতো মনে হয়। যাঁদের তিনি বিশ্বাস করেছেন তাঁরা তো সবাই সেই বিশ্বাসের মূল্য দেননি। এ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে পারলে তিনি যেতে পারেন অনেক দূর। কিভাবে বের হবেন, তা তাঁকেই ঠিক করতে হবে। এটি তো স্বীকার করতেই হবে, শেখ হাসিনার অবর্তমানে আওয়ামী লীগের মতো একটি দলের হাল ধরার মতো নেতৃত্ব এখনো তৈরি হয়নি। এটি দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা। ২০১৫ সাল বিএনপি-জামায়াত জোটের কারণে প্রত্যাশিতভাবে ভালো যাবে, তা মনে করি না। তবে তৃণমূল থেকে দলকে সংগঠিত করতে আওয়ামী লীগ যদি সক্ষম হয়, কাজটি কিছুটা হলেও সহজ হবে। আর গণতন্ত্রের সংজ্ঞা যদি হয় দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, তাহলে দেশের মানুষ চায় না তেমন গণতন্ত্র। বিএনপি নামক দলটির উচিত হবে সঠিক গণতন্ত্রের মূল স্পিরিট ধারণ করা। বছরের শেষ দিনে বিএনপি চেয়ারপারসন সংবাদ সম্মেলন করে নতুন করে তাঁর পুরনো সাত দফা উত্থাপন করেছেন। দেখা যাক কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। তার পরও আশা করি, ২০১৫ সালটি আর কিছু না হোক অন্তত ২০১৪ সালের মতো শান্তিতে কাটবে।
false
mk
উলফাতে দেউলিয়া বিএনপি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সেভেন সিস্টার নামের রাজ্যগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ এবং ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য আসাম। লোকসংখ্যা তিন কোটির উপরে। আর আয়তন বাংলাদেশের অর্ধেকের চেয়েও কিছুটা বেশি। এই আসাম রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠনের নাম উলফা (টখঋঅ) বা ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম। তাদের উদ্দেশ্য সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে আসামকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন করা। ১৯৭৯ সালে এই সশস্ত্র সংগঠনটির জন্ম হয়। অরবিন্দ রাজখোয়া চেয়ারম্যান এবং অনুপ চেটিয়া সাধারণ সম্পাদক হন। শুরু হয় উলফার সশস্ত্র সংগ্রাম। সামরিক প্রধান করা হয় পরেশ বড়ুয়াকে। ২০০৪ সালে দশ ট্রাক অস্ত্র উলফার জন্য যাওয়ার পথে চট্টগ্রামের ইউরিয়া সার কারখানার জেটিতে জাহাজ থেকে খালাস করার সময় এই পরেশ বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন। রাজখোয়া, অনুপ চেটিয়াসহ উলফার অন্য বড় নেতারা এখন ভারতের হাতে থাকলেও পরেশ বড়ুয়া এখনও পলাতক। ফাদার অব উলফা এবং তাত্ত্বিক নেতা ভীমকান্ত বুড়া গোহাইন মারা গেছেন। বিএনপির বর্তমান রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের সঙ্গে উলফার সম্পর্ক কোথায় তা বলার আগে উপমহাদেশের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের একটু পুনরাবৃত্তি প্রয়োজন। তাতে প্রসঙ্গে উল্লিখিত ইস্যুর সূত্রপাত এবং তার সঙ্গে বিএনপির সংযোগ বুঝতে সুবিধা হবে। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ ভাগ হয়ে দুটি আলাদা রাষ্ট্র হলো এই কারণে যে, হিন্দু আর মুসলমান এক রাষ্ট্রে বসবাস করতে পারবে না। এই অবাস্তব তত্ত্বের পরিণতিতে সাতচল্লিশ সালে ভাগাভাগির সময়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামায় উভয় সম্প্রদায়ের প্রায় বিশ লাখ মানুষের প্রাণ যায় এবং আরও প্রায় দেড় কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। তারপরও সব মুসলমান পাকিস্তানে আর সব হিন্দু ভারতে তা কিন্তু হয়নি, হওয়ার নয়। মাঝখান থেকে এত রক্তক্ষরণের ফলে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের মনে যে ক্ষতের সৃষ্টি হলো তার লেগেসির ধারাবাহিকতায় অর্থাৎ চরম সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এখনও রক্তক্ষরণ অব্যাহত আছে। নতুন রূপে এই রক্তক্ষরণের বীভৎসতা একবিংশ শতাব্দির সভ্যতাকে পরিহাস করছে। লেগেসির সূত্র ধরেই ইসলামের নামে চরম ধর্মান্ধ উগ্র জঙ্গীবাদের সৃষ্টি হয়েছে যা এখন শুধু উপমহাদেশ নয়, সারাবিশ্বের জন্য হুমকি। একই কারণে ভারতের অভ্যন্তরেও গত শতকের আশি ও নব্বই দশকে চরম হিন্দুত্ববাদের উত্থান ঘটে। যার চরম বহির্প্রকাশ ঘটে ১৯৯২ সালে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সেবকদের দ্বারা ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার মাধ্যমে। এটা ভারতের জন্য যে কত বড় ভয়ানক ক্ষতির কারণ হয়েছে তা এখন ভারতের বড় বড় প-িত ও সুধীগণ বুঝতে পারছেন। তবে দুই সম্প্রদায়ের নামে উল্লিখিত উগ্রবাদের মধ্যে একটা মৌলিক পার্থক্য আছে। হিন্দু মৌলবাদের প্রভাব ভারতের অভ্যন্তরে সীমাবদ্ধ। কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় সৃষ্ট ইসলামিক জিহাদী ধর্মান্ধ জঙ্গীগোষ্ঠীর তৎপরতা পুরো উপমহাদেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তান জন্মের শুরু থেকে, বিশেষ করে প্রথম সামরিক শাসক আইয়ুব খানের মস্তিষ্কের ফসল চরম সাম্প্রদায়িক ও যুদ্ধংদেহী রাষ্ট্রীয় দর্শন গ্রহণ করে। রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে ঘোষণা করে হিন্দু ভারত পাকিস্তানের চিরশত্রু এবং পাকিস্তানের অস্তিত্বের জন্যই ভারতকে ধ্বংস করতে হবে। ফলে উবংঃৎড়ু ওহফরধ হয়ে ওঠে পাকিস্তানের মূল রাষ্ট্রীয় দর্শন।উবংঃৎড়ু ওহফরধ তত্ত্ব বাস্তবায়নের জন্য গত শতকের পঞ্চাশ ও ষাটের দশক থেকে পাকিস্তান ভারতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর জাতিগত দ্বন্দ্ব ও অসন্তোষের সুযোগে সেখানকার ক্ষুব্ধ গোষ্ঠীকে উস্কে দিয়ে এবং উত্তেজিত করে সশস্ত্র বিদ্রোহের পৃষ্ঠপোষকতা ও সমর্থন দেয়ার পরিকল্পনা করে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের তত্ত্বাবধানে ১৯৫৬ সালে ফিজো নামক এক নাগা নেতার নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে তৈরি হয় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ১৯৬০ সালে লালডেঙ্গার নেতৃত্বে তৈরি হয় মিজোরামের সশস্ত্র বিদ্রোহী গ্রুপ, মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ)। পাকিস্তানের অর্থ, অস্ত্র গোলাবারুদ, আশ্রয় ও প্রশিক্ষণে এভাবেই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শুরু হয় সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন। ভারতের ভৌগোলিক অখ-তা ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ভয়ানক হুমকির সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময় সব বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বিতাড়িত হওয়ার ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে শান্তি ফিরে আসে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে আইয়ুব খানের দর্শনে পাকিস্তানপন্থী রাষ্ট্রীয় নীতি গ্রহণ করেন এবং হিন্দু ভারতের বিরুদ্ধে এবার পাকিস্তান ও বাংলাদেশ একসঙ্গে পুনরায় ভারতের সব উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে সশস্ত্র বিদ্রোহের অর্থ, অস্ত্র, প্রশিক্ষণ দিয়ে ভারতের জন্য মহাদুর্যোগের সৃষ্টি করেন। জিয়ার পর এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপিও এই ইস্যুতে জিয়াউর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে। কিন্তু ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠিত হলে আবার অবস্থার পরিবর্তন হয়। উলফার দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা অনুপ চেটিয়াসহ আরও দুইজন বড় নেতা বাবুল শর্মা ও লক্ষ্মী প্রসাদ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গ্রেফতার হয়। এই তিনজনসহ উলফার আরও বড় বড় নেতা দীর্ঘদিন ধরে জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সরকারের আনুকূল্যে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসতবাড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্য চালাত এবং ভারতের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের নেতৃত্ব দিত। অনুপ চেটিয়া ঢাকায় গ্রেফতার হওয়ার পর উলফার বাকি নেতারা ওই সময়ে (১৯৯৬-২০০১) পালিয়ে যায়। বিএনপি তখন পার্লামেন্টের বিরোধী দল হিসেবে উলফাসহ ভারতের অন্যান্য সশস্ত্র গ্রুপকে স্বাধীনতাকামী বলে আখ্যায়িত করে এবং তাদের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন দেয়ার দাবি ওঠায়। বিএনপির রাজনীতি তখন ক্রমশ আরও চরম সাম্প্রদায়িক রূপ ধারণ করে। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর ঘোষণা দেয় ফেনী পর্যন্ত ভারত হয়ে গেছে। ২০০১ সালের নির্বাচনের প্রচারে ধুয়া তোলে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে মসজিদে উলুধ্বনি শোনা যাবে এবং বাংলাদেশ ভারতের কাছে বিক্রি হয়ে যাবে। ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনে একাই পার্লামেন্টের দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হওয়ার পরও বিএনপি জামায়াতকে নিয়ে সরকার গঠন করে। যুদ্ধাপরাধী নিজামী, মুজাহিদ মন্ত্রী হয়। এবার জামায়াত-বিএনপি সরকার পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে আরও ব্যাপকভাবে ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো, বিশেষ করে উলফার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানের আইএসআই আর বাংলাদেশের জামায়াত-বিএনপি সরকারের সহায়তা ও বদান্যতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম, নেত্রকোনা এবং হবিগঞ্জের পাহাড়ী ও বনাঞ্চল হয়ে ওঠে উলফার অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। পাকিস্তানের আইএসআই সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে উলফার এই সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত মুসলমানদের সংগঠন ‘দ্য মুসলিম ইউনাইটেড লিবারেশন টাইগারস অব অসম (এমইউএলটিএ) এবং ‘দ্য মুসলিম ইউনাইটেড লিংকস ফোর্স অব অসম (এমইউএলএফএ) বা মুলফা নামের এই দুই সংগঠনের সঙ্গে বাংলাদেশের জামায়াত ও কয়েকটি জঙ্গীগোষ্ঠীর আদর্শগত সম্পর্কের সূত্র ধরে সম্মিলিতভাবে তারা এই ভূমিকা পালন করে। পাকিস্তানের তত্ত্বাবধানে সমরাস্ত্র ও বিস্ফোরক চালান বাংলাদেশের ওপর দিয়ে উলফার জন্য অবাধে পাচারের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়। এই রকম একটি বিরাট চালান, ১০ ট্রাক অস্ত্র ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে চট্টগ্রামে দৈবক্রমে ধরা পড়ে। হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে যায়। বিশ্বব্যাপী শুরু হয় হইচই। বাংলাদেশের সচেতন মানুষ হতভম্ব। বিএনপি সরকার কর্তৃক উলফাকে সহায়তার খবর মানুষ জানলেও অন্য দেশের সুবিধার্থে নিজ দেশকে এতবড় বিপদের মধ্যে কোন সরকার ফেলতে পারে তা ছিল মানুষের চিন্তার বাইরে। পাকিস্তানের স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থ রক্ষার জন্য জামায়াত-বিএনপি সরকার বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থ কিভাবে জলাঞ্জলি দিতে পারে তা আরেকবার মানুষ দেখতে পায়। তখন বিএনপি সরকার সবকিছু ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে একে একে সবকিছু উন্মোচিত হতে শুরু করে। ২০১৪ সালে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলার রায় হয়েছে। আদালতে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিভাগের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা এবং জামায়াত-বিএনপি সরকারের মন্ত্রীসহ কয়েকজনের ফাঁসির আদেশ হয়েছে। সুতরাং উলফাকে কবে থেকে এবং কেন বিএনপি সহায়তা দেয় তা এখন ভারত বাংলাদেশের সব মানুষের কাছেই পরিষ্কার। কিন্তু ২০১৫ সালে এসে কি দেখলাম বা এখন কি দেখছি। বিএনপির বুদ্ধিজীবীরাই এখন বিএনপিকে দিশাহারা, পথহারা বলছে। এর জন্য অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চরম হঠকারী সিদ্ধান্ত এবং জামায়াতের সঙ্গকেই দায়ী করছেন বেশিরভাগ মানুষ। কিন্তু ভারতের কাছে বিএনপি এত দেউলিয়াত্বের পরিচয় দিচ্ছে কেন? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই উলফা সম্পর্কে এত কিছু বের করা। পাকিস্তানের সঙ্গে এক হয়ে উলফাকে স্বাধীনতাকামী হিসেবে প্রকাশ্যে সমর্থন, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে সময় নিয়েও দেখা না করার পর আবার যখন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে দেখা করার জন্য খালেদা জিয়া হন্যে হয়ে সোনারগাঁও হোটেলে ছুটে যান, তখন বিএনপির রাজনীতির চরম দেউলিয়াত্বের পরিচয়ই ফুটে ওঠে। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে লজ্জিত হতে হয়, কেননা শত হলেও তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তারপর আগ বাড়িয়ে যখন বলেন, বিএনপি আর কোনদিন ভারতবিরোধী রাজনীতি করবে না, তখন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও স্বাধীন দেশের একটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব স্বকীয়তা বলতে আর কিছু থাকে না। এখানেই শেষ নয়। ২০১৫ সালের জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় সফরে এলে খালেদা জিয়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বিষয়ে মোদির কাছে যেভাবে নালিশ উত্থাপন করেন, তাতে বাংলাদেশের মর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কিন্তু এত করেও বিএনপির কিছু লাভ হয়েছে বলে মনে হয় না। শোনা যায়, নরেন্দ্র মোদি খালেদা জিয়াকে তিনটি প্রশ্ন করেছিলেন। এক. রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত সাক্ষাত বাতিল করলেন কেন? দুই. ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে চট্টগ্রামে ধরা পড়া ১০ ট্রাক অস্ত্রের চোরাচালান যা উলফার জন্য পাঠানো হচ্ছিল সে বিষয়ে যদি অধিকতর তদন্ত হয় তাহলে বিএনপি তাতে সহায়তা করবে কিনা? তিন. জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের ভবিষ্যত কি? প্রশ্নের উত্তরে খালেদা জিয়া কি বলেছেন তা জানা যায়নি। তবে সবাই যা অনুমান করেন তাতে বিএনপির অসহায়ত্ব ও দেউলিয়াত্বের ছাপই ফুটে ওঠে। একে মোহাম্মাদ আলী শিকদার সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:০৩
false
hm
বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান ১. দালজিৎ সিং একটু থতমত খেয়ে যায় ভাণ্ডারি রামের ধমক খেয়ে। "মোটর সাইকেলে স্টার্ট মার শালা বুড়বাক!" ভাণ্ডারি রাম দাঁত খিঁচিয়ে ধমকায়। দালজিৎ আমতা আমতা করে তবুও। "কিন্তু বিশুর কেসটার কী হবে সাব?" ভাণ্ডারি রাম পিচিক করে থুথু ফেলে মাটিতে। নেপাল বর্ডার থেকে বদলি হয়ে আসা প্রত্যেকটা চ্যাংড়াই এখানে এসে ত্যাড়ামি শুরু করে। ভাণ্ডারি রাম বহুবছর ধরে এদিকে আছে, দালজিতের মতো বহু বাঁকা লাঠিকে সোজা করে ছেড়েছে সে। "এই নিয়ে দুইবার তুই আমার মুখে মুখে কথা বললি।" নিচু গলায় বলে ভাণ্ডারি। "আমি এইসব পছন্দ করি না। বুঝলি?" দালজিৎ চোখ সরিয়ে নেয়। সে কনস্টেবল হয়েছে, খুব বেশিদিন হয়নি। হেড কনস্টেবলদের সাথে তর্ক যে করতে হয় না, এই শিক্ষা পেতে খুব একটা সময় লাগে না বাহিনীতে ঢোকার পর। কিন্তু ভাণ্ডারি তাকে যা করতে বলছে, সেটাও করতে বাধছে তার। আশি সিসির মোটর সাইকেলটার স্টার্টারে কষে লাথি মারে দালজিৎ, খক খক করে দুয়েকবার কেশে বুড়ো কুকুরের মতো গর্জে ওঠে এনজিনটা। ভাণ্ডারি দালজিতের পেছনে এসে বসে। দালজিত ক্লাচ ছেড়ে দেয়, মৃদু ঝাঁকুনি দিয়ে সামনে বাড়ে মোটর সাইকেল। বিশু গতকাল রাতে টাকা পৌঁছে দিয়েছিলো ফাঁড়িতে, বরাবরের মতোই। ভাণ্ডারি তখন অফ ডিউটিতে থাকে, দালজিৎও ছিলো তার সাথে। বিশু কথা কম বলে, ভাণ্ডারির সাথে নিচু গলায় দুয়েকটা কথা বলেই সে সাইকেল নিয়ে রওনা দিয়েছিলো গাঁয়ের পথে। রেখে যাওয়া পানের ডিব্বায় এক থোকা পঞ্চাশ রূপির নোট চুপচাপ গুণে ভাণ্ডারি দালজিৎকে ডেকে হিস্যা বুঝিয়ে দিয়েছিলো। পরিমাণ দেখে বুঝতে পেরেছে দালজিৎ, একজন লোক টপকাবে আগামীকাল ভোরে। এদিকটায় গরু তেমন একটা যায় না। কী যেন একটা সমস্যার কারণে একবার ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছিলো, সাব ইনস্পেক্টর গোপালানকে বড় সাহেবরা ডেকে পাঠায় তার পর। ওদিক থেকে বিডিআর পতাকা বৈঠকের ডাক দিয়ে খুব হাউকাউ করেছিলো। গোপালান বেজার হয়ে ফিরে আসার পর এক এক করে সব হেড কনস্টেবলকেই বদলি হয়ে যেতে হয়েছে এখান থেকে, আর গরুর চালানও বেমালুম বন্ধ হয়ে যায়। গরুতে পয়সা বেশি হলেও চালানিগুলো দিনকে দিন খচ্চর হয়ে যাচ্ছে, ঘাড়ও বাঁকা হচ্ছে আস্তে আস্তে। বিএসএফের ওপর লোহা ধরার সাহস দেখালে দস্তুর হচ্ছে দুয়েকটা বডি ফেলে দেয়া, তারপর তাদের লোক ফাঁড়িতে সন্দেশ আর খাসি ভেট নিয়ে এসে মাফ চাইলে তারপর আবার শুরু হয় কারবার। সেবারের গণ্ডগোলে কারবারিদের এক বড়সড় লোক মারা পড়েছিলো এক ছোকরা কনস্টেবলের হাতে, বেশ উঁচু জায়গায় তার টোকা গিয়ে পড়েছিলো, এপার ওপার দুধারেই। দালজিৎ নেপাল সীমান্তে কাজ করতে গিয়ে দেখেছে, সবচেয়ে আরাম ড্রাগসে। যারা ড্রাগসের ব্যবসা করে, একেবারে সুবেদার মেজরের সাথে বোঝাপড়া করে রাখে, টাকাপয়সা মাসে মাসে হাতে চলে আসে একেবারে ওপর থেকে, যদি সুবেদার মেজর খচ্চর লোক না হয়। অস্ত্রের চালান নিয়ে ঘাপলা থাকে, বড়সড় কিছু পার হলে সেখানে তার মতো নবীন কনস্টেবলের বেশি লোভ না করাই মঙ্গল, টুকিটাকি খুচরা জিনিস পার হলে মোটাসোটা দাঁও মারা যায়, তবে সেখানে ঝুঁকিও যে থাকে না, তা নয়। দালজিতের এক দেশোয়ালি ভাইকে দেশী বোমা চার্জ করে বসেছিলো এক গোঁয়ার, বেচারা একটা চোখ হারিয়েছে, সাথে চাকরিও। সাথের লোকজন বডি ফেলে দিলেও ততক্ষণে ক্ষতি যা হবার, তা তো হয়েই গেছে। এদিকের বর্ডারে আরেকটা জিনিস বেশ চলতে দেখেছে দালজিৎ, ফেনসি। পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে গঞ্জে একটা কারখানা আছে, সেখান থেকে মিনিতে করে মাল এনে গ্রামে দিয়ে যায় ব্যাপারিরা। ওপারের লোকজন নানাভাবে সেগুলো নিয়ে টপকায়। বাচ্চা থেকে শুরু করে বুড়ো, সবাই আছে এই ফেনসির লাইনে। ফেনসিতে পয়সা মাথাপিছু খুব বেশি না হলেও সব মিলিয়ে খারাপ আসে না। ভাণ্ডারি রাম মাঝে মাঝে জুয়ার আড্ডায় একটু বেসামাল হয়ে গেলে হিসাব করতে থাকে, পাটনা শহরে বাড়ি করতে গেলে তাকে আর কয় বছর খাটনি দিতে হবে এই বর্ডারে। সুবেদার মেজর হয়ে বুড়ো হবার শখ নেই ভাণ্ডারি রামের, সে এর মধ্যে কিছু জমি কিনেছে তার গাঁয়ে, সে কিষাণ বসিয়ে ক্ষেতি করবে আর মাঝে মধ্যে পাটনায় গিয়ে মাস্তি করে আসবে। দালজিৎ মিটিমিটি হাসে ভাণ্ডারির কথা শুনে। তার মনে অবশ্য ক্ষেতির শখ নেই। কিছু টাকা বানাতে পারলে সে চণ্ডীগড়ে তার বড় ভাইয়ের গ্যারেজের ব্যবসায় টাকা খাটাবে। আর বিয়েশাদিও তো করতে হবে, নাকি? মোটর সাইকেলটা একটা ছোটো গর্তে পড়ে, ঝাঁকি খেয়ে দালজিতের মুখের মৃদু হাসিটাকে চিন্তাটার সাথেই মুছে দেয়, আর ভাণ্ডারি এনজিনের গুনগুনকে ছাপিয়ে একটা গালি দেয় মাতৃভাষায়, সেটার অর্থ গাধার অণ্ডকোষ। দালজিৎ পাত্তা দেয় না ভাণ্ডারিকে। আজ বেহুদাই বিশুর কেসে যাচ্ছে তারা। ভাণ্ডারি গত দুই সপ্তাহ ধরে বলে আসছে, তার ধারণা বিশু তাকে ঠকাচ্ছে। একজনের টাকা দিয়ে বিশু দু'তিনজনকে পার করাচ্ছে। ওসব চলবে না। দালজিতের অবশ্য কখনোই মনে হয়নি, বিশুর এত হিম্মৎ আছে। ভাণ্ডারি এদিকের বিওপিতে আছে বেশ কয়েক বছর ধরে, চালিয়াৎ কারবারি তার হাতেই মরেছে কয়েকটা, তার মাঝে বিশুর গাঁয়ের লোকও আছে। বেশি চালিয়াতি করতে গেলে যে সমস্যা হবে, সেটা বিশু বোঝে। লোকটার সিড়িঙ্গে ছোটোখাটো ভীরু চেহারাটা দেখে মনে হয় না, ভাণ্ডারিকে ঠকিয়ে কোনো কিছু সে করে যাচ্ছে। কিন্তু ভাণ্ডারি দালজিতের এসব যুক্তিকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে। "বাঙ্গুদের চিনিস না তুই। এরা সব সাপের মতো। কিলবিল করে চলবে মাটি ঘেঁষে, আর একটু ছাড় দিবি তো পোঁদের সমান উঁচু হয়ে কামড়ে দেবে।" চিড়েতনের বিবি আছড়ে ফেলে বলেছে ভাণ্ডারি। ইউসুফ খান আর সুবল রাও ছিলো সেদিনের জুয়ায়, তারাও হুঁ হুঁ করে উঠেছে তার কথায়। "হক কথা।" হয়তো সত্যিই তাই। তবে দালজিৎ এখন পর্যন্ত সেরকম কাউকে পায়নি। দূর থেকে হাঁক দিলে জড়োসড়ো হয়ে যায় লোকগুলো, কারবারির হাত চেপে ধরে, বার বার মানা করা সত্ত্বেও সীমানার কাছে গিয়ে ঝেড়ে দৌড় দেয়। কচি বয়সের মেয়েরাও আসে ফেনসি নিতে, ভীরু বাছুরের মতো চোখ করে তাকিয়ে থাকে, দালজিতের বুকের ভেতরটা শিনশিন করে ওঠে। এখনও পর্যন্ত কোনো বডি ফেলেনি সে। ভাণ্ডারি সংক্ষিপ্ত আদেশ দেয়, "খেজুর গাছটার কাছে থামা।" একটা নুয়ে পড়া খেজুর গাছ যেন খুব মন দিয়ে দেখছে কাঁচা রাস্তাটাকে, দালজিত তার নিচে মোটর সাইকেল থামায়। মোটর চালানোর সময় তার হাতিয়ারটা একটা স্ট্র্যাপ দিয়ে পিঠের সাথে বাঁধা থাকে, সেটা না খুলেই মোটর সাইকেলের চাবি মোচড় মেরে নেমে দাঁড়ায় সে। "এখন?" ভাণ্ডারি লম্বায় দালজিতের চেয়ে ঝাড়া আধহাত ছোটো হলেও তার চোখ দু'টি গনগনে আগুনের মতো। সে চাপা গলায় গর্জে ওঠে, "হাতিয়ার খোল। খুলে হাতে নে।" দালজিৎ লজ্জিত মুখে অস্ত্রটা হাতে নিয়ে ভাণ্ডারির পেছন পেছন চলতে থাকে। টহলেই তো এসেছে সে, হোক না সেটা টাকা খেয়ে টহল না দেবার সময়। সে একজন রক্ষী, তার হাতে অস্ত্র সবসময় তৈরি থাকবে ডিউটির সময়। ভাণ্ডারি আবারও চাপা গলায় গালি দিয়ে বলে, "বিশু বেহেনচোদটা যদি কোনো বেঈমানি করে, তাহলে আজকে একটা বডি ফেলে দেবো। শালা বিজিনেস করবি কর, তাই বলে নাইনসাফি?" দালজিৎ মাথা নাড়ে আনমনে। বিশু একজনের হিসাব করে দু'তিনজন পার করবে, এমনটা তার মনে হচ্ছে না এখনও। শীর্ণ একটা লোক, শার্টের হাতা ঢলঢল করে, সাইকেল চালাতে গিয়ে দু'তিনবার করে আছাড় খায়, আর বিশু করবে বেঈমানি? ভাণ্ডারি ঢালু একটা জায়গায় পৌঁছে শুয়ে পড়ে, তারপর পাউচ খুলে বাইনোকুলার বের করে চোখে লাগায়। দালজিৎ কয়েক গজ হামাগুড়ি দিয়ে পৌঁছায় তার কাছে। মাথায় উঁচু বলে তাকে সবসময় একটু আগে ক্রল শুরু করতে হয়। ভাণ্ডারি ধৈর্য ধরে বসে থাকে। তার ভাণ্ডারে গালি আর ধৈর্যের কোনো অভাব নেই। এই কাজে পয়সা কামাই করতে গেলে দু'টো জিনিসই লাগে। আর লাগে গুলি। ভাণ্ডারি রাম চাপা গলায় বলে ওঠে, "হাতিয়ার তৈরি রাখ!" দালজিৎ একটু চমকে উঠে তাকায় ভাণ্ডারির দিকে। বিডিআরের প্যাট্রল বের হয়েছে নাকি ওপাশে? ভাণ্ডারি বাইনোকুলারটা দালজিতের হাতে দিয়ে ইনসাস রাইফেলটা হাতে নেয়। ব্যাটেলিয়নের অন্যতম সেরা মার্কসম্যান ভাণ্ডারি রাম, নিশানা না ফসকানোর ব্যাপারে দুর্নাম আছে তার। দালজিত বাইনোকুলার চোখে লাগিয়ে চমকে ওঠে। জোর পায়ে সীমানার দিকে হাঁটছে দু'জন মানুষ। একজন বয়স্ক পুরুষ, আরেকজন কিশোরী। ভাণ্ডারি ঝকঝকে সাদা দাঁত বের করে গোঁফের নিচে। "বলেছিলাম না? বিশু শুয়ারটা ঠকাচ্ছে আমাদের।" দালজিৎ বিমর্ষ মুখে বলে, "এরা টপকাবে কীভাবে?" ভাণ্ডারি গোঁফে মোচড় দেয়। "বিশুর লোক একটা মই রেখে আসে বেড়ার গায়ে। মই বেয়ে টপকাবে, আর কী?" দালজিৎ আবার বাইনোকুলার লাগায় চোখে। বয়স্ক লোকটার পরনে হাফশার্ট আর ফুলপ্যান্ট, মেয়েটার পরনে সালোয়ার কামিজ। সন্ত্রস্ত পায়ে প্রায় ছুটছে তারা। বেড়ার গায়ে এক জায়গায় লাল একটা কাপড় গিঁট মেরে রাখা, ওদিকেই এগোচ্ছে তারা। ভাণ্ডারি চাপা গলায় হাসে। "বিশু আমাদের একজনের টাকা দিয়েছে। একজনই টপকাবে।" দালজিৎ চমকে ওঠে। "আরেকজন?" ভাণ্ডারির হাসিটা মুখেই থাকে, কিন্তু এবার তার পরিধি চোখ থেকে নেমে নিষ্ঠুর চোয়াল স্পর্শ করে শুধু। "আরেকজনকে ফেলে দিবি তুই।" দালজিতের মুখটা বিবর্ণ হয়ে যায়। "আমি?" ভাণ্ডারি শক্ত মুখে বলে, "হ্যাঁ, তুই।" দালজিৎ তার রাইফেলের ধাতুর শীতল স্পর্শ অনুভব করে হাতে। আজ তাকে বডি ফেলতে হবে? ভাণ্ডারি বাইনোকুলার চোখে লাগায়। "নে, মার একটাকে।" বয়স্ক লোকটা ব্যস্ত হাতে বেড়ার গোড়ায় পড়ে থাকা মইটা নিয়ে বেড়ার গায়ে ঠেকায়, শক্ত হাতে ধাক্কা দিয়ে সেটার গোড়া মাটিতে বসায়, তারপর মেয়েটাকে ইশারা করে। মেয়েটা ডানে বামে তাকাচ্ছে শুধু, লোকটার ইশারা দেখে সে মাথা নাড়ে। লোকটা অধৈর্য হয়ে হাত নাড়ে, কী যেন বলে, মেয়েটা আবার এদিক ওদিক মাথা নাড়ে। লোকটা আর কথা বাড়ায় না, মই বেয়ে উঠতে থাকে। ভাণ্ডারি বলে, "মার শালাকে।" দালজিৎ অস্ফূট গলায় বলে, "ওস্তাদ, দুই রূপি মারি।" ভাণ্ডারি বিরক্ত হয়ে বাইনোকুলার নামায় চোখ থেকে। "কীসের দুই রূপি মারবি? এই শালা কেশরীর বাচ্চা, তুই পয়সার বখরা পাস না? কাজে নেমে দুই রূপি মারামারি কী রে?" দালজিৎ হাতড়ে হাতড়ে পকেট থেকে পাতলা মানিব্যাগ বের করে একটা দুই রূপির মুদ্রা বের করে। "গাছ উঠলে আমি ফেলছি বডি। অশোকস্তম্ভ উঠলে তুমি ফেলো।" ভাণ্ডারি চোখে আগুন নিয়ে বলে, "শালা ডরপোক! এদিকে মাল টপকে যাচ্ছে, আর তুই রাণ্ডির ভাতার দুই রূপি মারছিস! আচ্ছা ... গাছ উঠলে আমি ফেলবো। মার দেখি।" দালজিৎ বুড়ো আঙুলের টোকায় মুদ্রাটা বাতাসে ছুঁড়ে এক বুক আশা নিয়ে তাকিয়ে থাকে সেটার দিকে। বয়স্ক লোকটা ওদিকে মই বেয়ে কাঁটাতারের দুই মানুষ উঁচু বেড়া টপকে লাফিয়ে পড়ে অন্য পাশে। তারপর গুড়ি মেরে বসে মেয়েকে ডাকে, "আয় ফেলানি, জলদি আয়! দেরি করতিছিস কেন, আয়!" মেয়েটা টলমল করে উঠতে থাকে মই বেয়ে, তার সন্ত্রস্ত চোখ পেছনের বিরান ভূমিতে। লোকটা মেয়েকে তাড়া দেয়, "তাড়াতাড়ি আয়! পিছনে কী দেখতিছিস? তোর শ্বশুর আসতিছে নাকি?" মেয়েটা তাড়াতাড়ি পা চালাতে যায়, তার সালোয়ার আটকে যায় কাঁটাতারের বেড়ায়। সে অস্থির হয়ে পা টানে, কিন্তু পা ওঠে না। "বাপজান! বাপজান, আমি আইটকে গেছি বাপজান!" ডুকরে ওঠে সে। "আমারে ছুটাও!" বয়স্ক লোকটা উৎকণ্ঠিত দৃষ্টিতে তাকায় ফেলে আসা দেশের মাটির দিকে। "জোরে টান মার, সালোয়ার ফাইড়ে গেলে ফাড়ুক! জলদি আয় রে মা!" সালোয়ার ছেঁড়ে না, অনড় আটকে থাকে কাঁটাতারের বেড়ায়। বরং আটকে যায় ফেলানির কামিজের একটা অংশও। "বাপজান, আমি আইটকে গেছি, আমারে ছুটাও!" ফেলানি আতঙ্কে ফুঁপিয়ে ওঠে। দালজিতের বুকের ভেতরটা ঠাণ্ডা করে মাটিতে আছড়ে পড়ে অশোকস্তম্ভ। তিনটি সিংহ তিন দিকে তাকিয়ে যেন মুখ ব্যাদান করে ব্যঙ্গ করে দালজিৎকে। ভাণ্ডারি ফুড়ুক ফুড়ুক হাসে। চোখে বাইনোকুলার লাগিয়ে বলে, "রোজগার হালাল কর কেশরী। এইবার এই ছোকরিকে মারো। ওর সাথের মরদটা টপকে গেছে, ওটাকে ছেড়ে দে।" দালজিৎ চমকে উঠে তাকায় ভাণ্ডারির দিকে। "সাব, আওরৎকে মারবো?" ভাণ্ডারি বাইনোকুলার চোখ থেকে ধীরে নামিয়ে ঠাণ্ডা দৃষ্টিতে তাকায় দালজিতের দিকে। দালজিতের জিভ শুকিয়ে যায় সেই দৃষ্টি দেখে। "মুখে মুখে কথা বলিস না লৌণ্ডা।" ভাণ্ডারি রাম হিসহিস করে ওঠে। "বিশু যেন এরপর কোনোদিন আমাকে আর ন্যায্য হিস্যার চেয়ে কম দিতে সাহস না করে। ছুকরি আটকে গেছে বেড়ায়। ফেলে দে।" দালজিৎ ভাণ্ডারি রামের চোখে তার পাটনার বাড়ি আর মুজফফরপুরের ক্ষেত যেন দেখতে পায়। সে হাতের ঘাম মুছে নেয় প্যান্টের পাছায়, তারপর সাইটে চোখ লাগায়। কাঁটাতারের বেড়ায় আহত প্রজাপতির মতো ছটফট করে ফেলানি, তার কাপড় আটকে গেছে, আঁচড় লেগে চামড়া ছড়ে রক্ত পড়ছে দরদর করে। সিঙ্গল শটে সেট করে ট্রিগারে চাপ দেয় দালজিৎ, তার চোখ বন্ধ। প্রথম গুলিটা ফেলানির কোমরের একটু ওপরে গিয়ে লাগে। ৫.৫৬ ক্যালিবারের গুলির ধাক্কায় সে মই থেকে সরে বেড়ার ওপরে পড়ে। দ্বিতীয় গুলিটা তার ফুসফুস ছিদ্র করে বেরিয়ে যায়। মইটা আছড়ে পড়ে মাটিতে, ফেলানির শরীরটা খিঁচুনি দিয়ে ওঠে। তার বাবা বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে দেখে সে দৃশ্য। বিশাল আকাশকে ডান থেকে বামে, উত্তর থেকে দক্ষিণে চিরে চলে গেছে এক বিরাট কাঁটাতারের বেড়া, তাতে এক অতিকায় পতঙ্গের মতো বিদ্ধ হয়ে আছে ফেলানি, তার কাপড়ের সম্মুখভাগ গাঢ় করে উঠে আসছে রক্ত। ফেলানি একবার কাশে, অস্ফূটে কী যেন বলে ঘড়ঘড় করে। তারপর তার মাথাটা ঢলে পড়ে ঘাড়ের ওপর। ফেলানির বাবা আতঙ্কে চিৎকার করে ছুট দেয় নিজের দেশের দিকে। ২. নাজারেথ থেকে উড়ে আসে কাকের দল, কাঁটাতারের বেড়ার খুঁটিতে এসে বসে। একটা সাহসী কাক এগিয়ে ফেলানির খোলা চোখে ঠুকরে দেয়। পরদিন সূর্য ঠিক সময়মতোই ওঠে, সীমানার এপারে ওপারে মানুষ জেগে ওঠে। কেউ খবরের কাগজে ফেলানির কথা পড়ে, কেউ ফেসবুকের দেয়ালে। কেউ গল্প লেখে, কেউ লেখে স্ট্যাটাস। তারপর আবার সব শুনশান হয়ে যায়। সীমানার ওপর দিয়ে টপকে আসে শুধু বিনোদনের ঢেউ। চলুন, দেখে নিই আজকের ছবির তালিকা, দৈনিক প্রথম আলোর ভেতরের পাতা থেকে। ফেলানির খবরও এসেছে পত্রিকাটিতে, প্রথম পাতায়।
false
rn
লিখতে হলে পড়তে হবে- প্রচুর পড়তে হবে একজন লেখকের লেখার মধ্যে অবশ্যই সাহিত্যিক গুণাবলী থাকতে হবে। একজন লেখকের পেশা হবে শুধু লেখালেখি। হুমায়ূন আহমেদ লেখক হওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরী ছেড়ে দিয়ে শুধু লেখালেখি নিয়ে ছিলেন। একজন ভালো লেখকের লেখা সমাজে প্রভাব বিস্তার করে। যারা ব্লগে লিখেন তারাও লেখক। ইদানিং অনেক ব্লগার তাদের ব্লগের লেখা গুলো একসাথে করে বইমেলাতে বের করছে নানান প্রকাশনি থেকে। একজন লেখন হবেন সবার থেকে আলাদা। তাদের কোনো কিছুতেই লোভ থাকবে না। লেখকদের হতে হয় অনেক উদার। ‘লেখক’ শব্দের শাব্দিক অর্থ যিনি লেখেন। একজন লেখক কখনই পেটের দায়ে লেখক হয়ে ওঠেন না বরং মনের ক্ষুধা মেটানোর তাগিদায় তিনি লেখক হয়ে ওঠেন নিজের অজান্তেই। একজন লেখকেরও উচিত পাঠকের আসনে বসে নিজের লেখার যথাযথ মূল্যায়ন করা।একজন ভালো লেখক হওয়ার জন্য প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে। প্রখর কল্পনাশক্তি থাকতে হবে। সর্বদা হাস্যমুখি থাকতে হবে। মন থেকে হিংসা সম্পূর্ণ দূর করতে হবে। দেশ এবং দেশের মানুষের প্রতি এক আকাশ ভালোভাসা থাকতে হবে। কৃপণতা ধুয়ে ফেলে দিতে হবে জীবন থেকে। সমালোচকদের গালাগালি করা যাবে না। নিয়মিত পাঠকদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। সন্তানের প্রতি মায়ের যেমন টান সাহিত্যের প্রতি ঠিক তেমন টান থাকতে হবে। একজন লেখকে সব সময় বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে। লেখকের কাছে ধর্ম কোনো ব্যাপার না। লেখকের ধর্ম হবে মানবধর্ম। বাংলা একাডেমীর একজন বললেন, শেখ হাসিনা একজন বিশিষ্ট লেখক হিসাবে বই-মেলা উদ্বোধন করছেন; তখনও গা কাঁপে, অন্য কারণে। তখন আমরা গা দুলিয়ে হাসি, নইলে হাসিটা ঠিক জমে না। ইদানিং দেখা যায় ব্লগে এবং ফেসবুকে একজন আরেকজনকে কবি বলে ডাকছেন। তখন খুব হাসি পায় এবং রাগ লাগে আমার। আরে ভাই আমি তো প্রায় হাজার খানিক কবিতা লিখেছি- তাই বলে আমি কি কবি হয়ে গেলাম? বেশ কয়েকটা বইয়ে আমার বেশ কিছু কবিতাও ছাপা হয়েছে। যদু-মধু একজন কবি আবার নির্মলেন্দু গুন বা মহাদেব সাহাও কবি। কই যদু-মধু আর কই নির্মলেন্দু গুন আর মহাদেব সাহা। সস্তা দশ/বিশ কবিতার বই বের হলেও সহজে কবি হওয়া যায় না রে পাগলা। সত্যিকারের কবি এবং কবিতা অন্য জিনিস। বাংলা একাডেমি নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। শুধু একটা কথা বলি- আমের ভেতর থেকে একটা পোকা বের হয়ে বলছে ভাই ভাই- আম দেখতে কেমন। বাংলা একাডেমি নিয়ে সবারই কম বেশি ধারনা আছে। বাংলা একাডেমি'র সব কর্মকর্তাদের উপর আমার অনেক অভিযোগ। বাংলা একাডেমির লোকজন ইচ্ছা করলে মানে তাদের স্বচ্ছতা এবং মেধা দিয়ে তারা অনেক ভালো ভালো কাজ করতে পারেন। বাংলা একাডেমি হতে পারে লেখক এবং পাঠক বানাবার কারিগর।আইসল্যান্ড দেশটিতে প্রত্যেক ১০জন লোকের মধ্যে একজনকে পাওয়া যাবেই যিনি বই প্রকাশ করেছেন। দেশটিতে লোকসংখ্যা মোটে ৩ লাখ। পৃথিবীতে কবি হচ্ছে একমাত্র অবিনাশী সত্তা—রাজা, সম্রাট তাঁর কাছে কিছু নয়। তাই কবি বা লেখক হতে গেলে যেমন পড়াশোনা জরুরি, তেমনি দরকার লেখকের স্বাধীন সত্তা। কারও পরামর্শ নিয়ে কেউ কোনো দিন কবি হতে পারে না। ন্যূনতম মান বজায় রেখে বই প্রকাশ করা উচিত। কিছু লিখতে হলে শিখতে হবে। আর শিখতে গেলে অবশ্যই পড়তে হবে। তুমি কিছু একটা লিখতে চাও, তাহলে লিখে ফেল। কি ভাবছ? যদি ভুল হয়! হোকনা ভুল। আমাদের জীবনে কত ভুল হচ্ছে আমরা কি তা ঠিক শুধরে নিচ্ছি না? ভুল হোক ভুরি ভুরি। আগে লেখাটা লেখ, তারপর কেটেছেটে শুধরে নেবে। প্রয়োজনে লাইনে লাইনে পরিমার্জন করবে। দেখবে সেই ভুল লেখাটাও ঠিক হয়ে গেছে। মনে রাখবেন প্রথম লেখার সময় সব লেখকেরই বিস্তর কাটাকাটি হয়, পরে এক সময় তা বশে চলে আসে। রবীন্দ্রনাথ আজ বিশ্ব কবি, তিনি প্রথম যে কবিতাটি লিখেছিলেন তার মধ্যেও বিস্তর কাটাকাটি হয়েছিল। আজকাল লেখক হওয়াটা কোন বিষয়ই নয়। অধ্যবসায়ের কোন প্রয়োজন নেই, পড়াশোনার প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন নেই চিন্তা-ভাবনার। লেখক হবার মূলশক্তি এখন অর্থবিত্ত। আমলার বউ, মন্ত্রীর ড্রাইভার আর এমপির মেয়েরা এখন লেখকের তালিকার শীর্ষে। এসব মৌসুমী লেখকদের জন্য প্রস্তুত থাকে মৌসুমী প্রকাশকরা। সামনের মাসে শুরু হচ্ছে একুশে বইমেলা। গত বছর বইমেলাতে দেখলাম- দুইজন বয়স্ক ভদ্রলোক একজন আরেকজনকে বলছে- এবছর আমার চারটা বই বের হয়েছে। আপনার কয়টা বের হয়েছে? আরেকজন মুচকি হাসি দিয়ে বললেন আমার সাতটা। আদিম কাল হতেই মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য, মনের আকুতি মানুষের কাছে জানানোর জন্য কখনো পাহাড়ের গুহায়, পাহাড়ের চূড়ায়, ভূর্জপত্র, কাঠ, গাছের চামড়া, ভেলাম, কডেক্স, প্যাপিরাস, তালপাতা, কাঁদামাটির ফলকসহ আরো নানাবিধ উপকরণে লিখে রাখতো। যার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিলো তার পরবর্তী প্রজন্মকে তা জানানো। এভাবে লেখক তাঁর লেখার মাধ্যমে মানুষকে জানাতো। লেখার মাধ্যমে লেখক অন্য একজন মানুষকে বুঝানো, শেখানো সত্যিই কষ্টের ব্যাপার।নিজের লেখা হোক বা অন্যের লেখা হোক বার বার পড়লে তার ভুলত্রুটি ও অসঙ্গতি ধরা পড়বে। লেখায় কোনো ভুল-ত্রুটি থাকলে তা বার বার সংশোধন করুন, পরিবর্তন করুন, পরিমার্জন করুন। এতে কোনো দোষের নেই। বার বার ভালো করার চেষ্টা করলে ভালো না হয়ে উপায় নেই। এভাবে লেখার কাজ চালিয়ে যাবেন। লিখতে লিখতেই আপনি লেখার কৌশল পেয়ে যাবেন। একটা নিয়মের ফ্রেমের ভেতর দিয়ে আপনার কলম এগোবে। এছাড়াও লেখালেখি নিয়ে সিনিয়র লেখকদের সাথে পরামর্শ করবেন। একজন ভালো পাঠক সব সময় ভালো লেখকে পরিণত হয় তাতে কোনো সন্দেহ নেই। লেখকের মৃত্যু নেই, লেখক অমর। লেখক হওয়ার আরেকটি অন্যতম উপায় হলো দেশ ভ্রমণ। দেশ ভ্রমণের মাধ্যমে মানুষ চাক্ষুষ বা বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করে। তার এই লব্ধ অভিজ্ঞা লেখালেখিতে উপস্থাপনের মাধ্যমে লেখালেখিকে আরো সহজে প্রাণবন্ত করতে পারে। সুতরাং লেখালেখির জন্য দেশ ভ্রমণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
false
fe
যখন পিছন ফিরে তাকানো জরুরী যখন পিছন ফিরে তাকানো জরুরী ফকির ইলিয়াস চলমান সময়ে বাংলাদেশ কি বিশ্বের কাছে নতুন মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে? জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান ড. ফখর"দ্দীন আহমদ। তিনি তার ভাষণে তেমনটিই দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, সামরিক এবং বেসামরিক যৌথ ঐক্যের সহযোগিতায় বাংলাদেশে আজ নতুন ধারা সূচিত হয়েছে। দুর্নীতি দমনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে। একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে ২০০৮ সালের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানেরও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টা তার সরকারের বিভিন্ন রিফর্ম কর্মসূচিও তুলে ধরেছেন। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন সম্পর্কেও বলেছেন তিনি। বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে তার এই ব্রিফিং নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। যেহেতু ২০০৮ সালটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ভাগ্যের জন্য একটি গুর"ত্বপূর্ণ বছর, তাই সেদিকে নজর রেখেই এগুতে হচ্ছে। দুর্নীতি দমনে বাংলাদেশ তাৎক্ষণিক একটি সনদ পেয়েছে। আর তা হচ্ছে টিআই রিপোর্টে বাংলাদেশের স্থান সপ্তম স্থানে চলে যাওয়া। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রকরা যদিও বলছেন, তা মন্দের ভালো, তবুও এটাকে একটি বড়ো সাফল্য হিসেবে না দেখে উপায় নেই। দুর্নীতিতে পর পর কয়েকবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এটা ওয়ান ইলেভেনের আশীর্বাদই বলতে হবে। তা নাহলে এই দেশটিই পুরো ‘রামরাজ্যে’ পরিণত হতো। দেশের মানুষের শুধুমাত্র হাহুতাশ ছাড়া অন্য কিছু করার থাকতো না। পটপরিবর্তন এবং বাংলাদেশের রাজনীতির নতুন মেরুকরণের এই মাঠে আমাদের যতোটা আশাবাদী হওয়ার কথা ছিল, তা কি হতে পারছি? এই প্রশ্নটি আসছে বিভিন্নভাবে। দুর্নীতি দমন কমিশন সবশেষে আরো আশিজন দুর্নীতিবাজের তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকায় যাদের নাম আছে, নিশ্চয়ই তাদের ব্যাপারে সাক্ষ্য-প্রমাণ জোগাড় করার মতো শক্তি এবং উপায় দুদকের আছে। নিয়মানুযায়ী তাদেরকে সম্পত্তির হিসাব দেওয়ার কথা বলা হবে। তা মিলিয়ে দেখা হবে। যদি কোনো গাফিলতি পাওয়া যায় তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিš' সেই শেষ তালিকাটি অনেক মানুষকেই আশাহত করেছে। বিগত জোট সরকারের যেসব মন্ত্রণালয় চরম দুর্নীতিবাজ বলে দেশে-বিদেশে কুখ্যাতি পেয়েছিল, এদের বেশ কটিই বাদ পড়েছে। এরপ্রকৃত কারণ কী? সে রহস্য নানাভাবেই উত্থাপিত হচ্ছে মানুষের মনে। দেখা যাচ্ছে, সংস্কারবাদী বলে কথিত কিছু নেতারও পার পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সর্বশেষ তালিকা প্রকাশের পর দেশের আরো দুর্নীতিবাজ শীর্ষস্থানীয়রা মুচকি হাসতে শুর" করেছেন। তাদের ধারণা তারা পার পেয়ে গেছেন। যদি প্রকৃতপক্ষে তাই সত্য হয় তবে তা হবে গোটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। কারণ শীর্ষ বেশ কিছু দুর্নীতিবাজকে বাইরে রেখে নাইন-ইলেভেনের চেতনা সমুন্নত এবং এর লক্ষ্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না। আমরা এ মুহূর্তে বাংলাদেশে বেশ কিছু নতুন দল, জোট কিংবা মোর্চার আবির্ভাব লক্ষ করছি। বিদেশেও বেশ কিছু সুবিধাবাদী, যারা এক সময় বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগ করতেন তারা এখন নতুন করে বিভিন্ন ব্যানারে নিজেদেরকে সজ্জিত করার চেষ্টা করছেন। তাদের অতীত ইতিহাস কী, ভবিষ্যতে তারা কী করতে পারেন, সবকিছুই দেশ-বিদেশের মানুষের নখদর্পণে রয়েছে। আসল কথা হচ্ছে, এরা যে কোনো পরিস্থিতিতে মধ্যস্বত্ব ভোগ করতে সব সময়ই তৎপর থাকে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ও জনগণকে এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। দেশের বরেণ্য আইনজ্ঞ ড. কামাল হোসেনের একটি বক্তব্য শুনে আমার হাসি পেয়েছে বৈকি! তিনি বলেছেন, তিনি তার গণফোরামের নেতাকর্মী নিয়ে বাংলার ঘরে ঘরে যাবেন। দল গঠনের পর আজ এতো দিন পর্যন্ত তিনি এ কাজটি করেননি কেন? এখন ঘরে ঘরে যাবেন ভালো কথা। কাজটি আরো অনেক আগেই করা উচিত ছিল। তাহলে রাষ্ট্র এবং জনগণ অন্তত রুখে দাঁড়ানোর মতো শক্তিটি ক্রমশ সঞ্চয় করতে পারতো। জনগণ তীব্র সচেতন হলে আজকের এই চরম দুর্নীতিবাজরাও হয়তো এতো বেশি পেশি এবং দাঁত দেখাবার সাহস পেতো না। বেগম জিয়ার মামলার সাক্ষ্য বর্ণনা দেওয়ার জন্য আটজন মন্ত্রীকে ডাকা হয়েছিল। তারা তাদের বক্তব্যও দিয়েছেন। দুদক বলছে, মন্ত্রীরা বেশ সহায়তামূলক বক্তব্য দিয়েছেন। আটজন মন্ত্রীর মধ্যে যারা জেলে আছেন তারা ইতিমধ্যে আসামি হয়েছেন। আর যারা এ পর্যন্ত বাইরে আছেন, তারা কি তবে সাক্ষ্য দিয়েই নিজেদের গা বাঁচিয়ে ফেলবেন? বেগম জিয়াকে ডুবাতে তার অন্যতম মন্ত্রীদের ব্যাপক ভূমিকা ছিল। যদি তারা সে সময় সত্যের পক্ষে দাঁড়াতেন, তবে তারা প্রতিবাদ করে পদত্যাগ করতে পারতেন। আর তাহলে আজকের বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যরকম হতে পারতো। কর্নেল (অব.) অলি আহমদ আজ বড়ো বড়ো কথা বলছেন। কিন্তু সেদিন তিনি মন্ত্রিত্ব পেলে তার অবস্থা কেমন হতো তা অদেখাই থেকে গেছে। আজ তিনি যাদেরকে দোষ দিতে চাচ্ছেন, কেবিনেটে এরা তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। মারপ্যাঁচে হেরে গিয়েছিলেন কর্নেল অলি। আজ তিনি আবার বেগম জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির ছায়াতলে যদি যেতে চান তবেই কি তা ভুলের মাশুল হিসেবে শোধ হয়ে যাবে? আমার খুব কর"ণা হয় সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের জন্য। হুইল চেয়ারে বসে তিনি দুদকে গিয়েছিলেন। তিনি দাম্ভিক উচ্চারণে বলতেন তার কোনো দুর্গন্ধ নেই। অথচ তারই কোটের পকেট থেকে আরিফুল-নাসের-শফিউরের মতো লুটেরা শক্তি বেড়ে উঠেছিল অবলীলায়। দুর্নীতির গডফাদার হিসেবে আজ কি তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে না? নাকি তিনিও পার পেয়ে যাবেন? বাংলাদেশের মানুষ মনে করেন, দুর্নীতিবাজদেরকে গ্রেপ্তার অব্যাহত রাখা দরকার। রাঘাব-বোয়াল এখনো অনেকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। রাজনীতিতে কখনো কখনো পিছনে ফিরে তাকানো খুব জরুরি হয়ে পড়ে। জোট সরকারের পাঁচ বছরের লুটপাটের খতিয়ান ছিল নগ্ন পুকুরচুরি। বর্তমান সরকার নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিষয়গুলো বিবেচনা কারলেই জাতি উপকৃত হবে। সর্বশেষ- ইসি সাইফুর- হাফিজের বিএনপি কে চিঠি দিয়েছে। এর আগে জিল্লুর - সৈয়দ আশরাফের নেতৃত্বে ইসির সাথে দেখা করেছে আওয়ামী লীগ।তাহলে কি শুধু বিএনপি'র ভাঙন ই নিশ্চিত ? নাকি এর পর আরো কিছু আছে ??????? সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০০৭ রাত ৯:৪২
false
ij
রবীন্দ্রনাথের বিশ্ববেদনা। রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে যতই জানছি-অবাক হচ্ছি। তিনি যে কেবলি বিশুদ্ধ কাব্যে নিমগ্ন ছিলেন না -তা আমরা কমবেশি জানি। প্রখর ছিল রবীন্দ্রনাথের সমাজচেতনা, বিশ্ববেদনা। বর্তমানকালের ফিলিস্তিনিদের সমস্যা ও সঙ্কট রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবদ্দশাতেই উপলব্দি করেছিলেন। কিন্তু, আমরা কি জানি- এশিয়ায়, বিশেষ করে চিনে-ব্রিটেনের আফিম ব্যবসা নিয়ে রবীন্দ্রনাথের অবস্থান কি ছিল? চিনে ব্রিটেনের আফিমব্যবসার খোঁজখবর নিতে বেরিয়ে এল রবীন্দ্রনাথের মানবিকতার অনন্য এক রুপ। আমাদের ছেলেবেলায় ফেনসিডিল ছিল কশির অষুধ। মাঝারি সাইজের বাদামি রঙের শিশি। দু-তিন চামচ খেলে ক্ষাণিকবাদে কেমন ঘুম-ঘুম লাগত। আমি সেই ১৯৭৯/৮০ সালের কথা বলছি। সে সময় সর্দিকাশি হলে নিকটস্থ ফার্মেসি থেকে ফেনসিডিলের বোতল নিয়ে আসতেন আব্বা-লুকোছাপার কিছুই ছিল না। অথচ, আশির দশকের শেষের দিকে আমার চোখের সামনেই ফেনসিডিল দিব্যি হয়ে উঠল নেশাদ্রব্য। কী আর বলব- ছেলেবেলায় কাশি হলে যে সিরাপটি আখছার খেয়েছি সেটিই কি না এখন নিষিদ্ধ ড্রাগস্! আমি হাসব না কাঁদব? দেশ ও কালের ফারাক থাকলে ইতিহাসে অনেক সময় অনেক ঘটনার মিল লক্ষ করেছি। যেমন চিনের সমাজের আফিমের ব্যবহার। তেরো শতকে আফিম জিনিসটা চিনে নিয়ে যায় আরব ব্যবসায়ীরা । তেরো থেকে ষোল শতক অবধি আফিম ছিল ডায়েরিয়ার অন্যতম প্রতিষেধক। কিন্তু, সপ্তদশ ও অস্টাদশ শতকে চিনেরা এটিকে নেশার জন্য সেবন করতে থাকে-যেমন বাংলাদেশে সত্তরের দশকের কাশির অষুধ ফেনসিডিল আশির দশকের শেষে হয়ে উঠেছিল নেশার উপকরণ! আফিমের সর্বগ্রাসী ধোঁওয়া ধীরে ধীরে অর্থব ও পঙ্গু করে তুলছিল চিনের সামাজিক জীবন। উপরতলা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে চ্যাপ্টা নাসারন্ধ্র দিয়ে হলুদাভ মগজে শেঁক দেওয়া হত আফিমের ধোঁওয়া। আফিম আসক্তকে গ্রাস করে ফেলত ধোঁওয়া-লুপ্ত হয়ে যেত তার মানসিক শক্তি ও স্বচ্ছ বিবেচনাবোধ। কেন? আফিম আসলে এক ধরনের নারকোটিক-যা অপিয়াম পপি নামে এক ধরনের ফুলের বীজ থেকে তৈরি হয়। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা অপিয়াম পপির নাম দিয়েছেন: পাপাভের সমনিফেরাম। আফিমে ১২% মরফিন থাকে। আরও থাকে ‘অফিয়েট অ্যালকোলাইড’। হিরোইন প্রস্তুত করতেই এই অফিয়েট অ্যালকোলাইড অনিবার্য। ২ সপ্তদশ শতকে চিনে আফিম রপ্তানি হত ভারতবর্ষ ও তুরস্ক থেকে। রপ্তানি করত মূলত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। আগেই বলেছি আমি-আফিমের সর্বগ্রাসী ধোঁওয়া ধীরে ধীরে অর্থব ও পঙ্গু করে তুলছিল চিনের সামাজিক জীবন। তাতে ব্রিটিশদের কী। ব্যবসা বলে কথা। লোভী ব্রিটিশদের নষ্টামির শেষ নাই। চিনে আফিম ব্যবসা সম্বন্ধে জনৈক ঐতিহাসিক লিখেছেন:By the 1830's, the English had become the major drug-trafficking criminal organization in the world; very few drug cartels of the twentieth century can even touch the England of the early nineteenth century in sheer size of criminality. Growing opium in India, the East India Company shipped tons of opium into Canton which it traded for Chinese manufactured goods and for tea. This trade had produced, quite literally, a country filled with drug addicts, as opium parlors proliferated all throughout China in the early part of the nineteenth century. This trafficing, it should be stressed, was a criminal activity after 1836, but the British traders generously bribed Canton officials in order to keep the opium traffic flowing. The effects on Chinese society were devestating. In fact, there are few periods in Chinese history that approach the early nineteenth century in terms of pure human misery and tragedy. In an effort to stem the tragedy, the imperial government made opium illegal in 1836 and began to aggressively close down the opium dens. ভারতবর্ষের আফিমের একচেটিয়া অধিকার পেতে আরেকটি অন্যায়ে জড়াতে হয়েছিল ব্রিটিশদের। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর বাংলাকে সম্পূর্নত গ্রাস করে ব্রিটিশরা। বাংলার ব্রিটিশ গর্ভনর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস তারপর বিহারের রাজধানীর পাটনার আফিম সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেন। ( তা হলে সিন্ডিকেট তখনও ছিল?) এর পরপরই ১৭৭৩ সাল থেকে ভারতীয় আফিমের ওপর একচেটিয়া কর্তৃক লাভ করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি- যা প্রায় পরবর্তী ৫০ বছর অক্ষুন্ন থাকে। সেই সময় চিনে আফিম রপ্তানি করতে থাকে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ১৮০০ সালে চিনের রাজকীয় সরকার নিষিদ্ধ করে। তা সত্ত্বেও আফিমব্যবসা চিনে হয়ে ওঠে অবাধ। চিনের নেশাক্তদের সংখ্যা যতই বাড়ছিল ততই লাভ বাড়ছিল ইউরোপীয়দের। ব্রিটিশদের পাশাপাশি ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরাও জড়িয়েছিল আফিম ব্যবসায়। ৩ ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের শেষে চিনের আয়তন ছিল ৪ মিলিয়ন স্কোয়ার মাইল এবং চিনের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন। মাঞ্চুরা ১৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে চৈনিক মিং রাজবংশকে পরাজিত করেছিল। তারপর থেকেই চিন শাসন করত মাঞ্চুরিয়ার চিং রাজবংশ। জাতে তাতার ছিল মাঞ্চুরা। তবে তারা চৈনিক সভ্যতাকে শ্রদ্ধা করত। যে কারণে তারা তাদের চিনা প্রজাদের প্রতি ছিল সহনশীল। চিনেদের সঙ্গে মিশে যাওয়া রোধ করবে বলে চিনাদের বিয়ে করত না মাঞ্চুরা; এভাবে রক্তের পার্থক্য বজায় রাখত মাঞ্চুরা। তবে আঠারো শতকের শেষে চিনে রীতিনীতিকে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল মাঞ্চুরা। সর্বশ্রেণির চিনার আফিম সেবনে চিনা সমাজে অবক্ষয়ের কথা আগেই বলেছি। সেজন্যই একজন চিং রাজা অস্টাদশ শতকের মাঝামাঝি আফিম নিষিদ্ধ করেছিল। পরে আবার ১৮০০ শতকে আফিমের ব্যবসা নিষিদ্ধ করা হয়।The government in Peking noted that the foreigners seemed intent on dragging down the Chinese through the encouragement of opium addiction. আগেই বলেছি-আফিমের সর্বগ্রাসী ধোঁওয়া ধীরে ধীরে অর্থব ও পঙ্গু করে তুলছিল চিনের সামাজিক জীবন। তাতে ব্রিটিশদের কী। ব্যবসা বলে কথা। মাঞ্চুরা আফিমের ছোবল থেকে চিনকে রক্ষা করার জন্য এমন কী ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। ইতিহাসে এটিই প্রথম আফিম যুদ্ধ (১৮৩৯ থেকে ১৮৪২) নামে পরিচিত। যুদ্ধে ব্রিটিশদের দক্ষতা ফুটে উঠেছিল। ব্রিটিশ জাহাজগুলি ছিল পাল ও ষ্টিম ইঞ্জিনের সমন্বয়ে তৈরি; একটা জাহাজের নাম ছিল: ‘নেমেসিস।’ নেমেসিসে বসানো ছিল শক্তিশালী কামান। তাছাড়া ব্রিটিশ সৈন্যদের ছিল আধুনিক মাসকেট । তারা দক্ষিণ চিন সমুদ্রের উপকূলবর্তী শহরগুলো তছনছ করে; ক্যান্টন দখল করে। এমন কী তারা ইয়াংজি নদীর অনেকটা ভিতরে প্রবেশ করে। সাধারণত জলপথেই মাঞ্চুদের রাজকীয় কর বোঝাই বার্জগুলি পিকিং পৌঁছতো। ব্রিটিশরা অস্ত্রবলে বার্জগুলো দখল করে নেয়। মাঞ্চুদের চিনে রাজ্যটি টলে ওঠে। ১৮৪২ সালে মাঞ্চুরা ব্রিটিশদের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করতে বাধ্য হয়। চুক্তির নাম: নানজিং চুক্তি। ব্রিটিশরা অযাচিতভাবে মাঞ্চুদের কাছ থেকে বিরাট অঙ্কের ক্ষতিপূরণ আদায় করে নেয়। চুক্তিনুযায়ী চিনের নৌবন্দরগুলি আফিম ব্যবসার জন্য ইউরোপীয়দের জন্য খুলে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়- ইংল্যান্ডের রানী ভিক্টোরিয়াকে দিয়ে দেওয়া হয় হংকং । দ্বিতীয় আফিম যুদ্ধ চলে ১৮৫৬ থেকে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দ অবধি। দুঃখজনকভাবে, দ্বিতীয় আফিম যুদ্ধেও মাঞ্চুশাসিত চিন পরাজিত হয়। ব্রিটিশরা মাঞ্চু রাজবংশের সঙ্গে আরেকটি অসম চুক্তি করে। চিনের বাজার আফিমের জন্য অবাধ হয়ে পড়ে। ৪ রবীন্দ্রনাথ এসবই কমবেশি জানতেন । তা ছাড়া আফিম ব্যবসা ও আফিম যুদ্ধ নিয়ে উনিশ শতকে প্রচুর বই লেখা হয়েছিল। সম্প্রতি ইংরেজিতে লেখা একটি রবীন্দ্রজীবনী পড়ে জানতে পারলাম-আফিমবানিজ্য নিয়ে তেমনি একটি বই পড়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তবে বইটি জার্মান ভাষায় লেখা ছিল- রবীন্দ্রনাথ অবশ্য বইটির ইংরেজি অনুবাদটিই পাঠ করেছিলেন। সময়টা ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দ। রবীন্দ্রনাথ বইটির ওপর আলোচনা করে লিখলেন ‘দ্য ডেথ ট্রাফিক’ নামে একটি প্রবন্ধ। প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ লিখলেন, ‘বানিজ্যিক লোভে গোটা চিনা জাতিকে ব্রিটেন বাধ্য করেছে আফিম-বিষ সেবন করতে। চিন বলছে: আমার আর আফিম দরকার নেই। ব্রিটিশ বেনিয়ারা বলছে- তোমার আফিমের দরকার আছে।’ এরপর রবীন্দ্রনাথ একজন ইংরেজের কথা বলেছেন, যিনি সশরীরে ক্যান্টনের একটি আফিম ডেরায় গিয়েছিল। ইংরেজটি সেখানে কয়েকজন চিনাকে আফিম সেবনরত অবস্থায় দেখতে পান। একজন চিনা আফিম সেবনকারী বলল,‘ আমার আয়ের ৮০ ভাগই চলে যায় আফিম কিনতে।’ ক্ষাণিকবাদে ইংরেজটি নিজের পরিচয় দিয়ে বলল- ‘আমি ইংল্যান্ড থেকে এসেছি।’ চিনা লোকটি তখন খেদের সুরে বলল, ‘রানী ভিক্টোরিয়া কেমন মানুষ বলুন তো? আমরা তার দেশে ভালো সিল্ক আর উন্নতমানের চা পাঠাই। আর তিনি কিনা আফিম পাঠিয়ে আমাদের খুন করছেন!’ এরপর রবীন্দ্রনাথ মন্তব্য করেছেন: ব্রিটেন সম্বন্ধে চিনের সাধারণ জনগনের ধারনা এমনই তিক্ত ছিল । তিনি ‘দ্য ডেথ ট্রাফিক’ প্রবন্ধে ব্রিটিশ ব্যাবসায়িক নীতির তীব্র সমালোচনা করেন একই সঙ্গে চিনের জনগনের জন্য গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেন-যা একজন স্পর্শকাতর কবির জন্য মানানসই। কিন্তু, রবীন্দ্রনাথ কেবল এটুকু করলেই আমি এ লেখার অবতারনা করতাম না। কেননা, সত্য ও সুন্দরের পূজারি রবীন্দ্রনাথের প্রতিক্রিয়া হয়েছিল আরও গভীর। ঐ বছরই অর্থাৎ ১৮৮১ সালের এপ্রিল মাসে রবীন্দ্রনাথের দ্বিতীয়বারের মতো ইংল্যান্ড যাওয়ার কথা ছিল। সে উদ্দেশে মাদ্রাজ অবধি পৌঁছেও গিয়েছিলেন। তার পরও ইংল্যান্ড যাননি রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্র গবেষকগন সবাই একমত যে-ব্রিটেনের আফিম ব্যবসা সম্বন্ধে সম্যক অবহিত হয়ে ব্রিটেনের প্রতি বৈরী মনোভাব গড়ে ওঠার কারণেই রবীন্দ্রনাথ দ্বিতীয়বার ইংল্যান্ড যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছিলেন। এমনই প্রখর ছিল রবীন্দ্রনাথের বিশ্বমানবতাবোধ! বিশ্ববেদনা। সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৮:৩১
false
rn
রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই- ৮৪ তিনটি উপাধি নিয়তির মতো জড়িয়ে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামের সঙ্গে—‘বিশ্বকবি’, ‘কবিগুরু’ ও ‘চিরআধুনিক’। বাঙালির কপটতার সম্ভবত সবচেয়ে বড় শিকার রবীন্দ্রনাথ। অবশ্য এর আগে পাশ্চাত্য তাঁকে শিকার করে ছেড়ে দিয়েছে কলকাতার মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজে; তারা তা করেছে বুঝেশুনে আর বাঙালি একই কাজ করেছে নির্বোধের মতো, বছরের পর বছর ধরে। ‘বিশ্বকবি’ উপাধি দেওয়ার আগে বিশ্বের তো বটেই, ইংরেজি কবিতাই তারা ঠিকমতো পড়েনি; হয়তো ভালো করে পড়েননি রবীন্দ্রনাথও।রবীন্দ্রনাথকে সব সময়ের জন্য ব্যবহারযোগ্য মনে হয়েছে বাঙালির, নজরুলকেও; এই দুই কবির জন্ম না হলে হয়তো বিহারীলালকে বেছে নেওয়া হতো, জীবনানন্দকেও। রবীন্দ্রনাথ কোনো রাজনীতিবিদ ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন সমাজ সচেতন এবং সমাজ বৈষম্য নিধনকারী, পবিরর্বতনকামী নাগরিক। তিনি চেয়েছেন মানুষের মধ্যে ঐক্য ও উদার মানবিকতার প্রতিফলন ঘটুক। তিনি সমাজ বদলের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। সমাজের ভেতরে মানুষের কর্মোদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। সমাজবিরোধীশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সমবেত আত্মশক্তির প্রয়োজন উপলব্ধি করেছেন সেই সময়েই। ব্যক্তি সমাজ সৃষ্টি করে, আর সমাজ সৃষ্টি করে রাষ্ট্রের। সমাজে সৎ অংশগ্রহণ সৎ রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্ম দেয়। এটা ছিল তাঁর কর্মের মূল প্রত্যয়। রবীন্দ্রনাথ সারাটা জীবন একজন সাধকের বেশে মানবাত্মার উন্নত মহিমার জয়গান গেয়ে ফিরেছেন৷ তিনি তার সমগ্র চৈতন্যে উপলব্ধি করেছেন, এ বিশ্ব চরাচরের সবকিছুই একই সূত্রে গাঁথা আর অননত্ম-অপার রহস্যময় এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সকল কর্মকাণ্ড৷ হুমায়ুন আজাদের ভাষায়-’রবীন্দ্রনাথই আমাদের সব’৷ রবীন্দ্রনাথ সাথে চিঠিপত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ ছিল অনেক মুসলমান কবি সাহিত্যিকদের। রবীন্দ্রনাথ চিঠি লিখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দীন, ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, স্যার আজিজুল হক, আবুল ফজল, কাজী আবদুল ওদুদ, বন্দে আলী মিয়াসহ খ্যাত-অখ্যাত অনেকের কাছেই ।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধের দিকে তাকালে প্রায় ৩০ টিরও বেশি প্রবন্ধ পাওয়া যাবে যেখানে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক বিষয়ে তাঁর কোনো না কোনো বক্তব্য পাওয়া যাবে। রবীন্দ্রনাথ যেভাবে যীশু খ্রিস্ট বা গৌতম বুদ্ধকে নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন, সেরকম উচ্ছ্বাস কখনই প্রকাশ করেননি হজরত মুহম্মদ [স.] সম্পর্কে। তবে হজরত মোহাম্মদ [সা.]-এর জন্মদিন উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথ একবার বাণী পাঠিয়েছিলেন স্যার আবদুল্লাহ সোরাওয়ার্দীকে। ২৫ জুন ১৯৩৪ ওই বাণীটি প্রচারিত হয় আকাশবাণীতে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উপন্যাস ও নাটকের ‘প্লট’ দিয়েছিলেন জসীমউদ্দীন ও বন্দে আলী মিয়াকে। এছাড়া তিনি কাজী নজরুল ইসলাম ও জসীমউদ্দীনকে শান্তিনিকেতনের কাজে যোগ দিতে আহবান জানিয়েছিলেন। জীবদ্দশাতেই ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও পূর্ব এশিয়ায় প্রভূত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯১৬-১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে দেওয়া তাঁর ভাষণগুলি বিশেষ জনপ্রিয়তা ও প্রশংসা পায়। তবে কয়েকটি বিতর্ককে কেন্দ্র করে ১৯২০-এর দশকের শেষদিকে জাপান ও উত্তর আমেরিকায় তাঁর জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। কালক্রমে বাংলার বাইরে রবীন্দ্রনাথ “প্রায় অস্তমিত” হয়ে পড়েছিলেন।আমাদের প্রত্যেকের জীবন পরিচালিত হচ্ছে স্রষ্টার মহা ইঙ্গিতে, যা আমরা সহজে অনুভব করতে ব্যর্থ হই। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ তার জীবনের সমস্ত কৃতিত্বের পেছনে তাঁর উপস্থিতি অনুভব করেছেন। তাই তিনি এক দিন লিখেছিলেন-‘অন্তর মাঝে বসি অহরহমুখ হতে তুমি ভাষা কেড়ে লহ,মোর কথা লয়ে তুমি কথা কহমিলায়ে আপন সুরে।কী বলিতে চাই সব ভুলে যাই,তুমি যা বলাও আমি বলি তাই,সঙ্গীতস্রোতে কূল নাহি পাইকোথা ভেসে যাই দূরে।’নীরদ চন্দ্র চৌধুরী বলেন, ‘হিন্দু একেশ্বরবাদের আলোচনা করিতে গিয়া কেহই হিন্দুমাত্রেরই একটা গভীর বিশ্বাসের উল্লেখ করে না। সেটা এক ঈশ্বর বা ভগবানের ধারণা। আচারে ও অনুষ্ঠানে, ধর্মের লৌকিক চর্চায় হিন্দু শুধু ‘ঠাকুরবেতা’ মানিলেও এবং প্রতিদিন এবং বৎসর ব্যাপিয়া ‘ঠাকুর দেবতার’ই পূজা করিলেও, এই সব ‘ঠাকুর দেবতার’ উপরে এক ঈশ্বর আছেন এই বিশ্বাস সকল হিন্দুরই ছিল এবং আছে। তাহারা মনে করিয়াছেন যে, তিনি বিপদে ত্রাণকর্তা, দু:খে সান্তবনা দাতা, অত্যাচারীর দ- দাতা ও সকলের প্রতি সমদ্রষ্টা। কবির সাহিত্য জগৎ বিশাল সন্দেহ নেই, কিন্তু কবির আধ্যাত্মিক সঙ্গীতই যে তাকে বিশ্বসাহিত্যে মর্যাদার শীর্ষ স্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছে তাতে মোটেই সন্দেহ নেই। স্ত্রী মৃণালিনীর ঘরে তাঁর প্রথম কন্যা মাধুরীলতার জন্ম হয়েছিল ১৮৮৬ সালে। একে একে তাঁদের আরও চারটি সন্তান জন্মগ্রহণ করে, কিন্তু রেণুকা ও শমীন্দ্রনাথের শিশুকালেই মৃত্যু হয়। ১৮৯৮ সালে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে পিতার নির্দেশে পরিবার নিয়ে চলে আসেন রবীন্দ্রনাথ, এখানে থেকে জমিদারি দেখাশোনা করেন। পাশাপাশি চলে তাঁর সাহিত্যচর্চার স্বর্ণযুগ।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজনৈতিক দর্শন অত্যন্ত জটিল। তিনি সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ও ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের সমর্থন করতেন। ১৮৯০ সালে প্রকাশিত মানসী কাব্যগ্রন্থের কয়েকটি কবিতায় রবীন্দ্রনাথের প্রথম জীবনের রাজনৈতিক ও সামাজিক চিন্তাভাবনার পরিচয় পাওয়া যায়।রবীন্দ্রনাথের “চিত্ত যেথা ভয়শূন্য” ও “একলা চলো রে” রাজনৈতিক রচনা হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। “একলা চলো রে” গানটি গান্ধীজির বিশেষ প্রিয় ছিল। যদিও মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক ছিল অম্লমধুর।
false
fe
সামন্ত সময়ে বিকল্প সভ্যতার খোঁজে সামন্ত সময়ে বিকল্প সভ্যতার খোঁজে ফকির ইলিয়াস ======================================== সভ্যতার বিবর্তন ঘটছে। আর তা ঘটছে মানুষের আদিমতা পরিহারের পর থেকেই। মানুষ তার নিজস্ব অভিধায় অভিষিক্ত করছে নিজেকে। এই অভিধা সৃজনের। এই প্রচেষ্টা নতুনকে বরণ করে নেয়ার। এর মাঝে কোনো ধ্বংস নেই। নেই ভাঙনের কোনো জোয়ার। তারপরও যারা রক্তাক্ত মৃত্তিকার ধুলিতে দাঁড়িয়ে উল্লাসে নাচে, এরা আসলে কি চায়? তাদের সুপ্ত ইচ্ছেটি কি? তাদের লক্ষ্যবিন্দুই বা কোথায়? মানবতার পক্ষে দাঁড়াবে বলে মানুষ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল। প্রতিটি ধর্ম সে চেতনাটি ধারণ করেছে। ‘নরহত্যা মহাপাপ’-তা প্রতিষ্ঠিত যে কোনো ভাষাতেই। যে কোনো ধর্মগ্রন্থে। তাহলে এখন বিশ্বে যে যুদ্ধ চলছে তা কি ধর্ময্দ্ধু? ধর্মপ্রতিষ্ঠার যুদ্ধ? ধর্ম তো শান্তির কথা বলে। শৃঙ্খলার কথা বলে। হত্যা করে, ত্রাস সৃষ্টি করে তবে কি শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। প্রশ্ন উঠছে- এমন অনেক। উপমহাদেশে মুম্বাই হত্যাযজ্ঞ সম্প্রতিক ঘটনা। এর দাগ শুকোয়নি। ঢাকার পিলখানা রক্তাক্ত হয়েছে অত্যন্ত নারকীয় কায়দায়। হত্যা কত হয়েছে বাংলাদেশের মেধাবী সন্তানদের। এরা দেশের অগ্রসরমান বীর সন্তান। একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যা ঘটেছিল এই বাংলাদেশে। ঘাটতকরা এখনো রয়ে গেছে বাংলাদেশেই বহালতবিয়য়ে। তারা বিচারের মুখোমুখি দাঁড়ায়নি। ফলে ঘাতকরা মদদ পেয়েছে। পেয়েই যাচ্ছে। নিজেদের শক্তি পরীক্ষা করছে বারবার। ত্রাস, খুন কিংবা হিংসাত্মক অপশক্তির মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছে উপমহাদেশের রাষ্ট্রনায়কদেরও। ভুট্টোর ফাঁসি হয়েছে। মুজিব নিহত হয়েছেন স্বপরিবারে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, রাজীব গান্ধী, বেনজির ভুট্টো, ইন্দিরা গান্ধী কেউই রেহাই পাননি। কি নৃশংস হত্যাকান্ড ! কেন এমন দানবেরা বারবার হুমড়ি খেয়ে পড়ছে? কি লক্ষ্য তাদের? নতুন কোন সভ্যতা প্রতিষ্ঠা? না, তা ভাবার কোনো অবকাশ নেই। এদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রতিষ্ঠিত সভ্যতাকে বিনষ্ট করা। মানব সমাজের যাপন প্রণালীকে ব্যাহত করা। উগ্র মৌলবাদ কিংবা জিহাদি জঙ্গি চেতনার বীজ উপমহাদেশে বপন করা হয়েছে বিভিন্নভাবে ব্রিটিশ শাসন থেকে গণতান্ত্রিক উপায়ে মুক্তির সংগ্রামের পাশাপাশি একটি চক্র সে সময়ই ব্যস্ত ছিল ধর্মীয় উন্মাদনাকে কাজে লাগিয়ে ফয়দা লুটতে। তারা সব সময়ই ছিল দোটানায়। ফলে তারা স্বার্থের প্রয়োজনে সারি পাল্টিয়েছে বিভিন্নভাবে। ‘তাহফীমুল কোরআন’ গ্রন্থের প্রণেতা মওলানা আবুল আলা মওদুদী উপমহাদেশে সেই বীজ বপন করেছেন খুব সূক্ষ্মভাবে। তার এই গ্রন্থটির প্রতিটি খন্ড পড়লেই বোঝা যাবে তিনি ধর্মের নামে জিহাদি জোশের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন কি কৌশলে! বর্তমান সময়ে ধৃত বিভিন্ন জঙ্গিদের কাছে যেসব পুস্তকাদি পাওয়া যায় বা যাচ্ছে সেগুলোতে এসব জিহাদি চেতনাকেই বিতরণ করা হয়ে থাকে। এর শিকড় কোথায় তা বুঝতে অসুবিধা থাকার তো আর কোনো কারণ নেই। উগ্র মৌলবাদের প্রথম লক্ষ্যবিন্দুই হচ্ছে রাষ্ট্রের ভিতকে নড়বড়ে করে তোলা। তারা সেটাই করছে। ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে তাদের বলয়। এটা মারাত্মক শঙ্কার কারণ! এদের দমনের যে পথগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে তা কি যথার্থ? প্রশ্ন আছে তা নিয়েও। পাকিস্তানের লাল মসজিদে সেনা অভিযান কি সে দেশে জঙ্গি দমন করতে পেরেছে? পারেনি। পাকিস্তানে অতিসম্প্রতি আক্রান্ত হয়েছেন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট খেলোয়াড়রা। কি জঘন্য মানসিকতা। এই সেই বিষধর জঙ্গিবাদ যারা খেলোয়াড়কে খেলতে দেবে না, গায়ককে গাইতে দেবে না, শিল্পীকে আঁকতে দেবে না, লেখককে লিখতে দেবে না। তারপরও মানুষ কি হাত গুটিয়ে বসে থাকবে? কিছুই করবে না- করতে পারবে না এদের বিরুদ্ধে? পারতে হবে। না পেরে উপর নেই। এই অপশক্তি সমাজে আস্কারা পেলে মানবিকতা হারিয়ে যাবে চিরতরে। এরা জ্ঞানবিজ্ঞানের উৎকর্ষকে শুধু অস্বীকারই করছে না, বরং শিল্প সংস্কৃতির মননও মেধাকে বিনাসের মাঠে থেমেছে। তারা হাঁকছে ‘সুশান্তি’ ‘সুশাসন’ প্রতিষ্ঠার বুলি। কিন্তু নিরপরাধ মানুষ হত্যা করে কি শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব? তাদের আরেকটি হাতিয়ার আছে। তা হচ্ছে সামন্তবাদের বিরুদ্ধে তাদের বক্তব্য। তারা বলতে চাইছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে যে সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে, তা ভাঙতেই ‘জিহাদ’ করছে তারা। এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা এলেই আমার মনে পড়ে মধ্যপ্রাচ্যের বাদশাহী প্রথার কথা। মধ্যপ্রাচ্যের ‘কিং’ সম্প্রদায়, যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের ক্ষমতার চাকা হিসেবে ব্যবহার করছেন। তারা জানের যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সমর্থন ছাড়া তাদের বাদশাহী অচল হয়ে পড়তে পারে। দেশের জনগণ বিদ্রোহ করতে পারে। গণতন্ত্র চাইতে পারে। সেই সুযোগে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজস্ব সেনা স্থাপনা নির্মাণ করে রেখেছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন শহরে। এই সুযোগে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের ফায়দাও হাসিল করছে। বাদশাহীকে নিরাপত্তা দেশের নামে অর্থনৈতিক মুনাফা লাভ। স্বার্থটা দ্বিপাক্ষিক। তাই তা নিয়ে বেশি কথা বলে লাভ কি? না, মধ্যপ্রাচ্যের ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য মৌলবাদী জঙ্গিরা সংগ্রাম করছে না। তাদের মতলব ভিন্ন। তাদের ইসলামের ঝা-া মওদুদীবাদী চেতনায় শানিত! আর সেজন্যই বিন লাদেনের প্রধান আস্তানাই এখন পাক-আফগান সীমান্ত। সেখান থেকেই এখন পরিচালিত হচ্ছে বিশ্বে ইসলামী মৌলবাদের প্রধান তত্ত্বকর্ম। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো থেকেও তরুণ-তরুণীদের সংগঠিত করা হচ্ছে, যে মৌলবাদী শক্তির ছায়াতলে, ইসলাম ধর্মের প্রকৃত চেতনা- কখনোই তাকে স্বীকৃতি দেয়নি। ঢাকার পিলখানা হত্যাকান্ড, মুম্বাই হত্যাকান্ড, পাকিস্তানে জঙ্গিবাদী আক্রমণ মূলত সবই একসুত্রে গাঁথা। লক্ষ্য হচ্ছে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে বিপন্ন করে তোলা। কিন্তু এই যে বিকল্প সভ্যতার পথ খোঁজা হচ্ছে- তা কি শান্তি এনে দিতে পারবে? পারবে না। পারার কথাও নয়। বরং সামাজিক হিংস্রতা বাড়াবে। বাড়াবে নিরাপত্তাহীনতা। তা দমনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সরকারি সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। ক্রিকেট খেলা পন্ডের নামে পাকিস্তান প্রকৃতপক্ষে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীনই হচ্ছে। বিষয়টি পাকিস্তান সরকারকে গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সামরিক বাহিনী আফগানিস্তানে মোতায়েন রেখেছে। জঙ্গি দমনের নামে পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা অভিযান যে কোনো সময় শুরু হতে পারে সে সম্ভাবনা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। যদি তা হয় তবে পরমাণু শক্তিধর পাক-ভারতের নাকের ডগার ওপর মার্কিনী স্থাপনার আধিপত্য দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। রক্তাক্ত জেহাদের মাধ্যমে মানুষকে যারা মুক্তির পথ দেখাতে চাইছে তারা নিজেরাই ভ্রান্ত মতবাদী। বিষয়টি সবাইকে অনুধাবন করতে হবে। ------------------------------------------------------------------ দৈনিক ডেসটিনি ।ঢাকা। ১২ মার্চ ২০০৯ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০০৯ সকাল ৮:২৮
false
rn
অপেক্ষায় আছি সেই দিনটির জন্য "সকালে উঠেকাকেরা বলে কা,কা,কা,আর ছেলে-পেলে বলে চা,চা,চা,কোকিল বলে কুহু,কুহু,কুহুআমি বলি আল্লাহু,আল্লাহু।"একজন মানুষের মুখের হাসি আর চা এই দুটো জিনিস যদি সুন্দর হয় তাহলে আর কিছু লাগে না-সেদিন এই কথা হিমি কে বললাম।আমার কথা শুনে হিমি হাসতে হাসতে আমাকে মৃ্দু ধমক দিয়ে বলল বেশী কৌতুহল ভালো না।বনের হরিন যখন বেশী কৌতুহল দেখায় অমনি সে ফাঁদে ধরা পরে।এমনকি বাঘ ও যখন বাধা ছাগল দেখে কৌতুহল সামলাতে পারে না,অমনি গুলি খেয়ে মরে।আমি হিমিকে থামিয়ে দিয়ে বললাম- আর মানূষ বেশী কৌতুহল দেখায় বলেই এত বড় বড় জিনিস আবিস্কার করে!কী সুন্দর সকাল!আকাশটা ও কী সুন্দর এর মধ্যে আমি যদি হঠাৎ করে মরে যাই?এখনো কত কাজ বাকি আছে।মরেও শান্তি পাবো না।হিমিকে নিয়ে এখনও নীলগিরি পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়া হয়নি।হিমি নরম সুন্দর চোখের দিকে তাকিয়ে বলিনি-"আমাকে খুঁজবে প্রভাতের প্রথম সূর্য কিরনে,/যদি না পাও,খুঁজবে সন্ধ্যায়,যখন সূর্য ডুবি ডুবি করেও ডুবছে না।/সাবধান!মধ্যাহ্নে আমাকে কখনো অনুসন্ধান করবে না।"অনেক কিছুর জন্য,এখনো আমি অপেক্ষা করে আছি।বেশীর ভাগ মানুষ অপেক্ষা পছন্দ করে না।তারপরেও আমি অপেক্ষা করে আছি।আসলে অপেক্ষা করতে হয়।ভালোবাসা'র জন্য অপেক্ষা করতে হয়,ঘৃনার জন্য অপেক্ষা করতে হয়,মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে হয়,আবার মুক্তির জন্যও অপেক্ষা করতে হয়।আমি অপেক্ষায় আছি।অপেক্ষাই মানব জাতির নিয়তি।অপেক্ষা করতে আমার ভালোই লাগে।জীবন অতীব ক্ষনস্থায়ী।কে কবে কীভাবে মারা যাবে তার ঠিক নেই।এই ক্ষনস্থায়ী আয়ুস্কালের মধ্যে যদি সামান্য কয়েকটি মুহূর্তও যদিও পাওয়া যায়,তাই বা কম কী?মানুষের জীবনে কয়েকটাই মাএ গোল্ডেন মোমেন্ট আসে,আর বাদ বাকি জীবনটা কাটে সৃস্তি রোমন্থন করে।সুন্দর একটা কবিতা মনে পড়লো- " হে বৃষ্টি,মেঘ না থাকলে/তোমার অস্তিত্ব নেই যেমন,/আমার দুঃখ গুলোরও কোনো মূল্য নেই আমি না থাকলে।"সেদিন সন্ধ্যায় ফুলার রোডের ফুটপাতে বসে হিমিকে বললাম-তুমি কি জানো,চাঁদের বুকে মাঝে মাঝে কিসের কালো দাগ?হিমি তার আশ্চর্য সুন্দর এবং আশ্চর্য নরম গলায় বললো,পরাজিত এবং হেরে যাওয়া মানুষের কষ্টের দাগ!পৃথিবীতে এখনো মানুষ কাঁদে,যখন হেসে উঠো তুমি।পৃথিবীতে এখনো মানুষ ক্ষুধায় কাতর,কারো বেঁচে থাকা কি বিষাক্ত হয়ে উঠল তোমার একটু অবহেলায়?হিমির চোখ ভিজে উঠেছে।আমি জানি আমার অনেক ব্যর্থতা আছে।তারপরও মনে হয় হিমি আমার পাশে থাকলে এক ফুয়ে উড়িয়ে দিতে পারি হাজার টা ব্যর্থতা।আমি কেন জানি,অনেক কিছু একটু আগে আগে টের পেয়ে যাই।টের পাই,আমার প্রিয় মানুষের সাথে আমার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে।টের পাই জীবনে আমি উন্নতি করতে পারবো না।কিন্তু তাতে কারো কোনো ক্ষতি হবে না।শুধু আমার নিজের ছাড়া-টের পাই।আমি ছোট বেলা থেকেই দেখেছি কারো সাথেই আমার মিলে না,তাই আমি নিজের মতোই একলা একলা ঘুরে বেড়াই।আমার মন খারাপ হলেই হিমির সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করে।তাই সেদিন গভীর রাতে হিমি কে ফোন দিলাম।শুরু করলাম আজাইরা প্যাচাল,হিমি শুধু একটু পর পর হু হা করে যাচ্ছে।হিমি, পৃথিবীর আধুনিক লেখা পড়তে হলে অন্তত দশ জনের লেখা আগে পড়তে হবে।কবিতায়- ইয়েটস,ফার্নান্দো পাসোয়া,সি.ভি কাভাপি,হোর্হে লুই বোহের্স,আর গল্প, উপন্যাসে- মার্সেল প্রুস্ত,টমাস মান,ফানৎস কাফকা,জেমস জয়েস,ভার্জিনিয়া উলফ আর উইলিয়াম ফকনার।তারপর আরো আছেন- শোপেনহাওয়ার,নিৎসে,জরথ্রুস্তের,ফেরদৌসী,হোমার,ভার্জিল,ওভিদ,দান্তে,শেক্সপিয়ার,গ্যেটে,টলস্টয়,রবীন্দ্রনাথ-,এদের বই শেষ করে,তারপর তোমার ইচ্ছা মতন,তুমি যা খুশি পড়ো।কিন্তু আগে ক্লাসিক পড়া থাকলে বাকি সব জলের মতো বুঝে যাবে।এ সময়ের যে কোনো সাধারন মানের লেখকের লেখা কোনো বইয়ের এ জায়গা ও জায়গার দুটো সংলাপ পড়ে বা তিন চার লাইন পড়লেই বুঝতে পারবে গতি কোন দিকে।আমার কথার শেষে হিমি বলেছিল-না,আমি পারব না।আগে নিজেদের জানব,তারপর অন্যদের,বিদেশীরা আগে নিজেদের জেনেছে তারপর অন্যদের।তারপর আমাকে একটা ইংরেজী গান শুনিয়ে দিলো।গান টা খুব সুন্দর!সুরটাও দারুন!" আই ওন্ট ইউজ ওয়ার্ডস এগেইনদে ডোন্ট মীন হোয়াট আই মেন্টদে ডোন্ট সে হোয়াট আই সেইডদে আর জাষ্ট দ্যা ক্রাস্ট অফ দ্যা মীনিংউইথ রেল্মস আন্ডারনিথনেভার টাচডনেভার টাচডনেভার ইভিন মুভড দোইফ ল্যাঙ্গু্য়েজ ওয়্যার লিকুইডঅ্যান্ড ইটস্ গানগানঅ্যান্ড গান, ইটস্ গান।"(যোজন যোজন অন্যায় করেও মানুষ- হাসতে পারে,হাসে,গান গায়,ঘুমাতে পারে ঘুমোয়,ভালোবাসে,কাঁদে কাঁদায়।)
false
mk
জিয়া হত্যার পরে সেনাবাহিনীতে কী ঘটেছিল ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড টি স্নাইডার পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছিলেন। ঘণ্টায় ঘণ্টায় বার্তা পাঠিয়েছিলেন ওয়াশিংটনে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পরেও এভাবে মার্কিন দূতাবাস সক্রিয় হয়েছিল। কিন্তু সেনাবাহিনীর ভেতরকার খবর জিয়া হত্যাকাণ্ডের পরে তারা বেশি নির্দিষ্টভাবে জানতে পেরেছিল। দূতাবাসের মূল্যায়নে প্রতীয়মান হয় যে পরিস্থিতি অনুকূল না থাকার কারণে সামরিক বাহিনী জিয়া হত্যার পরপরই ক্ষমতা দখলে বিরত ছিল।১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রদূত স্নাইডার বেলছিলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতে যেসব খবরাখবর আমরা পেয়েছি, তাতে আমাদের কাছে এ রকম আর কোনো তথ্য নেই যে জেনারেল মঞ্জুরের সমর্থনে অন্য কোনো সামরিক ইউনিট ওই বিদ্রোহে অংশ নিচ্ছে বা তেমন ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।সেনাবাহিনীর ফরেন লিয়াজোঁ অফিসার ডিএটিটিকে (ঢাকায় মার্কিন প্রতিরক্ষা অ্যাটাশে) বলেছেন, কুমিল্লার ৩৩ ডিভিশন ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। তারা ঢাকা কমান্ডের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছে।উল্লেখ্য, স্নাইডার এই বার্তায় উল্লেখ করেছিলেন যে চীনা দূতাবাস কর্মকর্তাও আমাদের বলেছেন, একটি বিশ্বস্ত সূত্রমতে তাঁরাও জানতে পেরেছেন, ৩৩ ডিভিশন মঞ্জুরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে যাচ্ছে। চীনাদের মতে, বর্তমান লড়াইয়ের মুখ্য ফ্যাক্টর হচ্ছে ৩৩ ডিভিশন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, যাঁর সঙ্গে সামরিক বাহিনীর ভালো যোগাযোগ আছে, তিনি আমাদের জানিয়েছেন, তিনি বিশ্বাস করছেন যে বগুড়া কিংবা রংপুর ও ঢাকার বাইরে থাকা নবম ডিভিশনের সৈন্যদের আনুগত্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তাঁদের অধিকাংশই অনুগত। তবে জেনারেল মীর শওকত আলীর নেতৃত্বাধীন ডিভিশনের মনোভাব সম্পর্কে তিনি কম নিশ্চিত।মীর শওকত আলীকে কয়েক মাস আগে ঢাকায় স্থানান্তর করা হলেও তাঁর যথেষ্ট প্রভাব রয়ে গেছে। তাঁর মতে, নৌবাহিনী পুরোপুরি অনুগত। কিন্তু বিমানবাহিনী বিভ্রান্ত। কারণ, বর্তমান বিমানবাহিনীর প্রধানের নেতৃত্ব দুর্বল। এ ছাড়া ১৯৭৭ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের সমস্যাও কিছুটা রয়ে গেছে। এই একই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন যে চট্টগ্রামে সামরিক বাহিনীর ভেতরকার সরকার অনুগত ও জেনারেল মঞ্জুরের অনুগত ব্যক্তিদের মধ্যে ‘জটিলতা’ রয়ে গেছে।মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরও উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আক্রমণ চালানো হলেও বিএনপির মহাসচিব বদরুদ্দোজা চৌধুরী অক্ষত ছিলেন। যদিও কথিতমতে, আক্রমণকারীরা সংখ্যায় ছিল প্রায় ২০০ এবং তাঁরা গৃহভৃত্যসহ প্রত্যেককে হত্যা করেছেন। এ ঘটনার বাইরে একটি কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় আমাদের নজরে এসেছে। আমরা অবগত হয়েছি, জিয়াকে এই সময়ে চট্টগ্রাম সফর থেকে বিরত থাকতে সামরিক গোয়েন্দারা উপদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের সতর্কতা তিনি অগ্রাহ্য করেন।১৯৮১ সালের ৩১ মে মার্কিন দূতাবাসের ৭ নম্বর পরিস্থিতি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এরশাদ মেজর জেনারেল মঞ্জুরসহ সব ‘দুর্বৃত্ত এবং তাঁদের কমান্ডিং অফিসারদের’ আজ দুপুরের মধ্যে আত্মসমর্পণের চূড়ান্ত নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যথায় সশস্ত্র বাহিনী চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। স্নাইডার উল্লেখ করেন যে সরকারের প্রতি কুমিল্লার গুরুত্বপূর্ণ ৩৩ ডিভিশনের আনুগত্য সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর, বর্তমানে বিজিবি) প্রধান এবং মন্ত্রিসভার সচিব মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে অবহিত করেন যে ৩৩ ডিভিশন সরকারের সঙ্গেই রয়েছে। বিডিআর প্রধানের মতে, ৩৩ ডিভিশন দেশের অবশিষ্ট অংশ থেকে ফেনী নদীর (চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার সীমান্ত) কাছে চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। আমাদের কাছে এ খবরও এসেছে যে কুমিল্লা থেকে সড়ক ও রেলপথে উল্লেখযোগ্য সৈন্য রওনা দিয়েছে। রাষ্ট্রদূত এরপর লিখেছেন, আমাদের জানামতে, চট্টগ্রামে মঞ্জুরের সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত হতে সৈন্য প্রেরণে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। আমরা অনুমান করছি যে এই সৈন্যদের গন্তব্য হচ্ছে ফেনী নদী পর্যন্ত। রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, আমরা আরও ইঙ্গিত পেয়েছি যে চট্টগ্রামের কতিপয় সামরিক ইউনিট সরকারের প্রতি অনুগত। মন্ত্রিসভার সচিব দাবি করেছেন যে সৈন্যরা ব্যাপক সংখ্যায় সরকারের কাছে ছুটে আসছে এবং বিডিআরের প্রধান চট্টগ্রামের অনুগত সৈন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। এরপর সূত্র অবমুক্ত না করা এক প্রতিবেদনের বরাতে বলা হয়েছে, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী ইউনিট চট্টগ্রামে সরকারের প্রতি অনুগত রয়েছে। এরপরের কিছুটা জায়গা অবমুক্ত করা হয়নি।রাষ্ট্রদূত মন্তব্য করেন যে জেনারেল এরশাদ যদিও ফাইনাল অ্যাকশন গ্রহণের হুমকি দিয়েছেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও সরকারের ভেতরে কৌশল গ্রহণ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কেউ অবিলম্বে আক্রমণ করতে চাইছেন আর অন্যরা একটি কৌশল গ্রহণের কথা ভাবছেন। কারণ, তাঁরা একটা জাতীয় ঐক্য দেখাতে চাইছেন। তাই মঞ্জুরকে পরিত্যাগ করে সরকারের প্রতি সমর্থনকারী সেনাসংখ্যা যাতে আরও বাড়ে, সে জন্য তাঁরা অপেক্ষা করতে চাইছেন। যাঁরা একটি শক্তিক্ষয়ের (এট্রিশন) কৌশল অবলম্বনের পক্ষে, তাঁদের যুক্তি—দেশের বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে মঞ্জুর সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া কী হবে, সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে এবং তাঁরা যখন ওই অভিযানে নামবেন, তখন সরকার অনুগত সৈন্যদের দিক থেকেও স্বপক্ষ ত্যাগের বিষয়েও উদ্বেগ রয়েছে। আর সে কারণেই অধিকতর সতর্ক কৌশল অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর প্রতি এরশাদের সমর্থন রয়েছে আর সেটাই প্রাধান্য পাচ্ছে।২০ দিন পরে: ১৯৮১ সালের ২০ জুন এক সিক্রেট তারবার্তায় জিয়া ও মঞ্জুর হত্যার পরপরই কেন সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেনি, তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সৈন্যদের আনুগত্য নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকাটাই উচ্চাভিলাষী কর্মকর্তাদের সংযত করতে পারে। মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যেও অসন্তোষ রয়েছে কিন্তু আমাদের কাছে এমন রিপোর্ট নেই যে এই গ্রুপ এই সময়ে নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। চূড়ান্তভাবে, সামরিক বাহিনীর রাজনৈতিক তৎপরতা সম্পর্কে জনগণের মনোভাব অনুকূল নয়। আর সেটাই হয়তো তাদের সংযত করতে পারে। যদিও সম্ভাব্য একাধিক ঘটনার পরে আমাদের এই অনুমান বদলে যেতে পারে।ঢাকায় ব্যাপক সংশয় রয়েছে যে সামরিক বাহিনী কোনো না কোনোভাবে চলতি সাংবিধানিক ক্রান্তিকালকে নস্যাৎ করতে পারে। আশঙ্কা দুটি। প্রথমত, বর্তমান সামরিক নেতৃত্ব সরকারকে সামরিক আইন জারি করতে বাধ্য করবে কিংবা অন্য উপায়ে ক্ষমতা নিয়ে নেবে। কিংবা দ্বিতীয়ত, সামরিক বাহিনীর মধ্যকার একটি অসন্তুষ্ট গ্রুপ বর্তমান সামরিক নেতৃত্বকে উৎখাত করতে পারে। এবং সম্ভবত সরকারকেও। পরের ভয়টি অনেক বেশি অনড়, যদিও তা অস্পষ্ট। এর মূল কথা হচ্ছে, সামরিক বাহিনীর ‘পরিস্থিতি ভালো নয়’। এই আশঙ্কাটা জীবন্ত থাকছে পৌনঃপুনিক গুজবের কারণে। আর সেটা হলো সামরিক বাহিনীর মধ্যে ‘হট্টগোল’ রয়েছে। এক গুজবে বলা হয়েছে, ৮ কিংবা ৯ জুন রাতে ঢাকা সেনানিবাসে একধরনের হইচই ঘটেছে। তবে এই গুজব ও আতঙ্ক সত্ত্বেও গত দুই সপ্তাহে সামরিক বাহিনীর ভেতরকার অবস্থার লক্ষণীয় উন্নতি ঘটেছে। এবং জিয়ার হত্যাকাণ্ডের পরপরই যতটা আশঙ্কা করা হয়েছিল, এখন আর ততটা করা হচ্ছে না।জাসদের ষড়যন্ত্র: ১৯৭৫ সালের পরে ১৯৮১ সালে আবারও জাসদ প্রসঙ্গ আসে। ওই একই বার্তায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন যে যদিও একাধিক সূত্র সন্দেহ প্রকাশ করেছে, এ মুহূর্তে সেনাবাহিনীতে অসন্তোষ একটি মারাত্মক হুমকি। অনুকূল পরিবেশে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সৈন্যদের মধ্যকার রেডিক্যাল অংশের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কিন্তু ১৯৮০ সালের ১৭ জুনের ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে যে জাসদের অবলম্বন করা কৌশল শৌখিন। তদুপরি সাধারণ সৈনিকদের মধ্যে আনুগত্যের অনিশ্চয়তা, আজকের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যে অনিশ্চয়তার একটি উপকরণ হিসেবেই রয়ে গেছে।অন্য একটি দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও লক্ষ করা যায় যে এনসিও (নন-কমিশনড অফিসার) এবং সৈনিকদের মধ্যকার শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা ইতিবাচক প্রভাব বয়ে আনতে পারে। যেমনটা একজন বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদ মন্তব্য করেছেন যে সরকারের সৌভাগ্য যে উচ্চাভিলাষী কর্মকর্তারা তাঁদের সৈন্যদের আনুগত্য লাভ সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলেন না। জেনারেল মঞ্জুরের বিদ্রোহ সমর্থনে সাধারণ সৈনিকদের অস্বীকৃতি, সেনাবাহিনীতে জিয়ার জনপ্রিয়তা এবং কর্মকর্তাদের প্রতি সৈন্যদের অন্ধভাবে অনুসরণ না করার মনোভাব—এই ক্রান্তিকালে (ক্ষমতা দখলে) উচ্চাভিলাষী কর্মকর্তাদের সংযত করেছে।Link
false
rn
দেশটাকে পঙ্গু করে লাভ টা কি ভাই_ কোনো ব্যক্তিকে খুন করার অধিকার কারো নেই। দোষী হলেও দায়িত্বটা আপনার নয়। ব্লগার হত্যার ব্যাপারটা বাংলাদেশে আস্তে আস্তে অনেক প্রকট হচ্ছে। মুক্তমনা'রা কলম দিয়ে লিখেছে, এগুলোর জবাবও উচিত কলম দিয়ে দেওয়া, চাপাতি দিয়ে নয়। যে লেখাটা ভাল লাগবে না, সেটা বর্জন করলেই হয়। যারা চটি গল্প গুলো লেখে- সেগুলো অবশ্যই ইসলাম বিরোধী তাদের জন্য তো কেউ চাপাতি হাতে নেয় না। অভিজিৎ কিন্তু শুধু লিখেছে, কাউকে শারীরিক ভাবে আঘাত করেনি, তা যত খারাপ লেখাই হোক। তার লেখা আপনার ভালো না লাগতেই পারে। সেক্ষেত্রে তার লেখা না পড়লেই পারেন। অথবা তার চেয়েও ১০০ গুন কঠিন ভাষায় তার প্রতিবাদ করতে পারেন। কিন্তু লেখার প্রতিবাদ লেখা দিয়ে হতে হবে। অভিজিত নাস্তিক, না আস্তিক, সেটি বিবেচ্য নয়। তিনি আওয়ামী লীগ ঘেষা, নাকি বামপন্থি, নাকি ডানপন্থি, সেটিও কথা না। তিনি একজন লেখক। তিনি যুক্তির পথে হাটতেন। আমাদের নিষ্ঠুর রাজনীতি তাঁর পথচলা থামিয়ে দিলো। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমরা মন্তব্য করে বসি। তদন্ত ছাড়াই বলে দেই এটা অমুক গোষ্টির কাজ। নাস্তিক হলে তাকে আস্তিকরা মারবেন, মুক্তিযোদ্ধা হলে রাজাকাররা মারবে, আওয়ামী লীগ হলে বিএনপি বা জামাত-শিবিররা মারবে, মৌলবাদীরা মরলে নাস্তিকরা মারবে, বিএনপি-জামাত মরলে পুলিশ মারবে- এমনই সব প্রচলিত ধ্যান ধারণা আমাদের চিন্তা-চেতনার জায়গায় পঁচন ধরাতে শুরু করেছে। টিএসসি আর শাহবাগ থানার মাঝামাঝি স্থানে তো অন্তত ডজনেরও বেশি পুলিশ সদস্য থাকার কথা। টিএসসির অদূরেই এ ঘটনা ঘটিয়ে দুর্বৃত্তরা কীভাবে পালালো। বইমেলার শেষেই ঘটল এই ঘটনা। তার ওপর এত ব্যস্ততম সড়কের ফুটপাতে। ব্যক্তিগতভাবে আমি অভিজিৎ রায়ের লেখাও ঠিকমত পড়িনি। আস্তিক নাস্তিক ক্যাচাল উন্নত বিশ্বে অন্তত ২০০ বছর আগেই শেষ হইছে। আমরা এখনও এই সব নিয়ে পড়ে আছি বা আমাদের মধ্যে এই সব চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এদেশে মুক্তিবুদ্ধি চর্চা করা যাবে না? মতের অমিল হলেই আপনি "হিটলিষ্ট" এ ঢুকে পড়বেন। ধর্মান্ধ, কাপুরুষ, জঙ্গী গোষ্ঠী তাদের "ধর্ম" রক্ষায়, তাদের তথাকথিত অস্তিত্ব রক্ষায় নেমে পড়বে। কুরআন অধ্যয়ন করে দেখ। "ফিৎনা বা বিবাদ হত্যার চেয়েও নিকৃষ্টতম" (সূরা বাক্বারা, আয়াত:১৯১)।অভিজিৎ রায়ের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে অবিশ্বাসের দর্শন, ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’, ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’, ‘ভালবাসা কারে কয়’, স্বতন্ত্র ভাবনা : মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি, সমকামিতা : বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান। কেউ যখন তার বুদ্বি-বিবেক-চিন্তা দিয়ে ইসলামের বিপক্ষে কথা বলছে, আপনিও যুক্তি দিয়ে তার কথার জবাব দেন। এটাই হবে সত্যিকারের সংগ্রাম। যদি প্রতিবাদ করতে হয় তাহলে উনাদের লেখা বিশ্লেষণ করে হাতে কলম তুলে আপনিও লিখে প্রতিবাদ করুন। নৃশংসতা কোন ধর্মে নাই। পবিত্র ইসলাম ধর্মে তো নাই-ই। মৌলবাদীরা মনে করছে যে তারা ইসলামকে রক্ষা করছে কিন্তু তারা বুঝতে পারছেনা যে তারা বাস্তবে ইসলামকে সারা পথিবীর কাছে কতটা ঘৃনার বস্তু করে তুলছে। অসাম্প্রদায়িকতা মানে সকল ধর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। অসাম্প্রদায়িকতা মানে সংখ্যাগুরু হয়ে সংখ্যালঘুকে আক্রমন বা কটাক্ষ নয়। আবার অসাম্প্রদায়িকতা মানে সংখ্যালঘু হয়ে সংখ্যাগুরুকে আক্রমন বা কটাক্ষ নয়। ২০১১ সাল থেকে ব্লগের ব্যাপক প্রসারের সাথে সাথে অনেকেই ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে নিজেদের মত ও মুক্তচিন্তা প্রকাশের প্রসার হয়। এখন কি আমরা মূর্খ হয়ে গিয়ে টিপসই দিয়ে কাজ চালিয়ে যাব? ব্লগারদের কলম যে কতটা ধারালো, কঠিন নির্মম আঘাত করায় পারঙ্গম। এই হত্যাই তার প্রমাণ। নরাধম নরপিশাচরা লেখার জবাব লেখা দিয়ে দিতে অক্ষম। এখনও যদি ঘুম না ভাঙ্গে অনেক দেরি হয়ে যাবে।তাই সরকারের উচিত আড়মোরা ভেঙ্গে জেগে উঠে ইবলিশ নিধনে সর্বশক্তি নিয়োগ করা। এই দেশে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নতি করা ছাড়া উপায় নাই, ব্রেনওয়াশ করে জঙ্গিতে রুপ দেয়া খুবই সহজ এইখানে। হাটহাজারীর তেতুল হুজুরের মত অনেক মানুষ আছে এই দেশে, যারা কিনা শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার করতে গেলেই আন্দোলনের হুমকি দেয়। কারন একটাই, মানুষ যতই সচেতন হবে, ইসলামের আসল রুপ জানবে, ততোই এই সব ভন্ডদের দিন শেষ হয়ে যাবে। না, তোমরা মানুষ নয়-/ তোমরাই হলে জঘন্য জানোয়ার হিংস্র হায়েনা,/ তোমাদের মাঝে তাই, মানবতা নাই এক বিন্দু ! আমার বিশ্বাস- জঙ্গিদের পতন একদিন হবেই। আর, সেটা ঘটবে এই মুক্তমনাদের লেখনীর মাধ্যমেই। আল্লাহ ১৮ হাজার সৃষ্টির মধ্যে নাকি আমাদের আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছে। তবে আল্লাহ যেই হিসেবে আমাদের শ্রেষ্ঠ বলেছেন আমরা বরং তার উল্টোটা বুঝেছি। সৃষ্টি জগতে অন্য কোন প্রানী ব্যক্তিগত খোভে তার স্বজাতিকে খুন করতে পারে না যেটা মানুষ পারে। খুব কষ্ট হয় যখন শুনি শুধুই লেখার কারনে তাদের খুন হতে হয়! হুমায়ুন আজাদ স্যার, রাজীব হায়দার থেকে এখন অভিজিৎ রায় পর্যন্ত! বাচার মত বাচতে খুব ইচ্ছে করে। তবুও বেচে থাকা যেন গন্ডারের চামরা নিয়ে অভিভাবক হীন রাস্তার কুকুরের মত! দেশটাকে পঙ্গু করে লাভ টা কি ভাই? যতই পঙ্গু করতে চান না কেন দেশটার পা আবার গজাবে। সবার প্রতি অনুরোধ আপনারা রাস্তায় অমানুষ হবেনা, অমানুষের মত আচরন করবেন না। মা যদি হয় দেশ। আর দেশে যারা খুন, বোমাবাজি করছেন- তারা আসলে নিজের মা কে হত্যা করেছে। সুস্থ মানসিকতার পরিচয় দিন। জয় হোক মানুষের, দীর্ঘজীবী হোক মনুষ্যত্ব।
false
rg
এবার কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার ছিনতাই করলো প্রথম আলো !!! যতদূর মনে পড়ে, বাংলাদেশে রূপসী বাংলার কবি 'জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার' নামে একটি পুরস্কার ২০০৭ সাল থেকে চালু আছে। আর এই পুরস্কার প্রদানের দ্বিতীয় অনুষ্ঠানে ২০০৮ সালে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরে আমি নিজে উপস্থিত ছিলাম। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কারটি যৌথভাবে তিনটি সংগঠন প্রদান করে। সংগঠন তিনটি হল 'ধানসিড়ি সাহিত্য সৈকত', 'ছোটকাগজ দূর্বা' ও 'আড্ডা ধানসিড়ি'। আর প্রতি বছর দুইজন সাহিত্যিককে (গদ্য ও পদ্য) এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। এখন পর্যন্ত কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার মোট চারবার প্রদান করা হয়েছে। ২০০৭ সালে প্রথমবার এই পুরস্কার পেয়েছিলেন কাব্যসাহিত্যে কবি আসাদ মান্নান এবং গদ্যসাহিত্যে কথাসাহিত্যিক সালমা বাণী। ২০০৮ সালে এই পুরস্কার পেয়েছিলেন কাব্যসাহিত্যে কবি কামাল চৌধুরী ও গদ্যসাহিত্যে কথাসাহিত্যিক সুশান্ত মজুমদার। তারপর নানান জটিলতায় এই পুরস্কার প্রদান কয়েক বছর বন্ধ ছিল। ২০১৩ সালে এই পুরস্কার পেয়েছিলেন কাব্যসাহিত্যে কবি খোন্দকার আশরাফ হোসেন ও গদ্যসাহিত্যে কথাসাহিত্যিক শান্তনু কায়সার। আর গত বছর মানে ২০১৪ সালে এই পুরস্কার পেয়েছেন কাব্যসাহিত্যে কবি খালেদ হোসাইন ও গদ্যসাহিত্যে কথাসাহিত্যিক ইমতিয়ার শামীম। ২০১৪ সাল থেকে তিনটি সংগঠনের সাথে আরেকটি সংগঠন যুক্ত হয়, যার নাম রাইট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। প্রতি বছর পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি ও কথাসাহিত্যিককে পুরস্কার বাবদ মানপত্র, ক্রেস্ট আর নগদ টাকা প্রদান করা হয়। কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার বরিশাল থেকে পরিচালিত কয়েকটি সংগঠন প্রথম প্রবর্তন করেছিল। আর যে চারবার এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে সেখানে দেশের প্রতিথযশা কবি ও কথাসাহিত্যিকগণ প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি ও কথাসাহিত্যিককে পুরস্কার প্রদান করেছেন। প্রতিবছর জীবনানন্দ দাশের জন্মমাস ফেব্রুয়ারিতে পুরষ্কারপ্রাপ্ত সাহিত্যিকদের নাম ঘোষণা করে থাকে আয়োজকরা। আর পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় জীবনানন্দ দাশের মহাপ্রয়ানের মাস অক্টোবর মাসে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ব্লগে দেখলাম দেশের একটি প্রথম শ্রেণীর দৈনিক প্রথম আলো নতুন করে আরেকটি কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার প্রবর্তন করেছে। আর এ বছর সেই পুরস্কার পেয়েছেন তরুণ কবি সাইয়েদ জামিল। প্রথম আলোর বক্তব্য হল, একজন বিদেশি গবেষক যার নাম ক্লিনটন বি সিলি, যিনি কবি জীবনানন্দ দাশের উপর গবেষণা করেছেন। তিনি এই পুরস্কারের জন্য বাংলাদেশে একটি প্লাটফরম খুঁজেছিলেন। আর তার নাকি প্লাটফরম হিসেবে পছন্দ প্রথম আলো। সত্য মিথ্যা জানি না। প্রথম আলো ও ক্লিনটন বি সিলি প্রবর্তিত কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কারের নতুনত্ব হল, আগের পুরস্কারটি দেওয়া হচ্ছে প্রকাশিত রচনার উপর। আর প্রথম আলো দিচ্ছে প্রকাশিতব্য পাণ্ডুলিপির উপর। যিনি পুরস্কার পাবেন তার পাণ্ডুলিপি বই আকারে প্রকাশ করবে প্রথম আলোর সিস্টার কনসার্ন প্রকাশনা প্রথমা। স্পষ্টত এখানে প্রথম আলো বাংলাদেশে প্রবর্তিত একটি পুরস্কারকে দিনদুপুরে ছিনতাই করেছে। প্রথম আলো'র ঘটে বুদ্ধি আছে বটে!!! তাই তারা পুরস্কারটি সরাসরি না দিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট এসাইনমেন্ট অনুযায়ী দিচ্ছে। মানে প্রকাশিত গ্রন্থের উপর না দিয়ে নিজেদের পছন্দসই ব্যক্তিকে বলছে তুমি পাণ্ডুলিপি জমা দাও, তোমাকেই পুরস্কার দেওয়া হবে। যা দিয়ে কৌশলে প্রথম আলো মিস্টার ক্লিনটন বি সিলি সাহেব-এর টাকাটা হালাল করার একটা উপায় বের করেছে। প্রথম আলো বাংলাদেশে এখন একটি বিশাল মিডিয়া ম্যাগনেট। গায়ের জোরে প্রথম আলো অনেক কিছুই করার ক্ষমতা রাখে বা সেই ক্ষমতা এতোদিন প্রদর্শন করে আসছে। কিন্তু সাহিত্য নিয়ে প্রথম আলো যে ছিনতাই ব্যবসায় নেমেছে, এটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে সাহিত্যের। আরো সুস্পষ্ট করে বললে বলতে হয়, বাংলা সাহিত্যের। সবচেয়ে মজার বিষয় হল, আগের আয়োজকরা যে কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কারগুলো দিয়েছেন, সেই পুরস্কার নিয়ে প্রথম আলো কিন্তু সংবাদ ও প্রকাশ করেছিল। তাহলে ধরেই নেওয়া যায়, বাংলাদেশে যে কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার নামে একটি সাহিত্য পুরস্কার রয়েছে, সেই বিষয়টি প্রথম আলো আগে থেকেই অবগত। মতিউর রহমান, সাজ্জাত শরিফ, আনিসুল হক গংরা সেই পুরস্কারের খবরটি আগে থেকেই জানতেন। বেশ ভালো করেই জানতেন। নইলে সেই পুরস্কারের ঘটনাগুলো তাদের পত্রিকায় সংবাদ হয়ে ছাপা হয়েছিল কিভাবে? প্রথম আলো কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কারটি ছিনতাই করতে একটি কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। সেই কৌশলটি দিনের বেলায় কারো ঘরে শিদ কাঁটার মত। প্রথম আলো যেটি দিচ্ছে সেটি প্রকাশিত বইয়ের উপর নয়, তারা দিচ্ছে প্রকাশিতব্য পাণ্ডুলিপির উপর। বাহ বাহ। ঘটে বুদ্ধি আছে বটে। আমরা যারা টুকটাক সাহিত্য চর্চা করি, আমরা এখন কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার হিসেবে কোনটি কাউন্ট করব? যদি আগামী বছর বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এডমিশ টেস্টে প্রশ্ন আসে, ২০১৫ সালে কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার কে পেয়েছেন? তখন ছাত্রছাত্রীরা কিন্তু আমাদের মত বিভ্রান্ত হবেন। কারণ, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই আসল আয়োজকরা কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কারটি যখন ঘোষণা করবেন স্বয়ং কবি জীবনানন্দ দাশের জন্মমাসে। তখন আপনি পাঠক বোদ্ধা এই প্রশ্নের কি জবাব দিবেন? প্রথম আলো বাংলাদেশে ভারতের আনন্দবাজার স্টাইলে যা কিছু করছে সবই কারো কাছ থেকে চুরি করা মালের নতুন করে প্রচার। অনেকটা পুরানো বাসি নষ্ট পচা মদ নতুন বোতলে ঢেলে বিক্রি করার মত। কারণ তাদের নিজেদের রয়েছে একটি শক্তিশালী দৈনিক পত্রিকা। সারা দেশে যার কয়েক লক্ষ পাঠক। প্রচারণায় প্রথম আলোর সাথে পাল্লা দেওয়া যে কোনো ছোটখাটো সংগঠন বা ব্যক্তির পক্ষে সত্যি সত্যিই কঠিন। প্রথম আলো সেই শক্তি বা বল প্রয়োগ করে সাহিত্য নিয়ে যে জুয়াচুরি শুরু করেছে, এটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করবে বর্তমানে দেশের সাহিত্যচর্চায় থাকা তরুণ প্রজন্মের কবি সাহিত্যিকদের। এখন কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার প্রর্বতনকারী আসল আয়োজকদের একটা সহজ পথ খোলা আছে, সরাসরি আইনের আশ্রয় নেওয়া। বরিশালের সংগঠন তিনটি (এখন চারটি) যদি কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার প্রবর্তন নিয়ে আদালতের স্মরণাপন্ন হয়, তাহলে বিষয়টি হয়তো আদালত রায় না দেওয়া পর্যন্ত হ্যাং হয়ে যাবে। কিন্তু বিষয় হল, প্রথম আলোর মত একটি বুর্জোয়া শক্তিশালী সংগঠনের বিরুদ্ধে কয় টাকার জোর নিয়ে মামলায় লড়াই করতে চাইবে পুচকা ছোটকাগজের ওই সংগঠনগুলো? সুস্পষ্টভাবেই তাদের তো সেই শক্তি নেই। তাছাড়া প্রথম আলোর রয়েছে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেবার মত ইংরেজি ব্রাদারবর্গ দ্য ডেইলি স্টার। যার খবর পড়ে মিস্টার ক্লিনটন বি সিলি সাহেব জানবেন যে, প্রথম আলো তার টাকার যথার্থ শ্রাদ্ধ করছে। তাদের রয়েছে এবিসি রেডিও। প্রয়োজনে তারা অন্য সংবাদ প্রচার বন্ধ করে এই পুরস্কারের ব্যাপারটি সারা বছর প্রচার করে শ্রোতাদের কান ঝালাপালা করে তুলবে। শুনবি না, তোর বাপ শুনবে। শুনবি না তোর মা শুনবে। শুনবি না তোর চৌদ্দ গোষ্ঠি শুনবে। তোর চৌদ্দ গোষ্ঠি শুনবে, পড়বে, জানবে, এবং শেষ পর্যন্ত মানতে বাধ্য হবে। এই হল প্রথম আলোর কৌশল। কিন্তু প্রথম আলোর উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাতে পারতাম। প্রবর্তিত পুরস্কারের নামটি হুবহু আগে থেকে প্রবর্তিত একটি পুরস্কারকে ছিনতাই না করে যদি এটার জন্য নতুন কোনো চমক থাকতো, যথাযথ নিয়মাবলি অনুসরণ করে থাকতো। শিষ্টাচার পালন করে থাকতো। ভদ্রতা রক্ষা করে থাকতো। শুধু প্রকাশিতকে প্রকাশিতব্য করায় প্রথম আলো যে কৌশলটি নিয়েছে, এটি সেই পুরাতন জঘন্য কৌশল। প্রথম আলো যাকে খুশি তাদের পছন্দ মত পুরস্কার দিক। আপত্তিটা মোটেও সেখানে নয়। আপত্তিটা হল প্রথম আলো একটি প্রবর্তিত পুরস্কারকে দিনদুপুরে ছিনতাই করেছে। জেনে শুনে বুঝেই ছিনতাই করেছে। তার মানে তিনগুন বেশি অপরাধ করেছে। তিনগুণ বেশি পাপ করেছে। যা একটি জঘন্য অন্যায়। এই অন্যায়কে প্রকৃত লেখক সমাজ মানতে পারে না। আমিও মানতে পারলাম না। যারা প্রথম আলোর চামচামি করবে, যাদের প্রথম আলো প্রবর্তিত আরো দুটি পুরস্কার (প্রথম আলো বর্ষসেরা পুরস্কার, মননশীল ও সৃজনশীল) পাবার এখনো লোভ রয়েছে, কিংম্বা যারা প্রথম আলোর অন্ধ সমর্থক, তাদের কথা আলাদা। কিন্তু গোটা দেশের তরুণ কবি সাহিত্যিক প্রথম আলোর এই শয়তানিতে যে ঝুঁকির মধ্যে পড়লো, তার বিচার কে করবে? জাতি হিসেবে আমরা আসলে কোথায় যাচ্ছি? আমাদের রাজনৈতিক শয়তানি দেখে আমরা বিগত ৪৩ বছর এক কঠিন সময় পার করছি। এখন নিরীহ সাহিত্যের ক্ষেত্রেও যদি এমন শয়তানি নিয়ে প্রথম আলোর মত একটি অশ্বশক্তি উঠে পড়ে লাগে, তখন দেশের মত্যিকারের সাহিত্যচর্চা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে??? তরুণ প্রজন্ম কি একবারও ভাবছে বিষয়টা??? আসলে প্রথম আলো প্রতিটি বিষয়কে বিতর্কিত করে সেখান থেকে মুনাফা লোটার কৌশলেই সব সময় বিশ্বাস করে। এর আগে তারা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে প্রথমে তাদের দৈনিকে মিথ্যাচার করেছে। কবি শামসুর রাহমান ও বিচারপতি হাবিবুর রহমানকে দিয়ে কৌশলে লিখিয়েছে যে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে বক্তৃতা শেষ করেছেন 'জিও পাকিস্তান' বা 'জয় পাকিস্তান' বলে। যে বিষয়ে কবি শামসুর রাহমান পরে বিবৃতি দিয়ে জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছিলেন। তারপর প্রথম আলোর প্রকাশনা প্রথমা মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক একে খন্দকারকে দিয়ে তাঁর বই '১৯৭১: ভেতরে বাহিরে'-তে আবার 'জয় পাকিস্তান' লিখিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে, সেই বই বিক্রি থেকে মুনাফা লুটেছেন। যে কোনো বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে সেখান থেকে মুনাফা ঘরে তোলাই প্রথম আলোর আসল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। এমন কি একে খন্দকার সাহেবের সেই বইটি গুদামজাত করে তিনগুণ দামেও বিক্রি করেছে প্রথম আলো। পরে জনমনে আস্থা অর্জন করতে সেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে আবার লোকদেখানো চাকরি থেকে বরখাস্ত করে আবার নিজেদের স্বচ্ছ প্রমাণ করার খেলা খেলেছেন। সেদিন একজন লেখক (নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক) আমাকে বললেন, 'বিজয় সরণি মোড় থেকে রাস্তার হকার থেকে একে খন্দকারের বইটি মাত্র দেড়শো টাকায় কিনলাম'। এখনো রাস্তার হকারদের কাছে বইটি পাওয়া যাচ্ছে আসল দামের অন্তত তিনভাগের এক ভাগ দামে। তাহলে বুঝুন অবস্থা। এই হল প্রথম আলো। বদলে যাও বদলে দাও। কি বদলে দিচ্ছে প্রথম আলো? মানুষের সত্যিকারের বিবেক? মানুষের শিষ্টাচার? মানুষের নৈতিকতা? মানুষের আস্থা? বদলে দিয়ে প্রথম আলো সেখানে কি ঢুকিয়ে দিচ্ছে? মিথ্যাচার, মিথ্যাচার এবং মিথ্যাচার!!! বাটপারিতে বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বড় সংগঠনের নাম প্রথম আলো। বাটপারিতে একক চ্যাম্পিয়ন এখন প্রথম আলো। মাঝে তারা হে ফ্যাস্টিভালের নামে চালু করেছে বৃটিশ কলোনিয়াল চামচামি। দুইশো বছর বৃটিশদের অধীনে থেকে চামচামি করে পোশায়নি। নতুন করে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার গং সেই বৃটিশদের চামচামি করছে। এখন হে ফ্যাস্টিভাল তারা স্বয়ং বাংলা একাডেমিতে আয়োজন করছে। যেখানে বাংলা সাহিত্য ইংরেজিতে অনুবাদ করে প্রচার করলে বাংলা সাহিত্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পরায় অবদান রাখা যায়। সেখানে প্রথম আলো গং বরং ইংরেজি সাহিত্যের প্রচারে নেমেছে বাংলাদেশে। মানে প্রথম আলো গং শুরু থেকেই বাংলা সাহিত্যের পেছনে উঠেপড়ে লেগেছে। আর এবার ছিনতাই করল একটি প্রবর্তিত পুরস্কারের নাম। এখন শুধু সংবাদের বাটপারিতে তাদের মুনাফায় পোশাচ্ছে না। ইতিহাস বিকৃতি করে মুনাফা লুটছে। পোশাচ্ছে না। এখন আবার প্রবর্তিত একটি পুরস্কারের নাম ছিনতাই করে প্রথম আলো তাদের ছিনতাই করার মনোবৃত্তিকে আবারো সগৌরবে জানান দিচ্ছে। প্রথম আলো প্রবর্তিত কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার কে পেল, তার কবিতা কেমন, সেই কবিতা কতো সেক্সি, তা মোটেও আমার এই লেখার আলোচ্য বিষয় নয়। আমার লেখার সারকথা হল, প্রথম আলো একটি প্রবর্তিত পুরস্কারের নাম ছিনতাই করেছে। একজন কথাসাহিত্যিক হিসেবে প্রথম আলোর এমন গর্হিত কাজকে আমি চরম ধিক্কার জানাই। চরম নিন্দা জানাই। কাজটি মোটেও কোনো শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। অতএব, সাধু সাবধান। প্রথম আলো যে কাজটি করেছে, এটি যে ছিনতাই, এই কথাটি অন্তত দেশবাসি জানুক। এই সত্যটি অন্তত দেশবাসি জানুক। বিশ্বের সকল বাঙালি জানুক। বিশ্ববাসি জানুক। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কবি সাহিত্যিকরা জানুক। সভ্যতা যতদিন থাকবে ততদিন মানুষ অন্তত সত্যকে সত্য হিসেবে গ্রহন করতে শিখুক। প্রথম আলোর সঙ্গে যাবেন, দয়া করে জেনে শুনে বুঝে যাবেন। যতদিন বাঁচবো ছিনতাইকে ছিনতাই বলবো। চুরিকে চুরি বলবো। ইতিহাস বিকৃতিকে ইতিহাস বিকৃতি বলবো। চামচামিকে চামচামি বলবো। তবু প্রথম আলোর মত বিকৃত রুচিকে সাধুবাদ জানাবো না। বাংলায় রুচি-পছন্দ বলে একটা কথা আছে। প্রথম আলোর রুচি আছে বটে, তবে সেই রুচির মধ্যে দুবৃত্তায়নে আগাগোড়া মোড়া। এই লেখা শেষ করার আগে আরেকবার বলি, প্রথম আলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাটপার। .................................... ২৮ জানুয়ারি ২০১৫ ঢাকা সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৩:১৬
false
ij
গল্প_ শৈলীর কালো মেঘ এখন অনেক রাত। ড্রইংরুমের বড় জানালার ওপাশে নীচের নিথর শহরের ওপরে মরাটে জোছনা ছড়িয়ে আছে। কে জানে লোডশেডিংয়ের রাতের ভৌতিক আকাশে বিশাল কোনও বাদূড় উড়ছিল কি না । এসব দৃশ্য দেখার জন্য কৌতূহলী কোনও মানুষ আর নেই। এত রাতেও সবার চোখ টিভির দিকে। ড্রইংরুমের টিভিটা অন করা ছিল। অবশ্য শব্দ অনেক কমিয়ে । আলো নিভিয়ে সোফার ওপর হেলান দিয়ে বসেছিল আহসান । পা দুটো সামনের টেবিলের ওপর তোলা। খালি গা। কেবল পাজামা পরে আছে; ডান হাতে রিমোট, বাঁ হাতে জলন্ত সিগারেট। পাশেই সোফার ওপর অ্যাশট্রে। এলোমেলো চ্যানেল চেঞ্জ করছিল আহসান। মনিটরের নানা রকম আলো ছিটকে পড়ছিল অন্ধকার ড্রইংরুমে । এই ফ্ল্যাটে নিজস্ব জেনারেটর আছে। নইলে এতক্ষণে কয়েকবার কারেন্ট যেত। আহসান ঠিক টিভি দেখছিল না। ঘুম আসছিল না বলেই বেডরুম থেকে উঠে এসে ড্রইংরুমে বসে আছে। আজকাল প্রায়ই এরকম হচ্ছে। ডাক্তার অবশ্য সিডেটিভ দিয়েছেন। ওসব খেলে কাল সকালে মাথা ভারী হয়ে থাকবে। অফিসের কাজে গন্ডগোল হয়ে যাবে। ব্যাংকের কাজ বড় জটিল। পাশে ঘরে শৈলী আর মাজেদা ঘুমিয়ে আছে। আজ ফারিয়ার জন্মদিন ছিল। ফারিয়ারা পাশের ফ্ল্যাটে থাকে। ওরা দাওয়াত দিয়েছিল। আহসানকেও ইনভাইট করেছিল; অফিস থেকে আজ আটটার মধ্যেই ফিরেছে। তার আগে দুপুরের দিকে ফারিয়ার জন্য গিফট কিনতে গেল ইস্টার্ন প্লাজায়। ক্লাস এইটে উঠেছে ফারিয়া। হলুদ রঙের স্যামসুঙ করবি কিনল। টাচস্ক্রিন। ফারিয়াদের ফ্ল্যাট থেকে খাওয়াদাওয়া সেরে ফিরতে ফিরতে এগারোটা বাজল। শৈলী ও মাজেদা ঘুমিয়ে পড়লেও আহসান বরাবরের মতোই নির্ঘূম। হঠাৎই একটা চ্যানেলে চোখ আটকে গেল ; ফ্রেঞ্চ চ্যানেল বলে মনে হল। সংবাদ চলছে। সংবাদপাঠিকার সঙ্গে জেসমিন-এর মুখের অদ্ভুত মিল রয়েছে। আহসান দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে। জেসমিন ওর দীর্ঘনিঃশ্বাসের কারণ হলেও নাদিয়ার সৌভাগ্যের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ... কালও নাদিয়ার সঙ্গে গুলশানের বাসিল লিপে ডিনার করেছে আহসান। রাত প্রায় এগারোটার পর্যন্ত ওরা একসঙ্গে ছিল। নাদিয়া জামান। শ্যামলা মতন মিস্টি চেহারার কাঁধ অবধি ছাঁটা কোঁকড়া চুলের স্মার্ট এক মেয়ে। আর্কিটেক্ট । হায়াত অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস এ চাকরি করে; ওরাই আহসানদের নতুন ব্যাংকের ডিজাইন করল। কনট্রাক্ট সাইন আপের দিন আহসানরা পার্টি দিয়েছিল লা ভিঞ্চিতে । সেই পার্টিতেই নাদিয়ার সঙ্গে পরিচয়। এই সব কর্পোরেট জগতের সবাই সবার হাঁড়ির খবর। আহসান যে একা, সেটা নিশ্চয়ই নাদিয়া জানত। নাদিয়াও একা। সিঙ্গাপুরে পড়ত নাদিয়া - তখনই নাকি ঝোঁকের বশে এক হ্যান্ডসাম সিরিয় যুবককে বিয়ে করে ফেলেছিল। নাদিয়ার সে বিয়ে টেকেনি। নাদিয়াও বিয়ের কথা ভাবছে। সিরিয়াসলিই ভাবছে। শৈলীর কথা ভেবে থমকে যায় আহসান । এ বছরই অক্টোবর মাসের ৩ তারিখে চার বছরে পা দেবে শৈলী । মায়ের মতোই শ্যামলা আর সুন্দর হয়েছে দেখতে। টকটক করে কথা বলে। বলে, বাবা, বাবা মাজেদা না ভীষণ দুষ্ট। ওকে বকে দাও তো। আহসান হাসে। মাজেদাও হাসে। মায়ের অবর্তমানে এই কিশোরী মেয়েটিই শৈলীর দেখাশোনা করছে। ভারি লক্ষ্মী মেয়ে মাজেদা। আহসান কে ‘মামা,’ ‘মামা’ বলে ডাকে। রান্নাবান্নার হাতও ভালো। ময়মনসিংহ বাড়ি। ওর বাবা মাসে মাসে এসে বেতন নিয়ে যায়। এবার এসে মাজেদার বিয়ের কথা বলল। আহসান হেসে উড়িয়ে দেয়। মাজেদাকে ছাড়া শৈলী থাকতে পারবে না। মাস ছয়েক হল জেসমিন এ সংসার ছেড়ে চলে গেছে । শৈলী এখন মা-শূন্য জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। জেসমিন একটা প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করত। সকাল সাতটার মধ্যে বেরিয়ে যেত। ফিরতে ফিরতে আটটা- ন’টা বাজত। শৈলী ওর মাকে শুক্র আর শনিবার ছাড়া কাছে পেত না। বাবাকেও। মাজেদাই ওর জগৎ। যে কারণে জেসমিন এর অনুপস্থিতি বড় হয়ে ওঠেনি। তা ছাড়া পাশের বাড়ির নাজমা ভাবীও মায়ের অভাব পূরণ করছেন। নাজমা ভাবীর স্বামী জহিরুল হক চট্টগ্রামের একটা বায়িং হাউজে চাকরি করেন। একটিই মেয়ে-ফারিয়া। মেয়ে ঢাকার ভালো স্কুলে পড়বে- এই কারণেই নাজমা ভাবী মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন। মাস ছয়েক আগে একদিন অফিস থেকে ফিরে জেসমিন কে না দেখে আহসান অবাক হয়ে গিয়েছিল। সাধারনত জেসমিন আগে ফেরে। ওর ব্যাংকটা কাছে। আহসান এর ব্যাংক দূরে। তাছাড়া রাস্তায় দীর্ঘ জ্যাম। দশটার মধ্যেও ফিরে এল না। আহসান এখানে ওখানে ফোন করল। জেসমিনের মোবাইল অফ ছিল। শৈলী কিছুক্ষন ‘মা’, ‘মা’ করল। মাজেদা ওকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিল। জেসমিন ম্যাসেজ পাঠাল দশটার কিছু পরে। ... আর ফিরবে না ...সবকিছুর ওপর ফেডআপ ... একজনকে পছন্দ করে ... টেলিফোনে পরিচয় ... শৈলীকে যেন দেখে। ইত্যাদি। আহসানের শরীর কাঁপছিল। জেসমিনের ফিরতে দেরি হচ্ছিল দেখে নাজমা ভাবী এসে বসেছিলেন। মুখচোখে গভীর উৎকন্ঠা। নাজমা ভাবী প্রশ্নটা করেই ফেলল আহসান,আপনি কিছু জানতেন না ভাবী? আশ্চর্য! আমি কী ভাবে জানব আপনার ওয়াইফ কার সঙ্গে কি করে না করে! ক্ষিপ্ত উত্তর এল। সরি। আশ্চর্য! আহসান দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ব্যাংকের লোন নিয়ে নতুন এই ফ্ল্যাটটা কিনতে সমস্যা হয়নি । এক বছর হল উঠেছে। ফ্ল্যাটে ওঠার পর শৈলীর ৩ বছরের জন্মদিন করল। এর আগে ভাড়া থাকত মগবাজার। ফ্ল্যাটটা জেসমিনের নামেই কিনতে চেয়েছিল। জেসমিন রাজী হয়নি। তাহলে অনেক দিনের সম্পর্ক। আশ্চর্য! আহসান সিগারেটে টান দেয়। নাজমা ভাবী শৈলীকে বুকে টেনে নিয়েছেন। ফারিয়াও এসে সময় দেয়। কখনও বেড়াতে নিয়ে যায়। অফিসের চাপে বাজার করার সময় পায় না আহসান। এসবই নাজমা ভাবী সামলান। আহসান এখন বুঝতে পারে স্বামী দূরে থাকায় নাজমা ভাবী আহসানের আরও কাছাকাছি আসতে চায়। শরীরে টলটলে বিদ্যুৎ আর ধারালো মুখ চোখের ফরসা সুন্দরী মহিলা। আহসান খাবি খায়। জেসমিন চলে যাওয়ার পর সে শরীরের পূর্বেকার সেই আগুন আর টের পায় না। জেসমিন এর ওপর ক্রোধ টের পায়। এতে সে আরও শীতল হয়ে উঠতে থাকে। নাদিয়া এখনও টের পায়নি ... কালও নাদিয়া বাসিল লিপ-এর আবছা কোণে বসে বিয়ের কথা তুলল। একটা রাতও কি আমাদের মিস্ করা ঠিক? যেখানে পৃথিবীতে এত দুঃখ ... আর আমরা যখন দুজনেই সারভাইভ করেই গেছি। আমাদের দেখা হওয়াটাই কি সারভাইভ করা না? আহসান মাথা ঝাঁকায়। এও নাদিয়ার আরেকটি ক্ষণিক ঝোঁকের বশ নয় তো? নাদিয়ার কাঁধ পর্যন্ত ছাঁটা ঈষৎ লাল কোঁকড়া চুলগুলি কোনও স্থির বিশ্বাসের প্রতীক হতে পারে না। কিংবা ধরা যাক দু-বছর পর নাদিয়া দেশের বাইরে চলে গেল। ওর বিদেশি ডিগ্রি; বৃদ্ধ অন্ধ বাবার টানেই ঢাকা থাকে। ভদ্রলোক মি: সাদিক জামান একটি ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক ছিলেন। বাবার জন্যই হয়ত ইদানীং টিভির টকশোতে অংশ নিচ্ছে নাদিয়া। নাদিয়া আশ্বাস দিয়ে বলল, তুমি তোমার মেয়ের জন্য ভেব না। শৈলীকে আমি মায়ের আদর দিয়েই রাখব। এই কথাটা আহসান বিশ্বাস করে কি? কেননা, জেসমিন চলে যাওয়ার পর তার বিশ্বাসের জগৎটাই খান খান হয়ে ভেঙে পড়েছে। ... হয়তো বিয়ের পর রাগারাগি করে মাজেদা কে তাড়িয়ে দিল নাদিয়া... যা হবে শৈলীর জন্য বিরাট মানসিক আঘাত। তারপর ... তারপর ... ধরা যাক নাজমা ভাবী সম্বন্ধে এক বিশ্রী উক্তি করে বসল। নাজমা ভাবীর কাছাকাছি হলে ভিতরে টলটলে এক অনুভূতি হয় আহসানের। আহসানই যে একেবারে নিভে গেছে সেও তো সত্য নয়। কাল গাড়িতে পেট্রল মেশানো অন্ধকারে নাদিয়াকে কিস করল। তখন শরীরে কি মৃদু উত্তাপ ছড়ায় নি? আর নাদিয়া খুবই অ্যাগ্রেসিভ ... কাল নাদিয়াকে কিস করার সময় আবারও টের পেয়েছিল আহসান। কথাটা মনে হতেই হঠাৎই একটি মেয়ের শরীর দেখার জন্য অস্থির বোধ করে আহসান এবং রিমোট এর বাটন চেপে ধরে । টিভিতে ইনডিয়ান বেবি মিল্কের অ্যাড; মায়ের কোলে বাদামী চুলে কোমল শিশু। চিরকালীন ছবি। কি আশ্চর্য! জেসমিন কীভাবে মেয়েকে ছেড়ে যেতে পারল? মা হয়ে অবলীলায় আপন কন্যাকে ত্যাগ করল? করতে পারল? আহসানের ছেলেবেলা কেটেছে জামালপুর শহরে । ছোটবেলায় রেল দূর্ঘটনায় বাবা মারা গিয়েছিল। বিধবা মা অনেক কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে সন্তানদের মানুষ করেছেন। আর জেসমিন কীভাবে মেয়েকে ছেড়ে যেতে পারল? শৈলীর কথা কি মনে পড়ে না ওর? মেয়ের নাম তো ওই রেখেছিল। শৈলী হওয়ার আগে বলেছিল মেয়ে হবে দেখ। আমি স্বপ্নে দেখেছি ...স্বপ্নের কথা কি কখনও মিথ্যা হয়? না, স্বপ্নের কথা কখনও মিথ্যা হয় ... এসব কি মিথ্যা? কাল গাড়িতে নাদিয়াকে কিস করল। এও কি মিথ্যা? মায়া? স্বপ্ন? আজ রাতে ফারিয়ার জন্মদিনে তেমন কেউ আসেনি। ফারিয়া টাচস্ক্রিন স্যামসুঙ করবি গিফট পেয়ে খুব খুশি। পাশের ঘরে বসে ওটা দেখছিল। ওর সঙ্গে শৈলী আর মাজেদাও ছিল। নাজমা ভাবী বললেন, ভাই, আপনি চিকেন বিরিয়ানি পছন্দ করেন। আপনার জন্য চিকেন বিরিয়ানি করেছি। আহসান তার ভিতরে সেই টলটলে অনুভূতি টের পায়-যা ড্রইংরুমের বিরিয়ানির গন্ধের সঙ্গে মিশে যাচ্ছিল। খেতে বসে নাজমা ভাবী বিস্ফোরন ঘটালেন। বললেন, ভাই, আমরা এ মাসের শেষে চট্টগ্রাম চলে যাচ্ছি। আহসান তার বুকের ভিতরে পাড় ভাঙার শব্দ পায়। দূর থেকে ফারিয়ার বাবা কি কিছু টের পেল? তেমন কিছু তো হয়নি। কেবল না ভিতরে টলটলে এক অনুভূতি হয় । এই বার্তা কি চট্টগ্রামে পৌঁছে গেছে? আহসান অবাক হয়। নাজমা ভাবী বললেন, ফারিয়ার রেজাল্ট ভালো হচ্ছে না। ওর বাবা ওর ওপর বিরক্ত। মেয়েকে ওখানকার খাস্তগীরে ভর্তি করার কথা ভাবছে। বলে মুখ টিপে হেসে বলল, আসলে ফারিয়ার বাবা আমাকে ছেড়ে থাকতে পারছে না। আহসান কথা ঘুরিয়ে বলে, আপনাদের খুব মিস করব ভাবী। কন্ঠস্বরে বিষন্নতা। আরে, আপনি অত ভাবছেন কেন? ঢাকায় এলে তো আপনাদের এখানেই তো উঠব। আজ সন্ধ্যার পর থেকে ঢাকার আকাশে মেঘ জমেছিল। আহসান জানালার ওপাশে সেই মেঘের দিকে চেয়েছিল। তারপর কখন ওর মুখ ফস্কে বেরিয়ে পড়ে, কবে আসেন না আসেন। ঠিকই আসব, দেখবেন। আপনারাও যাবেন। আলমাস সিনেমাহলের কাছে বাসা। যাব। আরে আপনি খাচ্ছেন না কেন? রান্না ভালো হয়নি বুঝি? আরে কি বলেন-আপনার হাতের রান্না আবার খারাপ হয়? নাজমা ভাবী হাসলেন। বললেন, কয়েকদিন আগে টিভিতে একটা টকশোতে আপনার ওনাকে দেখলাম। ওহ্। আহসান জানে নাজমা ভাবী কার কথা বলছেন। নাদিয়াকে একবার নিয়ে এসেছিল।শৈলীকে দেখাতে । তখনই নাজমা ভাবীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল নাদিয়ার। নাদিয়াও মাঝে মাঝে ‘সুন্দরী মহিলার’ কথা জিজ্ঞেস করে। নাজমা ভাবী বললেন, আসলে শৈলীর জন্যই আমার বেশি খারপ লাগছে। আহসান তীব্র ঝাঁকি খায়। মুহূর্তেই তার শরীর জমে যায়। নাজমা ভাবী ঠিক কি বোঝাতে চাইলেন? আহসান দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে। শৈলী আরেকটা আশ্রয় হারাল। জীবনের এইসব বাঁক খুব হঠাৎই ঘটে যায়। কারও কিছু করার থাকে না। খুব শিগগির মাজেদার আশ্রয়ও শৈলী হারাতে যাচ্ছে। মাজেদার বাবা এসেছিল ক’দিন আগে। মাজেদার বিয়ে ঠিক বলল। এ মাসের শেষে এসে মেয়েকে নিয়ে যাবে মাজেদার বাবা। আসলে হয়তো এর পিছনে অন্য কারণ আছে। এ বাড়িতে কোনও ভদ্রমহিলা নেই কিংবা এখন গামেন্ট কারখানায় মজুরি বেশি। নাদিয়া কি তাহলে সত্যিই বউ হয়ে এ ফ্ল্যাটে আসছে? আহসান কেঁপে ওঠে। এই কি নাদিয়ার ভাগ্য? কিংবা শৈলীর নিয়তি? আহসান জানে নাদিয়া ইমপালসিভ । আরও কাজ পাবার জন্য হায়াত অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস নাদিয়াকে ব্যাংকিং সেক্টরে ইমপ্লান্ট করেছে কি? হতে পারে। এ ধরনের বেশ্যাপনা তো করপোরেট জগতে হয়ই। এই বিয়েটা একেবারেই পলিটিকাল। হয়তো নাদিয়া স্পাইং করতে এসে মেন্টালি জড়িয়ে পড়েছে। কিংবা আহসানের ফিউচার ভালো। পঁয়ত্রিশেই ফ্ল্যাট-গাড়ির মালিক হয়েছে। কিংবা সুদর্শন আহসানের সবল সুঠাম শরীর। যে শরীরের ওপর নাদিয়ার, নাজমা ভাবীর এবং অফিসের আরও ক’জন কলিগের লোভার্ত চোখ । যে শরীরের ওপর ক্লান্ত হয়ে উঠেছিল জেসমিন । ভালোবাসার ছল করে বেছে নিয়েছে নতুন শরীর। জেসমিন এখন কেমন আছে? এই ছ মাসে কি নতুন শরীরের ওপর ওর ক্লান্তি জমেনি? ওকি ফিরে আসতে চায়? জেসমিন এখন কোথায়? ঢাকায়? না ঢাকার বাইরে? না দেশের বাইরে? যাক। নাদিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হলে শৈলীর জীবন এলোমেলো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ রকম একটি বিষাদিত ভাবনা উকিঁ মারে আহসানের মনের গভীরে। তবে নাদিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হলেই যে শৈলীর জীবন এলোমেলো হয়ে যাবে-সে রকম নাও হতে পারে। তবে সম্ভাবনা আছে। এই সম্ভবনাটাই এখন তীক্ষ্ম ফলার মতো বিদ্ধ হয়ে আছে ওর বিপর্যস্ত শরীরে। কেবল অদৃশ্য রক্তপাত ঘটাচ্ছে। সত্যিই কি নাদিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হলে শৈলীর জীবন এলোমেলো হয়ে যাবে? হয়তো সে রকম নাও হতে পারে। ধরা যাক- নাদিয়া জামান প্লাস্টিকের তৈরি না। রং মাখানো না। ব্যাটারি-চালিত না। ওর অনুভূতি আছে। মায়া-মমতা আছে। নাদিয়া ওর সৎ মেয়েকে ভালোবাসতে পারবে ঠিকই। সবাই তো আর এক রকম না। এসব ভাবতে ভাবতেই এক সময় ঝিমুনি আসে । রিমোটের বাটন চেপে টিভি অফ করে দেয় ; তারপর অন্ধকারে বসে থাকে আরও কিছুক্ষণ ...তারপর উঠে দাঁড়িয়ে টলতে টলতে বেডরুমের দিকে যেতে থাকে এ শহরেরই এক শরবিদ্ধ পুরুষ ... সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১০ রাত ৯:১৭
false
rn
আসুন আফগানিস্তান দেশটি সম্পর্কে জানি আফগানিস্তান, যার সরকারী নাম আফগানিস্তান ইসলামী প্রজাতন্ত্র। দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। রাষ্ট্রটি ইরান, পাকিস্তান, চীন, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, ও তুর্কমেনিস্তানের মধ্যস্থলে একটি ভূ-বেষ্টিত মালভূমির উপর অবস্থিত। আফগানিস্তানকে অনেক সময় দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের অংশ হিসেবেও গণ্য করা হয়। আফগানিস্তান একটি রুক্ষ এলাকা - দেশটির অধিকাংশ এলাকা পর্বত ও মরুভূমি আবৃত। কাবুল দেশটির বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। ১৯৭৩ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে এবং প্রজাতন্ত্র হিসেবে আফগানিস্তানের আবির্ভাব ঘটে। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। দেশটির আয়তন ৬৫২,২২৫ বর্গ কিমি (২৫১,৮২৫ বর্গমাইল)। দেশের প্রায় ২৪ শতাংশ রাস্তা কাঁচা। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন মহাসড়কটি বৃত্তাকারে প্রধান প্রধান শহরগুলিকে সংযুক্ত করেছে। আফগানরা নববর্ষে সাধারণত সবুজ পোশাক পরতে পছন্দ করে। ওই বিশেষ দিনটিতে আয়োজন করা হয় রকমারি খাবারের। একটি বিশাল ঝান্ডা উত্তোলন করে সুঠাম বা শক্তিশালী পুরুষেরা। আফগানরা মনে করে, নওরোজ যদি ভালোভাবে উদযাপন করা যায় তবে সারা বছর ভালোই কাটবে তাদের। নববর্ষে উটের লড়াইয়ের আয়োজন করা হয় মাজার-ই-শরিফে। এ লড়াইয়ে নামানো হয় তাগড়া পুরুষ উটগুলোকে। প্রায় আধা টন করে গড় ওজন এসব উটের। রোমহর্ষক দৃশ্যের অবতারণা হয় অল্পক্ষণের মুখোমুখি লড়াইয়ে। আফগানদের রয়েছে মুখরোচক নানা খাবারের ঐতিহ্য। অনেকে বলেন, আফগানদের খাবার দেখলে জিভের পানি সামলানো কঠিন। কবিতা হলো আফগান শিল্প-সাহিত্যের প্রাণ। তাদের অনেকেই কথা বলে ছন্দে ছন্দে। যা এক হাজারের বেশি বছর ধরে চলে আসছে। বৃহস্পতিবার রাতে কবিতার আসর বসে পশ্চিমাঞ্চলীয় নগর হেরাতে। এই আসরে যোগ দেয় পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও। এমনকি শিশুরাও যোগ দেয়। আয়োজন হয় ঐতিহ্যবাহী হিরাতি গানের জলসা।আফগানিস্তানের জাতীয় খেলাকে বলা হয় ‘বুজখাসি'। খেলাটিকে বিশ্বের সবচেয়ে আদিম বা পুরনো খেলা হিসেবে দেখা হয় বাইরের দুনিয়ায়। এই খেলায় প্রতিযোগিতা একটি ছাগল জবাই দেয়। তা নিয়ে তারা ঘোড়ায় চড়ে। তারপর তা নিয়ে চলে কাড়াকাড়ির পালা। এক পর্যায়ে জবাই করা ছাগটিকে তারা ছুঁড়ে মারে চক দিয়ে আঁকা একটি বৃত্তের মধ্যে। জানা যায়, দেশটির উত্তরাঞ্চলে এ খেলা চলছে শত শত বছর ধরে। এক সময় এটি যুদ্ধবাজ (ধনী) প্রতিদ্বনদ্বীদের খেলা ছিল। এখন এ খেলার প্রচলন ছড়িয়ে পড়েছে সব শ্রেণীর মানুষের মধ্যে এ খেলায় পৃষ্ঠপোষকতা করছে স্থানীয় মোবাইল ফোন কোম্পানি ও বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো। এতে বুঝা যায়, আফগানরা মোবাইল ফোন খুবই পছন্দ করে।আফগানিস্তানে বসবাসরত সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী হল পশতু জাতি। প্রাগৈতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান খনন করে দেখা গেছে উত্তর আফগানিস্তানে প্রায় ৫০,০০০ বছর আগে মনুষ্য বসতি ছিল। খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে আরব সৈন্যরা আফগানিস্তানে নতুন ধর্ম ইসলাম নিয়ে আসে। ১৯৭০-এর দশকে দেশটির উত্তরাঞ্চলে প্রাকৃতিক গ্যাসের উল্লেখযোগ্য মজুদ আবিষ্কৃত হয়। এছাড়া পেট্রোলিয়াম ও কয়লাও এখানে পাওয়া যায়। আফগানিস্তানে জীবনের মান ছিল বিশ্বের সর্বনিম্ন মানের একটি। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ ও তার পরে গৃহযুদ্ধ দেশটির অর্থনীতির চূড়ান্ত বিপর্যয় ঘটায়। আফগানরা মূলত কৃষক ও পশুপালক। ২০শ শতকে খনি ও ভারী শিল্পের উন্নতি ঘটে, তবে স্থানীয় হস্তশিল্প গুরুত্ব হারায়নি। গম আফগানিস্তানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শস্য। এরপর রয়েছে যব, ভুট্টা, ও ধান। তুলাও ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়। আফগানিস্তান থেকে রপ্তানিকৃত দ্রব্যের মধ্যে ফল ও বাদাম গুরুত্বপূর্ণ। আফগানিস্তানের কোন সমুদ্র বন্দর নেই, তাই স্থলপথেই অন্যান্য দেশের সাথে আমদানি-রপ্তানি সম্পন্ন হয়।১৯২৮ সালে আফগানিস্তানের বাদশাহ ছিলেন আমানুল্লাহ। তিনি আফগানিস্তানকে আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তার স্ত্রী সুরাইয়া আফগানিস্তানে নারী শিক্ষা চালু করেছিলেন ও ৫০ জন মেয়েকে চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে লেখাপড়া করার জন্য তুরস্কে পাঠিয়েছিলেন। বাদশাহ আমানুল্লাহ দেশে মাদ্রাসার পাশাপাশি স্কুল চালু করেন। তিনি বাল্যবিবাহ বন্ধ করে দেন। আধুনিক রাষ্ট্রকামী বাদশাহ আমানুল্লাহ’র বিরুদ্ধে ক্ষেপে উঠে আফগানিস্তানের মোল্লারা। তারা ১৮ দফা দাবি পেশ করে। এসব দাবিতে তারা নারী শিক্ষা ও স্কুল শিক্ষা বন্ধ করার দাবি জানায়। তাদের দাবির মধ্যে একটা দাবি ছিল আমানুল্লাহকে তার স্ত্রী সুরাইয়ার সাথে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করতে হবে এবং তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে। শ্রী রামচন্দ্রের ন্যায় পাণাধিক প্রিয় সীতাকে আমানুল্লাহ বিসর্জন দেন নাই। তিনি ক্ষমতা ছেড়ে দেন তাঁর ভাই এনায়েতুল্লাহ’র কাছে। এনায়েতুল্লাহ তিন দিনও ক্ষমতায় থাকতে পারে নি। মোল্লারা তার কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়। আফগানিস্তানের অধঃপতন তখন থেকেই শুরু হয়। ১৯৮০-এর শেষের দিকে কাবুলের জনসংখ্যা বেড়ে প্রায় ২০ লক্ষ হয়ে যায়। তবে ১৯৯০-এর শুরুর দিকের গৃহযুদ্ধের সময় অনেক লোক বিধ্বস্ত কাবুল ছেড়ে পালিয়ে যায়; ফলে ১৯৯৩ সালে এর জনসংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র ৭ লক্ষ। তবে ২০০১ সালের পর এর জনসংখ্যা আবার বেড়ে ২০ লক্ষে গিয়ে পৌঁছেছে। বেশির ভাগ শহরে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, পানি শোধন ব্যবস্থা ও জনপরিবহন ব্যবস্থা নেই। আফগানিস্তানের বেশির ভাগ প্রধান নদীর উৎপত্তি পার্বত্য জলধারা থেকে। হারিরুদ নদী মধ্য আফগানিস্তানে উৎপন্ন হয়ে পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে ইরানের সাথে সীমান্ত সৃষ্টি করেছে। উত্তর আফগানিস্তানে বিপুল পরিমাণে কারাকুল ভেড়া পালন করা হয়। আফগানিস্তানের আরেকটি পরিচয় অবৈধ আফিম উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে এটি মায়ানমারকে হটিয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ পরিমাণ আফিম উৎপাদক দেশে পরিণত হয়। আরও তৈরি হত হাশিশ। আফগানিস্তানের মুদ্রার নাম আফগানি। ১০০ পুলে ১ আফগানি। আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৯৩৮ সালে স্থাপিত হয়। আফগানিস্তানে কোন স্টক মার্কেট বা অন্যান্য আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নেই। আফগানিস্তানে বহু বিচিত্র জাতির বসবাস। এদের প্রায় সবাই মুসলিম। আফগানিস্তানের মানুষ ইরান, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান, মঙ্গোলিয়া, চীন, আরব উপদ্বীপ ও আরও বহু জায়গা থেকে এসেছেন। ২০০৬ সালে জনসংখ্যা ৩ কোটি ১০ লক্ষে গিয়ে পৌঁছেছে বলে ধারণা করে হয়। ২০০৬ সালে আফগানিস্তানের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ধরা হয় ২.৬৭%। আফগানিস্তানের শিশু মৃত্যুর হার বিশ্বে সর্বোচ্চ - ১০০০-এ ১৬০ টি শিশু জন্মেই মারা যায়। এখানে গড় আয়ুষ্কাল ৪৩ বছর। আফগানিস্তানের প্রায় ৭৭ শতাংশ লোক গ্রামে বসবাস করেন। শহরবাসীর অর্ধেক থাকেন রাজধানী কাবুলে। আফগান জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হলেন মোল্লা। যেকোন পুরুষ যিনি কুরআন শরীফ মুখস্থ বলতে পারেন, তিনি মোল্লা হওয়ার যোগ্য। মোল্লারা শুক্রবারের প্রার্থনা, বিয়ে ও দাফনকাজ পরিচালনা করেন। মোল্লারা মানুষদের ইসলামের বিধিবিধান শিক্ষা দেন। তারা ইসলামী আইননুসারে সংঘাত নিরসন করেন এবং শারীরিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধান দেন। আফগানিস্তানে দুই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা বিদ্যমান। একটি হল প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত মাদ্রাসা ব্যবস্থা, যেখানে মোল্লারা কুরআন পড়া ও লেখা এবং প্রাথমিক গণিত শিক্ষা দেন। ২০০১ সালে তালেবানের পতনের পর দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা আবার নতুন করে গড়ে তোলা হচ্ছে। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় নতুন করে শুরু হয়। ২০০৬-২০০৭ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৪০ লাখ ছেলেমেয়ে দেশটির প্রায় ৯,৫০০ স্কুলে শিক্ষাগ্রহণ করে। প্রাথমিক শিক্ষা বিনামূল্য ঘোষণা করা হয়েছে। ১৫ বছরের বেশি বয়সের আফগানদের মধ্যে সাক্ষরতার হার প্রায় ৩৬ শতাংশ হিসাব করা হয়েছে। কাবুল ও কান্দাহারে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আছে। দেশের ভেতরে আরও কিছু ছোট ছোট বিমানবন্দর আছে। আরিয়ানা আফগান এয়ারলাইন্স জাতীয় বিমান সংস্থা। প্রথম বেসরকারী বিমান সংস্থা কাম এয়ার ২০০৩ সালে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চলাচল শুরু করে। ১৮৭৫ সালে আফগানিস্তানে প্রথম সংবাদপত্র ছাপা হয়, এবং ১৯০০ সালের ঠিক পরে আরও দুইটি ছোট ছোট সংবাদপত্র প্রকাশিত হত। বর্তমানে সাপ্তাহিক কাবুল সবচেয়ে বেশি কাটতির সংবাদপত্র। ১৯৭৯ সালের দিকে সোভিয়েত প্রত্নতত্ববিদ আফগানিস্তানের একটি ভূমি খনন করে ২০০০০ স্বর্ন মুদ্রা এবং সেগুলো ধারনা করা হয় ২০০০ বছর পুরানো ব্যবহৃত মুদ্রা। বিশেষজ্ঞগন মনে করেন যে সিল্ক রোডের কাছের শহর ব্যাক্টরিয়ার সংস্কৃতি আফগানিস্তান ইতিহাসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন। কেউই এই গুপ্তধনের ব্যাপারে সঠিক কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেনি তবে অনেকেই মনে করেন এই গুপ্তধন আফগানিস্তান যুদ্ধের পূর্বে কেউ লুকিয়ে রাখতে পারে। এই সব গুপ্তধনের বিষয়টি খুবই সতর্কতার সহিত গোপন রাখা হয় কেননা ৮০% ধনরত্ন তালেবানরা লুট করে নিয়ে গেছে বলে ধারনা করা হয়। ব্যাক্টরিয়া রাজ্যের গুপ্তধন থেকে ৬টি বড় ধরনের তালা মারা বাক্স পাওয়া গেছে যেখানে অসংখ্য পরিমান স্বর্ন এবং রৌপ্য পাওয়া গেছে। কাবুলে আমানি স্কুলের প্রতিষ্ঠা হয় ১৯২৪ সালে। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এক জার্মান শিক্ষক। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল: পশ্চিমি আদর্শে আফগানিস্তানের আধুনিকীকরণ। আজও এই স্কুলে জার্মান শেখানো হয়। আফগানদের সংস্কৃতির ওপর কুঠারঘাত করেছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সেনারা। ১৯৮০-এর দশক থেকে প্রায় ৩০ লক্ষ আফগান শরণার্থী পাকিস্তানে এবং প্রায় ২০ লক্ষ শরণার্থী ইরানে আশ্রয় নিয়েছেন। ২০০১ সালের শেষ দিকের হিসাব অনুযায়ী পায় ৫০ লক্ষ আফগান, শরণার্থী হিসেবে পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছেন। এই সম সংখ্যক আফগানের জন্ম হয়েছিলো গত বিশ বছরে। আছাড়াও এই যুদ্ধের কারণে প্রায় ২৪ লক্ষ শরণার্থী ইরানে আশ্রয় নিয়েছে, যার ফলে সর্বমোট শরণার্থীর সংখ্যা দাড়ায় প্রায় ৭৫ লক্ষ। একসময় নাকি প্রতিটি আফগান পরিবারে থাকত একে-৪৭। এখন তার বদলে ওদের হাতে হাতে ক্রিকেট ব্যাট। প্রায় ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় দেশটির সাধারণ মানুষ রাতে ঘুমাতে যেত পরের দিন বেঁচে থাকার প্রার্থনা করে। আফগানদের সেই ক্রিকেট-রূপকথা নিয়ে তৈরি প্রামাণ্যচিত্র আউট অব দ্য অ্যাশেজ দেখে নাকি আফগানিস্তানে তখনকার ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, ওরা এমনভাবে ক্রিকেট খেলে যেন দেশের জন্য যুদ্ধ করছে! সেই আফগানিস্তান অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই সুযোগ পেয়ে গেছে এবারের এশিয়া কাপ খেলার।
false
hm
প্রবাসে দৈবের বশে ০৪৩ আমি জীবনে প্রথম অ্যালকোহল চেখে দেখেছি আট বছর বয়সে। দোষটা আমার ভাইয়ের। তারও তখন ঠিক আইনসিদ্ধ উপায়ে মাল খাবার বয়স হয়নি। সবজে একটা বোতল হাতে নিয়ে বড় ভাই চোরের মতো মুখ করে সন্ধ্যেবেলা চুপিচুপি ছাদের দিকে গেলে ছোট ভাইয়ের অনুসন্ধিৎসু মনে কিছুটা দোলা লাগা স্বাভাবিক। আমি অচিরেই বড় ভাইদের সেই বিয়ারের নিষিদ্ধ আড্ডায় হানা দিলাম। প্রাচীন ভারতের কূটনীতির তৃতীয় পদ্ধতি প্রয়োগের প্রস্তাব দিয়ে বসেছিলো উপস্থিত এক পামর। কিন্তু আমার বড় ভাইয়েরা খুব স্নেহ করেছেন আমাকে সারা জীবন, মদের বোতল হাতে দন্ডনীতি প্রয়োগের চিন্তা তাঁরা করেননি। তাছাড়া মার খেয়ে আমি তো সোজা গিয়ে আমার বাবাকে বলে দিতে পারি। সেক্ষেত্রে ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামতে হতে পারে সবাইকে, সিঁড়ি দিয়ে নামার সাহস কেউ করবে না। প্রাচীন ভারতীয় কূটনীতির প্রথম তরিকায় তাঁরা কিছুক্ষণ চেষ্টা করলেন। "না না ভাইয়া, যাও ঘরে যাও, আমরা পরে আসবো, এসে বাগাডুলি খেলবো", এই গোছের সামনৈতিক মিষ্টবাক্য প্রয়োগে আমার মন ভজানোর চেষ্টা করলেন তাঁরা। আমি শিশু ছিলাম, কৌতূহলী ছিলাম, তাই অসততা নয়, কৌতূহলের বশেই ঘুষ দাবি করে বসলাম, "তোমরা কী খাও? আমিও খাবো!" বড় ভাইয়েরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেদের মধ্যে ম্লেচ্ছ ভাষায় কী যেন মত বিনিময় করে শেষে একটা গ্লাসে অল্প একটু তরল ঢেলে আমাকে দিলেন। দাননীতির সাথে আরও কিছু সামনীতির পাশাপাশি দন্ডনীতির দিকে আবছা একটা ইঙ্গিতও করলেন একজন। আমি সন্তুষ্ট হয়ে গবগব করে সেই তরলে চুমুক দিলাম। বিচ্ছিরি, অতি বিচ্ছিরি স্বাদ ছিলো সেই বিয়ারের। এতই বিচ্ছিরি যে তার পরবর্তী পাঁচবছর আমি আর বিয়ার খাইনি। খেতে চাইওনি। কিন্তু পাঁচবছরে কত কিছু ঘটে। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র দিয়ে কত জল গড়ায়, কত নিরীহ ভালোমানুষ বিয়েশাদি করে মারা পড়ে, এ ওর সাথে ভেগে যায়, প্রেমিকার নতুন প্রেমিকের ছোটবোনের সাথে প্রেম হয়, আর একটা ফালতু বিয়ারের স্বাদ জিভ থেকে মুছে যেতে এমন আর কী সমস্যা? আমি তেরো বছর বয়সে আবার বিয়ারপানের সুযোগ পেয়ে সেটার সদ্ব্যবহার করলাম। এবারও ভিক্টিম আমার ভাই। তিনি মহাবিরক্ত। প্রথমে বলার চেষ্টা করলেন, "সেইদিন না দিলাম?" আমি ইউরি গ্যাগারিনকে হার মানিয়ে নভোমন্ডল থেকে আছড়ে পড়লাম মাটিতে। "সেইদিন মানে? পাঁআঁআঁআঁচ বচ্ছর আগে একবার দিসো!" ভাই ভুরু কুঁচকে কী যেন ভেবে ম্লেচ্ছ ভাষায় কী যেন বললেন গোঁ গোঁ করে। তখনও ভাষাটা তেমন ভালো জানি না। মনে হলো তিনি খুব একটা সন্তুষ্ট না। আমি পাত্তা দিলাম না, বড় দেখে একটা বৃটিশ আমলের গ্লাস নিয়ে এসে পাতলাম বোতলের নিচে। ভাই গ্লাসের আকার দেখে চোখ পাকালেন। আমি নির্বিকার। ব্ল্যাকমেইল যখন করছি, তখন এত লজ্জা করলে চলে না। সেদিন বিয়ার খেয়ে ভালোই লেগেছিলো। সময়ের সাথে এই অভূতপূর্ব পরিবর্তন সেদিন টের পাইনি, ভেবেছিলাম, এবার হয়তো জিনিস ভালো, কিন্তু এখন মনে হয়, সেবার আমার রসনা কিছুটা পরিপক্ক হয়েছিলো। মাল খাবার সময়গুলো কেন পাঁচ বছর পর পর ফিরে আসে, কে জানে? তারও পাঁচবছর পর আবার আমার সুযোগ আসে। এবার আর ভাইকে হুমকি দিয়ে নয়, বন্ধুদের নিয়ে গ্যালাক্সিতে হানা। গাঁটের পয়সা খরচ করে রীতিমতো কিনে বিয়ার খাওয়া। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লভ্য বিয়ার, ভদকা, জিন আর হুইস্কি পান করার সুযোগ এসেছিলো। আমার ব্ল্যাকমেইলের শিকার সেই বড় ভাই একবার স্বল্পকালীন প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফেরার সময় আমার জন্যে জনি ওয়াকারের এক অপূর্ব বোতল উপহার নিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু অতীত নিগৃহা স্মরণ করেই কি না কে জানে, সেই উপহারের সিংহভাগ তিনিই গলাধঃকরণ করেছিলেন। তখনও আমরা গা ঢাকা দিয়ে মদ্যপান করতাম। আমাদের বাড়ির কাজের মেয়ে একবার আমার ওয়ার্ডরোব সাফ করতে গিয়ে একটি সুদৃশ্য বোতল খুঁজে পেয়ে তৎক্ষণাৎ আমার মায়ের কাছে রিপোর্ট করে, এবং তিনি সেটিকে বার করে ধুয়ে মুছে আমার পড়ার টেবিলের ওপর রেখে দেন। বাড়ি ফিরেই সেদিন তোপের মুখে পড়েছিলাম। আমি ততদিনে বিয়ারের ভালোমন্দ বুঝতে শিখেছি। বাংলাদেশে আমার পছন্দের বিয়ার ছিলো কার্লসবার্গ। সেটা পাওয়া না গেলে ফস্টারস। একদমই পছন্দ করতাম না হাইনিক্কেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ টার্মের চূড়ান্ত পরীক্ষা দেয়ার কয়েকমাস আগে জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পক্ষ থেকে মিউনিখে কয়েক হপ্তার জন্যে একটা ভাষাশিক্ষার কোর্স করার সুযোগ হস্তগত হয়েছিলো। সেই বাহান্ন দিন আমি হাতের নাগালে বাভারিয়ার যতো রকমের বিয়ার ছিলো, সবই চেখে দেখেছি। ফ্রানৎসিস্কানার, এরডিঙ্গার, আউগুস্টিনার, পাউলানার, লোয়ভেনব্রয়, হাকার-প্শর, আর নাম মনে পড়ছে না। এদের মধ্যে আউগুস্টিনার আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছিলো। পরে এসে দেখেছি, এগুলো খুবই ছোট ছোট স্থানীয় ভাঁটির বিয়ার, মিউনিখের আশপাশ ছাড়া নাকি পাওয়া যায় না। কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের প্রথম মনমরা পার্টিতে বিয়াররসিকদের সাথে আলাপ করে জানতে পারলাম, বামবার্গ এর আশেপাশে নাকি দুর্ধর্ষ সব বিয়ারের ভাঁটি আছে, এবং সেসব বিয়ার কেবল বামবার্গ শহরেই পেয়, অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। বামবার্গে তাই একটা ঢুঁ মারার পরিকল্পনা মনের মধ্যে ঘুরছে। দেশে ফিরে আমি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে বিয়ার পানে ক্ষান্তি দিই। বাভারিয়ার সেইসব বিয়ারের সাথে ফস্টার্সের কোন তুলনাই হয় না। পানের জন্যে আমি আরো গুরুতর জিনিস বেছে নিই। এর পরবর্তী চার বছরের পেশাজীবী জীবনে আমি গাঁটের পয়সা খরচ করে, লোকজনকে হুমকি দিয়ে, ভালোবাসা ও স্নেহজনিত উপহার এবং সবশেষে ঘুষ হিসেবে নিয়মিত ভদকার বোতল বগলস্থ করেছি। বোতলে মনোনিবেশ করার সময় আমার চোখের সামনে ভেসে উঠেছিলো আমার সেই বড় ভাইয়ের মুখ। উঁহু, ঠিক স্মৃতিতে নয়, তিনি আমার ঘরে টোকা দিয়ে ঢুকে বাতাস শুঁকে বলেছিলেন, "হোয়াটস আপ?" পৃথিবী গোল, এ কথা শুনেছি, বইয়ে পড়েছি, টিভিতে দেখেছি, কিন্তু উপলব্ধি করতে পারি সেইদিন। হোয়াট গোউজ অ্যারাউন্ড, কামজ অ্যারাউন্ড। আমার সেই বড় ভাই, যাকে মোটে কয়েকবার ব্ল্যাকমেইল করে সবমিলিয়ে হয়তো আধ লিটার বিয়ার খেয়েছিলাম, তিনি রাহুর মূর্তি ধরে আমার সাধের ভদকার বোতল গ্রাস করতে এসেছেন! এ হতে দেয়া যায় না। আমি বোতলের কিছু ভদকা সারেন্ডার করে সারারাত চিন্তা করে শেষে ভোরে আমার মায়ের কাছে গিয়ে ভদ্রভাবে ঘরে বসে মদ্যপানের অনুমতি চাই। তিনি ছাত্রাবস্থায় আমাকে বমাল গ্রেফতারের কথা স্মরণ করেই হয়তো কিছুক্ষণ চিন্তা করে অনুমতি দেন, শর্ত একটিই, খেলে একা খেতে হবে, আর কাউকে সাথে নিয়ে নয়। আমি আমার দুর্বৃত্ত বড় ভাইয়ের কবল থেকে বোতলটিকে উদ্ধার করে তখনকার মতো ফ্রিজে রেখে দিলাম। পরবর্তীতে সেভাবেই রাখতাম। আমি দীর্ঘদিন বাড়িতে বসে একা একা মদ খেয়েছি। আমার বন্ধুদের সাথে খেয়েছি অন্যত্র বসে, কারণ সবান্ধব পানের অনুমতি বাসায় ছিলো না। মদ খাবার পর যে দুটো সাধারণ অবস্থা হয়, হ্যাপি আর হাই, বাংলা করা যেতে পারে তুষ্ট আর দুষ্ট, তার মধ্যে হ্যাপিতেই ছিলাম বেশিরভাগ সময়। বমি বা শোরগোল করে উৎপাত বাড়াইনি কখনো। সাধারণত ফূর্তি ফূর্তি ভাব একটু বেড়ে গেলে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গাইতাম অনেক, কখনো কখনো ফোনে একে ওকে গান শুনিয়ে জ্বালাতন করতাম। মাল খেয়ে একবারই বেসামাল হুল্লোড় করেছিলাম মীরপুরে আমাদের এক বন্ধুর বাড়ির ছাদে, যতটা না মদের ঘোরে, তারচেয়ে বেশি আড্ডার আনন্দে। কাসেলে এসে আমার মদ্যপানের সম্ভাবনা বেড়েছে, কিন্তু সুযোগ বাড়েনি। এখানে কোন লুকোছাপার ব্যাপার নেই, পয়সা দিয়ে বোতল কিনে খাও যত খুশি। কিন্তু সপ্তাহভর নানা ভ্যাজালে থাকি বলে সেভাবে মন খুলে টানা যায় না। কাসেলবাসী বাঙালিদের মধ্যে আমি আর হের চৌধুরীই মদ্যপ, বাকিরা কেউই স্পর্শ করেন না। অতএব মাঝে মাঝে চৌধুরীর সাথে বসেই মদ খাওয়া হয়। এ ব্যাপারে তিনি যথেষ্ঠ উৎসাহী, প্রায়ই এক বসায় এক বোতল ভদকা খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে লম্বাচওড়া বক্তৃতা দেন। বহু কষ্টে ভদকা থেকে তাকে ওয়াইনের দিকে ঠেলে নিয়ে যেতে হয়। বরফ পড়তে দেখলেই তিনি ভদকা আবহাওয়ার কথা বলেন, বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব দেখলেই হুইস্কির প্রস্তাব করেন। গেত্রেঙ্কেমার্কট (পানীয়ের দোকান) এ গেলে আমরা দুইজনই দীর্ঘসময় ধরে বোতলের শেলফের সামনে দাঁড়িয়ে খুঁটিয়ে দেখি। প্রায়ই দেখা যায়, কোন একটা কাজ "পরে করা যাবে" এমন হিসেব করে দুই বোতল ওয়াইন কিনে বসে পড়ছি, কিংবা গোটা ছয়েক বিয়ার। আজ "দুনিয়ার মালখোর এক হও" পোস্টে জাহিদ হোসেনের এক কৌতূহলী মন্তব্যের সূত্র ধরে এই স্মৃতিচারণ আর দিনপঞ্জি লিখলাম। মদ আমাকে খাওয়া শুরু করেনি এখনো, আমিই মদকে খাই। ভালো লাগে। মদ খেলে আমার মনে আনন্দময় স্মৃতিগুলোই ভেসে ওঠে, ঠিক যেভাবে প্রায়ই রাতে ঘুম ভেঙে যায় দুঃস্বপ্ন দেখে। মালের ঘোরে আমার সব কিছু খুব সুখপ্রদ মনে হয়। অনেক হাসি তখন। ভুলে যাই, যে দুনিয়াজুড়া পচুর গিয়ানজাম।
false
rg
আজ বাবা'র সপ্তদশ মৃত্যুবার্ষিকীতে বাবাকে নিয়ে কিছু স্মৃতিচারণ___ আজ ৬ ডিসেম্বর ২০১৩। ১৯৯৬ সালের এই দিনে আমার বাবা সবাইকে ছেড়ে পরপারে চলে যান। ১৭ বছর আগের সেই দিনের প্রতিটি মুহূর্ত আমি ভুলতে পারিনি। আজ বাবা'র সপ্তদশ মৃত্যুবার্ষিকী। সবাই আমার বাবা'র জন্য দোয়া করবেন। বাবা ছিল আমার সবচেয়ে বেস্ট ফ্রেন্ড। বাবা'র সঙ্গে আমি সব বিষয়ে খুব প্রাণান্ত আলোচনা করতাম। যুক্তি পাল্টা যুক্তি তুলে ধরতাম। বাবাকে নিয়ে আমি প্রচুর গাছ লাগিয়েছি। সেই গাছগুলো এখন অনেক বড় বড়। বাবা'র সঙ্গে অনেক মাছ ধরেছি। বাবা'র সঙ্গে মাঠে মরিচ লাগিয়েছি। ইরিধানে পানি সেচ করেছি। সবজি ক্ষেতে সবজি লাগিয়েছি। আমার বাবা ছিলেন একজন আদর্শ কৃষক। আমি একজন আদর্শ কৃষকের সন্তান। বাংলাদেশে এটাই আমার গর্ব করার মত একমাত্র বিষয়। তোমাকে খুব মিস করি বাবা, খুব। তোমাকে খুব ভালোবাসি, বাবা। তোমাকে হারিয়ে আমি জীবনের শ্রেষ্ঠ বন্ধুকে হারিয়েছি। তুমি কোথায় আছ, কেমন আছ বাবা!! দূর আকাশের মিটিমিটি নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে তোমাকে খুঁজে ফিরি। তোমার হাসিমুখ আমার এখনো সঙ্গী। তোমার দরাজ গলার অট্টহাসি এখনো আমার কানে ভেসে আসে। তুমি নেই, যেনো অনেক কিছুই নেই। এই নেই'র ভেতর আমার আর ভালো লাগে না বাবা। সত্যি ভালো লাগে না। তোমাকে খুব মিস করি বাবা, খুব মিস করি।বাবা ছিলেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একজন সফল সংগঠক। গোটা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমাদের বাড়িতে মোট তিন গ্রুপের আগমন ঘটতো। খুব গোপনে অনেক খোঁজ খবর নিয়ে খাবার আর ইনফরমেশান সংগ্রহ করার জন্য আমার মায়ের কাছে আসতেন মুক্তিযোদ্ধারা। পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি যেটিকে সবাই নকশাল নামে চিনতো, তাদের কিছু আনাগোনা ছিল আমাদের বাড়িতে। তাদের দলের অনেকে বিভিন্ন সময়ে বাবাকে খুন করার হুমকি দিয়ে যেতেন মা'র কাছে। তারা অনেক সময় আমাদের কাচারি ঘরে রাতে ঘুমাতেন। মায়ের রান্না করা খাবার খেতেন। আর যাবার সময় বাবা কখন আসেন, সে বিষয়ে মায়ের কাছে জানতে চাইতেন। একবার তারা আমার বৃদ্ধ দাদু ভাইকে জিম্মি করে বাবাকে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর তৃতীয় পক্ষটি ছিল রাজাকার-পাকসেনাদের দল। তারা দিনের বেলায় এসে বাবাকে খুঁজে যেতেন। আমাদের বাড়িতে কোনো মুক্তি পালিয়ে আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতেন। গোটা যুদ্ধের নয় মাস বাবা পালিয়ে পালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার দায়িত্ব পালন করেছেন।বাবা ক্লাশ থ্রি পর্যন্ত স্কুলে গেছেন। থ্রি পাশ করে ক্লাস ফোরে ওঠা হয়নি তার। বাবা'র হাতের লেখা বেশ ভালো ছিল। ছোট ছোট অক্ষরে লিখতেন। বাবা কিছু ডায়েরি লিখতেন। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ের তারিখ লিখে রাখতেন। কিষানের হিসাব লিখে রাখতেন। কারো কাছ থেকে ঋণ নিলে সেই টাকার হিসাব লিখে রাখতেন। কাউকে টাকা পয়সা দিলে সেই হিসেব লিখে রাখতেন। জমির খাজনা পরিশোধের তারিখ ও টাকার হিসেব লিখে রাখতেন। জমিতে কোন ফসল কখন দিবেন সেই তারিখ লিখে রাখতেন। ধান কাটার তারিখ লিখে রাখতেন। মোট ধানের হিসাব বছর ওয়ারি লিখে রাখতেন। আর আলাদা একটা পাতায় আমাদের ভাইবোনদের জন্ম তারিখ লিখে রাখতেন। সেখানে বাবা'র বন্ধু জ্যোতিষি শিব নারায়ন হিরা আমাদের ভাইবোনদের যে কষ্টি হিসেব করে বলতেন, তার সারাংশ লিখে রাখতেন।একবার শেরে বাংলা একে ফজলুল হক আমাদের পাশের থানা চিতলমারীতে জনসভা করতে আসলেন। বাবা তখন যুবক। শেরে বাংলাকে দীর্ঘা থেকে চিতলমারী পর্যন্ত মাঝির নৌকায় বাবা ও তার কয়েকজন বন্ধুরা সঙ্গ দিয়েছিলেন। সেটা যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের সময়ের কথা। চিতলমারী শেরে বাংলা'র নৌকা পৌঁছালে সেখানে তাকে স্বাগত জানান হাসান শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিব। তখন শেরে বাংলা'র সঙ্গে করমর্দনের পর নেতারা একে নৌকার অন্যান্য সবার সঙ্গেও করমর্দন ও কোলাকুলি করেছিলেন। সেটা ছিল বাবা'র জীবনে একটা অন্যতম স্মরণীয় স্মৃতি। আরেকবার রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমান যখন খাল কাটা কর্মসূচি হিসেবে মাটিভাঙ্গা ও নাজিরপুর সফর করেন, তখন নাজিরপুরে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে তিনি দুপুরের খাবার খেয়েছিলেন। সেই টেবিলে বাবাও অন্যান্য বিশিষ্ট জনদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। জিয়া তখন বলেছিলেন, আপনারা তো সবাই আওয়ামী লীগের লোক। আমাকে যে এভাবে আপ্পায়ন করলেন, তাতেই আমি খুশি। আমি খাল কেটে দেওয়ায় আপনাদের এলাকায় আবার কুমির আসবে নাতো? এটা নিয়ে সেখানে হাসাহাসি'র একটা হল্লা পড়ে গিয়েছিল।সাবেক শিক্ষামন্ত্রী বাবু ক্ষিতীশ চন্দ্র মন্ডল ছিলেন বাবা'র বন্ধু মানুষ। তিনি আমাদের বাড়িতে শিক্ষামন্ত্রী থাকা অবস্থায় একবার এসেছিলেন। এরাশাদ যখন রাষ্ট্রপতি তখন সংস্কৃতি ও ক্রীড়া মন্ত্রী ছিলেন মোস্তফা জামাল হায়দার। তিনিও বাবা'র বন্ধু ছিলেন। জামাল সাহেবের বাড়ি আমাদের পাশের গ্রামে বরইবুনিয়ায়। তিনি বাড়িতে আসলে সময় পেলেই আমাদের বাড়িতে আসতেন। কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী'র মামা হলেন জামাল সাহেব। মতিয়া চৌধুরীও একবার আমাদের বাড়িতে এসেছেন। মতিয়া চৌধুরী'র মায়ের সঙ্গে (জামাল সাহেবের বড় বোন) আমারও অনেকবার দেখা হয়েছে। উনি ছোটদের খুব পছন্দ করতেন। আমরা কলেজে যাবার পথে বা ফেরার পথে ওনাদের বাড়িতে কুলবরই খাবার লোভে ঢু মারতাম। উনি আমাদের দেখলেই বসিয়ে রেখে কুলবরই আনিয়ে খেতে দিতেন। আর সবার বাবার নাম বাড়িঘরের খোঁজখবর নিতেন। ওনার বাবাকে আমরা দেখেছি। আমরা ডাকতাম হাজি সা'ব। উনি আরব বেদুঈনদের মত লম্বা আলখেল্লা পড়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতেন। ওনাকে দেখলেই আমরা লুকিয়ে লুকিয়ে উচ্চারণ করতাম, সাপ সাপ সাপ.... জবাবে উনি হাঁক ছাড়তেন, কোথায় সাপ? আমরা হাজি সা'ব বলেই ভো দৌড় দিতাম। পরে উনি বাবা'র কাছে নালিশ দিতেন। কিংম্বা বাড়িতে ঢুকে মায়ের কাছে নালিশ দিতেন এই বলে যে, তোমাদের বাড়ির খোকায়রা ভারী দুষ্টু!বাবা'র কাছে রোচজ প্রচুর মানুষ আসতেন। একেবারে খুব ভোরে কখনো আসতেন যতীন চন্দ্র নাগ। আমরা ডাকতাম যতীন'দা। যতীন দা'র কাজিনদের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে মামলা হয়েছিল। সেই মামলায় তদবিরের জন্য বাবাকে নিয়ে নাজিরপুর যাবার জন্য বা পরামর্শ নেবার জন্য যতীন'দা আসতেন। কখনো গভীর রাত পর্যন্ত যতীন'দা আমাদের বাড়িতে বাবা'র সঙ্গে বসে দুনিয়ার গল্পো করতেন। যতীন'দার পেশা ছিল কাঠমিস্ত্রী। যতীন'দার হাতেই আমার কাঠমিস্ত্রী বিদ্যায় হাতেখড়ি। কখনো সকাল বেলা আসতেন চিত্ত ঘরামী ও তার মা। চিত্ত'দার বাবা নেপাল ঘরামী মারা যাবার পর এই পরিবারের সকল খোঁজখবর বাবা রাখতেন। চিত্ত'দা ও তার মা আসতেন একটা নালিশ নিয়ে। চিত্ত'দার ছোট ভাই জীবন ঘরামী ছিল ভীষণ ডানপিঠে। তাকে কিভাবে স্কুলমুখী করা যায় এটাই তাদের আর্জি থাকতো। বাবা জীবনকে পরে স্কুলমুখী করেছিল। জীবন'দা আমাদের চেয়ে বয়সে অনেক বড় হলেও আমাদের ক্লাসে পড়তেন। ক্লাস টেন পর্যন্ত আমরা একসঙ্গে লেখাপড়া করেছি।কখনো আসতেন রনজিৎ মন্ডল আর তার মেজো চাচা ধীরেন চন্দ্র মন্ডল। পালদের সঙ্গে মন্ডলদের জমি নিয়ে মামলা ছিল। সে বিষয়ে পরামর্শের জন্য তারা আসতেন। রনজিৎ মন্ডল'রা পাঁচভাই, অজিত, রনজিৎ, রেবতী, প্রভাস, প্রকাশ আর একবোন শোভা। ওদের বাবা মহেন্দ্রনাথ মন্ডল ছিলেন বাবা'র পরম বন্ধু। তিনি মারা যাবার পর ওই পরিবারের সত্যিকারের গার্ডিয়ানের ভূমিকা পালন করেছেন আমার বাবা। এছাড়া আসতেন বাবা'র বন্ধু শিব নারায়ন হিরা, যতীন্দ্রনাথ মজুমদার, অমল সিংহ, মাস্টার অনীল সিংহ, মাস্টার যতীষ বাগচি, মনি মন্ডল, আমার হাইস্কুলের হেডস্যার মনীন্দ্রনাথ মজুমদার, আমার শিক্ষক অনন্ত মজুমদার, আমার শিক্ষক অমৃত লাল রায়, আমার শিক্ষক নিরোদবিহারী রায়, সমাজসেবক প্রভাষ চন্দ্র মজুমদার, সমাজসেবক ডাক্তার শান্তিরঞ্জন রায়, সমাজসেবক ডাক্তার সুধীর চন্দ্র মন্ডল, সমাবসেবক কানাই মন্ডল, চেয়ারম্যান আবদুস সাত্তার, চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ, সমাজসেবক যোগেশ হালদার, মাস্টার অনীল হালদার, সমাজসেবক শামসুল হক মহাজন, সমাজসেবক মেম্বার মোক্তার হেসেন, সমাজসেবক আজাহার হোসেন, সমাজসেবক মাস্টার দীন মোহাম্মদ, মাস্টার সত্যাংশু মন্ডল, মাস্টার জগদীশ মন্ডল প্রমুখ।বাবা'র কাছে প্রায় রোজ যারা আসতেন তাদের মধ্যে ছিলেন সৈয়দ মামা, রসুল মামা, সাত্তার মামা, জামীর মামা, নটবর কাকা, সদাই'দা, যতীন্দ্রনাথ মন্ডল, হরিদাস কাকা, হরিপদ পাল, যোগেন মাঝি, হরবিলাশ, অনীল মাস্টার, আজিজ কাকা, সোলায়মান জামাই, ফটিক মামা, নালু নানা, রাঙ্গু মামা, সালেক জামাই, নালেক তাউঈ, কাদের মাঝি, বিপিন বাঢ়ৈ, সতীশ বড়াল, আলী খাঁ নানা, আইউব কাকা, মোসলেম খালু, হামিদ জামাই, খালেক খালু, খালেক শিকদার, মালেক মোল্লা, ডাঃ চিত্তরঞ্জন ঢালী, ডাঃ আজম মামা, রুস্তুম তাউঈ, ডাঃ সুভাস চন্দ্র হালদার প্রমুখ।গ্রামের বিভিন্ন শালিস দরবার নিয়ে যে সব মাতুব্বরগণ প্রায়ই বাবা'র কাছে আসতেন তারা হলেন, আবদুর রাজ্জাক মুন্সী নানা, শামসুল হক মুন্সী নানা, ডাঃ আলাউদ্দিন শেখ নানা, কানাই মন্ডল, ডাঃ সুধীর মন্ডল, মনি মন্ডল, কানাই মন্ডল, শিব নারায়ন হিরা, ধীরেন্দ্র নাথ মন্ডল, রনজিৎ মন্ডল, অনীল মাস্টার, প্রভাস মজুমদার, অনন্ত মজুমদার, মনীন্দ্রনাথ মজুমদার, যোগেশ হালদার, মাস্টার দীন মোহাম্মদ, মাস্টার গোলাম মোস্তফা, নূর মোহাম্মদ ফরাজী, মোক্তার মেম্বার, রাজ্জাক ফকির, চেয়ারম্যান আবদুস সাত্তার, চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ প্রমুখ।দশগ্রামের নানান পেশার মানুষের সঙ্গে বাবা'র ওঠাবসা ছিল। তাদের কেউ কৃষক, কেউ কাঠমিস্ত্রী, কেউ পাট বিক্রেতা, কেউ পল্লী ডাক্তার, কেউ খেয়ানায়ের মাঝি, কেউ জেলে, কেউ কিষাণ, কেউ কামার, কেউ কুমার, কেউ দইওয়ালা, কেউ পানবিক্রেতা, কেউ ফার্মেসির দোকানদার, কেউ হাটের ফেরিওয়ালা, কেউ খেজুরগাছের গাছিয়াল, কেউ মাতুব্বর, কেউ প্রতিপক্ষের রাজনীতিবিদ, কেউবা একেবারে সরাসরি আত্মীয়। সবাই তাদের নানা ধরনের বিষয় নিয়ে পরামর্শ করার জন্য বাবা'র কাছে আসতেন। কেউ আসতেন স্রেফ কখন জমিতে শস্য বুনবেন সেই হিসাব নিতে। কেউ আসতেন কখন ধান কাটা শুরু করা যায়, সেই পরামর্শ নিতে। কেউ আসতেন স্রেফ গল্পো করতে। হরেব রকম মানুষের সঙ্গেই বাবা'র নিবিঢ় বন্ধুত্ব ছিল। বাবা'র মৃত্যু'র পর তাদের কেউ কোনো দিন বাবা'র সম্পর্কে কোনো খারাপ কিছু বলেননি। বাবা'র জীবদ্দশায় বরং এদের অনেকে পেছনে অনেক কথাবার্তা বলতেন। তবু মেজর কোনো সমস্যায় পরলেই তাদেরই দেখতাম বাবা'র কাছে সুপরামর্শের জন্য আসতেন। এমনও দেখেছি, যাদের মধ্যে জমি নিয়ে মামলা চলছে, সেই দুই পক্ষের লোকই আলাদা আলাদা সময় বাবা'র কাছে আসতেন। বাবা তাদের সরাসরি জানিয়ে দিতেন, ও এসেছিল, ওর জন্য যেটা করণীয় সেটা বলে দিয়েছি। তোমার জন্য এটা করলে ভালো হবে। সবচেয়ে ভালো হয় তোমরা মামলা উঠিয়ে আমাদের নিয়ে বসে বিষয়টা মিটিয়ে ফেলো। এমন অনেক জটিল বিষয় যেটা আদালতে সমাধান হয়নি, বাবা'র পরামর্শ নিয়ে উভয় পক্ষ মামলা তুলে নিজেরা বসে মিটিয়ে ফেলেছে। অনেকে আসতেন মামলার কোন ধাপে কি করতে হবে সে বিষয়ে পরামর্শ নিতে। বাবা সবাইকে সঠিক পরামর্শ দিয়ে সব সময় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতেন।কখনো কখনো কেউ আসতেন তাদের ছেলেমেয়েদর পরীক্ষার ফিস দিতে না পারায় পরীক্ষা যাতে বন্ধ না হয়, সেজন্য বাবা'র কাছে অনুরোধ নিয়ে। বাবা যেনো স্কুলে গিয়ে মাস্টারদের সঙ্গে দেখা করে ফিস মওকুফ বা পরে দেবার ব্যবস্থা করেন। অনেক সময় বাবা নিজেই তাদের ফিস দিয়ে দিতেন। অনেকের চাকরির সুপারিশ করার জন্য বাবা চিঠি লিখতেন। সেই চিঠি'র শ্রুতি লেখকের দায়িত্ব পালন করতাম আমি। বাবা বলতেন, আমি লিখতাম। লেখা শেষ হলেই আবার পড়ে শুনাতাম। বাড়তি কিছু লেখা'র দরকার হলে সে বিষয়ে আমাকে ইঙ্গিত করতেন। আমি তখন চিঠি লেখায় পটু হয়ে উঠেছিলাম। বাবা যাদের কাছে চিঠি লিখতেন, সেসব চিঠি'র প্রায় সবই আমার হাতে লেখা।পরপর তিনবার ইরিধান উৎপাদনে বাবা নাজিরপুর থানার মধ্যে সেরা কৃষক নির্বাচিত হয়ে পুরস্কার জিতেছিলেন। পুরস্কার হিসেবে একবার পেয়েছিলেন একটা ফুটবলের মত গোল রেডিও। সেই রেডিও ছিল ছোটবেলায় আমার বিনোদনের সঙ্গী। ওটা আমার ছোট ভাই আর আমি মিলে ইঞ্জিনিয়ারিং করে করে নষ্ট করেছি। রেডিও'র ভেতর কি কি আছে দিনের মধ্যে সুযোগ পেলেই তা আমরা একবার খুলতাম আর একবার লাগাতাম। শুধু সন্ধ্যায় বিবিসি শোনার আগে যদি ঠিক করতে না পারতাম তাহলেই ধরা খেয়ে যেতাম। তখন সেই রেডিও বাজারে সুজিত'দার দোকানে নিতে হত ঠিক করার জন্য।রেডিওতে দেশী বিদেশী খবর শোনা ছিল বাবা'র খুব প্রিয় একটি বিষয়। বিশেষ করে সন্ধ্যায় বিবিসি আর রাতে ভয়েস অব আমেরিকা'র খবর। সেই খবর শোনার জন্য অনেকেই তখন আমাদের বাড়িতে ভিড় করতেন। বাবা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতেন। দুপুরে বাড়িতে থাকলে দুপুরের খাবারের পর একটা হালকা ঘুম দিতেন। আর রাতে দশটার মধ্যে খেয়ে ভয়েস অব আমেরিকা'র খবর শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যেতেন। এটা প্রায় নিয়মিত রুটিনের মত ছিল। কোনো কেনাকাটা না থাকলেও বাবা হাটের দিন হাটে যেতেন। কেনাকাটার দায়িত্ব ছিল জামীর মামা'র। জামীর মামা আমাদের বাড়িতে থাকতেন। সার্বক্ষণিক বাবার এসিসট্যান্ট হিসেবে সবকিছু দেখভাল করতেন তিনি। কোনো কিছু কেনাকাটার থাকলে মা সেই লিস্ট বলতেন জামীর মামাকে। জামীর মামা হাট থেকে সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসতেন। বাবা আসতো রাত করে। বাবা'র সঙ্গে রাতের খাবারে মিনিমাম তিনজন সঙ্গী প্রায় সময়ই থাকতো। তারা খাওয়া দাওয়ার পর পান খেয়ে কিছু গাল গপ্পো করে তারপর চলে যেতেন।যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি দেখেছি, সেটা হল মানুষ বাবাকে খুব ভালোবাসতেন। বাবা হাটে যাবার সময় পেছনে প্রায় বিশ ত্রিশ জনের একটা লাইন থাকতো। এই লাইন গোটা পথে বাবা কি বলছেন, কি আলাপ করছেন, তাই মনযোগ দিয়ে খামাখা শুনতো। অনেককে দেখতাম, হাটের আগে আগে এসে আমাদের কাচারি ঘরে বসে আছেন। বাবা রেডি হয়ে রওনা দিলে তারাও তখন যাবেন। এই ফাঁকে তারা অবশ্য পান বিড়ি তামাক খেয়ে সময় কাটাতেন। পান আর তামাক আমাদের। বিড়ি হিজ হিজ হুজ হুজ। আবার হাট থেকে ফেরার সময় যদি বাবা'র ফিরতে দেরি হয়, সেই খবর তাদের কেউ নিজ দায়িত্বে মায়ের কাছে দিয়ে যেতেন। যেনো একটা পরম দায়িত্ব তাদের ছিল সেই খবরটি আমাদের বাড়িতে পৌঁছে দেবার। বাবা'র মৃত্যু'র পরে সেই সব পরিচিত মুখগুলোকে আমি সত্যিকারভাবেই ব্যথিত হতে দেখেছি। তাদের চোখে আমি পানি দেখেছি। তাদের আর্তনাদ আমি শুনেছি। কতো রাজ্যের মানুষ যে বাবাকে চিনতেন! যখন বাবা'র নাম বলতাম, তখন তারা খুব খাতির করতেন। বলতেন, ও তুমি অমুকের পোলা!! তোমার বাবায় কেমন আছে?বাবা'র পড়ার মুড থাকলে দেখতাম আমির হামজার পুঁথি পড়ছেন সুর করে। এছাড়া রোজ সকালে নামাজ পড়ার পর বাবা নেয়ামুল কোরআন পড়তেন। বাবা আরবি পড়তে পারতেন না। বাংলায় লেখা নেয়ামুল কোরআন পড়তেন। কিছু দোয়া ও হাদিসের বাংলা ও আরবি মিক্সড বই বাবা নিয়মিত পড়তেন। বাবা নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। কখনো নামাজ পড়তে মিস হলে বাবা কা'জা নামাজ পড়তেন সময় করেই। বাবা ছিলেন পুরোপুরি ধার্মিক একজন মুসলমান। কিন্তু বাবা'র কাছে সকল ধর্মের মানুষ আসতেন। বাবা কীর্তন গান শুনতে যেমন যেতেন। তেমনি কবি গান, রামায়ন শুনতেও যেতেন। কিন্তু বাবাকে কখনো ওয়াজ শুনতে যেতে দেখেনি। বাবা ছিলেন সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক চেতনার একজন মানুষ। মানুষ পরিচয়টি ছিল তার কাছে সবার আগে। সে পথের ভিক্ষুক হোক, রাষ্ট্রের মন্ত্রী হোক, স্কুলের বখাটে ছাত্র হোক আর জমির কিষান হোক না কেন, সবার সঙ্গেই বাবা'র মেলামেশাটা একটা সুন্দর ছকের মত। আর মানুষে যে বাবাকে ভালোবাসতেন, সেটা আমরা এখনো টের পাই।
false
hm
শিশুভূক দেশে আমাদের ক্রিয়া আর প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশ ক্রমশ শিশুদের জন্য বিপদজনক একটি দেশ হয়ে উঠছে। খবরের কাগজে চোখ রাখলে প্রায় প্রতিদিনই কোনো দুর্ঘটনা বা অপরাধের কথা পড়ি, যেখানে ভিক্টিম এক বা একাধিক শিশু। ধর্ষণের পর শিশুদের হত্যা করার খবরটি মোটামুটি সাপ্তাহিক একটি ঘটনায় পরিণত হয়েছে, কিন্তু সেগুলো নিয়ে আমাদের খুব বেশি প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। ব্যাপারটাকে অনেকটা ভূমিকম্প বা ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে দেখার একটা প্রবণতা আমাদের মধ্যে গড়ে উঠেছে। হয়তো মিডিয়া আমাদের এই ঘটনাগুলোর লাইভ কাভারেজ দেখাতে পারে না বলে আমরা বেশি সাড়াশব্দ করি না। তবে গতকাল ঢাকার শাহজাহানপুরে একটি গভীর কূপের ভেতরে চার বছর বয়সী একটি শিশুর উদ্ধার তৎপরতার বিজ্ঞাপনখচিত কাভারেজ মিডিয়া যেভাবে দেশবাসীকে উপহার দিয়েছে, একটি শিশুর ধর্ষণ ও হত্যার দৃশ্য সেভাবে দেখালে হয়তো আমরা চুপ করে গিয়ে নিজের কাজে মন দেওয়ার আগে অন্তত দুই তিনদিন চেঁচামেচি করার মতো একটা রগরগে ইস্যু খুঁজে পাবো। অনলাইন খবরের কাগজে একটু পরপর নানা পরস্পরবিরোধী খবর পড়ে যা বুঝলাম, জিহাদ ঐ গভীর পাইপে পড়ার পর কান্নাকাটি করে, উদ্ধার করার জন্য নিজের মাকে ডাকে। এলাকার কয়েকজন লোক তাকে পাল্টা ডেকে সাড়া পায়। তারা টর্চ আর রশি ঝুলিয়ে বাচ্চাটাকে তুলে আনার চেষ্টা করে। দমকল বাহিনী এসে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে নিজেরা বাচ্চাটাকে উদ্ধারের জন‌্য দীর্ঘ সময় ধরে নানা কসরত করে। এ সময় টিভি সাংবাদিক নামের এক শ্রেণীর জীব এসে তাদের ঘিরে ধরে এবং জিহাদের এই প্রলম্বিত যন্ত্রণাটিকে তারা সাফল্যের সঙ্গে নিজেদের ব্যবসার পণ্য বানিয়ে ফেলে। টেলিভিশনে এই পুরো ব্যাপারটি সরাসরি সম্প্রচারের জন্য এক চ্যানেলের সাংবাদিক অন্য চ্যানেলের সাংবাদিকের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে দুর্ঘটনাস্থলটিকে মাছের বাজার বানিয়ে ফেলে। এই সরাসরি সম্প্রচারে তারা অনেক স্পনসর খুঁজে পায় অল্প সময়ের মধ্যেই, এবং জিহাদের খবরের ফাঁকে ফাঁকে স্পনসরদের বিজ্ঞাপনও প্রচারিত হতে থাকে। এক পর্যায়ে পাইপের ভেতরে ক‌্যামেরা নামিয়ে বেশ কিছুদূর খুঁজে কোনো শিশুর দেহের অস্তিত্ব খুঁজে না পেয়ে উদ্ধারকর্মী ও মিডিয়া একযোগে বলতে থাকে, পাইপের ভেতরে জিহাদ নেই। এই বক্তব্য দমকলপ্রধান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, দু'জনেই পুনর্ব্যক্ত করেন। এরই জের ধরে জিহাদের বাবাকে পুলিশ ডেকে নিয়ে কড়া জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরই মাঝে দমকলপ্রধান উদ্ধারাভিযান পরিত্যক্ত ঘোষণা দেওয়ার কয়েক মিনিট পর এই উদ্ধারকাজে নবাগত তিন যুবক তাদের নিজস্ব উদ্ভাবিত যন্ত্র দিয়ে জিহাদের অসাড় দেহ পাইপের ভেতর থেকে তুলে আনেন। ডাক্তারি পরীক্ষার পর জানা যায়, জিহাদ মৃত। পুরো ব্যাপারটি নিয়ে আমার কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরলাম। [১] দমকল বাহিনী যে কাজটি পারেনি, তিনজন যুবক নিজস্ব উদ্ভাবন দিয়ে তা করে দেখিয়েছেন। এখন দমকল বাহিনীকে ব্যাখ্যা করতে হবে, তারা কোন কোন পদ্ধতিতে দীর্ঘ সময় ধরে জিহাদকে উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। সীমিত সম্পদ দিয়ে আমাদের দমকল বিভাগ অনেক দুর্যোগ মোকাবেলা করেন, তাই তাঁদের প্রতি পূর্ণ সহানুভূতি প্রকাশ করে বলছি, এই একটি ক্ষেত্রে তাঁরা শোচনীয়ভাবে অযোগ্য প্রমাণিত হয়েছেন। দমকল বাহিনীর প্রধান যখন উদ্ধারাভিযান পরিত্যক্ত ঘোষণা করছেন, তখন তাঁর কয়েক গজ দূরে দাঁড়িয়ে জিহাদকে গভীর কূপ থেকে তোলার চেষ্টা করছিলেন অপেশাদার উদ্ধারকর্মীরা। যারা সফল হয়েছেন, তাদের কৌশলটি দমকল বিভাগ শিখে নিচ্ছে কি না, বা এ কৌশলটির আরো শাণিত প্রয়োগ নিয়ে দমকল বিভাগ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে কি না, তা সরল ভাষায় দেশের মানুষকে জানাতে হবে। [২] উদ্ধারকারী শাহ মোহাম্মদ আব্দুল মুন ও আব্দুল মজিদ খুব সরল একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে জিহাদের দেহ উদ্ধার করেছেন। বুয়েটের প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র তানভীর আরাফাত ধ্রুবও কাছাকাছি নকশার একটি যন্ত্র নিয়ে উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছেন। তাই এ কথা খুব স্পষ্ট যে মানুষের আইডিয়া এ ধরনের দুর্যোগে পেশাদার উদ্ধারকর্মীদের সহায়তা করতে পারে। তাই দমকল বাহিনীর কাছ থেকে আরো আধুনিক আচরণ প্রত্যাশা করি। দমকল বাহিনী খুব সহজেই একটি হেল্পলাইন স্থাপন করে উদ্ধারকাজে উৎসাহী মানুষদের বুদ্ধিবৃত্তিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারেন। দমকল বাহিনীর সদর দফতরে বসে একজন কর্মকর্তা দমকল বাহিনীর ফেসবুক পেজে একটি থ্রেড খুলে প্রকাশ্যে মানুষের মতামত নিতে পারেন, সদর দফতরে বসে সেগুলো যাচাই বাছাই করে দূরযোগাযোগের মাধ্যমে দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজ তত্ত্বাবধায়কের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন। [৩] যে কোনো দুর্ঘটনাস্থলে একটি নির্দিষ্ট পরিসীমা স্থাপন করে (ঢিলছোঁড়া দূরত্বের বাইরে) দমকল বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য দাঙ্গা পুলিশ বরাদ্দ করা অবশ্যকর্তব্য। হাজার হাজার উৎসুক প্রত্যক্ষদর্শনলোভী মানুষ যদি ঘিরে থাকে, শোরগোল করে, ঠাণ্ডা মাথায় উদ্ধার কাজ পরিচালনা করা খুবই দুরূহ একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এদের এবং মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে ব্যবসা করা টিভি সাংবাদিকদের ঘটনাস্থল থেকে ভদ্র ও সভ্য দূরত্বে দাঁড় করিয়ে এক ঘণ্টা পর পর উদ্ধারকাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানানো যেতে পারে (যদি তা আদৌ সম্ভব হয়)। [৪] দুর্ঘটনা বা দুর্যোগের শিকার যারা, তাদের ও তাদের পরিজনদের প্রতি টিভি সাংবাদিকদের আরো সহানুভূতি ও সমানুভূতির প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এই জীবগুলো জানেই না একজন শোকার্ত মানুষের সাথে কীভাবে কথা বলতে হবে। হয়তো এরা মৌগলির মতো জঙ্গলে বড় হয়েছে, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর জামাকাপড় যোগাড় করে পরে লোকালয়ে এসেছে এবং সোজা টিভি চ্যানেলে গিয়ে চাকরি নিয়েছে। সভ্য জগতে কীভাবে দুর্গত মানুষের শোককে প্রচার করা হবে, এ নিয়ে তাদের অবিলম্বে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। নীতিপ্রণেতারা সম্প্রচার নীতিমালায় এ ব্যাপারে বিশদ নজর দেবেন, এমন আশা করছি। কোরবানির গরুর রক্তের চারপাশে মাছিও এভাবে ভিড় করে না [৫] আমরা যারা ভদ্দরলোক, তাদের বাচ্চারা সাধারণত গভীর নলকূপের আশেপাশে খেলতে গিয়ে সেটাতে পড়ে যায় না, তাই আমরা এ ধরনের ব্যাপারগুলো "দর্শকের" চোখ দিয়ে দেখি। খেলতে গিয়ে বল ভেবে ককটেল কুড়িয়ে বিস্ফোরণে পঙ্গু বা নিহত শিশুরা, কিংবা ধর্ষণ ও হত্যার শিকার শিশুরাও আমাদের দর্শকের চোখের শিকার। এই বাচ্চাগুলোর পরিণতি যে আমাদের বাচ্চাদেরও হতে পারে, এই আশঙ্কাটুকু আমাদের সবার মধ্যে সঞ্চারিত হওয়া প্রয়োজন। আমরা গ্যালারিতে ভূট্টার খৈ হাতে দর্শকের ভূমিকা থেকে নিজেদের যতদিন বিচ্যুত করতে না পারবো, এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্ত হতে থাকবে। জিহাদ আমাদের কারো না কারো খুঁড়ে রাখা পাইপে পড়েই মারা গেছে। আমরা যদি এই দোষী লোকগুলোকে চিহ্নিত না করি, তাকে শাস্তি না দিই, তার ও তার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় না করি, কয়েক মাস পর দেশের আরেক জায়গায় হয়তো একই পরিণতি বরণ করবে অন্য কোনো শিশু। [৬] ভবিষ্যতে ঠিক একই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে, এ কথা মাথায় রেখে দেশের তরুণ প্রযুক্তিবিদদের প্রতি একটি অনুরোধ। চাঁদে রোবট পাঠানো নিয়ে যেমন জমজমাট রোবোটিক্স প্রতিযোগিতা হয়, ঠিক তেমনি উৎসাহ নিয়ে গভীর কোনো কূপে আটকা পড়া মানুষকে উদ্ধারের জন্য রোবোটিক্স প্রতিযোগিতা হোক। দুর্গত মানুষটির কাছে আলো, পানি, অক্সিজেন ও যোগাযোগের মাধ্যম পৌঁছে দেবে একটি রোবোট, যেটি একই সাথে তাকে যান্ত্রিকভাবে নিরাপদে চেপে ধরবে এবং উদ্ধারকারীরা সে মানুষটিকে সাধারণ একটি উইঞ্চ দিয়ে তুলে আনবেন। চাঁদে রোবোট পাঠানো খুবই উদ্দীপক একটি প্রস্তাব, কিন্তু একজন মানুষের প্রাণ বাঁচানো এর চেয়ে কোনো অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। গতকাল যারা জিহাদের দুর্ভোগের সম্প্রচারে স্পনসর করে ব্যবসা করেছেন, তারা এ ধরনের একটি উদ্যোগে স্পনসর করে দ্বিতীয় জিহাদের প্রাণরক্ষায় অগ্রিম অংশ নিন। আমাদের তরুণরা অফুরান প্রাণশক্তি আর আইডিয়া নিয়ে প্রতিদিন ছটফট করেন, তাদের অংশগ্রহণে এ ধরনের একটি প্রতিযোগিতা থেকে অনেক সহজসাধ্য সমাধান বেরিয়ে আসবে বলি বিশ্বাস করি। [৭] চলতে চলতে যেখানেই শিশুদের জন্য বিপদজনক কোনোকিছু দেখবেন, সাথে সাথে সবার গোচরে আনুন। প্রয়োজনে ঐ সমস্যাটি সমাধান না করা পর্যন্ত সমাধানের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাটিকে সম্ভাব্য সকল বৈধ চাপের মুখে রাখুন। হয়তো আমাদেরই কোনো শিশু বড় হয়ে পুরো মানবজাতির উত্তরণের ভার নিতে পারে, সে যেন একটি ১৫ ইঞ্চি পাইপের কাছে আমাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে পরাজিত না হয়।
false
hm
পানশালা ০০২ পানশালা শিরোনামের একটা সিরিজ লেখা শুরু করেছিলাম অনেক আগে। শিব্রাম চকরবরতি আমার অনেক মানসগুরুদের একজন, তাই পানপ্রেমিক কিছু চরিত্রের মুখে PUN গুঁজে দিয়ে গল্প বলানোর চেষ্টা করেছিলাম ( কিছুদিন আগে সচল মৃদুল আহমেদের "বুক বড়ো" করার গল্পটি যেমন একটি আদর্শ পানশালার গল্প)। অন্যান্য অনেক উদ্যোগের মতোই তা ব্যর্থ হয়েছে। গল্পের মহেঞ্জোদোড়ো থেকে একটা তুলে আনছি আবার সচলের পাঠকদের জন্যে। ফাকরুল ভাই সেদিন মাতাল হতে চাইছিলেন না বলে হাতি মার্কা বীয়ার নিয়ে বসেছিলেন। কাঁচা জনতা এ বিয়ারের একটা কৌটা শেষ করে টলে যায়, পাকা ফাকরুল তেষ্টা মেটাতে বীয়ার গেলেন। সেদিন ভুল করে মিনারেল ওয়াটার খেয়ে বেচারা আরেকটু হলেই খাবি খেয়ে মরে আর কি। শেষে মাথা চাপড়ে একটু রাম পিলানোর পর তিনি ধাতস্থ হয়ে ভূমিতে ফিরে আসেন। আমাদের পাশের টেবিলের পাশের টেবিলে, সেই পরশু-পড়শী টেবিলখানায় মুখে ব্যান্ডেজ বাঁধা এক কুচকুচে কালো আদম মনোযোগ দিয়ে পান করছিলেন, বোতলের ঢং আর তরলের রং দেখে মনে হয় পানীয়টি রাম। একনিষ্ঠ রামভক্ত ব্যক্তিটি রসিয়ে রসিয়ে এক একটি রামচুমুক মারছিলেন, আর বিড়বিড় করে কী কী যেন বলছিলেন। ফাকরুল ভাই আমাকে বলেন, ''আমি ঐ ব্যাটাকে চিনি, ঐ কালাটাকে। চিনি সেই ছোটবেলা থেকে।'' আমিও ফাকরুল ভাইয়ের সাথে তাল মিলিয়ে হাতি মার্কা বীয়ারই খাচ্ছিলাম, তবে সবকিছুই ভালো লাগতে শুরু করেছে দেখে বুঝি যে আমার তেষ্টা মিটে গিয়ে নেষ্টাও পেয়ে বসেছে। ফাকরুল ভাই বলেন, ''ওর জীবনটাই অভিশপ্ত। বেচারা।'' আমি বলি, ''কেন? ওর নাম কি আশফাক?'' ফাকরুল ভাই মাথা নাড়েন। আমি ভেবে বলি, ''তাহলে কি ইকবাল?'' ফাকরুল ভাই রাজি হন না। আমি আরো গবেষণা করে উজ্জ্বল মুখে বলি, ''তাহলে কি জনগণের নয়নমণি সুধীর ভাই?'' ফাকরুল ভাই ভেটো দ্যান। বলেন, ''আরে না, ওর নাম আবু লুলু।'' আমি একটু নিরাশ হই। আবু লুলু নামটা খারাপ কিছু নয়। সমস্যা কী এতে? ফাকরুল ভাই বলেন, ''আবু লুলুর মা আমাদের চট্টগ্রামের মেয়ে। কিন্তু বাপ এদেশী না। আফ্রিকান। সুদানের এক ব্যবসায়ীর ছেলে, আবু লুলু চট্টগ্রামে দারচিনির ব্যবসা করতে এসে প্রেমে পড়ে মরিয়ম বিবির। কিন্তু সে প্রেমে বাগড়া দ্যায় মরিয়ম বিবির বাপ গোলাম ছগীর আর আবুলুলুর বাপ আবু নামরূদ। গোলাম ছগীর বলে, একটা কালা কাফ্রির কাছে সে পরীর মতো মেয়েকে তুলে দিতে পারে না। আর আবু নামরূদ বলে, বেটা লুলু তুমি বিয়ে করতে চাইলে বারো বছরের কচি বালিকা বধূ বেছে নাও, বাইশ বছরের একটা বুড়ি ধুমসীকে বিয়ে করার কারণ কি, যে কি না কথায় কথায় শুধু মুখ খারাপ করে?'' আমি বীয়ারে চুমুক দেই। ''তারপর? তারপর কী হলো?'' আড়চোখে তাকিয়ে দেখি আবু লুলুর ছেলে আবু লুলু গেলাস ফেলে বোতলে মুখ লাগিয়ে চুকচুক করে রাম খাচ্ছে। ফাকরুল ভাই বলেন, ''তারপর ফাগুন ফুরিয়ে চৈত্র মাসের একদিন, হিসাব মতে বসন্ত থাকলেও চরম খাইষ্টা গরম পড়েছে, মরিয়ম বিবি ইয়া লম্বা কাফ্রি আবু লুলুর হাত ধরে পালিয়ে যায়। তারা একটা সাম্পানে চড়ে আশ্রয় নেয় কুতুবদিয়ায়। সেখানে তারা মৌলবীর কাছে কলমা পড়ে বিয়ে করে। ছ''মাস বাদেই মরিয়ম বিবির কোল কালো করে জন্মায় এক ছোকরা। আবু লুলু নিজের নামে তার নাম রাখে .. ..।'' নামটা ভুলে যান ফাকরুল ভাই। আমি খেই ধরিয়ে দেই, ''আবু লুলু?'' ফাকরুল ভাই হাসেন। ''ওফ, তোমাদের কি মেমরি! হবে না ক্যানো, ইয়াং ম্যান তোমরা, আমরা বুড়ো ভাম কিছু মনে থাকে না। .. .. তো আবু লুলু জন্মানোর কয়েকদিন পর আবু নামরূদ কিছু সাতকানিয়ার ডাকাত পাঠিয়ে আবু লুলুকে তুলে নিয়ে যায়, তারপর চট্টগ্রাম থেকে গোলমরিচের ব্যবসা গুটিয়ে ফিরে যায় নিজের দেশ সুদানের সেই আঁশটে গন্ধঅলা বন্দর, দার-এস-সুনামিতে, সেখানে আবু লুলুর সাথে বিয়ে হয় তারই এক মামাতো বোন, একাদশবষর্ীয়া উম্মে রাইসুর সাথে। আর মরিয়ম বিবি এদিকে আশায় আশায় দিন গোনে, একদিন আবু লুলু কুতুবদিয়ায় ফিরে আসবে তারচে কালো সাম্পানে চড়ে, সে আশায় আশায় গান বান্ধে, ও রে সাম্পানওয়ালা, তুই আমারে করলি দিওয়ানা ... ...। কিন্তু দিন যায়, আবু লুলু আর ফেরে না।'' আমার মনটাই খারাপ হয়ে যায়, দেখি আবু লুলুর বেটা আবু লুলু বোতলটাকে নিঃশেষ করে গেলাসে জিভ ঢুকিয়ে তলানি চাটছে। বলি. ''তারপর?'' ফাকরুল ভাই বলেন, ''তারপর ধীরে ধীরে মরিয়মের আশা ফিকে হয়ে আসে। তার বুকে জন্ম নেয় গভীর অভিমান। হারামজাদা আবু লুলু নিজের দেশে ফিরে গিয়ে আরেকটা শাদী করেছে, তার কোলে একটা কাফ্রি সন্তান গছিয়ে দিয়ে। শুয়ারের বাচ্চা। মনের দুঃখে সে সন্তান আবু লুলুকে নিয়ে বাপ গোলাম ছগীরের কাছে ফিরে আসে। এতদিন পর হারানো কন্যাকে ফিরে পেয়ে গোলাম ছগীর খুশি হন, কিন্তু কোলের কালাটাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নেন। নানার আশ্রয়ে বাড়তে থাকে আমাদের আবু লুলু, কিন্তু সুখ তার কপালে সয় না, কয়েক মাস পরই নিদারুণ নিউমোনিয়ায় ভুগে মরিয়ম বিবি আল্লার পেয়ারা হন। নির্দয় নানার কাছে বাড়তে থাকে লুলু।'' আমি বলি, ''তারপর?'' ফাকরুল ভাই নাক মুছে বীয়ার টানেন খানিকক্ষণ। তারপর বলেন, ''তারপর আর কী? গোলাম ছগীর আবু লুলুর ভরণপোষণে ত্রুটি করেন না, কিন্তু তাকে অহর্নিশি সুদানীর পো বলে ডাকেন। আর চাটগাঁয়ের আলোবাতাসে বড় হওয়া কালো লুলুর বুকে সে ডাক শেলসম বিঁধে! গোলাম ছগীরের দেখাদেখি বাড়ির অন্যরাও লুলুকে সুদানীর পো ডাকা শুরু করে, তাদের দেখাদেখি পাড়াপ্রতিবেশী ও মহল্লার লোকজন, ইস্কুলের চাপরাশী থেকে হেডমাস্টার, কলেজের বান্ধবী থেকে শুরু করে কক্সবাজারের সৈকতপতিতা, সবাই আবু লুলুকে সুদানীর পো ডাকতে থাকে। আর কী এক যন্ত্রণা লুলুকে কুরে কুরে খায়। তাই তো ও এই যন্ত্রণা ভুলে থাকতে বারে পড়ে পড়ে মদ খায়।'' আমি ঠিক বিশ্বাস করতে চাই না কথাটা। বলি, ''তাই নাকি?'' অমনি ফাকরুল ভাই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। বলেন, ''প্রমাণ চাও, কাফের কোথাকার? যাও না, ওকে গিয়ে একবার সুদানীর পো বলে ডাকো, দ্যাখো ও তোমার কী হাল করে!'' আমি মাতাল আবু লুলুর বাইসেপের দিকে তাকিয়ে বলি, ''না না, অবিশ্বাসের কী আছে, আপনার কথা কি আমি ফেলতে পারি, বলেন?'' ফাকরুল ভাই জবাবে বাদামের চাট মুখে দিয়ে চিবাতে থাকেন। (মার্চ ১০, ২০০৬)
false
rn
জর্জ বার্নার্ড শ জর্জ বার্নার্ড শ' একজন আইরিশ নাটক লেখক ছিলেন। তিনি ১৯২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পান। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনিই একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি নোবেল পুরস্কারের পাশাপাশি অস্কারও লাভ করেছিলেন। শ নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তবে স্ত্রীর পীড়াপীড়িতে শেষ পর্যন্ত সেটি গ্রহণ করেছিলেন। তবে তিনি আর্থিক পুরস্কার নেননি। উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের পর জর্জ বার্নার্ড শ’ই হলেন সেরা ব্রিটিশ নাট্যকার। কেউ বলেন, তার মতো সাহিত্য সমালোচক বিশ্বে দুর্লভ। যে কোনো সাহিত্য সৃষ্টিকে তিনি সম্পূর্ণ নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সমালোচনা করতে পারেন। স্বচ্ছ পরিষ্কার মননের অধিকারী। কেউ বলেন, তিনি একজন মহান সামাজিক চিন্তক। তার চিন্তার মধ্যে ভবিষ্যৎ জীবনের বীজ অঙ্কুরিত হয়। এক শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন জর্জ বার্নার্ড শ’ যিনি সমকালীন সমাজকে প্রচন্ডভাবে প্রভাবিত করেছিলেন। তাকে তুলনা করা হয় মহান-চিন্তানায়ক ভলতেয়ারের সঙ্গে। ছোটবেলার দিনগুলো তার কেটেছিল কঠিন কঠোর নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে। সময়মত পড়াশোনা করতে হত তাকে। চার্চে যেতে হয় সবসময়। খেলাধুলার সময়টার ওপরেও টেনে দেয়া হয়েছিল লক্ষণ রেখা। এভাবে ছোট থেকেই শ’ কে বলা হয়েছিল ভবিষ্যতে তোমাকে একজন কেউকেটা হতে হবে। তুমি জন্মালে, আর কিছুদিন কাটিয়ে গেলে এই জগতের বুকে তা হবে না। এভাবেই বোধ হয় শ’-এর মন ইস্পাত কঠিন হয়ে উঠে।জর্জ বার্নার্ড শ’র বাড়িতে বেড়াতে এসে এক মহিলা অবাক হয়েবললেন, ‘মিস্টার শ, আপনার ঘরে দেখছি একটাও ফুলদানি নেই। আমি ভেবেছিলাম, আপনি এত বড় একজন লেখক; আপনি নিশ্চয়ই ফুল ভালোবাসেন। তাই আপনার বাসার ফুলদানিতে বাগানের তাজা, সুন্দর ফুল শোভা পাবে।’ প্রত্যুত্তরে শ সঙ্গে সঙ্গেই বললেন, ‘ম্যাডাম, আমি বাচ্চা ছেলেমেয়েদেরকেও ভালোবাসি। তার অর্থ এই নয় যে, আমি তাদের মাথা কেটে নিয়ে এসে ঘরে সাজিয়ে রাখব।লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকসের প্রতিষ্ঠাতা জর্জ বার্নার্ড শ ১৮৫৬ সালের ২৬ জুলাই আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে জন্মগ্রহণ করেন। সঙ্গীত এবং সাহিত্য সমালোচনা বিষয়ক লেখালেখি তাকে আর্থিক সচ্ছলতা দিলেও তার মেধা আসলে লুকিয়ে ছিল নাটকেই। ৬০টিরও বেশি নাটক লিখেছেন তিনি। ১৯৫০ সালের ২ নভেম্বর ইংল্যান্ডের হার্টফোর্ডশায়ারে পরলোকগমন করেন তিনি। নবীজী সম্পর্কে জর্জ বার্নার্ড শ বলেছেন- মুহাম্মদের ধর্মের প্রতি আমি সব সময় সুউচ্চ ধারণা পোষণ করি কারণ এর চমৎকার প্রাণবন্ততা। আমার কাছে মনে হয় এটাই একমাত্র ধর্ম যেটা সদা পরিবর্তনশীল জীবনযাত্রার সঙ্গে অঙ্গীভূত হওয়ার ক্ষমতা রাখে, যা প্রত্যেক যুগেই মানুষের হৃদয়ে আবেদন রাখতে সক্ষম। আমি তাঁর (মুহাম্মদ) সম্বন্ধে পড়াশোনা করেছি- চমৎকার একজন মানুষ এবং আমার মতে খৃষ্টবিরোধী হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে অবশ্যই মানবতার ত্রাণকর্তা বলতে হবে।’ খ্যাতনামা আইরিশ সাহিত্যিক, সমালোচক ও নাট্যকার জর্জ বার্নার্ড শর মুখের লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য ছিল তাঁর দাড়ি। একবার একটি ইলেকট্রিক রেজর নির্মাতা কোম্পানির কর্তারা বাজারে আসা তাঁদের নতুন রেজরের প্রচারণায় শর এই দাড়িকে নিশানা করল। শকে তারা এই নতুন রেজর দিয়ে দাড়ি কামানোর অনুরোধ করল। বিনিময়ে দেওয়া হবে লোভনীয় অঙ্কের টাকা। শ তাদের হতাশ করে বললেন, তাঁর বাবা যে কারণে দাড়ি কামানো বাদ দিয়েছিলেন, তিনিও ঠিক একই কারণে এ জঞ্জাল ধরে রেখেছেন। কোম্পানির কর্তারা কারণটি জানতে আগ্রহী হলে বার্নার্ড শ বললেন, “আমার বয়স তখন পাঁচ বছর। একদিন বাবা দাড়ি কামাচ্ছেন, আমি তাঁকে বললাম, ‘বাবা, তুমি দাড়ি কামাচ্ছ কেন!’ তিনি এক মিনিট আমার দিকে নীরবে তাকিয়ে থেকে বললেন, ‘আরে তাই তো, আমি এ ফালতু কাজ করছি কেন?’ এই বলে তিনি সেই যে জানালা দিয়ে রেজর ছুড়ে ফেললেন, জীবনে আর কখনো তা ধরেননি।” জর্জ বার্নার্ড শ ২০ বছর বয়সে কেরানির চাকরি ছেড়ে দিয়ে সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। জর্জ বার্নার্ড শ কাউকে অটোগ্রাফ দিতেন না। নিজের লেখা বইও কাউকে কখনো উপহার দেননি। বিশ্বখ্যাত বাঙালি জগদীশচন্দ্র বসু ১৯২৮ সালে রয়েল সোসাইটির সভায় একটি ভাষণ দেন। সেই ভাষণ শুনে শ মুগ্ধ। পরদিনই কয়েকটি বই নিয়ে তিনি জগদীশচন্দ্রের বাসায় গিয়ে হাজির। জগদীশচন্দ্র বাসায় ছিলেন না। উপহারের বইগুলোতে শ লেখেন_জীববিজ্ঞানে পণ্ডিত এক ব্যক্তিকে জীববিজ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞ এক ব্যক্তি উপহার দিলেন। তিনি সামাজিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যাগুলো হাস্যরসের ছদ্মাবরণে তিনি অত্যন্ত দক্ষ শিল্পীর হাতে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন। শিক্ষা, বিয়ে, ধর্ম, সরকার, স্বাস্থ্যসেবা এবং শ্রেণী-সুবিধাই ছিল জর্জ বার্নার্ড শ’র লেখার বিষয়বস্তু। অধিকাংশ লেখাতেই শ্রমজীবী মানুষের শোষণের বিপক্ষে তার অবস্থান ছিল সুস্পষ্ট। একজন কট্টর সমাজতান্ত্রিক হিসেবে ফ্যাবিয়ান সোসাইটির পক্ষে জর্জ বার্নার্ড শ’ অনেক বক্তৃতা দেন ও পুস্তিকা রচনা করেন।
false
hm
অন্যরকম ১. ঢাকায় প্রচুর ভারতীয় টিভি চ্যানেল দেখা যায়, এ কোনো নতুন ব্যাপার না। আমরা আমদানিপ্রবণ জাতি, বিনোদনেরও প্রভূত অভাবে আমরা সবসময় ভুগি, তাই বিনোদনের উপাদান আমদানিতে আমরা উদার। শুনেছি ইন্দিরা গান্ধী তথ্যমন্ত্রী থাকার সময় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যেদিন ভারতে টেলিভিশন উৎপাদন শুরু হবে, সেদিন থেকে ভারতে টেলিভিশন সম্প্রচার শুরু হবে, তার আগে নয়। এই সিদ্ধান্তের দৃঢ়তা ভারতের মিডিয়াকে পিছিয়ে যে দেয়নি, তার প্রমাণ ঢাকা, কাঠমাণ্ডু, এমনকি তাশখন্দে গেলেও মিলবে। আমাদের বাসায় হিন্দি সিরিয়ালের তেমন জনপ্রিয়তা না থাকলেও পশ্চিম বাংলার অনুষ্ঠানগুলি বেশ আগ্রহ করে দেখা হয়। একবার কী একটা চ্যানেল বিগড়ে গেলো, আম্মা আর ভাত খেয়ে মজা পায় না। আমি ফাইন টিউন করেও সেই চ্যানেলের হদিশ পেলাম না, আম্মা নিজেই ফোন করে ডিশঅলা ছোকরাকে অস্থির করে ছাড়লো। কী এক মেগা সিরিয়াল সেখানে চলছে, তার পাত্রপাত্রীদের কী হলো না হলো এই দুশ্চিন্তায় আম্মার আর দিন কাটে না। অবশেষে একদিন গায়েবি ইশারায় আবার সেই চ্যানেল সেই সিরিয়ালসমেত ফিরে এলো, আম্মারও ব্লাড প্রেশার স্বাভাবিক হলো। আম্মার ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছি বলে মনে হতে পারে, কিন্তু আমিও পশ্চিম বাংলার কী একটা সিরিয়াল বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখতাম। মোনামি বলে এক অভিনেত্রী আছেন, তিনি বছর ছয়েক আগে আমার দিল বরাবর এক দারুণ চাকু মেরে দিয়েছিলেন, নিশ্চিতভাবেই আল্লা তাকে শনিবার রয়েসয়ে তৈরি করেছিলেন। "মিসেস দাশগুপ্তা"র সেই সিরিয়াল শুরু হলে আমিও আলগোছে দরজা খুলে অবলোকন করতাম একটু আধটু। সুন্দরী মেয়েদের রূপসুষমা উপভোগ করার সময় নাকি আমার চোখের ভাষা পাল্টে যায়, আম্মা এ কারণে আমাকে শান্তিমতো টিভি দেখতে দ্যায় না, খামাখাই ধমকাধমকি করে ভাগিয়ে দ্যায়। টারজানা খান নামে আমাদের দেশের এক সংবাদপাঠিকাও মোনামির মারা চাকুর ক্ষতের এক সেন্টিমিটার পাশেই আরেকটি ভোজালি প্রোথিত করেছিলেন, একটি বিশেষ চ্যানেলে তার সংবাদপাঠ শুরু হলেই আমি টিভির সামনে বসে পড়তাম। আম্মা একদিন এসে আমার গোলগোল চোখ দেখে বললো, এই মেয়েটাকে দেখে তো মনে হয় ওর দুইটা বাচ্চা আছে, তোর রুচি এইরকম কেন? আমি মুগ্ধচোখ না সরিয়ে বলেছিলাম, আমার সাথে বিয়ে হলে চারটা বাচ্চা থাকতো! এর পর থেকে ঐ চ্যানেল ধরলেই আম্মা কোত্থেকে এসে অন্য এক চ্যানেলে অন্য এক প্রোগ্রাম দেখার জন্য হুলুস্থুলু শুরু করে দিতো, আমার রুচির অবক্ষয় ঠ্যাকানোর আপ্রাণ চেষ্টায়। যাই হোক, পশ্চিমবঙ্গের চ্যানেলগুলিতে বেশ মজার কিছু প্রোগ্রাম হতো, নাম মনে নেই, সেগুলো মাঝে মাঝে দেখা হতো। একটি প্রোগ্রাম এবং তার উপস্থাপককে পরিষ্কার মনে আছে, হাঁউমাউখাঁউ, উপস্থাপক মীর। একটা গেইম শো, সেখানে নানান কান্ডকারখানা হয়, গানবাজনা হুল্লোড় হাসাহাসি, আর মীরের উপস্থাপনার ঢংটা খুবই আকর্ষণীয়। নানা কথাবার্তার ফাঁকে সে বিভিন্ন চরিত্রকে অনুকরণ করে দেখায়, জাদুকর পি সি সরকার জুনিয়র, বাপ্পী লাহিড়ি, লালুপ্রসাদ যাদব ... আরো অনেককে। ঐ অনুষ্ঠানে মীরের ভাঁড়ামো বেশ পরিমিত ছিলো, সীমার ব্যাপারটা বেশ চমৎকার সামলেসুমলে চলতো সে। ২. আমাদের আত্মীয়বর্গে পুরুষরা বেশ পুরুষালি, একটা সিংহপুরুষ সিংহপুরুষ ভাব আছে সকলের মধ্যে। ছেলেদের মধ্যে কুসুমকোমল বা ললিত চারু-চারু ভাব দেখলে আমাদের আত্মীয়বর্গের পুরুষরা তো বটেই, মহিলারাও বিরক্ত হন। সেরকম আচরণ কোনো ছেলের মধ্যে দেখলে তার স্বভাবকে বলা হয়ে "মাইগ্যা স্বভাব।" কান্নাকেও তাচ্ছিল্য নিয়ে দেখে সবাই, আমার বাবাকে কোনোদিন কাঁদতে দেখিনি, আমার ভাইয়েরা দুঃখ পেয়ে কাঁদলে সাধারণত আশেপাশে তিনফিট ব্যাসার্ধের মধ্যে যা কিছু আছে ভেঙে ফেলেন, দুই চারজন গিয়ে তাকে পরাস্ত করতে হয়। হযবরল-র ন্যাড়ার মতো "না না, আমায় গাইতে বোলো না" টাইপ মুদ্রা আমরা এই পারিবারিক সংস্কৃতির কারণেই শৈশব থেকে অপছন্দ করতে শিখেছি। এর ভালো মন্দ বিচার করা আমার জন্যে একটু কষ্টকরই বটে। যাদের এই বৈশিষ্ট্য আছে, আমি গায়ে পড়ে তাদের খোঁচাই না, কিন্তু বিরক্তিও চেপে রাখতে পারি না। ঋতুপর্ণ ঘোষকে দেখলে এই কারণেই আমার একটু বিরক্ত লাগতো। তার গুণের কদর করতে আমি পশ্চাদপদ নই, কিন্তু তাকে কথা বলতে দেখলে আর শুনলেই অস্বস্তি লাগে। এই এফিমিনেইসি বা নারীসুলভতা সম্পর্কে সেই পারিবারিক পরোক্ষ শিক্ষার কারণেই একটা অবন্ধুতা মনের ভেতরে তৈরি হয়ে গেছে, তাই ঋতুপর্ণকে টিভিতে দেখলে ভুরু কুঁচকে যায়। বুঝতে পারি, তিনি এমনই, কিন্তু মানতে সময় বা প্রচেষ্টা লাগে। গতকাল অচ্ছ্যুৎ বলাইয়ের বাসায় ঈদ সমাগমে বসে দেখছিলাম ঋতুপর্ণের "অন্তহীন"। এর "যাও পাখি বলো" আর "রাত জাগা তারা" গান দু'টি শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে, নায়িকা রাধিকা আপটেও যাকে বলে আই-ক্যান্ডি বা চোখচুষনি, গোড়া থেকে শেষ পর্যন্ত তাই বসে বসে ঢুলতে ঢুলতে দেখলাম সিনেমাটা। সদলে সিনেমা দেখলে নানারকম মন্তব্য বিনিময় হয়, সবচে "সিরিয়াস" সিনেমাও তার তোড়ে হাস্যরসাত্মক হয়ে ওঠে। ঘরে বসে এই যূথবদ্ধ সিনেমা শেষ পর্যন্ত সিনোমত্ব ছাপিয়ে অধিসিনেমা হয়ে ওঠে এই ফিডব্যাকের চাপে। যেমন এক জায়গায় নায়িকা নিশুতি রাতে চ্যাট করছে নায়কের সাথে, পরস্পরের বাস্তব পরিচয় জানে না তারা, নায়িকা মুখে পেলব সব আদুরে অভিব্যক্তি নিয়ে শুধাচ্ছে নায়ককে, সে হ্যাপিলি ম্যারিড কি না। আমার মনে প্রশ্ন খেললো, হ্যাপিলি ম্যারিড একটা লোক রাতবিরাতে অন্য মেয়ের সাথে চ্যাট করে কি? নায়কের হয়ে আমিই উত্তরটা দিয়ে দিলাম, তুমি কি আমাকে লুল্পুরুষ ভাবছো নাকি? আমাদের হা হা হো হো হি হি তে ঐ রোম্যান্টিক ইন্টারকোর্স ভেসে গেলো, সেইসাথে সিনেমার পরিসীমা ছিঁড়ে-ফেটে ব্যাপারটা যা দাঁড়ালো, সেটাকেই অধিসিনেমা বলছি। যাই হোক, গোয়টিঙেন থেকে আগত দুই ভারতীয় বাঙালি ছাত্র ছিলেন সেই আসরে, তারা কথায় কথায় জানালেন, ঋতুপর্ণ ঘোষ হ্যাজ কাম আউট অব দ্য ক্লোজেট, তিনি নিজেকে গে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। অন্তহীন দেখা শেষ করে ইউটিউবে ঋতুপর্ণ ঘোষ লিখে সার্চ করে দেখি প্রথমেই আসে ঋতুপর্ণ আর মীরের সাক্ষাৎকার। বাকিরা ততক্ষণে আরেকটা সিনেমা দেখার তোড়জোড় করছেন, ঠিক করলাম বাড়ি ফিরে দেখবো নাহয়। বাড়ি ফিরে দেখি, মীর নতুন একটা প্রোগ্রাম শুরু করেছে কোনো একটা চ্যানেলে, তার বিভিন্ন পর্ব ইউটিউবে আপলোড করা আছে। কয়েকটা পর্ব দেখে বুঝলাম, সময়ের সাথে মীরের উপস্থাপন একটু লঘু হয়েছে, আর হাস্যরসের প্রকৃতিও একটু ঠেলছে ভব্যতার পরিধিকে। এবং সেখানেই দেখলাম, মীরের মিমিক্রির তালিকায় ঋতুপর্ণ ঘোষ উঠে এসেছেন। নিচে দু'টো উদাহরণ এমবেড করলাম। ১. . . ২. . . এরপর দেখলাম ঋতুপর্ণের নিজস্ব টক শোতে মীরের সাথে তার আলাপচারিতা। পাঁচপর্বের এই সাক্ষাৎকারটা উপভোগ্য নানা কারণে। একজন এফেম রেডিও জকি থেকে কীভাবে মীর উপস্থাপনায় স্ট্যান্ড আপ কমেডির মিশেল দিয়ে নতুন একটা হাস্যরসের ধাঁচ তৈরির পায়োনিয়ার হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, তা নিয়ে বেশ আগ্রহোদ্দীপক আলাপ আছে। একজন ব্লগারের সাথে একজন রেডিওরাখালের বেশ মিল আছে, দুটি মাধ্যমেই ফিডব্যাকের মাধ্যমে অডিয়েন্সের সাথে সরাসরি যোগাযোগ ঘটে, আবার দুটি মাধ্যমেই কর্তা অডিয়েন্সের চোখের আড়ালে থাকেন। এই যে দৃষ্টির অন্তরালে থাকা দু'টি পক্ষ একজন আরেকজনকে প্রভাবিত করে চলছে, এই ব্যাপারটি আমার জন্যে বেশ আগ্রহজাগানিয়া। বাংলাদেশে এফেম রেডিও একটা তুলনামূলকভাবে নতুন ঘটনা, এবং আমাদের দেশে নিজস্ব ঘরানা তৈরির পরিবর্তে তৈরি সামগ্রী আমদানির মনোবৃত্তি যেহেতু অধিকতর শক্তিশালী, তাই এই মাধ্যমের রেডিওরাখালরাও প্রশিক্ষিত হয়েছেন ভারতীয় প্রশিক্ষকের হাতে, তাই মীরের মতো স্বশিক্ষিত রেডিওরাখাল দেশে এখনও তৈরি হয়নি, সাক্ষাৎকারটি আগ্রহোদ্দীপক সে কারণেও। সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে ঋতুপর্ণ ঘোষ মীরের অনুকরণচর্চা নিয়ে বেশ তীব্র বক্তব্য রেখেছেন, সেটা শুনে দেখার মতো। তার তর্কের ভঙ্গিটা বেশ ধারালো, গোটা সাক্ষাৎকারে মীর নিজেও বোঝেনি, কখন কীভাবে সে ঋতুপর্ণের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে। যদিও দু'জনের সাথেই দ্বিমত পোষণ করার মতো বেশ কিছু জিনিস পেলাম, কিন্তু সব মিলিয়ে সাক্ষাৎকারটি তথ্যবহুল, ভাবনাউদ্রেককারী এবং উপভোগ্য। প্রথম পর্বটা নিচে এমবেড করে দিলাম, বাকি চারটা আপনারা ইউটিউবেই পর পর পেয়ে যাবেন। খেদের সাথে একটা জিনিস মাঝে মাঝেই অনুভব করি, দেশে আমরা যতটা বহির্বিশ্ব দিয়ে প্রভাবিত, ঠিক ততটাই যেন আত্মগুণবিমুখ। অন্যের ছাপ্পা মারা জিনিস ‌আপন করে নিয়ে আমরা যতটা উল্লসিত, ঠিক ততটাই রহিত নিজস্ব ব্র্যান্ডিঙে। আমাদের গজগামিনী তিশমারা নড়তে পারে না, কিন্তু শাকিরাকে অনুকরণের চেষ্টায় এতটুকু অনধ্যবসায়ের পরিচয় দেয় না। আমরা মূলরসটাকে অনুকরণ করতে চাই না, করি উপসর্গ আর প্রান্তিক মুদ্রা-লক্ষণগুলোকে। অথচ আমাদের কি কোনো নিজস্ব ভঙ্গিমা নেই, গ্ল্যামার নেই, আবেদন নেই, যা অন্যের জন্যে অনুকরণীয় হয়ে উঠবে? আছে, আমি নিশ্চিত, কিন্তু আমাদের মধ্যে তা খুঁজে বেছে সামনে তুলে ধরার চেষ্টাটা চোখে পড়ে না। শেষ বিচারে মনে হয় ভোক্তা খোঁজে মৌলিকত্ব, কারণ অনুকৃত পণ্য, হোক সে গান-নাটক-রেডিও-সিনেমা, আবেদন হারায় যখন মূল পণ্যটি পাশাপাশি চলমান ও সুপ্রাপ্য হয়। মূল ঋতুপর্ণ তাই প্রবল আত্মবিশ্বাস আর দম্ভ নিয়ে অনুকারী মীরের মিমিক্রিকে পিষে ফেলতে পারেন।
false
rn
সাহিত্যে যৌনতা এবং অন্যান্য ১। মানবসভ্যতা বা পৃথিবীর প্রাণী জগতে যৌনতা একটা মৌলিক বিষয়। যৌন শব্দটির অর্থ কী ? আভিধানিক অর্থ যোনিসম্বন্ধী । ‘যোনি’ স্ত্রী জননাঙ্গ । মনু তাঁর সংহিতায় বিবাহ বলতে ‘যৌনসম্বন্ধকে’ বুঝিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একসময় যেন হঠাৎ করে ‘হৈমন্তী’ গল্পে শরীরের কথা নিয়ে আসেন, ‘কবে যে তাহার সাদা মনটির উপর একটু রং ধরিল, চোখে একটু ঘোর লাগিল, কবে যে তাহার সমস্ত শরীর ও মন যেন উৎসুক হইয়া উঠিল...’ ব্যস, এই পর্যন্তই। হৈমন্তীর শরীর উৎসুকের অন্য কোনো বিবরণ তিনি দেননি।যৌনতা আমাদের জন্যে একটা সাংঘাতিক সমস্যা হয়ে গেছে, কারণ দেহের এই মূল জৈবিক ক্রিয়াটাকে আমরা একটা ভোগকর্ম বানিয়ে নিয়েছি। তুমি একটা সুন্দরী মেয়ের দিকে তাকালে, যখনই তুমি বলছো যে এটা একটা সুন্দরী মেয়ে, ইতিমধ্যেই তুমি একটা সমস্যা সৃষ্টি করে ফেলেছো─ ‘‘একটা সুন্দরী মেয়ে!’’ তখন শুধু চোখে দেখার চাইতে তার হাত ধরাটা বেশি সুখকর, আরো বেশি সুখকর হলো তাকে আলিঙ্গন করাটা, এমনকি আরো বেশি সুখকর হলো তাকে চুম্বন করাটা, এইরকম। ২। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘ঝিলের ধারে বাড়ি’। সেই চিরন্তন শীর্ষেন্দু, অনাবিল হাসি, মজা আর তার মধ্যেই আবার গা-ছমছম করা জমজমাট রহস্য। এই উপন্যাসে ভূত নেই কিন্তু আছে অনু আর বিলুর মত ভাই-বোনের জুড়ি, আর নবীনের মত একজন সাধারণ কিন্তু দারুণ বুদ্ধিমান নায়ক। আর অবশ্যই গুপ্তধন, যা শেষ পর্যন্ত পাওয়া গেল ঝিলের নিচের মন্দির থেকে।সুনীল-শীর্ষেন্দু-সঞ্জীব-সমরেশ বসু-বিমল কর-সমরেশ মজুমদার-পরবর্তী সময়ে মুগ্ধ হয়েছি বাণী বসু, সুচিত্রা ভট্টাচার্য, হর্ষ দত্ত, সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়, তিলোত্তমা মজুমদারের লেখনীতে। ৩। জিম হকিন্স নামে এক রোমাঞ্চপ্রিয় কিশোর বাস করে সমূদ্র তীরের এক শহরে।সে ও তার মা সেখানে একটি সরাইখানা পরিচালনা করে।একদিন সেই সরাই খানায় এসে উপস্থিত হয় এক বদরাগী মেজাজের ঝগড়াটে ক্যাপ্টেন।লোকটি হঠাৎ মারা গেলে তার একটি সিন্দুক থেকে একটি মানচিত্র পাওয়া যায় যা জিম এবং শহরের কিছু লোককে নিয়ে যায় এক দুঃসাহসিক অভিযানে।যেখানে তারা মোকাবেলা করে জলদস্যু ও বিশ্বাস ঘাতকদের।বলুন আমি কোন উপন্যাসের কথা বলছি এবং লেখক কে? ৪। “মানুষ যে সময়টুকু যাপন করে সেটি জীবন নয়, জীবন হল সেটুকুই যা মানুষ মনে রাখে”- গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের এই কথাগুলো আমার ভেতর এলার্ম ঘড়ির মত বেজে ওঠে প্রতিনিয়তই। জীবনকে একটা গন্ডির ভেতর আটকে রেখে গড়পড়তাভাবে জীবনটাকে পার করে দেয়াটা কোন কাজের কথা নয়। এই বিশ্ব-ভ্রম্মান্ডে দেখার, জানার এবং বোঝার মত এত বিষয় রয়েছে সেগুলোর জন্য আমাদেরকে যে সময়টুকু বেধে দেয়া হয়েছে তা নিতান্তই তুচ্ছ। তাই এই ক্ষুদ্র সময়টাকে কাজে লাগানোটা বাধ্যতামূলক। যারা এই সময়টা কাজে লাগাতে পারেন তারাই আসলে সত্যিকার অর্থে জীবন যাপন করেন। যাপিত জীবন আর জীবন যাপন দুটো সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। ৫। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর দিবারাত্রির কাব্য অনেকেরই পড়া। তারই বিশেষ একটা লাইন পড়ে মনে হয়েছিল - প্রচণ্ড বৃষ্টির এ রকম তুলনা কি করে কেউ ভাবতে পারে? চিন্তাই করতে পারি না!মালতির খুব সরল মনের মেয়ে আনন্দ! আনন্দ সমুদ্রে প্রবল বৃষ্টি দেখে বলেছিল 'কি বৃষ্টি নেমেছে! সমুদ্রটা পর্যন্ত ভিজে যাবে' । যে সমুদ্র সীমাহীন জলের আধার - সেটা ভিজে যাবে !!! ৬। এক হতভাগার জীবনের ঘটনা-দূর্ঘটনার কাহিনী। জা ভালজা চরিত্রটি এক অমর সৃষ্টি লেখকের। এক টুকরো রুটির জন্য তাকে খাটতে হয়েছে ২০ বছরের জেল। বারবার জেল আর পালানোর মধ্যে কেটেছিল তার জীবন।বলুন আমি কোন উপন্যাসের কথা বলছি এবং লেখক কে? প্রতিদিন চায়ের কাপের পাশে বই থাকুক, মনিটরের পাশে থাকুক বই, বিছানায় বালিশের পাশে থাকুক বই, বই থাকুক বাথরুমে, জ্যামের বাসে, কিবা যাত্রা পথে। ইলেকট্রিক বিল অথবা ব্যাংকে লম্বা লাইনে দাড়িয়ে আপনার হাতে একটা বই থাকতেই পারে। সময়কে উপভোগ করতে চান বা সময় থেকে পালিয়ে থাকতে চান বই হোক শ্রেষ্ঠ সঙ্গী।
false
hm
ঈস্টার দ্বীপ ০২ ঈস্টার দ্বীপে আদপেই কত লোক ছিলো? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা বেশ জরুরি, যদি ঈস্টারের অলিপিবদ্ধ ইতিহাস সম্পর্কে কোন কিছু আঁচ করতে হয়। যে পদ্ধতিটি অনুসৃত হয়েছে তা হচ্ছে ঈস্টারে খুঁজে পাওয়া বাড়িগুলির পাথরের ভিত গুণে তা থেকে অনুমান করা। এ অনুমানে স্বতসিদ্ধ হিসেবে ধরা হয়েছে প্রতি বাড়িতে ৫ থেকে ১৫ জন বাসিন্দা, আর মোট বাড়ির তিন ভাগের এক ভাগ একই সময়ে মানুষের অবস্থান। এ পদ্ধতিতে দেখা গেছে, ঈস্টারের জনসংখ্যা ছিলো ৬ হাজার থেকে ৩০ হাজারের মধ্যে, যা কিনা বর্গমাইল পিছু ৯০ থেকে ৪৫০ জন মানুষের বসবাসের প্রতি ইঙ্গিত করে (বাংলাদেশে বর্গমাইল পিছু বাস করে প্রায় দু'হাজার ছ'শো জন মানুষ)। ঈস্টারের কিছু কিছু জায়গা অতটা ঊর্বর ছিলো না, কাজেই জনসংখ্যার ঘনত্বের বিন্যাস স্বাভাবিকভাবেই হয়তো আরেকটু বেশি ছিলো অন্যান্য জায়গায়, তবে প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দ্বীপের বিরাট অংশই চাষাবাদের কাজে ব্যবহৃত হয়েছিলো। ঈস্টারের প্রথম শুমারি (২,০০০ অধিবাসী) হয়েছিলো ১৮৬৪ সালে, যখন খ্রিষ্টান মিশনারিরা প্রথম সেখানে বসতি গাড়েন। এর আগের বছরই ঈস্টারে মারাত্মক এক গুটি বসন্তের মড়কে দ্বীপের অধিকাংশ বাসিন্দাই মারা গিয়েছিলো। তারও আগে পেরুর এক ঠগী জাহাজ ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রির জন্য ধরে নিয়ে গিয়েছিলো দেড় হাজার আদিবাসীকে, তারও আগে ১৮৩৬ সালে দুই দফা গুটিবসন্তের মড়ক দেখা দিয়েছিলো, আর সপ্তদশ শতাব্দীতে ঈস্টারের ইতিহাসে শুরু হয় ব্যাপক জনসংখ্যাধ্বস। এত কিছুর পরও যদি ১৮৬৪ সালে ২ হাজার মানুষ দ্বীপে থাকে, তাহলে ইতিহাসে এর সর্বোচ্চ জনসংখ্যা ১৫ হাজার বা তারচেয়ে বেশি হওয়া স্বাভাবিক। অন্তত প্রত্নতাত্ত্বিক ক্লাউদিও ক্রিস্তিনো আর এডমুন্ডো এডওয়ার্ডস এমনই মনে করেন। এত মানুষের দ্বীপে সংস্থান করতে গেলে এর কৃষি কার্যক্রম যে অনেক তীব্র হবে, তাতে সন্দেহ নেই। এর প্রমাণ মেলে বিভিন্ন জায়গায় ঝর্ণার ওপর পাথরের তৈরি বাঁধ আর সেচের খাত দেখে। আর একটি হচ্ছে মুরগির বিশাল ঘরগুলি, যেগুলো পাথরের তৈরি, ২০ ফিট লম্বা, ৬ ফিট উঁচু আর ১০ ফিট চওড়া (এর চেয়ে বড়ও কিছু রয়েছে)। এর সাথে রয়েছে পাথরের দেয়াল দিয়ে ঘেরা উঠোন। মানুষের ঘর ভেঙেচুরে পড়ে গেছে, কিন্তু ঈস্টারের এই দানবীয় মুরগির ঘরগুলি রয়ে গেছে, যার সংখ্যা ১,২৩৩। এ ছাড়াও আছে আগ্নেয় পাথরে তৈরি বিভিন্ন দেয়াল, যেগুলি ব্যবহার করা হতো ঈস্টারের তীব্র বাতাস থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য। এ ছাড়া মাটি খুঁড়েও কিছু কিছু "গর্তবাগান" তৈরি করা হয়েছে কলা চাষের জন্য। এ ছাড়াও রয়েছে একেবারেই অভিনব কিছু উদাহরণ, যেমন জমিতে পাথর বিছিয়ে বা পুঁতে বাতাসের হাত থেকে শস্যকে রক্ষার চেষ্টা। প্রত্নতাত্ত্বিকরা পলিনেশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের চাষাবাদের সাথে তুলনা করে ঈস্টারের এই বিষয়টিতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, কারণ এর জন্যে লক্ষ লক্ষ পাথর বয়ে আনা বা খোঁড়া হয়েছে। কেন ঈস্টারের চাষীরা এই তুমুল খাটনি খাটতে গেলো? ঈস্টার শুষ্ক, ঠান্ডা, আর তীব্র বাতাসের অঞ্চল। পৃথিবীর অন্যান্য শুষ্ক আবহাওয়ার অঞ্চলেও পাথরের সাহায্য শস্য রক্ষার এই পদ্ধতিটি পৃথকভাবে আবিষ্কৃত এবং অনুসৃত হয়েছে, উদাহরণ ইজরায়েল, দক্ষিণপশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, পেরু, নিউজিল্যান্ড। পাথর মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে, তা না হলে হয়তো রোদ আর বাতাসে মাটির পানি বাষ্পীভূত হয়ে যেতো। দিনে রোদের তাপ শুষে রাতে তা মাটিতে ছড়িয়ে দেয় পাথর, কাজেই এভাবে মাটির তাপমাত্রাও কমবেশি একই রকম থাকে। তাছাড়া গাঢ় রঙের পাথর হালকা রঙের মাটিতে বেশি তাপ শোষণ করে তাপের সঞ্চয় করে, আর ধীরগতিতে খনিজ যোগান দেয় মাটিতে। এসব ফ্যাক্টর নিঃসন্দেহে ফসলের ফলন বাড়ায়, যেমনটা দেখা গেছে কৃষি গবেষণায়। প্রত্নতাত্ত্বিক ক্রিস স্টিভেনসন তাঁর গবেষণায় বলেছেন, ঈস্টারের আদিবাসীরা প্রথম ৫০০ বছর সৈকতসংলগ্ন নিচু এলাকাতেই বাস করতো, সম্ভবত সামুদ্রিক খাবারের যোগানের জন্যেই। আনুমানিক ১৩০০ খ্রিষ্টাব্দের পর দ্বীপের ভেতরের দিকে উঁচু ভূমিতে চাষাবাদের নমুনা পাওয়া যায়, যেখানে বৃষ্টিপাত বেশি, কিন্তু তাপমাত্রা কম। ঈস্টারের কেন্দ্রসংলগ্ন উঁচু ভূমির প্রায় সবটুকুই পাথুরে ক্ষেত। লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, সেখানে কোন সাধারণ মানুষের বাড়িঘরের নমুনা নেই, কোন মুরগির ঘর নেই, কয়েকটা চুলো আর ছোট ঘর বাদে যা আছে সবই অভিজাতদের বাড়ি, অনেকটা আমাদের দেশে চা-বাগানের মতো। ধারণা করা হয়, উঁচু এলাকায় ম্যানেজার গোছের কেষ্টুবিষ্টুরা বাস করতো, পাথুরে ক্ষেতে চাষবাস তদারক করার জন্য, আর সৈকত সংলগ্ন এলাকা থেকে চাষীরা সেখানে কাজ করে আবার ফিরে যেতো। সৈকত থেকে উঁচু ভূমির দিকে পাঁচ মিটার চওড়া পাথরে বাঁধানো রাস্তাগুলি এই অনুমানকে সমর্থন করে। পলিনেশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের মতোই ঈস্টারে দুই কিসিমের মানুষের বাসস্থানের নিদর্শন পাওয়া যায়। সর্দার আর অভিজাত লোকজনের বাড়ি, যাকে বলা হয় হারে পায়েঙ্গা, দেখতে অনেকটা উল্টানো ক্যানোর মতো, ৪০ ফিট লম্বা, ১০ ফিট চওড়া, যার মেঝেগুলি নিখুঁতভাবে কাটা আর পালিশ করা ব্যাসল্টের তৈরি, ছাদ আর দেয়াল খড়ের। ঈস্টারের দু'শো গজ চওড়া সৈকতের বিভিন্ন জায়গায় এর মূর্তিগুলি (যাকে বলা হয় মোয়াই) আর তার প্ল্যাটফর্ম (আহু) ছাড়া আছে কেবল ৬ থেকে ১০ টা করে হারে পায়েঙ্গা। অন্যদিকে সাধারণ লোকজন বাস করতো সৈকত থেকে দূরে, সেখানে তাদের সাধারণ ঘর, মুরগির খোঁয়াড়, ক্ষেত, বাগান আর ময়লা ফেলার জায়গা বাদে বিলাসিতার আর কোন নমুনা নেই। ঈস্টারের লোকায়ত গল্প আর প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা, দুটোতেই দেখা গেছে, দ্বীপটি ১১ বা ১২টি বিভিন্ন গোত্রের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে বিভক্ত ছিলো, অনেকটা পিৎজার বারোটা টুকরোর মতো, সৈকতের দিকে চওড়া, কেন্দ্রের দিকে সরু। প্রতিটি অঞ্চলের ছিলো নিজস্ব সর্দার আর মূর্তি। ধর্মীয় আচারঅনুষ্ঠানে এক গোত্র আরেক গোত্রের সাথে সবসময়ই প্রতিযোগিতায় মেতে থাকতো, যা কখনো কখনো রূপ নিতো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। পলিনেশিয়ার অন্যান্য দ্বীপেও এই একই কাহিনী পুনরাবৃত্ত হয়েছে বারবার। তবে ঈস্টারের ক্ষেত্রে অনুমান করা হয়, এই বারোটি গোত্র ধর্মীয়, অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একজন কেন্দ্রীয় সর্দারের অধীনে ছিলো। কোত্থেকে এলো এই ধারণা? ঈস্টারের সম্পদগুলি সুষমভাবে এই বারোটি অঞ্চলে ছড়ানো ছিলো না। যেমন, টোঙ্গারিকি এলাকায় ছিলো রানো রারাকু জ্বালামুখ, মূর্তি খোদাইয়ের জন্যে সেরা পাথরের একমাত্র উৎস। মূর্তির মাথায় চাপানো লাল টুপিগুলির পাথর এসেছে হাঙ্গা পৌকুরা অঞ্চলের খনি থেকে। ভিনাপু আর হাঙ্গা পৌকুরা অঞ্চলে ছিলো অবসিডিয়ানের খনি, ধারালো অস্ত্র বানানোর একমাত্র পাথর। ভিনাপু আর টোঙ্গারিকিতে ছিলো সর্দারদের রাজকুটির হারে পায়েঙ্গা বানানোর ব্যাসল্টের খনি। উত্তরে আনাকেনায় ছিলো দু'টি সেরা সৈকত, তার পাশে হেকি'ই তে ছিলো তৃতীয়টি। কিন্তু এরা আবার রুগ্ন ছিলো চাষাবাদে, কারণ ভালো চাষের জমি ছিলো সব দক্ষিণ আর পশ্চিমে। পাখির আড্ডা ছিলো সব ভিনাপুতে। অন্যান্য সম্পদ, যেমন কাঠ, প্রবাল আর কাগুজে মালবেরি (যার ছাল পিটিয়ে কাপড় বানানো হতো), এগুলিও ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো। বারোটার মধ্যে মোটে পাঁচটা অঞ্চলে পাথুরে ক্ষেতের জমি ছিলো। গোত্রগত সংহতির অন্যতম প্রমাণ হচ্ছে, টোঙ্গারিকি আর হাঙ্গা পৌকুরার পাথর বাকি সব অঞ্চলের মূর্তিতেই পাওয়া গেছে। একই ভাবে ছড়িয়ে আছে অবসিডিয়ান, মাছ আর অন্যান্য সম্পদ। এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় সম্পদ স্থানান্তরের জন্য তৈরি রাস্তা নিঃসন্দেহে আরো কিছু অঞ্চলের ভেতর দিয়ে গেছে, এবং কোন কিছু সে রাস্তা দিয়ে অতিক্রম করার জন্যে সে অঞ্চলের গোত্রের সম্মতি অবশ্যই প্রয়োজন। একটি কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা না থাকলে এতো সহজে এই সম্পদের বিন্যাস ঘটতো না। এত কিছুর পর ঈস্টারের আসল জিনিসগুলির কথা বলা শুরু করাই উচিত। এর দানবীয় মূর্তি আর তার প্ল্যাটফর্ম। [চলবে আজ আরো কিছুদূর]
false
hm
গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও অজ্ঞান পার্টি রহস্য এক গোয়েন্দা ঝাকানাকা চোখ গরম করে বললেন, "এবারও কি সেবারের মতো দুই লম্বরি কেস নিয়ে হাজির হলেন নাকি?" পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ডাকসাইটে দারোগা কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারি আধ হাত জিভ কেটে বললেন, "আর লজ্জা দেবেন না স্যার! এবার একদম পরীক্ষানিরীক্ষা করিয়ে তবে এসেছি। এই দেখুন আমাদের ফরেনসিক এক্সপার্ট কেমিক্যাল আলির রিপোর্ট।" ঝাকানাকা একগাল মুড়িমাখা চিবাতে চিবাতে বললেন, "আপনাদের সেই বুড়ো ভাম কেমিক্যাল আলি? যে কি না পটাশ পারম্যাঙ্গানেট আর পানের পিকের মধ্যে তফাৎ করতে পারে না? তাকে দিয়ে রিপোর্ট লিখিয়ে এসেছেন আমাকে ভোলাতে? ওসব কাল্পনিক গপ্পো নিয়ে বরং সচলায়তনে লেখালেখি করতে বলুন আপনাদের ফরেনফেরত ফরেনসিক এক্সপার্টকে। আমি এসব নাটকনভেল পড়ি না! এর আগেও আপনারা কেমিক্যাল আলির রিপোর্টসহই হাজির হয়েছিলেন। কোথায় কেমিক্যাল টেস্ট করার কথা, তা না করে ব্যাটা প্যাথলজির টেস্ট রিপোর্ট গুঁজে দিয়েছিলো ফাইলে! তাতে লেখা, প্রেগন্যান্সি পজিটিভ!" কিংকু চৌধারি আবারও জিভ কেটে বললেন, "কিন্তু স্যার, অজ্ঞান পার্টির সেই মেয়েটা তো আসলেই প্রেগন্যান্ট ছিলো!" ঝাকানাকা কটমট করে তাকিয়ে বাঘা গলায় বললেন, "বটে? আবারও ওদের অজ্ঞান পার্টি বলে চালিয়ে দিতে চাইছেন?" কিংকু চৌধারি লজ্জিত হেসে বললেন, "এই ইনফরমারগুলিকে নিয়ে আর পারি না স্যার। এরা সব কথা ভুলভাল করে এনে আমাদের কানে তোলে ... কী করবো বলুন, বড় কর্তারা রোজ ফোন করে ধমকায়। সেদিন নাকি নৌবাহিনীপ্রধানের তালুইকে কী একটা খাইয়ে বেহুঁশ করে তাঁর সিল্কের পায়জামা রুট করে নিয়ে গেছে! সেই পায়জামা নাকি আবার উজবেকিস্তান থেকে কেনা। এখন বলুন, এতো হাই প্রোফাইল লোকজনের লো প্রোফাইলের জিনিস যদি লুটপাট হয়, তাহলে তো আমরা একটু দৌড়ের ওপর থাকবোই, নাকি? একটু ভুলভাল তো হবেই, নাকি? এরারে হুমানুম এস্ট, নাকি?" ঝাকানাকা গরম কন্ঠে বলেন, "ল্যাটিন কপচাবেন না শুধুমুধু! একগাদা হাফ ন্যাংটো ছেলেমেয়ে এনে হাজির করলেন একতিরিশ তারিখ মাঝরাত্তিরে। বললেন এরা অজ্ঞান পার্টির লোক। একেবারে হাত খুলে পেঁদিয়েছি সব ক'টাকে। মানস সরোবরের এক চিপায় সেই ঝালাই লামার গুম্ফায় বসে হপ্তার পর হপ্তা গুহ্য সাধনা করে শেখা আমার আড়াই প্যাঁচের গাঁট্টা। জানেন, কোরবানির গরুও সে গাঁট্টা খেলে ঘুমিয়ে পড়ে? ... সব ক'টা পটাপট বেহুঁশ হয়ে গেলো। কেবল একটা মেয়ে সেই আড়ং ধোলাই খেয়েও টনকো রইলো ...।" কিংকু চৌধারি বললেন, "ঐ মেয়েটাই স্যার, প্রেগন্যান্ট টেস্টে পজিটিভ। ইয়াবা খেয়ে জেগেছিলো, তাই আপনার মার খেয়েও বেহুঁশ হয়নি ...।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম! আর জেগে ছিলো বলেই তো জানতে পারলাম, যে তারা মোটেও অজ্ঞান পার্টি নয়, বরং পার্টি বলতে অজ্ঞান! একতিরিশ তারিখ রাতে একটু কাপড় জামা কম পরে নাচানাচি করছিলো একটা রেস্তোরাঁয়। আপনারা অকারণে বেরসিকের মতো হানা দিয়ে তাদের গেরেফতার করে হাজতে ঢুকিয়েছেন!" কিংকু চৌধারি হাসলেন একগাল। "আর বলবেন না স্যার, এই ইনফরমারগুলো ...। আর রেইড করার পর তো দেখি স্যার ফ্লোরে, সোফায়, টয়লেটে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে আরো অনেক ছোঁড়াছুঁড়ি। কনফিউশন হওয়া তো স্বাভাবিক ...।" ঝাকানাকা চোখ পাকিয়ে বললেন, "আর তাই সেইসব হিজল তমালের ছেলেমেয়েদের ধরে আনলেন আমার হাতে প্যাঁদানোর জন্যে? ওফ, পরদিন সকালে মন্ত্রীমিনিস্টার, বড় বড় চোর বাটপার, উকিল জেনারেলদের ফোনের পর ফোন! সবাই আবঝাপ ঝাড়ি দ্যায়, বলে দেখে নেবে। শেষমেশ ত্যক্ত হয়ে গুলিস্তানের সেই কানা ফকিরটার কাছে শেখা গালি কিছু বেছে দেবার পর ফোনের জ্বালা বন্ধ হলো!" কিংকু চৌধারি বললেন, "না স্যার! এবারের কেস একদম সলিড। খেটে খাওয়া প্রোলেতারিয়েতমুখো কয়েকটা লোক। এদের আপনি প্রাণ ভরে প্যাঁদালেও কেউ ফোনটোন করবে না। বড়জোর পত্রিকায় আপনাকে গালাগালি করা হতে পারে।" ঝাকানাকা বললেন, "বটে? হুমমম ... বলুন কেসটা কী!" কিংকু চৌধারি এক মুঠো মুড়ি হাতে নিয়ে বলেন, "কেস অতি বিচিত্র স্যার, অতি বিচিত্র। বড়ই জটিল রহস্যের ঘোরপ্যাঁচ ...।" ঝাকানাকা বললেন, "আপনার মুড়ি আরো খেতে চাইলে বানিয়ে দেয়া হবে, কিন্তু অযথা মুড়ির লোভে কাহিনী ফেনিয়ে তুলবেন না। কাজের কথায় আসুন।" কিংকু চৌধারি একটু লজ্জিত হেঁ হেঁ করেন। বলেন, "হেঁ হেঁ হেঁ, আসলেই মুড়িমাখাটা খুব স্বাদু! মনে হয় পেট ভরে খাই ...। যাকগে, চট্টগ্রামে বদরু খাঁর ঘাঁটিতে রেইড করা হয়েছিলো, শুনেছিলেন বোধহয়। তো, ওখানে এক সাংঘাতিক জিনিস মিলেছে। ডলার ছাপানোর প্লেট!" ঝাকানাকা বললেন, "হুমম। বদরু খাঁ আন্তর্জাতিক ডাকু। মাঝে মাঝেই তার ডলারের প্রয়োজন পড়ে। এজন্যে সে বেশি দিগদারির মধ্যে দিয়ে যেতে চায় না, নিজের ডলার নিজেই ছাপিয়ে নেয়।" কিংকু চৌধারি বললেন, "আপনি জানেন দেখছি!" ঝাকানাকা বললেন, "হুমম! জানি না মানে, এর আগে তো এমন একটা কেস আমিই সামাল দিলাম! সেবার বদরু জাল টাকার প্লেট নিয়ে ধরা পড়েছিলো ... [দ্রষ্টব্য ১]।" কিংকু চৌধারি বললেন, "হুমম, তাই তো! ভুলেই গিয়েছিলাম। তো, বদরু খাঁকে এবারও পাকড়াও করা যায়নি স্যার, সে চোখে ধূলো দিয়ে পালিয়েছে। এই জাল ডলারের প্লেট বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে আসা হচ্ছিলো ঢাকায়। সাধারণ পুলিশের ওপর ভরসা নেই, তাই বিশেষ শাখার একজন চৌকস অফিসার ছদ্মবেশে নিজের শরীরে লুকিয়ে প্লেট দুটো নিয়ে ট্রেনে চড়ে ঢাকায় ফিরছিলেন।" ঝাকানাকা বললেন, "পথে কে বা কাহারা তাঁকে অজ্ঞান করে প্লেট দু'টো নিয়ে ভেগেছে?" কিংকু চৌধারি উজ্জ্বল মুখে বললেন, "এ-ই হলো স্যার আপনাকে কোন কিছু বলতে যাবার জ্বালা, মাঝপথেই সব আঁচ করে ফ্যালেন ...।" ঝাকানাকা মৃদু অট্টহাসি দ্যান। বলেন, "ঠা ঠা ঠা ..।" কিংকু চৌধারি বলেন, "আমাদের গোয়েন্দা শাখার রিপোর্ট বলছে, এ অতি উঁচু দরের অজ্ঞান পার্টির কাজ। সাধারণ অজ্ঞান পার্টি নয়, রীতিমতো ক্যাটেগরি ফোর অজ্ঞান পার্টি এই প্লেট সরিয়েছে। এরকম অজ্ঞান পার্টি আছে কেবল দুটো। দুটোই ওয়ান ম্যান পার্টি।" ঝাকানাকা বললেন, "কারা এরা?" কিংকু চৌধারি বললেন, "একজনের আসল নাম জানা যায়নি, লাইনের লোকেরা তাকে শ্রীচৈতন্য বলে ডাকে। এ নাকি বহুদিন ধরে লোকজনকে অচৈতন্য করে লুটপাট করেই চলেছে। আজ অবধি এর টিকিটিরও হদিশ পায়নি পুলিশ।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমম! আর দ্বিতীয় জন?" কিংকু চৌধারি বলেন, "দ্বিতীয় জন মহিলা। এর নাম জানা গেছে, ইসমত জঙ্গ বেহুঁশিয়া। রীতিমতো খানদানি ঘরের ডাকাত। এরা নাকি সেই মোগল আমল থেকে লোকজনকে বেহুঁশ করে ছিনতাই করে আসছে, তাই পারিবারিক উপাধি বেহুঁশিয়া।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম! তো, কেন আপনাদের মনে হচ্ছে এটা এদেরই কারো কাজ?" কিংকু চৌধারি বললেন, "লুটের ধরন দেখে স্যার! হুঁশিয়ার খানের হাতে দামী ঘড়ি ছিলো, পকেটে দামী মোবাইল ছিলো, হাতে দামী আংটি ছিলো, চোখে দামী সানগ্লাস ছিলো, কিন্তু কিছুই খোয়া যায়নি। খোয়া গেছে শুধু প্লেট দুটো!" ঝাকানাকা বললেন, "হুঁশিয়ার খান? আপনাদের বিশেষ শাখার অফিসারের নাম নাকি? হুঁহ ... তা এটা ক্যামন ছদ্মবেশ নিয়েছিলো সেই ব্যাটাছেলে? অ্যাতো দামী জামাকাপড় পড়ে তার ট্রেনে ওঠার দরকার কী ছিলো? কিংকু চৌধারি থতমত খেয়ে বললেন, "ইয়ে ... মানে হয়েছে কী, পুলিশের লোক তো নিশ্চয়ই এমন দামী জামাকাপড় পড়ে সেজেগুজে ট্রেনে চড়বে না ... তাই সম্ভাব্য শত্রুকে একটা ভুল ধারণা দেয়ার চেষ্টা, যে ও আসলে পুলিশ নয় ...।" ঝাকানাকা বললেন, "তা ঐ ঘড়ি, মোবাইল, সানগ্লাস, আংটি, ওগুলি কি আপনাদের ছদ্মবেশ ডিপো থেকে রিকুইজিশন দিয়ে আনা, নাকি ওগুলি হুঁশিয়ার খানের নিজের জিনিস?" কিংকু চৌধারি বললেন, "ছদ্মবেশের আবার ডিপো! না স্যার, আমাদের নিজেদের গাঁট থেকেই ছদ্মবেশ যোগাড় করতে হয়।" ঝাকানাকা বললেন, "তা হুঁশিয়ার খান অ্যাতো দামী জিনিসপাতি কেনার টাকা পেলো কোত্থেকে? ঘুষটুষ খায় নাকি?" কিংকু চৌধারি মনমরা হয়ে বলেন, "তা তো বলতে পারবো না স্যার ...।" ঝাকানাকা বললেন, "বুঝেছি। সম্ভাব্য আসামীর তালিকায় এক নাম্বারে তাহলে হুঁশিয়ার খান নিজে। তারপর? কখন কিভাবে কোথায় আপনারা তার বেহুঁশ বডি খুঁজে পেলেন?" কিংকু চৌধারি বললেন, "ভোরবেলা স্যার কন্ট্রোল রুমে একটা ফোন আসে। এক লোক নাকি ফোন করে বলেছে, সাগরিকা ট্রেনের অমুক কামরায় ইন্সপেক্টর হুঁশিয়ার খান বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছেন।" ঝাকানাকা বললেন, "লোক? হুমম!" কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি। আপনি কি স্যার শ্রীচৈতন্যকে সন্দেহ করছেন?" ঝাকানাকা বললেন, "আমি কি তা-ই বললাম? লোকটা কোন নাম্বার থেকে ফোন করেছিলো?" কিংকু চৌধারি বললেন, "হুঁশিয়ার খানের মোবাইল দিয়েই স্যার!" ঝাকানাকা বললেন, "তারপর সে মোবাইল সে আবার ফেলে রেখে গেছে?" কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি স্যার, তবে সিমটা খুলে নিয়ে গেছে।" ঝাকানাকা বললেন, "আপনারা সে ফোনের ওপর আঙুলের ছাপ খুঁজেছেন?" কিংকু চৌধারি বললেন, "খুঁজেছি স্যার, কিন্তু তাতে হুঁশিয়ার খান ছাড়া অন্য কারো হাতের ছাপ পাওয়া যায়নি!" ঝাকানাকা বললেন, "হুমম! হুঁশিয়ার খানের চেয়ে বেশি হুঁশিয়ার তো দেখছি এই অজ্ঞান পার্টির লোকেরাই! এদের ধরে চাকরি দিন পুলিশে। আর হুঁশিয়ারকে ধরে আচ্ছা করে জুতিয়ে বার করে দিন পুলিশ থেকে। ব্যাটা ফুলবাবু।" কিংকু চৌধারি খুশির হাসি হাসেন। ঝাকানাকা বলেন, "তো, এ-ই আপনার কেস?" কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি স্যার। ওহ, হ্যাঁ, আরো দু'জন অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলো হুঁশিয়ার খানের কামরায়!" ঝাকানাকা একমুঠো মুড়ি মুখে পুরতে গিয়েও থেমে গেলেন। একটি ভুরু উত্তোলন করে বললেন, "বলেন কী?" কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি স্যার। তিন তিনজন অজ্ঞান ভিক্টিম!" ঝাকানাকা বললেন, "কারা এরা?" কিংকু চৌধারি বললেন, "বাকি দুইজন লোকের নাম এখনো জানা যাচ্ছে না স্যার। তিনজনই এখন পর্যন্ত অজ্ঞান। হাসপাতালে আছে। ডাক্তার বলেছেন আজ সন্ধ্যের দিকে জ্ঞান ফিরলেও ফিরতে পারে।" ঝাকানাকা বললেন, "ট্রেনের ঐ কামরা সার্চ করেছেন তো? যা যা আলামত পাওয়া গেছে সব জব্দ করেছেন?" কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি স্যার। এই যে লিস্ট।" ঝাকানাকা লিস্টের ওপর চোখ বুলিয়ে মুড়ি চিবাতে চিবাতে বলেন, "উত্তম! অতি উত্তম! এবার কিছু টেস্ট করতে দিই, দাঁড়ান। আজ রাতেই টেস্টগুলি সেরে ফেলুন। যদি ব্যাটাদের কাল জ্ঞান ফেরে, তাহলে আমরা এক ফাঁকে গিয়ে তিনটেকেই আচ্ছা করে জেরা করে আসবো।" কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি স্যার! দুই একগাদা দলিলপত্র ঝাকানাকার দিকে এগিয়ে দিয়ে কিংকু চৌধারি বললেন, "গতকাল সন্ধ্যের দিকে সবার হুঁশ ফিরেছে স্যার। টেস্টগুলি করা হয়ে গেছে গতকাল রাতের মধ্যেই।" ঝাকানাকা একটা হাই তুলে বললেন, "এক এক করে সবার জেরা করি তবে। একটা মোটা দেখে রুলার দিন আমাকে। বলা যায় না, প্যাঁদাতে হতে পারে।" কিংকু চৌধারি করুণ গলায় বললেন, "দুইদিন ধরে অজ্ঞান ছিলো স্যার। দুবলা শরীরে আপনার মার কি সইবে?" ঝাকানাকা কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, "তাহলে চিকন দেখে একটা রুলার নিয়ে আসুন। আর একটা ছালা। পিঠে ছালা রেখে প্যাঁদালে বোধহয় একটু কম লাগবে ধকলটা।" কিংকু চৌধারি হাঁক পেড়ে ডাকলেন কনস্টেবলকে। "প্রথমে কাকে ডাকবো স্যার? মকবুল মনসবদার নাকি মন্টু লিওনার্দোকে?" ঝাকানাকা বিরসমুখে বললেন, "এরা কারা?" কিংকু চৌধারি কনস্টেবলকে রুলার আর ছালা আনতে বলে ফিরলেন ঝাকানাকার দিকে। "এরা বাকি দুই বেহুঁশ আদমি স্যার। পরিচয় জানা গেছে গতকাল।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম! সবার আগে হুঁশিয়ার খানকে ডাকুন।" হুঁশিয়ার খান একটু পরে টলতে টলতে এসে হাজির হলো ঘরের ভেতর। ঝাকানাকা গম্ভীর গলায় বললেন, "আপনিই হুঁশিয়ার?" হুঁশিয়ার খান ছিপছিপে গড়নের লোক, ভ্যাবাচ্যাকা ভাবের সাথে দু'তিনদিনের না কামানো দাড়ি মুখে। সে ধরা গলায় বললো, "জ্বি স্যার।" ঝাকানাকা বললেন, "নামেই হুঁশিয়ার, কামে তো হুঁশ-না-ওয়ালা! কী হয়েছিলো বলুন দেখি। ঠিকমতো বলবেন। উল্টোপাল্টা তথ্য দিলে প্রথমে প্যাঁদাবো, পরে ফাঁসিয়ে দিয়ে জেলের ঝোল খাওয়াবো। আপনার আগে অনেক বেয়াড়া বদমায়েশ পুলিশকে আমি টাইট দিয়েছি!" হুঁশিয়ার খান বিষন্ন মুখে বলে, "খুবই বিচিত্র কাহিনী স্যার। ট্রেনে চড়ে ফিরছিলাম। কামরায় আমার সাথে আরো তিনজন ছিলো।" ঝাকানাকা সোজা হয়ে বসে বললেন, "আরো তিনজন? দু'জন নয়? তিনজন?" হুঁশিয়ার খান বললো, "জ্বি স্যার, তিনজন। মকবুল মনসবদার, মন্টু লিওনার্দো আর মিল্টন টেকনাফি।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমম! তারপর?" হুঁশিয়ার খান বললো, "গল্পগুজব করতে করতে যাচ্ছিলাম স্যার চারজন মিলে। হঠাৎ কামরার বাতি নিভে গেলো। এরপর কে যেন আমার নাকের ওপর একটা ভেজা কাপড় চেপে ধরলো, তাতে একটা কড়া মিষ্টি গন্ধ। তারপর স্যার আর কিছু মনে নেই।" ঝাকানাকা সহৃদয় কণ্ঠে বললেন, "আপসোস! তা, অজ্ঞান হওয়ার আগ পর্যন্ত যা যা ঘটেছিলো সেসব মনে আছে নাকি ভুলে গেছেন?" আসনবিন্যাস: ট্রেনের কামরায় যেভাবে বসেছিলো চার পাজি হুঁশিয়ার খান মনমরা হয়ে বলে, "মনে আছে স্যার। ভুলি নাই।" ঝাকানাকা বলেন, "বেশ বেশ। তা কে কোথায় বসেছিলেন কামরার ভেতর?" হুঁশিয়ার খান একটা প্যাডে কলম দিয়ে এঁকে দেখায়। জানালার পাশে সে আর মন্টু লিওনার্দো। তার পাশে বসেছিলো মকবুল মনসবদার, আর মন্টুর পাশে মিল্টন টেকনাফি। ঝাকানাকা মনোযোগ দিয়ে দেখেন নকশাটা। "বটে? হুমমম! তা আপনাকে অন্ধকারের মধ্যে এ তিনজনের মধ্যে যে কোন একজনই নাকেমুখে ভেজা কাপড় গুঁজে দিয়ে অজ্ঞান করে ফেলতে পারে। নাকি?" হুঁশিয়ার খান মাথা ঝাঁকায়। "এদের মধ্যে কাউকে সন্দেহ হয়?" ঝাকানাকা মোলায়েম কণ্ঠে জানতে চান। হুঁশিয়ার খান খানিক ভেবে বলে, "তিনজনই যেন স্যার ... কেমন কেমন!" ঝাকানাকা বললেন, "তিনজন মিলেই অজ্ঞান করেছিলো আপনাকে, তা-ই বলছেন?" হুঁশিয়ার খান বললো, "না স্যার, মনে হয় ওটা একজনেরই কাজ ছিলো। আর এতো চট করে অজ্ঞান হয়ে গেলাম যে বেশি কিছু ঠাহর করতে পারিনি।" ঝাকানাকা বললেন, "বাকি তিনজনের সম্পর্কে বলুন। তারা কে কী করে, দেখতে কেমন, কী করছিলো?" হুঁশিয়ার খান খানিক ভেবে বললো, "মন্টু লিওনার্দো হচ্ছে কবি। নিয়মিত কবিতা লেখে। গাঁজা খেলে নাকি কবিতা বেশ খেলে, বেশ খোলে মাথায়, বলছিলো সে। হ্যাংলা, মুখে মোচদাড়ি আছে, জিন্সের প্যান্ট, ফতুয়া আর লেজেহোমো শেরশাদের মতো স্কার্ফ পরা ছিলো গলায়।" কিংকু চৌধারি নোট করেন ঘ্যাঁসঘ্যাঁস করে। "আর মকবুল মনসবদার ব্যবসায়ী। আদার ব্যবসা করে বলছিলো। চট্টগ্রাম গিয়েছিলো কী একটা জাহাজের খবর নিতে। মাথায় টুপি, পাঞ্জাবি আর পায়জামা পরা ছিলো। পান খেয়ে বার বার উঠে জানালা দিয়ে পিক ফেলছিলো।" কিংকু চৌধারি নোট করে যান। "আর এই মিল্টন টেকনাফি লোকটা স্যার বড়ই সন্দেহজনক। কী করে জিজ্ঞেস করলে বলে না, খালি হাসে। অনেক লম্বা, একটা জ্যাকেট আর খাকি প্যান্ট পরা ছিলো। বাদাম খাচ্ছিলো সমানে। আমাদেরকেও বাদাম সেধেছিলো, আমি নিইনি। আর একটা বিশ্রী গান গুনগুন করছিলো একটু পর পর।" ঝাকানাকা বলেন, "বিশ্রী গান? সে কীরকম?" হুঁশিয়ার খান খানিক ভেবে বলে, "বিদঘুটে গান স্যার। সুরটা ঠিক মনে পড়ছে না, কথাগুলি এমন ... তুইইইইই ... মাল খা ... ইচ্ছেমতোওওও ... বোতলকে খুশি করে বাঁচ!" কিংকু চৌধারি সোজা হয়ে বসেন। ঝাকানাকা চোখ গরম করে বলেন, "বলেন কী? এমন আবার গান হয় নাকি?" হুঁশিয়ার খান বলে, "সেজন্যেই তো বললাম স্যার, বিদঘুটে গান!" কিংকু চৌধারি বললেন, "স্যার, আমার কাছে গানটা চেনা চেনা লাগছে!" ঝাকানাকা ঝট করে ফিরে তাকিয়ে বললেন, "আপনি এসব আজেবাজে গান চিনলেন কী করে?" কিংকু চৌধারি লাজুক গলায় বললেন, "রেডিও ঝাঞ্জাইলে শুনি স্যার। এটা সম্ভবত ঝুনো-র গান, "পরমকল্যাণবরেষু" অ্যালবাম থেকে নেয়া।" ঝাকানাকা চটে গিয়ে বললেন, "থাক থাক থাক। ... এ গান গাইছিলো মিল্টন তেঁতুলিয়া?" হুঁশিয়ার খান বলে, "তেঁতুলিয়া নয় স্যার, টেকনাফি।" ঝাকানাকা বললেন, "ঐ হলো! তো, আপনি কিছু বললেন না তাকে?" হুঁশিয়ার খান বলে, "আমি কী বলবো স্যার? কিছু বলতে গেলেই বাদাম খাওয়ার জন্য পীড়াপিড়ি করে।" ঝাকানাকা বললেন, "তো বাদাম সাধলে বাদাম খেয়ে ফেলতেন! সমস্যা কী?" হুঁশিয়ার খান বললো, "না স্যার, ট্রেনে বাসে অপরিচিত কেউ কোন কিছু সাধলে খেতে নেই। আমার বাবা বলেছিলেন ছেলেবেলায়। বলেছিলেন, খাবারের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ঘুম পাড়িয়ে বাক্সপেঁটরা হাতিয়ে নেয় লোকজন। আমার সেজ মামাকে এমনি করে একবার সিঙ্গারা খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে ওনার জামাজুতো সব খুলে নিয়ে গিয়েছিলো এক মহিলা!" ঝাকানাকা বললেন, "আপনারা বাবা অত্যন্ত দূরদর্শী মানুষ ছিলেন, দেখতেই পাচ্ছি। কিন্তু বাদামের সাথে ঘুমের ওষুধ মেশানো একটু শক্ত নয় কি? বাদাম তো আর আপেল নয় যে ইনজেকশন দিয়ে ঘুমের ওষুধ ভরে দেবে! শরবতও নয় যে ঘুমের ট্যাবলেট গুলিয়ে খাওয়াবে! শক্ত খোসাঅলা একটা জিনিস! তাছাড়া বাদাম স্বাস্থ্যের জন্যেও ভালো, ক্যালসিয়াম আছে, পটাশিয়াম আছে!" হুঁশিয়ার খান মুখ গোমড়া করে বললো, "না স্যার, সাবধানের মার নাই। আমার মেজো শালাকে একবার ছোলাভাজা খাইয়ে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটপাট করে নিয়েছিলো।" ঝাকানাকা গম্ভীর মুখে বললেন, "আপনার পরিবারে দেখি এই অজ্ঞান হয়ে সর্বস্ব খোয়ানোর জমজমাট রেওয়াজ আছে! এই সব পারিবারিক ইতিহাস থাকার পরও আপনি কোন সাহসে এই মূল্যবান জিনিস বহন করার দায়িত্ব নিলেন, য়্যাঁ?" হুঁশিয়ার খানের মুখটা কালো হয়ে যায়। কিংকু চৌধারি নোট করতে করতে বললেন, "স্যার, ছোলাভাজার সাথে যদি ঘুমের ওষুধ মেশানো যায়, তাহলে বাদাম তো তার কাছে নস্য!" ঝাকানাকা চিন্তিত হয়ে বললেন, "তাই তো দেখছি। আস্ত নারিকেল ছাড়া কিছুই নিরাপদ নয়!" হুঁশিয়ার খান বললো, "আমি বেশ সাবধানে ছিলাম স্যার। কিন্তু ঐ যে ফট করে ঘরের বাতি নিভে গেলো, আর তারপর কে যে ব্যাটা পাজি আমার মুখের মধ্যে কাপড় চেপে ধরলো ... এর জন্যে আমি ঠিক প্রস্তুত ছিলাম না!" ঝাকানাকা বললেন, "হুমম! ঠিক আছে। আপনি ঐ তিন পাজিকে দেখলে এখন চিনতে পারবেন?" হুঁশিয়ার খান হাত মুঠো পাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলে, "পারবো না মানে? শুধু চিনবোই না, কিলিয়ে কাঁঠালও পাকাবো ব্যাটাদের! অ্যাত্তোবড় সাহস, আমার নাকে কাপড় চেপে ধরে!" কিংকু চৌধারি বললেন, "তিন পাজি? আপনি কি তিনটাকেই সন্দেহ করছেন নাকি স্যার?" ঝাকানাকা বললেন, "তদন্তের সময় আমি সবাইকেই পাজি ধরে নিই। এই যে হুঁশিয়ার খান, এ হচ্ছে পাজি নাম্বার ওয়ান।" হুঁশিয়ার খানের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়, সে বলে, "এ কেমন ইনসাফ হলো স্যার? অজ্ঞান হলাম আমি, আর আমার ঘাড়েই পেজোমির দোষ চাপাচ্ছেন? ভিক্টিম হওয়া কি পাপ?" ঝাকানাকা ক্রুর হাসেন, বলেন, "দেখা যাবে কে পাজি আর কে পাজি নয়। আপাতত পাশের ঘরে গিয়ে বসুন, চা-টা খান।" হুঁশিয়ার খান গোমড়া মুখ করে উঠে চলে যায়। কিংকু চৌধারি বলেন, "স্যার, বাকি দু'টোকে ডাকবো? রুলার আনাই মোটা দেখে একটা?" ঝাকানাকা বললেন, "পুলিশ হয়ে পুলিশকে বাঁচিয়ে জনগণকে প্যাঁদানোর একটা পুলিশি বদভ্যাস কাজ করে আপনার মধ্যে! কাউকে যদি প্যাঁদাতে হয় তাহলে সে আপনার সহকর্মী হুঁশিয়ার খান! পুলিশ নামের কলঙ্ক সে!" কিংকু চৌধারি মনমরা হয়ে পেন্সিল দিয়ে কান চুলকাতে থাকেন। ঝাকানাকা বলেন, "এই মিল্টন টেকনাফি লোকটাই কেবল এখন আমাদের কব্জায় নেই। সন্দেহজনক আচরণ ব্যাটার। তুই মাল খা ইচ্ছেমতো, বোতলকে খুশি করে বাঁচ ... এটা কোন গান হলো?" কিংকু চৌধারি বললেন, "হেঁ হেঁ হেঁ, আপনি স্যার আজকালকার গান দেখছি একদমই শোনেন না! লিমা-র ""বাইদানি নাচে মাজা ঝাকাইয়া"" শুনলে আপনার প্রতিক্রিয়া কী হয় তা-ই ভাবছি!" ঝাকানাকা রক্তচক্ষু তাগ করে বললেন, "আপনি এসব গান শোনার সময় পান?" কিংকু চৌধারি বলেন, "গাড়িতে উঠলেই রেডিও ঝাঞ্জাইল ছেড়ে দিই স্যার! যা শোনায় সব শুনি!" ঝাকানাকা বললেন, "যত্তোসব! আপনার দোস্ত এই ব্যাটা হুঁশিয়ার খান কি মদ খায়? কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি স্যার, তা খায় মাঝে মধ্যেই। শৌখিন মানুষ তো!" ঝাকানাকা বিমর্ষ মুখে বললেন, "মকবুল মনসবদারকে ডাকুন দেখি। হুঁশিয়ার খানের পাশে বসে ছিলো ব্যাটা, পাজি নাম্বার টু। দেখি আদার ব্যাপারী হয়ে সে কোন জাহাজের খবর নিতে চট্টগ্রাম গিয়েছিলো!" "মকবুল মনসবদারকে ডাকো!" কিংকু চৌধারি হুঙ্কার দিয়ে সেপাইকে হুকুম ঝাড়েন। "আর মোটাসোটা একটা রুলার নিয়ে এসো!" রুলার হাতে মকবুল মনসবদারকে পাকড়াও করে এনে স্যালুট দ্যায় সেপাই। মকবুল মনসবদার মোটাসোটা মানুষ। চোখে এখনও ঢুলুঢুলু ভাব। পরনে পায়জামা আর পাঞ্জাবি। মুখে দাড়িগোঁপ নেই। ঝাকানাকা মনোযোগ দিয়ে কী একটা রিপোর্ট পড়ছিলেন, মকবুল মনসবদারকে দেখে সহৃদয় কণ্ঠে বললেন, "আসুন আসুন! খুব ধকল গেছে, তাই না? বসুন বসুন!" মকবুল মনসবদার ধপ করে একটা চেয়ারে বসে পড়েন। "রুলার দিয়ে কী করবেন স্যার? মারবেন নাকি আমাকে?" কিংকু চৌধারি মুহাহাহা করে হাসেন। বলেন, "মুহাহাহাহা! দরকার পড়লে মারতেও পারি!" ঝাকানাকা শাসন করলেন তাকে। "আহ চৌধারি! ওসব পড়ে হবে। মনসবদার সাহেব ভালো লোক। ধরে পিটুনি দেয়ার আগেই সব খুলে বলবেন। ... তাই না?" মনসবদার ডুকরে উঠলেন, "এ আপনাদের কেমন বিচার? আমাকে ধরে অজ্ঞান করে সব কেড়েকুড়ে নিলো, আর আপনারা আমার হুঁশ আসতে না আসতেই ধরে প্যাঁদানোর চিন্তা করছেন?" ঝাকানাকা বললেন, "সব কেড়েকুড়ে নিলো? কী ছিলো আপনার সাথে?" মনসবদার চোখ মুছে বললেন, "মোবাইল, মানিব্যাগ, আতরের কৌটা! সব!" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম! কিন্তু পুলিশ রিপোর্টে তো বলছে, আপনার জিনিসিপত্র কিছুই খোয়া যায়নি। আপনার ছবিওয়ালা মানিব্যাগ, আপনার ছবিওয়ালা মোবাইল, আর একটা জঘন্য গন্ধঅলা আতরের কৌটা, সব পাওয়া গেছে কামরার মেঝেতে!" কিংকু চৌধারি বললেন, "ওগুলোতে কেবল আপনারই হাতের ছাপ পাওয়া গেছে! আর কারো নয়! এখন বলুন, আপনি বেহুঁশ হলেন কিভাবে?" মকবুল মনসবদার বললেন, "সব বলবো স্যার! কিন্তু আমার জিনিসপত্র আমাকে ফেরত দেয়া হবে তো? নাকি রেখে দিবেন জোর করে, নজরানা হিসাবে?" ঝাকানাকা বললেন, "পাবেন, সব ফেরত পাবেন। আগে তদন্ত শেষ হোক। বলুন, কী হয়েছিলো?" মনসবদার বললেন, "কামরায় আমরা চারজন ছিলাম স্যার। আমি, হুঁশিয়ার খান নামে এক ছোকরা মডেল, মন্টু লিওনার্দো নামের এক হিপি, আর মিল্টন টেকনাফি নামের এক বদমায়েশ! গল্প করতে করতে যাচ্ছিলাম চারজনে মিলে ...।" "মডেল?" ঝাকানাকা বাধা দেন। "হুঁশিয়ার খান মডেল?" "তা-ই তো বললো স্যার। সে নাকি মডেলিং করে। জামার, জুতার, জাঙ্গিয়ার। যদিও দেখতে বান্দরের মতো।" "বটে?" ঝাকানাকা ভ্রুকুটি করেন। "তারপর?" "হঠাৎ ঘরের আলো স্যার ফট করে নিভে গেলো। একটা কেমন হুটোপুটির আওয়াজ পেলাম। আমি বললাম, "হায় হায়, চলন্ত ট্রেনেও লোডশেডিং হচ্ছে!" মিল্টন টেকনাফি বললো, "দিনকাল খুবই খারাপ!" মন্টু লিওনার্দো বললো, "কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়, ও ভাইরে ও ভাই ...!" হুঁশিয়ার খান কিছুই বললো না। তার পরপরই ফট করে আবার আলো জ্বলে উঠলো। তখন দেখি, সে সীটের ওপর হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। বেচারাকে আর জাগালাম না। আমরা তিনজন মিলে গল্প করতে করতে যাচ্ছি। মন্টু লিওনার্দো কী কী সব আবোলতাবোল বকছে, মনে হয় গাঁজা খেয়ে উঠেছিলো ট্রেনে ... আর মিল্টন বদমায়েশটা আজেবাজে সব গান গাইছিলো ... এর মধ্যে আবার ফট করে ঘরের আলো নিবে গেলো। কে যেন আমার মুখে একটা ভেজা কাপড় চেপে ধরলো, তাতে কেমন একটা মিষ্টি গন্ধ! তারপর স্যার আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম, জ্ঞান ফিরে দেখি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছি!" কিংকু চৌধারি নোট করতে করতে বললেন, "সত্যি তো? মিথ্যা কথা বললে কিন্তু রুলার দিয়ে অ্যায়সা প্যাঁদান প্যাঁদানো হবে যে ...।" ঝাকানাকা চোখ বুঁজে সব শুনছিলেন, তিনি হঠাৎ জিজ্ঞেস করলেন, "এই যে আপনি দু'দিন অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইলেন, আপনার আত্মীয়স্বজন আপনার খোঁজ করলো না কেন?" মনসবদার করুণ কণ্ঠে বললেন, "আত্মীয়স্বজন তো স্যার গাঁওগেরামে থাকে। তারা কি আর পদে পদে আমার খোঁজ নেয়? আমি ব্যবসার কাজে সারা দেশ ঘুরি ... কখন কোথায় থাকি তারা তো খবর রাখে না! আর খোঁজ যদি কেউ নেয় তো নেবে তারা, যাদের সাথে আমি ব্যবসা করি। আমার মোবাইল ফোনটাও তো আপনারা কোথায় ঝেড়ে দিয়েছেন! কে আমাকে এই কয়দিন ফোন করে পাত্তা পায়নি, সে খোঁজ যে নেবো, তার উপায়ও তো কিছু রাখেন নি!" ঝাকানাকা বললেন, "পাবেন পাবেন, সব খোঁজ পাবেন। ... এবার বলুন, কী গান গাইছিলো মিল্টন?" মকবুল মনসবদার ভুরু কুঁচকে খানিক ভেবে বললেন, "বিশ্রী একটা গান স্যার! কোন আগামাথা নাই। গলাটাও বেসুরা! গানের কথাগুলি হচ্ছে এমন ... তুই ভাত খা, ইচ্ছেমতোওওওও ... পাতিলকে খুশি করে বাঁচ!" ঝাকানাকা সোজা হয়ে বসলেন চেয়ারে। "ঠিক শুনেছেন তো?" মকবুল মনসবদার মাথা নাড়লেন। "হ্যাঁ ... এরকমই ছিলো গানের কথাগুলি।" ঝাকানাকা গম্ভীর হয়ে কিংকু চৌধারিকে বললেন, "নোট করে নিন বরং। বেশ জটিল পরিস্থিতি। ... তা মকবুল সাহেব, আপনারা কাকে সন্দেহ হয়? কে আপনার মুখে কাপড় চেপে ধরলো?" মকবুল মনসবদার গম্ভীর হয়ে বললেন, "আমার তো স্যার ঐ মিল্টন ব্যাটার ওপরই সন্দেহ হয়। লোকটা স্যার সুবিধার না। একটু পর পর শুধু বাদাম খেতে সাধছিলো আমাদের। আর শালা বাদাম খেতেও পারে ভাতের মতো! একটার পর একটা বাদাম ভেঙে খেয়েই চলেছে!" কিংকু চৌধারি বললেন, "হুমম! মেঝেতে প্রচুর বাদামের খোসা পাওয়া গেছে বটে!" ঝাকানাকা বললেন, "ওগুলোর ওপর আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করার জন্যে একটা নোট পাঠিয়েছিলাম কেমিক্যাল আলিকে। ব্যাটা তো এখনও কোন রিপোর্ট দিলো না।" মকবুল মনসবদার বললেন, "স্যার, আমার জিনিসগুলি দিয়ে দ্যান, আমি বাড়ি যাই। পেট ভরে ভাত খেতে হবে, শরীরটা বড় দুর্বল হয়ে পড়েছে!" ঝাকানাকা বললেন, "নিশ্চয়ই যাবেন! পেট ভরে খাওয়ার বন্দোবস্তও হবে। তবে আগে তদন্ত শেষ করি আজকের মতো, তারপর দেখা যাবে। এখন বলুন, মিল্টন আর মন্টুকে দেখলে চিনতে পারবেন?" মকবুল মনসবদার বললেন, "পারবো স্যার! বিশেষ করে মিল্টন হতচ্ছাড়াটাকে তো পারবোই! শুধুশুধু আমার তিনটা দিন বরবাদ করলো ব্যাটা বদমায়েশ!" ঝাকানাকা তীর্যক হেসে বললেন, "আপনি এতো নিশ্চিত হচ্ছেন কিভাবে যে মিল্টন টেকনাফিই আপনাকে অজ্ঞান করেছে? কাজটা তো মন্টু লিওনার্দোরও হতে পারে! এমনকি, হুঁশিয়ার খান নামের সেই মডেল ব্যাটারও হতে পারে! তাই না?" মকবুল মনসবদার চমকে উঠে বললেন, "তাই তো! কিন্তু মন্টুকে দেখে ঠিক ওরকম মনে হয়নি স্যার! আর হুঁশিয়ার খান তো চিৎপাত হয়ে ঘুমাচ্ছিলো। বরং মিল্টন টেকনাফিই কেমন যেন আড়ে আড়ে বারবার তাকাচ্ছিলো স্যার, কেমন একটা মতলববাজ হাসি ছিলো ব্যাটার চোয়ালে! ... আপনারা যা-ই বলুন স্যার, আমার ধারণা মিল্টনই আমাকে অজ্ঞান করে আমার জিনিসপত্র কেড়েকুড়ে নিয়েছে!" ঝাকানাকা বললেন, "আপনার জিনিসপত্র তো সব রেলের কামরার মেঝেতেই পাওয়া গেছে। মিল্টন আপনাকে লুট করলে সে সব ফেলে গেলো কেন?" মকবুল মনসবদার মুষড়ে পড়লেন। "তা তো জানি না স্যার! শালার ব্যাটা কেন আমাকে শুধু শুধু এই বিপদে ফেললো, কে জানে?" কিংকু চৌধারি ক্রুর হেসে বললেন, "আর কোন কিছু ছিলো না কি আপনার সাথে? বেআইনী কোন বস্তু? যেটা খোয়া গেছে কিন্তু স্বীকার করছেন না? য়্যাঁ? দেখছেন তো এই রুলারখানা?" মকবুল মনসবদার খেপে উঠলেন, "এ কেমন ব্যাভার স্যার? আমি অসুস্থ একটা লোক, পদে পদে আমাকে রুলার দেখাচ্ছেন? আমি সাংবাদিকদের কাছে বিচার দেবো যে আপনারা আমাকে কীরকম নির্যাতন করার হুমকি দিয়েছেন!" কিংকু চৌধারি হাসেন, বলেন, "মুহাহাহাহাহা!" ঝাকানাকা বিরক্ত হয়ে বলে, "থামুন, হাসবেন না পুলিশের মতো। ... মকবুল সাহেব, সত্যি কথা বলুন! আর কী ছিলো আপনার সাথে? টাকাপয়সা? সোনাদানা? হীরাজহরত? হেরোইন? কোকেন? একে৪৭?" মকবুল মনসবদার হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। "আদার ব্যবসা করি স্যার গত পনেরো বছর ধরে! মকবুল ট্রেডার্স, খোঁজ নিয়ে দেখেন হয়রানবাজারে! মাঝে মাঝে আদার দাম সুযোগ বুঝে কেজি পিছু পাঁচদশটাকা বাড়াই, কিন্তু চোরাচালানি করি না! আপনারা আমাকে বাগে পেয়ে এইভাবে বেইজ্জতি করছেন! এইভাবে আমাকে উল্টাপাল্টা কেসে ফাঁসিয়ে পয়সা খেতে চাচ্ছেন! রুলার দিয়ে প্যাঁদাচ্ছেন! আমি অ্যামনেস্টির কাছে যাবো! আমি জাতিসংঘের কাছে যাবো!" ঝাকানাকা বললেন, "আহহাহাহা, কাঁদে না, কাঁদে না। শরীরের এই অবস্থা নিয়ে এতো দৌড়ঝাঁপ আপনার পোষাবে না। তা বেশ তো, আমরা না হয় খোঁজ করে দেখবো হয়রানবাজারে। আপনার গদির ঠিকানা দিয়ে যান আমাদের। এই যে ... কাগজ আর কলম।" মকবুল মনসবদার হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে ফোঁৎ ফোঁৎ করে নাক টানতে টানতে কাগজে নিজের গদির ঠিকানা লিখে দেন। কিংকু চৌধারি বললেন, "ওসব অ্যামনেস্টি-জাতিসংঘ দেখিয়ে কূল পাবেন না! যদি সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায় তো ঠেঙিয়ে আপনার বিষ ঝেড়ে দেয়া হবে! চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন কেন?" মকবুল মনসবদার বলেন, "ব্যবসার কাজে স্যার। আদা আমদানি করতে হবে অচিরেই, তাই একটু পোর্টে কাজ ছিলো।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমম, জাহাজের খোঁজখবর করছিলেন, তাই তো? বেশ বেশ! তা মকবুল সাহেব, আপনি এখন তাহলে ঐ ঘরটায় গিয়ে বসুন, চা-নাস্তা খান।" মকবুল মনসবদার গোঁ গোঁ করে বললেন, "খিদা লেগে গেছে স্যার। ভাতের ব্যবস্থা নাই?" কিংকু চৌধারি দাঁত কিড়মিড় করে বললেন, "আপাতত চা খান। ভাতের ব্যবস্থা পরে হবে!" মনসবদার চলে যাবার পর কিংকু চৌধারি ঝাকানাকার দিকে ফিরে বললেন, "স্যার, যতদূর মনে হচ্ছে এই মিল্টন টেকনাফিই শ্রীচৈতন্য। এক এক করে তিনটাকেই অজ্ঞান করে প্লেট লুট করে পালিয়েছে!" ঝাকানাকা বললেন, "জনাব চৌধারি, আপনাকে আরো সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করতে হবে। ফট করে এর ওর ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিলে চলবে না। কিছু প্রশ্নের উত্তর আপনাকে খুঁজতে হবে।" চৌধারি মনক্ষুণ্ন হয়ে বললেন, "কী প্রশ্ন স্যার?" ঝাকানাকা চেয়ারে নড়েচড়ে বসে বললেন, "প্রথম প্রশ্ন, প্লেট লুট করাই যদি মিল্টনের উদ্দেশ্য হবে, তাহলে কামরার বাকি দু'জনকে সে অজ্ঞান করলো কেন?" কিংকু চৌধারি বললেন, "সে কী কথা স্যার! তিন তিনজনকে বাগে পেয়েছে, যা কিছু পেয়েছে লুট করে নিয়েছে!" ঝাকানাকা বললেন, "উঁহুহু! অত সহজ নয়। ব্যাপারটা মোটেও কাকতালীয় নয়। হুঁশিয়ার খানের কাছে যে ডলারের প্লেটদু'টো আছে, এটা মিল্টন নিশ্চয়ই জানতো। হুঁশিয়ার খানকে অজ্ঞান করে চুপচাপ বসে থাকলেই পারতো সে। কেন আবার মকবুল মনসবদারকে অজ্ঞান করতে গেলো? মন্টু লিওনার্দোকেই বা কেন অজ্ঞান করতে গেলো?" কিংকু চৌধারি বললো, "স্যার, আপনি কি বলতে চাইছেন, মকবুল মনসবদার আর মন্টু লিওনার্দোর কাছেও ডলারের প্লেট ছিলো?" ঝাকানাকা বললেন, "থাকতেও পারে, অসম্ভব কিছু নয়!" কিংকু চৌধারি দাঁতে দাঁত পিষে বললেন, "বটে! দাঁড়ান স্যার, ঐ ব্যাটা মকবুলকে যদি আমি পিটিয়ে লম্বা না করছি তো আমার নাম কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারিই নয়!" ঝাকানাকা বললেন, "আবার না-ও থাকতে পারে। হয়তো মকবুল মনসবদার কিছু দেখে ফেলেছিলো। বা সন্দেহ করেছিলো। তাই তাকে সময়মতো অজ্ঞান করে চুপ করিয়ে রাখা।" কিংকু চৌধারি বললেন, "দেখলে আমাদের বললো না কেন স্যার?" ঝাকানাকা বললেন, "সেটাই তো প্রশ্ন! মিল্টনের হাতে হাতকড়া পরানোর আগে মকবুল আর মন্টুকে ভালোমতো জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে হবে, ঘটনাটা কী!" কিংকু চৌধারি বললেন, "মন্টু লিওনার্দোকে তলব করবো স্যার?" ঝাকানাকা বললেন, "করুন। তার আগে বলুন, এই মকবুল ব্যাটা কি খুব পেটুক নাকি?" কিংকু চৌধারি বললেন, "ভয়ানক ভাতখোর লোক স্যার। হাসপাতালের খাবার তার পছন্দ হয় না। এক প্লেট খেয়ে আরো দুই প্লেটের ফরমায়েশ দ্যায়!" ঝাকানাকা বললেন, "মন্টু আর মকবুলকে আলাদা ওয়ার্ডে রেখেছিলেন না?" কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি স্যার, আপনার কথামতো আলাদা জায়গায় রেখেছি তিনজনকেই। হুঁশিয়ার, মকবুল, মন্টু ... কেউ জানে না যে তারা তিনজনই এখন একই ছাদের নিচে আছে।" ঝাকানাকা বললেন, "গুড গুড! ডাকুন মন্টুকে।" তিন মন্টু লিওনার্দো টিঙটিঙে রোগা। পরনে ঢোলা কুর্তা আর জিন্স। মুখভর্তি দাড়িগোফঁ। চোখদু'টো লাল। ভাবভঙ্গি কবিসুলভ। "আপনিই মন্টু লিওনার্দো?" "জ্বি স্যার। আমিই কবি মন্টু লিওনার্দো।" ভাঙা গলায় বলে মন্টু। "বেশ বেশ। তা কেমন বোধ করছেন এখন?" মধুর গলায় বলেন ঝাকানাকা। "ভালো না স্যার। এইখানকার গাঁজা ভালো না।" মন্টু বিষণ্ন মুখে বলে। "এইখানকার গাঁজা মানে?" কিংকু চৌধারি গর্জে ওঠেন। "হাসপাতালের গাঁজা স্যার। ভালো না।" মন্টু অনুযোগ করে। "হাসপাতালের গাঁজা মানে?" ঝাকানাকা ভুরু কোঁচকান। "এখানে স্যার চাইলে গাঁজা যোগাড় করে দ্যায় দালারেরা। আমার আবার গাঁজা পান না করলে একটু সমস্যা হয় স্যার।" "বলেন কী!" কিংকু চৌধারি হাঁক পাড়েন। "রুলারটা নিয়ায় কেউ!" মন্টু লিওনার্দো বলে, "রুলার লাগবে না স্যার। আমি পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি লম্বা। এই সেদিন মাপিয়েছি। তবে ওজনটা নিয়ে একটু সন্দেহ আছে স্যার! নিউমার্কেটে মাপালে দেখায় বাহান্ন কেজি, কিন্তু সংসদে মাপালে দেখায় তেপ্পান্ন। একটু কনফিউশনে আছি স্যার এটা নিয়ে। ওজন মাপার মেশিন থাকলে আনতে বলুন, মেপে দেখি আসলে কত ...।" ঝাকানাকা মধুর গলায় বলেন, "যাহা বাহান্ন তাহা তেপ্পান্ন। এটা নিয়ে টেনশন করবেন না একদম।" কিংকু চৌধারি হুঙ্কার দ্যান, "রুলার দিয়ে তোমাকে মাপা হবে না, ব্যাটা বদমায়েশ, পিটিয়ে পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি করে দেয়া হবে! হাসপাতালে এসে গাঁজা খাওয়া হচ্ছে?" মন্টু লিওনার্দো কাঁচুমাচু মুখে বললো, "গাঁজা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো স্যার। মনটাও ভালো থাকে। ... তবে গাঁজা খাওয়ার পর দুধ খেতে হয় স্যার, এখানে দুধটাও খারাপ। গাঁজার অবস্থা তা-ও তো চলে, দুধের অবস্থা ভয়ঙ্কর খারাপ!" কিংকু চৌধারি বলেন, "চোপরাও! স্যার যা বলেন তার উত্তর দাও!" ঝাকানাকা বলেন, "আপনি কী ধরনের কবি?" মন্টু নড়েচড়ে বসে, "খুবই উন্নতমানের কবি স্যার! বাদশাবাগের ইয়াজুজ মার্কেটে যে কোন লিটুল ম্যাগাজিনে আমার কবিতা পাবেন। আমাকে ছাড়া বাংলা কবিতার জগৎ স্যার, অচল!" ঝাকানাকা বলেন, "আপনার নিজের বই বেরোয়নি?" মন্টু লিওনার্দো বলে, "বেরোয়নি আবার? চারখানা বেরিয়েছে স্যার! আমার ঝোলাটা সাথে থাকলে দেখাতে পারতাম, কিন্তু হুঁশ ফিরে আসার পর থেকে আমার ঝোলাটা আর পাচ্ছি না। ঝোলাটা পেলে স্যার হাসপাতালের এই নিম্নমানের গাঁজা আর বাজে দুধ খেতে হতো না!" ঝাকানাকা বললেন, "ট্রেনের কামরায় আপনার ঝোলা পাওয়া গেছে। ওতে অবশ্য কয়েকটা চটিবই ছিলো। গাঁজা আর এক বোতল দুধও পাওয়া গেছে তাতে।" মন্টুর মুক উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে, "আহ! বাঁচালেন স্যার। ওগুলো কি আমি ফেরত পাবো না?" ঝাকানাকা বললেন, "পেতেও পারেন। আগে তদন্ত শেষ হোক।" মন্টু বললো, "ওকে স্যার, তাহলেই হবে।" ঝাকানাকা বললেন, "চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন কেন?" মন্টু বলে, "সাতকানিয়া কবিতা পরিষদের আমন্ত্রণে স্যার। কবিতা পাঠের আসর বসেছিলো।" ঝাকানাকা বললেন, "বলেন কী? তা কোন কবিতা পাঠ করলেন সেখানে?" মন্টু লিওনার্দো সগর্বে বলে, "স্বরচিত কবিতা স্যার। নাম ""আমার জাঙ্গিয়া ও আশ্চর্য ডাইনোসরগুলি!"" শুনবেন?" কিংকু চৌধারি তেড়ে আসেন, "খবরদার!" ঝাকানাকা তাকে নিবৃত্ত করেন। "আহ, থামুন তো! ... না, কবিতা শুনবো না। তারচেয়ে বলুন, সেদিন কী ঘটেছিলো ট্রেনে? আর কে কে ছিলো আপনার সাথে?" মন্টু লিওনার্দো চিন্তিত হয়ে পড়ে। "ছিলো স্যার কয়েকজন। ... একজনের নাম স্যার ... উমম, হুঁশিয়ার। সে আবার মডেলিং করে। বিশ্রী চেহারা, কীভাবে এই চেহারা নিয়ে মডেল হলো কে জানে? আর একজন ছিলো, তার নাম মকবুল পোদ্দার ...।" "পোদ্দার?" জানতে চান ঝাকানাকা। "উমম, এমনই কিছু স্যার। পোদ্দার বা ফৌজদার, একটা কিছু হবে, খেয়াল নাই। ... আর একটা লোক, খুব বিশ্রী বাজে একটা লোক স্যার ... মিল্টন বেনাপোলি ... ছিলো আমার পাশে।" "বেনাপোলি?" ক্ষেপে ওঠেন কিংকু চৌধারি? "বেনাপোলি না টেকনাফি?" মন্টুর মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। "ঠিক স্যার, বেনাপোলি নয়, টেকনাফি? চেনেন নাকি ব্যাটাকে?" ঝাকানাকা বলেন, "এখনও চিনি না, তবে অচিরেই চিনতে পারবো। ... তা ওকে বিশ্রী বাজে বলছেন কেন?" মন্টু ক্ষেপে ওঠে, "বলবো না? ওর দেয়া বাদাম খেয়েই তো স্যার ঘুমিয়ে পড়লাম। এমন মরণ ঘুম, বাপরে!" ঝাকানাকা বলেন, "ইন্টারেস্টিং! তা কী কী ঘটেছিলো একদম প্রথম থেকে বলুন।" মন্টু চোখ মিটমিট করে। "একদম প্রথম থেকে? ... ইয়ে, আমরা স্যার গল্প করতে করতে যাচ্ছিলাম। হুঁশিয়ার লোকটা স্যার, একটা গর্দভ। খালি মডেলিঙের গল্প করছিলো। কোথায় কোন হোসিয়ারীর মডেলিং করেছিলো, আন্ডারওয়্যার পরে নাকি তিনতলা থেকে লাফ দিতে হয়েছিলো, এইসব বাজে গল্প করছিলো। আমি স্যার গাঁজা খেয়ে একবার দিগম্বর হয়ে পানির পাইপ বেয়ে চারতলায় উঠেছিলাম, একবার ভাবলাম ওকে সেটা বলি, কিন্তু খামাকা লজ্জা দিয়ে কী লাভ ব্যাটাকে? ... আর মকবুল পোদ্দার, নাকি তালুকদার, যা-ই হোক ... সেই মকবুল ব্যাটা স্যার সমানে পান খাচ্ছিলো, আর একটু পর পর এসে জানালার কাঁচ তুলে পিক ফেলছিলো থু থু করে। ... আর মিল্টন হারামজাদাটা স্যার, কী বলবো, সমানে বাদাম খেয়ে যাচ্ছিলো ... আর গুনগুন করে খালি মজার মজার সব গান গাইছিলো ... গান শুনে মনে হয়েছিলো লোকটা খারাপ না, কিন্তু ও যে একটা বদের হাড্ডি, সেটা তো স্যার ঠেকে শিখলাম!" "মজার গান?" কিংকু চৌধারি ভুরু কুঁচকান। "কী মজার গান?" "উমমম ... দাঁড়ান স্যার, মনে করে নিই। এক ছিলিম গাঁজা টানলে স্যার সবই মনে পড়তো ... এখন মাথাটা এমন টিপটিপ করছে ... গানটা ছিলো স্যার এমন ...," এই বলে সে গেয়ে শোনায়, "তুউউউই, দুধ খা ... ইচ্ছে মতোওওওওও ... নিপলকে খুশি করে বাঁচ!" কিংকু চৌধারি মুঠো পাকিয়ে সটান উঠে পড়েন চেয়ার থেকে। "এটা মজার গান হলো?" হুঙ্কার দেন তিনি। ঝাকানাকা বিড়বিড় করে বলে, "ইন্টারেস্টিং! খুবই ইন্টারেস্টিং! ... চৌধারি, নোট করুন।" কিংকু চৌধারি বসে পড়ে গজগজ করতে থাকেন, "যত্তোসব বাজে গান!" ঝাকানাকা বললেন, "আপনার রেডিও ঝাঞ্জাইলে ঝুনো সাহেব এসব গানই গায় নাকি, ঐ পরমকল্যাণবরেষু অ্যালবাম থেকে?" কিংকু চৌধারি বলেন, "মোটেও সেটা দুধ খাবার গান নয় স্যার! আর ... আর ... কীসের নিপলের কথা হচ্ছে এখানে?" ঝাকানাকা বললেন, "ফিডারের নিপল, নয়তো কীসের? নিপল তো ফিডারেরই হয়!" কিংকু চৌধারি বললেন, "স্যার, আমার ধারণা এই গানটা বড়দের। ইট'স ড়্যাদার ফিশি স্যার! এই গল্পে স্যার এই গানের স্থান হতে পারে না!" ঝাকানাকা বললেন, "গল্পটার রেটিং দেখেছেন? ১৮ বছর বয়স তদুর্ধ্ব!" কিংকু চৌধারি বললেন, "এ কেমন কথা স্যার?" ঝাকানাকা বললেন, "বাদ দিন! ... তা লিওনার্দো সাহেব, তারপর কী হলো?" মন্টু লিওনার্দো হাই তুলে বলে, "হঠাৎ স্যার বাতি চলে গেলো ঠুস করে। হুঁশিয়ার গাধাটা বকবক করছিলো, সে হঠাৎ চুপ করে গেলো। মকবুল পোদ্দার ... নাকি চাকলাদার ... সে ফ্যাঁচফ্যাঁচ করতে লাগলো মিল্টন টেকনাফির সাথে। এই দু'জন স্যার খুব জ্বালিয়েছে আমাকে, একজন খালি পান খাচ্ছে, আরেকজন বাদাম ... যা-ই হোক। একটু পর বাতি ফিরে আসার পর দেখি হুঁশিয়ার মডেলকুমার বেশ আয়েশ করে ঘুমাচ্ছে। মকবুল আর মিল্টন তারপর শুরু করলো কী এক বাংলা সিনেমা নিয়ে আলাপ। কিছুক্ষণ পর আবার বাতি চলে গেলো, মিল্টন টেকনাফি বললো, এরপর নাকি সে ট্রেনে হারিকেন নিয়ে উঠবে। একটু পর যখন আবার বাতি ফিরে এলো, তখন দেখি মকবুল সাহেবও হুঁশিয়ারের কাঁধে মাথা রেখে হেভি ঘুম দিয়েছে স্যার। ... আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম, যাক, এবার অন্তত শান্তিমতো ঘুমানো যাবে। কিন্তু এই মিল্টন, এই বদমায়েশটা স্যার গল্প জুড়ে দিলো। বাদামের গল্প। বাদামে নাকি স্যার ক্যালসিয়াম আছে, পটাশিয়াম আছে। আমি উল্টে ওকে গাঁজার গুণাগুণ নিয়ে কিছু তথ্য দিলাম স্যার। বললাম, গাঁজা কত ভালো। মিল্টন তখন স্যার এক ছিলিম টেনে দেখতে চাইলো। তো, দিলাম সাজিয়ে এক ছিলিম। কল্কি নেয়ার সময় সে বলে কী, আমার বাদামগুলো একটু ধরুন দেখি। তো একটা বাদাম কী মনে করে ভেঙে মুখে দিতেই স্যার এমন ঘুম পেলো ... তারপর আর কিছু মনে নেই!" ঝাকানাকা বললেন, "তা, মেঝেতে কিছু পড়ে থাকতে দেখেছিলেন কি?" মন্টু কিছুক্ষণ ভেবে বললো, "বাদামের খোসা স্যার, আর কিছুর কথা তো মনে পড়ছে না!" ঝাকানাকা মিষ্টি করে হাসলেন। বললেন, "বেশ বেশ। তা জনাব লিওনার্দো ... আপনি তাহলে সেপাইয়ের সাথে ফিরে যান, যে ঘরে ছিলেন এতক্ষণ। আপনাকে একটু পর আবার ডাকবো, কেমন?" মন্টু লিওনার্দো মাথা ঝাঁকিয়ে উঠে পড়ে। কিংকু চৌধারি গোঁ গোঁ করে ওঠেন। "মন্টু ব্যাটা স্যার একটা লম্পট! হেড নার্স ওর নামে কমপ্লেইন করেছে স্যার। সে নাকি জ্ঞান ফিরে পাবার পর কয়েকজন নার্সকে বিরক্ত করেছে নানাভাবে!" ঝাকানাকা বললেন, "হুমম! আপনি দেখছি এখনও গানটা নিয়ে বিরক্ত!" কিংকু চৌধারি বললেন, "রুলার দিয়ে এক দফা ডলা দিয়ে দিলে ভালো হয় স্যার!" ঝাকানাকা বললেন, "বাদ দিন। কবি মানুষ। ... এককাপ চা দিতে বলুন। রহস্য মনে হচ্ছে মোটামুটি সমাধান করা গেছে। এখন শুধু কেমিক্যাল আলির ফাইন্যাল রিপোর্টের অপেক্ষা।" কিংকু চৌধারি বলেন, "বলছেন কী স্যার?" ঝাকানাকা বলেন, "হুমমম!" চার পরদিন সকাল। হাসপাতাল নয়, থানায় উপস্থিত হুঁশিয়ার খান, মকবুল মনসবদার আর মন্টু লিওনার্দো। কিংকু চৌধারি একটা মজবুত বেত হাতে একপাশে দাঁড়িয়ে। ঝাকানাকা বললেন, "আপনাদের তিনজনই আজ এখানে উপস্থিত। রহস্য মোটামুটি সমাধান হয়েছে। আপনাদের আর কিছু বলার আছে?" হুঁশিয়ার খান রক্তচক্ষু নিয়ে তাকায় মকবুল মনসবদার আর মন্টু লিওনার্দোর দিকে। মকবুল পান চিবাচ্ছে একটা। মন্টু লিওনার্দো ঘাড় চুলকায় ঘ্যাঁসঘ্যাঁস করে। ঝাকানাকা বলেন, "গুড। জনাব মন্টু লিওনার্দো, মিল্টন টেকনাফিই অজ্ঞান করেছিলো আপনাকে, বাদাম খাইয়ে। মেঝেতে পড়ে থাকা কয়েকটা আস্তবাদামের মধ্যে সাংঘাতিক এক ঘুমের ওষুধের রিপোর্ট এসেছে আজ সকালে।" মন্টু লিওনার্দো বললো, "স্যার, এতে আর রহস্যের কী আছে? আমিই তো আপনাকে বললাম, মিল্টন শালা আমাকে বাদাম খাইয়ে অজ্ঞান করে ফেলে রেখে গেছে!" ঝাকানাকা বললেন, "কথার মাঝখানে কথা বলবেন না। ... বাদামের খোসায় মিল্টন টেকনাফির হাতের ছাপ পাওয়া গেছে। পুরনোর রেকর্ড থেকে মিলিয়ে দেখা গেছে, সে আর কেউ নয়, বদমায়েশ পাজি হতচ্ছাড়া বদরু খাঁ!" মকবুল মনসবদার বলে, "লোকটার হাবভাব দেখেই স্যার আমার সন্দেহ হয়েছিলো, এই লোক ভদ্রলোক হতে পারে না!" ঝাকানাকা বলেন, "কিন্তু রহস্য হচ্ছে, কেন মিল্টন টেকনাফি, ওরফে বদরু খাঁ আপনাকে অজ্ঞান করলো, জনাব লিওনার্দো? আপনার ঝোলা, মোবাইল, মানিব্যাগ, সবই তো কামরার মেঝেতে পাওয়া গেছে! এমনকি টাকাপয়সাও অক্ষত অবস্থায় আছে, কেউ মেরে দেয়নি! আপনি কি বলতে পারেন?" মন্টু লিওনার্দো আমতা আমতা করে বলে, "আমি কিভাবে বলবো স্যার? হয়তো তাড়াহুড়ো করে ভেগেছে!" ঝাকানাকা ক্রুর হেসে বললেন, "বটে? তা জনাব লিওনার্দো, আপনার স্কার্ফখানা কোথায়?" মন্টু লিওনার্দোর মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়। সে বলে, "স্কার্ফ? কোন স্কার্ফ?" ঝাকানাকা বলেন, "আপনার গলায় জড়ানো স্কার্ফ। যেটির কথা হুঁশিয়ার খান আর মকবুল মনসবদার, দু'জনেই আমাকে জানিয়েছে। রেলের কামরায় কোন স্কার্ফ পাওয়া যায়নি। আপনার গলায়ও কোন স্কার্ফ দেখতে পাইনি হাসপাতালে। স্কার্ফটা কোথায় গেলো?" মন্টু বলে, "স্কার্ফটা মনে হয় এই মিল্টন খাঁ মেরে দিয়েছে স্যার ... বান্দরবান থেকে কেনা আমার শখের স্কার্ফ ...!" ঝাকানাকা হাসেন। "ঠা ঠা ঠা ঠা ঠা! বটে? আপনার মোবাইল, আপনার মানিব্যাগ, এসব ফেলে সে নিয়ে গেলো আপনার স্কার্ফ? এটা কি বিশ্বাসযোগ্য কথা?" মন্টু বলে, "তাহলে মনে হয় স্যার পরে এটা কোনভাবে খোয়া গেছে!" ঝাকানাকা বলেন, "খোয়া যায়নি জনাব লিওনার্দো। ওটা আপনি নিজেই জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছিলেন, প্রমাণ হাপিস করার জন্য। কারণ ঐ স্কার্ফে ক্লোরোফর্ম ঢেলেই আপনি জনাব মকবুলের নাকে মুখে ঠেসে ধরে অজ্ঞান করেছিলেন!" মকবুল মনসবদার চমকে উঠে মন্টু লিওনার্দোর দিকে ফেরেন! "বটে?" গর্জে ওঠেন তিনি। "মিল্টন নয়, এই ব্যাটা লিওনার্দোই আমাকে বেহুঁশ করে চারটা দিন নষ্ট করলো? আমার ব্যবসা ...!" ঝাকানাকা গর্জে ওঠেন। "চোপ! কোন কথা নয়! ... আপনি বলুন, জনাব মনসবদার, আপনার টুপিটা কোথায়?" মকবুল মনসবদারের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়, তিনি বলেন, "টুপি? আমার আবার কীসের টুপি?" ঝাকানাকা ভুরু নাচিয়ে হাসেন। "যে টুপির কথা হুঁশিয়ার খান আমাকে জানিয়েছে! আপনার মাথায় টুপি ছিলো! কিন্তু রেলের কামরায় সেটা মেলেনি, হাসপাতালেও আপনার মাথায় টুপি দেখেনি কেউ! টুপিটা কোথায় মকবুল?" মকবুল মনসবদার হাউমাউ করে ওঠেন, "জানি না স্যার, এই মন্টু সেটা কোথায় গাপ করেছে, আমি কিভাবে বলবো?" ঝাকানাকা বললেন, "মন্টু সেটা গাপ করেনি। টুপিটা আপনি নিজেই জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন, প্রমাণ গায়েব করার জন্য! কারণ ওতেই ক্লোরোফর্ম ঢেলে হুঁশিয়ার খানের মুখে ঠেসে ধরেছিলেন আপনি!" মকবুল মনসবদার চেয়ারে এলিয়ে পড়েন একদম, আর হুঁশিয়ার খান লাফিয়ে ওঠে, "ব্যাটা উল্লুক, আজ যদি তোকে পেঁদিয়ে ...!" "চোপরাও!" গর্জে ওঠেন ঝাকানাকা। "কথা শেষ হয়নি আমার। ... মকবুল মনসবদার, আপনার দাড়ি কই?" মকবুল মনসবদার ফ্যাকাসে মুখে বললেন, "কীসের দাড়ি?" ঝাকানাকা বললেন, "অজ্ঞান হয়ে দু'দিন পড়েছিলেন হাসপাতালে। হুঁশিয়ার খানের মুখে দাড়ি গজিয়েছে একগাদা, আর মন্টুর মুখে তো দাড়ি আছেই। আপনার মুখে দাড়ি নেই কেন?" মকবুল মনসবদার আমতা আমতা করে বললেন, "হাতের পাঁচ আঙুল কি সমান স্যার? সবার মুখে কি আর দাড়ি গজায় এতো জলদি?" ঝাকানাকা ক্রুর হেসে বললেন, "তা ঠিক। সবার মুখে এতো জলদি দাড়ি গজায় না। মেয়েদের মুখে তো আরও গজায় না!" কিংকু চৌধারি বললেন, "মেয়ে? কী বলছেন স্যার? মকবুল মনসবদার মেয়ে?" ঝাকানাকা বললেন, "শুধু মেয়েই নয়, রীতিমতো প্রেগন্যান্ট মহিলা! কেমিক্যাল আলির টেস্টে এবারও প্রেগন্যান্সি পজিটিভ এসেছে!" কিংকু চৌধারি আর মন্টু লিওনার্দো হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে মকবুল মনসবদারের দিকে, আর হুঁশিয়ার খান মুঠো পাকায়, "বেটি উল্লুক, পেঁদিয়ে তোর ছাল যদি না ছাড়াই ...!" ঝাকানাকা বললেন, "খবরদার হুঁশিয়ার, গর্ভবতী মহিলার গায়ে হাত তুললে তোমার হাত ভেঙে দেয়া হবে! আর মকবুল মনসবদার ... নাকি ইসমৎ জঙ্গ বেহুঁশিয়াই বলবো? তোমার মোবাইলে যেসব খাইষ্টা খাইষ্টা এসএমএস এসে জমা হয়েছে গত তিনদিনে, সেগুলোই তোমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে! গতরাতে তোমার মোবাইল ঘাঁটতে গিয়ে দেখি বাহান্নটা এসএমএস জমা হয়েছে! মোট একুশ জন এসএমএস পাঠিয়েছে, তার মধ্যে বারোজন নিশ্চিত যে বাচ্চাটা আসলে তার! তুমি শুধু অজ্ঞান পার্টির চাঁই-ই নও, বেশ দুষ্টু মহিলাও বটে!" মকবুল মনসবদার দু'হাতে মুখ ঢাকে, মন্টু লিওনার্দো মনোযোগ দিয়ে তাকে এপাশ ওপাশ থেকে দেখে। "আর মন্টু লিওনার্দো, ওরফে শ্রীচৈতন্য!" হাঁক দেন ঝাকানাকা। "তুমিও ধরা পড়েছো একেবারে হাতে নাতে। গাঁজার কল্কিতে আর দুধের বোতল তোমার হাতের ছাপ মিলে গেছে আগের নমুনার সাথে!" কিংকু চৌধারি দাঁত কিড়মিড় করলেন, "বটে?" ঝাকানাকা বললেন, "হ্যাঁ! হুঁশিয়ার খানের কাছে যে ডলারের প্লেট আছে, এ খবর জানাজানি হয়ে যায় কোনভাবে। ইসমৎ জঙ্গ বেহুঁশিয়া আর শ্রীচৈতন্য, দু'জনেই ছদ্মবেশে অনুসরণ করে তাকে। রেলের কামরায় সেদিন আলো চলে যায়নি, সীটের হাতলে একটা সুইচ থাকে, সেটা টিপে বন্ধ করে দেয়া যায়। কথাবার্তার এক ফাঁকে আলো নিবিয়ে টুপিতে ক্লোরোফর্ম ঢেলে হুঁশিয়ার খানকে বেহুঁশ করে ইসমৎ। তারপর তার পকেট থেকে প্লেটদু'টো বার করে নিয়ে নিজের পকেটে পোরে। তারপর ক্লোরোফর্মের বোতল আর টুপিটা জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেয়। কিন্তু ইসমৎ জানে না যে মন্টু লিওনার্দো ওরফে শ্রীচৈতন্যও একই মতলবে ছিলো, ক্লোরোফর্মের গন্ধে পেয়ে সে ঠিকই আঁচ করে ফেলে কী হচ্ছে। আলো ফিরে আসার পর সে দেখে হুঁশিয়ার খান বেহুঁশ। মন্টুর পাশে বসা মিল্টন ওরফে বদরু, সে যে এ কাজ করেনি, তা মন্টু টের পায়। কাজেই একটু পর সে নিজে আলো নিবিয়ে স্কার্ফে ক্লোরোফর্ম ঢেলে চেপে ধরে মকবুল ওরফে ইসমৎ জঙ্গের নাকে। তারপর প্লেট দু'টো হাতড়ে বার করে নিয়ে নিজের পকেটে পোরে, ক্লোরোফর্মের বোতল আর স্কার্ফটা ছুঁড়ে ফেলে দেয় জানালার বাইরে। কিন্তু শ্রীচৈতন্য জানে না যা খোদ বদরু খাঁ তার ডলারের প্লেট উদ্ধার করার জন্য মিল্টন টেকনাফি সেজে এসে বসে আছে। আর বাদামও সন্দেহ করেনি মন্টু, কারণ বাদামগুলো বদরু খাঁ নিজেই চিবিয়ে খাচ্ছে একের পর এক। তাই নিশ্চিন্ত মনে একটা হাত সাফাই করা বাদাম মুখ দিতেই শ্রীচৈতন্য একেবারে অচৈতন্য হয়ে পড়ে! বদরু খাঁ প্লেট দু'টো নিজের পকেটে পোরে, তারপর একে একে বাকিদের পকেট সার্চ করে, ওরকম দামী কিছু না পেয়ে জিনিসগুলো হাঁটকে মাটকে মেঝেতে ফেলে যায়। যাবার সময় শুধু মশকরা করার জন্য হুঁশিয়ার খানের মোবাইলের সিম কার্ড খুলে নিয়ে যায়!" কিংকু চৌধারি বলেন, "কিন্তু ... তাহলে বাকি জিনিসগুলিতে বদরু খাঁ-র হাতের ছাপ পাওয়া গেলো না কেন স্যার?" ঝাকানাকা বললেন, "ওগুলো ধরার আগে সে নিশ্চয়ই দস্তানা এঁটে নিয়েছিলো! শুধু সন্দেহ জাগাতে চায়নি বলে একমাত্র বাদামের খোসাতেই তার হাতের ছাপ আছে।" কিংকু চৌধারি বিগলিত হয়ে বলেন, "স্যার, আপনি বদরুকে সন্দেহ করলেন কখন?" ঝাকানাকা বিরক্ত হয়ে বললেন, "শুরু থেকেই! তার ডলারের প্লেট পুলিশের কাছ থেকে ওভাবে লুট করা তো তাকেই মানায়, নাকি? এই ইসমৎ জঙ্গ আর শ্রীচৈতন্য হচ্ছে পরিস্থিতির শিকার মাত্র! বদরু খাঁর কাছে তো এরা সেদিনের শিশু!" হুঁশিয়ার খান একটা কিছু বলতে যাবে, ঝাকানাকা তাকে সোজা দরজা দেখিয়ে দেন। "যাও, বেরোও! ব্যাটা অপদার্থ, কাজের সময় ঢুঁঢুঁ, এখন আবার কথা বলে!" হুঁশিয়ার খান মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায়। সেপাই এসে মকবুল আর মন্টুকে লকাপে পোরে। কিংকু চৌধারি বিষণ্ন গলায় বলেন, "কিন্তু ডলারের প্লেট দু'টো তো স্যার আর ফেরত পাওয়া যাবে না!" ঝাকানাকা হাসিমুখে নিচু গলায় বললেন, "ওগুলো ফেরত না পেলেও সমস্যা নেই। ওগুলো আসল নকল প্লেট নয়!" কিংকু চৌধারি চমকে ওঠেন, "এ কী বলছেন স্যার? ওগুলো নকল নকল প্লেট? আসল নকল প্লেট তবে কোথায়?" ঝাকানাকা বললেন, "আসল নকল প্লেট তৎক্ষণাৎ নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। বদরু খাঁকে ফাঁদে ফেলার জন্যে এক জোড়া নকল প্লেট পাঠানো হয়েছিলো হুঁশিয়ার খানের কাছে, সুপার সাহেবকে এই পরার্শ আমিই দিয়েছিলাম। বদরুর কাছে এখন যে প্লেট আছে, তাতে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের বদলে ইদি আমীনের ছবি আছে!" কিংকু চৌধারি হেসে ওঠেন, "মুহাহাহাহাহাহা! দারুণ হয়েছে স্যার! বদরু সময়মতো আচ্ছা ধরা খাবে! ... এখন আপনি যদি আপত্তি না করেন স্যার, আমি ঔ মন্টু লিওনার্দো ওরফে শ্রীচৈতন্যের পাছায় কয়েক ঘা বেত লাগাতে চাই। বহুত ভুগিয়েছে দু'জনে! মহিলাকে তো আর পেটানো যাবে না, মন্টুকেই একটু রগড়ে দিই!" ঝাকানাকা উদাস গলায় বলেন, "দিন, আমার কী?" কিংকু চৌধারি হাঁক পাড়েন, "অ্যাই কে আছিস, ঐ টিঙটিঙেটাকে নিয়ায় দেখি! ওর দুধ খাওয়ার ব্যামো সারিয়ে দিচ্ছি!" ঝাকানাকা চেয়ারে হেলান দিয়ে গুনগুনিয়ে গান ধরেন চায়ের কাপ হাতে। "তুউউউউই মার খা ... ইচ্ছেমতোওওও পুলিশকে খুশি করে বাঁচ! ঝাকানাকা তখন অন্য কোথাও চায়ের কাপেএএএএ নিজের সাম্রাজ্য নিজে গড়ুউউউক ...!" দ্রষ্টব্য ১ এ নিয়েও গল্প আসবে সামনে। রয়েসয়ে। . . . গোয়েন্দা ঝাকানাকা! | Promote Your Page Too (সমাপ্ত) [/justify]
false
fe
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সামরিকতন্ত্রের নষ্টগ্রহ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সামরিকতন্ত্রের নষ্টগ্রহ ফকির ইলিয়াস========================================বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব গেছেন। পবিত্র রমজান মাসে তার এ সফর নিয়ে দেশে শুরু হয়েছে নানা কথা। সরকার পক্ষের কোন কোন নেতা বলছেন, প্রধান বিরোধীদলের নেত্রী দেশে একটি অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরির জন্য নানা রকম কৌশল অবলম্বন করছেন। খালেদা জিয়া তার দুই অসুস্থ ছেলেকে দেখার জন্য লন্ডন কিংবা ব্যাংককে কেন যাচ্ছেন না, সে প্রশ্নও তুলেছে সরকার পক্ষ। আর বিএনপি বলছে, দেখতে যাওয়া না যাওয়া খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত বিষয়।প্রশ্নটি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও করেছেন। 'একজন মা হয়ে নিজ সন্তানদের কেন তিনি দেখতে যান না?'খালেদা জিয়া ওমরাহ পালনে যাওয়ার আগে বিমানবন্দরে বর্তমান সরকারের কঠোর সমালোচনা করে গেছেন। বর্তমান সরকারকে চরম স্বৈরাচারী বলেও আখ্যায়িত করেছেন।একটি কথা খুবই স্পষ্ট আজ থেকে মাত্র চার বছর আগেও দাপটের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন খালেদা জিয়া। তার সহযোগী ছিল সেই একাত্তরের পরাজিত রাজাকার-আলবদর শক্তি। সে সময়ের প্রধান বিরোধীদল আওয়ামী লীগ বিশেষ করে জঙ্গিবাদ ইস্যুতে সরকারের তীব্র সমালোচনা করলেও, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এসব আলোচনা-সমালোচনা শুনতে ছিলেন সম্পূর্ণ নারাজ। এবং বলে বেড়াচ্ছিলেন, দেশে কোন মৌলবাদী জঙ্গি নেই। এটি ছিল একটি জাতির চরম দুঃখবোধ, স্বয়ং একজন প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদের মদত দিয়েছিলেন।ভাবতে অবাক লাগে খালেদা জিয়া এখনো তাদের পোষ্য 'বাংলা ভাই' এবং 'শায়খ রহমান'-এর একযোগে দেশব্যাপী বোমা হামলা বিষয়ে অনুতপ্ত নন। বরং প্রকাশ্যে জঙ্গিবাদের পক্ষে সাফাই গেয়েই যাচ্ছেন।সেই চারদলীয় জোট সরকারের কৃতকর্মের সূত্র ধরেই দেশের সর্বোচ্চ আদালত পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করেছেন। তারই পরবর্তী ধাপে সপ্তম সংশোধনীও বাতিল হয়ে গেছে। দেশে সামরিক শক্তির রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণের অভিলাষে চুনকালি দিয়ে এই যে ঐতিহাসিক রায়, তা মূলত জনগণেরই বিজয়। একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কোন কালো শক্তির উত্থান গণমানুষের জন্য কোন সময়ই কল্যাণকর হয় না। তা সামরিক জান্তা হোক আর জঙ্গিবাদ হোক। প্রকারান্তরে এ দুটি শক্তিকেই আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে ডানপন্থি জাতীয়তাবাদী শক্তি। তারা শুধু নিজেদের ভোগের জন্য জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করেছে বারবার।খালেদা জিয়ার বোনের ছেলে সাইফুল ইসলাম ডিউককে সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকার পক্ষের আইনজীবীর ভাষ্যমতে ডিউক অনেক গোপন তথ্য দিয়েছেন। ২১ আগস্টের সেই নির্মম বোমা হামলার সঙ্গে হাওয়া ভবন তথা তারেক রহমান, আবদুস সালাম পিন্টু, লুৎফুজ্জামান বাবর, মুফতী হান্নান প্রমুখের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল বলে ডিউক নাকি গোয়েন্দাদের তথ্য দিয়েছেন। অন্যদিকে ডিউকের পক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, ডিউক এমন তথ্য দেননি।২০০৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দেশে একযোগে বোমা হামলা, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের নির্মম হত্যাযজ্ঞের পেছনে কোন কোন শক্তিধরের হাত ছিল, তা রাষ্ট্রের মানুষের কাছে খোলাসা হওয়া খুবই জরুরি। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, আহসান উল্লাহ মাস্টার, আইভি রহমান, শাহ এএমএস কিবরিয়ার মতো জাতীয় নেতাদের নির্মমভাবে হত্যার পরও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে কঠোর হননি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শোক পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। কই, সে সময় তো বিএনপি-জামায়াতের কোন নেতা এমনভাবে আক্রান্ত হননি। তাহলে তৎকালীন প্রধান বিরোধীদল আওয়ামী লীগকে ২০০১-২০০৬ সালে নেতৃত্বশূন্য, নির্মূল করার জন্য কারা নেপথ্যে কাজ করছিল?দুইপ্রায় ১৬ কোটি মানুষের দেশে রাতারাতি কেউ সোনার জিয়নকাঠির স্পর্শ লাগাতে পারবে, এমন কোন সম্ভাবনা নেই। চারদলীয় বিএনপি-জামায়াত জোট দেশের মুক্তিকামী মানুষের স্বপ্ন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করে রাষ্ট্রের অবকাঠামোকে পঙ্গু করার জন্য তৎপর ছিল। তাদের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ছিল চোখে পড়ার মতো। ভেঙে পড়েছিল গোটা শিক্ষাব্যবস্থা। নাম-জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাষ্ট্রের মানুষ এসব জঘন্য হীনকর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। তারা জানিয়ে দিয়েছে ৩০ লাখ শহীদের রক্তস্নাত বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ঠাঁই নেই। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের রায় কার্যকর করা, শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন সাধনে সচেষ্ট হওয়া, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে নিজ রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষা করে চুক্তি করাসহ উল্লেখযোগ্য সফলতা দেখাতে সমর্থ হয়েছে। প্রক্রিয়াধীন, একাত্তরের মানবতাবিরোধী ক্রিমিনালদের বিচারের কার্যক্রম শুরু করে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনই ঘটাতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সামরিকতন্ত্রের বেনিফিসিয়ারিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সম্ভব হয়েছে।আগেই বলেছি, বৃহৎ জনগোষ্ঠীর এ দেশে তাৎক্ষণিক সব সমস্যা সমাধান করা খুব সহজ কাজ নয়। এছাড়া একটি পরাজিত শক্তি যখন কোন গণতান্ত্রিক সরকারকে পদে পদে বাধা দেওয়ার জন্য মরিয়া থাকে তখন এ কাজগুলো আরও কঠিন হয়ে পড়ে সরকারের জন্য।খালেদা জিয়া এবং তার দোসররা মনে করেছিল তারা বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হিসেবেই ভোগ করবে। তারা তা পারেনি। ফলে সেই আগের মতোই 'বিসমিল্লাহ' এবং 'ভারত' জুজুর ভয় দেখিয়ে তারা মানুষের আইওয়াশ করছে বারবার। অথচ পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট বেরুচ্ছে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার অন্যতম কারিগর হারিছ চৌধুরী নাকি সেই ভারতের করিমগঞ্জে তার মামা বাড়িতে নিরাপদ আশ্রয়ে আছেন। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ভারতকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে বিএনপি যতটা ব্যবহার করেছে, আওয়ামী লীগ তার সিকি ভাগও করেনি। তারপরও সব দোষ আওয়ামী লীগের ওপর চাপিয়ে তথাকথিত তমদ্দুনপন্থি রাজনীতি করার খায়েশ বিএনপির ট্রাডিশনে পরিণত হয়েছে।পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে কর্নেল তাহের হত্যাকা-ের সামরিক নথি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফাঁসির নামে কর্নেল তাহেরকে তড়িঘড়ি হত্যার ব্যবস্থা করেছিল জিয়াউর রহমান। এবং তার সব নথিপত্রও কি তাহলে সেই সামরিক জান্তারা গায়েব করে গেছে?যে কোন রাষ্ট্রের সামরিক শাসকরা শুধু স্টিম রোলারই চালায় না, বুলডোজার দিয়ে জাতির ভবিষ্যৎ যাত্রাপথের সড়ককে গুঁড়িয়ে দিয়ে যায়। জিয়া বাংলাদেশের ইতিহাসে তেমনি একটি নষ্টগ্রহের স্থপতি। ছাত্ররাজনীতির সৃজনশীলতাও চরমভাবে বিনষ্ট হয়েছে এই জিয়াউর রহমানের হাতেই। তার দল সে উত্তরাধিকারই বহন করে চলেছে। ১ সেপ্টেবর ২০১০----------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ঢাকা। ৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি - ভেরা বীন
false
ij
গল্প_ প্রথম সেশান ___ মনোরোগ-বিশেষজ্ঞ: (গম্ভীর কন্ঠে) নাম? নাজমা: (কাঁপা কাঁপা কন্ঠে) নাজমা সুলতানা তুলি? মনোরোগ-বিশেষজ্ঞ: (মুখ না-তুলে, প্যাডে লিখতে লিখতে) বয়স? নাজমা: আগামী জুলাই মাসে সাতাশ হবে। মনোরোগ- বিশেষজ্ঞ: কী সমস্যা বলুন? নাজমা: (কাঁপা কাঁপা কন্ঠে) আমি ...আমি একা থাকলে অদ্ভুত অদ্ভুত সব জিনিস দেখি। মনোরোগ-বিশেষজ্ঞ: কী জিনিস দেখেন? নাজমা: (ফিসফিস করে) এই ... এই বাচ্চা হাতি ...সাদা রঙের ঘোড়া ... মনোরোগ-বিশেষজ্ঞ: কোথায় দেখেন? স্বপ্নে? নাজমা: না, না, স্বপ্নে না। বললাম না একা থাকলে দেখি... ঘরের ভিতরেই দেখি। বেডরুমে ...ড্রইংরুমে ... মনোরোগ-বিশেষজ্ঞ: ঠিক কোন্ সময়টায় দেখেন? নাজমা: ঠিক নাই, এই সকালের দিকে ...কখনও কখনও দুপুরের দিকে। কালকে বিকালের দিকে ঘরে একটা কালো রঙের ঘোড়ার বাচ্চা দেখলাম ...আমার স্বামী ঘরে থাকলে দেখি না ... মনোরোগ-বিশেষজ্ঞ: কত দিন হয়েছে? নাজমা: কি! মনোরোগ-বিশেষজ্ঞ: বিয়ের? নাজমা: আট মাস। মনোরোগ-বিশেষজ্ঞ: বাড়িতে আর কে থাকে? নাজমা: আমার সংসারটা ছোট। আমি আর আমার হাজব্যান্ড -আর কাজের একটা মেয়ে ... মনোরোগ-বিশেষজ্ঞ: কতদিন ধরে দেখছেন এসব? নাজমা: মাস খানেক। মনোরোগ-বিশেষজ্ঞ: হু, রাতে ঘুমের সমস্যা হয়? নাজমা: হ্যাঁ। মাস খানেক হল ঘুম পাতলা হয়ে গেছে। একবার ঘুম ভাঙ্গলে ঘুম আর আসতে চায় না। আগে আমার ঘুমের সমস্যা ছিল না। মনোরোগ-বিশেষজ্ঞ: ইদানিং আপনি কি কোনও ব্যাপারে আপসেট? নাজমা: হ্যাঁ, মানে ...মানে মনোরোগ-বিশেষজ্ঞ: বলুন ... নাজমা: না ... আমার স্বামী ... মনোরোগ-বিশেষজ্ঞ: বলুন ... নাজমা: আমার স্বামী ... আমার স্বামী ... আমাকে নিয়ে হ্যাপি না ... মনোরোগ-বিশেষজ্ঞ: এ কথা কেন মনে হলো আপনার ? নাজমা: বিয়ের পরপর ওর ...মানে ... আমার প্রতি ওর যতটা আগ্রহ ছিল এখন...এখন আর ততটা ...মানে ... মনোরোগ-বিশেষজ্ঞ: ওহ্। সে তো হতেই পারে। পারে না? এক সময় ঘোর সকলেরই কাটে ... নাজমা: না, মানে ...ও মনোরোগ-বিশেষজ্ঞ: হ্যাঁ, বলুন ... নাজমা: না, আমি বলতে পারব না ... মনোরোগ-বিশেষজ্ঞ: বলুন ... দেখুন আমি একজন চিকিৎসক ...চিকিৎসকের কাছে কোনও কথা লুকাতে নেই। আপনার মেন্টাল পেইন সাবসাইড করতে আমার সব শোনা দরকার। নাজমা: না। প্লিজ ... আমি বলতে পারব না ...আমার কেমন যেন লাগে ... মনোরোগ-বিশেষজ্ঞ: আপনার স্বামীর কি অন্য কোথাও - নাজমা: হ্যাঁ, মনোরোগ-বিশেষজ্ঞ: কী ভাবে সিওর হলেন? নাজমা: ও ...ও ... ঘরে ... মনোরোগ-বিশেষজ্ঞ: আই সি। তার পর থেকেই ঘরে পশুপাখি দেখছেন? নাজমা: হ্যাঁ। তবে পাখি কখনও দেখিনি। মনোরোগ-বিশেষজ্ঞ: ও। তো, আপনি যখন হাতি ঘোড়া ... মানে ... ঐসব দেখেন তখন কাজের মেয়েটা কই থাকে? নাজমা: রান্নাঘরে থাকে হয়তো...কি ছাদে কাপড় তুলতে যায় ...বাজার ওই করে ... ওকেও আমি মাঝেমাঝে দেখি না । মনোরোগ-বিশেষজ্ঞ: (প্যাডটা তুলে নিয়ে) ঠিক আছে। আমি কিছু ঔষুধ লিখে দিচ্ছি, মনে করে নিয়মিত খাবেন। নাজমা: ঠিক আছে। মনোরোগ-বিশেষজ্ঞ: আমার এখানে আবার এক সপ্তাহ পরে আসবেন। আমরা নেকস্ট সেশান-এ বসব। নাজমা: আসব। মনোরোগ-বিশেষজ্ঞ: আগামী মঙ্গলবার বিকেল ঠিক সাড়ে পাঁচটায় চলে আসবেন। মনে থাকবে তো? নাজমা: হ্যাঁ, মনে থাকবে। সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:৩৫
false
fe
আমাদের বিশ্বাসগুলো যেভাবে জিম্মি হচ্ছে আমাদের বিশ্বাসগুলো যেভাবে জিম্মি হচ্ছেফকির ইলিয়াস=====================================একটি জরিপ আমাদের আবার আশান্বিত করেছে। বাংলাদেশে গত নভেম্বর থেকে তিন মাসে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থাশীল মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, এমনটাই উঠে এসেছে নিয়েলসন-বাংলাদেশের এক জরিপে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) জন্য এই জরিপ করে দিয়েছে নিয়েলসন-বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির নেতা জন ম্যাককেইনের নেতৃত্বে পরিচালিত আইআরআইকে ডানপন্থিদের একটি হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করেন অনেকে।গত ৪ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে চালানো এই জরিপে দেশের আটটি বিভাগের সব জেলার শহর ও গ্রামাঞ্চলের দুই হাজার ৫৫০ জনের মতামত নেয়া হয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীরা সবাই ১৮ বছর ও তার বেশি বয়সের। জরিপে দেখা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৭ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা জানিয়েছেন। একই প্রতিষ্ঠানের গত বছর ৩০ অক্টোবর থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে চালানো জরিপে ক্ষমতাসীন দলকে আস্থায় রেখেছিলেন ৪৮ শতাংশ। এবার ২৫ শতাংশ বিএনপির প্রতি আস্থার কথা জানিয়েছেন, যেখানে আগের জরিপে তাদের পক্ষে রায় ছিল ২৪ শতাংশের।জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭৩ শতাংশের মতে, বাংলাদেশ সঠিক পথেই এগোচ্ছে। এই হার গত নভেম্বরের তুলনায় ৯ শতাংশ এবং বিগত দুই বছরের তুলনায় ৩৮ শতাংশ বেশি। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮৩ শতাংশ বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খুবই ভালো’ বা ‘কোনো রকম ভালো’ বলেছেন। আর ৭৭ শতাংশ বলেছেন, দেশ রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল বলে তারা মনে করছেন।দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী বেশিরভাগ মানুষ। ৭২ শতাংশ বিশ্বাস করেন, আগামী বছর তাদের ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে। আর দেশ রাজনৈতিকভাবে আরো স্থিতিশীল হচ্ছে বলে মনে করছেন ৬৫ শতাংশ। অর্থনীতি ও নিরাপত্তাকে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা মনে করছেন অধিকাংশ। গত নভেম্বরের তুলনায় এই জরিপে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষের হার ৮ শতাংশ বেড়ে ২১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সমান সংখ্যক ব্যক্তি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে অর্থনীতির কথা বলেছেন।সমস্যা হিসেবে দুর্নীতিকে চিহ্নিত করেছেন ৯ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ৪৫ শতাংশ ঘুষ দেয়ার কথা বলেছেন চাকরি পেতে। এরপরে পুলিশকে ঘুষ দেয়ার কথা বলেছে ১১ শতাংশ। এবারই প্রথম সংস্থাটি জরিপে বাংলাদেশে চরমপন্থা নিয়ে মতামত নিয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫৩ শতাংশ বাংলাদেশে রাজনৈতিক চরমপন্থাকে বড় সমস্যা বলেছেন। অন্যদিকে ৪৪ শতাংশের মতে, ধর্মীয় চরমপন্থা খুব বড় সমস্যা। একটি বিষয় আমরা দেখছি, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তাহলে এত হানাহানি ঘটছে কেন বাংলাদেশে। কেন মানুষের বিশ্বাস নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে রাজনীতির প্রতি?বিশ্বে আরেকটি সংবাদ আলোড়ন তুলেছে। তা হলো ‘পানামা পেপারস’। মোসাক ফনসেকা নামে পানামার একটি আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ফাঁস হওয়া ১ কোটি ১৫ লাখ গোপন নথি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছে। ফাঁস হওয়া এসব নথিতে বিশ্বের শতাধিক ক্ষমতাধর মানুষ বা তাদের নিকটাত্মীয়দের বিদেশে টাকা পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তালিকায় দেখা গেছে, চীন, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরবের মতো ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান বা তাদের আত্মীয় এসব অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত। শুধু রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানরাই নন, বিশ্বখ্যাত ফুটবলার লিওনেল মেসি থেকে ভারতীয় চিত্রনায়িকা ঐশ্বরিয়া রাই। তালিকায় আছে অনেকেরই নাম। আছেন অমিতাভ বচ্চনও। মেক্সিকোর মাদকসম্রাট বা সন্ত্রাসী সংগঠন হিজবুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগের কারণে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কালো তালিকায় থাকা ব্যবসায়ীরাও বাদ যাননি এ তালিকা থেকে।এখন পর্যন্ত প্রকাশিত নথিতে বাংলাদেশের কারো নাম নেই। তবে আগামী মে মাসে সম্পূর্ণ নথি প্রকাশ করা হলে বাংলাদেশের কারো নাম আছে কি না, জানা যাবে। এর আগে আইসিআইজে ২০১৩ সালে অর্থ পাচারের একই ধরনের তালিকা প্রকাশ করেছিল। সেখানে বাংলাদেশের ৩৪ জনের নাম ছিল। তাদের মধ্যে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীরাও ছিলেন।দুর্নীতিতে যাদের নাম এসেছে তাদের মাঝে আছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো, আলা মুবারক (মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের ছেলে), ইরাকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আলাওয়ি, সৌদি বাদশাহ সালমান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট ও আবুধাবির আমির শেখ খলিফা বিন জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান, আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্ড গুনলাগসন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সার্গেই রলডুগিন, কাতারের সাবেক আমির শেখ হামদ বিন খলিফা আল থানি, চীনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লি পেংয়ের কন্যা লি জিয়াওলিন, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের জ্ঞাতি ভাই রামি ও হাফিজ মাখলুফ, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার ভাইপো ক্লিভ খুলুবুস জুমা, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের তিন সন্তান মারিয়াম সফদর, হাসান নওয়াজ ও হুসাইন নওয়াজ। একটি বিষয় আমরা দেখলাম, অর্থ চুরিতে সমাজতন্ত্রী, কালো-সাদা, বাদশাহ, গণতন্ত্রী সবাই এক কাতারে। ধনী কিংবা গরিব দেশের রাষ্ট্রনায়করা একই কাজটি করেছেন! বিশ্ব এভাবেই এগোচ্ছে এক চরম অবিশ্বাসের দিকে।এই ঘটনার পরপরই তোলপাড় শুরু হয়েছে বিশ্বে। পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর পদত্যাগ করেছেন আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্ড গুনলাগসন। পানামার একটি ল’ ফার্মের গোপন নথি ফাঁসের পর এই প্রথম কোনো মন্ত্রীর পদত্যাগের ঘটনা ঘটল। কৃষিমন্ত্রী এখন নতুন প্রধানমন্ত্রী হবেন। কয়েকটি প্রতিবেদনে এ কথা জানা গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। বিশ্বের ধনী আর ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা কোন কৌশলে কর ফাঁকি দিয়ে কিভাবে গোপন সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তা বেরিয়ে এসেছে ফাঁস হওয়া নথিতে। এতে করে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন ওইসব ব্যক্তি। নথি অনুযায়ী, আইসল্যান্ডের গুনলাগসন একটি বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে দেশের ব্যাংকগুলোতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন, যা তিনি গোপন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগের মুখে তিনি প্রেসিডেন্টকে পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার আহ্বান জানালেও প্রেসিডেন্ট তা প্রত্যাখ্যান করেন। বিবিসি বলছে, ফাঁস হয়ে যাওয়া নথির বরাতে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্ড গুনলাগসন ও তার স্ত্রী ২০০৭ সালে উইনট্রাস নামের কোম্পানিটি ক্রয় করেন। ২০০৯ সালে দেশটির পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হওয়ার সময় তিনি প্রতিষ্ঠানটি থেকে পাওয়া লভ্যাংশের কথা গোপন করেছিলেন। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী গুনলাগসনের স্ত্রী আনা সিগুরলাগ পালসডোটিরের সই করা একটি নথিতে দাবি করা হয়েছে, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার কোম্পানিটির মাধ্যমে বিনিয়োগ করা হয়েছে।এ নিয়ে জোর গলায় কথা বলা শুরু করেছে ভারত সরকার। কারো বিরুদ্ধে অন্যায় কোনো কার্যক্রমের প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার সঙ্গে আলোচনার পর অর্থমন্ত্রী ওই তদন্তের নির্দেশ দেন। আইসিআইজের সঙ্গে ওইসব ফাইলের যৌথভাবে তদন্ত করছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। ফাঁস হওয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, অফসোর হোল্ডিং বা উপক‚লীয় প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন ভারতের মেগাস্টার অমিতাভ বচ্চন, তার পুত্রবধূ ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন, ডিএলএফ চেয়ারম্যান কেপি সিং ও তার পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য, ইন্ডিয়াবুলসের মালিক সমীর গেহলাউট, এপোলা টায়ারের ওঙ্কার সিং কানওয়ার ও বিনোদ আদানির ভাই গৌতম আদানি। ওই তালিকায় রয়েছে ফুটবলের এ সময়ের জনপ্রিয় খেলোয়াড় লিওনেল মেরি নাম। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে তার পরিবার। ওদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে জড়িয়ে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা প্রত্যাখ্যান করেছে ক্রেমলিন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দমিত্রি পেসকভ বলেছেন, পুতিন, রাশিয়া, আমাদের দেশ, আমাদের স্থিতিশীলতা, আসন্ন নির্বাচনকে প্রধান টার্গেট করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে।সে যাই হোক, এভাবে অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধানদের কুকর্মও শিগগিরই বেরিয়ে আসবে হয়তো বা। জানা যাবে তাদের নেপথ্য ফিরিস্তি। আমরা খুব আশ্চর্য হয়ে দেখছি, এসব নেতারাই বিশ্বে শান্তি-সম্প্রীতি-আলোকিত প্রজন্মের কথা বলছেন। তারা আমাদের রক্ষক। কিন্তু আসলেই কি তারা আমাদের প্রজন্মকে রক্ষা করতে পারছেন? কিংবা চেষ্টা করছেন? দেশে কিংবা বিদেশে সবখানেই এখন দখলদারদের রাজত্ব। তারা গণমানুষকে শোষণ করছেন। এর অবসান কোথায়? আমরা এখন ডিজিটাল শোষণের শিকার। তা এই কয়েক মাসের বিভিন্ন ঘটনা প্রমাণ করছে। আজ মানুষকে চোখ খুলে দাঁড়াতে হবে। সাহস নিয়ে কথা বলতে হবে। এ ছাড়া আর কি ই বা করার আছে!----------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ৯ এপ্রিল ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৮:৫০
false
mk
প্রধানমন্ত্রীর কানাডা সফর কোরবানি ঈদের ঠিক আগমুহূর্তে ৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রামের চিলমারীতে অনুষ্ঠিত এক সুধীসমাবেশের মাধ্যমে হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে ১০ টাকা মূল্যে পরিবারপ্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল বিক্রির একটি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন। সরকার দরিদ্রদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এটি চালু করেছে। দেশের ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে বছরে সাড়ে সাত লাখ টন চাল ১০ টাকা কেজিতে বিক্রির যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এটি দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে একটি চমৎকার কার্যক্রম। বছরে দুবার অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর-নভেম্বর মিলিয়ে মোট পাঁচ মাস দরিদ্র পরিবারগুলো এই সুবিধা পাবে। প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী, বিধবা এবং নারীনির্ভর দরিদ্র পরিবারগুলো এই সুবিধা লাভে অগ্রাধিকার পাবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের এই কর্মসূচির সাফল্যের ওপর বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনের অগ্রযাত্রা দ্রুততর হওয়া নির্ভর করছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আবার ব্যর্থতার মতো কিছু ঘটলে উল্টো প্রতিক্রিয়াও ঘটতে পারে। সে কারণে শুরু থেকেই সরকারকে সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলতে হবে, এগিয়ে যেতে হবে, পরিবারগুলোর খাদ্যনিরাপত্তার পাশাপাশি ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সফল হবে—সেটিই সবার কামনা।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে ইতিবাচক কিছু দিকের ওপর দৃষ্টি দেওয়া যেতে পারে। প্রথমত, যে সময়টি ১০ টাকা মূল্যে চাল বিতরণের জন্য নির্ধারণ করেছে সরকার, সেটি যথার্থ হয়েছে। কোরবানির ঈদের আগে মাত্র ১০ টাকা দরে ৩০ কেজি চাল ঘরে তুলতে পেরে পরিবারগুলো নিশ্চয়ই দারুণভাবে উপকৃত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, সেপ্টেম্বর-নভেম্বরে উত্তরবঙ্গসহ দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে চালের দাম একটু বাড়ন্ত থাকে, একইভাবে মার্চ-এপ্রিলে বোরো ধান কাটার ঠিক আগমুহূর্তেও চালের দাম কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকে। সে সময় এসব পরিবার মাত্র ১০ টাকা কেজিতে চাল কিনতে পারলে পরিবারগুলোর হাতে যে অর্থ সাশ্রয় হবে তাতে তারা অনেকটাই উপকৃত হবে। তৃতীয়ত, যে অঞ্চলটিকে দিয়ে চাল বিক্রি শুরু করা হয়েছে তাকে একসময় মঙ্গাপীড়িত অঞ্চল বলা হতো। গত সাত বছর ‘মঙ্গা’ শব্দটিই দেশে শোনা যায়নি। অথচ এর আগে উত্তরাঞ্চলের মঙ্গাপীড়িত মানুষের কষ্টের কথা পত্রপত্রিকায় এই সময় এতটাই উঠে আসত যে অনেক সময় রিলিফ বিতরণেরও প্রয়োজন দেখা দিত। সেই মঙ্গাপীড়িত এলাকায় এখন দুর্ভিক্ষ নেই সত্য, তবে বেশ কিছু দরিদ্র পরিবার এই অঞ্চলে এখনো রয়েছে, যাদের জীবন-জীবিকার উন্নতি আগের চেয়ে ভালো হলেও দারিদ্র্য দূর হয়ে গেছে এমনটি দাবি করা যাবে না। নানা আর্থিক টানাপড়েনে বিধবা, প্রতিবন্ধী এবং নারী শ্রমনির্ভর পরিবারগুলোকে চলতে হয়। দেশের অন্য অঞ্চলে পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি ঘটলেও কিছু কিছু হতদরিদ্র মানুষ তো সেখানেও বসবাস করছেই। বিশেষত প্রতিবন্ধী, বিধবা এবং নারী শ্রমনির্ভর পরিবারগুলোতে অভাব-অনটন থাকা মোটেও অসম্ভব কিছু নয়। বাংলাদেশে ২৩ শতাংশ মানুষের জীবনে এখনো দারিদ্র্য রয়েছে, আমরা তাদের জীবন থেকে এই অভিশাপ দূর করতে পারিনি। অথচ বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে এরই মধ্যে পদার্পণ করেছে। আগামী চার-পাঁচ বছরে পুরোপুরি মধ্যম আয়ের দেশে প্রবেশ করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। সে ক্ষেত্রে এত বিপুলসংখ্যক মানুষকে দারিদ্র্যসীমার নিচের দিকে রেখে বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে প্রবেশের ধারণা পরিহাস সূচকই মনে হবে। এ ছাড়া ২০৩০ বা ২০৪১ সালের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণেও আমরা সফল হব না, যদি আমাদের সমাজের নিচের অংশে থাকা হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর অবস্থান নাজুক থেকে যায়। সে কারণেই দ্রুত সমাজের দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী পরিবারগুলোর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। সুখের বিষয়, শেখ হাসিনা গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি বর্তমান সময়ে ধরতে বা উপলব্ধি করতে পেরেছেন, দরিদ্রবান্ধব একটি কার্যক্রমের অধীনে ৫০ লাখ মানুষকে মাত্র ১০ টাকা কেজিতে চাল কেনার সুযোগ করে দিয়েছেন। বাজারে যে চাল ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হয়, তা যদি দরিদ্র মানুষগুলো মাত্র ১০ টাকায় কিনতে পারে, তাহলে তাদের পরিবারে নগদ অর্থ সাশ্রয় করার একটি ব্যবস্থা থাকবে, উদ্ধৃত্ত অর্থ দিয়ে কাপড় কেনাসহ খাদ্যসামগ্রী তথা মাছ, মাংস, শাকসবজি খাওয়ার সুযোগ ঘটবে। তাতে তাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। সুতরাং সরকার পুরো বিষয়টি অত্যন্ত হিসাব-নিকাশ করেই গ্রহণ করেছে তা স্পষ্ট বোঝা গেল। এখানেই সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ১০ টাকা কেজি চালের কার্যক্রম স্বচ্ছ থাকবে কি? তা আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে অনেকের মনেই কিছু সন্দেহ এবং শঙ্কার জন্ম নিতে শুরু করতে পারে। সেই দোষ তাদের দিয়ে লাভ নেই। বাস্তবতা হচ্ছে, এ ধরনের গরিববান্ধব অনেক কর্মসূচিই শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। না পারার কারণ হচ্ছে দুর্নীতি। আমলা বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং তাদের চারপাশে যাঁরা থাকেন, তাঁরা প্রায়ই দরিদ্রের হকে ভাগ বসাতে দ্বিধা করেন না। গরিবের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ অথবা খাদ্যদ্রব্য ওজনে কম দেওয়া বা মোটেও না দেওয়ার মতো ঘটনা কোথাও কোথাও ঘটেছে। সরকার অনেক মহৎ উদ্যোগ নিলেও স্থানীয় প্রশাসন, দলীয় নেতাকর্মীদের অনেকেই লুটপাট করা, নয়ছয় করার নানা ছলচাতুরী করে থাকে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্ষমতা ও অর্থবিত্ত নেই। তাই তাদের বঞ্চিত করার মানসিকতা প্রশাসন ও ক্ষমতাবানদের মোটেও কম নয়। সেখানেই মস্ত বড় বিপদ। এখানে যেহেতু কম মূল্যে চাল বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে, তাই স্থানীয় পর্যায়ে ডিলারসহ নানা গোষ্ঠীর লোলুপদৃষ্টি হয়তো পড়েও যেতে পারে। যেন তা ঘটতে না পারে সেটি কড়া নজরদারিতে রাখা অপরিহার্য। তা ছাড়া প্রকৃত প্রতিবন্ধী, বিধবা এবং নারী শ্রমনির্ভর পরিবারগুলোকে বাদ দিয়ে কেউ যেন নিজেদের পরিচিত অথবা টাকার বিনিময়ে রেশন কার্ড দেওয়ার চেষ্টা না করতে পারে সেদিকে সতর্ক নজর রাখতে হবে। প্রকৃতই যারা এই কর্মসূচির আওতায় আসার জন্য যোগ্য, তাদেরই কেবল রেশনের কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা থাকে—এটি নিশ্ছিদ্র করতে হবে। দল, মত, ধর্ম, জাতিগত ও সম্প্রদায়গত পরিচয় যেন কারো অধিকার কেড়ে না নিতে পারে, প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত না করে সেদিকে নজর দিতেই হবে। আমাদের সমাজে মিথ্যায় অভ্যস্ত মানুষের সংখ্যা মোটেও কম নয়। এখানেও যেন সেই অপশক্তি ঢুকতে না পারে, লুটপাটের কোনো সুযোগ না পায়, সেদিকে সংশ্লিষ্ট মহলকে দৃষ্টিতে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, সরকারের এমন কর্মসূচি সফল হলে ৫০ লাখ পরিবারে কম করে হলেও দুই থেকে তিন কোটি মানুষ রয়েছে, যারা সরাসরি উপকৃত হতে পারবে।অন্যদিকে এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে যদি বড় ধরনের কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও প্রকৃত হতদরিদ্রদের বঞ্চিত করার অভিযোগ ওঠে, সেটি যদি মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তাহলে শেখ হাসিনার সরকারের ভাবমূর্তি সমাজের নিম্নস্তরের দিকে বড় ধরনের ধাক্কা খাবে, ধসও নামতে পারে। সুতরাং মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মতো পরস্পরবিরোধী দুই অবস্থা নিয়ে এই কর্মসূচির সাফল্যের যেমন একটি বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব সমাজজীবনের নিচের দিকে এমনকি ওপরের দিকেও পড়ার সুযোগ রয়েছে, একইভাবে সরকার এবং দলগতভাবে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তিও তাতে উজ্জ্বল হতে পারে, আবার স্খলন ঘটলে সরকারের প্রতি নেতিবাচক প্রভাবও বিস্তার করতে পারে। সরকারের জন্য এই কর্মসূচি সফল করার মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ একই সঙ্গে উপস্থিত হয়েছে। যেহেতু এই হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগের অবস্থান ও বসবাস গ্রামেগঞ্জে, তাই সেখানে ১০ টাকা কেজি মূল্যে চাল বিক্রির কর্মসূচি সফল করা মোটেও সহজ কাজ নয়। স্থানীয় প্রশাসন ও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে এর আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব উপলব্ধি করার লোকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। সে কারণে নজরদারিটা দায়িত্বশীল প্রশাসনকে তাদের মতো করে একসঙ্গে নিতে হবে, অন্যদিকে দলীয় হাইকমান্ডের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে মাঠপর্যায়ের অবস্থা পরিবীক্ষণ করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ওঠা এবং প্রমাণিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়ম কার্যকর করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে ১৯৯৮ সালে দেশব্যাপী ২০ শতকের ভয়াবহতম বন্যা এবং বন্যা-পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার সরকার যেভাবে খাদ্য, শস্যবীজসহ নানা ধরনের সহযোগিতা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে পেরেছিল, সেই অভিজ্ঞতা এবং সাফল্যের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। সেই সময় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সরকার যেমন সফল হয়েছিল একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষও উপকৃত হয়েছিল। এসব সংকল্প ছাড়াও বৃদ্ধ ভাতা, খাদ্য সহযোগিতা, একটি বাড়ি একটি খামারসহ বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নে শেখ হাসিনার সরকার অনেক ক্ষেত্রেই সফল হয়েছিল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় নেতাকর্মীরা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে, তার পরও শেখ হাসিনার তিন মেয়াদের সরকারের সময় দেশের দরিদ্রবান্ধব যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার ফলে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার রাজনৈতিক মিশন-ভিশন অনেকটাই সফল হচ্ছে। বাংলাদেশ এত অল্প সময়ে আর্থিক এবং সামাজিক খাতে অন্যদের রোল মডেল হওয়ার মতো প্রশংসা কুড়িয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতিও অর্জন করেছে। আমার ধারণা, ১০ টাকা কেজিতে চাল কেনার সুযোগটি সফল হলে শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশ সামগ্রিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার কৃতিত্বও দাবি করতে পারবে। খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং মাঠ প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে কতটা বণ্টন ও নজরদারির ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে, তা তারাই ভালো বলতে পারবে। একই সঙ্গে গোটা আওয়ামী লীগ এবং তাদের তৃণমূল সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিকে সফল করতে কতটা আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসবে, তার ওপরই এর এবং সরকারের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করছে। দেশবাসী সেটিই দেখতে চায়, পেতে চায়। সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০৮
false
mk
ধারাবাহিক চক্রান্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে ষড়যন্ত্রে মাখা দিনগুলোর সঙ্গে ২০০৯ সালে যুক্ত হয় ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি। এ দুই দিনে বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) জওয়ানদের দ্বারা ৩৬ ঘণ্টা বিদ্রোহের পরিণতিতে পিলখানা তৈরি হয় একটি ভয়ংকর মৃত্যুপুরীতে। শুধু রক্ত আর রক্ত। অফিস এবং কর্মকর্তাদের বাসাবাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়। ৫৭ জন কর্মরত সেনা কর্মকর্তা, একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, একজন সৈনিক এবং দুজন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রীসহ মোট ৬১ জন নিহত হয়। এ ছাড়া পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাদের বাঁচাতে গিয়ে বিদ্রোহীদের বুলেটে প্রাণ হারান সাতজন বিডিআর জওয়ান। বিডিআর সদর দপ্তরের গেট থেকে বিদ্রোহী জওয়ানরা এলোপাতাড়ি গুলি করায় আরো ছয়জন পথচারী নিহত হয়। এমন ঘটনা বিশ্বে নজিরবিহীন, ভাবা যায় না! এই বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে দায়ের করা মামলাটি হচ্ছে পৃথিবীর ইতিহাসে ফৌজদারি আদালতে সবচেয়ে বড় হত্যা মামলা। মোট আসামি ছিলেন ৮৫০ জন। মামলার রায়ে ফাঁসির হুকুম হয়েছে ১৫২ জনের। কোনো একটি মামলায় এত অধিকসংখ্যক ফাঁসির উদাহরণ আর নেই।১৬১ জনের যাবজ্জীবন ও ২৬২ জনের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি হয়েছে। হত্যা মামলার বাইরে বিডিআরের বিভাগীয় আইনে অভিযুক্ত হয়েছেন আরো কয়েক হাজার। বিভাগীয় আইন মোতাবেক তাঁদের অনেকেরই ছয় বছর বা তার নিচে বিভিন্ন মেয়াদে জেল হয়েছে, চাকরিচ্যুত হয়েছেন অনেকে। যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে এবং যার জের ধরে এত ফাঁসি—সব কিছুই দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু আইনের শক্ত প্রয়োগ এবং বিচার সমাজ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা রক্ষা, ন্যায়বিচারের স্বার্থে এবং ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে অপরিহার্য। আশা করা যায়, উচ্চ আদালতের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হবে এবং রায় কার্যকর হবে। এই দুর্ভাগ্যজনক মর্মান্তিক ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছে, তাদের আমরা আর কোনো দিন ফিরে পাব না। এই বেদনার ভার আমাদের অন্ততকাল ধরে বহন করতে হবে। এই ভারী বোঝা মাথায় নিয়েই আমাদের পথ চলতে হবে। কারা জাতির ঘাড়ে এত বড় ভারী বোঝা চাপিয়ে দিল? এই বিভীষণদের চেনা দরকার। যে সন্তান বাবা হারিয়েছে, তাকে সারা জীবন চলার পথের ঘাত-প্রতিঘাতে বাবার অভাবের পীড়ন সইতে হবে। স্বজনহারাদের সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো পন্থা মানুষের কাছে নেই। তবে প্রকৃতির অমোঘ নিয়মেই তারা সান্ত্বনা পাবে, আবার উঠে দাঁড়াবে, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই শোককে শক্তিতে পরিণত করবে। মানুষের পক্ষে যথটুকু করা সম্ভব তার সব কিছুই করেছেন রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি স্বজনহারানোর বেদনা বোঝেন। সব প্রতিকূল অবস্থা কাটিয়ে নতুন নাম, পতাকা ও নতুন বিন্যাসে সীমান্তরক্ষী বাহিনী আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আগের যেকোনো সময়ের থেকে আগের বিডিআর তথা আজকের বিজিবি এখন অনেক বেশি শক্তিশালী এবং সুসংগঠিত। কিন্তু যে প্রশ্নটি অমীমাংসিত রয়ে গেল তা হলো—এই মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞের ঘটনা কি শুধু সংক্ষুব্ধ বিডিআর জওয়ানদের কাজ, নাকি এর পেছনে আছে সুদূরপ্রসারী কোনো ষড়যন্ত্র; যার শিকড় অনেক গভীরে। কিছুসংখ্যক মানুষ বলার চেষ্টা করে, নেপথ্য নায়কদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেওয়া। প্রত্যেককে বুঝতে হবে, যেকোনো কাজের একটা চূড়ান্ত লক্ষ্য থাকে। পথিমধ্যে যা কিছু করা হয়, তা ওই চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের পন্থা মাত্র বা বলা যায় মধ্যবর্তী লক্ষ্য। সামরিক ইতিহাসে দেখা যায়, বিবদমান রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজমান থাকলে একে অপরের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে দুর্বল করার স্বার্থে বিপরীতপক্ষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে অথবা নিয়োজিত এজেন্টদের দ্বারা নাশকতামূলক আক্রমণ চালিয়ে শত্রুদেশের সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে থাকে। এসব ক্ষেত্রে সেনা পরিবার ও তাদের বাসস্থানে আক্রমণের কোনো ঘটনা ইতিহাসে নেই। বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের এমন গুরুতর কোনো অবনতি কখনো হয়নি, যার কারণে বিদেশি কোনো রাষ্ট্র তাদের সামরিক অভিযানের সুবিধার্থে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার লক্ষ্যে এই আক্রমণ চালাতে পারে। এ রকম একটি ঘটনা যদি ভারত বা পাকিস্তানে ঘটত, তাহলে অভিযোগের আঙুল একে অপরের দিকে তোলার যথেষ্ট কারণ ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে জানা যায়, হত্যাকারীরা ২৫ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহ শুরুর প্রথমার্ধে—অর্থাৎ দুপুরের আগেই মহাপরিচালকসহ বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এটি যদি শুধু জওয়ানদের দাবি আদায়ের বিদ্রোহ হতো, তাহলে ঘটনা শুরুর দু-তিন ঘণ্টার মধ্যে মহাপরিচালকসহ এতগুলো কর্মকর্তাকে তাঁরা হত্যা করতেন না। সবাইকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের জন্য দেনদরবারের পথ খোলা রাখতেন। সুতরাং যৌক্তিক বিশ্লেষণেই বোঝা যায়, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শুরুতেই নেপথ্যের নায়করা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। সংক্ষুব্ধ জওয়ানরা ষড়যন্ত্রকারীদের হাতের পুতুল হয়ে যান। ষড়যন্ত্রের লক্ষ্য অর্জনের জন্যই ঘটনার একেবারে শুরুতে তাঁরা এত বড় হত্যাযজ্ঞ চালান। ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য ছিল, সরকারকে হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণে উত্তেজিত করা ও সেনাবাহিনীকে উত্তেজিত করা, যাতে সেনাবাহিনী বিচার-বিশ্লেষণ এবং পরিস্থিতির সঠিক মূল্যায়ন ব্যতিরেকে পিলখানায় দ্রুত আক্রমণ চালায়। এমন হলে কী ঘটতে পারত, তার পরিণতি কী হতো? সেনা অভিযান শুরু হলে ষড়যন্ত্রকারীদের হত্যাযজ্ঞের পরিধি ব্যাপকভাবে বাড়ানোর জন্য পিলখানার ভেতরে জীবিত বাকি কর্মকর্তা এবং তাঁদের পরিবারবর্গকে দ্রুত হত্যা করার সমূহ আশঙ্কা ছিল। পিলখানায় রক্ষিত হেভি মর্টার ও মেশিনগানের মাধ্যমে পিলখানার চারদিকে এলোপাতাড়ি ফায়ারিং করে বেসামরিক এলাকার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করতে পারত। দেশের অন্যান্য জায়গায় বিডিআরের ইউনিটগুলোয় বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ত এবং দেশব্যাপী বিডিআর ও সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি অনিয়ন্ত্রিত গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যেত। সামরিক-বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা হয়ে যেত কল্পনারও অতীত। তাহলে গণতন্ত্র বিপন্ন হতো। ৫০ দিনের নতুন সরকার অস্তিত্বের ভয়াবহ সংকটে পড়ত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দক্ষতা, রাজনৈতিক পরিপক্বতা, ধৈর্য, সাহস, বিচক্ষণতা এবং দূরদৃষ্টির পরিচয় দিয়েছেন, তা সে সময়ে বিশ্বব্যাপী দারুণভাবে প্রশংসিত হয়েছে। দেশ একটা ভয়ংকর বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে। এই ষড়যন্ত্রকারীরা কারা এবং কেন তারা এমন নির্মম জঘন্য ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিল, তা বোঝার জন্য ওই সময়ের রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতির একটু বর্ণনা দরকার। সাত বছর পর নতুন করে পঁচাত্তরের পর দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ঘটনার সময় সরকারের বয়স ছিল মাত্র ৫০ দিন। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে অনেক জাতীয় অমীমাংসিত ইস্যু দ্রুত নিষ্পত্তি করার ঘোষণা দেয় সরকার; যার মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলার নিষ্পত্তি এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার নিষ্পত্তি করে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান। বাহাত্তরের মূল সংবিধানে ফেরার ঘোষণাও দেয় সরকার। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর যেসব আস্তানা ও আশ্রয়-প্রশ্রয় ছিল, তা গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেয় নতুন ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকার। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত উল্লিখিত ইস্যুগুলোর নিষ্পত্তিকরণ যতটুকু এগিয়েছে, তাতে মোটামুটি বোঝা যায়, কারা নিজেদের জীবন ও অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সেদিন সংক্ষুব্ধ বিডিআর জওয়ানদের কাঁধে বন্দুক রেখে এমন হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। ষড়যন্ত্রের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ষড়যন্ত্রকারীরা যখন কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তখন তারা সব সময় রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে যেসব ব্যক্তি ও গোষ্ঠী সরকার অথবা কর্তৃপক্ষের ওপর ক্ষুব্ধ থাকে, তাদের নরম টার্গেট হিসেবে বেছে নেয় এবং তাদের ট্র্যাপের মধ্যে ফেলে নিজেদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রে তা-ই ঘটেছে। বিডিআরের জওয়ানরা তখন কর্তৃপক্ষের ওপর সংক্ষুব্ধ ছিলেন। ঘটনার সাত বছর পর এখন আমরা কী দেখছি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এত দিন ক্ষমতায় থাকার ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী বাংলাদেশে স্থান না পাওয়ার কারণে তাদের অস্তিত্ব হারিয়েছে, পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ২০০১-২০০৮ পর্যন্ত বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের যেভাবে সাহায্য-সহযোগিতা দিত, তা বন্ধ হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা ২০০১-২০০৮ পর্যন্ত বিএনপি সরকারের কৃপায় বেঁচে ছিল; কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসায় ২০০৯ সালের শেষের দিকে দণ্ড কার্যকর হয়, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় কাদের ফাঁসি হয়েছে, চারজন মশহুর যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, এরা কারা? এদের বাঁচানোর জন্য জামায়াত-বিএনপি সম্মিলিতভাবে কী না করেছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা নিষ্পত্তি হলে কারা ফেঁসে যেতে পারে তা এখন আরো স্পষ্ট হয়েছে। বাহাত্তরের সংবিধান পরিপূর্ণভাবে ফিরে এলে কাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব বিলীন হতে পারে। সুতরাং নতুন সরকার সব কিছু গুছিয়ে শক্তভাবে বসার আগেই উল্লিখিত সব গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক শক্তি নিজেদের অস্তিত্বের শঙ্কায় সম্মিলিতভাবে ৫০ দিনের নতুন সরকারকে উত্খাতের জন্য ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই জঘন্য হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল বলে মনে করা হলে সেটিকে অমূলক বলা যাবে না। অন্তত যৌক্তিক বিশ্লেষণ তা-ই বলে। সুতরাং ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারির হত্যাযজ্ঞ বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ১৯৭৫ সাল থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি চক্রের যে ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত আছে, তারই অংশ হিসেবে এবং ধারাবাহিকতায় সংঘটিত হয় পিলখানা হত্যাযজ্ঞ। সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:১২
false
rn
এ লো মে লো মিসির আলি ক্লাসরুমে ঢুকেছেন। তাঁর পড়ানোর বিষয় এবনর্মাল বিহেভিয়ার। ক্লাসে ঢুকেই তিনি বললেন, আমি মিসির আলি, তোমাদের এবনর্মাল বিহেভিয়ার পড়াতে এসেছি। পড়ানোর সময় কী করলে আমার আচরণকে তোমরা এবনরমাল বলবে?ছাত্রছাত্রীরা কোন কথা বলল না। তারা তাদের শিক্ষককে যাচাই করে নিতে চাচ্ছিল।মিসির আলি বললেন, আচ্ছা আমি যদি এই টেবিলের উপর দাঁড়িয়ে লেকচার দেই, তোমরা কি আমার আচরণকে অস্বাভাবিক বলবে?একজন ছাত্র বলল, হ্যাঁ।মিসির আলি বললেন, প্রাচীন গ্রিসেকিন্তু শিক্ষকেরা টেবিলের উপর দাঁড়িয়ে লেকচার দিতেন। তারাঁ মনে করতেন শিক্ষক সবচেয়ে সম্মানিত, তাই তাঁদের অবস্থান হবে উঁচুতে। তাদের কাছে এটি অস্বাভাবিক মনে হত না।কাজেই অস্বাভাবিকতার সংজ্ঞা কী? সংজ্ঞা হল,"যা দেখে আমরা অভ্যস্ত নই, তার বাইরে কিছু দেখা-করাই অস্বাভাবিক।" ৭১ এ এক মুজিবের এক ডাকে কোটি বাংলাদেশি এক হয়েছিলো। তার এক ডাকেই কোটি বাংলেদেশি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লাঠি হাতেই যুদ্ধে নেমে গিয়েছিলো। বর্তমানে আরেকজন মুজিব দরকার যার এক ডাকে আবার কোটি বাংলাদেশি এক হবে...। তবে আফসোস... এই ৪২ বছরেও আরেকজন মুজিবের এখনো জন্ম হয়নি। আমরা না পড়িয়া পণ্ডিত, আমরা না লড়িয়া বীর, আমরা ভান করিয়া সভ্য, আমরা ফাঁকি দিয়া পেট্রিয়ট্। আমরা ভারি ভদ্র, ভারি বুদ্ধিমান, কোন বিষয়ে পাগলামি নাই। আমরা পাশ করিব, রোজগার করিব ও তামাক খাইব। আমরা এগোইব না, অনুসরণ করিব, কাজ করিব না, পরামর্শ দিব! --রবীন্দ্রনাথ শহরে কার্ফু জারি করা হল, সন্ধ্যা ৬ টার পর কাউকে বাইরে দেখা গেলে তাকে গুলি করা হবে।৬ টা বাজতে ১৫ মিনিট বাকি, সবাই বাসার দিকে দৌড়াচ্ছে। এর মধ্যে এক আর্মি একজন কে গুলি করে মেরে ফেলল।আরেক আর্মি বললঃ এখনও তো ৬ টা বাজে নাই, তাকে মারলি কেন?সে উওর দিলঃ এই শালা রে আমি চিনি, এর বাসা অনেক দূর। ৬ টার মধ্যে শালায় বাসায়।একসময় একটি কাহিনী দ্য ওল্ডম্যান অ্যান্ড দ্য সি (আর্নেস্ট হেমিংওয়ে) পড়ে অভিভূত হয়েছিলাম, যার মূল ধারণা সাধারণ মানুষ, সমুদ্রতীরের একজন জেলের সাথে একটি বিশাল মাছের যুদ্ধের বিচিত্র কাহিনী। সাহিত্যের জন্য এমন কোনো বিষয় নেই, যা গ্রহণ করেননি লেখক ও সাহিত্যিক সমাজ। রবীন্দ্রনাথ ১৭ বছর বয়সে লিখেছেন উপন্যাস 'করুণা' । 'করুনা' রবীন্দ্রনাথের সামাজিক উপন্যাস । এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র গুলো হলো- করুণা, নরেন্দ্র, মহেন্দ্র, পন্ডিত রঘুনাথ, মহিনী এবং অনূপকুমার । 'করুনা' উপন্যাসে লিখেছেন- 'সঙ্গিনী-অভাবে করুণার কিছু মাত্র কষ্ট হইতো না । সে এমন কাল্পনিক ছিল, কল্পনার স্বপ্নে সে সমস্ত দিন-রাত্রি এমন সুখে কাটাইয়া দিত যে, মুহূর্তমাত্রও তাহাকে কষ্ট অনুভব করিতে হয় নাই । তাহারা একটি পাখি ছিল, সেই পাখিটি হাতে করিয়া অন্তঃপুরের পুস্করিণীর পাড়ে কল্পনার রাজ্য নির্মাণ করিত ।... সন্ধ্যাবেলা পিতার নিকট যা-কিছু গল্প শুনিত, বাগানে পাখিটিকে তাহাই শিনানো হইত ।' ছোটবেলার সঙ্গী নরেন্দ্রের সাথে করুণার বিয়ে হয় । বিয়ের পর নরেন্দ্র করুণা কে অনেক অবহেলা করে, কিন্তু করুনা তার প্রতিবাদ করেনি । আকাশ ফরসা হতে শুরু করেছে । আমি ব্যালকনিতে এসে দাড়িয়েছি । ভোরের আকাশ দেখা দারুন একটা ব্যাপার । এর মধ্যে একটা কাক আমার ব্যালকনির সামনে দিয়ে উটে গেল । কাক কে দেখে একটা ঈশপের গল্প মনে পড়ল। গল্পটা এই রকম- এক শিয়াল দেখল যে এক কাক মুখে মাংস নিয়ে গাছের ডালে উঠে বসলো। সে ভাবল মাংসটা তার পেতেই হবে। সে গাছের নিচে গিয়ে কাককে ডেকে বলল “শুভ সকাল কাক মাদাম। আপনাকে আজকে অনেক সুন্দর লাগছে। আপনার পালকগুলো অনেক সুন্দর। আপনার গলার আওয়াজও নিশ্চয়ই অনেক সুন্দর হবে। আমাকে একটা গান শুনান। আমি বাধিত হব তাহলে। আপনাকে আমি তাহলে পাখির রানী বলতে পারবো”। কাক যেই ক্যা ক্যা শুরু করলো। তার মুখ থেকে মাংস পড়ে গেলো। আর শিয়াল সেই মাংস নিয়ে দৌড় দিলো। এই গল্পের মরাল টা আপনাদের জ্ঞান দিয়ে বুঝে নিবেন ।
false
mk
বিএনপির কাউন্সিল এবং একটি পর্যবেক্ষণ গত ১৯ মার্চ ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল। এই কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে বিএনপির পক্ষ থেকে মিডিয়ার সামনে যে ধরনের প্রত্যাশা জাগানোর চেষ্টা হয়েছিল সম্মেলন শেষে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে তেমন বড় ধরনের উচ্ছ¡াস খুব একটা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বেশির ভাগ ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সম্মেলনে খালেদা জিয়ার ভাষণ নেতাদের বক্তৃতা এবং কর্মীদের চাওয়া পাওয়ার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচকরা মতামত রেখেছেন। বিএনপির কোনো কোনো নেতা কিছু কিছু টকশোতে আলোচক হিসেবে কথা বলেছেন। তাদের বক্তব্যে সম্মেলনের যে সাফল্য দাবি করা হয়েছে অপেক্ষাকৃত নির্দলীয় আলোচকদের বেশির ভাগই এসব মতামতের সঙ্গে একমত পোষণ করতে দেখা যায়। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিএনপির সম্মেলন নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়া না হলেও যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ সংক্ষিপ্ত মন্তব্য দিয়েছেন যা তার ব্যক্তিগত মতামত হতে পারে। সড়ক, যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামও কিছু ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে সম্মেলনের পরদিন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বও নিজেদের সম্মেলন সম্পর্কে কোনো সংবাদ সম্মেলন করেননি, সে রকম কোনো মূল্যায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রতিদিন যেভাবে নানা বিষয় লিখিত বক্তব্য সাংবাদিকদের ডেকে দিয়ে থাকেন ২০ তারিখও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। তবে তার বক্তব্যে সম্মেলনের চেয়ে ইউপি নির্বাচন এবং সম্মেলনে সরকারের বাধা বিপত্তি প্রদানের কিছু অভিযোগ করা হয়েছে। একটি সম্মেলন শেষে দল থেকেই যখন কোনো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দেশ ও জাতির উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করা হয় না, তখন অন্যান্য দলের কাছ থেকে হওয়ার আশা করা বোধ হয় যায় না।বিএনপির মতো এত বড় একটি দলের জাতীয় সম্মেলন শেষে সব কিছু আগের মতো নীরব হয়ে যাওয়ার বিষয়টি বেশ বিস্ময়করই মনে হয়। অথচ এই সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা থেকে প্রতিদিনই বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে যেভাবে বক্তব্য দেয়া হচ্ছিল সবার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা হচ্ছিল, যেভাবে ঘুরে দাঁড়ানো ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথা উচ্চারিত হচ্ছিল তাতে মনে হচ্ছিল যে, সম্মেলনের দিন কিছু একটা হতে যাচ্ছে- যার ইতিবাচক প্রভাব শুধু বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যেই পড়বে না, গোটা দেশের রাজনীতি তথা সাধারণ মানুষের ওপরও পড়বে। গণমাধ্যমে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রচারিত বক্তব্যে সে রকম ধারণাই বিশেষভাবে দেয়া হয়েছিল। তবে বেশির ভাগ রাজনৈতিক বিশ্লেষকই পরিস্থিতির দিকে বেশি সতর্ক দৃষ্টি রেখেছেন, মন্তব্য কম করেছেন, যতটা করেছেন তাতে দু ধরনের প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। এক, বিএনপি যদি জামায়াত থেকে মুক্ত হতে পারে তাহলে বড় ধরনের বাঁক পরিবর্তন ঘটবে, দুই, নেতৃত্বের শীর্ষ পর্যায়ে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের পুনর্নির্বাচন ছাড়া বেশি কিছু নাও ঘটতে পারে। সরকারের দিক থেকেও মনে হয় বিএনপি আসলে কী করতে যাচ্ছে তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছিল। সরকার খুব ধীরস্থিরভাবে বিএনপির কাউন্সিল অধিবেশন হওয়ার ক্ষেত্রে যতটুকু করণীয় দরকার ছিল তা করেছে। কারো কারো ধারণা ছিল সরকার হয়তো বিএনপিকে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত করতে জায়গা নাও দিতে পারে। কিন্তু এই সময়ে সরকারের দিক থেকে সে ধরনের নেতিবাচক কোনো অবস্থান নেয়ার বিষয়টি খুব একটা বাস্তবসম্মত হতো না। কেননা, সে ধরনের অবস্থান নিলে বেশি বেশি লাভবান হতো বিএনপি, ক্ষতিগ্রস্ত হতো সরকারের ভাবমূর্তি। সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর বিএনপিতে উচ্ছ¡াসের চেয়ে হতাশা, নানা হিসাব-নিকাশ মেলাতে না পারা নিয়েই নেতাকর্মীরা যখন নিজ নিজ এলাকায় ফিরে গেছে সেটি সরকারের জন্য অনেক বেশি লাভজনক হয়েছে- এমন কড়া-গণ্ডার হিসাব সরকারের ভেতরে আগেই ছিল বলে মনে হচ্ছে। সুতরাং সম্মেলন শেষ, উত্তেজনাও শেষ, বরং নতুন নতুন হতাশা ও হিসাব-নিকাশে নেতাকর্মীরা অধিকতর পাথর হয়ে যাচ্ছেন- এমনটি লক্ষ করা যাচ্ছে।সম্মেলনে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া একটি দীর্ঘ লিখিত ভাষণ দিয়েছেন। তাতে তিনি আওয়ামী লীগকে অনুসরণ করে ভিশন ২০৩০ উপস্থাপন করেছেন। এটি বিএনপির উদ্ভাবিত কোনো ধারণা নয়, শেখ হাসিনার ২০০৮ সালে ইশতেহারে দেয়া ধারণার অনুসরণমাত্র। এ ধরনের উদ্যোগ বেশ বিলম্বিত বিষয় হয়ে গেছে। বিএনপি দীর্ঘদিন দেশ শাসন করেছে, বিএনপি সব সময় দাবিও করে থাকে যে তারা আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার পথ প্রদর্শক ইত্যাদি। কিন্তু ২০০৮ সালের পর শেখ হাসিনার দেয়া ইশতেহারে বর্ণিত উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং ক্ষমতায় গিয়ে বাস্তবায়নের সুফল চাক্ষুষভাবে পাওয়া এবং দেখার পর বিএনপির ওই সব দাবি খুব একটা ধোপে টেকে না, বরং মানুষ তুলনামূলক আলোচনা ও পর্যবেক্ষণে যাওয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনাকে অনেক বেশি পরিপক্ব রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বিবেচনা করতে পারছে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উন্নয়নের যে ধারায় নিয়ে তুলে ধরেছেন তা অভূতপূর্ব, দেশে-বিদেশে বহুলভাবে প্রশংসিত। তার ভিশন ২০২১, এবং ২০৪১ সর্বত্র এখন আলোচিত হচ্ছে। অনেকেই শেখ হাসিনার এসব ভিশন যে বাস্তবায়নযোগ্য তাও বিশ্বাস করছেন। ঠিক এমন বাস্তবতায় খালেদা জিয়ার দেয়া ভিশন ২০৩০ কে বেশির ভাগ মানুষই ভিশন ২০২১ এবং ২০৪১ এর মধ্যবর্তী একটি জায়গা করে নেয়ার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন। অবশ্য বিএনপির পক্ষে এ ধরনের কোনো ভিশন-মিশন প্রক্ষেপণ করা ছাড়া স্বাতন্ত্রিক অবস্থানের প্রমাণ দেয়াও বেশ কটিন ছিল। আসলে এক সময় জিয়াউর রহমান বলেছিলেন যে তিনি রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি কঠিন করে দেবেন। এখন মনে হচ্ছে শেখ হাসিনাই বিএনপির জন্য রাজনীতিকে আগের মতো সহজ অবস্থানে রাখেননি। শুধু সাম্প্রদায়িকতা ও ভারত বিরোধিতার জুজু দেখানো, আওয়ামী শাসনামলে দুর্ভিক্ষের আগাম ভীতি ছড়ানো, ধর্ম চলে যাওয়ার ভীতি ছড়িয়ে রাজনীতি করা যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগের গত তিন মেয়াদের শাসন থেকে এসবের অসারতা প্রমাণিত হয়ে গেছে। এর ফলে বিএনপির পক্ষে মিথ্যা অপবাদ আর আবেগ সৃষ্টির রাজনীতি বৈতরণী পার হওয়া বেশ কঠিন হয়ে গেছে। দেশে উন্নয়নের নজির স্থাপনসহ নানা ক্ষেত্রেই শেখ হাসিনা বিএনপির আমলে প্রচারিত বিষয়গুলোকে অসার প্রমাণিত করে দিয়েছেন। ফলে বিএনপির পক্ষে আগের জুজু দেখিয়ে রাজনীতি করা এখন বাসি হয়ে গেছে। অন্যদিকে উন্নয়ন তত্ত্বের রাজনীতিতে বিএনপির অবস্থান মোটেও আশাবাদী হওয়ার নয়। বিএনপি তাই অর্থনৈতিক উন্নয়নের কোনো নতুন ধারণা প্রদানের চেষ্টা না করে শেখ হাসিনার ভিশন ২০২১, ২০৪১ অনুকরণে ভিশন ২০৩০ উপস্থাপন করেছেন- যা দেশে বা বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারেনি। লিখিত বক্তব্যে খালেদা জিয়া দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন, একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরির প্রতিশ্রæতিও দিয়েছেন। এসব প্রতিশ্রæতি শুনতে খারাপ লাগার কথা নয়, তবে বাস্তবায়ন কে করবে, কীভাবে করবে- তা হাজার প্রশ্নের বিষয়।তবে যেটি সবাই ধরেই নিয়েছিল যে, এই সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম মহাসচিব পদে স্থায়ী হবেন। কিন্তু সেটিও ঘোষিত হয়নি। সব কিছুই দলের চেয়ারপারসন এবং দলের সিনিয়র সহসভাপতি তারেক রহমানের ওপর ছেড়ে দেয়া হলো। বিএনপির নেতাকর্মীরাই যেখানে নতুন কিছু পায়নি, রাজনীতি ও দেশের জনগণ কিভাবে ভিন্ন কিছু আসা করবে তাহলে বিএনপি কিভাবে এর ফলে ঘুরে দাঁড়াবে সেটিই মৌলিক প্রশ্ন। দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে দাবি বিএনপি কাউন্সিলের আগে বারবার নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের শুনিয়েছিল সেটি অর্জিত হবে কিভাবে?দেশে গণতন্ত্র নেই- বিএনপির এমন দাবি যথেষ্ট ব্যাখ্যার দাবি রাখে। পুনরুদ্ধারের বিষয়টি তো আরো বেশি দুশ্চিন্তার বিষয়। হ্যাঁ, আমাদের দেশে গণতন্ত্রের বিকাশ নিয়ে আমরা মোটেও সন্তুষ্ট হতে পারছি না। সেটি এক কথায় বলে শেষ করার মতো নয়। শুধু এই সরকারকে এককভাবে দায়ী করলেও হবে না, তা খুব একপেশে এবং গোটা সত্যকে আড়াল করার মতো বিষয় হয়ে যাবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে যারা কেবলি নির্বাচনের মধ্যে দেখেন তাদের দৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতা তারা নিজেরা স্বীকার করবেন না। তবে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, সুশাসনের অভাব, দুর্নীতি, রাজনৈতিক এলিমেন্ট ছাড়া দল গঠন ও পরিচালিত হচ্ছে, দলগুলোতে সুবিধাবাদী, দুর্নীতিবাজ, আদর্শহীন নেতাকর্মীতে ভরে গেছে। এর ওপর সাম্প্রদায়িকতা, মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত চেতনায় লালিত অপরাজনীতি দ্বারা যেভাবে একটি বড় রাজনৈতিক জোট পরিচালিত হচ্ছে, একইভাবে আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে মধ্য সারি পর্যন্ত যেভাবে হাইব্রিড তথা আদর্শহীন নেতাকর্মীতে ভরে গেছে তা দেশে একটি আদর্শবাদী, বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে রাজনীতির নিয়ে স্বপ্ন দেখাতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সমস্যাকে বন্দি রেখে পুনরুত্থানের আন্দোলনের বিষয়টি বিভ্রান্ত রাজনীতির অংশমাত্র। এটিকে হালকাভাবে দেখার নয় মোটেও। বিএনপিকে দিয়ে সেই আন্দোলন সফল হওয়ার সম্ভাবনা কতটা আছে তা যুক্তি দিয়েই বোঝা যায়।বিএনপি এখনো জামায়াত এবং সাম্প্রদায়িকতা নির্ভর রাজনীতি থেকে নিজেকে আলাদা আলাদা করার কোনো চেষ্টা করেনি। তা হলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে কী করে? খালেদা জিয়া কাউন্সিলের সমাপনী অধিবেশনে স্বতঃস্ফ‚র্ত ভাষণ দিয়েছেন তাতে সকালে লিখিত ভাষণের বিপরীত মেজাজই পরিলক্ষিত হয়েছে। তিনি তাতে আগামী নির্বাচনটি হাসিনাবিহীন হবে দাবি করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে? দেশে আবারো কি ২০১৩ এবং ২০১৫ এর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হবে? ২০১৩-১৫ সালে কিছু করা গেলেও ভবিষ্যতে তা করা যাবে কিনা তা কেবল ভবিষ্যৎই বলে দেবে। তবে বিএনপির ৬ষ্ঠ কাউন্সিল ১৯ তারিখের আগে যে রকম প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছিল কাউন্সিল শেষে তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সম্মেলনে গত ছয় বছরের দলীয় নীতি ও কৌশল নিয়ে কোনো কথা উচ্চারিত হয়নি। সম্মেলনে তারেক রহমানের ভাষণ শোনা গেছে, ভবিষ্যৎ নেতার উচ্ছ¡াস প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু এসবের ভবিষ্যৎ কী হবে- তা কেউ এখনই বলতে পারছে না। আপাতত বিএনপি কতটা ঘুরে দাঁড়াবে তা দেখার অপেক্ষা করা ছাড়া তেমন কিছু বলা যাচ্ছে না।মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : অধ্যাপক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:০৫
false
hm
আজ ঈদ, মদিনার ঘরে ঘরে আনন্দ, লেকিন ... নজমুল আলবাব লুক্টাকে আমি ঠিক ভালু পাই না। সেই সামুযুগ থিকাই কেমুন কেমুন যেন লাগে তাকে। সাম্নাসাম্নি মুলাকাতের সুযোগ ঘটে নাই, নাহলে লুক্টা কত বড় পগেয়া পাজি, সেটা নিরূপণের আরো সরেস সুযোগ মিলতো। কিন্তু মোটা দাগের মাপে বলতে হয়, লুক্টা সুবিধার্না। গুটক (অর্থাৎ গুগলটক, পৃথিবীর অন্যান্য মহৎ জিনিসের মতো গুগলের শুরুটাও গু দিয়ে)-এ এই দুরাচার আলবাবের সাথে যোগাযোগ দীর্ঘদিন থেকেই। প্রায়শই নানা বেয়াড়া প্রশ্ন করে লুক্টা আমাকে পেইন দিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে ভাবি, দেই বেটাকে মাউজের খোঁচায় ব্লক করে, কিন্তু পরে সামলে নেই। দম নেই। দম ছাড়ি। Cooldownasana বা কুলডাউনাসন করি। গুটকে আলবাব তাই রয়ে যান। আর নানা আজেবাজে আলাপ্সালাপ করেন। বিচিত্র সব কুপ্রশ্ন তার মনে। একদিন এসে বললেন, আপনার কী মনে হয়, আমার নিক্টা পাল্টাইয়া নজমিন আলবাব করে দিলে কি হিট বাড়বে? মেয়ে ভেবে লুল্পাঠকরা ঝাঁপাইয়া পড়বে? বাকরুদ্ধ হয়ে যাই তার পেজোমি দেখে। ঐদিন যেমন আচম্বিতে তিনি এসে আমাকে ধরলেন। "আপনি তো সিলেটে ছিলেন অনেকদিন, তাই না?" বছর আড়াই আমাকে আবাদী-বেঙ্গলি প্রভৃতি বিশেষণে বিশেষ আপ্যায়িত করার পর কেন এই প্রশ্ন, ঠাহর করতে পারি না। বলি, তা ছিলাম। তিনি বলেন, "সিলেটের সংস্কৃতি সম্পর্কে আপনার কী ধারণা?" আমি মন উজাড় করে বলি, আমার কী ধারণা। তিনি চুপচাপ শোনেন। কথা শেষ হবার পর তিনি বলেন, কামে যাই। খুদাপেজ। বুঝি না তার হালচাল। কয়েকদিন বাদেই তিনি আবার উদয় হন। "আপনি কি বিবাহ করবেন নাকি?" একটু লজ্জা পাই। গলা খাঁকরাই। বলি, মমমমম, কেন বলুন তো? তিনি বলেন, আপনার ইয়ারদোস্তরা তো সবাই বিবাহের জন্য বেয়াকুল। আমি উদাস হয়ে যাই। বলি, দেখুন, জীবনটা আসলে বড় বিচিত্র, বড় ছলনাময়, বড় ইয়ে ...। তিনি বলেন, কামের কথা কন ভাই। বিবাহ করবেন কি করবেন না? আমি বলি, আমি বিবাহ করলে আপনার কি কোনো সুবিধা হয়? তিনি বলেন, হাঁ হয়। সিলেটের জামাইকূলে একটি সৎ সজ্জন সদাচারী সদালাপী পাত্র যোগ করার পূণ্য হয়। আমরা তো পারলাম না তেমন কিছু। আপনাকে দিয়ে হবে। এতগুলি ভালো ভালো অ্যাডজেক্টিভের ভারে কাবু হবার বদলে আমি চমকে উঠি। বলি, সিলটি নারী! চোখের সামনে ভেসে ওঠে নানা অতীত স্মৃতি। বলি, ওয়াও! তিনি বলেন, হাঁ। আমি বলি, কিন্তু ... আপনারা তো আমাকে বেঙ্গলি ডাকেন! তিনি বললেন, হাঁ। ডাকতাম ডাকি ডাকবো। বেঙ্গলিদের বেঙ্গলি ডাকাই তো দস্তুর! আমি সখেদে বললাম, তারপর ... তারপর ... আবাদী ডাকেন! তিনি বললেন, হাঁ। মন্দ কী? আবাদ করবেন। রেগুলার। আপনার মাহিজাবিনের গল্পের মতো। এই পরামর্শটা মনে ধরে। বলি, খ্রান আস্তেছি চা বানাইয়া। চা বানিয়ে এসে দেখি গুটকে জ্বলজ্বল করছে মেসেজ, কামে গেলাম। এসে কথা হবে। খুদাপেজ। মনটা খুঁতখুঁত করতে লাগলো। আলবাব পাপিশ্ঠটা কী চায়? মূলা দেখিয়ে হট্টমূলার গাছে তুলে দিয়ে মই কেড়ে নিতে চায় কেনু কেনু কেনু? নানা কাজে কয়েকদিন কাটে। তারপর গুটকে আবারও টোকা। আলবাব। বলেন, পাত্রী ফাইন্যাল। আমি চমকে উঠি, বলি, ফাইন্যাল মানে? তিনি বলেন, ফাইন্যাল। আপনি টিকেট কাটেন। ডিসেম্বরে ইনশাল্লাহ হয়ে যাবে। আমি বলি, দ্রান দ্রান দ্রান! কী বল্তে ছান আপ্নি (বৃটিশ অ্যাকসেন্ট)? তিনি বলেন, বলতে চাই বিবাহ চূড়ান্ত। ডিসেম্বরে হবে। কমিউনিটি সেন্টার বুক করা হয়ে গেছে। আমি বললাম, কইলেই হইলো? মেয়ে কী করে? তিনি বললেন, সিনেমা দেখে। প্রধানত হিন্দি সিনেমা। কারেন্ট না থাকলে এক্টা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যায় আড্ডা মারতে। ঐখানে অবশ্য ছাত্রী হিসাবেই ভর্তি আছে। তবে মূলত সে একজন হিন্দিসিনেমাখোর। আমি বলি, বাদ, এ বিয়ে হবে না। তিনি বললেন, আহহা। ঠিকাছে। আপ্নি তাকে ঢাকাই ছবি ধরাইয়া দিবেন। আমি বললাম, আমি ঢাকাই ছবিও দেখি না। তিনি বললেন, ওহ আপনি তো সুশীল! তাহলে কলকাতার ছবি ধরাইয়া দিবেন! আমি বললাম, ভাই আমি সিনেমা দেখিই না। মাঝেমধ্যে নেংটুশ দেখি অল্পস্বল্প ...। তিনি বলেন, হা হা হা বিবাহের পর বেশি করে দেখবেন সমস্যা নাই। সবাই তা-ই করে। আমি মরিয়া হয়ে বলি, ভাই পাত্রী আর কী করে? তিনি বললেন, পাত্রীর কোনো কিছু করার দরকার পড়ে না। আপনি তারে দিয়া কী করাইতে চান? আমি কাতর হাতে টাইপ করি, গানটান জানে? নাচটাচ পারে? বইটই পড়ে? আলবাব অট্টহাসি দেয় মেসেঞ্জারে, বলে, আপনি কি বিবাহিত জীবন নিয়া এইসব ফেন্টাছিতে (সিলটি লুক তো, ফ্যান্টাসি বানান করে ছ দিয়া) ভুগেন নাকি? বিবাহের পর কি আপনি আশা করেন, আপনার বউ গান গাইবে? নাচবে? বই পড়বে? তাইর কিতা মাতা খারাফ নি? নাচবায় তুমি। গাইতায়ও তুমি। আর বইটই পড়ার সুমায় পাইতায় নায় গো বাই ...। তারপর তিনি নিজের জীবন থেকে নেয়া সব কাহিনী বলে যান। কীভাবে তিনি বিয়ের পর সুপারম্যান থেকে মিকি মাউজে পরিণত হয়েছেন, তার বুকভাঙা করুণ ক্রন্দনভারাক্রান্ত ক্রনিকল। আকাশ ভেঙে পড়ে মাথায়। এই উন্মাদ বলে কী? আমার বউ গান জানবে না সামান্য? নাচের ব্যাপারটা ছাড় দেয়া গেলো, কিন্তু বই না পড়লে ক্যাম্নে কী? বলি, কোথাও গলতি সে মিস্টেক হয়ে যাচ্ছে অপু ভাই! আপনি কি মনির হোশেনের জন্য মেয়ে খুঁজতেসিলেন, বাই এনি চ্যান্স? আলবাব চোখ টিবি দেয়। বলে, হুঁ। কিন্তু মনির হোশেন যে বিবাহিত, তা তো আগে জান্তাম না। এখন পাত্রীপক্ষের কাছে মানসম্মান তো রাখতে হবে! আমি বলি, অমিত, শিমুল, সৌরভ, ভূতোদা ...। তিনি বলেন, তারা তো ছুটো মানুষ (সিলটি লুক তো, ছোটো লিক্তারেনা). এখন তাদের ক্যারিয়ার গড়ার সময়! তাছাড়া তারা তো জার্মানিতে থাকে না। মনির হোশেনের পাত্রী জানে পাত্র জার্মানিতে থাকে। অস্ট্রেলিয়ার পাত্র কানাডার পাত্র জাপানের পাত্রে তার কুলাবে না। আমি বলি, আমি অত্যন্ত দুঃখিত। মনির হোশেনকে বলেন আবার বিবাহ করতে। ইসলামে দুইটা বিয়া করা কোনো বিয়াপার? তিনি বলেন, মনির হোশেনের প্রথম ইস্তিরির পিতা অত্যন্ত বিপজ্জনক লুক। তিনি এই খবর শুনলে এয়ারপোর্টেই মনির হোশেনের জন্য কবরের জমি কিন্তে হইতে পারে। আমি বলি, না, আমি অত্যন্ত দুঃখিত ...। তিনি বলেন, আপনি তো পাত্রীকে না দেখিয়াই কাউকাউ করতেছেন। আমি উদাস হয়ে বলি, দেখে কী লাভ, যদি গান না জানে? নাচ না পারে? বই না পড়ে? তিনি আবারও চোখ টিবি দিয়ে বলেন, পাত্রী অত্যন্ত খাপছুড়াৎ। আমার মন একটু টলে, তবে গলে না। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বার করি, বলি দেখুন, আমি একজন বেদ্বীন। ইসলাম ধর্মের সাথে আমার সংশ্রব নাই। সিলটি কন্যারা আর যাই হোক একজন নাস্তিকের কণ্ঠে বরমাল্য পরাবে না। পূণ্যভূমি সিলেট, যেখানকার মাটিতে শায়িত বাবা শাহজালাল, শাহ পরান ...। তিনি বিগলিত হরফে লেখেন, শাহজালালের মাজারেই তওবা পড়বেন গিয়া। ইতা কুনো বেফারই নায়। তওবা পড়িয়া নতুন টুপি পরিয়া শ্বশুরের পায়ে ধরিয়া সালাম করবায় আর কইবায়, আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর ...। আমি চমকে উঠে বলি, ঐটা কবরের সামনে দিয়া গেলে আওড়াইতে হয় না? বাটপার আলবাব প্রসঙ্গ পাল্টানোর চেষ্টা করে, বলে, পাত্রীর গায়ের রং দেক্লে বুজবায়, কী সুন্দর। আমি লুফে নেই প্রসঙ্গটা, বলি দ্যাখেন, আমি ভূতের মতো কালো। প্যান্ট খুললে ঘর অন্ধকার হয়ে আসে। সিলটি মেয়েরা আর যাই হোক একজন কালোকিষ্টি পুরুষের কণ্ঠে বরমাল্য পরাতে পারে না। তিনি বলেন, আহ তুমি কয়েকদিন ফেয়ার এন্ড লাবলি (কী আর কমু, লাভলি লিক্তারেনা) মাখো না কেনে? আমি বলি, ভাই ঐসব মলম মাখায়া আপনে ইদি আমিনরে ফর্সা বানাইতে পারবেন, কিন্তু আমি এইসব জাগতিক কেমিক্যাল ট্রিটমেন্টের ঊর্ধ্বে। তিনি বলেন, আইচ্ছা গায়ের রং কুনো বেফার নায়। তুমি তাদের বাড়িত কম যাইও তাহইলেই হবে। আমি আকাশ থেকে পড়ি ইউরি গ্যাগারিনের মতো। বাড়িতে কম যামু মানে? জামাই আদরের কী হবে? আমার তো মনে আশা ছিলো, শ্বশুরবাড়ির আপ্যায়নের উপরই চলবো কিছুদিন! তিনি বলেন, না না নয়া দামান এত ঘন ঘন শ্বশুরবাড়ি যাওয়া ভালা নায়। আমার সন্দেহ হয়, বলি, মেয়ের ওজন কতো? তিনি বলেন, উজন (আলবাব সিলটি) কুনো বেফার নায়। আর তুমি তারে আলগাইতায় কিতার লাগি তে? দরকার পড়িলে তাই তুমারে আলগাইতো! বলি, ভাই, আপনি কী বলতে চান? আমার ওজন আটাত্তর কেজি, আমারে যে আলগাইতে পারে তার ওজন কতো? তিনি বলেন, ভালো জিনিসের ওজন একটু বেশিই হয়। আর বেশি মাতরায় কিতার লাগি রে বো? বলি, পাত্রী রসিক তো? সেন্স অব হিউমার কেমন? আলবাব দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তারপর যা বলে, তার মর্মার্থ হচ্ছে, বিবাহিত পুরুষের জীবনে হাসির কোনো স্থান নাই। পাত্রীর সেন্স অব হিউমার থাক্লেও যা না থাক্লেও তা, পাত্রের উপর সেই সেন্স প্রযুক্ত হবে, সে আশা গুড়ে বালি। হিউমার খুঁজতে চাইলে আমি যেন মুখফোড় হারামীটার ব্লগ রিভাইজ দেই। আমি হাল ছেড়ে দেই। মিষ্টি ছিপছিপে পড়ুয়া রসিক বউয়ের যে ইমেজ চোখের সামনে ছিলো, মনে হলো এক মত্তা হস্তিনী করিমগঞ্জের পাহাড় থেকে নেমে এসে তা চুরমার করে দিলো। আলবাব বলে, মন খারাপ করিও না। তুমি আবাদী। সিলটি মেয়ে পাইতেছো এইটাই বেশি। মোটা চিকন, গান নাচ, বই হিউমার বাছাবাছির আওকাতই বা তুমার কেয়া হায়? বলি, মেয়ের বাপ কী করে? আলবাব হাসে। বলে, বাপকে তুমি চিন তো। ব্রিগেডিয়ার (অব) ... । এরপর আর সামলাতে পারি না। হুঙ্কার দিয়ে বলি ...। সে অতি বাজে কথা। কহতব্য নয়।
false
rg
সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর এই হামলার দায় কার!!! বাংলাদেশে যে কোনো ধরনের নির্বাচন ও রাজনৈতিক টানাপোড়নের প্রথম শিকার হন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। এর কারণ কি? সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বাংলাদেশের রাজনীতির একটি অন্যতম হাতিয়ার। এটি সবচেয়ে বড় কারণ। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো হীনস্বার্থ উদ্ধারের জন্য, সংখ্যালঘুদের সহায় সম্পত্তি লুটপাট ও ভোগ-দখল করার জন্য, সংখ্যালঘুদের দেশ ছাড়া করার জন্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক অযুহাতে সংখ্যালঘুদের উপর বিভিন্ন সময়ে নির্মম নির্যাতন, অত্যাচার, খুন, ধর্ষন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ সহ অনেক মানবতা বিরোধী কাজ করে থাকে। এটা এতোটাই নির্মম, পাশবিক, হৃদয় বিদারক ও মর্মস্পর্শী যে, তখন আর কিছুতেই মানুষ হিসেবে দাবী করা যায় না যে, বাংলাদেশ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। বরং ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, বাংলাদেশ একটি বর্বর, অসভ্য, সাম্প্রদায়িক, অশিক্ষিত মুসলিম রাষ্ট্র, যেখানে প্রতিটি রাজনৈতিক টানাপোড়নে বিশেষ করে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সব সময়ই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা একটি অভ্যাসের মত ঘটনা। এই ঘটনা বারবার ঘটার পেছনে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সরাসরি ইন্ধন থাকে। পাশাপাশি রাষ্ট্রের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার বদলে এক ধরেনর রহস্যময় শীতলতাও একটি বড় কারণ। এটা এখন ২০১৪ সালে এসেও যখন চোখের সামনে ঘটতে দেখি, তখন বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে, একজন মুসলিম ঘরের সন্তান হিসেবে, একজন শিক্ষিত ব্যক্তি হিসেবে এবং একজন রাজনৈতিক সচেতন বোদ্ধা হিসেবে আমার বারবার বলতে ইচ্ছে করে, আমি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চাই না। হে মাননীয় সরকার মহোদয়, তোমরা দয়া করে আমাকে বাংলাদেশ ভূ-খণ্ডের বাইরে কোথাও নির্বাসনে পাঠাও। আমি এসব সহ্য করতে পারি না। মানুষের জন্য মানুষ সৃষ্ট এমন দুর্যোগ, মানুষের জন্য মানুষ সৃষ্ট এমন দুর্ভোগ, মানুষের জন্য মানুষ সৃষ্ট এমন রাজনৈতিক নির্যাতন, মানুষ সৃষ্ট এমন মানবতা বিরোধী অপরাধ, এটা কেবল পৃথিবীর অসভ্য, বর্বর, অশিক্ষিত, সাম্প্রদায়িক দেশেই শোভা পায়। আর এই একই ঘটনা যখন বারবার বাংলাদেশে ঘটছে, সবার চোখের সামনে ঘটছে, প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটছে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতি ও উপস্থিতিতে ঘটছে, রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সরাসরি ইসারায় ঘটছে, সম্পত্তি, বাড়িঘর, বাগান ও জমি দখলের চক্রান্তে ঘটছে, তখন একথাই গভীরভাবে সুস্পষ্ট যে, বাংলাদেশকে কোনোভাবেই একটি অসাম্প্রদায়িক, ধর্ম নিরপেক্ষ, শিক্ষিত, সভ্য রাষ্ট্র বলার বা দাবী করার কোনো সুস্পষ্ট লক্ষণ নেই। ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালে বাংলাদেশে দশম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচন কেমন হয়েছে তা গোটা বিশ্ব এখন ভালো করেই জানে। কিন্তু নির্বাচনের আগে ও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে খুবই পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা হয়েছে। একথা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের দিনেই যশোরের অভয়নগরে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা হয়েছে। পরদিন ৬ জানুয়ারি ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহী, লালমনিরহাট, বগুড়া, যশোর ও চট্টগ্রামের নানা জায়গায় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা হয়েছে। তাদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট হয়েছে। অগ্নি সংযোগ হয়েছে। তাদের নারী-পুরুষ-শিশুদের উপর নির্যাতন হয়েছে। তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। তারা অনেকে এখন মন্দির বা প্রতিবেশী মুসলিমদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেক বয়স্ক হিন্দু নারী এমন অভিযোগও করেছেন যে, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক পুলিশ সদস্যকে তারা ফোন করেও ঘটনার সময় পাশে পায়নি। অসহায়ের মত কেবল জীবন বাঁচাতে তারা সহায় সম্পত্তি, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জমি, বাগান ফেলে কেবল অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। অনেকেই এই তীব্র শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে কেবল পড়নের কাপড় নিয়ে পালাতে পেরে খোলা আকাশের নিচে জীবন বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছেন। বাংলাদেশের সরকার নির্বাচনকালীন সময়ে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। দেশের গণমাধ্যমে এসব খবর তেমন একটা প্রচারও পায়নি। অনেক সংবাদ মাধ্যম এই মানবতা বিরোধী খবরের চেয়ে বরং বিতর্কিত নির্বাচনী খবর প্রচারেই বেশি মনযোগী রয়েছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ঘটনা ঘটে যাবার পর কোথাও কোথাও উপস্থিত হবার খবর পাওয়া যায়। কোনো রাজনৈতিক দল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিরাপত্তা দিতে এগিয়ে আসেনি। দেশের তথাকথিত সুশীল সমাজ এই নারকীয় নির্যাতন নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য করেনি। বরং তারা নির্বাচনী নানামুখী বিশ্লেষণ করতে রাতের ঘুম হারাম করছেন। রাষ্ট্র, ধর্ম, শিক্ষা, রাজনৈতিক মতাদর্শ, সম্প্রীতি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, উৎসব সবকিছুর উপরে প্রথম যে কথাটি আসে সেটি আমরা সবাই মানুষ। মানবতার কোন সভ্যতায় এভাবে রাজনৈতিক টানাপোড়নের সময় বিশেষ করে নির্বাচনের সময়, বারবার দেশের সংখ্যালঘুদের উপর হামলার বিষয়টি সুস্থ মস্তিস্কে কি মেনে নেওয়া যায়? আমরা কি সত্যি সত্যিই মানুষ? জঙ্গলে পশুদেরও সহ-অবস্থান নিয়ে যার যার টেরিটরিতে একটি অলিখিত আইন কাজ করে। পশুরাও একসঙ্গে বাস করে। আর আমরা মানুষ নামের কলংকিত অসভ্য বর্বর একটা জাতি, যারা বারবার রাজনৈতিক অযুহাতে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করছি। কোথায় মানবতা? রাষ্ট্র আগে নাকি ধর্ম আগে? গণতন্ত্র আগে নাকি মানবতা আগে? আমরা একুশ শতকের বাংলাদেশে এসব কি দেখছি? দেশের সংখ্যালঘুদের উপর এমন বর্বর অসভ্য নির্মম নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঘৃনা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। তাহলে রাষ্ট্র, সরকার, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, ধর্ম নিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িকতা, গণতন্ত্র, এগুলো সবই আসলে ভোগ দখলের খোড়া অযুহাত মাত্র। আমরা আসলে মানবতা শিখতে পারিনি। আমরা আসলে সভ্য হতে পারিনি। তাহলে ৪২ বছর বয়সি বাংলাদেশ আসলে কোনদিকে যাচ্ছে? বাংলাদেশে বারবার নির্বাচনকালীন সময়ে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর পরিকল্পিত এই হামলাকে বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত ঘটনা বলে বারবার পাশ কাটিয়ে যাবার কোনো সুযোগ নেই। বরং নির্বাচন কালীন সময়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্পদায়ের উপর বারবারই এই হামলা অত্যন্ত সুপরিকল্পিত, সুচিন্তিত এবং সুসংগঠিতভাবেই করা হয়েছে। আর এই হামলার পেছনে নির্বাচনের সময়কে বেছে নেবার পেছনেও অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই প্রধান। শুধুমাত্র স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত শিবিরের লোকজন এই হামলার সঙ্গে জড়িত নয়। বরং দেশের প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর লোকজনও এই হামলার পেছনে জড়িত। যখন যারা ক্ষতায় থাকে তারা বিরোধী দলকে এই হামলার দায় দিয়ে নিজেরা ফেরেশতা সাজার ব্যর্থ চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রকৃত সত্য হল, এই হামলার সঙ্গে দেশের সকল রাজনৈতিক দলের সরাসরি ও পরোক্ষ সম্পর্ক বিদ্যমান। যখন যার প্রয়োজন পড়ে, তখন সে এই হামলা করে বাংলাদেশ থেকে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়কে নিশ্চিন্থ করার পায়তারা করছে বলেই ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। ২০০১ সালের ১ লা অক্টোবর নির্বাচন পরবর্তী সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর একই ধরনের হামলার পর, হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ তখন সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন, আমরা ভোটের অধিকার চাই না। আমাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে নিন। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা দিন। তাদের সেই আবেদনে কেউ তখন সারা দেয়নি। বরং ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও এবারের ৫ জানুয়ারি'র নির্বাচনে সেই ঘটনা আবার আরো তীব্র আকারে ঘটলো। যার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। ১৯৪১ সালের ভারতীয় আদমশুমারি অনুয়ায়ী, বাংলাদেশ ভূখণ্ডে তখন অন্তত শতকরা প্রায় ২৮ ভাগ মানুষ ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান দেশ বিভাগ ও ১৯৪৬-৪৭ সালের হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার পর সেই সংখ্যা ১৯৫১ সালে শতকরা ২২ ভাগে নেমে আসে। তখন বাংলাদেশের অভিজাত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা জানমালের নিরাপত্তার প্রশ্নে ভারতে চলে যায়। কিন্তু যারা গরিব তাদের আর যাওয়ার সুযোগ রইলো না। তারা এই হাজার বছরের বংশ পরম্পরার জন্ম ভিটেমাটিতেই আগলে রইলেন। পাকিস্তান কায়েম হবার পর সংখ্যালঘুদের উপর নানান ধরণের চাপ ও নির্যাতনের ফলে তখণ থেকেই নিরবে অনেকে বাংলাদেশ ছেড়ে যান। ১৯৬১ সালে সেই সংখ্যা মোট জনসংখ্যার শতকরা ১৮.৫ ভাগে নেমে আসে। পাকিস্তানের সঙ্গে রাজনৈতিক মতাদর্শে এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রশ্নে ১৯৭১ সালে যে স্বাধীনতা যুদ্ধ সংগঠিত হয়, তখনো বাংলাদেশের প্রধান টার্গেটে পরিনত হয়েছিল সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালের প্রথম আদমশুমারি সাক্ষ্য দেয় যে, তখন বাংলাদেশে মাত্র শতকরা ১৩.৫ ভাগ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ছিল। অন্যরা দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর মুসলমানদের কর্তৃত্ব ও চাপের কারণে সেই দেশ ত্যাগের ঘটনাটি নিরবে ঘটতেই থাকলো। ১৯৮১ সালে সেই সংখ্য নেমে আসে শতকরা ১২.১৩ ভাগে। আর ১৯৯১ সালে সেটি দাঁড়ায় শতকরা ১১.৬২ ভাগে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক ও নির্বাচনকালীন সময়ে এই হামলা ও সহিংসতা বন্ধ না হবার কারণে, ২০০১ সালে এসে দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের সংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র শতকরা ৯.৬ ভাগে। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, তখন বাংলাদেশে অন্তত ১ কোটি ১৩ লাখ ৭৯ হাজারের মত সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস ছিল। আর ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় শতকরা ৮ ভাগে নেমে আসে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যমান রাজনৈতিক সহিংসতা ও সংখ্যালঘুদের উপর বারবার হামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় এই সংখ্যা এখন প্রকৃত হিসেবে কত, সেটি বলা কষ্টকর হলেও, ধারণা করা যায়, এটি শতকরা ৫ ভাগের বেশি হবার কোনো যুক্তি নেই। কারণ, ২০১১ সালের আদমশুমারির পরেও দেশে নিরবে হিন্দু সম্প্রদায়ের দেশত্যাগের অনেক ঘটনাই ঘটেছে। তাই বর্তমানে দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকসংখ্যা শতকরা ৫ ভাগের বেশি হবে না। তাছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেখানোর জন্য বাংলাদেশের সরকারি তথ্য ও হিসেবে অনেক প্রকৃত তথ্যই এদিক সেদিক করার অভ্যাস মোটেও মিথ্যে নয়। তাহলে স্বাভাবিক প্রশ্ন জাগে যে, বাংলাদেশে কি শেষ পর্যন্ত এভাবে ধীরে ধীরে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় একদিন নিশ্চিন্থ হয়ে যাবে? এখন যদি আমাকে কেউ এই প্রশ্ন করেন, আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি, যদি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে বাংলাদেশে আগামী বিশ-পঁচিশ বছরের মধ্যে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় একটি নৃ-গোষ্ঠীতে পরিনত হতে যাচ্ছে। এর পেছনে রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্য যেমন দায়ী। তেমনি বলপ্রয়োগ, রাজনৈতিক চাপ, নির্বাচনে হিন্দু সম্প্রদায়ের এভাবে নির্মম বলিদান, ধন সম্পদ লুটপাট, মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসার, দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের বংশবিস্তার, স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির বিস্তার, দেশের সংবিধানে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক দলগুলোর এসব হামলার সময় নিরব দর্শকের ভূমিকা, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর নির্লজ্ব ব্যর্থতা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা না দিতে পারার রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, প্রতিবেশী দেশ ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়ন, প্রতিবেশী মায়ানমারের জাতিগত দাঙ্গা, দেশের দুর্বল গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা, দেশে বিদ্যমান অন্যের সম্পত্তি দখলের লাগাতার সংস্কৃতি, হিন্দু সম্প্রদায়ের নিজস্ব নিরাপত্তাহীনতা, মিডিয়ার পক্ষপাত আচরণ, আর দেশের মানুষের মানবতা বিরোধী নির্মম ঘটনার পরেও স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি, এসব সম্মিলিত ধারার যুগপথ ধারার কারণেই ভবিষ্যতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় এক সময় নিশ্চিন্থ হয়ে যেতে পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত নিবেদন, নির্বাচনের পর চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা থেকে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এখনই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় ব্যবহার করুন। বিশেষ করে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা আর যাতে বিঘ্নিত না হয়, তাদের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণেরও ব্যবস্থা করুন। নির্বাচন কালীন সহিংসতার সকল উপাদান সক্রিয় থাকা স্বত্ত্বেও কেন দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা সরকার গঠন করলো না, সেই অযুহাত নিয়ে রাজনীতি না করে বরং এখনই অবশিষ্ট হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর যাতে আর একটি হামলাও না হয়, সেই নিশ্চয়তা নিশ্চিত করার অনুরোধ করছি। নতুবা সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এটি আরো পাকাপাকিভাবে নিশ্চিত করে, দেশে বসবাসরত সংখ্যালঘু সকল সম্প্রদায়কে একটি নির্দিষ্ট সময় বেধে দিন, যে অমুক তারিখের মধ্যে সবাই নিরাপদে দেশত্যাগ করুন, নইলে অমুক তারিখে একযোগে হামলা করে সবাইকে শেষ করা হবে। একটা কঠোর সিদ্ধান্তে দয়া করে আসুন। বারবার সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক ঘুটি হিসেবে ব্যবহার না করে, এই সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান করুন। আর যদি বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হয়, তাহলে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, এটা দশম সংসদের প্রথম অধিবেসনেই বর্জন করে ধর্ম নিরপেক্ষ লিখুন। পাশাপাশি জাতি ধর্ম বর্ণ গোষ্ঠি নির্বিশেষে সকলকে নিরাপত্তা দেবার একটি স্থায়ী কার্যকর ব্যবস্থা করুন। আমরা এভাবে আর একজনও সংখ্যালঘু'র উপর হামলা দেখতে চাই না। আর সংখ্যালঘু নিয়ে রাজনীতিও দেখতে চাই না। অনেক বৃদ্ধ হিন্দু মহিলা কান্নাজড়িত কণ্ঠে দাবী করেছেন, নৌকায় ভোট দেবার পর আজ তাদের এই দশা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এখন শুধু একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানই নয় দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। তারা কেন এই হামলার সময় পাশে দাঁড়ালো না? সংখ্যালঘুরা কোথায় ভোট দিলেন, কেন ভোট দিলেন, সেটি একটি সুসংগঠিত সুপরিকল্পিত হামলার জন্য অন্যতম কারণ হতে পারে না। আর এটি মেনে নেওয়াও যায় না। একজন মুসলমান কোথায় ভোট দিলেন, তার যেহেতু কোনো জবাবদিহিতা নেই, একটি রাষ্ট্রে কেন একজন সংখ্যালঘুকে বারবার এই একই প্রশ্নে নির্মম হামলার শিকার হতে হবে? নইলে আমার যে হিন্দু বন্ধু সে আমাকে কোন ভরসায় বিশ্বাস করবে? আমার যে হিন্দু প্রতিবেশী কোন ভরসায় তারা আমাদের পাশে বসবাস করবে? আমাদের যে হিন্দু উৎসব, কোন ভরসায় তারা সেই উৎসব করবে? ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর হামলার পর তারা পরের বছর তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব সারদীয় দুর্গাপূজা বর্জন করেছিলেন। একটি সম্প্রদায় কতো কষ্ট পেলে নিজেদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বর্জনের ঘোষণা দিতে পারে, সেটি কি আমরা একবারও অনুমান করতে পারি? আমরা কি এই হামলার প্রতিবাদে আগামী ঈদ উৎসব বর্জন করব? ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায় দাবী করেছিলেন, তারা ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে জীবনের নিরাপত্তা চায়। যদি তাদের নিয়ে সত্যিই কোনো রাজনীতি না থাকে, তাহলে তাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে নিয়ে আগে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। নিরাপত্তা যখন সার্বিকভাবে নিশ্চিত হবে, তখণ না হয় তারাই আবার দাবী তুলবে যে, আমাদের ভোটের অধিকার এখন ফিরিয়ে দাও। একটা সমাধান দয়া্ করে বের করুন। আর এভাবে মানবতার পরাজয়, সভ্যতার পরাজয়, হিংসার রাজনীতিতে ধুকে ধুকে শকুনের হিংস্র থাবার মুখে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে বারবার মুখোমুখি করার সত্যি সত্যিই কোনো অসভ্যতা আমরা দেখতে চাই না। আর সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়কে আহবান জানাব, আপনারা পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায় নিজেদের নিরাপত্তার জন্য যুবকদের নিয়ে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলুন। যতোক্ষণ নিজেরা লড়াই করতে পারবেন, ততোক্ষণ লড়াই করুন। নিজেদের বসত বাড়ি ব্যবসা সম্পত্তি ফেলে পালিয়ে শুধু আত্মরক্ষাই করা যায়, জীবন সংগ্রাম থেকে পালানো যায় না। আপনাদের যুবশ্রেণী যতোক্ষণ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে ততোক্ষণ, আপনারা নিশ্চিত নিরাপদ। পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যদি সময় মত সারা না দেয়, মা বোনেরাও প্রতিরোধের জন্য তৈরি হোন। যতোক্ষণ জীবন, ততোক্ষণ লড়াই। একবার প্রতিরোধ করুন, দেখবেন হামলাকারীরা পরের হামলাটি করার জন্য একটু হলেও পিছপা নেবে। বাংলাদেশে এখনো অনেক অসাম্প্রদায়িক মুসলমান আছে। তারা আপনাদের প্রতিবেশী। আপনাদের বন্ধু। তাদেরকেও সেই প্রতিরোধ বলয়ে ডাকুন। নিজেরা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য পাড়ায়-পাড়ায় এভাবে টহল প্রতিরোধ গঠন করুন। নইলে বারবার ভয় আর আতংক আপনাদের মানসিকভাবে আরো দুর্বল করে দেবে। আর মানসিকভাবে দুর্বল থাকলে সরকারি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বেশি দিন আপনাদের যে পাহারা দিয়ে বাঁচাতে পারবে না বা পাহারা দেবে না এটা আপনারাও হয়তো ভালো করেই জানেন। পাশপাশি এই হামলার সকল ঘটনা বিশ্ববাসীর কাছে নানাভাবে তুলে ধরে সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করুন। আপনারা যতোবেশি সংগঠিত থাকবেন, ততোই আপনাদের নিরাপত্তা সবল থাকবে। মনে রাখবেন, যারা হামলা করছে তারা কিন্তু দলবদ্ধ। তাই আপনারাও দলবদ্ধ থাকুন। এর বেশি কিছু বলার মত আমি ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। একজন মুসলিম ঘরের সন্তান হিসেবে আপনাদের কাছে আমি ক্ষমা চাচ্ছি। এই হামলার দায় মুসলিমরা এড়াতে পারে না। রাষ্ট্র এড়াতে পারে না। রাজনৈতিক দলগুলো এড়াতে পারে না। নির্বাচন কমিশন এড়াতে পারে না। আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এড়াতে পারে না। সত্যি সত্যিই কেউ এই দায় এড়াতে পারে না। সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:০৮
false
fe
নির্বাচন নিয়ে নৈতিকতার বুদ্ধিবৃত্তি নির্বাচন নিয়ে নৈতিকতার বুদ্ধিবৃত্তি ফকির ইলিয়াস------------------------------------------------------------- নির্বাচনের মাধ্যমে একটি রাষ্ট্রের পটপরিবর্তন হয়। কিন্তু তা মানুষের ভাগ্য সবসময় বদলাতে পারে না। ভাগ্য বদলানোর জন্য দরকার রাজনৈতিক প্রত্যয়। বাংলাদেশে সে প্রত্যয় গড়ে ওঠেনি। গড়ে উঠলে রাজনীতিকরা মানুষের চোখের দিকে তাকিয়ে সর্বনাশ করতে পারতেন না। অথচ তেমনটিই ঘটেছে। প্রতিবাদ যে হয়নি তা নয়। রাজপথে মানুষ রক্ত দিয়েছে। তারপরও গোষ্ঠীভিত্তিক রাজনীতির মাধ্যমে এক ধরনের সামন্তবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ক্ষমতা একদলের হাত থেকে অন্যদলের হাতে গেছে। উপকৃত হয়েছে রাজনীতির দুষ্টগ্রহ। এরা জেঁকে বসেছে। রাজনীতিকরা নিজেদের স্বার্থেই এদের সরাতে চাননি। বরং কাজে লাগাচ্ছেন নিজের মতো করে।মানুষ এই দেশ থেকে স্বৈরশাসন হটালো। গণতন্ত্র আসবে বলে সাজলো দেশ। কিন্তু কথা দিয়েও প্রতারণা করলেন সেই রাজনীতিকরাই। তাদের যদি ন্যূনতম দরদ থাকত তবে এমনটি হতো না। নিজেদের সন্তানদের বিদেশে পাঠান তারা লেখাপড়ার জন্য। আর কৃষক-মজুরের সন্তানরা বটতলা, কদমতলায় দাঁড়িয়ে ছাত্ররাজনীতির ঝাণ্ডা ওড়ায়। তাদের ব্যবহার করা হয় হীন স্বার্থে।জোট-বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগের রাজনীতির মৌলিক চরিত্র একটি। তারা বারবার জনগণকে স্বপ্ন দেখিয়েছে। কাজের বেলায় দেখিয়েছে অন্য চরিত্র। সে চরিত্র লুটপাটের, দুর্নীতির, সন্ত্রাসের। মানুষকে আটকে রাখার চেষ্টা করেছে উভয় পক্ষই। শিক্ষিত হয়ে গেলে তীব্র প্রতিবাদী হয়ে যেতে পারে জনগণ। এ রকম একটি ভয় ছিল দুই প্রধান শিবিরেই। ফলে সাঁইত্রিশ বছরের বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনও পর্যাপ্ত শিক্ষার ছোঁয়া নেই। বাজেট অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় খাতে বেশি থাকলেও, শিক্ষা ক্ষেত্রে সবসময়ই রাখা হয়েছে অপ্রতুল। বদলানো হয়নি সনাতনী শিক্ষা ব্যবস্খা। পানিপথের যুদ্ধ কিংবা নবাব আকবর-বাবরের বিবাহ কাহিনী এই প্রজন্মের শিক্ষার্থী না শিখলেও কিছু যাবে আসবে না। বলা যায় ওসবের এখন প্রয়োজনই নেই। এখন শিক্ষা ব্যবস্খা হওয়া চাই বিজ্ঞান প্রযুক্তি, আধুনিকতা নির্ভর। বাংলাদেশে যে টাকা লুটপাট করা হয় তা বাঁচিয়ে প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার দেয়ার কথা কোন সরকারই ভাবেনি। শিক্ষার উন্নয়নে তাদের রুটিন ছিল হতাশাজনক।পরিস্খিতি বিষিয়ে উঠেছিল খুব। সরকারের সমান্তরাল, ভবন সর্বস্ব সরকার। পদলেহীদের তর্জন-গর্জন। স্খায়ী মসনদ দখলের স্বপ্ন। সবমিলিয়ে একটি সুদরপ্রসারী মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন ভবনওয়ালারা। সেটাতে বাদ সাধতেই একটা ওয়ান-ইলেভেন অনিবার্য হয়ে পড়ে।তার পরের দু’বছরের ঘটনা বেশ নাটকীয়। পজিটিভ-নেগেটিভ দু’ভাবেই সমালোচনা করা যাবে। তবে পর্ণ মল্যায়নের সময় এখনও এসেছে বলে মনে হয় না। একটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজা বড় কঠিন। যারা সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন, এরাও মুক্তি পাচ্ছেন কিভাবে? তাহলে কি রাষ্ট্রের ইচ্ছায় তাদেরকে মামলা দিয়ে আটকানো হয়েছিল? নাকি এরা দোষী হলেও তাদের দোষ এখন ঢেকে দিতে চাইছে রাষ্ট্র? এ রকম প্রশ্ন আরও আছে। সময়ে হয়তো প্রশ্নসংখ্যা বাড়তেই থাকবে।দুইনবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়েছে। ১৮ ডিসেম্বর ’০৮ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ২৪ ও ২৮ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাচন। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারই উপজেলা নির্বাচন করবে তা প্রায় নিশ্চিত। নির্বাচন নিয়ে বেশ জোরেই এগুচ্ছে আওয়ামী লীগ। খুব সামান্যই দরত্ব এখন তাদের বর্তমান সরকারের সঙ্গে। তাদের কেন্দ্রীয় নেতারাও একে একে মুক্তি পাচ্ছেন।নির্বাচন হবে তা ধরে নিয়েই যদি আগানো যায়, তবে এর করণীয়ও ভাবতে হবে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পরিচালনা পরিষদের প্রধান টিএইচ ইমাম। তার বক্তব্য টিভিতে শুনলাম। তারা নতুন নতুন পরিকল্পনা করছেন। প্রচারণা চালানো হবে ইসির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। জনপ্রিয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হবে।এমন অনেক কথাই বললেন টিএইচ ইমাম। যারা দণ্ডপ্রাপ্ত নেতা এরা মনোনয়ন পাবেন কি না প্রশ্ন আছে তা নিয়েও। সরকার কিছু নেতার মনোনয়ন রহিত করতে তৎপর। এমন সংবাদ দীর্ঘদিন থেকেই দেখছি আমরা। বড় বড় দল কিংবা জোটের এসব নেতারা মনোনয়ন পান কি না তা দেখার বিষয়। অথবা টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রিত্ব পান কি না তাও বলে দেবে ভবিষ্যৎ সময়।নির্বাচন নিয়ে বুদ্ধিবৃত্তির খেলা দু’পক্ষই খেলছে। সরকার পক্ষ এবং রাজনৈতিক দলগুলো উভয়েই তা খেলছে নিজের মতো করে। রাষ্ট্রের একটি সংবিধান তো আছেই। যারা সংবিধান বিশেষজ্ঞ এরা এখন খুব সুবিধা করতে পারছেন না। বেশ চুপসে গেছে ‘জরুরি অবস্খায়’ জন্ম নেয়া দলগুলোও। নির্বাচনে অংশ নিয়ে দু-চারটা আসন তারা পেলেও তাতে কি? এমন আসন তো ’৯৬, ২০০১ সালেও কেউ কেউ পেয়েছিল। এমপি হয়ে যাওয়াই বাংলাদেশে তো শেষ কথা নয়।প্রশ্নটা হচ্ছে নৈতিকতার। নীতিহীন রাজনীতি সবসময়ই অন্ত:সারশন্য। দলীয় পদ ছেড়ে দিলে ব্যাংক ব্যবসা থাকবে না এমন মানসিকতা নেতাদের। যার ফলে ক্ষমতায় গেলে হরতাল-আন্দোলন হবে না, সে নিশ্চয়তা তারা দিচ্ছেন না। দেয়ার ইচ্ছাও তাদের নেই। যদি ওয়ান-ইলেভেনের ছায়া নবম জাতীয় সংসদ-পরবর্তী সময়ে দ্রুত সরে যায়, তবে পরিস্খিতি খুবই নাজুক হয়ে উঠতে পারে। কারণ এককভাবে বিএনপি জোটের শাসন মেনে নেবে না আওয়ামী লীগের মহাজোট। আবার মহাজোটের শাসনও মেনে নেবে না চারদলীয় জোট। অতএব, গোলযোগ ছাড়া গত্যন্তর কি?বিদেশের পত্রিকাগুলো লিখছে, জেনারেলরা সহসা ফিরছেন না। যদি না ফেরারই ইচ্ছে থাকে গোপনে, তবে তো পন্থাও উদ্ভাবিত হবে। সেটা কি হতে পারে? এই প্রশ্নের জবাবের সঙ্গেই নির্বাচন হওয়া-না হওয়ার সঙ্গতি খুঁজছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।বিএনপি জোটের নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোর পালে এখনও হাওয়া লাগেনি। তারা ধীরে এগুচ্ছেন মনে হচ্ছে। তবে সমঝোতা শর্ত মানলে নির্বাচনে তাদের যেতেই হবে­ এমন ধারণা সরকারের। বিএনপির সমর্থক বুদ্ধিজীবীদের মতে আবার বিএনপি-জামায়াত জোটই ক্ষমতায় আসবে। এ ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার ‘আপসহীন’ ইমেজকেই তারা আয়না হিসেবে বিবেচনা করছেন।তবে এটা এখন পর্যন্ত খুব নিশ্চিত, গণবিবেকের বুদ্ধিবৃত্তি কাজে লাগিয়ে অগ্রসর হওয়ার কথা কোন দলই ভাবছে না। তাদের উভয়ের সামনেই এখন মামলা থেকে স্খায়ী মুক্তির স্বপ্ন। এই দুই বছরে যা ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা। আর্থিক, মানসিক দুটো ক্ষতিরই বদলা নেয়ার ইচ্ছেও আছে কারও কারও। যদি সেটাই সত্য হয়, তবে বাংলাদেশ আরও পিছিয়ে যেতে পারে। মৌলবাদী, সন্ত্রাসী গডফাদাররা মধ্যস্বত্বভোগে জোর তৎপর হতে পারে। এটা কখনোই কাম্য ছিল না। এখনও নয়। কিন্তু খুনিও তো জামিন পাচ্ছে। জামিন পেয়েই পালিয়ে যাচ্ছে অন্য দেশে। সময় মতো আবার আসবে। কারণ দেশেই থেকে যাচ্ছে তাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষকরা। রমজান মাস শেষ হলেই নতুন তোড়জোড় দেখা যাবে। এরপর কি হবে তা দেখতে সবাই উদগ্রীব। একটা সৎ পরিবর্তনের হাওয়া সবার চাওয়া। সে হাওয়া বইবে কি? সুপ্রিয় পাঠক-পাঠিকা, সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক। নিউইয়র্ক, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৮--------------------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৮ শুক্রবার প্রকাশিত
false
ij
জন্ম মৃত্যুকে কে জয় করতে পারে_ ধর্মপদ থেকে পাঠ। করুণা ও শান্তির পক্ষে ছিলেন বলেই আজও এই মুখটি বিশ্বজুড়ে এত প্রিয় ... বাংলায় ধর্মপদ জনপ্রিয় না হওয়ার অন্যতম কারণ এটির দুঃসহ বাংলা অনুবাদ। ১৮৭০ কি ১৯৩০-এ হয়তো ঐ অনুবাদটি মানিয়ে যেত। এটা একুশ শতকের প্রারম্ভ। ইউরোপ অনেক আগেই সেই দুঃসহ পথে যায়নি। টমাস বাইরোমের এই অনন্য অনুবাদটি দেখুন না! বাইরোম ধর্মপদের অধ্যায় উল্লেখ করলেও - শ্লোকের সংখ্যা উল্লেখ করে অযাথা অনুবাদকে হিজিবিজি করেন নি। বরং একালের পাঠকের উৎসুক মনের কাছে যথাসম্ভব সহজসরল করে বুদ্ধের উপদেশ তুলে ধরেছেন। কবিতার মতন করে। বাংলায় কি আমরা সেরকম একটি অনুবাদের কথা ভাবতে পারিনা? কবি মূর্তালা রামাত কি দায়িত্বটা নেবেন? টমাস বাইরোমএর অনুবাদ এ ব্লগ-এর অনেকেরই পছন্দ হচ্ছে। টমাস বাইরোম কে সালাম। আজকের প্রসঙ্গ-জন্ম মৃত্যুকে কে জয় করতে পারে? Dhammapada 4. Flowers Who shall conquer this world And the world of death with all its gods? Who shall discover The shining way of dharma? You shall, even as the man Who seeks flowers Finds the most beautiful, The rarest. Understand that the body Is merely the foam of a wave, The shadow of a shadow. Snap the flower arrows of desire And then, unseen, Escape the king of death. And travel on. Death overtakes the man Who gathers flowers When with distracted mind and thirsty senses He searches vainly for happiness In the pleasures of the world. Death fetches him away As a flood carries off a sleeping village. Death overcomes him When with distracted mind and thirsty senses He gathers flowers. He will never have his fill Of the pleasures of the world. The bee gathers nectar from the flower Without marring its beauty or perfume. So let the master settle, and wander. Look to your own faults, What you have done or left undone. Overlook the faults of others. Like a lovely flower, Bright but scentless, Are the fine but empty words Of the man who does not mean what he says. Like a lovely flower, Bright and fragrant, Are the fine and truthful words Of the man who means what he says. Like garlands woven from a heap of flowers, Fashion from your life as many good deeds. The perfume of sandalwood, Rosebay or jasmine Cannot travel against the wind. But the fragrance of virtue Travels even against the wind, As far as the ends of the world. How much finer Is the fragrance of virtue Than of sandalwood, rosebay, Of the blue lotus or jasmine! The fragrance of sandalwood and rosebay Does not travel far. But the fragrance of virtue Rises to the heavens. Desire never crosses the path Of virtuous and wakeful men. Their brightness sets them free. How sweetly the lotus grows In the litter of the wayside. Its pure fragrance delights the heart. Follow the awakened And from among the blind The light of your wisdom Will shine out, purely. ইংরেজি অনুবাদ: টমাস বাইরোম। সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:০১
false
hm
প্রিয় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিডিনিউজে আপনার একটি আর্টিকেল [১] পড়ে একাধারে ভালো লাগা আর বিতৃষ্ণা নিয়ে লিখতে বসলাম। আমি সম্ভবত আপনার আর্টিকেলে উদ্দিষ্ট তরুণ প্রজন্মের একজন। আপনি যদি তরুণতর প্রজন্মের জন্যে এই আর্টিকেলটি লিখে থাকেন, তাহলে সম্ভবত আমার প্রতিক্রিয়া লেখা মানায় না। কিন্তু কিছু জিনিস আপনাকে জানানো প্রয়োজন বোধ করছি। আমার ভালো লাগা এ কারণে, যে একজন রাজনীতিক দেশের তরুণদের নিজের দলে ভেড়াতে আহ্বান করে কীবোর্ড ধরেছেন। আপনার উদ্দিষ্ট তরুণেরা অনলাইনে পাঠপ্রবণ, এটাও ধরে নিতে বেগ পেতে হয় না। পড়ার মতো সেরেব্রাল কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষদের রাজনীতির প্রতি আগ্রহী করে তোলার জন্যে আপনার এই উদ্যোগটি দেশে ক্রমবর্ধমান অনলাইন যোগাযোগ ও মত বিনিময়চর্চার গুরুত্বকেই প্রকট করেছে, তাই প্রারম্ভিক সাধুবাদ আপনার প্রাপ্য। আপনার লেখা শুরু হয়েছে একটি উদ্বিগ্ন প্রশ্ন দিয়ে, আমাদের সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে, সেটা হবে তো? প্রিয় মির্জা সাহেব, এখানে "আমাদের" বলতে আপনি কাদের কথা বলছেন, স্পষ্ট হয়নি আমার কাছে। এ্ই "আমরা" যদি দলের মার্কা নির্বিশেষে রাজনীতিকদের বোঝায়, আমি আপনাকে আশ্বস্ত করছি, আপনাদের, রাজনীতিকদের সন্তানরা দুধেভাতেই থাকবেন। আমরা এখন পর্যন্ত এমন কোনো রাজনীতিককে রাজনীতির অঙ্গনে দেখিনি, যার সন্তান দুধেভাতে নেই। আপনাদের রাজনীতির খেলায় বরং আমরা, এই জনগণই দুধভাত হয়ে বসে থাকি একপাশে। আপনারা প্রকাশ্যে একদল আরেকদলের সাথে তর্কাতর্কি লাঠালাঠি করলেও বেলা শেষে আমরা দেখি, আপনাদের সন্তানেরা দলমতের সীমানা পেরিয়ে আত্মীয়তার মিষ্টি বন্ধনেও আবদ্ধ। তাই রাজনীতির পাশার দান উল্টে গেলেও বাংলাদেশের কোনো গরুর সাহস নেই, আপনাদের সন্তানদের পাতে দুধ না দিয়ে কোনো আমজনতার সন্তানের পাতে দুধ দেয়। যদি পাবলিকের সন্তানের দুধভাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে থাকেন, আমার বিনীত প্রশ্ন, পাবলিকের সন্তান শেষ কবে দুধেভাতে ছিলো? আর্টিকেল পড়ে বুঝলাম, '৭২ থেকে '৭৫ সালে যুদ্ধবিদ্ধস্ত বাংলাদেশে শেখ মুজিবের শাসন নিয়ে আপনার অনেক ক্ষোভ, কাজেই আমি বুঝতে পারছি, ঐ সময় পাবলিকের সন্তান কখনোই দুধেভাতে থাকতে পারে না। তবে কি জিয়াউর রহমানের আমলে পাবলিকের সন্তান দুধেভাতে ছিলো? নাকি এরশাদের আমলে? নাকি বিএনপির প্রথম দফায়? আওয়ামী লীগের আমলে তো দুধেভাতের প্রশ্নই ওঠে না, তবে কি আপনাদের জোট সরকারের সময়? নাকি গত সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়? প্লিজ, মির্জা সাহেব, জনগণের সন্তান কবে দুধেভাতে ছিলো, একটু জানিয়ে যান, নিজেদের অভিজ্ঞতার সাথে মিলিয়ে দেখি। আপনি লিখেছেন, আমি আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করি যে আজকের তরুণদের অনেকেই ক্রোধ আর হতাশার মাঝে খেই হারিয়ে ফেলছে। তারা যেন স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছে। দেশের ঘুরে দাঁড়ানোর সাথে নিজের উন্নয়নের এক অদ্ভুত দূরত্ব তৈরি করে তারা মনে করছে, দেশের উন্নয়নটা যেন অন্য কারো কর্তব্য, যার জন্য বরাদ্দ আছে বিশেষ একদল, তাদেরকে তাচ্ছিল্য করা যায়, দোষারোপ করা যায় কোনো পরীক্ষা ছাড়া, শুধু রাজনীতিবিদ বলে শনাক্ত করেই। তাহলে আসুন, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের প্রেক্ষাপটে আপনার এই কথাটার মূল্য যাচাই করে দেখি। আপনি লিখেছেন, মুক্তিযুদ্ধে আমরা অবশ্যই গিয়েছিলাম পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার জন্য, কিন্তু মনে ছিল তার চাইতেও বড় একটা আশা: স্বাধীনতার সুফলটা আমরা সবাই ভাগ করে পৌঁছে যাবো উন্নতির দুয়ারে। আমরা কী রকম আশাহত হয়েছিলাম সে বয়ান আমার কাছে শুনলে আপনাদের মনে হতে পারে পক্ষপাতদুষ্ট, আপনার পাশের যে মানুষটা ৭২ থেকে ৭৫ এর সময়টাতে জীবিত ছিলেন, অতিবাহিত করেছেন তার যৌবন, তাকে একবার হলেও জিজ্ঞেস করুন। তার মানে, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালে, যখন আপনি তরুণ, তখন আপনিও "ক্রোধ আর হতাশার মাঝে খেই হারিয়ে ফেলেছিলেন", "স্বপ্ন দেখতে ভুলে গিয়েছিলেন", মনে করেছিলেন, "যার জন্য বরাদ্দ আছে বিশেষ একদল, তাদেরকে তাচ্ছিল্য করা যায়, দোষারোপ করা যায় কোনো পরীক্ষা ছাড়া, শুধু রাজনীতিবিদ বলে শনাক্ত করেই?" আপনার কি মনে হয় না, যে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫-এর দুঃসময়ের বদনামকে পুঁজি করে আপনার আর্টিকেল শুরু, সেই ৭২-৭৫ কখনও শেষ হয় না, প্রতিটি সরকারের সময়ই নতুন চেহারা নিয়ে ফিরে আসে তরুণদের কাছে? আপনি তরুণদের কেন মুরুব্বির কাছ থেকে ৭২-৭৫ এর কথা শুনতে বলেন মির্জা সাহেব? কেন তাদের ৯১-৯৬, ৯৬-২০০১, ২০০১-০৬, ২০০৭-০৮ দেখান না? সেগুলো তো তারা সরাসরি দেখেছে। নাকি বাংলাদেশের যাবতীয় দুঃখ আর দুর্দশা সেই ১৯৭২-৭৫ এই নিহিত? যদি তা-ই হয়ে থাকবে, তাহলে জিয়াউর রহমান, এরশাদ আর আপনারা মিলে কুড়ি বছর কেমন শাসন করলেন, যে ঐ চার বছরের ধাক্কা এখনও আপনার আর্টিকেলে প্রতিধ্বনিত হয়? আপনি আপনার নিজের রাজনৈতিক জীবনের দুঃখ-কষ্ট নিয়ে লিখেছেন, পড়ে মন কিছুটা আর্দ্র হয়েছে। তবে এর প্রতিদানও আপনি পেয়েছেন বৈকি, সেগুলো নিয়ে তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে কিছু লেখেননি। তাই রাজনীতি যে কেবল বন্ধুর পথে বাধা ঠেলে চলা আর প্রিয়জনের কাছ থেকে দূরে থাকাই নয়, মাঝেমধ্যে মন্ত্রিত্বের ওমও তাতে যুক্ত হয়, এ ব্যাপারটা আপনার আর্টিকেলে ফুটে ওঠেনি। তরুণ প্রজন্ম রাজনীতিতে (লীগ-বিম্পি-জামাত-জাপা-বাম নির্বিশেষে) যোগ দিক আর না দিক, আপনারাই ঘুরে ফিরে দেশ শাসন করবেন সামনে বেশ কিছু বছর। তাই শুধু আপনাদের কষ্ট নয়, প্রাপ্তির দিকগুলোও তাদের জানান প্লিজ। সবচেয়ে ভালো লেগেছে আপনার একটি প্রশ্ন, যে তথ্য, শ্রম, অর্থ ও কাণ্ডজ্ঞান সহযোগে আমরা একটা মোবাইল ফোন কিংবা কম্পিউটার বেছে নেই, সে প্রেরণা ও প্রজ্ঞা আমাদের রাষ্ট্রভাবনায় বরাদ্দ আছে কি না? আমাদের কথা কিছুক্ষণের জন্যে ভুলে গিয়ে বলুন তো, এই প্রেরণা ও প্রজ্ঞা কি আপনাদের, রাজনীতিকদের রাষ্ট্রভাবনায় আছে? কেমন দেশ দিতে চান তরুণ প্রজন্মকে? বেশিদূর ভাবতে হবে না প্রিয় মির্জা সাহেব, যে ইন্টারনেটে আপনি আর্টিকেলটি প্রকাশ করেছেন, সেই ইন্টারনেটের প্রসঙ্গটাই ভাবুন, আপনাদের শাসনামলে আমাদের সুযোগ এসেছিলো প্রায় নিখরচায় তথ্যসড়কে নিজেদের যোগ করার। আপনারা সময়মতো দেশকে সেই সড়কে তুলতে ব্যর্থ হয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য পাচার হয়ে যাওয়ার অভিযোগে। আজ সেই আপনিই ইন্টারনেটে লিখছেন। রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য পাচারের দুশ্চিন্তা যে আপনাদের এখন নেই, জেনে ভালো লাগলেও, এ কথা জানিয়ে দিতে চাই, সময়মতো সেই সুযোগ না নেয়ার কারণে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থানের সঠিক ও সময়োচিত সুযোগ থেকে তরুণ প্রজন্মকে বঞ্চিত করার কিছু দায় আপনি এড়াতে পারেন না। তরুণ প্রজন্মের প্রেরণা ও প্রজ্ঞা গজফিতা ধরে মাপার আগে প্রিয় মির্জা সাহেব, আয়নার সামনে ফিতা নিয়ে দাঁড়ান প্লিজ। মেজার দাইসেলফ। তথ্যপ্রযুক্তি নিয়েই শুধু কথা বললাম, বাকি খাতগুলো আপনি নিজেই হয়তো অবসরে ভেবে ভেবে বার করতে পারবেন। এবার আসি আমার বিতৃষ্ণার কথাটি জানাতে। আপনি লিখেছেন, বিএনপি কোন অতীতমুখী দল নয়, তাদের মনোজগৎ অতীতে অবরুদ্ধ নয়। অতীতের অর্জন আর ট্রাজেডি নিয়ে মানুষের সহানুভূতি আর অনুকম্পা আশা করে না বিএনপি। বিএনপি শুরু থেকেই একটি ভবিষ্যতমুখী দল। পৃথিবীতে এমন কোনও জাতি নেই যার অতীত রক্ত-রঞ্জিত নয় কিংবা পাপবর্জিত । তারা তাদের অতীত বেদনাকে ভুলে থেকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায়, প্রতি নিয়ত অতীত ক্ষতকে সজীব করার রাজনীতি করে না। নাৎজি উত্থান-পর্ব (যেটা সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক ছিলো!) নিয়ে জার্মানরা রাজনীতি করে না, অস্ট্রেলীয় আদিবাসীরা তাদের উপর সংঘটিত অবিচার নিয়ে প্রতিনিয়ত আলোচনা করে নিজেদের মধ্যে বিভেদ ও হীনম্মন্যতা সৃষ্টি করে না। আমাদের রাষ্ট্রের ইতিহাস অন্যান্য আর দশটি রাষ্ট্রের মতোই ভুলে ভরা। আমাদের প্রজন্মের বহু লোক ভুলের এই ফিরিস্তি নিয়ে আলোচনা করাকে তাদের জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করেছে। দয়া করে আপনারা এই ভুলের পুনরাবৃত্তি করবেন না। আমরা এগিয়ে যেতে চাই, এগিয়ে যেতে চাই আমাদের অন্ধকার অতীতকে ভুলে গিয়ে নয়, ভুলে থেকে। কেন এ ধরনের কথা বলেন মির্জা সাহেব? আপনার আর্টিকেল আপনি শুরুই করলেন ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ এ আপনার হতাশার কথা দিয়ে, আবার বলছেন বিএনপি অতীতমুখী দল নয়? টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয় আপনাদের (লীগ ও বিএনপি) সাংসদীয় কার্যক্রম, তার সিংহভাগ জুড়ে থাকে অতীতচারণা। আপনারা শেখ মুজিবকে তুলাধুনা করেন, লীগ জিয়াউর রহমানকে তুলাধুনা করে। অতীতের অর্জন নিয়ে সহানুভূতির কথা যখন উঠলোই, একটু কষ্ট করে কি বলবেন, আপনাদের অর্জনগুলো কী কী? ট্র্যাজেডির কথা তরুণ প্রজন্ম জানে, তারা সেইসব ট্র্যাজেডির ভিকটিম ও ভুক্তভোগী। আপনাকে কে বলেছে, নাৎসি উত্থানপর্ব নিয়ে জার্মানরা রাজনীতি করে না? টুপির নিচ থেকে কথা বার না করে একটু খোঁজ নিন না, গুগল করলেই তো পাবেন অনেক কিছু! জার্মানিতে নাৎসি রাজনীতি নিষিদ্ধ বহুবছর ধরে। জার্মান রাজনীতিতে নাৎসি দলকে কেউ পুনর্বাসন করেনি, যেমনটা জিয়াউর রহমান করেছিলেন জামাতে ইসলামকে। জার্মানি শুধু নাৎসি পার্টিকেই নিষিদ্ধ করেনি, তারা আজও নাৎসি ধারার রাজনীতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করে [২]। অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের কথা বলছেন মির্জা সাহেব? প্লিজ, আপনার পরম স্বজনেরাই তো থাকেন ওখানে, একটু খোঁজখবর করতে ক্ষতি কী ছিলো? অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী কেভিন রাড তাদের সংসদে প্রস্তাব এনে অতীত নির্যাতন ও নিপীড়নের জন্যে ক্ষমা চেয়েছেন আদিবাসী গোষ্ঠীর কাছে [৩]। কিছু আদিবাসী এই ব্যাপারে সন্তুষ্ট হলেও ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন তাদের একাংশ। আপনি আমার দেয়া খবরটা পড়লে আরো জানবেন, একজন শ্বেতাঙ্গ অস্ট্রেলীয়র সাথে একজন আদিবাসী অস্ট্রেলীয়র প্রত্যাশিত আয়ুর পার্থক্য ১৭ বছর। তাদের মধ্যে শিশুমৃত্যু, মাদকাসক্তি, বেকারত্বের হারও অনেক বেশি। অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যার ২% এই গোষ্ঠী এখনও বিপুল বৈষম্যের স্বীকার, যা রাড সরকারও স্বীকার করে নিয়েছেন। আর আপনি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘরে বসে বলে দিচ্ছেন, তারা নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে না! নিজের প্রতি বৈষম্যের প্রতিবাদ করার মানে বিভেদ সৃষ্টি করা? হীনম্মন্যতা সৃষ্টি করা? আপনি কি এই ধারণা নিয়েই মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন, স্বাধীনতা চেয়েছিলেন? তাহলে যখন ক্ষমতায় থাকেন না, তখন প্রতিপক্ষের পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বলে কেন "বিভেদ" আর "হীনম্মন্যতা" সৃষ্টি করেন মির্জা সাহেব? কিন্তু এই কথাগুলো কেন ওঠালেন মির্জা সাহেব? আপনাদের শরীক জামায়াতে ইসলামীর চামড়া বাঁচানোর জন্যেই তো? আপনি তরুণ প্রজন্মের কাছে জার্মানি আর অস্ট্রেলিয়ার অসত্য উদাহরণ টেনে কি এটাই বোঝাতে চাইলেন, যে ১৯৭১ সালে আপনাদের শরীকদের ভূমিকার সমালোচনা আর শাস্তির দাবি থেকে তরুণ প্রজন্মকে সরে আসতে হবে? কেন মির্জা সাহেব? আপনারা কেন তরুণ প্রজন্মের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই বদমাশগুলোর বিচার দাবি করেন না? আপনি না শিক্ষকতা করতেন? আপনি না মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন? আপনি কি আপনার জীবন থেকে আর যুদ্ধ থেকে এ-ই শিক্ষা নিলেন, যে যে বিশ্বাসঘাতকের দল আপনার মতোই লক্ষ লক্ষ স্বাধীনতাকামী মানুষকে হত্যার কাজে সহায়তা করেছে, তাদের গায়ে গা ঘষে আপনাকে ক্ষমতায় যেতে হবে? আপনার কি বেলা শেষে আয়নায় নিজেকে দেখে এতটুকু গ্লানি অনুভব হয় না? রাজনীতি, যেদিকে তরুণ প্রজন্মকে টানার জন্যে আর্টিকেলটি লিখলেন, কি আপনাকে স্বজনবৈরিতার ঐ সীমায় নিয়ে গেলো? কেন মির্জা সাহেব, কেন দেশটাকে চালানোর জন্যে আমরা আহ্বায়কের ভূমিকায় আপনার সুদর্শন সৌম্য চেহারা দেখবো, আর আপনার দুর্বল আর্টিকেলের অসত্য উদাহরণের ফাঁদে পড়ে আমাদের পিতা-পিতামহের হত্যাকারীদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসাবো? আপনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দালালদের বুক আগলে বাঁচাবেন, আর হাতছানি দিয়ে তরুণদের ডাকবেন সেই কাজে? আপনি অন্ধকার অতীতকে ভুলে যেতে বলে সেই অন্ধকার অতীতের পারপিট্রেটরদের হাতে ধরে গদিতে বসাবেন কেন? প্রিয় মির্জা সাহেব, বিএনপি কি একলা চলতে অসক্ষম? একাত্তরের হন্তারকদের চামড়া না বাঁচালে কি বিএনপি চলতে পারবে না? আপনি ইনক্লুসিভিটির কথা বলছেন, বহু মতকে ধারণের কথা বলছেন, কিন্তু সব মত কি ইনক্লুড করা যায়? যে মত এই দেশের তিন মিলিয়ন মানুষ হত্যাকে সহায়তা করেছে, সেই মতও ইনক্লুড করবেন আপনি? আপনি কি আপনার পুত্রের হত্যাকারীকে, কন্যার ধর্ষণকারীকে পাশে নিয়ে মঞ্চে দাঁড়াতে পারবেন? যদি পারেন, যদি এতোই ইনক্লুসিভ হন আপনি, আপনার হাতে কি আমাদের বাংলাদেশ নিরাপদ? আপনি প্রশ্ন রেখেছেন, কিন্তু একবার নিজেকে সততার সাথে প্রশ্ন করুন তো দৈনন্দিন জীবনে কতবার আপনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কিংবা জাতীয়তাবাদের কথা সাগ্রহে চিন্তা করেন? চার ঘণ্টা ব্যয় করে অফিস যাওয়া আসার সময়, দশ ঘন্টার লোডশেডিঙে নেতিয়ে পড়ার সময়ে কিংবা চোখের সামনে কাউকে পিটিয়ে মারার দৃশ্য দেখার সময় কি আপনি অতীতের অর্জন নিয়ে উদ্বেলিত হন না বর্তমানের যন্ত্রণায় কুঁকড়ে ওঠেন? এই প্রশ্ন আপনাকেও করতে চাই মির্জা সাহেব। আপনি যখন ক্ষমতায় ছিলেন, যখন মন্ত্রী ছিলেন, অফিস যেতে আপনার কত সময় লাগতো? আপনার বাড়িতে কয় ঘন্টা লোডশেডিং হতো? আপনাদের শাসনামলে কয়জন মানুষের মৃত্যুর কথা জেনে আপনি যন্ত্রণায় কুঁকড়ে উঠেছিলেন? আমরা তো চিরভুক্তভোগী, আপনারা যে দলই ক্ষমতায় আসেন না কেন, ট্র্যাফিক জ্যামে আমরাই পড়ি, লোডশেডিঙে আমরাই ভুগি, আমরাই রাস্তাঘাটে রাহাজানির শিকার হই, তারপর যখন সময় আসে, তখন আপনাদের একজনকে টেনে নামিয়ে আরেকজনকে তুলি। আপনার কি মনে হয়, আপনারা নিজেদের মেরিটে ক্ষমতায় যান? আপনার ক্ষমতায় যান প্রতিপক্ষের আরো খারাপ শাসনের উছিলায়। আপনাদের হাতে একটা অজুহাত সবসময় তৈরি, সেটা হচ্ছে, প্রতিপক্ষ খারাপ। আপনারা নিজেরা কতো ভালো? আওয়ামী লীগ আর বিএনপির বর্তমান নেতারা কোন যোগ্যতায় একে অন্যের নিন্দা করে? বিএনপির দরজা সবার জন্যে খুলে ধরছেন মির্জা সাহেব, কেন আগে ঘর থেকে একাত্তরের হায়েনাগুলোকে খেদাচ্ছেন না? আপনার সৌম্য চেহারাকে সামনে রেখে যে পেছনে তাদের দাঁতগুলোই ক্রমশ ধারালো হচ্ছে? নূহের নৌকার মতো কি সাপ আর খরগোশ, দুইই পাশাপাশি থাকতে পারবে সে ঘরে? সে ঘরে কে বেশি নিরাপদ, সাপ না খরগোশ? আপনারা, রাজনীতিকরা, দল-নির্বিশেষে, নিজেদের প্রোপাগান্ডাময় পৃথিবী ছেড়ে একটু জেগে উঠুন। বাংলাদেশের অনেক কষ্ট, গভীর রাতে কান পেতে তার কান্নার শব্দ শুনুন। আপনারা না জাগলেও সকাল হবে, আপনাদের ছাড়াই। সূত্র: [১] প্রিয় তরুণ প্রজন্ম - মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিডিনিউজ, ১৩.১০.২০১০ [২] Germany bans its biggest neo-Nazi group - রয়টার্স, ২১.০৯.২০১১ [৩] Australia apology to Aborigines - বিবিসি
false
fe
শুন্য দশকের কবিতা নিয়ে কবি মারুফ রায়হান - এর মূল্যায়ন অক্ষরের কক্ষপথে : অনুজ সবুজ ১১৯ মারুফ রায়হান ------------------------------------------------------------------------------- সুখী গৃহীর মতো তৃপ্ত, পাথরসম প্রতিষ্ঠিত কবি-নক্ষত্রদলের ক্ষীয়মান চেনা আলোর বাইরে এ হলো গুচ্ছ গুচ্ছ হঠাৎ দ্যুতির চমক; দাপুটে নামের ভিড়ে সারি সারি প্রায় অশ্র“তপূর্ব নাম; প্রবল প্রচলের বাইরে নতুন ছলাৎছল। বাংলা কবিতার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত- না হলেও বাংলাদেশের কবিতাভুবনের সর্বসাম্প্রতিক প্রেমিকদলের প্রতিনিধিত্বশীল সংগ্রহ এটি। হ্যাঁ, আমি চলমান দশকের ১১৯ জন নবাগত কবির (বয়স ২২ থেকে ৩৩) কবিতাসংগ্রহ ‘শূন্যের কবিতা’-র কথাই বলছি। সোহেল হাসান গালিব সম্পাদিত অস্ট্রিক আর্যুর ‘বাঙলায়ন’ কর্তৃক প্রকাশিত এই সংকলনে জনপ্রতি সমান দু’পৃষ্ঠা বরাদ্দ। এই নির্দিষ্ট পরিসরে বসত গড়া পঙক্তিমালা পাঠ করে ওই কবির মেজাজ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ না হলেও অনেকখানি আঁচ করা সম্ভব। প্রথমেই আমি একঝাঁক কবিজাতকের কাব্যিক এবং ব্যতিক্রমী নামের প্রতি পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো। নামের প্রেমে পড়ে যাওয়ার মতো ব্যাপার। অনিন্দ্য আকাশ, অপূর্ব সোহাগ, আলী প্রয়াস, ত্রিস্তান আনন্দ, অবনি অনার্য, আদিত্য অন্তর, নির্লিপ্ত নয়ন, সজল সমুদ্র, হিমেল বরকত, সোমেশ্বর অলিঃমধুক্ষরা সব নাম। পূর্ববর্তী যে কোনো প্রজন্মের কবিনামের সঙ্গে ব্যবধান রচে দিয়েছে এই অভিনব নাম-মাহাত্য। পিতৃ-মাতৃপ্রদত্ত, নাকি স্বঘোষিত এইসব নাম, সে-অনুসন্ধানে যাওয়া নিরর্থক। কবিতা প্রবেশের আগেই নামগুলো মনে আঁচড় কাটে, এটাই প্রীতিকর। সম্পাদক তরুণ হলেও অভিমত প্রকাশের ধরন প্রাজ্ঞ প্রবীণের মতোই। তিনি লিখছেন : “আমাদের সময়ের তিনশোর অধিক কবিনামের তালিকা থেকে একশ উনিশ জন কবিকে নির্বাচন করা হয়েছে এ গ্রন্থে। এরও মধ্যে ঝরে যাবে ষাট জন কবি, বিশ জন মারা পড়বে জীবিকার চাপে, দশ জন লিখে যাবে ধুঁকে ধুঁকে, পাঁচ জন লাপাত্তা হবে- এমন ভাবা অন্যায়, নৃশংস; তবু অমূলক হয়তো নয়। নানা যুক্তি, সীমাবদ্ধতা ও বিচারের মানদণ্ডে যারা রয়ে গেলেন এ সংকলনের বাইরে, তাদের মধ্যে দুএকজন সবাইকে তাক লাগিয়ে দশকের শ্রেষ্ঠ কবির তালিকায় উঠে আসবেন।” (সত্যি বটে! আমার জানা নিভৃত চর্চাকারী দু’চারজন এতে অনুপস্থিত, যদিও তারা সিরিয়াস।) আশির দশকে আমরা যারা কবিতা-সাম্পানে উঠেছিলাম তাদের বেশির ভাগকেই কি হারিয়ে ফেলিনি? আজকের কবিবৃন্দ ভাগ্যবান, তারা দলেবলে আছেন সুশোভনভাবে এই গ্রন্থে। দু’দশক আগে দশকওয়ারি এমন স্বাস্থ্যবান বই বেরয়নি। ১১৯ জনেরই ই-মেল অ্যাড্রেস, সেলুলার ফোন নাম্বারসহ হ্রস্ব পরিচিতি রয়েছে এতে। ফলে আগ্রহীরা চাহিবামাত্র সংযোগে সমর্থ হবেন। আমি অন্তত দশ জন কবির চরণ উচ্চারণ করতে চাই। ১.কৈশোরে রাজহাঁসের পালক থেকে সূর্যোদয় হতো (অতনু তিয়াস); ২.বাঘ একটি ডোরাকাটা অধ্যায়/ এর চোখের প্রতি পৃষ্ঠায়/ হরিণ এক নতুন কবিতা (আমজাদ সুজন); ৩.মৃত্যুকে প্রেমের জন্য উপাত্ত ভেবো না (কাজী নাসির মামুন); ৪.আমি তো কেবল ঘাসফুল হয়ে ফুটে আছি/ ফড়িং দেখার লোভে (চন্দন চৌধুরী); ৫.যুদ্ধের যৌবন খুলে খায় বিড়ালের চতুর থাবা (নিতুপূর্ণা); ৬.যেদিকে কসাইখানা, সেদিকেই ফুলের বাজার। রক্ত আর পাপড়ির পাহাড়। (পিয়াস মজিদ); ৭.কামিনীফুলের বাড়িতে খোয়া গেছে কৌমার্য আমার (মাজুল হাসান); ৮. ঘোড়া মূত্রের গন্ধে ভরা এই নৈশ স্কুলে, তোমার ফোটানো শরীর ছাতায়, জীব থেকে ব¯' হয়ে বৃষ্টি-শাবলের ছদ্ম পতনের ভারে ঝরে মিশে যাই গভীর নিরর্থ রসাতলে। (মৃদুল মাহবুব); ৯.আমি আজ মণিহারা ফণী/ বীজহীন কীটদষ্ট করুণ ফলের/ মহীরুহ জন্ম দেবার বাসনা কেন চেয়েছিল আমাকে জড়াতে? (মাদল হাসান); ১০.হিংস্র নৈশরেখাগুলো পাশ কাটাতে পারলেই/ পাওয়া যাবে আকাশের ঘ্রাণ (ইশরাত জাহান মিতিলতা) ছন্দ-ছোঁয়া, ছন্দছুট, ছন্দকে স্বচ্ছন্দে তুড়ি মারা- যে ফর্মেই লেখা হোক না কেন এই গ্রন্থের কবিতায় মিলবে খানিকটা হলেও তাজা হাওয়া, মরমী সুর এবং সদ্যোজাত অমলধবল সংবাদ। এই সংক্ষিপ্ত আলোচনার উপসংহারে অনুজ সবুজ ১১৯ জনকে টুপি খুলে বলি, সুস্বাগতম। শূন্যের কবিতা শূন্যগর্ভ নয়, গর্ভে তার স্বর্ণচূর্ণ- এমন মন্তব্যে দ্বিধা নেই। তবু না বলা অসমীচীন হবে যে, নতুন সহস্রাব্দের সহস্র জটিল অশ্বখুর গ্রন্থস্থ কবিতাবলীতে আছড়ে পড়েনি; কালের পাশ ফেরার আশ্চর্য ইশারায় এই কবিগোত্রের সংখ্যাগুরু অংশই সাড়া দেননি। নবীন কুঁড়িদলের সর্বোচ্চ মেধা-বিচ্ছুরণ, ফুলভার ফলভার আমাদের কবিতা-ইতিহাসের জন্যেই জরুরি। ভুলে যাচ্ছি না, কবিতায় নতুন রক্ত সঞ্চালন করেন ব্যক্তি-কবিই, সমষ্টি নয়। সেই স্বতন্ত্র প্রতিভার প্রতি থাকবে কবিতাপিয়াসিদের সাগ্রহ নজরদারি, এতে কোনো সংশয় দেখি না। ----------দৈনিক যুগান্তর সাময়িকী। ৯ মে ২০০৮ শুক্রবার প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০০৮ রাত ৮:০১
false
fe
প্রজন্মের স্বাধীনতা, জাতির জনকের সেই ভাষণ প্রজন্মের স্বাধীনতা, জাতির জনকের সেই ভাষণফকির ইলিয়াস__________________________________________________কিছু খণ্ড স্মৃতি দিয়েই লেখাটি শুরু করি। ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথমার্ধ। সদ্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা বীরের বেশে দেশে ফিরে আসতে শুরু করেছেন। আমার অগ্রজ বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এম এ মতলিব তার গ্রুপ নিয়ে দেশে ফিরেছেন। সিলেট কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ সাবসেক্টরে কমান্ডার মতলিবের বেশ সুনাম ছিল। পরবর্তী সময়ে তিনি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট সদরের কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডারও নির্বাচিত হয়েছিলেন। আমার সেই অগ্রজ বীর দেশে ফিরেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন ঘুরে ঘুরে এলাকার ক্ষয়ক্ষতি দেখার জন্য। মনে পড়ছে, তার সঙ্গেই সিলেট শহরের অবস্থা দেখার জন্য আমি অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে বের হই। সিলেটের বহুল পরিচিত ‘কীন ব্রিজ’ পাক-খানসেনারা শেষ মুহূর্তে এসে ভেঙে দিয়েছিল। ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী খুব দ্রুতই সেই ভাঙা সেতুটি পুনঃসংযোগ দিতে সমর্থ হয়। যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে তোলা হয়। আমি তখন ১০ বছরের এক অনুসন্ধিৎসু বালক। অগ্রজের সঙ্গে কীন ব্রিজ পেরিয়ে একটি রিকশায় আমরা যাচ্ছি। নিথর সিলেট নগরী। যারা শহর ছেড়ে পালিয়েছিলেন, তারা ক্রমশ নিজ নিজ বাসস্থানে ফিরে আসতে শুরু করেছেন। মানুষের চোখে-মুখে শঙ্কা। বিভিন্ন স্থানে পোঁতা মাইন নিয়েও মানুষের মাঝে খুবই ভয়।সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে তখন বীর মুক্তিযোদ্ধারা ফিরে এসে তাদের ‘ওপেন ক্যাম্প’ চালু করেছেন। শীতের সকাল। হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা রোদ পোহাচ্ছেন মাদ্রাসা মাঠের খোলা আকাশের নিচে, সবুজ ঘাসে। সিলেট শহরের পাড়ায় পাড়ায় মাইক লাগিয়ে বাজানো হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধের গান। ‘জয় বাংলা- বাংলার জয়’, ‘শোনো একটি মুজিবুরের থেকে লক্ষ মুজিবের কণ্ঠ ধ্বনি, প্রতিধ্বনি আকাশে-বাতাসে উঠে রণিÑ বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ।’ সে এক অপূর্ব অনুভূতি। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুক্তিযোদ্ধারা আকাশে ওপেন ফায়ার করতে করতে মাদ্রাসা মাঠের দিকে আসছেন। দৃশ্যগুলো দেখতে দেখতে আমি অনেকটা যেন তন্ময় হয়ে যাচ্ছিলাম। কারণ রেডিওতে জাতির জনকের ৭ মার্চের সেই অগ্নিঝরা ভাষণ শুনে যেদিনটির জন্য ভীষণ প্রতীক্ষিত ছিলামÑ আমার কাছে মনে হচ্ছিল সেটিই বুঝি একটি স্বাধীন দিন। জাতির জনক তাঁর সেই ভাষণে কী বলেছিলেন তা আমি সবিনয়ে আবারো জনাতে চাই আজকের প্রজন্মকে। ১৭ মিনিটের সেই ভাষণটি ছিল অলিখিত। তারপরও সেই দৃপ্ত প্রত্যয় ছিল জাতিকে একটি স্পষ্ট আলোকবর্তিকা দেয়ার। পাঠ করা যাক আবার সেই অমর বাণীগুলো ৃভায়েরা আমার, আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সবাই জানেন এবং বুঝেন। আমরা আমাদের জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়। কি অন্যায় করেছিলাম, নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ সম্পূর্ণভাবে আমাকে আওয়ামী লীগকে ভোট দেন। আমাদের ন্যাশনাল এসেম্বলি বসবে, আমরা সেখানে শাসনতন্ত্র তৈয়ার করবো এবং এই দেশকে আমরা গড়ে তুলবো, এ দেশের মানুষ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, তেইশ বৎসরের করুণ ইতিহাস বাংলার অত্যাচারের, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস। তেইশ বৎসরের ইতিহাস মুমূর্ষু নরনারীর আর্তনাদের ইতিহাস; বাংলার ইতিহাস এ দেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস। ১৯৫২ সালে রক্ত দিয়েছি। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করেও আমরা গদিতে বসতে পারি নাই। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান মার্শাল ল’ জারি করে দশ বৎসর পর্যন্ত আমাদের গোলাম করে রেখেছে। ১৯৬৬ সালে ছয়দফা আন্দোলনে ৭ জুনে আমার ছেলেদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ১৯৬৯-এর আন্দোলনে আইয়ুব খানের পতন হওয়ার পর যখন ইয়াহিয়া খান সাহেব সরকার নিলেন, তিনি বললেন, দেশে শাসনতন্ত্র দেবেন, গণতন্ত্র দেবেন। আমরা মেনে নিলাম। তারপরে অনেক ইতিহাস হয়ে গেলো, নির্বাচন হলো। আমি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছি। আমি, শুধু বাংলায় নয়, পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা হিসেবে তাকে অনুরোধ করলাম, ১৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে আপনি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন দেন। তিনি আমার কথা রাখলেন না, তিনি রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা। তিনি বললেন, প্রথম সপ্তাহে মার্চ মাসে হবে। আমরা বললাম, ঠিক আছে, আমরা এসেম্বলিতে বসবো। আমি বললাম, এসেম্বলির মধ্যে আলোচনা করবো; এমনকি আমি এ পর্যন্ত বললাম, যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও, একজনও যদি সে হয়, তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেবো।জনাব ভুট্টো সাহেব এখানে এসেছিলেন, আলোচনা করলেন। বলে গেলেন যে, আলোচনার দরজা বন্ধ না, আরো আলোচনা হবে। তারপর অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ করলাম, আপনারা আসুন বসুন, আমরা আলাপ করে শাসনতন্ত্র তৈয়ার করি। তিনি বললেন, পশ্চিম পাকিস্তানের মেম্বাররা যদি এখানে আসেন, তাহলে কসাইখানা হবে এসেম্বলি। তিনি বললেন, যে যাবে তাকে মেরে ফেলে দেয়া হবে। যদি কেউ এসেম্বলিতে আসে তাহলে পেশোয়ার থেকে করাচি পর্যন্ত দোকান জোর করে বন্ধ করা হবে। আমি বললাম, এসেম্বলি চলবে। তারপর হঠাৎ ১ তারিখে এসেম্বলি বন্ধ করে দেয়া হলো। ইয়াহিয়া খান সাহেব প্রেসিডেন্ট হিসেবে এসেম্বলি ডেকেছিলেন। আমি বললাম যে, আমি যাবো। ভুট্টো সাহেব বললেন, তিনি যাবেন না। ৩৫ জন সদস্য পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এখানে আসলেন। তারপরে হঠাৎ বন্ধ করে দেয়া হলো। দোষ দেয়া হলো বাংলার মানুষকে, দোষ দেয়া হলো আমাকে। বন্দুকের মুখে মানুষ প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠলো। আমি বললাম, শান্তিপূর্ণভাবে আপনারা হরতাল পালন করেন। আমি বললাম, আপনারা কলকারখানা সবকিছু বন্ধ করে দেন। জনগণ সাড়া দিলো। আপন ইচ্ছায় জনগণ রাস্তায় বেরিয়ে পড়লো। তারা শান্তিপূর্ণভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো।কি পেলাম আমরা? যে আমরা পয়সা দিয়ে অস্ত্র কিনেছি বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য, আজ সেই অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে আমার দেশের গরিব-দুঃখী আর্ত মানুষের বিরুদ্ধে, তার বুকের ওপর হচ্ছে গুলি। আমরা পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু। আমরা বাঙালিরা যখনই ক্ষমতায় যাবার চেষ্টা করেছি তখনই তারা আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। টেলিফোনে আমার সঙ্গে তার কথা হয়। তাকে আমি বলেছিলাম, জনাব ইয়াহিয়া খান সাহেব, আপনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, দেখে যান কিভাবে আমার গরিবের ওপরে, আমার বাংলার মানুষের ওপরে গুলি করা হয়েছে, কী করে আমার মায়ের কোল খালি করা হয়েছে। আপনি আসুন, দেখুন, বিচার করুন। তিনি বললেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ১০ তারিখে রাউন্ড টেবিল কনফারেন্স ডাকবো। আমি বলেছি, কিসের বৈঠক বসবে, কার সঙ্গে বসবো? যারা মানুষের বুকের রক্ত নিয়েছে তাদের সঙ্গে বসবো? হঠাৎ আমার সঙ্গে পরামর্শ না করে পাঁচ ঘণ্টা গোপনে বৈঠক করে যে বক্তৃতা তিনি করেছেন, সমস্ত দোষ তিনি আমার ওপরে দিয়েছেন, বাংলার মানুষের ওপর দিয়েছেন।ভাইয়েরা আমার,২৫ তারিখে এসেম্বলি কল করেছে। রক্তের দাগ শুকায় নাই। আমি ১০ তারিখে বলে দিয়েছি যে, ঐ শহীদের রক্তের ওপর পা দিয়ে কিছুতেই মুজিবুর রহমান যোগদান করতে পারে না। এসেম্বলি কল করেছে। আমার দাবি মানতে হবে: প্রথম, সামরিক আইন মার্শাল ল’ উইড্র করতে হবে, সমস্ত সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ফেরত নিতে হবে, যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করতে হবে, আর জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তারপর বিবেচনা করে দেখবো, আমরা এসেম্বলিতে পারবো কি পারবো না। এর পূর্বে এসেম্বলিতে বসতে আমরা পারি না। আমি, আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। আমরা এ দেশের মানুষের অধিকার চাই। আমি পরিষ্কার অক্ষরে বলে দিবার চাই যে, আজ থেকে এই বাংলাদেশে কোর্ট-কাচারি, আদালত-ফৌজদারি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। গরিবের যাতে কষ্ট না হয়, যাতে আমার মানুষ কষ্ট না করে, সে জন্য সমস্ত অন্যান্য জিনিসগুলো আছে সেগুলোর হরতাল কাল থেকে চলবে না। রিকশা, গরুর গাড়ি চলবে, রেল চলবে, লঞ্চ চলবে; শুধু সেক্রেটারিয়েট, সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট, জজকোর্ট, সেমি-গভর্নমেন্ট দপ্তরগুলো, ওয়াপদা কোনো কিছু চলবে না।২৮ তারিখে কর্মচারীরা বেতন নিয়ে আসবেন। এর পরে যদি বেতন দেয়া না হয়, আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোকদের হত্যা করা হয়, তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইলোÑ প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সব কিছু, আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে। আমরা ভাতে মারবো, আমরা পানিতে মারবো। তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাকো, কেউ তোমাদের কিছু বলবে না। কিন্তু আর আমার বুকের ওপর গুলি চালাবার চেষ্টা করো না। সাত কোটি মানুষের দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দমাতে পারবে না।আর যে সমস্ত লোক শহীদ হয়েছে, আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, আমরা আওয়ামী লীগের থেকে যদ্দুর পারি তাদের সাহায্য করতে চেষ্টা করবো। যারা পারেন আমার রিলিফ কমিটিতে সামান্য টাকা পয়সা পৌঁছিয়ে দেবেন। আর এই সাতদিন হরতালে যে সমস্ত শ্রমিক ভাইরা যোগদান করেছেন, প্রত্যেকটা শিল্পের মালিক তাদের বেতন পৌঁছায়ে দেবেন। সরকারি কর্মচারীদের বলি, আমি যা বলি তা মানতে হবে। যে পর্যন্ত আমার এই দেশের মুক্তি না হবে খাজনা-ট্যাক্স বন্ধ করে দেয়া হলো, কেউ দেবো না। মনে রাখবেন, শত্রুবাহিনী ঢুকেছে, নিজেদের মধ্যে আত্মকলহ সৃষ্টি করবে, লুটপাট করবে। এই বাংলায় হিন্দু মুসলমান বাঙালি অবাঙালি যারা আছে তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের ওপরে। আমাদের যেন বদনাম না হয়। মনে রাখবেন রেডিও টেলিভিশনের কর্মচারীরা, যদি রেডিওতে আমাদের কথা না শোনেন, তাহলে কোনো বাঙালি রেডিও স্টেশনে যাবেন না। যদি টেলিভিশন আমাদের নিউজ না দেয়, কোনো বাঙালি টেলিভিশনে যাবেন না। দুই ঘণ্টা ব্যাংক খোলা থাকবে যাতে মানুষ তাদের ময়নাপত্র নিবার পারে। কিন্তু পূর্ববাংলা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে এক পয়সাও চালান হতে পারবে না। টেলিফোন টেলিগ্রাম আমাদের এই পূর্ববাংলায় চলবে এবং বিদেশের সঙ্গে নিউজ পাঠাতে চালাবেন। কিন্তু যদি এ দেশের মানুষকে খতম করার চেষ্টা করা হয়, বাঙালিরা বুঝেশুনে কাজ করবেন। প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলো এবং তোমাদের যা কিছু তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দিবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ্। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা। জয় বাংলা।দুই. শেখ মুজিবের রাজনীতি কোনো তাঁবেদারিত্বের ধার ধারতো না। তিনি তাই খুব সাহস নিয়েই বলেছিলেন ‘আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি’ কিংবা ‘যার যা কিছু আছে’। তাঁর সেই কথাগুলো আজো খুবই প্রাসঙ্গিক। বঙ্গবন্ধু জানতেন, তাঁকে হুকুম দেয়ার সময় নাও দেয়া হতে পারে। কিন্তু তাই বলে স্বাধীনতার সংগ্রাম থেমে থাকবে না। থাকার নয়। দেশ গঠনে যার যা কিছু আছে তারই দরকার হয়। যে যে সেক্টরে থাকেন, তিনি যদি সেই সেক্টর থেকে এগিয়ে আসেন তবেই মানুষ, রাষ্ট্র, সমাজ এগিয়ে যাবে তার অভিষ্ট লক্ষ্যবিন্দুতে। শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন আগামী প্রজন্মের জন্য স্বপ্নের ধ্রুবতারা নির্মাণের স্থপতি। তার উদারতার মহাকাশকে অনেকে ব্যবহার করেছে অন্যায্যভাবে। এসব ইতিহাস আজকের সমাজ নির্মাণকারী প্রজন্মকে জানতে হবে। যারা সেই সময়ের একজন তরুণ মেজরকে আজ ‘মহানায়ক’ বানাবার মিছে কসরৎ করছেন, সেই মেজরও তার জীবদ্দশায় এমন কোনো বক্তব্য রেখে বলেননি, তিনি ’৭১-এর রাজনীতির কোনো সদস্য ছিলেন। মহাকাল সকল সত্যকে ধারণ করে। মুজিবের সেই ভাষণটিও প্রজন্মকে প্রেরণা দিয়ে যাবে হাজার হাজার বছর, সন্দেহ নেই। যে ভাষণটির কথা আমি লিখছি, সেই ভাষণটি আবারো আলোচিত হচ্ছে গোটা বিশ্বে। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর রিয়ান জ্যাকেলের সঙ্গে আমার প্রায়ই কথা হয়। তিনি ইন্টারন্যাশনাল পলিটিকসের শিক্ষক। তিনিই আমাকে জানালেন প্রথম, বইটির কথা। যে বইটির কথা বিশ্বের অনেক পাঠকই ইতোমধ্যে জেনেছেন।১৯৭১ সালে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বলার মধ্য দিয়েই কার্যত বাঙালি জাতির, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রেরণাদায়ী ওই ভাষণ এখনো আলোচিত, এ নিয়ে লেখা হয়েছে কবিতাও। বঙ্গবন্ধুর ওই ভাষণকে বিশ্বসেরা অন্যতম ভাষণ বলে অনেকে মনে করেন। এবার বিশ্বসেরা ভাষণ নিয়ে যুক্তরাজ্যের একটি প্রকাশনায় তা স্থান পেয়েছে। ইংরেজিতে অনূদিত ভাষণের বইটির নাম ‘উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেস’- দ্য স্পিচেস দ্যাট ইন্সপায়ার্ড হিস্টরি [we shall fight on the beaches: the speeches that inspired history]’।বইটির সংকলক- জ্যাকব এফ ফিল্ড। খ্রিস্টপূর্ব ৪৩১ সাল থেকে ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সেরা ভাষণ নিয়ে ২২৩ পৃষ্ঠার বই এটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার উইনস্টন চার্চিলের ভাষণ থেকে নেয়া শিরোনামের এই সংকলন গ্রন্থের শেষ ভাষণটি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগ্যানের ‘টিয়ারস ডাউন ওয়াল’। বইটির ২০১ পৃষ্ঠায় ‘দ্য স্ট্রাগল দিস টাইম ইজ ট্য স্ট্রাগল ফর ইন্ডিপেন্ডেন্স’ শিরোনামে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। বিশ্ব সভ্যতা, বিশ্ব সমাজ ও রাজনীতির দ্বার আজ অবারিত। প্রজন্ম সেই দরজায় নাড়া দেবেই। কোনো সত্যই চেপে রাখা যাবে না। যে ভাষণটি গোটা বাঙালি জাতিকে মুক্তিপাগল করে তুলেছিল- তার ঐতিহাসিক স্বীকৃতি সেই ধারাটি আবারো প্রমাণ করছে।-------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ : ০৬/ সেপ্টেম্বর /২০১৪ শনিবার প্রকাশিত
false
mk
বই উৎসব এবং বাংলাদেশ দেশের উপজেলা পর্যন্ত ৮০ ভাগ বিনামূল্যের নতুন পাঠ্যবই ইতোমধ্যেই পৌঁছে গেছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই শতভাগ পাঠ্যবই সারাদেশের স্কুল পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এবার প্রথমবারের মতো প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের হাতেও বিনামূল্যের বই তুলে দেবে সরকার। এছাড়া প্রথমবারের মতো পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের শিশুদের নিজ মাতৃভাষায় বই দেয়া হচ্ছে। প্রথমবারের মতো চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, ওরাও ও গারো জনগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য তাদের মাতৃভাষায় প্রস্তুত হয়েছে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠ্যবই ও শিক্ষা উপকরণ।রবিবার রাজধানীর মাতুয়াইল এলাকায় পাঠ্যবইয়ের ছাপাখানা পরিদর্শনে এসে এসব তথ্য জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, এবারও বছরের প্রথম দিন দেশব্যাপী পাঠ্যপুস্তক উৎসব পালন করবে সরকার। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইন, অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) চৌধুরী মুফাদ আহমেদ, এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা, সদস্য অধ্যাপক ড. মিয়া ইনামুল হক সিদ্দিকী প্রমুখ। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা এবার ব্রেইল বই দেব। ইতোমধ্যে ওই বই ছাপানো হয়েছে। তবে সকল দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এই বই পাবেন সেই নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। কারণ (দৃষ্টিপ্রতিন্ধীদের) তথ্যটা পেতেই আমাদের বিরাট সমস্যা, আমরা জরিপ করছি। এবার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জন্য পাঁচটি ভাষায় প্রাক-প্রাথমিকের বই ছাপানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আদিবাসী নৃ-গোষ্ঠীর সকল ভাষায় লিপি নেই, সাহিত্য নেই, লেখা নেই। যেটা আছে আমরা চাই সেটাতেই তারা শিখুক। মায়ের কোল থেকে নেমেই সে প্রথমে স্কুলে যায়, বাংলা ভাষায় কথা সে বুঝতে পারে না। ঠিক সময়ে তাদের হাতে এসব বই পৌঁছে দেব। আমরা প্রাথমিক স্তরে সেই ধরনের শিক্ষকও তৈরি করতে চাই। পরিদর্শনকালে শিক্ষামন্ত্রী বিনামূল্যের পাঠ্যবই তৈরি হয় এমন তিনটি ছাপাখানা পরিদর্শন করেন। ছাপাখানাগুলো হল আনন্দ প্রিন্টার্স, ব্রাইট প্রিন্টার্স এবং মৌসুমী প্রিন্টার্স। এ সময় মন্ত্রী ছাপাখানায় প্রিন্ট হওয়া বইয়ের কাগজের মান দেখে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, বইয়ে ব্যবহৃত কাগজগুলো টেস্ট করে প্রেসে এনে রাখা হয়েছে। এর বাইরে কোন কাগজ ব্যবহার করতে যেন না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগে ছোট ছোট প্রেসে বই ছাপা হতে। বর্তমানে বিপুল পরিমাণ বই ছাপার কারণে বড় ধরনের ছাপাখানা গড়ে উঠেছে। ৩ বছর আগেও এত বড় আকারের প্রেস ছিল না। পাঠ্যপুস্তক ছাপাকে কেন্দ্র করে এ শিল্পের বিকাশ হয়েছে। বড় আকারের প্রেস স্থাপন করা হয়েছে। এ শিল্পে প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বর্তমানে উন্নতমানের অটোমেটিক মেশিনে ছাপা ও বাঁধাইয়ের কাজ সম্পন্ন হচ্ছে।সারাদেশে পাঠ্যবই বিতরণ কাজের সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সব বই পৌঁছে যাবে। গতবারের চেয়ে এবার প্রায় তিন কোটি বই বেশি দেয়া হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে প্রতিবছরই শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঝরে পড়া কমছে। যার ফলে প্রতিবছরই বইয়ের সংখ্যা বাড়ছে। গতবছর বই বিতরণ করা হয়েছিল ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ ৪৭ হাজার ৯৭২টি। এবার বিতরণ করা হবে ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৫টি বই। বিশ্বব্যাংক ও এডিবির সঙ্গে চুক্তি থাকায় প্রাথমিক স্তরের বইয়ের তিনটি কাজ বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে। বাকি সব বই দেশী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই তৈরি করা হচ্ছে।এদিকে পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৫ বছর পর এবার দেশের আদিবাসী বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের পথ উন্মুক্ত হতে চলেছে। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই মাতৃভাষায় পাঠ্যবই পড়ার সুযোগ পাচ্ছে দেশের পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুরা। প্রথমবারের মতো চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, ওরাও ও গারো জগগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য তাদের মাতৃভাষায় প্রস্তুত হচ্ছে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠ্যবই ও শিক্ষা উপকরণ। পরবর্তী শিক্ষাবর্ষ থেকে পর্যায়ক্রমে প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক স্তরে অন্যান্য আদিবাসী শিশুরাও মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের সুযোগ পাবে বলে জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।ইতোমধ্যেই আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নতুন পাঠ্যবই প্রণয়নের কাজ প্রায় শতভাগ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনসটিবির কর্মকর্তারা। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষার পাঠ্যবই প্রণয়ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন। আগামী বছর প্রথম দিন থেকেই মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে দেশের পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুরা। প্রথমবারের মতো তাই চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, সাদ্রি ও গারো ভাষায় প্রস্তুত হচ্ছে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠ্য বই।জানা গেছে, পার্বত্য শান্তিচুক্তিতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভের অধিকার থাকলেও গত দুই দশক তা ছিল স্বপ্ন। সংবিধানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মাতৃভাষায় শিক্ষা লাখের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি জাতিসংঘেও স্বীকৃত। তারপরও এতদিন দেশের আদিবাসীদের জন্য ছিল এটি কেবলই স্বপ্ন। তবে সে স্বপ্ন পূরণেই এবার এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। এনসিটিবি জানিয়েছে, চার বছর আগে প্রাথমিক স্তরে পাঁচটি নৃগোষ্ঠীর ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের জন্য মাতৃভাষাভিত্তিক বহুভাষী শিক্ষা (এমএলই) বিষয়ক জাতীয় কমিটিও গঠন করেছিল সরকার। পুস্তক ছাপানোর প্রস্তুতির নানা ধাপ ও প্রতিকূলতা পেরিয়ে এখন তা ছাপা হচ্ছে।বিষয়টির প্রতি সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন এনসিটিবির সদস্য (টেক্সট) অধ্যাপক ড. মিয়া ইনামুল হক সিদ্দিকী। তিনি বলছিলেন, আগামী জানুয়ারি থেকে দেশের পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের হাতে মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক স্তরের বই পৌঁছে দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে মোট ২৪ হাজার ৬৪৬ জন শিশুর জন্য বই ও শিক্ষা উপকরণ ছাপানো হচ্ছে। এ বিশেষজ্ঞ জানান, আমাদের পবিত্র সংবিধানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের অধিকারের কথা সুষ্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। বিষয়টি জাতিসংঘেও স্বীকৃত। তারপরও এতদিন দেশের আদিবাসীদের জন্য ছিল এটি কেবলই স্বপ্ন। তবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের হাতে দ্রুত মাতৃভাষায় পাঠ্যবই তুলে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে তাগাদা দিয়েছেন। নজর রাখছেন সব সময়। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগের কারণেই আমরা আজ এ কাজটি করতে পারছি। অন্যথায় এ কাজ সফল করা সম্ভব হতো না বলে জানান এনসিটিবির এই সদস্য।বইগুলো লেখা, সম্পাদনা, চিত্রায়ন প্রভৃতি কাজ শেষ হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতির চিত্রায়নসহ আনুষঙ্গিক বিষয় দিয়ে বইগুলো সাজানো হয়েছে। যে পাঁচটি জনগোষ্ঠীর ভাষায় বই ছাপানো হচ্ছে সেগুলো হলো চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও ওরাও। অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী জানান, পাঁচটি ভাষায় বই হচ্ছে। চাকমাদের বই তাদের নিজস্ব বর্ণমালায় ছাপা হচ্ছে। গারোদের আচিক ভাষা হলেও তাদের বর্ণমালা নেই। তারা মূলত রোমান বর্ণমালায় তা পড়ে থাকে। তাই তাদের বই হবে রোমান বর্ণমালায়। মারমাদের বই মামরা ভাষায় হলোও তাদের যেহেতু নিজস্ব বর্ণমালা নেই তাই বই হবে বাংলা বর্ণমালায়। ত্রিপরাদের ভাষা ককবরক। তবে তাদের বইও হবে বাংলা বর্ণমালায়। ওরাও জনগোষ্ঠীর ভাষা সাদ্রি। তাদের বইও হবে বাংলা বর্ণমালায়।এনসিটিবি সূত্র জানায়, সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর বইয়ের হরফ সম্পর্কে নানান মত আসায় এ বছর তাদের জন্য বই ছাপানো সম্ভব হচ্ছে না। সাঁওতালদেরও প্রতিনিধিরা কেউ বাংলা এবং কেউ রোমান লিপিতে বই লেখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। পরবর্তী বছর থেকে তাদের বই নিশ্চিত করা হবে। একই সঙ্গে অন্যান্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীও পাবে নিজস্ব ভাষায় বই। জানা গেছে, ২০১৮ সালে দেয়া হবে আদিবাসী শিশুদের প্রথম শ্রেণীর পাঠ্যবই। এর পরের বছর ২০১৯ সালে দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদেরও মাতৃভাষায় বই দেয়া হবে।কিন্তু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরা কোন শ্রেণী পর্যন্ত মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ পাবে? এনসিটিবির সদস্য ড. রতন সিদ্দিকী বলেন, সাধারণভাবে বলা যায় প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত তারা এ সুযোগ পাবে। তবে দ্বিতীয় শ্রেণীর পর তৃতীয় শ্রেণী থেকে তাদের মাতৃভাষার পাশাপাশি জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুযায়ী বাংলা, ইংরেজী প্রভৃতি বই পড়তে হবে। তৃতীয় শ্রেণী থেকে এই দুইয়ের মধ্যে ‘ব্রিজিং’ শুরু হবে। এরপর ক্রমান্বয়ে তারা পুরোপুরি জাতীয় শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত হবে। শিক্ষানীতির ভাষায় এটা হচ্ছে ‘ব্রিজিং’। কোন শিশুকে ভবিষ্যত শিক্ষার জন্য প্রস্তুত করতে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে মাতৃভাষায় শিক্ষা দেয়া জরুরী। এরপর সে ধীরে ধীরে মাতৃভাষার সঙ্গে অন্য ভাষায় (বাংলাদেশের জন্য বাংলা) শিক্ষা নেবে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সময় সাত বছর। এ সময়টাকে বলে ‘ব্রিজিং পিরিয়ড’। জাতীয় শিক্ষানীতিতেও শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:১২
false
mk
নিরাপত্তা চিন্তা যুক্তরাষ্ট্রে মসজিদের ইমামসহ দুই বাংলাদেশি প্রকাশ্যে আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছেন গত শনিবার। মার্কিন মুলুকে বাংলাদেশি ইমাম হত্যার নজির এটাই প্রথম। হামলার কারণ স্পষ্ট না হলেও মুসলিম-বিদ্বেষ ঘটনার পেছনে কাজ করেছে। হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট এলাকার আলাউদ্দিন আকুনজি নিউইয়র্ক শহরের কুইন্সের ওজোন পার্ক এলাকার আল ফোরকান জামে মসজিদের ইমাম ছিলেন। তারাউদ্দিন মিয়া ছিলেন সিলেটের গোলাপগঞ্জের বাসিন্দা। মসজিদ থেকে জোহরের নামাজ শেষে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে একজন হাফপ্যান্ট পরা অশ্বেতাঙ্গ দুর্বৃত্ত দুজনকে খুব কাছ থেকে আচমকা গুলি করে পালিয়ে যায়। সিসি টিভির ফুটেজে তার ছবি উঠলেও পুলিশ আততায়ীকে শনাক্ত করতে পারেনি এখন পর্যন্ত। প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ থেকে তৈরি চেহারার স্কেচ প্রকাশ করেছে। সন্দেহভাজন একজনকে পুলিশ আটক করেছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট বাংলাদেশি ইমাম হত্যার জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করে আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে দেখা করে। কুইন্সের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে গিয়ে সমবেদনা জানান এবং বাংলাদেশিসহ স্থানীয়দের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস দিলেও এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে এবং প্রশমিত হতে সময় লাগবে। প্রকাশ্য দিবালোকে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড নিঃসন্দেহে কুইন্সের মুসলিম সম্প্রদায় ও বিশেষ করে বাঙালিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। তাদের মধ্যে নিরাপত্তার নতুন শঙ্কা তৈরি হয়েছে।ইসলাম ধর্মে উদ্বুদ্ধ করতে ইমাম সাহেবের পারদর্শিতা ছিল এবং তাঁর সাহচর্যে কয়েকজন ভিন্নধর্মী ইসলাম গ্রহণ করেছেন বলে জনশ্রুতি আছে। ব্যক্তিগতভাবে অমায়িক আচরণের কারণে ব্যক্তিগত শত্রুতার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। হত্যাকাণ্ডের পেছনে ধর্মীয় বিদ্বেষ থেকে জন্ম নেওয়া ঘৃণাকে দায়ী করেছেন এলাকাবাসী। যদিও যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ এখনো হাতে না আসায় মার্কিনি পুলিশ বাংলাদেশি ইমাম হত্যাকে হেট-ক্রাইম লেবেল লাগাতে সম্মত না হলেও পারিপার্শ্বিক অবস্থাদৃষ্টে এটাকে হেট-ক্রাইম বা ঘৃণা সংবলিত অপরাধ বলেই ধারণা করা হচ্ছে।ইসলামের নামে ভিন্নধর্মীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়িয়ে উগ্রবাদী মতাদর্শের বিস্তার করার আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা ও ইসলামিক স্টেটের মতাদর্শিক কৌশল ভিন্ন ধর্মের উগ্রবাদীদের উসকে দিচ্ছে বলে অনেকেই মনে করেন। ২০০১ সালের ৯ সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ার হামলায় তিন হাজার মানুষের মৃত্যু ও ছয় হাজার আহত মানুষের করুণ আর্তি মুসলিম বিদ্বেষকে হঠাত্ তুঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল। ফলশ্রুতিতে মুসলিম সম্প্রদায় নতুন নতুন হামলা ও হয়রানির শিকার হতে শুরু করে। এনবিসি নিউজ-এর ২০ ডিসেম্বর তারিখে প্রকাশিত রিপোর্টে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ব্রায়ান লেভিনকে উদ্ধৃত করে বলা হয় ২০১৫ সালে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা সংবলিত অপরাধের মাত্রা আগের বছরের থেকে তিনগুণ বেড়েছে। গত ১৩ নভেম্বর তারিখ প্যারিসে জঙ্গি হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের ওপর ৩৮টি হামলা হয়েছিল এবং ২ ডিসেম্বর ক্যালিফোর্নিয়ার সান বার্নারডিনো শহরে হামলায় ১৪ জন নিহত ও ২২ জন আহত হলে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ১৮টি হামলা নথিভুক্ত হয়। লেভিন আরো বলেন, আইএস এর গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো পশ্চিমা বিশ্বকে মুসলিম বিশ্বাসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ও বসবাসের জন্য বৈরী চিত্রিত করা যারা খিলাফতকে প্রত্যাখ্যান করে। ভনিতা গুপ্ত মার্কিন জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের নাগরিক অধিকার বিভাগের প্রধান হোয়াইট হাউসে দেওয়া তার ভাষণে স্বীকার করেন প্যারিস ও সানবার্নারডিনো হামলার পর মুসলিম আমেরিকানদের বিরুদ্ধে হামলা ৯/১১ ঘটনা পরবর্তী কালের মত দেখা যাচ্ছে। তিনি ধর্মীয় সহিষ্ণুতার বিপক্ষে মুসলিম বিদ্বেষী রাজনৈতিক বক্তব্যকে এর জন্য দায়ী করেন।মার্কিন সংবাদ কর্মী কেইটলিন ম্যাকনিলের প্রবন্ধ থেকে সানবার্নারডিনো হামলার পর ৪ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২০টি মুসলিম বিদ্বেষী অপরাধের বর্ণনা পাওয়া যায়। মসজিদের কাচ ভেঙে ফেলা, মাথা কেটে নেওয়ার হুমকি, স্প্রে রঙ দিয়ে বিদ্বেষপূর্ণ কথা লেখা, দোকানে ভাঙচুর, হামলা, আগুন দেয়া, হিজাবধারী মহিলাদের হয়রানি, লাথি মারা, আচমকা চড়-ঘুসি মারা, গাড়িতে পাথর ছুড়ে মারা, পার্কে নামাজরত মুসল্লিদের ওপর গরম কফি ছুড়ে মারা, উড়োচিঠি বা ই-মেইল, গালাগালি দেওয়া, মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট, মসজিদ ফেরত মহিলাদের গাড়িতে গুলি করা ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের অপরাধ এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এমনকি মার্কিন মুসলিম কংগ্রেসম্যান এন্ড্রে কারসন (ডি-ইন) হত্যার হুমকিও পেয়েছিলেন।ইউরোপের অবস্থাও খুব ইতিবাচক নয়। মুসলিম বিদ্বেষী হেট-ক্রাইম পর্যবেক্ষণ গ্রুপ “টেল মামা” -র বার্ষিক জরিপ অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে ২০১৫ সালে হেট-ক্রাইম এর মাত্রা বেড়েছে শতকরা ৩২৬ ভাগ। ব্রেক্সিট ভোটের পর মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়নের মাত্রা ঊর্ধ্বমুখী। সিরিয়ায় আইএসের পৈশাচিকতা এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পশ্চিমা জনগোষ্ঠীর ওপর জঙ্গি হামলা নিঃসন্দেহে মুসলিম বিদ্বেষের প্রধান কারণ হিসেবেই কাজ করছে। মুসলিম নারীরা বিদ্বেষের শিকার হচ্ছেন মাত্রাতিরিক্তভাবে। বর্ণবাদী বিদ্বেষের শিকার হলেও বাংলাদেশিরা ধর্মীয় বিদ্বেষের মুখোমুখি খুব একটা হয়নি। ধর্ম সম্পর্কে উদার ও নমনীয় মনোভাব বিদেশে বাঙালি মুসলিমদের গ্রহণযোগ্যতা ধরে রেখেছিল। ১লা জুলাই তারিখে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর জঙ্গি হামলায় হত্যার ক্ষেত্রে অমুসলিমদের বেছে নেওয়ার বার্তা সত্য না হলেও সুপরিকল্পিতভাবে ছড়িয়ে দেওয়ায় বাংলাদেশিদের ওপর বিদ্বেষের ঝুঁকি বেড়েছে বলে মনে হয়। যদিও গুলশান হামলায় দেশি-বিদেশি ও মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে হত্যা করা হলেও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক অভিযুক্ত হাসনাত করিমের পরিবারের দেওয়া হত্যার ক্ষেত্রে মুসলিম বিবেচনার ভাষ্যমত বিশ্বে অনেক প্রচার লাভ করে। বাংলাদেশিদের জন্য এই অসত্য ধারণা নতুন ঝুঁকি তৈরি করেছে বলে অনুমিত। ধর্মীয় বিদ্বেষ ও ঘৃণা থেকে উত্থিত ঝুঁকির কারণে বাংলাদেশি হত্যার মত অপরাধ আগে দেখা যায়নি বলে দুই বাংলাদেশির খুন হওয়ার ঘটনাটি খোদ আমেরিকার জন্যই শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে নব্বই দশক থেকে জঙ্গি সংগঠনের জন্ম হয়। প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক দল উদীচীর ওপর হরকাত উল জিহাদ আল ইসলামী আল বাংলাদেশ বোমা হামলা করে জঙ্গি হামলার সূচনা করে। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের সোচ্চার প্রতিবাদের পর থেকে ব্লগার রাজিব হত্যার মধ্য দিয়ে জঙ্গিবাদের একটি নতুন ধারার জন্ম হয়। ব্লগার অভিজিত রায়ের হত্যা মার্কিন মুলুকে যথেষ্ট আলোড়ন তোলে। ইতালিয়ান নাগরিক তাভেল্লা সিজার ও জাপানি নাগরিক হোসিও কুনির হত্যা বিদেশিদের জন্য অশনিসংকেত ছিল। পরবর্তীতে ভিন্ন মতাবলম্বী ও ভিন্নধর্মীদের ওপর ক্রমাগত হামলা ইসলামের নামে সহিংসতার উপস্থিতিকে তুলে ধরে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে বাংলাদেশের জন্য। মার্কিন নাগরিক ও মার্কিন সাহায্য সংস্থার কর্মী জুলহাস মান্নানের হত্যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আরো বেশি প্রচার পেলে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দেয়। বাংলাদেশে ইসলামের নমনীয় অবয়বের পরিবর্তন সূচনা করে। ক্রমান্বয়ে ভিন্নধর্মী পুরোহিত ও সেবায়েত হত্যা, খ্রিষ্টান যাজক হত্যা, মন্দিরে হামলা, মূর্তি ভাঙচুর, ভিক্ষুদের ওপর হামলা বাংলাদেশিদের সম্পর্কে বিদেশে বিরূপ ধারণা তৈরি করতে থাকে এবং গুলশান হামলায় বিদেশি হত্যা বাংলাদেশিদের ওপর বিরূপ ধারণাকে পোক্ত করে এবং পশ্চিমা বিশ্বে বাংলাদেশি মুসলিম বিদ্বেষ গতি লাভ করে। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গিবাদী ইসলামের অনুসারী প্রবাসীদের পশ্চিমা রাষ্ট্রসমূহে আশ্রয় গ্রহণ, বসবাস এবং সেখানে উগ্রবাদ বিস্তারে সক্রিয় অংশগ্রহণ বাংলাদেশিদের সম্পর্কে ধারণা পরিবর্তনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে এবং সহিংস ইসলাম ও রাজনৈতিক ইসলামের অংশীদারিত্বে বাংলাদেশের পরিচিতি বাড়িয়েছে। এখন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের সম্প্রীতি ও সহিষ্ণু সমাজের পুরনো ভাবমূর্তিকে নতুন করে তুলে ধরার। ধর্মীয় উগ্রবাদকে দমন করতে পশ্চিমা দেশগুলোকে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে হবে। নিরাপদ স্বর্গ ভেবে পশ্চিমা দেশগুলোতে আশ্রয় নেওয়া উগ্রবাদীদের মুক্ত বিচরণ বন্ধ করতে সেখানকার জনগণ ও সরকারকে দৃঢ় ভূমিকা নিতে হবে। জঙ্গিবাদী প্রকল্পের রূপকারদের মুক্ত বিচরণ বিশ্বকে অনিরাপদ করে তুলেছে এবং জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সব দেশের নিরীহ মানুষের জীবনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।এখন সময় এসেছে জঙ্গি হামলার নৃশংসতা থেকে সৃষ্ট ধর্মীয় বিদ্বেষ ও ঘৃণার সংস্কৃতি রুখতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার। রাষ্ট্র, রাজনৈতিক দল ও মিডিয়াকে আরো দায়িত্বশীল অবদান রাখতে হবে। মুসলিম ধর্মাবলম্বিদের আরো সচেতন ভাবে যত্নবান হতে হবে মানবিক ও শান্তির তাগিদের প্রতি। আন্ত:ধর্মীয় সম্প্রীতি ও পারস্পরিক আস্থার পরিবেশ বাড়বে যদি ইসলামি ইবাদত পালনের দৃশ্য ভিন্নধর্মীদের দেখার জন্য খুলে দেওয়া হয়। সহিংসতার মতাদর্শ ইসলামের অঙ্গীভূত নয় এই বাস্তব সত্যকে প্রকাশ ও প্রচার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। জঙ্গিবাদী মতাদর্শের অনুসারী তথাকথিত ওলামাদের বাণী, বিবৃতি ও আচরণ সারা বিশ্বের শান্তিকামী মুসলিমদের জীবন সংকটে ফেলেছে এবং বিশ্বে এক ধরনের ইসলাম ভীতি তৈরি হয়েছে। বেশভুষায় ইসলামি আকিদার দৃশ্যমান চিহ্ন ধর্ম-বিদ্বেষীদের হামলা করতে প্ররোচিত করে বলে মনে হয়। মাথার পাগড়ি দেখে মুসলিম ভেবে শিখরাও হামলার শিকার হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। ইসলাম ধর্মের শান্তির চরিত্রকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। ইসলাম ধর্মের ভেতরে সহিংসতার শেকড় গেঁথে আছে জঙ্গিবাদী হামলার মাধ্যমে দেওয়া এই বার্তাকে পরিবর্তন করার জন্য কাজ করতে হবে। শান্তির বাহক হিসেবে ইসলামকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে আন্ত:ধর্মীয় যোগাযোগকে ব্যাপক করতে হবে। বাংলাদেশি ইমাম হত্যার ঘটনাকে হাল্কাভাবে নেবার কোনো অবকাশ নেই। পেছনে লুকিয়ে থাকা সার্বজনীন ঝুঁকিকে চিহ্নিত করে সঠিক সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষেধক ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে অনেক বড় ক্ষতের সৃষ্টি হবে। জাতিগত, ধর্মীয় ও বর্ণভিত্তিক বিদ্বেষের উপস্থিতি কমবেশি সর্বকালে অনুভব করা গেলেও বর্তমানে জঙ্গি হামলার শিকার হওয়া মানুষের মধ্যে অসত্য প্রচারণার কারণে ঘৃণার সুপ্ত বীজ অঙ্কুরিত হয়ে বেড়ে চলেছে। সস্তা জনপ্রিয়তা পাবার জন্য আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্পের মত উঠতি নেতারা ঘোলা জলে মাছ শিকারের আশায় মুসলিমদের ওপর নিষেধাজ্ঞা ক্যাম্পেইন চালিয়ে বিদ্বেষকে ইচ্ছাকৃতভাবে চাঙ্গা করছে। অপরদিকে জঙ্গিবাদীরা ভিন্ন মতাদর্শীদের অবিশ্বাসী ও কাফের আখ্যায়িত করে ঘৃণা ছড়িয়ে হত্যাকে জায়েজ করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। উভয় সংস্কৃতি ঘৃণাকে পুঁজি করে বেড়ে উঠছে এবং সহিংসতার আগুনে ঘি ঢালছে। বিদ্বেষ ও ঘৃণার সংস্কৃতির বিষবৃক্ষকে বাড়তে দিলে পৃথিবীতে হিংসাকে জায়গা করে দিয়ে শান্তি বিদায় নিবে। বাংলাদেশের আমজনতার মধ্যে যেমন ইঙ্গ মার্কিনিদের প্রতি বিদ্বেষ নেই তেমনি আমেরিকান জনগণের মধ্যে মুসলিম বিদ্বেষ তেমন প্রখর নয়। জঙ্গিবাদী মতাদর্শকে নির্মূল করাটা সভ্যতা, মানবিকতা, সম্প্রীতি ও সামাজিক সহিষ্ণু সমাজের জন্য অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংকীর্ণ স্বার্থ রক্ষার জন্য অসহিষ্ণুতা ও ঘৃণার সংস্কৃতিকে ব্যবহার করা থেকে সবাইকে সরে এসে জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সম্প্রীতির জন্য লড়তে হবে সুচিন্তিত ও সুপরিকল্পিতভাবে এবং একসঙ্গে। সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৫১
false
rn
হাটি আমার খুব প্রিয় একটি প্রানী প্রানী হিসেবে হাতি অসাধারন। হাতির সারা শরীর জুড়ে মায়া-মায়া ভাব প্রবল। বন্য সমস্ত পশুর মধ্যে একমাত্র হাতি'ই আমাকে তীব্র আকর্ষণ করে। হাতিরা একা থাকতে পছন্দ করে না। তারা সব সময় দলবদ্ধ হয়ে থাকে। হাতি খুবই শান্তি প্রিয়। যার দাঁত সবচেয়ে বড় সেইই দলনেতা হয়। এটা একটা অলিখিত নিয়ম। হাতীরা দলবেধে চলে সবসময়। বাচ্চা হাতীদের খুব আদর করে দলের বড়রা। বাচ্চা হাতীরা খুব দুষ্টুমি করে। তারা এলোমেলো ছুটোছুটি করে। বাচ্চারা চোখের একটু আড়াল হলেই পাগলের মতো খুঁজতে থাকে দলের সবাই। রাজার মতো চালচলন তাদের। বড় সুখী সুখী ভাব। ১৯১৪ সালে আফ্রিকায় হাতির সংখ্যা ছিল ১০ মিলিয়ন বা এক কোটি। ১৯৭৯ সালে তা এসে দাঁড়ায় ১৩ লাখে। একটা মেয়ে হাতির সেক্স করার পর প্রায় দুই বছর সময় লাগে বাচ্চা প্রসব করতে। কচ্ছপ একশো বছর বাঁচলেও হাতি বাঁচে মাত্র ৬০/৭০ বছর। এই প্রানিটা একশো দুই বছর বাঁচলে ভালো হতো। আফ্রিকায় প্রতি ১৫ মিনিটে একটি হাতিকে হত্যা করা হয়। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় একশ’ হাতি হত্যা করা হয়। সেই হিসেব অনুযায়ী, গত বছর কমপক্ষে ৩৫ হাজার হাতিকে হত্যা করা হয়েছে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী দাঁতের জন্য নির্দ্বিধায় হাতি হত্যা করছে। হাতীর ডাক অবশ্য সম্পূর্ণ ভিন্নরকম। ওটা গাঢ়, গভীর, সুদূর, কখনো ক্রুদ্ধ, কখনো করুণ, কখনোবা হালকা। হাতি যে দাঁতগুলো দিয়ে খায়, সেগুলো আমরা দেখতে পাই না। যে দাঁত দুটি আমরা দেখি, ও-দুটি তার শোভাবর্ধনকারী দাঁত। শুঁড়ে ঢাকা ভেতরের দাঁতগুলো অতি ধারালো ও তীক্ষ। তা ছাড়া হাতিরও মাহুত থাকে। সেই হস্তীচালক যেভাবে নির্দেশ দেয়, হাতি সেভাবেই চলে। কারণ, তারও পুরোপুরি স্বাধীনতা নেই যা খুশি করার।পৃথিবীতে দুই প্রজাতির হাতি আছে, এশিয়ান হাতি ও আফ্রিকান হাতি, যদিও শারিকরিকভাবে দেখতে প্রায় একইরকম তবু এদের মধ্যে জৈবিক পার্থক্য রয়েছে। খাদ্য পছন্দের তালিয়ায় এশিয়ান হাতিরা বেশি পছন্দ করে ঘাস পক্ষান্তরে আফ্রিকান হাতির পছন্দ পাতা। বাংলাদেশের স্থায়ী বন্যহাতির আবাসস্থল হচ্ছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি। এর মধ্যে চট্টগ্রামের চন্দনাইনা, বাঁশখালী, পটিয়া ও রাঙ্গুনিয়া; কক্সবাজারের কাসিয়াখালি, রামু, উখিয়া ও টেকনাফ; বান্দরবানের লামা ও আলিকদম; রাঙ্গামাটির কাউখালি, কাপ্তাই ও লংদু এবং খাগড়াছড়িসহ দেশের ১১টি বনবিভাগে এদের বিচরণ করতে দেখা যায়। ‘হাতি মরলেও লাখ টাকা' – এ শুধু কথার কথা না। স্থলের সবচেয়ে বড় এ প্রাণীর দেহের কোন কোন অংশ কী কী কাজে লাগে সে বর্ণনায় না গিয়ে শুধু এটুকু বলা যেতেই পারে যে, হাতির দাঁতের যা দাম তার তুলনায় অন্য কোনো প্রাণীর সারা দেহও তুচ্ছ।১৯৮০ সালে বাংলাদেশে বন্যহাতির সংখ্যা ছিল ৩৮০টি। ২০০০ সালে ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডের গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশে বন্যহাতির সংখ্যা ২৩৯টি। একদিন দেখলাম কাটা বনে এক লোক হাতির উপর চড়ে ভিক্ষা করছেন। হাটিটা ছিল অনেক বড়। হাটিটা দোকানের সামনে গিয়ে শূর তুলে সালাম করছে। ভিক্ষা না দেওয়া পর্যন্ত দোকানের সামনে থেকে নড়ছে না। আমার অনেক টাকা থাকলে আমি অবশ্যই একটা হাতি কিনতাম। চীনে অভিনব দোকানগুলোতে হাতির দাঁত দিয়ে তৈরি দামী মূর্তি ও গহনার রমরমা ব্যবসা রয়েছে। হাতির দাঁতের বহু ক্রেতারাই দৈত্যের মতো শুধু চোখের আড়ালেই থাকে না মনের আড়ালেও চলে যায়। ‘হাতির নাক শুধু আকারেই বড় নয়, এর ক্ষমতাও বেশি৷'' ভাল ঘ্রাণ নেয়ার ক্ষমতা কোনো প্রাণীকে সঙ্গী ও খাবার খুঁজতে সহায়তা করে। হাতির জন্য অদ্ভুত এক টান অনুভব করি। হাতির চোখের দিকে তাকিয়ে অনুভব করি গভীর মমত্ব। হাতির কাছ থেকেই আমি ভালোবাসতে শিখেছি। ন্যাশনাল জিওগ্রাফী আর ডিসকোভারীতে হাতির অনুষ্ঠান দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশাল একটা হাতির সমান। মানুষের লোভের শিকার পৃথিবীর যা কিছু সুন্দর, যা কিছু মহান ও বিশাল। মানুষের লোভের শিকার কি মানুষ নিজেও নয়? হস্তীদন্তের বাণিজ্য এখন আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু যাদের টাকা আছে তাদের আবার নিষেধ কিসের। পাগলা হাতি বাদ দিলে এমনিতে সত্যিই অনেক নিরীহ এ প্রাণীটা। কিন্তু সাথে দুধের বাচ্চা থাকলে কিংবা কোনভাবে কাউকে যদি শত্রু মনে করে তাহলে জঙ্গলের ত্রাশে পরিণত হয় এই বিশালদেহী প্রাণী। বয়স ৩৬। ইংলিশ মডেল, সঙ্গীতশিল্পী ও ব্যবসায়ী ক্যাটি বলেছেন, ‘আমি হাতির মত সুন্দর। গায়ের চামড়া হাতির মত শক্ত। আমি সহজে কোনও কিছু ভুলতে পারি না।’ আমরা প্রতিদিন কফি খাই। আইভরি কফি, পৃথিবীর সব থেকে দামী কফি। ঠোঁটে একবার ছোঁয়ালে তার স্বাদ ভুলতে পারবেন না আমৃত্যু। আইভরির কফির স্বাদের পিছনে রয়েছে হাতির মলের অবদান। হাতির বিষ্ঠা থেকেই তৈরি হয় দুর্মূল্য ও বিশেষ স্বাদের এই কফি। কটা হাতি ৩ মাইল দূর থেকে পানির গন্ধ পায়! হাতি নিয়ে অসাধারন কিছু মুভি আছে। যদিও এই মুহূর্তে শুধু মনে পরছে- Dumbo মুভিটি।টিভিতে দেখি, হাতির আশ্চর্য আনন্দমুখর ও শান্তিপূর্ণ জীবন। তারা খেলছে, তারা রঙ্গতামাশা করছে পরস্পরের সঙ্গে, কুস্তি করছে একে অন্যের সাথে। শিশুরা কাদা ছুড়ছে একে অন্যের দিকে, লুকোচুরি খেলছে, মারামারি করছে, সময়ে অসময়ে বিরক্ত করছে তাদের মায়েদের। মায়েরা তাদের শাসন করছে দুষ্টুমির মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে। এক বাচ্চা হাতিকে দেখলাম মায়ের ‘বকুনি’ খেয়ে লুকোবার চেষ্টা করছে গাছের আড়ালে। কিন্তু হাতীর শরীর কি তুচ্ছ গাছের আড়াল মানে? দারুণ হাসি পাচ্ছিল আমার শিশু হাতীটার কাণ্ড দেখে। আরো দেখলাম তরুণ হাতীদের প্রেমের লীলা। মেয়ে হাতীগুলো একটু শান্তশিষ্ট, সংযত তাদের আচার আচরণে, আর ছেলেগুলো ঠিক তার বিপরীত। দুরন্ত, অস্থির, চঞ্চল। তারা সারাক্ষণ মেয়েগুলোকে ধেয়ে চলেছে। উদ্দেশ্য একটাই, প্রেম। হাতী জাতির দাম্পত্য জীবন একটু ভিন্ন প্রকৃতির। বাচ্চা প্রসবের পর মায়েরা বাচ্চার দেখভাল নিয়েই ব্যস্ত সারাক্ষণ, আর পুরুষরা ছুটে বেড়াচ্ছে অন্য সঙ্গীর সন্ধানে। মানুষের চেয়ে খুব কি আলাদা তারা? হাতীসমাজের আরেকটা জিনিস আমার কাছে অসাধারণ মনে হল----তারা যেভাবে মৃত হাতীর শেষকৃত্য পালন করে। প্রথমে নিশ্চিত হয়ে নেয় হাতীটা সত্যি সত্যি মারা গেছে কিনা। নাকি এমনি এমনি শুয়ে আছে মাটির ওপর। মৃত্যু ঘটেছে সেটা প্রমান হয়ে গেলে শুরু হয় শোকপর্ব। মারা গেছে বলে তার দেহটাকে তারা ফেলে রাখবে না জীবজন্তুর ভোগের সামগ্রী হবার জন্যে। তারা ওর চারদিকে সার বেঁধে ঘুরবে, একপ্রকার শোকনৃত্যও বলা যায়, যেন সবাই মিলে কান্নাকাটি করছে, এবং সংযত শৃঙ্খলার সাথে। এরকম করে তারা তিনদিন কি চারদিন শোকব্রত পালন করবে। এর মাঝে একমুহূর্তের জন্যেও তারা মৃত হাতীটার কাছে অন্য কোন প্রাণীকে আসতে দেবে না, ক্ষিপ্ত হয়ে উঠবে কেউ চেষ্টা করলে। এই ঘূর্ণনক্রিয়া তারা পালন করবে পালা করে---একদলের ডিউটি শেষ হলে আরেকদল আসবে। মানে সে এক অসাধারণ ও অবিশ্বাস্য ব্যাপার। প্রকৃতির কি আশ্চর্য রূপ---এই সে বিশাল এক জীব, নিজের দেহের ভারে যে ব্যাহত আজীবন, যার কোনও মূল্যই দেওয়া হয়না মানবসমাজে, কেবল তার মূল্যবান দন্তযুগল ছাড়া, সেই উদ্ভট জীবটিরও কি অদ্ভুত নরম মন। পরস্পরের জন্যে কত না তাদের মায়ামমতা। হাতির দাঁতের শিল্পকর্মে হাতির দাঁতের ব্যবহার খ্রিস্টজন্মের বহু পূর্ব থেকেই শুরু হয়েছে। প্রাচীন ভারতের সিন্ধু সভ্যতায় (খ্রি.পূ ২৩০০-১৭৫০) হাতির দাঁতের শিল্পকর্ম জনপ্রিয় ছিল। হাতির দাঁত দুই ধরনের শক্ত ও নরম। শক্ত দাঁত উজ্জ্বল ও স্বচ্ছ হয়, কিন্তু তা কাটা কঠিন। অন্যদিকে নরম দাঁত দিয়ে কাজ করা সহজ এবং তাতে ফাটল ধরে না। কাজ শুরুর আগে কল্পিত শিল্পের পরিমাপ অনুযায়ী দাঁত কেটে নেওয়া হয় এবং তার ওপর পেন্সিল দিয়ে নকশাটি আঁকা হয়কবাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরএ হাতির দাঁতের যেসব শিল্পকর্ম রয়েছে সেগুলির কোনো কোনোটিতে কালো রঙের সূক্ষ্ম কাজ রয়েছে। এখানে সংগৃহীত শিল্পকর্মের মধ্যে আকর্ষণীয় ও মূল্যবান নিদর্শনটি হচ্ছে হাতির দাঁতের তৈরি পাটি। অতএব আসুন আমরা হাতিকে ভালোবাসি।
false
ij
গল্প_ তান্ত্রিক বিকেলে অফিসে বসে কাজ করছি। জলতরঙ্গ বেজে উঠল। জহিরুলের ম্যাসেজ। লিখেছে: ‘জরুরি কথা আছে, সন্ধ্যার পর রহমানিয়ায় আসিস।’ আমার ভুরু কুঁচকে ওঠে। জহিরুলের সঙ্গে অনেকদিন আমার দেখা হয় না। জরুরি কথা আছে লিখেছে। ও কোনও সমস্যায় পড়ল কি? সামান্য অস্বস্তি বোধ করতে থাকি। সন্ধ্যার পর পৌঁছলাম রহমানিয়ায় । রেস্তোঁরাটি আমাদের অনেক দিনের পুরনো আড্ডার জায়গা। কলেজে পড়ার সময় থেকেই রহমানিয়ায় আড্ডা শুরু। এই রেস্তোঁরাটি আছে বলেই আজও কলেজ জীবনের বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক টিকে আছে। গত কুড়ি বছরে রেঁস্তোরার পরিবেশ খুব একটা বদলায়নি। ঢোকার মুখে ভিড়। মসলার গন্ধ মাখানো ধোঁয়া, শিক কাবাবের ম ম তুর্কি গন্ধ। ভিড় ঠেলে পিছনের দিকে বসলাম। যাঃ, গরম। মুহূর্তেই সেদ্ধ হয়ে গেলাম। জহিরুল এখনও এসে পৌঁছায়নি। বসতেই ইসমাইল ছুটে এল। পুরনো পরিচিত বেয়ারা। ওকে এক লাচ্ছি দিতে বললাম। এখান থেকে ফার্ম গেটের ওভারব্রিজটা চোখে পড়ে। বিল বোর্ডের আলো জ্বলে উঠেছে ... একটা গান বাজছে ...হিন্দী ...ইসমাইল লাচ্ছি দিয়ে গেল। জিনিসটা রহমানিয়ার স্পেশাল। ঠান্ডা মিষ্টি তরলে চুমুক দিই। হঠাৎই চোখে পড়ল উলটো দিকের টেবিলে শ্যাওলা রঙের সালোয়ার-কামিজ পরা ভারি মিষ্টি চেহারার শ্যামলা মতন একটা মেয়ে বসে আছে। বয়স সতেরো-আঠারোর বেশি হবে না বলে মনে হল। মেয়েটির বসার ভঙ্গিটা কেমন আরষ্ঠ। তার মুখোমুখি কালো টি-শার্ট পরা একটি বাইশ-তেইশ বছরের ছেলে বসে । ছেলেটি মেয়েটিকে কী যেন বোঝানোর চেষ্টা করছে। মেয়েটির শ্যামলা গম্ভীর মুখে একমুঠো রাগ জমে আছে। ছেলেটির মুখেচোখেও দিশেহারা ভাব। ছেলেটি কি জানে- মেয়েরা যখন বুঝতে চায় না ... তখন বুঝতে চায় না। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। ঠিক ওই টেবিলে কত বছর আগে আমার মুখোমুখি বসে ছিল জলি। ইয়াসমিন নাহার জলি। কত কথা হত জলির সঙ্গে। স্বপ্নের কথা। জলি আমার ওপর রাগও করত। তখন জলির শ্যামলা গম্ভীর মুখে একমুঠো রাগ জমে থাকত। তখনই শিখেছিলাম: মেয়েরা যখন বুঝতে চায় না ... তখন বুঝতে চায় না। পরে রাগ কেটে গেলে সম্পূর্ন উলটো আচরণ করবে। শুনেছি জলি এখন কানাডায়; ঘরসংসার করছে ... এও সত্য। অনেক বছর আগে জলি যখন ওই টেবিলে আমার মুখোমুখি বসে স্বপ্নের জাল বুনত ... সেও তো সত্যিই ছিল। আমি আমার বউ তুলিকে নিয়ে মোটামুটি সুখি, তবু মাঝে-মাঝে জলির কথা মনে পড়ে। তখন মনটা উদাস হয়ে ওঠে। আহা, এ জীবনের আকাশে-বাতাসে কত বিরহ। হঠাৎ জহিরুলকে ভিড় ঠেলে আসতে দেখলাম। অনেকদিন পর দেখছি ওকে। শ্যামলা রঙের মাঝারি উচ্চতার স্বাস্থ্যবান একটা ছেলে, ছোট ছোট করে ছাঁটা চুল । কালো প্যান্ট আর মেরুন রঙের শার্ট পরেছে। আগের চেয়ে খানিকটা শুকিয়ে গেছে মনে হল, মুখচোখে ক্লান্তির ছাপ স্পস্ট। জহিরুল আমার মুখোমুখি বসল । শ্যামলা মুখে ঘাম জমে আছে। পকেট থেকে রুমাল বার করল। ও একটা কোরিয়ান বাইং হাউসে চাকরি করে। গুলশানে অফিস। বছর দুই হল বিয়ে করেছে -ওর বউ নীপা- রাজশাহীর মেয়ে, দেখতে শুনতে ভালেই, বাড়ির কাছেই একটা কিন্ডারগার্ডেনে পরায়-জহিরুলরা থাকে নাখালপাড়ায়। ইসমাইল এল। লাচ্ছি। বললাম।ইসমাইল অর্ডার নিয়ে চলে যায়। আমি বললাম, বল, কী সমস্যা। সাদা একটা রুমাল বের করে মুখ ও কাঁধের ঘাম মুছে নিল। মুখে মিহিন না-ছাঁটা দাড়ি, নিয়মিত নামাজ পরে। বিয়ের পর সিগারেট ছেড়েছে, আমাদের মধ্যে জহিরুল-যাকে বলে আইডিয়াল বয় । একটু পর ঝুঁকে ফিসফিস করে জহিরুল বলল, নীপা আমাকে সন্দেহ করে।হোওয়াট! সন্দেহ করে মানে! আমি অবাক। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে জহিরুলই সবচে ক্লিন। রিলিজিয়াস। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই নিয়মিত কাকরাইল মসজিদে যেত। ওর তুলনায় আমাদের চরিত্রের ইতিহাস ততটা সুবিধের নয়। এমন ছেলেকে নীপা সন্দেহ করে। আশ্চর্য! জহিরুল বলল, নীপার অভিযোগ- আমি নাকি চরিত্রহীন, লম্পট, আমার নাকি অন্য মেয়ের সঙ্গে সর্ম্পক আছে। আমি বজ্রাহত! ওহ্! না! নীপার কি মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি! আমি সিগারেট ধরালাম। হাতটা অল্প অল্প কাঁপছে। বন্ধুরা সবাই জহিরকে ভালোবাসে। ওর কাছে এলে কেমন শান্তি পাওয়া যায়। শান্তশিষ্ট সুবোধ একটি ছেলে। সবার বিপদ-আপদে এগিয়ে আসে। এরকম একটি ছেলে কীসে মধ্যে পড়ল।ইসমাইল লাচ্ছি দিয়ে গেল। জহিরুল অন্যমনস্ক হয়ে চুমুক দেয়। তারপর বলে, গত সপ্তাহে কাজের মেয়েটাকেও তাড়াল। এখন মাঝবয়েসি একটা ছুটা ঝি রেখেছে, সকাল ন’টার পর দু-ঘন্টার জন্য আসে, দশটার পর। সকালেনাশতার দেরি হয়ে যায়। সংসারের বাকি কাজ নীপাই করে। কাজের মেয়ে নাকি রাখবে না।হুমম। ভাবনার কথা। নীপার হল কি? ভাবছি। নীপার অভিযোগ যে সত্যি নয় তা জানি। তাহলে? নীপা এসব উদ্ভট কথা বলছে কেন? কেন ও বিশ্বাস করছে জহির চরিত্রহীন? কেন? শুনেছি নীপা প্রেগনেন্ট ... এমন একটা সময়ে ...জহিরুল চুপ করে আছে। লাচ্ছিতে মাঝেমধ্যে চুমুক দিচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে সুস্বাদু তরলটা উপভোগ করছে না। ওর মুখে এই ২/১ বছর আগেও এক ধরনের খুশির আভা দেখেছি। এখন সেটা নিভে গেছে। চাকরিটা ওর জীবনীশক্তি শুষে নিচ্ছে। ঘরের বউয়ের আদর-সোহাগ পেলে না-হয় পুষিয়ে যেত। সেটা হচ্ছে না। কিন্তু নীপা এমন অ্যাবনরমাল আচরণ করছে কেন? ওর সঙ্গে কি আমার কথা বলা উচিত? আড়চোখে দেখলাম শ্যাওলা রঙের সালোয়ার-কামিজ পরা মেয়েটি আর কালো রঙের টি-শার্ট পরা ছেলেটি উঠে দাঁড়িয়েছে। চলে যাচ্ছে। দুজনের রফা হয়নি মনে হল। জলির সঙ্গে আমারও রফা হত না প্রায়ই। তারপরও আমরা সুখিই ছিলাম। হঠাৎই আমার মনে হল ওই মেয়েটি দেখতে ঠিক জলির মত। (মহাকাল এ দৃশ্যটি আজ আমাকে দেখাল-যা কাউকে বলা যাবে না) জলিও শ্যাওলা রঙের সালোয়ার-কামিজ পরত, সাদা শিফনের ওড়না । জলির কথা মনে পড়লে মনটা উদাস হয়ে ওঠে। আহা, এ জীবনের আকাশে-বাতাসে কত বিরহ ...জহিরুলের ফোন আসে। কার সঙ্গে যেন ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে কথা বলল কিছুক্ষণ। তারপর ফোন অফ করে চাপা ক্ষোভের সুরে বলল, শালার চাকরি। এখন আবার অফিস যেতে হবে। শিপম্যান্ট চলছে। অফিস থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে কখনও রাত এগারোটা বেজে যায়। নীপা বলে আমি নাকি অন্য প্রেমিকার বাড়ি সময় কাটাই ... হঠাৎ আমার জলির একটা কথা মনে হল। অনেক দিন আগের কথা, যখন জলিকে নিয়ে এই রেস্তোঁরায় বসতাম। জলি একদিন আমায় বলল- আমাকে ‘বেগ’ করতে হবে। কথাটা শুনে আমি অবাক। কেন তোমাকে বেগ করতে হবে? বেগ মানে অনুনয় বিনয় করা। তো সেটা আমায় করতে হবে কেন? জলি চুপ করে থাকে। বুঝলাম ও অপেক্ষা করছে। আমি হেসে বললাম, আচ্ছা, ঠিক আছে, আমি বেগ করলাম। জলির শক্ত মুখটা নরম হয়ে এল, খুশিতে ভরে উঠল সে মুখ। সে সময় আমি ভারতীয় ‘তন্ত্রের’ ওপর একটা বই পড়ছিলাম। এক কথায় তন্ত্র মানে নারীর রহস্যময় শক্তিকে স্বীকার করে নেওয়া। তন্ত্রের সাধনা যারা করে তারাই তান্ত্রিক। সংসারে সুখ-শান্তি বজায় রাখার জন্য সব পুরুষকেই কখনও না কখনও তান্ত্রিক হতেই হয়, নারীর রহস্যময় শক্তিকে স্বীকার করে নিতে হয়। সে সব মনে করে আমি বললাম, আচ্ছা জহির, তুই এক কাজ কর।বল।তুই নীপার কাছে ক্ষমা চেয়ে নে।আমি ক্ষমা চাইব? প্রায় চিৎকার করে ওঠে জহির। শ্যামলা মুখটা গনগনে হয়ে উঠেছে। বলে, কেন? আমি তো কোনও অন্যায় করিনি।আমি হাত তুলে বললাম, আহা, সে তো বুঝলাম। তুই সংসারে সুখশান্তি চাস কি না বল?চাই।তাহলে তুই আজই নীপার কাছে ক্ষমা চেয়ে নে। তুই অন্যায় করিসনি বলে ক্ষমা চাইবি না-এটা হল যুক্তির কথা। মেয়েদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হলে কখনও-কখনও যুক্তি বিসর্জন দিতে হয়। তুই ক্ষমা চাইলে দেখবি নীপা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। জহির চুপ করে থাকে। একটু পর বলল, এতে কাজ হবে? তুই তো অনেক বইটই পড়িস। আমি মাথা নেড়ে বললাম, হবে।জহিরের আবার ফোন এল। ও তাড়াহুড়ো করে উঠে চলে গেল। কয়েক দিন পর জহিরুলের মেসেজ পেলাম। লিখেছে ...ক্ষমা চাওয়ার পর নীপার আচরণ পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে ...
false
mk
মুজিবের সেক্যুলার হওয়ার গল্প মহাকাল নেমে এসোছিল বাংলায় উনিশশ’ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট। মহাপ্রাণ সেদিনের পর থেকে আর কথা বলেননি। আরো একটি মহাপ্রাণ কথা বলেনি সেদিনের পর থেকে। বউ কথা কও পাখি ডেকে ডেকে এখনো আকুল হয়Ñ তবুও কথা বলেনি। সেই কবে কচিকালে তার বিয়ে হয়েছিল এক কিশোরের সঙ্গে। বালিকা বধূ বড় অবাক হয়েছিল। তার বিয়ের খবর সেও জানতে পারেনি। কিশোর বালক মজা করে বলতো, বউ কথা কও। বউ কথা বলতো না। স্বাধীনতা যুদ্ধের ন’মাসও তার কথা কেউ শোনেনি। যুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে দেশে সাংবাদিকরা তাকে ঘিরে ধরেছিল। সেদিনও তিনি অঙ্গুলি সংকেতে বঙ্গবন্ধুকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। কথা বলেননি। তবে কথা তিনি বলতেন। শেখ মুজিবের বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার পেছনে সেই মহীয়সী মহিলার মূল্যবান কথা ছিল। যেমন ছোট একটি উদাহরণ দেয়া যায়। আগরতলা মামলা চলাকালীন রব উঠেছিল বঙ্গবন্ধু নাকি প্যারোলে মুক্তি নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসে আপোস করবেন। গুজব হোক আর সত্য হোক তিনি লোক পাঠিয়ে খবর দিয়েছিলেন এই মর্মে যে, তিনি বঁটি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন, যদি বঙ্গবন্ধু মুচলেকা দিয়ে বেরিয়ে আসেন।আগস্ট মাসের পনের তারিখ আমরা যখন স্মরণ করি, তখন কেন কেবলমাত্র বঙ্গবন্ধুর কথা স্মরণ করি? বঙ্গবন্ধুর যোগ্য সহধর্মিণীকে কেন স্মরণ করি না? আমার যতোদূর মনে হয়, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ক্যারিশমা নির্মিত হয়েছিল তার পারিবারিক পরিবেশের শর্তে। রাজনৈতিক পরিবেশ কখনই বঙ্গবন্ধুর অনুকূল ছিল না। তিনি বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম করে নিজের রাজনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন।বঙ্গবন্ধু মনেপ্রাণে ধর্মনিরপেক্ষ সমাজতন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু একদিনে তিনি ধর্মনিরপেক্ষ কিংবা সমাজতন্ত্রী হয়ে ওঠেননি। তার জীবনের শুরুতে ছিলেন মুসলিম লীগের একনিষ্ঠ কর্মী। কোলকাতাতেই তিনি উদারনৈতিক ও সমাজতন্ত্রী কিংবা সাম্যবাদী রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। কিন্তু প্রধান রাজনৈতিক বিশ্বাস ছিল মুসলিম লীগের রাজনৈতিক আদর্শ। বর্ণবাদী হিন্দুদের দ্বারা গরিব হিন্দু-মুসলমানের নিগৃহীত হওয়ার দৃশ্যগুলো তার সারাজীবনই স্মরণে ছিল। তিনি তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্বের কথা। কিন্তু খুব বেশিদিন তিনি ভ্রান্ত বিশ্বাসের মধ্যে থাকেননি। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন প্রকৃত সমস্যা হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্ব নয়। প্রকৃত সমস্যা শ্রেণী বিভাজন। ধনী মাত্রেই অত্যাচারী। হিন্দু-মুসলিম বিভাজন বড় কথা নয়। গরিবরাই অত্যাচারিত। তিনি সেক্যুলার রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়লেন। তার রাজনৈতিক গুরু শহীদ সোহরাওয়ার্দী সেক্যুলার ছিলেন। তিনি মনেপ্রাণে আধুনিকও ছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মুসলিম ঘরানার রাজনীতিকে কৌশল হিসেবে নিয়েছিলেন। শেখ মুজিবকে তিনি ইউরোপীয় সেক্যুলারিজমে দীক্ষাও দিয়েছিলেন। সোহরাওয়ার্দীর গণতান্ত্রিক ধারণা ছিল সেক্যুলার। কিন্তু মুসলিম লীগ ইসলামী গণতন্ত্রের প্রচারণায় মত্ত ছিল। ইসলামী গণতন্ত্র প্রকৃত অর্থে ধর্মীয় স্বৈরতন্ত্র। যে কারণে মওলানা ভাসানীও ইসলামী গণতন্ত্র থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন এবং মুসলিম লীগ ভেঙে আওয়ামী মুসলিম লীগ করে অনেকটা সেক্যুলার রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে চেষ্টা করেছিলেন। পরবর্তী পর্যায়ে আওয়ামী লীগ করে মুসলিম শব্দটিও বিসর্জন দিয়ে তারই ক্রমধারায় চূড়ান্ত পর্যায়ে ন্যাপ করেছিলেন। ন্যাপ ছিল একেবারেই সেক্যুলার। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু ছিলেন তারা। সোহরাওয়ার্দী ভাসানী ছাড়াও আরো একজন বঙ্গবন্ধুকে তালিম দিয়েছিলেন। তিনি আবুল হাশিম। আবুল হাশিম মুসলিম লীগের ঘরানার হওয়ার সত্ত্বেও সেক্যুলার ছিলেন। তাকে কেউ কখনই গোঁড়া মুসলমান বলেনি। যদিও তিনি পীর পরিবারের। তার ছেলে বদরউদ্দীন ওমর সেক্যুলার রাজনীতিই করছেন। বঙ্গবন্ধুর সৌভাগ্য হয়েছিল এতো বড় বড় রাজনীতিবিদদের কাছে রাজনীতি শেখার। কিন্তু প্রকৃত সেক্যুলার হয়েছিলেন পারিবারিক কারণে। তার মা এবং সহধর্মিণী জীবনের প্রথম থেকেই সেক্যুলার ছিলেন। অনেকেই বলেন, বঙ্গবন্ধুকে ব্যবহারিক জীবনে সেক্যুলার করার পেছনে তার সহধর্মিণীর ভূমিকা ছিল।প্রকৃত অর্থে বঙ্গবন্ধুর পরিবারই ছিল ঐতিহ্যিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ। শেখ পরিবার আন্তরিকতার সঙ্গেই ধর্মচর্চা করতো। কিন্তু ব্যবহারিক জীবনে ধর্মান্ধতা ছিল না। বঙ্গবন্ধু তার কষ্টকর রাজনৈতিক জীবনে বহু হিন্দু-মুসলমান রাজনীতিবিদদের সাহচর্যে এসেছিলেন। তাদের অনেকের মধ্যেই সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। অনেকেই প্রগতিশীল ছিলেন। কিন্তু জেল জীবনে তিনি যেসব হিন্দু রাজনীতিকের সাহচর্যে কষ্টকর জেল জীবন কাটিয়েছেন তারা সবাই সেক্যুলার ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত অর্থে সংশয়মুক্ত সেক্যুলার রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠার পেছনে ঐসব হিন্দু কিন্তু প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা ছিল।জেল জীবনের পর তিনি যখন আওয়ামী লীগের সর্বময় কর্তৃত্ব গ্রহণ করেন তখন আওয়ামী লীগ পুরোপুরি ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। একই সঙ্গে তিনি সমাজতন্ত্রীও হয়ে ওঠেন। বঙ্গবন্ধুর সমাজতন্ত্রী হয়ে ওঠার জন্য যতো না কমিউনিস্ট পার্টির বইপত্রের অবদান ছিল তারচেয়েও বেশি ছিল দেশপ্রেম, দেশের গরিব মানুষের প্রতি ভালোবাসা। তিনি গণচীন ভ্রমণে গিয়ে দেখেছিলেন কতো অল্প সময়ে দরিদ্র চীনারা তাদের দারিদ্র্যমুক্তি ঘটিয়েছে। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের দরিদ্র কৃষক-শ্রমিকদের দারিদ্র্যমুক্তি এই ব্যবস্থায় তিনি অসম্ভব মনে করেছিলেন। সমাজতন্ত্রই তার ধারণায় ছিল একমাত্র বিকল্প। কিন্তু দুই মহাগুরু সোহরাওয়ার্দী এবং ভাসানী সমাজতন্ত্রী ছিলেন না। সোহরাওয়ার্দী একবার বলেছিলেন পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ সমাজতন্ত্র বোঝে না এবং সমাজতন্ত্রের জন্য প্রস্তুত নয়। গণতন্ত্র এই মুহূর্তে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করবে না সত্য, তবুও এখন গণতন্ত্রই চলুক। ভবিষ্যতে জনগণই ঠিক করে নেবে, তাদের জন্য কোনটা ভালো। সমাজতন্ত্র নাকি গণতন্ত্র। বঙ্গবন্ধুর মনেও ঐ প্রকার ধারণাই ছিল। তিনিও ভাবতে শুরু করেছিলেন আগে গণতন্ত্র পরে সমাজতন্ত্র। বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার মূলনীতি তাতে গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র দুটিই সমান গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পেয়েছে।বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে অনেকেই তাকে হিন্দু-বিদ্বেষী হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। যেটি তার বক্তব্যের মর্মসার উপলব্ধির ব্যর্থতার কারণেই হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ছাত্রজীবনে মুসলিম লীগের রাজনীতি করেছেন। মুসলিম লীগ ছিল ভারতীয় কংগ্রেসের বিপরীতে ভারতীয় মুসলিমদের রাজনৈতিক সংগঠন। সে সময়ে দুটি রাজনৈতিক দলই পরস্পরকে প্রতিপক্ষ মনে করতো। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ব্যক্তি জীবনে হিন্দু বিদ্বেষী ছিলেন না। ছাত্র জীবনেই তার অসংখ্য হিন্দু বন্ধু ছিল। বঙ্গবন্ধুর পরিবার সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে মুসলিম-হিন্দু পার্থক্য করতো না। হিন্দুদের অনুষ্ঠানাদিতে তার পরিবারের সবাই যেতো এবং আনন্দ অনুভব করতো। তিনি নিজেও পূজা-পার্বণে হিন্দুদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন। কিন্তু মুসলিম লীগের কংগ্রেস বিরোধিতার কারণে রাজনৈতিকভাবে তিনি দূরত্ব বজায় রেখে চলতেন। কিন্তু দেশ ও সমাজের মুক্তির প্রশ্ন আসলো, তখন ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে শ্রেণীবৈষম্যকেই প্রাধান্য দিলেন। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ভালোভাবে পড়লে জানা যায় কিভাবে একজন মুসলিম লীগের একনিষ্ঠ কর্মী ধর্মাশ্রয় পরিত্যাগ করে সেক্যুলার হলেন এবং ধর্মের মোহ যে মানুষকে মুক্তি দিতে পারে না তা সম্যক উপলব্ধি করলেন। অবশ্য তার এই উপলব্ধির পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর নির্মম অত্যাচারও ভূমিকা রেখেছিল।পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর উপরে অমানুষিক অত্যাচার করেছিল। তাকে বারংবার কারারুদ্ধ করে রেখেছিল। তিনি কারারুদ্ধ অবস্থায় পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে এতো দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেছিলেন যে, তার ছেলেমেয়েদের কাছেই অপরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে একবার তার আপাকে বলেছিলেন, আমি তোমার আব্বাকে আব্বা বলে ডাকবো? বঙ্গবন্ধুর পিতৃহৃদয় অব্যক্ত যন্ত্রণায় কেঁদে উঠেছিলেন সেদিন। এরকম হাজারটা যন্ত্রণায় দগ্ধ-বিদগ্ধ হয়ে তিনি সাধারণ মানুষ থেকে বিশেষ মানুষ হয়েছিল। বাংলাদেশে একটা প্রচলিত কথা আছেÑ পুড়ে পুড়ে খাঁটি সোনা। বঙ্গবন্ধুর সেক্যুলার ও নৈর্ব্যক্তিক হয়ে ওঠার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। তিনি পুড়ে পুড়ে খাঁটি সোনা হয়েছিলেন। রক্তমাংসের সাধারণ মানুষ থেকে সোনার মানুষ হয়েছিলেন।প্রতিবছর ১৫ আগস্টে আমরা বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করি জাতির পিতা হিসেবে। সঙ্গে বেগম ফজিলাতুন্নেছাকেও স্মরণ করা উচিত একই মহিমায়। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিক হয়ে ওঠা, সেক্যুলার হয়ে সোনার মানুষে পরিণত হওয়ার পেছনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি সেই বেগম ফজিলাতুন্নেছার কথা হয়তো অনেকেই জানেন না। বঙ্গবন্ধুর একান্ত বন্ধু কেউই ছিলেন না। যাদের সঙ্গে তিনি ঔধার্যচিত্তে রাজনীতি করেছেন তারা সবাই ছিল কোনো না কোনো দিক দিয়ে তার প্রতিপক্ষ। যেমন খোন্দকার মুশতাকের কথাই ধরুন। সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিলেন তিনি। সেই খোন্দকার মুশতাকই তাকে হত্যায় অংশ নিয়েছিল। কেবলমাত্র তার সহধর্মিণী ফজিলাতুন্নেছাই তার প্রকৃত বন্ধু ছিলেন। রাজনৈতিক, পারিবারিকই শুধু নয়Ñ আদর্শেরও পক্ষের ছিলেন তিনি। তাদের দুজনের পারস্পরিক সম্পর্ক জানা থাকলে বোঝা যাবে কিভাবে একজন মাটির মানুষ খাঁটি সোনা হয়। কিভাবে তার ক্যারিশমা গড়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর ক্যারিশমাটিক লিডার হিসেবে গড়ে ওঠুক তা তার রাজনৈতিক বন্ধুরা চাননি, কিন্তু তার যোগ্য সহধর্মিণী একক নেতৃত্বের বিকাশ কামনা করেছিলেন।আজ একই সঙ্গে দুজনার নাম উঠলে জাতি বিশেষ অনুপ্রেরণা পাবে। যারা শোক দিবসকে প্রতিজ্ঞা দিবসে পরিণত করতে চান তাদের উচিত হবে দুজনকে একত্রে উপস্থাপন করা। তাদের উভয়ের কর্মজীবনের মহিমান্বিত বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা। যিনি সেই কচিকালে বউ কথা কও বলে ডাকলেও কথা বলেননি, তার কথাই সবাইকে বলতে হবে।
false
ij
গল্প_ এ বাড়ির তিনজন মানুষ তোমার মনে আছে তো, এ মাসের বাইশ তারিখে সুমাইয়ার জন্মদিন। জাহানারা বেগম স্বামীকে মনে করিয়ে দিয়ে বললেন। হু, আমার মনে আছে। শরীফ আহমেদ বললেন। মাঝবয়েসি ভদ্রলোকের কন্ঠস্বর কেমন নিস্তেজ শোনাল। এ সংসারে অনেক উদ্বেগ অনেক ক্লান্তি জমেছে। সম্ভবত তা থেকে উত্তরণের জন্যেই জাহানারা বেগম বললেন, এবারের জন্মদিন কোনও রেস্টুরেন্টে করলে কেমন হয়? শরীফ আহমেদ স্ত্রীর কোনও প্রস্তাবের কখনোই বিরোধীতা করেন না। এ সংসারে জাহানারা বেগম এর কথাই চূড়ান্ত। কাজেই বললেন, তাই না হয় করো । আজকাল রাতের খাওয়ার পর আর টিভি দেখা হয় না। স্বামী-স্ত্রী রাতের খাওয়া সেরে দোতলার বারান্দায় এসে বসেন। তাদের একটাই মেয়ে- দীপ্তি; আগে দীপ্তিও এসে বাবা-মার সঙ্গে বসত, আজকাল আর ও আসে না ... আজকাল দীপ্তি ওর ঘর থেকে খুব একটা বেরয় না, দু’বছরের সুমাইয়াকে বুকে আঁকড়ে ধরে রাখে, আর কাঁদে। আজ সন্ধ্যার দিকে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। তারপর থেকে বাতাসে ভিজে গন্ধ ছড়িয়ে আছে। নিচের বাগানটি এই মুহূর্তে আধো-অন্ধকারে ডুবে আছে। বাগানের মাটি থেকে ভিজে সোঁদা গন্ধ উঠে আসছে। ২০০২ সালে গুলশানে এই লাল রঙের সিরামিক ইটের দোতলা বাড়িটা করার পর শরীফ আহমেদ বড় শখ করে বাড়ির সামনে বাগানও করেছিলেন । সে সময়ে দীপ্তিরও বাগানের খুব শখ ছিল, আজকাল অবশ্য বাগান-টাগান করার উৎসাহ পায় না বিষন্ন মেয়েটি। জাহানারা বেগম বললেন, তোমাকে আজ তোমায় কেমন গম্ভীর দেখাচ্ছে যে? শরীফ আহমেদ দু-মুহূর্ত কী ভাবলেন। দুঃসংবাদটা স্ত্রীকে দেবেন কিনা ভাবলেন। একটু পর দ্বিধা-দ্বন্দ ঝেড়ে ফেললেন। তারপর শ্বাস টেনে বললেন, সোয়েব ইংল্যান্ড চলে যাচ্ছে। বারান্দায় যেন বজ্রপাত হল। জাহানারা বেগম ভীষণই চমকে উঠলেন। সোয়েব ইংল্যান্ড চলে যাচ্ছে! হু। ভিসা পেয়ে গেছে বলল, ওখানেই নাকি প্র্যাকটিস করবে। তুমি ... তুমি কী ভাবে জানলে? জাহানারা বেগম শ্বাসকষ্ট টের পেলেন। সোয়েব নিজেই ফোন করেছিল। যা তা বলে আমাকে অপমান করল। সোয়েব? হ্যাঁ। সোয়েব। বলল, আপনারা আমার সঙ্গে চিট করেছেন। বিয়ের আগে বললেন দীপ্তি বিয়ের পর আমার কলাবাগানের বাড়িতেই থাকবে। বিয়ের দু’মাস পর সেই যে মেয়েকে নিয়ে গেলেন, আর দিয়ে গেলেন না! আমাকে আপনাদের গুলশানের বাড়িতে থাকতে বলেন ... আমি কেন আপনাদের বাড়িতে গিয়ে থাকব, আমার কি ঘরবাড়ি নেই, আর সেরকম কথা তো ছিল না ... আপনারা সব চিটার ...আমার সঙ্গে ব্ল্যাকমেইল করেছেন ... এই কথার পর ভিজে বাতাসের এই অন্ধকার অন্ধকার বারান্দায় নীরবতা নেমে এল। জাহানারা বেগম কান্না টের পেলেন। কান্না জড়িত নিস্তেজ কন্ঠে বললেন, সোয়েব যে ইংল্যান্ড চলে যাচ্ছে, কথাটা এখন দীপ্তিকে জানাই কি করে বল তো? আজ হোক, কাল হোক, ওতো জেনে যাবেই -কী যে ভুল করলাম ...শরীফ আহমেদের কন্ঠে অস্থিরতার ছাপ স্পষ্ট। ঠান্ডা বাতাস এ আধো অন্ধকার বারান্দায় ঘুরে ঘুরে আসে। নিচের বাগানে রাস্তার কিছুটা আলো এসে পড়েছে। গেটের ওপাশ দিয়ে একটা গাড়ি চলে যাওয়ার শব্দ শোনা যায়। রাজধানীর অভিজাত এলাকায় এই বাড়িটি বলে রাত দশটা-এগারোটার দিকে এখানকার রাস্তাঘাট সাধারনত রাস্তা নির্জন হয়ে যায়। শরীফ আহমেদ আক্ষেপের সুরে বললেন, তখন কী যে ভুল করলাম ... বিয়ের পরপরই দীপ্তি যদি সোয়েবের ওখানেই থাকত ...সোয়েব এ যুগের স্ট্যাবলিশ ছেলে, সে কেন ঘরজামাই থাকবে? ওর বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন কী বলবে। তাছাড়া সোয়েব ডাক্তার। সেই-বা কেন শ্বশুরবাড়ি এসে থাকবে। এখন? সুমাইয়া বড় হচ্ছে। ভুল আমারই হয়েছে জাহানারা, আমি তখন ভাবলাম আমার একটি মাত্রই মেয়ে, আমার এত সহায়সম্পত্তি, দীপ্তি কেন শ্বশুরবাড়ি কষ্ট করবে, আমিই-বা কেন মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে একা একা দুঃখ ভোগ করব ... জাহানারা বেগম স্বামীকে প্রবোধ দিয়ে বললেন, তুমি ভুল করনি, একটাই মেয়ে যখন ...স্নেহ আদর বেশি হবেই। শরীফ আহমেদ বললেন, হ্যাঁ। এক মেয়ে বলেই দীপ্তির প্রতি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আজ বুঝতে পারি অতিরিক্ত ভালোবাসা ভালো নয়। বিয়ের পর স্বামীর ঘরই মেয়েদের সত্যিকারের ঘর, বিয়ের পর কোনও মেয়েরই বাবার বাড়ি মেয়েদের চিরস্থায়ী ঘর ভাবা ঠিক নয় । জাহানারা বেগম চুপ করে থাকেন। দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলেন। তিনি নিজেও মেয়েকে প্ররোচিত করেছেন মেয়ে যাতে জামাইকে বোঝায় এ বাড়িতেই থেকে যেতে। দীপ্তি আগের চেয়ে অনেক শুকিয়ে গেছে, ওর মুখচোখের দিকে তাকানো যায় না, কেবল সুমাইয়ার দু-বছরের অবুঝ সুন্দর মুখটি ঝলমল করে, ইস্, আমাদের ভুলের জন্য সুমাইয়া ওর বাবাকে হারালো। দীপ্তির মুখচোখ বসে গেছে, বিয়ের আগে দীপ্তি ভেবেছিল এ বাড়ি এসে থাকতে সোয়েবকে রাজী করাতে পারবে ...পারল না ... দীপ্তি হেরে গেল ...এই অপমানে মেয়েটা এখন পুড়ে মরছে ... সোয়েবকে ফোন করে সুমাইয়াকে ধরিয়ে দেয় ফোন, সোয়েব কথা বলে না, ফোন রেখে দেয় ...এমন নিষ্ঠুর ... জাহানারা বেগম দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলেন। বৃষ্টিভেজা অন্ধকার বারান্দায় সময় কেটে যেতে থাকে। শরীফ আহমেদ বললেন, দিন কয়েক আগে রহমান ফোন করে বলল সোয়েব নাকি এফআরসিএস- এ ভালো রেজাল্ট করেছে। ও কি আর ইংল্যান্ড থেকে ফিরে আসবে। আমি ... আমি ভুল করেছি জাহানারা, উফ্, এখন সে ভুলের ডালপালা ছড়াবে। আর আমার মেয়েটা কষ্ট পাবে, আর সেই সঙ্গে কষ্ট পাবে সুমাইয়াও ... জাহানারা বেগম চুপ করে থাকেন। দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলেন। রাত বাড়ে। বৃষ্টি আবার ঝিরঝির করে ঝরতে শুরু করে। নিচের বাগানের গাছের পাতায় পাতায় বৃষ্টির শব্দ ওঠে...বড় প্রশান্তিদায়ক এই বৃষ্টি। গত কয়েক দিনের একটানা গুমোট ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটে শহরবাসী অস্থির হয়ে উঠেছিল। আজ রাতে এ শহরের অনেকেরই শান্তির ঘুম হবে। কেবল এ বাড়ির তিনজন মানুষ ছাড়া ... সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১০ দুপুর ১২:০৭
false
ij
গল্প_ খন্ডচিত্র_ ১৯৭১ এখন সকাল। জানালা দিয়ে রোদ ঢুকেছে ঘরটায়। শেষ অক্টোবরের শীত মেশানো নরম রোদ। বারুদের গন্ধ মেশানো নরম রোদ। এই ঘরের দেওয়ালের রং সাদা। এখানে-ওখানে ময়লা জমেছে। ঝুল ...মাকড়শার জাল; কতকাল হোয়াইট ওয়াশ করা হয়না। দোতলার এই ঘরটা বেশ বড়। একটাই দরজা; বাদামী রঙের পুরু শক্ত পুরনো কাঠের। দরজাটা বন্ধ। ওপাশে হয়তো সৈন্যরা পাহারা দিচ্ছে। পলাশ ম্লান হাসে। এই ঘর তো এখন বন্দিশালা। যুদ্ধের আগে ক্লাসরুম ছিল। এখন বেঞ্চগুলি সরিয়ে বন্দিদের থাকার ব্যবস্থা করেছে। এখন ওরা এই স্কুলবাড়িটা দখল করে ক্যাম্প করেছে। এখান থেকেই আশেপাশের গ্রামগুলি জ্বালাতে পোড়াতে যায় এরা। হত্যাযজ্ঞ সেরে ফিরে আসে। বন্দিদের নিয়ে। পুরুষ বন্দিদের অকথ্য টর্চার করে। তারপর গুলি করে মারে। মেয়েদের অত সহজে মারে না ... রবীনের দিকে তাকাল পলাশ। ঘরের মেঝের ওপর হাতপা ছড়িয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে রবীন। আঠারো-উনিশ বছরেরর কিশোর। খালি গা। কালো প্যান্ট। রবীনের গায়ের রংটা শ্যামলা। ধুঁকছে। ধরা পড়ার আগে পায়ের গোড়ালিতে গুলি লেগেছিল। তীব্র ব্যথায় ধুঁকছে রবীন। রবীনের পাশে ভুলু ভাই। চল্লিশ বছরের মোটাসোটা ফরসা শরীর। চেক লুঙ্গিতে কাদার দাগ। রক্তের দাগ। গায়ের গেঞ্জিটা ছেঁড়া, রক্তের দাগ সেখানেও। ভুলু ভাইয়ের ওপাশে দুলাল। দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে। হাঁটুর ওপর মাথা গুঁজে বসেছে। কেবল দুলালই একমাত্র অক্ষত রয়েছে। তবে মানসিকভাবে বিধস্ত। আসন্ন মৃত্যু তাড়া করে ফিরছে। পলাশ বোঝে। পলাশের নিজের অবস্থাও ভালো না। ও ভীষন এলোমেলো হয়ে আছে। সে রাতে ওর ঠিক পাশেই মাথায় গুলি লেগে মগজ ছিটকে মরে গিয়েছিল আমিন। ওরই ক্লাশমেট ছিল আমিন। কবিতা লিখত। স্বপ্নাকে ভালোবাসত। সেই আমিন মাথায় গুলি লেগে মগজ ছিটকে মরে গেল! ভীষন এলোমেলো হয়ে আছে পলাশ। আচ্ছন্ন বোধ করছে। যেন এক দীর্ঘ দুঃস্বপ্নে ঘোর; কিছুতেই কাটছে না ... আজ সকালে দুজন পাকিস্থানী সৈন্য এসে টেনে-হিচড়ে আসাদকে নিয়ে গেছে। কাল সকালে নির্মলকে নিয়ে গেছিল। তার আগের দিন আনিসকে। টর্চাররুমে।টর্চারশেষে পিছনের মাঠে দাঁড় করিয়ে গুলি করে মারে। এ ঘর থেকেই সেই গুলির শব্দ শুনতে পায় পলাশরা। ওর শিউরে ওঠার শক্তি পর্যন্ত নেই। ওর কেবলি মায়ের কথা মনে পড়ে, ওর কেবলি বাবার কথা মনে পড়ে। ওর কেবলি শিউলির কথা মনে পড়ে। শিউলিকে ও শেষ দেখেছিল বরুরায়; মেজ ফুপুর বাড়িতে। মা আর বাবাকেও শেষ দেখেছিল ওখানে। তারপর সীমান্ত পাড় হয়েছিল। রাতের আঁধারে। ওর পাশে অন্যরাও ছিল। তাদের বুকের ভিতরে ছিল প্রতিশোধের আগুন। ওরা সাতজন ধরা পড়েছিল ইব্রাহীমপুর অপারেশরের পর। ২২ জন ছিল অপরেশনে। অন্যরা বেঁচে আছে তো? সাদেক ভাই? সাদেক ভাই কি বেঁচে আছেন? সাদেক ভাই ছিল ওদের দলের লিডার। মুখ তুলে ঘরের দরজার দিকে তাকাল পলাশ । বাদামি রঙের পাল্লা। ঠিক ওদের ওসমান গনি স্কুলের দরজার পাল্লার মতো। পলাশরা হইচই করে ক্লাশরুমে ঢুকত। ধীরেন স্যার ক্লাশ নিতেন। বাংলা পড়াতেন। ধীরেন স্যারকে ওরা পুড়িয়ে মেরেছে। তার আগে অন্যদের। ধীরেন স্যারের বাড়িটা পুড়িয়ে দিয়েছিল। বাড়ির পিছনে কী সুন্দর পুকুর ছিল। বাঁশঝার ছিল। শিউলি প্রাইভেট পড়ত ধীরেন স্যারের কাছে। পলাশ আসতে যেত। সাইকেলে। ফেরার পথে সাইকেলটা টেনে নিয়ে যেত। মাঠের দিক থেকে একটা গুলির শব্দ হলো। পলাশ চমকে ওঠে। আসাদ? আজ সকালে দুজন পাকিস্থানী সৈন্য এসে টেনে-হিচড়ে আসাদকে নিয়ে গেছিল। পলাশের কান্না পায়। জানালা দিয়ে আলো এসে পড়েছে। সে আলোর দিকে তাকিয়ে মনে পড়ল শিউলিকে ভালোবাসত আসাদ। আসাদকে দেবীদ্বার নিয়ে গিয়েছিল গত জুনে। তখন বৃষ্টিতে ভিজেছিল শিউলী। আসাদদের বাড়ি নওগাঁ...বাবা তবু বিয়েতে রাজী হয়েছিল। পলাশদের উঠানের একপাশে ছিল হাসনাহেনার ঝাড়। রাত্রিকালীন সুগন্ধ ছড়াত যদি বৃষ্টি না ঝরত। বাড়িটা এখন পুড়ে ছাই। সবাই পলাতক। আসাদও নিহত। এখন ওখানে রক্ত ঝরছে ছাইভষ্মের ওপর। হাসনাহেনার ঝাড় তছনছ। ভুলু ভাই হু হু করে কেঁদে ওঠে। বড় ভালোবাসত আসাদকে ভুলু ভাই। ঢাকায় এসে ভুলু ভাইয়ের কমলাপুরের মেসে উঠেছিল আসাদ। তখন থেকেই ঘনিষ্টতা। ঝুঁকে ভুলু ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় পলাশ। ভাবছে- কাল সকালে কাকে নিয়ে যাবে ওরা? আমাকে? ভূলু ভাইকে? দুলালকে? না রবীনকে? না। পলাশ ভুল করেছিল। সন্ধ্যের পর হঠাৎ দরজাটা খুলে যায়। দুজন পাকিস্থানী সৈন্য দাঁড়িয়ে। ওরা ব্রাশ ফায়ার করে। পলাশ জানল না সাদেক ভাইরা স্কুল বাড়িটি ঘিরে ফেলেছে বলে তারা ... সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:১০
false
fe
প্রজন্মের স্বদেশ চিন্তা ও মৌলবাদের তাত্ত্বিকেরা প্রজন্মের স্বদেশ চিন্তা ও মৌলবাদের তাত্ত্বিকেরা ফকির ইলিয়াস =======================================এই প্রজন্ম স্বদেশ এবং জাতির মঙ্গল চিন্তায় কতটা অগ্রসরমান তার বিভিন্ন উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। ১৯৭৭-৭৮ সালে বাংলাদেশে সামরিক শাসনের নামে, গণতন্ত্র চালুর মহড়ার নামে মূলত মৌলবাদকে পৃষ্ঠপোষকতার প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল। এ সময় তাফসির মাহফিলের নামে একটি মৌলবাদী রাজনৈতিক দলের মতবাদ দেশে-বিদেশে প্রচারের কাজে ব্যস্ত ছিলেন একজন স্বঘোষিত মাওলানা। তার নাম দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। এই সাঈদী প্রথম দিকে ওই রাজনৈতিক দলের প্রবক্তা ছিলেন না প্রকাশ্যে। ছিলেন গোপনে। কিন্তু এই প্রজন্ম তা ধরে ফেলে খুব সহজেই। দেশের বিভিন্ন মাহফিলে তাকে রুখে দেয়ার জন্য এই প্রজন্মের সন্তানেরা প্রস্তুতি নেয়। সাঈদীকে রুখে দেয়া হয় বিদেশেও। তার মুখোশ উন্মোচনে ব্যাপক ভূমিকা নেয় বিভিন্ন মিডিয়া।এর কিছুদিন পরই মাওলানা সাঈদী একটি মৌলবাদী রাজনৈতিক দলের মজলিসে শূরার সদস্য পদ পান। মানুষ দেখে নেয় তার নেপথ্য উদ্দেশ্য কি ছিল। কেন ছিল।বাংলাদেশে মৌলবাদের তাত্ত্বিকেরা পাখা মেলতে চেয়েছে বিভিন্ন আঙ্গিকে। তারা শান্তির ধর্মের পায়রা ওড়াবার নামে মূলত একটি বিশেষ এজেন্ডা নিয়ে কাজ করেছে এবং করে যাচ্ছে। সামাজিক আন্দোলনের নামে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টায় একটা সুবিধা আছে। সুবিধাটি হচ্ছে এই, সাধারণ মানুষের চোখে ধুলো দেয়া যায় খুব সহজে। যেমনটি ঘটেছিল 'ছাত্রশিবির'-এর বেলায়। তাদের পথ চলার শুরুতে বলা হয়েছিল, তারা কোন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন নয়। কিন্তু প্রকৃত সত্য বেরিয়ে পড়েছিল কিছুদিন পরেই।বাংলাদেশে পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে মৌলবাদ তত্ত্ব ছড়ানোর জন্য বিভিন্ন সংগঠনের জন্ম দেয়া হয় পরিকল্পিতভাবে। আফগানিস্তানে রুশ আগ্রাসন রুখে দেয়ার জন্য ওপেন সিক্রেট উপায়ে অস্ত্র সরবরাহ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এক্ষেত্রেও ধর্মীয় তমদ্দুনকে কাজে লাগিয়ে একটি মোর্চা গঠনের প্রচেষ্টা চলে। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে রুশরা আফগান ভূমি ত্যাগ করে ঠিকই। কিন্তু এই আফগান ভূমিতে বেড়ে ওঠা মৌলবাদী তমদ্দুনপন্থিরা থেকে যায় স্বদেশেই। তারা নিজস্ব মতবাদ চালিয়ে ঝান্ডা উড়াতে চায়। জন্ম দেয় একটি কট্টরপন্থি শক্তির। যে শক্তিটিই খুব দ্রুত 'সন্ত্রাসী' 'তালেবান' 'ইসলামী জঙ্গি' 'জিহাদী' বিভিন্ন অভিধায় বিশ্বে পরিচিতি পেতে থাকে।এই যে মৌলবাদের তত্ত্ব বিতরণ তা কি একদিনে হয়েছে? এই অপশক্তির প্রসারে বৃহৎ পরাশক্তির কি মদদ ছিল না? অবশ্যই ছিল। আর ছিল বলেই এরা আসকারা পেয়েছে সংগঠিত হওয়ার, আত্মঘাতী হামলা চালানোর।নব্বইয়ের দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পারে, এই জঙ্গি তালেবান শক্তি তাদের জন্যও কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তারা এদের টুঁটি চেপে ধরার জন্য পড়িমরি হয়ে লাগে। কিন্তু সে চেষ্টাকে পরাজিত করেই ঘটে যায় সেপ্টেম্বর-ইলেভেনের মতো নিষ্ঠুরতম ঘটনা। এর পরের ঘটনাবলি কারও অজানা নয়। যুদ্ধ বাধে আফগানিস্তানে। যুদ্ধ বাধে ইরাকে। মানুষের রক্তপ্রবাহে লাল হয়ে যায় মৃত্তিকার স্তর।দুই.জঙ্গিবাদের একটি বিশেষ কায়দা আছে। তারা মানুষকে পড়ানোর, বোঝানোর চেষ্টা করে। তারা কোমলমতি শিশুদের ধর্মীয় প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করে ওই পথে টানার চেষ্টা চালায়। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি বিভিন্ন মৌলবাদী তাত্ত্বিক দলগুলোর উপাত্ত পাওয়া গেছে। তাদের একটা মৌলিক মিল আছে। সবাই ছোটখাটো পুস্তিকা বিতরণ করে। পড়ায় মানুষকে। গড়ে তুলতে চায় জিহাদি জোশে শিশুকাল থেকে। এজন্য মাদ্রাসা তাদের অন্যতম টার্গেট। মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবেও ঢুকে পড়ে এসব তাত্তি্বক। কখনও তারা বিনা বেতনেও কাজ করে। তাই বলে তারা বেতন যে পায় না, তা কিন্তু নয়। বেতন পায় অন্য খাত, অন্য উৎস থেকে।এসব তাত্ত্বিক সংগঠন বিদেশেও আছে। ইউরোপে দাওয়াতুল ইসলাম, উত্তর আমেরিকায় ইসলামিক সার্কেল অফ নর্থ আমেরিকা (ইকনা), মুসলিম উম্মাহ অফ নর্থ আমেরিকা (মুনা) ইত্যাদি নামে। এদের কাজ কি? কাজ হচ্ছে ধর্মের শান্তি প্রবাহের নামে পরোক্ষভাবে মৌলবাদী তত্ত্বকে 'হেফাজত' করা। তাদের ফান্ডও রয়েছে অঢেল। ধর্মের নামে মূলত তারা একটি গোষ্ঠীর মুখপাত্র। সম্প্রতি বাংলাদেশে 'হিজবুত তাহরীর' নামে একটি মৌলবাদী তাত্তি্বক সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারা এই 'হিজবুত তাহ্রীর'-এর কর্ণধার, এই তথ্যটি রাষ্ট্রের অনেক আগেই জানা উচিত ছিল। এই সংগঠনটি ২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এ বছর জুলাই মাসে এই সংগঠনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে সেমিনার করে। এসব সেমিনারে তারা উগ্র মতবাদ, হিংসাত্মক উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়। এরপরই নড়েচড়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট। এতদিন যারা কখনও এনজিও কখনও ধর্মীয় সেবা সংস্থা প্রভৃতি মুখোশে তৎপরতা চালিয়ে আসছিল, হঠাৎ তাদের উগ্র বক্তব্য থমকে দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। এরপরই শুরু হয় এই সংগঠনটি বস্ন্যাকলিস্ট করার প্রক্রিয়া।'হিজবুত তাহরীর' মূলত জঙ্গিবাদীদেরই থিংক ট্যাংক বলে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু উচ্চ ডিগ্রিধারীরাও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ধর্মীয় উন্মাদনার নামে যারা ক্রমশ পরধর্মের প্রতি অসহিষ্ণু কিংবা হিংসাত্মক হয়ে ওঠে, এরা সেই দলেরই পৃষ্ঠপোষক।বাংলাদেশে এই সংগঠনটি গেল নয় বছরে কি করেছে তার পুরো খতিয়ান প্রকাশিত হওয়া উচিত। জনগণের জানা উচিত এরা বাংলাদেশে কি করেছে, কেন করেছে।দেশে একটা অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টির জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে একটি মহল। সাংসদ ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের ওপর বোমা হামলার ঘটনার সর্বশেষ প্রমাণ। এরা সেই অপশক্তি যারা বাংলাদেশে বাংলাভাই, শায়খ রহমানকে প্রত্যক্ষ সরকারি মদদ দিয়েছিল। কেন দিয়েছিল?যারা 'পলিটিশিয়ানদের জন্য পলিটিক্সকে ডিফিকাল্ট' করার ঘোষণা দিয়ে রাজনীতিতে এসেছিল, জঙ্গিবাদের মদদ তারাই দিয়েছিল নতুন মোড়কে। জঙ্গিদের বি-টিম বানিয়ে তারা রাষ্ট্রক্ষমতা পাকাপোক্ত করার খায়েশে ছিল বিভোর।ভাবতে অবাক লাগে, একজন প্রতিভাবান আইনজীবী, একজন জনপ্রিয় সাংসদ বোমাক্রান্ত হওয়ার পর প্রধান বিরোধী দল বিএনপি প্রতিবাদ না করে সরকারের সমালোচনা করেছে হীনস্বার্থে। তারা বলেছে সরকার ব্যর্থ বলেই সাংসদ তাপস আক্রান্ত হয়েছেন।হ্যাঁ, দায় তো সরকারেরই। আওয়ামী লীগের উচিত ছিল গেল ক্ষমতার মেয়াদেই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার শেষ করা। তারা 'অতি গণতন্ত্রী' হয়ে তা করেনি। কালক্ষেপণ করেছে। আর এরপরে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে প্রত্যক্ষভাবে সেই সব ফ্রিডম পার্টি, জঙ্গিবাদী তাত্তি্বকদের পুনর্বাসিত, পৃষ্ঠপোষকতা করেছে সরাসরি।ব্যারিস্টার তাপসের প্রতি বোমা হামলার ঘটনায় মেজর ডালিমের ভাই, কর্নেল রশিদের মেয়েসহ আরও কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। টিভিতে দেখলাম খুনি রশিদের মেয়ে মেহনাজ রশিদ তার ছোট্ট শিশুকে কোলে নিয়ে পুলিশি হেফাজতে যাচ্ছেন। এই দৃশ্য দেখে আমার বারবার মনে পড়েছে শিশু রাসেলের কথা। যে রাসেল তাকে হত্যার আগে বারবার বলেছিল, 'আমাকে আম্মার কাছে নিয়ে যাও, আমাকে হাসু (শেখ হাসিনা) আপার কাছে নিয়ে যাও'। কি অপরাধ ছিল শিশু রাসেলের? আজ মেহনাজ রশিদ তার শিশু কোলে নিয়ে দেশবাসীর, মানবতার করুণা প্রত্যাশা করছেন। লোক দেখাচ্ছেন। তা করার আগে তারও একবার রাসেলের কথা ভাবা উচিত ছিল।বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ভেবে অবাক হচ্ছি, খুনি পক্ষের আইনজীবী খান সাইফুর রহমান কর্নেল রশিদের স্ত্রী জুবাইদা রশিদকে অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী অভিহিত করে ঘটনা অন্য খাতে প্রবাহের চেষ্টা করছেন। খুনি ফারুক রহমানের যাবজ্জীবন কামনা করছেন। তার এসব প্রার্থনা, মানসিক দীনতার বহিঃপ্রকাশ। কারণ পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টের ঘৃণ্যতম হত্যাকা- প্রধানত ছিল গোটা জাতিসত্তাকে পঙ্গু করে দেয়ার পরিকল্পনা। সে সূত্র ধরেই এদেশে ঠাঁই পেয়েছে মৌলবাদী তাত্তি্বক গো. আযমরা। পাকিস্তানের কুখ্যাত মওদূদীবাদের প্রবক্তারা ফেৎনা-ফাসাদের মধ্য দিয়ে ইসলাম ধর্মের প্রকৃত অমিয় ধারাকে কলুষিত করেছে বারবার।প্রজন্মের স্বদেশ প্রেমের কাছে এসব কুলাঙ্গার বারবার পরাজিত হয়েছে। ভবিষ্যতেও হবে। তাদের মৌলবাদী তত্ত্ব মানুষ গ্রহণ করেনি। আগামী প্রজন্মও করবে না। বিজয়ের আটত্রিশ বছরে এই প্রজন্ম রাজনৈতিক প্রতারণার অর্গল ভেঙে এগোতে হচ্ছে বলেই বেড়েছে মানুষের দুর্দশা। আজ যারা ক্ষমতায় আছেন, তারা এই দুর্দশা লাঘবে যদি আন্তরিক হন তবে এই মৌলবাদীদের শিকড় উপড়ে ফেলতে আন্তরিক হতে হবে। প্রজন্ম সত্যের পক্ষে দাঁড়াবেই।নিউইয়র্ক, ২৭ অক্টোবর ২০০৯ -------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ।ঢাকা। ৩০ অক্টোবর ২০০৯ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি- মার্টিন ড্রেসচার
false
rn
রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই- ৮৫ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জীবনের সিংহ ভাগই কাটিয়েছেন পদ্মা, ইছামতি, নাগর, আত্রাই নদী বিধৌত উত্তরবঙ্গের সবুজ শ্যামল ছায়াঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা নাগর নদীর তীর পতিসরে।পল্লী বাংলার সাধারন মানুষ, চাষী, মুটে-মজুর, হিন্দু, মুসলমান প্রজা, নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধসহ ক্ষেত খামার ও হাল লাঙ্গল এসবই তাঁর মনের মাটিতে একাকার হয়ে যায়।জমিদারী দেখাশুনা করতে তিনি ঘুরে বেড়াতেন তিনটি জেলায়।কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের বাংলাদেশে ছিল ৩ টি জমিদারী। ক্রয়সূত্রে ১৮৩০ সালে রবীন্দ্রনাথের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর কালিগ্রাম পরগনা জমিদারির অন্তর্ভূক্ত করেন। পতিসর কালিগ্রাম পরগনার সদর দপ্তর। নওগাঁ, বগুড়া ও নাটোর জেলার ৬ শ টি গ্রাম নিয়ে কালিগ্রাম পরগনা গঠিত। এর আয়তন ছিল ২৩০ বর্গমাইল।আঁকা-বাঁকা ছোট্র নদী নাগরের তীরে অবস্থিত এই পতিসর। পূর্ব-দক্ষিনে চলন বিল ও আত্রাই নদী। পশ্চিম-উত্তরে রক্তদহ বিল। অসংখ্য খাল-বিল, নদী-নালা পরিবেষ্টিত কালিগ্রাম পরগনা। (সেই সময়) বছরের প্রায় ৬ মাস পানিতে ডুবে থাকতো। তখন গ্রাম গুলোকে মন হতো যেন এক একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। রবীন্দ্রনাথ সর্ব প্রথম এ বিচ্ছিন্ন দ্বীপে আসেন ১৮৯১ সালে। পতিসরের প্রতি রবীন্দ্রনাথের ছিল অগাধ ভালবাসা, ছিল এখানকার মানুষের প্রতিও। তার বিচক্ষনতা দিয়ে প্রজাহ্নদয় জয় করেছিলেন। জমিদারি পরিচালনা পদ্ধতিও ছিল আধুনিক ও বিজ্ঞান সম্মত। তাই তিনি তাদের আপনজন হয়ে যান। কালিগ্রাম ”হিতৈষী সভা ” নামে একটি সংগঠন তৈরী করেন। কালীগ্রাম পরগনার প্রজাদেরকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে পতিসর, রাতোয়াল ও কামতা ৩টি বিভাগে ৩টি মধ্য ইংরেজী (এম.ই) স্কুল ও পতিসরে ছেলে রথীন্দ্রনাথের নামে ১টি হাইস্কুল স্থাপন করেন। স্কুলের ভবন, ছাত্রাবাস নির্মাণ ও অন্যান্য খরচ এস্টেট থেকে বহন করা হতো। পূর্ব বাংলায় ’জমিদারি’ করতে এসে রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতই নিজেকে আবিস্কার করেছিলেন নতুন করে। পতিসরে বসেই তিনি গোরা ও ঘরে বাহিরে (অংশ বিশেষ) উপন্যাস, ছোট গল্প ’প্রতিহিংসা’ ও ঠাকুরদা, লিখার রসদ পেয়েছিলেন। পূর্ণিমা, সন্ধ্যা, চৈতালি-মধ্যাহ্ন, পল্লীগ্রামে, সামান্য লোক, দুর্লভ জন্ম, খেয়া, কর্ম , মেঘদূত, দিদি , পরিচয়, অনন্তপথে ’র মত অনেক কবিতা রচনা করেছিলেন। মহাজনদের হাত থেকে কৃষকদের মুক্ত করতে সমবায় পদ্ধতিতে ১৯০৫ সালে কালিগ্রাম পরগনার পতিসরে কৃষি ব্যাংক স্থাপন করেছিলেন ।নওগাঁ শহর থেকে ৩৬ কিলোমিটার দুরে পতিসরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পতিসর কুঠিবাড়ী অবস্থিত।পতিসরকে ছুঁয়ে এঁকে বেঁকে গেছে নাগর নদী। একদা এই নদীতে কবির প্রিয় “পদ্ম-বোট” এ বসে কবি রচনা করেছিলেন, তালগাছ এক পায়ে দাড়িয়ে/ সবগাছ ছাড়িয়ে/ উঁকি মারে আকাশে।কবির প্রিয় সেই নাগর নদী আজো প্রবাহমান। কিন্তু কবির নেই তালগাছটি আজ আর নেই। ১৯৬২ সালে এক প্রবল ঝড়ে সেই তালগাছটি ভেঙ্গে পড়ে। তালগাছটির স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে সেখানে এখনো বয়েছে একটি মাটির উঁচু ভিটে। নতুন করে একটি শিশু তালগাছ গজিয়ে তার স্মৃতিকে জানান দিচ্ছে। ১৯৩১ সালে বিখ্যাত সাহিত্যিক অন্নদা শংকর রায় ছিলেন নওগাঁর মুহকমা প্রশাসক। সেই সময় এই দুই ব্যক্তিত্বের সাক্ষাত ঘটেছিল। একবার অন্নদা শংকর রায় আত্রাই ষ্টেশনে গিয়েছিলেন কবির আহবানে। নোবেল পুরস্কারের ১লক্ষ ৮ হাজার টাকা এই ব্যাংকে বিনিয়োগ করা হয়। ১৯১০ সালে উত্তরবঙ্গের মহাপ্লাবনের পর আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় মহাশয়ের বন্যাত্রাণ ফান্ডে কিছু টাকা উদ্বৃত্ত হইয়াছিল এবং এই টাকায় আমেরিকা হইতে কয়েকটি ট্রাক্টর ক্রয় করা হয়। রবীন্দ্রনাথ একটি ট্রাক্ট্রর লইয়া পতিসর অঞ্চলে কলের লাঙ্গল দিয়া জমি চাষ প্রবর্তন করেন। ট্রাক্ট্রর পাওয়া গেলে, কিন্তু চালক পাওয়া গেল না। পুত্র রথীন্দ্রনাথ আমেরিকায় কৃষিবিদ্যা শিক্ষাকালে ট্রাক্ট্রর চালনা করিয়াছেন। পতিসরে তাই তিনি ট্রাক্ট্ররের ড্রাইভার রুপে আশে পাশে জমি চাষ করিয়াছেন। যন্ত্রদানবের কার্যকলাপ দেখিতে প্রথম দিন হাজার হাজার লোক পতিসরে উপস্থিত হইয়াছিল। ১৯৪৭ সালের আগ পর্যন্ত পতিসর কঠির বাড়ি কর্মমূখর ছিল।১৯৪৭ সালের পর থেকেই ক্রমাগত বিলুপ্তি হতে থাকে, কবির সাজানো বাগান হারিয়ে যেতে থাকে কাচারী বাড়ির সকল জিনিসপত্র। দেশ বিভাগের পর ১৯৫২ সালের অর্ডিন্যান্স বলে তদানীন্তন পূর্বপাকিস্থান সরকার এই জামিদারি অধিগ্রহন করে। কবি পতিসরের বিদায়ের শেষ দিনটিতে কুঠিবাড়ীর সামনের রবীন্দ্র সরোবর ঘাটে সমবেত প্রজাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, “ আমি অসুস্থ্য আর হয়তো তোমাদের কাছে আসিতে পারিব না, তোমরা আমাকে অনেক দিয়াছ, আমি তোমাদের কিছুই দিতে পারি নাই-আমি প্রার্থনা করি তোমরা সুখি হও, শান্তিতে থাকো। সেদিন সেই নিভৃত পল্লীতে নেমেছিল শোকের ছায়া। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্মময় জীবনের এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পতিসরের স্মৃতি। কবির স্মৃতিকে নিজের অনুভবের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার জন্য আজো কবি ভক্তরা ছুটে যান পতিসর। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের পুত্র মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ৪২ বছর বয়সে মারা যান। তার সন্তানাদির নাম আর কিন্চিৎ পরিচয় ক্রমানুসারে নীচে দেখুন- ১। কন্যা: শিশুকালেই মারা যান। ২। দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৪০-৯১২৬): পন্ডিত । ৩। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৪২-১৯২৩): সরকারী আমলা। ৪। হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৪৪-১৮৮৪): বিজ্ঞানী। ৫। বীরেন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৪৫-১৯১৫): ৬। সৌদামিনী দেবী: (১৮৪৭- ১৯২০):৭। জোতিরিন্দ্রণাথ ঠাকুর ১৮৪৮- ১৯২৫): পন্ডিত, নাট্য ব্যাক্তিত্ব। ৮। সুকুমারী দেবী: ১৮৪৯- ১৮৬৪):৯। পুন্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৫০-১৮৫১):১০। শরৎকুমারী দেবী। (১৮৫৬- ১৯২০):১১। স্বর্ন কুমারী দেবী। (১৮৫৮- ১৯৩২):১২। বনকুমারী দেবী। (১৮৫৯- ১৯৩৪):১৩। সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৬০-১৯২৩): ১৪। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৬১- ১৯৪১): নোবেল জয়ী বিশ্ব কবি। ১৫। বুধেন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৬৩- ১৮৬৪): সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১:১৩
false
fe
বাংলাদেশ যেভাবে ভালো থাকতে পারতো বাংলাদেশ যেভাবে ভালো থাকতে পারতোফকির ইলিয়াস===========================================একটা আঁধারের ছায়া ঘিরছে বাংলাদেশকে। এই আঁধার রাজনৈতিক। যারা ক্ষমতায়, তারা তা অনুধাবন করতে পারছেন বলে মনে হয় না। যদি পারতেন, তাহলে তাদের পোষ্য নেতাকর্মীরা এভাবে হানাহানি করে টেন্ডারবাজির বাটোয়ারা নিতে পারতো না। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের টেন্ডারে যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের একচ্ছত্র আধিপত্যে ভাগ বসাতে চেয়েছিলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা “িারুল আলম। কিন্তু আধিপত্য ধরে রাখতে অনড় অবস্থান নেয় বাবর গ্রুপ। যার ফলে গত দেড় বছরে কয়েক দফা হামলা, মারামারি, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে দুপক্ষে। এ অবস্থায় বাবর গ্রুপের আধিপত্যের কাছে টিকতে না পেরে সমঝোতার প্রস্তাব দেয় “িার। রেলওয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার মধ্যস্থতায় তিনদিন আগে “িারের কয়েকজন অনুসারী সমঝোতার প্রস্তাব নিয়ে বাবরের কাছে যান। সেখানে কথা বলতে গিয়ে “িারের অনুসারী একজন সমঝোতার প্রসঙ্গে নগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার নির্দেশের কথা তুললে ক্ষুব্ধ হন বাবর। এসময় “িারের অনুসারীদের অপমান করে বের করে দেন বাবর। এরপর “িারুল আলম তার অংশীদারী প্রতিষ্ঠান রয়েল এসোসিয়েটসের পক্ষে রেলওয়ের সর্বশেষ প্রকল্পে যে কোনোভাবে টেন্ডার জমাদানের সিদ্ধান্ত নেন। অন্যদিকে বাবর তাদের ঠেকানোর পক্ষে অনড় অবস্থান নেন। দুপক্ষের এমন অনড় অবস্থানের কারণে সোমবার চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকায় সশস্ত্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে যাতে প্রাণ গেছে আট বছরের শিশু আরমান এবং বাবরের অনুসারী সন্ত্রাসী সাজু পালিতের (২৮)। এটা হলো একটি খ-চিত্র। এভাবে শেষ সময়ে এসে দেশের সরকারপন্থীরা নিজেদের মাঝে কামড়া-কামড়ি শুরু করেছে। গাজীপুর নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে ‘নাটক’ গোটা দেশবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ঠিক একইভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা দাঁড়াতে পারেন বিভিন্ন এলাকায়। এই চিত্র আমরা দেখতে শুরু করেছি। আর যে মহান জাতীয় সংসদে তারা যাবেনÑ সেই সংসদকে কিভাবে কলুষিত করা হচ্ছে, তা দেখে হতবাক হয়েছেন এদেশের আপামর মানুষ। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ থেকে বিদায় নিয়েছে শালীনতা। আলোচনার নামে চলছে নোংরা ভাষায় খিস্তিখেউড়। অশালীন, অমার্জনীয়, অসংসদীয় ও প্রকাশের অযোগ্য ভাষার ব্যবহার দেখে স্তম্ভিত দেশবাসী। এ কোন ভাষায় কথা বলছেন দেশের আইন প্রণেতারা? বেশ কিছুদিন ধরেই বিরোধী দল ও সরকারি দলের কয়েক নারী সংসদ সদস্য কে কতো বেশি খারাপ ভাষায় কথা বলতে পারেন, এরই যেন প্রতিযোগিতা চলছে গণতন্ত্রের সূতিকাগার জাতীয় সংসদে। স্পিকারের রুলিংকে প্রতিদিনই বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছেন দুপক্ষই। প্রথমে শুরু করেছিল বিএনপির তিন নারী সদস্য। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন সরকারি দলেরও কোনো কোনো নারী সদস্য। সংসদে তাদের রুচিহীন ‘অমিয় বচন’-এর অনেকটাই রুচিশীল পাঠকের কথা চিন্তা করে তা প্রকাশ করাও সম্ভব নয়। প্রতিবাদ যে হচ্ছে না, তা নয়। কেউ কারো কথা শুনতে চাইছে না যেন। বাজেটের ওপর বক্তব্যে রাখার জন্য স্পিকার তাকে ফ্লোর দিলে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে সরকারি দলের সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ বলেন, পবিত্র সংসদে এমন অশ্লীল বক্তব্যে শুনে সংসদ সদস্য হিসেবে আমার ভীষণ লজ্জা লাগছে। সংসদে যেভাবে অশালীন ও কদর্যভাষায় বক্তব্য দেয়া হচ্ছে, একজন সংসদ সদস্য হিসেবে সারা দেশের মানুষের কাছে আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। পবিত্র সংসদে অশালীন ভাষা প্রয়োগের প্রতিবাদে আমি বক্তব্যে না দিয়ে এই স্থান ত্যাগ করছি। এই বলে তিনি সংসদ থেকে ওয়াকআউট করতে গেলে বিরোধী দলের সদস্যরা বিদ্রƒপ করে হাততালি দিলে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আবদুল লতিফ। তিনি বলেন, ‘আপনাদের লজ্জিত হওয়া উচিত, অথচ আপনারা হাততালি দিচ্ছেন!’ প্রতিবাদে আবদুল লতিফ বাজেটের ওপর বক্তব্য রাখা থেকে নিজেকে বিরত রেখে সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন। সরকারি দলের অন্য সিনিয়র সদস্য ও মন্ত্রীরাও সংসদের মতো জায়গায় বিরোধী দলের কিছু নারী সংসদ সদস্যের অশ্লীল বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন। এসব কী হচ্ছে এই সময়ে? এর জবাব কি দেবেন এদেশের মহান রাজনীতিকরা? প্রকারান্তরে তারাও কি আশকারা দিচ্ছেন না? যদি না দিতেন তা হলে তারা এ ব্যপারে কিছু বলছেন না কেন? এই বাংলাদেশ তিরিশ লাখ শহীদের কাম্য ছিল না। তারা চাননি, এদেশের মানুষেরা এভাবে বারবার প্রতারিত হবে। আমার খুব দুঃখ হয়, এদেশের এমপিরা বিদেশ সফর করেন। তারা বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্টে অধিবেশন দেখেন। তারপরও তারা শিক্ষা নেন না। কেন নেন না? ‘মন্দ’ এর বিপরীতে একটি শব্দ আছেÑ ‘ভালো’। দেশের মানুষ এখন সেই ‘ভালো’ শব্দটির অন্বেষণ করছেন। তারা খুব বেশি কিছু চান না। তারপরও তাদের সেই ন্যূনতম চাওয়া-পাওয়ায় পরিণত হচ্ছে না কেবলমাত্র প্রতারকদের রাজনীতির কারণে। আজ আমরা বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায় দেখছি কেউ কেউ বলছেÑ ‘নো মোর হাসিনা-খালেদা।’ কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এদেশ থেকে হাসিনা-খালেদাকে মাইনাস করা যাবে না। যা ওয়ান ইলেভেনে সম্ভব হয়নি, তা এই মুহূর্তে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এদেশের পরবর্তী রাজনৈতিক কর্ণধার তারেক রহমানÑ সজীব ওয়াজেদ জয়। এটা অনেকটাই নিশ্চিত। বাদ বাকিরা ঐ দুই পরবর্তী নেতার ধ্বজাধারী হিসেবেই থেকে যাবে। যারা পরিবর্তনকামী বলে নিজেদের জাহির করেছিলেন, তারা ছিটকে পড়েছেন। তাদের অনেকে এখন নিজ নিজ দলের বিরুদ্ধেই কথা বলছেন। তাতে কি বড় দুদল কর্ণপাত করছে? নাÑ করছে না। করবেও না। কারণ এরকম কয়েক ডজন নেতা ছিটকে পড়লেও বিএনপি-আওয়ামী লীগের কিছু যায় আসে না। যে কথাটি বলা দরকার, তা হলো এই দেশটি খুব ভালো থাকতে পারতো। এই দেশের মানুষ শান্তিতে থাকতে পারতেন। যদি কিছু মৌলিক বিষয়ে রাজনীতিকরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারতেন। এর প্রথমটি হচ্ছেÑ রাষ্ট্রীয় স্বার্থ সংরক্ষণ। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছেÑ সুশাসন প্রতিষ্ঠা। তৃতীয়টি হচ্ছে- দুর্নীতিবাজদের শক্ত হাতে দমন। যে দেশে রাজনীতিকরা ইলেকশন করতে কালো টাকার মালিকদের হাতের দিকে তাকিয়ে থাকেন, সে দেশে কাজগুলো খুবই কঠিন। সুবিধাবাদীরা যে কোনো দেশের রাষ্ট্রনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতিকে ধ্বংস কিংবা পঙ্গু করে দিতে পারে। আর সে জন্যই এই চক্রের বিরুদ্ধে সদাসতর্ক থেকে দেশের রাজনীতিকে এগিয়ে নিতে হয়। বাংলাদেশে এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। ফলে আমরা দেখেছি কোনো নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই মধুলোভী ভ্রমরেরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। এরা নিজেদের হীনস্বার্থ হাসিলের জন্য দলকে, দলের নীতিকে ঘায়েল করতে মোটেই কার্পণ্য করেনি। ভবিষ্যতেও করবে না। ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ এর নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুরির পেছনে হাওয়া ভবনের ত্রাসের ঘটনাগুলোও সম্পৃক্ত বলা যায়। এই বিতর্কিত ভবনের শীর্ষ কর্ণধাররা দেশে একটা মিনি সিন্ডিকেট চালিয়ে যাচ্ছিল, তা তৃণমূল পর্যায়ের মানুষও জেনে গিয়েছিল। গণমানুষ এই অবৈধ উত্থানকে কোনোমতেই মেনে নিতে পারেনি। একই অবস্থা আজকের আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও। ভবন না থাকলেও দেশের সর্বত্র দখলদারদের দৌরাত্ম্য। আমার মনে হয় না, আগামী কয়েক মাসে সরকার তা সামাল দিয়ে উঠতে পারবে। আর যদি তা-ই হয়, তবে ফলাফল কী হবে তা এখন আর কারোই অজানা থাকার কথা নয়।--------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ : শনিবার, ২৯ জুন ২০১৩
false